আপেল সিডার ভিনেগার ১৫ টি স্বাস্থ্য উপকারিতা

আপেল সিডার ভিনেগার স্বাস্থ্য উপকারিতা এর এক অনন্য দান, পেটের সঙ্গী, মনে আনে সুশান্তির গান। প্রাকৃতিক এই ভিনেগার পেটের যত্ন, ওজন কমানো, রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে ও ত্বকের যত্নে সহায়ক। শক্তি আর সৌন্দর্যে যেন অলৌকিক ছোঁয়া, ১৫ উপকারে মেলে সুখের পথ খোঁজা।

আপেল-সিডার-ভিনেগার-স্বাস্থ্য-উপকারিতা

আপেল সিডার ভিনেগার হলো আপেলের রস থেকে তৈরি এক প্রকার ভিনেগার, যা বিভিন্ন স্বাস্থ্য উপকারিতা জন্য পরিচিত। এটি মূলত আপেল ফার্মেন্টেশন পদ্ধতিতে তৈরি হয়। অ্যান্টি অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ আপেল সিডার আমাদের জীবনে কতটা উপকারী আজকের ব্লগে আলোচনা করব।

পোস্ট সূচীপত্রঃ আপেল সিডার ভিনেগার স্বাস্থ্য উপকারিতা

আপেল সিডার ভিনেগার স্বাস্থ্য উপকারিতা

আপেল সিডার ভিনেগার স্বাস্থ্য উপকারিতা এর জন্য বহু যুগ ধরে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এতে রয়েছে ভিটামিন, মিনারেল, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান, যা শরীরের জন্য নানা ধরনের সুবিধা দেয়। আপেল সিডার ভেগার এর ১৫ টি গুরুত্বপূর্ণ উপকারিতা বিস্তারিতভাবে দেয়া হলো-

  1. ওজন কমাতে সাহায্য করেঃ আপেল সিডার ভিনেগার খাওয়ার ফলে ক্ষুধা কমে যায় এবং বিপাক প্রক্রিয়া বৃদ্ধি পায় ফলে ওজন কমাতে সহায়ক হয়। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে আপেল সিডার ভিনেগার ওজন কমানোর ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
  2. রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করেঃ এটি ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বাড়ায়, যা টাইপ-২ ডায়াবেটি স নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হতে পারে।
  3. রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়কঃ এর প্রাকৃতিক উপাদান রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে, যা হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখে।
  4. কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়ঃ আপেল সিডার ভিনেগার এলডিএল বা খারাপ কোলেস্টেরল কমিয়ে ভালো কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়ায়।
  5. পেটের সমস্যা দূর করেঃ আপেল সিডার ভিনেগারে রয়েছে অ্যাসিটিক অ্যাসিড, যা খাবার কে হজম করতে সহায়ক। এতে প্রোবায়োটিক উপাদান থাকায় পেটের সমস্যা বা হজমে সাহায্য করে।
  6. ত্বকের যত্নে কার্যকরীঃ আপেল সিডার ভিনেগারে অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান আছে, যা ব্রণ ও ত্বকের অন্যান্য সমস্যার সমাধান করে।
  7. অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান সমৃদ্ধঃ আপেল সিডার ভিনেগার এ থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরের কোষগুলোকে মুক্ত ‍র‌্যাডিক্যালের ক্ষতি থেকে রক্ষা করে।
  8. প্রদাহ কমায়ঃ আপেল সিডার ভিনেগার প্রদাহ-নিবারক গুনাগুন শরীরের অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।
  9. মুখের দুর্গন্ধ দূর করেঃ এর অ্যান্টিব্যাকেরিয়াল গুন মুখের ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে মুখে সতেজতা আনে। আপেল সিডার ভিনেগার ব্যবহারের ফলে মুখের দুর্গন্ধ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
  10. শরীরের পি এইচ ব্যালেন্স ঠিক রাখেঃ আপেল সিডার ভিনেগার শরীরের পিএইচ মাত্রা সঠিক রাতে সাহায্য করে যা দেহের শক্তি বজায় রাখতে সাহায্য করে।
  11. টক্সিন মুক্তিতে সহায়কঃ আপেল স্যার ভিনেগার লিভার এবং অন্যান্য অভ্যন্তরীণ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ থেকে টক্সিন মুক্ত করে, দেহের ডিবক্সিফিকেশনে সহায় করে।
  12. ইমিউন সিস্টেম শক্তিশালী করেঃ আপেল সিডার ভিনেগার-এ থাকা ভিটামিন এবং প্রোবায়োটিক শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
  13. শরীরের ক্ষতিগ্রস্ত কোষ পুনরুদ্ধারে সহায়কঃ আপেল সিডার ভিনেগারে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে। এর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান কোষ পুনরুদ্ধারে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।
  14. চুলের যত্নে উপকারীঃ আপেল সিডার ভিনেগার চুলের যত্নে বেশ উপকারী ভূমিকা পালন করে। চুলের আর্দ্রতা যোগায় এবং চুলের খুশকি কমায়, যা চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে। আপেল সিডার ভিনেগার চুলে ব্যবহার করাই চুল মজবুত এবং স্বাস্থ্য উজ্জ্বল হয়।
  15. গাঁটের ব্যথা কমাতে সহায়কঃ আপেল সিডার ভিনেগার এর প্রদাহ-নিবারক গুণ গাঁটের ব্যথা ও বাত জনিত সমস্যায় সহায়ক হতে পারে। 

প্রাকৃতিক উপায়ে স্বাস্থ্য সুরক্ষায় আপেল সিডার ভিনেগার প্রতিদিনের জীবনযাত্রায় সহজ ব্যবহার করা যায়। তবে নিয়মিত ব্যবহারের পূর্বে সঠিক মাত্রা এবং সঠিক পদ্ধতি সম্পর্কে জানা প্রয়োজন। শারীরিক বিভিন্ন যত্নে যেকোনো উপায়ে ব্যবহার করার আগে অবশ্যই তার সঠিক জানতে হবে তা না হলে আমরা শারীরিকভাবে অসুস্থ হতে পারি।

আপেল সিডার ভিনেগার কোনটা ভালো

আপেল সিডার ভিনেগার কোনটা ভালো তার আগে আমাদেরকে জানতে হবে আপেল সিডার ভিনেগার কি? আপেল সিডার ভিনেগার (Apple Cider Vinegar) আপেল থেকে তৈরি একটি প্রাকৃতিক ভিনেগার, যা আপেলের রসকে গাঁজন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তৈরি করা হয়। এতে রয়েছে ভিটামিন, খনিজ, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ও প্রোবায়োটিক উপাদান।

আপেল সিডার ভিনেগার শরীরের বিভিন্ন উপকারে আসতে পারে, যেমন ওজন নিয়ন্ত্রণ, রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণ, হজমশক্তি উন্নত করা এবং ত্বকের যত্ন। বিশেষ করে, এতে থাকা “মাদার” (Mother) নামক উপাদান হজমে সহায়ক ব্যাকটেরিয়া ও এনজাইম সরবরাহ করে, যা স্বাস্থ্য রক্ষায় সহায়ক। তবে এটি ব্যবহারের আগে পরিমিত পরিমাণে ও সঠিকভাবে ব্যবহার করা পরামর্শ দেওয়া হয়।

বাজারে অনেক ধরনের আপেল সিডার ভিনেগার পাওয়া যায়, তবে সঠিক পণ্যটি বেছে নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। সেরা মানের আপেল সিডার ভিনেগার চেনার জন্য কিছু বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে জানা প্রয়োজন। সাধারণত প্রাকৃতিক, অপ্রক্রিয়াজাত এবং “মাদার” (Mother) যুক্ত আপেল সিডার ভিনেগার বেশি উপকারী। এর কিছু বর্ণনা নিম্নে দেয়া হলো-

প্রাকৃতিক এবং অপ্রক্রিয়াজাতঃ আপেল সিডার ভিনেগার কেনার সময় সব সময় প্রাকৃতিক এবং অপ্রক্রিয়াজাত পণ্য নির্বাচন করা উচিত। অপ্রক্রিয়াজাত ভিনেগার সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক অবস্থায় থাকে এবং এতে আপেলের সমস্ত পুষ্টিগুণ সংরক্ষিত থাকে। প্রক্রিয়াজাতকরণের সময় অনেক উপকারী উপাদান নষ্ট হয়ে যায়, তাই অপ্রক্রিয়াজাত পণ্য স্বাস্থ্যের জন্য অনেক বেশি উপকারী।

“মাদার” (Mother) যুক্ত ভিনেগারঃ ভিনেগারের বোতলে “মাদার” শব্দটি খেয়াল করবেন। মাদার হল ব্যাকেরিয়া ও এনজাইমের জৈব উপাদান, যা মূলত ভিনেগার তৈরীর প্রক্রিয়ায় তৈরি হয়। মাদারমুক্ত ভিনেগার হালকা মেঘলা দেখায় এবং এতে অনেক এনজাইম ও স্বাস্থ্যকর ব্যাকটেরিয়া থাকে যার শরীরের বিভিন্ন কাজে সহায়ক। তাই “মাদার” যুক্ত ভিনেগার স্বাস্থ্যের জন্য আরো বেশি উপকারী।

অর্গানিক এবং কাঁচা ভিনেগারঃ অর্গানিক মানে হল এটি এমন আপেল থেকে তৈরি, যেগুলো কোন রাসায়নিক সার বা কীটনাশক ছাড়াই চাষ করা হয়েছে। । তাই অর্গানিক ভিনেগার নিরাপদ এবং স্বাস্থ্যকর। এছাড়া কাঁচা ভিনেগার মানে এটি কোনরকম উত্তাপ প্রয়োগ না করে তৈরি করা হয়েছে, ফলে এর প্রাকৃতিক উপাদান সম্পূর্ণ অক্ষত থাকে।

প্রাকৃতিক রং ও গন্ধঃ সেরা মানের আপেল সিডার ভিনেগারে প্রাকৃতিক আপেলের সুবাস থাকবে এবং এটি সাধারণত হালকা মেঘলা দেখায়। যদি ভিনেগারটি অস্বাভাবিক পরিষ্কার ও উজ্জ্বল হয়, তবে ধরে নেওয়া যেতে পারে এটি অতিরিক্ত প্রক্রিয়াজাত। প্রাকৃতিক ভিনেগারে ভিনেগারের আসল বন্ধ ও রং বজায় থাকে।

প্যাকেজিং এবং সংরক্ষণঃ কাঁচের বোতলে প্যাকেজিং করা আপেল সিডার ভিনেগার সবচেয়ে ভালো, কারণ প্লাস্টিকের বোতলে রাসায়নিক বিক্রিয়া হতে পারে। এছাড়া কাঁচের বোতলে ভিনেগার ভালোভাবে সংরক্ষিত থাকে এবং দীর্ঘদিন তাজা থাকে।

সব মিলিয়ে অর্গানিক, মাদারযুক্ত, কাঁচা এবং প্রাকৃতিক রং ও গন্ধ বিশিষ্ট আপেল সিডার ভিনেগার সবচেয়ে মানসম্মত এবং স্বাস্থ্যকর। এ ধরনের ভিনেগার কেনার সময় বোতলের লেবেল পড়া উচিত এবং উপাদানের তালিকায় অপ্রাকৃতিক কোন সংযোজন বা রাসায়নিক না থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।

আরও পড়ুনঃ ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকা 

আপেল সিডার ভিনেগার খাওয়ার সময়

আপেল সিডার ভিনেগার খাওয়ার সময় আমাদেরকে সঠিকভাবে জানতে হবে, কারণ এটি প্রাকৃতিক উপাদান হলেও অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহারে কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হতে পারে। সঠিক সময়ে সঠিক পদ্ধতিতে গ্রহণ করলে এর স্বাস্থ্য উপকারিতা পাওয়া যায়। সেই জন্য আমাদের আপেল সিডার ভিনেগার খাওয়ার সঠিক সময় নির্বাচন করতে হবে।

  • সকালে খালি পেটেঃ অনেকেই সকালে খালি পেটে আপেল সিডার ভিনেগার খান। সকালে এক গ্লাস পানির সাথে ১-২ চামচ আপেল সিডার ভিনেগার মিশিয়ে পান করা শরীরের জন্য উপকারী হতে পারে। এটি হজম শক্তি উন্নত করে এবং দ্বীনের শুরুতেই শরীরকে উজ্জীবিত করে তোলে। তবে খালি পেটে খেলে গ্যাস্ট্রিক বা অম্বল হওয়ার ঝুঁকি আছে, তাই কিছুটা পানি মিশিয়ে হালকাতে খাওয়া উচিত।

  • খাবারের আগেঃ আপেল সিডার ভিনেগার স্বাস্থ্য উপকারিতা পেতে হলে এটি খাবার আরেকটি ভালো সময় হল প্রধান খাবারের আগে অর্থাৎ দুপুর বেলায়। এটি ক্ষুধা কমায় এবং শরীরের ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বাড়ায়, যা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে। আপেল সিডার ভিনেগার শরীরে কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে । 

যারা ওজন কমানোর জন্য আপেল সিডার ভিনেগার ব্যবহার করেন, তারা খাবারের ১৫-২০ মিনিট আগে পানির সাথে এটি মিশিয়ে খেতে পারেন। এতে খাবারের পর পরিপাক প্রক্রিয়া দ্রুত হয় এবং শরীরে চর্বি জমা কম হয়। ফলে শরীরের জন্য আপেল সিডার ভিনেগার এই সময়টা খাবারের জন্য নির্বাচন করতে পারেন।

  • রাতে ঘুমানোর আগেঃ যারা রাতে হালকা গ্যাস্ট্রিক বা হজমের সমস্যা অনুভব করেন, তারা ঘুমানোর আগে আপেল সিডার ভিনেগার খেতে পারেন। এটি গ্যাস্ট্রিক কমাতে এবং রাতে হজমের প্রক্রিয়া উন্নত করতে সাহায্য করে। তবে সঠিক মাত্রায় খাওয়া উচিত এবং এতে অতিরিক্ত অ্যাসিড যুক্ত করলে পরিপাকতন্ত্রে সমস্যা হতে পারে।

সঠিক মাত্রায় এবং পদ্ধতিতে গ্রহণঃ সাধারণত, দিনে ১-২ চা চামচ আপেল সিডার ভিনেগারই যথেষ্ট। এটি কখনোই সরাসরি পান করা উচিত নয়, কারণ এতে এসিডের পরিমাণ বেশি থাকে যা দাঁতের এনামেল নষ্ট করতে পারে। তাই এটি সবসময় পানির সাথে মিশিয়ে খেতে হবে।

স্বাস্থ্য উপকারিতা এবং সাবধানতাঃ আপেল সিডার ভিনেগার রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ, ওজন কমানো, হজম প্রক্রিয়া উন্নত করার জন্য সহায়ক হলেও অতিরিক্ত পরিমাণে গ্রহণের ফলে দাঁতের এনামেল নষ্ট হতে পারে এবং গলা ও পাকস্থলীর ক্ষতি করতে পারে। 

গর্ভবতী মহিলাদের, কিডনি রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের এবং যাদের উচ্চ অ্যাসিডিটি সমস্যা আছে তাদের এটি খাওয়ার আগে চিকিৎসকের অবশ্যই পরামর্শ নেওয়া উচিত।

সব মিলিয়ে, আপেল সিডার ভিনেগার খাওয়ার জন্য দিনের কিছু নির্দিষ্ট সময় বেছে নেওয়া উত্তম এবং এর পরিমাণ ও পদ্ধতি নিয়ন্ত্রণে রাখা প্রয়োজন। আপেল সিডার ভিনেগার ব্যবহারে যেন আমাদের স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে না পড়ে। এটি ব্যবহারে স্বাস্থ্য উপকারিতা হয় এবং ক্ষতির যেন কারণ না হয়।

ওজন কমাতে আপেল সিডার ভিনেগার খাওয়ার নিয়ম

ওজন কমাতে আপেল সিডার ভিনেগার খাওয়ার নিয়ম আমাদেরকে অবশ্যই জানতে হবে। আপেল সিডার ভিনেগারের স্বাস্থ্য গুণাবলী সম্পর্কে না জানলে সঠিক সময়ে সঠিক পরিমাণ খেতে পারব না। ওজন কমাতে আপেল সিডার ভিনেগার ব্যবহারের জনপ্রিয়তা বাড়ছে।

আপেল সিডার ভিনেগার ক্ষুধা কমাতে, বিপাক প্রক্রিয়া উন্নত করতে এবং শরীরে জমা চর্বি হ্রাস করতে সহায়তা করে। বর্তমান সময়ে এই পানীয়টি একটি বিশাল জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। তবে ওজন কমানোর জন্য আপেল সিডার ভিনেগার এর ব্যবহারে সঠিক নিয়ম জানা গুরুত্বপূর্ণ। নিচে আপেল সিডার ভিনেগার খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে বলা হলো-

কিভাবে কাজ করে আপেল সিডার ভিনেগার?

আপেল সিডার ভিনেগারে অ্যাসিটিক এসিড থাকে, যা ক্ষুধা কমায়, বিপাককে দ্রুত করে এবং শরীরে ফ্যাট জমা কমায়। এটি ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বাড়ায়, ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে। ইনসুলিন সঠিকভাবে কাজ করলে শরীর সহজে ওজন কমাতে পারে। এছাড়া এটি হজম শক্তি বাড়ায়, যা খাদ্যের সঠিক পরিপাক নিশ্চিত করে এবং অতিরিক্ত ফ্যাট জমা হতে বাধা দেয়।

আপেল-সিডার-ভিনেগার-স্বাস্থ্য-উপকারিতা


ওজন কমাতে আপেল সিডার ভিনেগার খাওয়ার সঠিক নিয়মঃ

ওজন কমানোর জন্য আপেল সিডার ভিনেগার পানির সাথে মিশিয়ে নিয়মিত খাওয়ায় বেশি কার্যকর। নিচে এর সঠিক নিয়ম দেওয়া হলঃ

  • খাওয়ার সময় এবং পরিমাণঃ প্রতিদিন সকালে খালি পেটে এবং রাতে ঘুমানোর আগে আপেল সিডার ভিনেগার খাওয়া যেতে পারে। তবে খাওয়ার ১৫-২০ মিনিট আগে এটি পান করলে বেশি উপকার পাওয়া যায়। প্রতিদিন ১-২ চা চামচ আপেল সিডার ভিনেগার এক গ্লাস পানির সাথে মিশিয়ে খাওয়া উচিত। 

আপেল সিডার ভিনেগার বেশি পরিমাণ না খাওয়াই ভালো, কারণ অতিরিক্ত অ্যাসিড শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। প্রথমদিকে কম পরিমাণে শুরু করে আস্তে আস্তে বাড়ানো ভালো । তবে দিনে ২ চা চামচের বেশি খাওয়ার দরকার নাই , কারণ এতে উপস্থিত অ্যাসিটিক এসিড অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে গলা ও পাকস্থলীর সমস্যা হতে পারে ।

  • সরাসরি না খাওয়ার পরামর্শঃ আপেল সিডার ভিনেগার স্বাস্থ্য উপকারিতা পেতে কখনোই আপেল সিডার ভিনেগার সরাসরি খাওয়া উচিত নয়। এতে অ্যাসিডের পরিমাণ বেশি থাকায় এটি দাঁতের এনামেল নষ্ট করতে পারে এবং গলা ও পাকস্থলীর ক্ষতি করতে পারে। তাই আপেল সিডার ভিনেগার সব সময় আমাদের অবশ্যই পানির সাথে মিশিয়ে খেতে হবে।

  • খাবারের আগে ব্যবহারঃ

দুপুর বা রাতের খাবারের আগে আপেল সিডার ভিনেগার খেলে ক্ষুধা কিছুটা কমে যায়, ফলে খাবার কম খাওয়ার প্রবণতা তৈরি হয়। এই অভ্যাস আমাদের অতিরিক্ত ওজন কমাতে সাহায্য করে। আমাদের ওজন কমানোর জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হলো খাবার কম খাওয়া। সে কারণে আপেল সিডার ভিনেগার খেলে ক্ষুধামন্দ দেখা দেয়।

  • ব্যায়াম ও সুষম খাদ্যের সাথে ব্যবহারঃ

ওজন কমানোর জন্য শুধুমাত্র আপেল সিডার ভিনেগার নির্ভরযোগ্য নয়। এটি অবশ্যই ব্যায়াম এবং সুষম খাদ্যাভ্যাসের সাথে ব্যবহার করতে হবে। নিয়মিত ব্যায়াম এবং স্বাস্থ্যকর খাদ্যের সাথে আপেল সিডার ভিনেগার খেলে ওজন কমানো অতি সহজতর হয়।

  • ফল পেতে কতদিন ব্যবহার করতে হবে ঃ

ওজন কমাতে আপেল সিডার ভিনেগার ব্যবহারে কিছুটা ধৈর্য ধরতে হবে । এটি কোন দ্রুত কাজ করা ওজন কমানোর উপায় নয়। ওজন কমাতে আপেল সিডার ভিনেগার দ্রুত কাজ করে না, বরং এটি একটি ধীর প্রক্রিয়া। নিয়মিত ব্যবহারে ধীরে ধীরে ফল পাওয়া যায়।

প্রতিদিন নিয়মিত ২-৩ মাস ধরে ব্যবহার করলে এর প্রভাব স্পষ্ট হতে পারে। তবে ওজন কমানোর জন্য এটি একমাত্র পদ্ধতি নয় এর সাথে সুষম খাদ্যাভ্যাস ও নিয়মিত ব্যায়াম অত্যন্ত জরুরী। এর ফলে এটি শরীরের বিপাক প্রক্রিয়া, বৃদ্ধি করে, ফলে শরীরের অতিরিক্ত চর্বি ধীরে ধীরে কমতে শুরু করে।

  • সতর্কতাঃ

ওজন কমাতে আপেল সিডার ভিনেগার নিরাপদ হলেও অতিরিক্ত ব্যবহার ক্ষতির কারণ হতে পারে। অতিরিক্ত অ্যাসিড শরীরে গ্যাস্ট্রিক এর সমস্যা, দাঁতের ক্ষয় ও হাড়ের সমস্যার কারণ হতে পারে। যারা গ্যাস্ট্রিক, গলা ও দাঁতের সমস্যা বা অ্যাসিডিটির সমস্যা নিয়ে ভুগছেন, তাদের এটি ব্যবহারের আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত ।

অতিরিক্ত এসিড শরীরে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা, দাঁতের ক্ষয় ও হাড়ের সমস্যার কারণ হতে পারে। তাই গর্ভবতী মহিলা, কিডনি রোগ এবং যাদের উচ্চ এসিডিটি সমস্যা আছে তাদের চিকিৎসকের অবশ্যই পরামর্শ নিয়ে খেতে হবে।

সুতরাং ওজন কমাতে আপেল সিডার ভিনেগার নিয়মিত ও পরিমিত পরিমাণে পান করা কার্যকর হতে পারে, তবে সঠিক নিয়ম এবং সঠিক পরিমাণে অবশ্যই খাওয়া গুরুত্বপূর্ণ।

আরও পড়ুনঃ মিল্কশেক এর উপকারিতা ও অপকারিতা 

আপেল সিডার ভিনেগার দাম কত

আপেল সিডার ভিনেগার দাম কত এই বিষয়টি অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। কারণ অনেকেই খেতে চাইলেও দাম না জানার কারণে বুঝতে পারেনা। আপেল সিডার ভিনেগারের দাম বিভিন্ন ব্রান্ড, গুণগত মান এবং বোতলের আকার বা পরিমাণ অনুযায়ী পরিবর্তিত হয়।

আপেল সিডার ভিনেগার বর্তমানে স্বাস্থ্য সচেতন মানুষের কাছে একটি জনপ্রিয় পণ্য হওয়ায় বাজারে অনেক ধরনের আপেল সিডার ভিনেগার পাওয়া যায় এবং বিভিন্ন ব্র্যান্ড অনুযায়ী এটির দাম ভিন্ন হতে পারে।

বিভিন্ন ব্র্যান্ড এবং দামঃ

বাজারে সাধারণত দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বেস কয়েকটি ব্র্যান্ডের আপেল ফিডার ভিনেগার পাওয়া যায়। আন্তর্জাতিক মানের কিছু জনপ্রিয় ব্র্যান্ড যেমন- ব্র্যাগ (Bragg), আমেরিকান গার্ডেন (American Garden), ড্রেসডেন ফুডস (Dresden Foods) এবং দেশীয় ব্র্যান্ডগুলোর মধ্যে মেজনো (Mazno) ও প্রো ন্যাচারালস (Pro Naturls) পাওয়া যায়। 

এই আপেল সিডার ভিনেগার এর দাম সাধারণত ব্র্যান্ড, গুণগত মান এবং প্যাকেজিংয়ের ওপর নির্ভর করে। বর্তমানে আপেল সিডার ভিনেগার বিভিন্ন দামের হওয়ায় আমাদের দাম নিয়ে কনফিউশন থাকে। নিচে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ভিনেগারের দাম বলা হলো-

  • ব্র্যাগ আপেল সিডার ভিনেগারঃ এটি বাজারে খুব জনপ্রিয় একটি আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড এবং এর মান বেশ উচ্চমানের বলে বিবেচিত হয়। বাংলাদেশে ৪৭৩ মিলিলিটার ব্যাগ আপেল লিডার ভিনেগারের দাম প্রায় ১০০০-১২০০ টাকার মধ্যে থাকে।
  • আমেরিকান গার্ডেন আপেল সিডার ভিনেগারঃ এটি ভালো মানের ভিনেগার হিসেবে পরিচিত এবং বাংলাদেশে ৪৭৩ মিলিটার বোতলের দাম সাধারণত ৫০০ থেকে ৭০০ টাকার মধ্যে পাওয়া যায়।
  • দেশীয় ব্যান্ডঃ দেশীয় কিছু ব্র্যান্ড আপেল সিডার ভিনেগার তুলনামূলক কম দামে অফার করে থাকে। দেশীয় ব্র্যান্ড গুলোর ক্ষেত্রে ২৫০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত পাওয়া যেতে পারে, যা বাজেট সচেতন ক্রেতাদের জন্য সুবিধা জনক।
  • অর্গানিক এবং “মাদার” যুক্ত ভিনেগারের দামঃ “মাদার” বা প্রাকৃতিক ব্যাকটেরিয়া সমৃদ্ধ আপেল সিডার ভিনেগার একটু বেশি কার্যকরী এবং তাই এটির দাম সাধারণত একটু বেশি হয়। অর্গানিক এবং “মাদার” যুক্ত ভিনেগার স্বাস্থ্যের জন্য বেশি উপকারী হওয়ায় এটির দাম সাধারণ ভিনেগারের তুলনায় ১৫-২০% বেশি হতে পারে।

দাম নির্ধারণে অন্যান্য কারণঃ

আপেল সিডার ভিনেগারের দামের পার্থক্য মূলত এর গুণগত মান, অর্গানিক সার্টিফিকেশন এবং প্যাকেজিং এর ওপর নির্ভর করে। যেমন অর্গানিক সার্টিফিকেসন আছে এমন ভিনেগার গুলো সাধারণত বেশি দামে বিক্রি হয়, কারণ এগুলো উৎপাদনে কোন রাসায়নিক সার বা কীটনাশক ব্যবহার করা হয় না। এছাড়া ভিনেগার প্লাস্টিকের বোতলের তুলনায় একটু বেশি দামে বিক্রি হয়।

অনলাইন এবং অফলাইন দোকানের দামঃ

অনলাইন মার্কেটপ্লেস, যেমন দারাজ, আজকের ডিল এবং আমাজান বাংলাদেশ, আপেল সিডার ভিনেগারের বিভিন্ন ব্র্যান্ডের দাম প্রদর্শন করে এবং মাঝে মাঝে ছাড়ও দেয়। অফলাইনে সুপার শপ এবং ফার্মেসিতেও, আপেল সিডার ভিনেগার পাওয়া যায়, তবে বিভিন্ন দোকানের মাঝে দামের কিছু পার্থক্য হতে পারে।

পরিশেষে বলা যাই যে, আপেল সিডার ভিনেগারের দাম ব্রান্ড, গুণগত মান, অর্গানিক সার্টিফিকেসন এবং প্যাকেজিং এর ওপর নির্ভর করে ২৫০ টাকা থেকে শুরু করে ১২০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। আপেল সিডার ভিনেগার এর দাম সম্পর্কে জেনে থাকা আমাদের প্রয়োজন।

আপেল সিডার ভিনেগার এর উপকারিতা ও অপকারিতা

আপেল সিডার ভিনেগার এর উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ আপেল সিডার ভিনেগার বর্তমান সময়ের একটি জনপ্রিয় পানীয়। যা ওজন নিয়ন্ত্রণের জন্য ব্যবহার করেন। তাই আপেল সিডার ভিনেগার সম্পর্কে আমাদের কিছুটা হলেও জানতে হবে।

আপেল সিডার ভিনেগার (Apple Cider Vinegar) হল একটি প্রাকৃতিক ভিনেগার, যা আপেলের রস ফার্মেন্টেশন ( গাঁজন) করে তৈরি করা হয়। এতে বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন, খনিজ পদার্থ এবং বিশেষত অ্যাসিটিক অ্যাসিড রয়েছে, যা স্বাস্থ্য উপকারিতার জন্য বহুল জনপ্রিয়।

প্রাকৃতিক এবং প্রাচীন এই ভিনেগারে রয়েছে কিছু উল্লেখযোগ্য উপকারিতা। এর বিভিন্ন উপকারিতা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো-

আপেল সিডার ভিনেগার এর উপকারিতাঃ

  • ওজন কমাতে সহায়তাঃ ওজন কমানোর ক্ষেত্রে আপেল সিডার ভিনেগার খুবই কার্যকরী। এর মধ্যে থাকা অ্যাসিটিক অ্যাসিড ক্ষুধা কমাতে এবং বিপাক প্রক্রিয়া বাড়াতে সাহায্য করে। এটি ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বাড়ায় এবং রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।

আপেল সিডার ভিনেগার ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বাড়ায় এবং রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে যা অতিরিক্ত ওজন কমাতে সহায়ক। গবেষণায় দেখা গেছে যে প্রতিদিন আপেল সিডার ভিনেগার খেলে শরীরের অতিরিক্ত ফ্যাট হ্রাস পেতে পারে।

  • রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্যঃ ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য আপেল সিডার ভিনেগার বেশ উপকারী। এতে উপস্থিত অ্যাসিটিক অ্যাসিড ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বাড়ায় যা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে। খাবারের পরপর এটি খেলে শরীরে সর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ থাকে এবং অতিরিক্ত শর্করা শোষিত হয় না।

  • হজম শক্তি উন্নত করাঃ আপেল সিডার ভিনেগার হজমের প্রক্রিয়া উন্নত করতে সহায়ক। এতে প্রোবায়োটিক উপাদান রয়েছে, যা পেটের ব্যাকটেরিয়ার ভারসাম্য বজায় রাখে এবং হজম প্রক্রিয়াকে আরো সক্রিয় করে তোলে। এটি গ্যাস, কোষ্ঠকাঠিন্য এবং অম্বলের মতো সমস্যা দূর করতে পারে।

  • ত্বকের যত্নঃ আপেল সিডার ভিনেগার ত্বকের পিএইচ স্তর ঠিক রাখে, যা ত্বককে উজ্জ্বল ও স্বাস্থ্যকর করে তোলে। এতে রয়েছে অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল এবং এন্টিফাঙ্গাল বৈশিষ্ট্য, যা ত্বকের ব্রণ ও অন্যান্য সংক্রমণ প্রতিরোধে সাহায্য করে। ত্বকে এটি ব্যবহার করলে ত্বক মসৃণ ও উজ্জ্বল হয় এবং সংক্রমণ থেকে মুক্ত থাকে।

  • চুলের যত্নে সহায়তাঃ চুলে আপেল সিডার ভিনেগার ব্যবহার চুলের পিএইচ স্তর নিয়ন্ত্রণে সহায়ক এবং চুলকে মসৃণ ও উজ্জ্বল করে। এটি চুলের গোড়ায় জমে থাকা ধুলোবালি ও খুশকি দূর করতে পারে এবং চুলকে স্বাস্থ্যকর রাখতে সহায়তা করে।

  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়ঃ আপেল সিডার ভিনেগারে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া ও ফাঙ্গাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে সহায়ক। এটি শরীর থেকে টক্সিন দূর করতে সহায়তা করে যা শরীরকে আরো সুস্থ রাখে।

  • হৃদরোগের ঝুঁকি কমানোঃ আপেল সিডার ভিনেগারে পলিফেনোল এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট রয়েছে, যা হৃদপিণ্ডকে সুরক্ষিত রাখে এবং কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়ক। এটি রক্তের খারাপ কোলেস্টেরল (LDL) কমাই এবং ভালো কোলেস্টেরল (HDL) বাড়ায়। ফলে হৃদরোগে ঝুঁকি কিছুটা কমে যায়।

  • শরীরের পিএইচ মাত্রা ঠিক রাখাঃ আপেল সিডার ভিনেগার শরীরের পিএইচ স্তর ঠিক রাখতে সাহায্য করে। এটি শরীরের অম্ল ক্ষারক ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে, যা শরীরের অভ্যন্তরীণ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সঠিক কার্যক্রম বজায় রাখতে সাহায্য করে। ফলে শরীরের বিভিন্ন সমস্যা দূর হয়।

  • বিষাক্ত পদার্থ দূর করাঃ আপেল সিডার ভিনেগার একটি প্রাকৃতিক ডিটক্সিফায়ার হিসেবে কাজ করে। এটি আমাদের লিভার পরিষ্কার করতে এবং শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ বের করতে সহায়তা করে। নিয়মিত আপেল সিডার ভিনেগার খেলে আমাদের শরীর থেকে টক্সিন দূর হয় যা আমাদের শরীরকে সুস্থ ও সতেজ রাখতে সাহায্য করে।

  • জয়েন্ট এবং পেশীর ব্যথা কমানোঃ আপেল সিডার ভিনেগার আমাদের শরীরের প্রদাহ কমাতে অনেক সাহায্য করে, যা জয়েন্ট ও পেশীর ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। আমরা যারা আর্থ্রাইটিস বা অন্য কোন জয়েন্টের সমস্যায় ভুগছি তারা অবশ্যই নিয়মিত এই আপেল সিডার ভিনেগার খেলে কিছুটা শারীরিক স্বস্তি পেতে পারে।

  • ব্যবহারের সতর্কতাঃ যদিও আপেল সিডার ভিনেগার আমাদের অনেক উপকারে আসে তারপরও আপেল সিডার ব্যবহারের ক্ষেত্রে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। অতিরিক্ত পরিমাণে আপেল সিডার ভিনেগার খাওয়া যাবেনা। খেলে গ্যাস্ট্রিক, দাঁতের ক্ষয় এবং হাড়ের সমস্যা হতে পারে সব সময় পানি বা অন্যান্য তরলের সাথে মিশিয়ে খাওয়া উচিত ১-২ চামচের বেশি খাওয়া উচিত নয়।

আপেল সিডার ভিনেগার এর অপকারিতাঃ যদিও আপেল সিডার ভিনেগার স্বাস্থ্য উপকারিতার জন্য ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়, তবুও অতিরিক্ত ব্যবহার বা সঠিক নিয়ম মেনে না চললে এটি শরীরের জন্য কিছু ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে। নিচে আপেল সিডারের সম্ভাব্য অপকারিতা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো-

  • দাঁতের ক্ষয়ঃ আপেল সিডার ভিনেগার উচ্চমাত্রার অ্যাসিটিক এসিডযুক্ত হাওয়ায় এটি সরাসরি দাঁতের এনামেল ক্ষয় করতে পারে। দাঁতের এনামেল দুর্বল হলে দাঁত ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে যায় এবং দাঁতের এনামেল ক্ষয় করতে পারে। এর এনামেল দুর্বল হলে দাঁত ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে যায় এবং দাঁতের সংবেদনশীলতা বাড়তে পারে।

বিশেষ করে, যারা আপেল সিডার ভিনেগার সরাসরি পান করেন তাদের জন্য এই সমস্যা বেশি দেখা যেতে পারে। দাঁতের ক্ষয় রোধে এটি সব সময় পানির সাথে মিশিয়ে খাওয়া উচিত এবং খাওয়ার পর মুখ ভালোভাবে ধুয়ে নেওয়া উচিত। আপেল সিডার ভিনেগার খেতে হলে অবশ্যই আমাদেরকে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।

  • গলা এবং পাকস্থলীর সমস্যাঃ আপেল সিডার ভিনেগার অতিরিক্ত খেলে গলা ও পাকস্থলীর সমস্যা হতে পারে। এতে উপস্থিত এসিড সরাসরি গলা বা পাকস্থলীতে পৌঁছালে গলার জ্বালাপোড়া এবং অস্বস্তি সৃষ্টি করতে পারে। অতিরিক্ত এসিডের কারণে পাকস্থলীর অম্ল ভাব বাড়ে, যা এসিডিটির সমস্যা তৈরি করে। যারা গ্যাস্ট্রিক বা অ্যাসিডিটির সমস্যায় ভুগছেন তাদের জন্য এটি আরো বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।

  • হাড়ের ঘনত্ব হ্রাসঃ আপেল সিডার ভিনেগার অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে হারে ঘনত্ব কমে যেতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, ভিনগারের এসিড শরীরের ক্যালসিয়াম শোষণের প্রক্রিয়ায় বাধা সৃষ্টি করতে পারে। দীর্ঘদিন ধরে অতিরিক্ত আপেল সিডার ভিনেগার খেলে হাড়ের ক্ষয় এবং হাড়ের দুর্বলতা দেখা দিতে পারে, যা অস্টিওপরোসিসের ঝুঁকি বাড়ায়।

  • রক্তে পটাশিয়ামের মাত্রা হ্রাসঃ অতিরিক্ত আপেল ফিডার ভিনেগার খেলে রক্তে পটাশিয়ামের মাত্রা কমে যেতে পারে, যা হাইপো ক্যালিমিয়া নামে পরিচিত। পটাশিয়ামের মাত্রা কমে গেলে মাংস বেশি দুর্বল হয়ে পড়ে এবং হার্টের কার্যকারিতা ব্যাহত হতে পারে। দীর্ঘমেয়াদে এটি রক্তচাপের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে যা, শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।

  • ত্বকের জ্বালাপোড়া এবং এলার্জিঃ অনেকেই ত্বকের সমস্যার সমাধান হিসেবে আপেল সিডার ভিনেগার সরাসরি ত্বকে ব্যবহার করেন। তবে এতে থাকা উচ্চমাত্রার অ্যাসিড ত্বকে জ্বালাপোড়া, রে স বা অ্যালার্জির সৃষ্টি করতে পারে, বিশেষ করে সংবেদনশীল ত্বকের জন্য। ভিনেগার সরাসরি উচিত, তাতে এটি ত্বকের ওপর নরম প্রভাব ফেলে।

  • গ্যাস্ট্রিকের সমস্যাঃ অতিরিক্ত আপেল সিডার ভিনেগার খেলে আমাদের গ্যাস্ট্রিক সমস্যার কারণ হতে পারে। এটি পাকস্থলীতে এসিডের মাত্রা বাড়ায়, ফলে গ্যাটট্রিক ও অম্ল ভাব বাড়ে যারা নিয়মিত। গ্যাস্ট্রিক বা অম্ল সমস্যায় ভুগছেন তাদের ক্ষেত্রে এই ভিনেগার আরো বেশি সমস্যা তৈরি করতে পারে। আমাদের উচিত সব সময় সীমিত পরিমানে খাওয়া।

  • নিম্ন রক্তচাপঃ আপেল সিডার ভিনেগার শরীরে ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বাড়ায় এবং রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। তবে, অতিরিক্ত ভিনেগার খেলে রক্তচাপ হ্রাস পেতে পারে, যা নিম্ন রক্তচাপের কারণ হতে পারে। এই কারণে, যাদের রক্তচাপ নিম্ন থাকার প্রবণতা রয়েছে তাদের জন্য অ্যাপেল সিডার ভিনেগার এর অতিরিক্ত ব্যবহার ক্ষতিকর হতে পারে।

  • ঔষধের সাথে প্রতিক্রিয়াঃ আপেল ফিডার ভিনেগার কিছু নির্দিষ্ট ঔষধের সাথে প্রতিক্রিয়া করতে পারে। বিশেষ করে ডায়াবেটিস ও হৃদরোগের ঔষধের সাথে এটি ব্যবহারে সমস্যা দেখা দিতে পারে। এটি ইনসুলিনের কার্যকারিতাই প্রভাব ফেলতে পারে, যা রক্তে শর্করার মাত্রা হঠাৎ করে পরিবর্তন আনতে পারে।

  • গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল সমস্যাঃ আপেল সিডার ভিনেগার অতিরিক্ত খেলে কিছু মানুষের গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল সমস্যা দেখা দিতে পারে। এতে থাকা এসিড পাকস্থলীর দেয়ালে জ্বালাপোড়া তৈরি করতে পারে এবং পেট ফাঁপা, ডায়রিয়া ও বমি ভাবের সৃষ্টি করতে পারে। তাই আমাদের সবসময় উচিত পরিমাণে ব্যবহার করা।

ব্যবহার সম্পর্কিত সতর্কতাঃ

  • আপেল সিডার ভিনেগার সব সময় পানি বা অন্য তরল খাবারের সাথে মিশিয়ে খাওয়া উচিত
  • দিনে ১-২ চামচ এর বেশি না খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়
  • গর্ভবতী মহিলা, কিডনি সমস্যা বা এসিডির সমস্যায় যারা ভুগছেন তাদের এটি ব্যবহার করার আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত
  • মুখে খাওয়ার পর দাঁত ভালোভাবে পরিষ্কার করা উচিত, যাতে এটি দাঁতের ক্ষতি না করে।

আপেল সিডার ভিনেগার একটি প্রাকৃতিক উপাদান যা সঠিকভাবে এবং পরিমিত ব্যবহারে সাথের জন্য অনেক উপকার বয়ে আনতে পারে। এটি ওজন কমানো, রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ, হজম শক্তি উন্নত করা এবং ত্বক ও চুলের যত্নে সহায়ক। আপেল সিডার ভিনেগার অনেক ভাবেই আমাদের সাহায্য করে।

তবে অতিরিক্ত ব্যবহার বা নিয়ম না মানলে এটি দাঁতের ক্ষয়, গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা, হাড়ের ঘনত্ব রাশ, গলা ও পাকস্থলীতে অস্বস্তি এবং ত্বকের জ্বালাপোড়ার মতো কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া ঘটতে পারে। তাই সিডার ভিনেগার ব্যবহারে সতর্কতা ও পরিমিতি বজায় রাখা জরুরি যাতে এর উপকারিতা উপভোগ করা যায় এবং অপকারিতা এড়ানো সম্ভব হয়।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ও হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়

আপেল সিডার ভিনেগার স্বাস্থ্য উপকারিতার জন্য বহু প্রাচীনকাল থেকে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এটি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। এর মধ্যে থাকা প্রাকৃতিক উপাদান, বিশেষ করে অ্যাসিটিক অ্যাসিড, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং পলিফেনোল, শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করার পাশাপাশি হৃদরোগের বুকে কমাতে সহায়ক-

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে আপেল সিডার ভিনেগারঃ আপেল সিডার ভিনেগারে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা শরীরের কোচকে ফ্রি রেডিক্যালের (অতি সক্রিয় অক্সিজেন অনু) ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষা করে। ফ্রি রেডিকেলের প্রভাব কমাতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গুলো কাজ করে এবং শরীরে সেল ক্ষতি প্রতিরোধ করে, যা বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ সহায়ক।

আপেল সিডার ভিনেগারে রয়েছে ব্যাকটেরিয়া ও ফাঙ্গাস বিরোধী বৈশিষ্ট্য, যা শরীরকে বিভিন্ন সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে এবং সাধারণ সর্দি-কাশি বা সংক্রমণ জনিত রোগ প্রতিরোধে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। এটি শরীরের অভ্যন্তরে পিএইচমাত্রা সঠিকভাবে বজায় রাখতে সাহায্য করে।

পরিবেশ তৈরি করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে উন্নত করে। নিয়মিত আপেল সিডার ভিনেগার পান করলে শরীরের টক্সিন কমে এবংইমিউন সিস্টেম আরো শক্তিশালী হয়। সাধারণভাবে আপেল সিডার ভিনেগার আমাদের রূপ প্রতিরোধ ক্ষমতাতে অনেক ভাবেই সাহায্য করে।

হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে আপেল সিডার ভিনেগারঃ আপেল সিডার ভিনেগারে থাকা পলিফেনাল এবং এসিটিক অ্যাসিড রক্তের খারাপ কোলেস্টেরল (LDL) কমাতে সহায়ক। বেশি মাত্রায় খারাপ কোলেস্টেরল রক্তনালিতে জমে ব্লক তৈরি করে, যা হৃদরোগের প্রধান কারণ। কিন্তু আপেল সিডার ভিনেগার খেলে কোলেস্টেরলের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ থাকে এবং রক্ত প্রবাহ ঠিক ভাবে চলতে পারে।

আপেল সিডার ভিনেগার রক্তে ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে যা, উচ্চ রক্তচাপ জনিত হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাস করে। আপেল সিডার ভিনেগার ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বাড়ায়, ফলে রক্তে সরকার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে, যা ডায়াবেটিস জনিত হৃদরোগ প্রতিরোধে সহায়ক।

গবেষণায় দেখা গেছে, রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে থাকলে হৃদরোগের ঝুঁকি কম থাকে, কারণ উচ্চ রক্তে শর্করার কারণে জীব যন্ত্রে অতিরিক্ত চাপ পড়ে। তাই নিয়মিত আপেল সিডার ভিনেগার গ্রহণের মাধ্যমে হৃদরোগের হ্রাস পেতে পারে।

পরিশেষে বলা যায় যে আপেল সিডার ভিনেগার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সহায়ক প্রাকৃতিক উপাদান হিসেবে কাজ করে। এটি সব সময় পরিমিত পরিমাণে এবং সঠিক নিয়মে ব্যবহার করা উচিত, যাতে এর পূর্ণ উপকারিতা উপভোগ করা যায় এবং শরীর সুস্থ থাকে।

আপেল সিডার ভিনেগার উইথ মাদার খাওয়ার নিয়ম

আপেল সিডার ভিনেগার উইথ মাদার খাওয়ার নিয়ম আমাদেরকে জানতে হবে। অ্যাপেল সিডার ভিনেগার উইথ মাদার স্বাস্থ্য উপকারিতা জন্য অনেকেই ব্যবহার করেন। এর “মাদার” অংশটিতে রয়েছে প্রাকৃতিক এনজাইম, ভালো ব্যাকটেরিয়া এবং উপকারী প্রোটিন যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে, হাজং শক্তি উন্নত করতে এবং ওজন কমাতে সাহায্য করে।

আপেল-সিডার-ভিনেগার-স্বাস্থ্য-উপকারিতা


আপেল সিডার ভিনেগার উইথ মাদার এর সঠিক উপকার পেতে হলে অবশ্যই আমাদের সঠিক নিয়ম মেনে খেতে হবে। এখানে আপেল সিডার ভিনেগার উইথ মাদার খাওয়ার নিয়ম নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো-

খাওয়ার সঠিক নিয়ম ও পরিমাণঃ সাধারণত আপেল সিডার ভিনেগার খাওয়ার সময় সরাসরি না খেয়ে পানির সাথে মিশিয়ে খেতে হবে। অ্যাসিটিক উপাদান সরাসরি খেলে দাঁতের এনামেল ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং পাকস্থলীতে জ্বালাপোড়া তৈরি করতে পারে।

  • পরিমাণঃ প্রতিদিন ১-২ চা চামচ আপেল সিডার ভিনেগার ২৫০ মিলিলিটার ( এক গ্লাস) পানির সাথে মিশে খাওয়া ভালো
  • শুরুর মাত্রাঃ প্রথমবার খাওয়ার সময় এক চা চামচ দিয়ে শুরু করেন এবং কিছুদিন পর প্রয়োজনে ২ চামচ পর্যন্ত বাড়ানো যেতে পারে

খাওয়ার সময় ও উপকারিতাঃ

আপেল সিডার ভিনেগার খাওয়ার সময় নির্দিষ্ট কিছু সময়ে খেলে এর উপকারিতা আরো ভালো পাওয়া যাবে। যেমন-

  • সকালে খালি পেটে পান করুনঃ সকালে খালি পেটে আপেল সিডার ভিনেগার পান করলে এটি শরীরের মেটাবলিজম বাড়াবে সাহায্য করে এবং ওজন কমাতে সাহায্য করে। এটি পেটে টক্সিন দূর করে এবং হজম প্রক্রিয়াকে সক্রিয় করে, যা সারা দিনের খাবার হজমে সহায়ক।
  • প্রধান খাবার এর আগেঃ দুপুরে খাবারের ৩০ মিনিট আগে এটি পান করলে ক্ষুধা কম অনুভূত হয় এবং খাবারের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ থাকে, যা ওজন কমাতে সহায়ক। এ ছাড়া এটি হজম প্রক্রিয়া উন্নত করে এবং খাবার থেকে পুষ্টি শোষণে সাহায্য করে।
  • রাতে ঘুমানোর আগেঃ রাতে ঘুমানোর আগে আপেল সিডার ভিনেগার উইথ মাদার খাওয়া খাওয়া রাতে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণের সহায়ক। এটি রাতে শরীরের মেটাবলিজম কার্যক্রম চালিয়ে যেতে সাহায্য করে, ফলে রক্তের পিএইচ স্তর ঠিক থাকে এবং ঘুমের মধ্যে শরীরের কার্যক্ষমতা বজায় রাখে।

ব্যবহার সতর্কতা কিছু টিপসঃ

  • সরাসরি না খাওয়াঃ আপেল সিডার ভিনেগার উইথ মাদার সারা শরীর খেলে দাঁতের এনামেল ক্ষয় করতে পারে এবং গলা ও পাকস্থলীতে অস্বস্তি সৃষ্টি করতে পারে। তাই এটি সব সময় পানি দিয়ে মিশিয়ে খাওয়া উচিত।
  • স্ট্র ব্যবহার করাঃ দাঁতের সুরক্ষার জন্য আপেল সিডার ভিনেগার পান করার সময় স্ট্র ব্যবহার করতে পারেন, যা দাঁতের এনামেলের ক্ষতি এড়াতে সাহায্য করবে।
  • মুখ ধুয়ে নিনঃ আপেল সিডার ভিনেগার পান করার পর মুখ ধুয়ে নেওয়া ভালো, কারণ এতে থাকা এসিড দাঁতের থেকে যেতে পারে যা দাঁতের ক্ষয় ঘটাতে পারে।
  • সঠিক মাত্রায় সীমাবদ্ধ রাখুনঃ দিনে ২ চা চামচের বেশি খাওয়া উচিত নয়। অতিরিক্ত খেলে এটি দাঁতের ক্ষয়, হজমের সমস্যা এবং হাড়ের ঘনত্ব রাশের মত পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া ঘটাতে পারে।

কারা এড়িয়ে চলবেনঃ গর্ভবতী মহিলা, শিশু এবং যাদের গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা রয়েছে তারা আপেল ফিডার ভিনেগার গ্রহণের আগে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। কিছু ক্ষেত্রে এটি অন্যান্য ওষুধের সাথে প্রতিক্রিয়া করতে পারে, তাই যারা উচ্চ রক্তচাপ ডায়াবেটিস বা হৃদরোগের ওষুধ সেবন করছেন তাদের এটি খাওয়ার আগে সতর্ক হওয়া প্রয়োজন।

পরিশেষে, আপেল সিডার ভিনেগার উইথ মাদার একটি প্রাকৃতিক উপাদান যা সঠিকভাবে এবং পরিমিত ব্যবহারে স্বাস্থ্য উপকারিতা প্রদান করতে পারে। তবে সব সময় এটি পানি দিয়ে মিশিয়ে খেতে হবে এবং দিনে দুই চা চামচ এর বেশি না খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।

আপেল সিডার ভিনেগার উইথ মাদার সঠিক নিয়ম মেনে খেলে এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো, ওজন নিয়ন্ত্রণ এবং হজম প্রক্রিয়া উন্নত করার পাশাপাশি আরো অনেক স্বাস্থ্য উপকারিতা দিতে পারে। তাই এটি খাওয়ার সময় সব সময় পানি দিয়ে মিশিয়ে নেওয়া এবং দিনে দুই চা চামচ বেশি খাবেন না।

আপেল সিডার ভিনেগার এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

আপেল সিডার ভিনেগার এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে আমাদের অবগত থাকতে হবে।  আপেল সিডার ভিনেগার (Apple Cider Vinegar) বিভিন্ন স্বাস্থ্য উপকারিতার জন্য ব্যবহৃত হলেও, অতিরিক্ত বা ভুলভাবে ব্যবহার করলে এটি শরীরের জন্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া তৈরি করতে পারে।এই পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া গুলো বেশ গুরুতর হতে পারে এবং দীর্ঘমেয়াদে স্বাস্থ্যের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। এখানে আপেল সিডার ভিনেগারের কিছু উল্লেখযোগ্য পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো-

  • দাঁতের ক্ষয়ঃ আপেল সিডার ভিনেগার উচ্চমাত্রার অ্যাসিটিক যুক্ত যা সারা শরীর বা দীর্ঘমেয়াদি খেলে দাঁতের এনামেল দুর্বল হয়ে যায়। দাঁতের এনামেল ক্ষয়প্রাপ্ত হলে দাঁতের সংবেদনশীলতা বাড়তে পারে, যা দাঁতের ক্ষয় এবং ব্যথার কারণ হতে পারে। তাই আপেল সিডার ভিনেগার খাওয়ার পর মুখ ধুয়ে ফেলা এবং এটিকে সব সময় পানি দিয়ে মিশিয়ে খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।
  • গলা এবং পাকস্থলীতে জ্বালাপোড়াঃ এসিডিক হওয়ার কারণে আপেল চেনার ভিনেগার অতিরিক্ত খেলে গলা এবং পাকস্থলীতে জ্বালাপোড়ার সমস্যা হতে পারে। সরাসরি বা ঘন ঘন এটি খাওয়া পাকস্থলীর এসিডিটিকে বাড়িয়ে দিলে, যা গ্যাস্ট্রিক বা পেট ফাঁপা কারণ হতে পারে। যাদের আগে থেকেই গ্যাস্ট্রিক বা এসিডিটির সমস্যা রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে এই সমস্যা আরো বেড়ে যেতে পারে।

  • রক্তে পটাশিয়াম এর মাত্রা কমানোঃ অতিরিক্ত আপেল সিডার ভিনেগার খেলে রক্তের পটাশিয়ামের মাত্রা হ্রাস পেতে পারে, যা হাইপোক্যালিমিয়া নামে পরিচিত। পটাশিয়ামের অভাবে মাংসপেশীর দুর্বলতা, অসস্তি এবং রক্তচাপের তারতম্য দেখা দিতে পারে। দীর্ঘ মেয়াদ এর পটাশিয়ামের ঘাটতি হলে হার্টের কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটতে পারে এবং শারীরিক দুর্বলতা তৈরি হতে পারে।

  • হাড়ের ঘনত্ব হ্রাসঃ সিডার ভিনেগার দীর্ঘ মেয়াদে অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে হাড়ের ঘনত্ব হ্রাস পেতে পারে। এতে উপস্থিত অ্যাসিড শরীরে ক্যালসিয়াম শোষণে বাধা সৃষ্টি করতে পারে, যা হাড়ের শক্তি কমিয়ে দেয় এবং হারকে দুর্বল করে। বিশেষ করে মহিলাদের জন্য এটি আরো বেশি ঝুঁকিপূর্ণ, কারণ তাদের মধ্যে হাড় ক্ষয় এর সমস্যা তুলনামূলকভাবে বেশি দেখা যায়।

  • ত্বকের সমস্যাঃ অনেকেই ত্বকের যত্নে আপেল সিডার ভিনেগার ব্যবহার করেন, তবে এটি সরাসরি তাকে ব্যবহার করলে ত্বকে জ্বালাপোড়া এবং এলার্জির সমস্যা দেখা দিতে পারে। এতে থাকা এসিড উপাদান ত্বকের উপর সংবেদনশীল তোকে র‌্যাশ বা চুলকানির সৃষ্টি করতে পারে। ত্বকে ব্যবহারের ক্ষেত্রে এটি সব সময় পানি দিয়ে পাতলা করে ব্যবহার করা উচিত।

  • গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল সমস্যাঃ আপেল সিডার ভিনেগারের অতিরিক্ত ব্যবহার কিছু মানুষের ক্ষেত্রে গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল সমস্যা তৈরি করতে পারে। এতে পাকস্থলীর এসিডের মাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে পেট ফাঁপা, ডায়রিয়া এবং বমি ভাব দেখা দিতে পারে। এই সমস্যা থেকে বাঁচতে এটিকে পরিমিত পরিমাণে খাওয়া একান্ত গুরুত্বপূর্ণ।

  • অন্তঃসত্ত্বা ও স্তন্যদায়ী মহিলাদের জন্য ঝুঁকিঃ অন্তঃসত্তা এবং স্তন্যদায়ী মহিলাদের আপেল সিডার ভিনেগার সেবনের আগে সতর্ক থাকা উচিত কারণ এটি হরমোনের প্রভাব ফেলতে পারে। তারপরও যদি কেউ আপেল সিডার ভিনেগার খাওয়ার ইচ্ছা পোষণ করেন তাহলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে পান করতে হবে।

  • ওষুধের সঙ্গে বিহুর প্রতিক্রিয়াঃ কিছু ওষুধের বা ডাইউরেটিক্সের সঙ্গে আপেল ফিদার ভিনেগার প্রতিক্রিয়া করতে পারে, যা স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়াতে পারে। এইজন্য যারা ইনসুলিন বা ওষুধ ব্যবহার করেন তারা অবশ্যই আপেল সিডার ভিনেগার খাবার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন। উজ্জ্বল

পরিশেষে বলা যায় যে যদিও আপেল সিডার ভিনেগার স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী, তবে অতিরিক্ত বা ভুলভাবে ব্যবহার করলে এটি শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া এড়াতে এটিকে সব সময় পরিমিত মাত্রায় ও সঠিক নিয়ম মেনে খাওয়া উচিত, যাতে এর উপকারিতা উপভোগ করা যায় এবং অপকারিতা এড়ানো সম্ভব হয়।

ত্বক ও চুলের যত্নে কার্যকর সমাধান

ত্বক ও চুলের যত্নে কার্যকর সমাধান এনে দেয় আপেল সিডার ভিনেগার। আপেল সিডার ভিনেগার ত্বক ও চুলের যত্নে একটি প্রাকৃতিক ও কার্যকর উপাদান হিসেবে কাজ করে। এরমধ্যে রয়েছে অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল এবং এন্টিফাঙ্গাল উপাদান যা ত্বকের সংক্রমণ, ব্রণ এবং চুলের সমস্যার সমাধানে সহায়ক ভূমিকা পালন করে যা নিচে বিস্তারিত দেয়া হলো-

ত্বকের যত্নে আপেল সিডার ভিনেগার ব্যবহারের উপায়ঃ

  • ব্রণ দূর করতেঃ আপেল সিডার ভিনেগার ত্বকের পিএইচ ভারসাম্য ঠিক রাখে এবং ব্রণের জীবাণু ধ্বংস করতে সাহায্য করে। এক টেবিল চামচ আপেল সিডার ভিনেগার এক কাপ পানির সাথে মিশিয়ে ব্রনের উপর তুলা দিয়ে লাগান। কিছুক্ষণ পর ধুয়ে ফেলুন। তবে এটি সরাসরি ব্যবহার করবেন না, কারণ এটি ত্বক জ্বালাপোড়া করতে পারে।
  • ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতেঃ আপেল সিডার ভিনেগার দিয়ে মুগ্ধ আর টোনার তৈরি করতে পারেন। ১:২ অনুপাতে ( এক অংশ ভিনেগার, দুই অংশ পানি) মিশিয়ে এটি তুলা দিয়ে মুখে লাগান এবং ৫ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। এটি ত্বকের মৃতকোষ দূর করে তাকে উজ্জ্বল করে তোলে।
  • রোদে পোড়া ত্বকের যত্নেঃ রোদে পোড়া ত্বক ঠান্ডা করতে এবং ত্বকের জ্বালা কমাতে আপেল সিডার ভিনেগার কার্যকরী। এক কাপ পানির সাথে কয়েক টেবিল চামচ ভিনেগার মিশিয়ে স্প্রে বোতলে ভরে সরাসরি স্প্রে করতে পারেন। এটি ত্বককে ঠান্ডা করবে এবং ক্ষতিগ্রস্ত ত্বক পুনরুদ্ধারে সহায়ক।

চুলের এর যত্নে আপেল সিডার ভিনেগার ব্যবহারের উপায়ঃ

  • চুলের উজ্জ্বলতা বাড়াতেঃ চুলের উজ্জ্বলতা বাড়ানো জন্য শ্যাম্পু করার পর এক কাপ পানিতে ১-২ টেবিল চামচ আপেল সিডার ভিনেগার মিশিয়ে চুলে লাগান। ২-৩ মিনিট পরে সাধারণ পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন এটি চুলের পিএইচ ভারসাম্য বজায় রাখে এবং চুলকে নরম ও মসৃণ করে তোলে।
  • খুশকি দূর করতেঃ আপেল সিডার ভিনেগারের অ্যান্টিফাঙ্গাল বৈশিষ্ট্য খুসকি দূর করতে কার্যকর। খুশকির সমস্যায় ভিনেগার এবং পানি সমান অনুপাতে মিশিয়ে মাথার তালুতে ভালোভাবে লাগিয়ে ১০-১৫ মিনিট রেখে দিন । তারপর শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলুন। খুশকি কমাতে সাহায্য করে এবং মাথার ত্বকের সংক্রমণ ও দূর করে।
  • চুলের গোঁড়া মজবুত করতেঃ আপেল সিডার ভিনেগার চুলের গোড়ায় জমে থাকা অতিরিক্ত তেল এবং ময়লা দূর করে চুলের গোড়া মজবুত করে। একটি শ্যাম্পু করার পর কন্ডিশনার হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে, যাতে চুল পরিষ্কার ও স্বাস্থ্যকর থাকে।

সতর্কতা ঃ

  • আপেল সিডার ভিনেগার ব্যবহারের আগে সব সময় এটি পাতলা করে নিতে হবে, কারণ এর উচ্চ অ্যাসিটিক উপাদান সরাসরি ত্বক বা চুলে লাগালে জ্বালা, লালচে ভাব বা শুষ্কতা তৈরি করতে পারে।
  • ত্বক ও চুলে ব্যবহারের আগে একটি ছোট অংশে পরীক্ষা করে নেয়া উচিত যাতে এলার্জি বা ত্বকে সমস্যা না হয়
  • ব্যবহারে এর প্রভাব দেখতে হলে সঠিক অনুপাতে পানি দিয়ে মিশিয়ে ব্যবহারের পরামর্শ দেয়া হয়         

পরিশেষে বলা যায় যে অ্যাপেল সিডার ভিনেগার আমাদের ত্বক ও চুলের যত্নে একটি প্রাকৃতিক এবং সাশ্রয়ী সমাধান হতে পারে। এই আপেল সিডার ভিনেগার নিয়মিত ব্যবহারে স্বাস্থ্যকর ত্বক এবং উজ্জ্বল চুলের জন্য কার্যকরী মাধ্যম। আমাদের ত্বক ও চুলের যত্নে আমরা নিয়মিত পরিমিত ভাবে ব্যবহার করতে পারি। 

মন্তব্যঃ আপেল সিডার ভিনেগার স্বাস্থ্য উপকারিতা

আপেল সিডার ভিনেগার স্বাস্থ্য উপকারিতা নিয়ে বলতেই হয়, স্বাস্থ্যকর জীবনে এটি, এক অনন্য সহায়ক শক্তি সঞ্চয়। রক্তচাপ থেকে হজম সমস্যা, ওজন কমাতে কিংবা ত্বকের যত্নে এর গুনাবলী প্রতিদিন যেন জীবনকে আনে এক নতুন দিগন্তে। শর্করা নিয়ন্ত্রণে সহায়ক, দূর করে ক্লান্তি অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল গুনে রাখে শরীর সতেজ আর মনকে দেয় শান্তি।

তবে সতর্কতার সঙ্গেই আমাদেরকে ব্যবহার করতে হবে যেন এর অতিরিক্ত আমরা গ্রহণ না করি। নিয়ম-নীতি মেনে আপেল সিডার ভিনেগার আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে সুস্থতার জন্য ব্যবহার করতে হবে। আপেল সিডার ভিনেগার সুস্থতার এক মধুর ছোঁয়া, স্বাস্থ্য ও সতেজতায় আপেল সিডার ভিনেগার রাখতে চাইলে অবশ্যই নিয়ম মেনে চলতে হবে। 

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

প্রশ্ন ২৪ ব্লক এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url