বাচ্চাদের দাঁত ওঠার সময় করণীয়

বাচ্চাদের দাঁত ওঠার সময় করণীয় হল সময় মত সঠিক যাক না ও পরিচর্যা নিয়ে। এই সময় একটি বাচ্চার মাড়ির ব্যথা, লালা নিঃসরণ এবং অস্থিরতার মত সমস্যাগুলো কিভাবে মোকাবেলা করতে হবে সেই সম্পর্কে কি করনীয় তা আমাদের এই ব্লগে জানতে পারবেন। টিথিং রিং, পুষ্টিকর খাবার এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে বাচ্চাকে আরাম দিতে হবে।

বাচ্চাদের-দাঁত-ওঠার-সময়-করনীয়

বাচ্চাদের এই সময়ে জর বা ডায়রিয়া হলে কখন চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে তা নিয়েও আজকে আমরা বিস্তারিত আলোচনা রয়েছে। আজকের এই ব্লকটি পড়ুন এবং আপনার শিশুর দাঁত উঠার সময়টিকে সহজ সুন্দর আনন্দদায়ক করুন। তাহলে চলুন এই সম্পর্কে আজ বিস্তারিত জানি-

পোস্ট সূচিপত্রঃ বাচ্চাদের দাঁত ওঠার সময় করণীয়

 বাচ্চাদের দাঁত ওঠার সময় করণীয়

বাচ্চাদের দাঁত ওঠার সময় করণীয় হল আপনাকে অবশ্যই পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন এবং যত্নশীল হতে হবে এবং তাদের দাঁতের সুরক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। বাচ্চাদের দাঁত উঠা একটি স্বাভাবিক নিয়ম যা সাধারনত বাচ্চার ছয় মাস থেকে শুরু হয় এবং তিন বছর বয়সের মধ্যে দাঁত সম্পূর্ণ হয়। এই সময়ে বাচ্চার শারীরিক ও মানসিক দুইটারই পরিবর্তন ঘটে যা অভিভাবকদের বিশেষভাবে যত্নবান হতে বাধ্য করে। এই সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো-

  • দাঁত ওঠার লক্ষণঃ সাধারণত ছোট বাচ্চার দাঁত ওঠা একটি স্বাভাবিক নিয়ম যা  বাচ্চার ছয় মাস বয়স থেকে শুরু হয়। বাচ্চাদের দাঁত ওঠার সময় তাদের মাড়িতে এবং শরীরের কিছু পরিবর্তন আসে। যেমন-
  • মাড়ি ফুলে যাওয়া ও লালচে হওয়াঃ বাচ্চাদের মাড়ি খুব নরম হয় কারণ তাদের বয়সটাও খুব অল্প। নতুন দাঁত বের হওয়ার জন্য মাড়ির ভেতর চাপ সৃষ্টি হয়, যার কারনে ব্যাথার সৃষ্টি হয়। এতে মাড়ি ফুলে যায় ও লালচে হয়।
  • লালা নিঃসরণ বৃদ্ধিঃ সাধারণত বাচ্চাদের দাঁত ওঠার সময় তাদের লালাটা একটু বেশি বৃদ্ধি পায়, যা মুখে বা জ্বালা সৃষ্টি করতে পারে। এই জন্য নিয়মিত নরম কাপড় দিয়ে মুখের লালা মুছে ফেলতে হবে ও ময়শ্চারাইজার ব্যবহার করতে হবে। পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
  • চিবানোর প্রবণতাঃ মাড়ির ব্যথা এবং চুলকানির জন্য বাচ্চারা অনেক সময় বিভিন্ন জিনিস চিবিয়ে থাকে বা মুখে কামড় দেয়। কারণ দাঁত বের হওয়ার জন্য মাড়িটা বিভিন্নভাবে সুরসুর করে।
  • খাবারের প্রতি অরুচিঃ এই সময় বাচ্চাদের খাবারের পরিবর্তন ঘটে। ব্যথার কারণে অনেক সময় বা তারা খাবারের প্রতি রুচি কমিয়ে ফেলতে পারে।
  • মৃদু জ্বর ও ডায়রিয়াঃ ৬ মাস বয়সে বাচ্চাদের দাঁত ওঠার সময় তাদের সেই মুহূর্তে গায়ে হাতা পাতলা জ্বর হতে পারে বা পাতলা পায়খানাও হতে পারে।

বাচ্চার যত্নের জন্য করণীয়ঃ

  • মাড়ির যত্ন নেওয়াঃ বাচ্চাদের মুখের মাড়ির পরিষ্কার রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিদিন একটি নরম, পরিষ্কার কাপড় গরম পানিতে ভিজিয়ে দিনে ২-৩ বার মাড়ি মুছে দিতে হবে। এতে মাড়িতে বিভিন্ন রকম সংক্রমণ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।
  • ঠান্ডা টিথিং রিং ব্যবহারঃ বাচ্চাদের জন্য সিলিকন বা প্লাস্টিকের তৈরি টিচিংড়ি মাড়ির ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। রিংটিকে ফ্রিজে রেখে ঠান্ডা করে ব্যবহার করতে হবে তবে এটি যেন খুব বেশি ঠান্ডা না হয় তা না হলে আবার বাচ্চাকে ঠান্ডা লেগে যেতে পারে।
  • লালা পরিষ্কার রাখাঃ বাচ্চাদের মুখে সাধারণত অতিরিক্ত লালা জমে থাকলে মুখে ত্বকের র‌্যাশ বা জ্বালা হতে পারে। এজন্য সব সময় পরিষ্কার রাখার ক্ষেত্রে নরম কাপড় দিয়ে নিয়মিত লালা পরিষ্কার করতে হবে এবং মশ্চারাইজার ব্যবহার করতে হবে।
  • নরম ও সার্থকার খাবার প্রদানঃ বাচ্চাদের দাঁত ওঠার সময় সাধারণত শক্ত খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। নরম খাবার যেমন, সেদ্ধ সবজি, সুজি, নরম ফল, দুধ অথবা বিভিন্ন ধরনের স্যুপ খেতে দিতে হবে। এতে দাঁত ওঠার প্রক্রিয়া খুব সহজ হবে।
  • টিথিং খেলনার ব্যবহারঃ বাচ্চাদেরকে যেসব খেলনা মুখে দেওয়ার জন্য নিরাপদ সেগুলো দিতে হবে। এবং সেগুলোকে অবশ্যই জীবাণুমুক্ত করে দুই রাখতে হবে।

অস্বস্তি বা ব্যথা কমানোর জন্য করণীয়ঃ

  • মাড়িতে হালকা মেসেজ করতে হবে এটি বাচ্চাকে অনেক আরাম দেয়
  • অতিরিক্ত ব্যথার জন্য ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী টিথিং জেল ব্যবহার করতে হবে। তবে নিজের ইচ্ছায় কোন ওষুধ ব্যবহার করবেন না

চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরীঃ 

  • যদি দাঁত ওঠার সময় জ্বর ডায়রিয়া বা অন্যান্য কোন সমস্যা গুরুতর হয় তবে অবশ্যই আপনাদেরকে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে
  • বাচ্চাদের দাঁত ওঠার সময় যদি দেখেন মাড়ি থেকে রক্তপাত হচ্ছে তাহলে অবশ্যই ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে।
  • বাচ্চাদের দাঁত ওঠার স্বাভাবিক সময় থেকে দেরি হলে সে ক্ষেত্রেও ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।

দাঁতের সঠিক বিকাশের জন্য পুষ্টিকর খাবারঃ বাচ্চাদেরকে সব সময় সঠিক যত্নের মধ্যে রাখতে হবে। একজন বাচ্চার জন্য দাঁত অনেক গুরুত্বপূর্ণ। বাচ্চার দাঁতের সঠিক বিকাশের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন ডি যুক্ত খাবার নিশ্চিত করা প্রয়োজন। বিভিন্ন ধরনের খাবার যেমন দুধ, ডিম, মাছ, সবুজ শাকসবজি এবং সূর্যালোক পুষ্টির প্রধান উৎস।

বাচ্চার নিরাপত্তা নিশ্চিত করাঃ ছোট বাচ্চাদের এমনিতেই সব সময় নিরাপত্তার মধ্যে রাখতে হয়। কারণ এ সময় তারা কিছু বলতে পারেনা। দাঁত ওঠার সময় বাচ্চারা যেন যেকোনো কিছু মুখে দিতে চায়। তাই আশেপাশের জিনিস পরিষ্কার রাখা এবং ক্ষতিকারক বস্তু থেকে দূরে থাকা জরুরী।

মনোযোগ ও স্নেহের প্রয়োজনঃ ছোট বাচ্চারা এমনিতেই ভালোবাসা প্রিয়। এই সময় বাচ্চারা অস্থির ও অস্বস্তিকর অবস্থায় থাকে। কারণ তারা তাদের অনুভূতি প্রকাশ করতে পারেনা। তাই এই সময় তাদের প্রতি বেশি মনোযোগ ও স্নেহ দিলে এই সময়টা সহজে পার করা সম্ভব হয়।

পরিশেষে পর্যায়ে যে দাঁত ওঠা বাচ্চাদের জীবনের একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। তবে এই স্বাভাবিক প্রক্রিয়ার সাথে কিছু চ্যালেঞ্জও আসে। কিন্তু সচেতনতা ও সঠিক যত্নের মাধ্যমে এই সময় বাচ্চার যেন আরামদায়ক হয় সে ব্যবস্থা করা যায়। এই সময় অভিভাবকদের অত্যাধিক ধৈর্যশীল ও যত্নবান হওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

 বাচ্চাদের দাঁত উঠার লক্ষণ

বাচ্চাদের দাঁত ওঠার লক্ষণগুলোর মধ্যে মারি ফুলে যাওয়া, অতিরিক্ত লালা নিঃসরণ, বিভিন্ন ধরনের জিনিস চিবানো প্রবণতা এবং খাওয়ার প্রতি অরুচি প্রধান। সাধারণত বাচ্চাদের দাঁত ওঠা একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া যা বাচ্চার ছয় মাস বয়স থেকে শুরু হয় এবং তিন বছর বয়সের মধ্যে এই প্রক্রিয়া শেষ হয়। তবে এই দাঁত ওঠার সময় শিশুদের শরীর ও আচরণে কিছুটা পরিবর্তন আসে এই জন্য অভিভাবকদের সচেতন হতে হবে। নিচে দাঁত উঠার লক্ষণ ও তার বিস্তারিত বর্ণনা দেওয়া হল-

দাঁত ওঠার প্রাথমিক লক্ষণঃ

  • দাঁত বের হওয়ার জন্য মারি নিচে সাধারণত চাপ সৃষ্টি হয় যার কারণে মারি ফুলে যায় এবং লালচে হতে পারে। এটি বাচ্চার জন্য অনেক অস্বস্তি করে একটি অবস্থা
  • বাচ্চাদের দাঁত ওঠার সময় তাদের লালা নিঃসরণ স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক বেশি হতে থাকে। এটি বাচ্চার মুখ ও জামা ভিজিয়ে ফেলতে পারে যার ফলে ঠান্ডা লাগতে পারে। আবার মুখে র‌্যাশ বের হতে পারে যার জন্য পরিষ্কার ও শুষ্ক রাখতে হবে।
  • দাঁত ওঠার সময় মাড়িতে চুলকানি ও অস্বস্তি দূর করতে বাচ্চারা হাতের কাছে যা পায় তাই চিবাতে চেষ্টা করে। এটি তাদের মাড়ির ব্যথা কিছুটা কমাতে সাহায্য করে।
  • দাঁত ওঠার সময় বাচ্চারা সাধারণত অস্থির হয়ে যায় এবং সহজেই বিরক্ত হতে থাকে। এটি নারীর অস্বস্তিীয় ব্যথার কারণে হয়। কারণ তারা তাদের মনোভাব ব্যক্ত করতে পারে না এতে বিরক্ত বেশি হয়।
  • দাঁত উঠার সময় মাড়ির ব্যাথার কারণে বাচ্চারা রাতে ঘুমাতে পারে না যার ফলে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হয়। তাদের বারবার ঘুম ভেঙ্গে যায় বা অস্থিরভাবে ঘুমায় যা বাচ্চাদের জন্য খুবই ক্ষতিকর।

দাঁত উঠার আরও লক্ষণঃ

  • খাওয়ার প্রতি আরুচিঃ ব্যথা ও অস্বস্তির কারণে বাচ্চারা খেতে চায় না বা খাবারে রুচি কমে যায়। এটি সাময়িকভাবে হয় তবে সঠিক খাবারের বিকল্প খুঁজে বের করা জরুরী।

আরও পড়ুনঃ দাঁতের রুট ক্যানেল করতে কত টাকা লাগে 

  • জ্বর এবং ডায়রিয়াঃ দাঁত উঠার সময় সব বাচ্চার ক্ষেত্রে নয় কিছু কিছু বাচ্চার ক্ষেত্রে হালকা জ্বর আসে এবং ডায়রিয়ার লক্ষণ দেখা দিতে পারে। যদিও এই সমস্যাটি দাঁত উঠার সরাসরি ফল নয়। এটি মাড়ির সংক্রমণ বা শরীরের পরিবর্তনের কারণে হতে পারে।
  • মাড়ির নিচে সাদা দাঁতের ছাপঃ ভালোভাবে লক্ষ্য রাখতে হবে বাচ্চাদের মাড়ির নিচে দাঁতের সাদা অংশ দেখা দিতে শুরু করে। এটির দাঁত ওঠার নিশ্চিত লক্ষণ।
  • কান টানা বা গলা ঘষাঃ দাঁত উঠার ব্যাথার কারণে অনেক সময় অনেক বাচ্চার কখনো কখনো কান ও গালে ব্যথা হয়। বাচ্চারা ব্যাথা অনুভব করলে তাদের কান টানতে বা গাল ঘষতে পারে। এটি একটি বিশেষ লক্ষণ।

অভিভাবকদের করণীয়ঃ

  • পরিষ্কার পরিছন্নতা বজায় রাখাঃ ছোট বাচ্চাদের এমনিতেই পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন মধ্যে রাখতে হয়। তবে এই সময় বাচ্চার মাড়ির পরিষ্কার রাখা একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। একটি নরম কাপড় গরম পানিতে ভিজিয়ে দিনে দুই থেকে তিনবার মুছে দিতে হবে।
  • টিথিং রিং বা ঠান্ডা জিনিস ব্যবহারঃ বাচ্চাদের দাঁত ওঠার সময় টিথিং রিং দিতে পারেন। এটি ঠান্ডা করে ব্যবহার করলে মাড়ির ব্যথা অনেকখানি কমে যায়। তবে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে যে বেশি যেন ঠান্ডা না হয় তা না হলে বাচ্চাকে আবার ঠান্ডা লেগে যেতে পারে।
  • খাবারে যত্ন নেওয়াঃ বাচ্চাদের দাঁত ওঠার সময় খাবার যত্ন নিতে হবে। এই সময় নরম ও পুষ্টিকর খাবার দিতে হবে যা চিবানো সহজ এবং সহজে শরীরে পুষ্টি বজায় রাখে। এমন খাবার দিতে হবে যে খাবার বাচ্চা সহজেই হজম করতে পারে এবং গিলে নিতে পারে।
  • চিকিৎসকের পরামর্শঃ এই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া খুবই জরুরী। যদি দেখেন বাচ্চার জ্বর বা ডায়রিয়া দীর্ঘস্থায়ী হয় বা অন্য কোন গুরুতর লক্ষণ দেখা দিচ্ছে তখন অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

পরিশেষে বলা যায় যে, বাচ্চাদের দাঁত উঠার সময় শারীরিক এবং মানসিক পরিবর্তন দেখা দেয় যা সামলাতে অভিভাবকদেরকে অতি সচেতন হতে হবে। স্যার লক্ষণ গুলো অবশ্যই সঠিকভাবে বোঝার ব্যবস্থা নিতে হবে এবং এই সময়টি যেন বাচ্চাদের সহজ ও আরামদায়ক হয় সে ব্যবস্থা রাখতে হবে।

 শিশুর দাঁত ওঠার সঠিক সময়

শিশুর দাঁত ওঠার সঠিক সময় সাধারণত ৬ মাস বয়স থেকে শুরু হয় এবং এটি ধাপে ধাপে বাড়তে থাকে। এই প্রক্রিয়াটি সাধারণত ৩ বছরের মধ্যে সম্পূর্ণ হয়। তবে এটি প্রত্যেক শিশুর জন্য একেবারে একই রকম হয় না, কারণ দাঁত ওঠার সময় এবং ধরন বাচ্চা ভেদে ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে। কোন শিশুর ক্ষেত্রে দাঁত ওঠা একটু দেরিতে হয় আবার কোন কোন শিশুর ক্ষেত্রে দাঁত একটু তাড়াতাড়ি বের হয়। এটি কোন দুশ্চিন্তার বিষয় নয়।

প্রথমে সাধারণত নিচের সামনের দুইটি দাঁত (সেন্ট্রাল ইনসাইজার) ওঠে এবং তারপর উপরের সামনের দাঁত গুলো উঠে। এরপর পাশের দাঁতগুলো এবং অবশেষে পেছনের মোলার দাঁতগুলো উঠে। পুরো দাঁত উঠার প্রক্রিয়া ধীরে ধীরে সম্পন্ন হয়। শিশুরা সাধারণত প্রাথমিকভাবে ২০টি দাঁত পায় যেগুলোকে আমরা দুধের দাঁত বা প্রাথমিক দাত বলে থাকে।

দাঁত উঠার সময় কিরে লক্ষণ দেখা দিতে পারে যেমন- মাড়ি ফুলে যাওয়া, অস্বস্তি অনুভব করা, বেশি লালা মিশ্রিত হওয়া বা সবকিছু চিবানোর প্রবণতা। এই সবাই শিশুর মেজাজ সাধারণত একটু খিটখিটে হতে পারে এবং সেই সাথে ঘুমেরও সমস্যা হতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে হালকা জ্বর বা ডায়রিয়ার মত সমস্যা দেখা দিতে পারে। যদিও এই সমস্যাটি সরাসরি দাঁত থাক সাথে সম্পর্কিত নয়।

প্রথম দাঁত উঠার সঙ্গে সঙ্গে দাঁতের যত্ন নেওয়া শুরু করা অত্যন্ত জরুরী। প্রতিদিন নরম কাপড় দিয়ে মারি পরিষ্কার করা, দাঁতের জন্য উপযুক্ত ব্রাশ ব্যবহার করা এবং দাঁতের স্বাস্থ্য বজায় রাখার জন্য শিশুর ডায়েটে পুষ্টিকর খাবার যোগ করা প্রয়োজন।

পরিশেষে বলা যায় যে যদি শিশুর এক বছরের মধ্যে কোন দাঁত না ওঠে তাহলে দন্ত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। কারণ সাধারণত ছয় মাসের মধ্যে বাচ্চাদের দাঁত ওঠা শুরু করে। দাঁত এবং প্রক্রিয়া শিশুর স্বাভাবিক বৃদ্ধি ও বিকাশের একটি অংশ তাই ধৈর্য ও যত্ন নিয়ে এই সমস্যা মোকাবেলা করা উচিত।

 বাচ্চাদের মাড়ির দাঁত ওঠার সময় 

বাচ্চাদের মাড়ির দাঁত ওঠার সময় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কারণ এই সময়টি তাদের বিকাশের একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ, যা সাধারণত ১২ থেকে ১৬ মাস বয়সের মধ্যে শুরু হয়। এই সময়টি বাচ্চাদের জন্য কিছুটা অস্বস্তিকর হতে পারে। কারণ মাটির নিচে দাঁতের বিকাশের কারণে চাপ এবং ব্যথা অনুভূত হয়। নিচে এই প্রক্রিয়ার বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেওয়া হল-

বাচ্চাদের-দাঁত-ওঠার-সময়-করনীয়

মাড়ির দাঁত ওঠার প্রক্রিয়াঃ বাচ্চাদের মাড়ির দাঁত বা প্রথম মোলার দাঁত সাধারণত সামনের দাঁত উঠার পর বের হতে শুরু করে। এই দাঁতগুলোর মাড়ির পেছনের অংশে থাকে এবং খাদ্য চিবানোর জন্য প্রয়োজন। প্রথম নিচের মোলার দাঁত ওঠে এরপর উপরের মুলার দাঁতগুলো দেখা যায়।

লক্ষণসমূহঃ

  • দাঁত বের হতে গেলে বাড়ির ভেতরে চাপ সৃষ্টি হয় ফলে মাড়ি ফুলে যায়
  • বাচ্চাদের দাঁত ওঠার সময় মাড়িতে চুলকানি বা অস্বস্তি সৃষ্টি হয়
  • বাচ্চার তাদের মাড়ির অস্বস্তি দূর করে খেলনা বা হাতের কাছে যা বস্তু পায় মুখে দিয়েছি বাতে চেষ্টা করে
  • খাওয়ার প্রতি অনাগ্রহ দেখায় কারণ মাটির ব্যাথার কারনে বাচ্চারা শক্ত খাবার খেতে অস্বস্তি বোধ করতে পারে
  • এই সময় অতিরিক্ত লালা নিশ্চিত হয় যা মুখে র‌্যাশ তৈরি করতে পারে

যত্ন ও কারণীয়ঃ

  • মাড়ির অস্বস্তিত্ব করতে ঠান্ডা টিথিং রিং ব্যবহার করা যেতে পারে
  • একটি পরিষ্কার নরম কাপড় দিয়ে গরম পানি দিয়ে ভিজিয়ে মাড়ি মুছে দেওয়া এবং মাড়িতে হালকা মেসেজ করা উপকারী
  • চিবানোর জন্য সিলিকন টিথিং খেলনা বা সেদ্ধ করা নরম খাবার দিতে পারেন
  • অতিরিক্ত লালা পরিষ্কার রাখতে এবং মুখের ত্বক সুরক্ষিত রাখতে র‌্যাশ ক্রিম ব্যবহার করা যেতে পারে
  • ব্যথা বেশি হলে দন্ত চিকিৎসকের পরামর্শে দাঁতের জেল ব্যবহার করা যেতে পারে

চিকিৎসকের পরামর্শ কখন জরুরীঃ

  • যদি মাটি থেকে রক্তক্ষরণ হয় বা দাঁত ওঠার সময় অত্যাধিক জ্বর বা ডায়রিয়া দেখা যায় তখন অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে
  • বাচ্চার দাঁত ওঠার সময় স্বাভাবিক সময় থেকে দেরি হলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে

পরিশেষে বলা যায় যে মাড়ির দাঁত উঠায় একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া হলো এর সাথে কিছু অস্বাভাবিক অস্বস্তি জড়িত। অভিভাবকদের উচিত ধৈর্য ধরে বাচ্চার যত্নে নেওয়া এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা। পরিচর্যা যত্নের মাধ্যমে এই সময়টি সাহায্যে অতিক্রম করা যায়।

 বাচ্চাদের দাঁত উঠার সময় জ্বর

বাচ্চাদের দাঁত উঠার সময় জ্বর হাওয়া একটি সাধারণ অভিজ্ঞতার ঘটনা, যদিও এটি সরাসরি দাঁত ওঠার কারণে হয় না। সাধারণত দাঁত ওঠার সময় মাড়ির সংক্রমণ বা দেহের প্রতিক্রিয়ার কারণে জ্বর দেখাতে পারে। নিচে এই সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা দেওয়া হল-

দাঁত ওঠার সময় শিশুর মাড়ি ফোলা ভাব ও চুলকানির জন্য অতিরিক্ত সংবেদনশীল হয়ে পড়ে। এ সময় দাঁত মাড়ি ভেদ করে বের হওয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করে এই চাপের ফলে মাড়ির চারপাশে অস্বস্তি ও হালকা প্রদাহ হতে পারে। এছাড়া দাঁত ওঠার সময় শিশুর প্রতিরোধ ক্ষমতা সামান্য দুর্বল হতে পারে, ফলে মৃদু জ্বর দেখা দিতে পারে।

লক্ষণ গুলো কি কি?

  • হালকা জ্বরঃ সাধারণত ১০০ ডিগ্রী ফারেন্টহাইট  থেকে ১০১ ডিগ্রি ফারেন্টহাইট পর্যন্ত তাপমাত্রা থাকতে পারে
  • খিটখিটে মেজাজঃ দাঁতের ব্যথা ও অস্বস্তির কারণে শিশুর আচরণ খিটখিটে হয়ে ওঠে
  • খাওয়ার অনাগ্রহঃ জ্বর এবং দাঁতের ব্যথার জন্য শিশুরা খাওয়ার প্রতি আগ্রহ দেখায় না।
  • অতিরিক্ত লালা নিঃসরণঃ দারুটার সময় মাড়ি সংবেদনশীল হওয়ায় লালা নিঃসরণ বেড়ে যায়, যা শিশুর আরামহীনতার কারণ হতে পারে।

করণীয়ঃ

  • জ্বর হালকা হলে সাধারণত এটি নিজ থেকেই কমে যায়
  • যদি তাপমাত্রা ১০২° ফারেনহাইট বা তা বেশি হয় তবে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী প্যারাসিটামল বা বাচ্চাদের উপযোগী ওষুধ ব্যবহার করতে পারেন।
  • ঠান্ডা টিথিং রিং বা পরিষ্কার ঠান্ডা চামচ ব্যবহার করে মাড়ির অস্বস্তি কমানোর চেষ্টা করুন
  • মাড়িতে হালকা মেসেজ করতে হবে
  • জ্বরের সময় শিশুর শরীরে পানি শূন্যতা জানো না হয় সে কারণে তাকে পর্যাপ্ত তরল খাবার খেতে দিতে হবে। মায়ের দুধ এবং স্যুপ তাদের জন্য সবচাইতে উপকারী
  • বাচ্চার মুখমন্ডল ও মাড়ি নিয়মিত পরিষ্কার রাখতে হবে
  • বাচ্চার চিবানোর খেলনা বা টিথিং রিং জীবাণুমু মুক্ত রাখুন

চিকিৎসকে পরামর্শ কখন নেবেনঃ

  • বাচ্চাদের জ্বর যদি তিন দিনের বেশি স্থায়ী হয় তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেন।
  • তাপমাত্রা ১০২° ফারেনহাইটের বেশি হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে
  • যদি শিশুর সঙ্গে ডায়রিয়া বা বমি দেখা দেয় তাহলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে
  • মাড়ি থেকে রক্তক্ষরণ বা অতিরিক্ত ফলাফল হলে চিকিৎসকের পরম শনিতে হবে

পরিশেষে বলা যায় যে, দাঁত উঠার সময় জ্বর সাধারণত স্বল্প মেয়াদী এবং বেশি গুতার হয় না। এটি বাচ্চার স্বাভাবিক বিকাশের একটি স্বাভাবিক অবস্থা। তবে জ্বর বেশি হলে বা অন্য গুরুতর লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসঙ্গে সঙ্গে পরামর্শ নিতে হবে। সঠিক যত্নের মাধ্যমে এবং অভিভাবকদের ধৈর্যশীলতার মাধ্যমে এই সময়টি সহজেই মোকাবেলা করা যায়।

বাচ্চাদের দাঁত না ওঠার কারণ

বাচ্চাদের দাঁত না ওঠার কারণ অনেক অভিভাবকদের জন্য উদ্বেগের বিষয় হতে পারে। সাধারণত শিশুর প্রথম দাঁত ছয় মাস বয়সে ওঠা শুরু করে এবং তিন বছরের মধ্যে সমস্ত দুধ দাঁত সম্পূর্ণ হয়। তবে কিছু ক্ষেত্রে দাঁত ওঠার এই স্বাভাবিক সময়সূচি থেকে বিচ্যুত হতে পারে। দাঁত না ওঠার কয়েকটি কারণ এবং এর বর্ণনা নিতে দেয়া হলো-

  • জেনেটিক বা বংশগত কারণঃ একজন বাচ্চার দাঁত ওঠার বিষয় তার পরিবারের ইতিহাসের উপরেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। যদি পরিবারের অভিভাবক বা অন্যান্য সদস্যদের দাঁত উঠতে দেরি হয়ে থাকে তবে সেক্ষেত্রে শিশুরও এমন ঘটনা ঘটতে পারে।
  • পুষ্টির ঘাটতিঃ দাঁত না ওঠার পেছনে রয়েছে পুষ্টি সংক্রান্ত ঘাটটির। সাধারণত ক্যালসিয়াম, ফসফরাস এবং ভিটামিন ডি এর ঘাটতি থাকলে দাঁতের বিকাশে দেরি হতে পারে। এই পুষ্টি উপাদানগুলি সাধারণত হাড় ও দাঁতের গঠনে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।

আরও পড়ুনঃ জন্ডিস রোগীর খাবার তালিকা

  • জন্মগত সমস্যা বা জটিলতাঃ কিছু কিছু শিশুর ক্ষেত্রে জন্মগত সমস্যা যেমন ক্লেফট প্যালেট বা ডাউন সিনড্রোমের মত অবস্থার কারণে দাঁত উঠতে দেরি হতে পারে।
  • হরমোন জনিত সমস্যাঃ হাইপোথাইরয়েডিজম এর মত হরমোন জনিত সমস্যার কারণে শিশুর শারীরিক বৃদ্ধি এবং দাঁত ওঠার প্রক্রিয়া ধীর হয়ে যায়।
  • প্রিম্যাচিউর বা সময়ের আগেই জন্মগ্রহণঃ যেসব বাচ্চারা সময়ের আগেই জন্ম নেয় সেসব শিশুরা প্রায় শারীরিক বিকাশে কিছুটা ধীরগতি দেখায়। তার মধ্যে দাঁত না উঠা একটি অন্যতম সাধারণ লক্ষণ।
  • দাঁতের স্থানগত সমস্যাঃ দাঁতের অবস্থান বা স্থান নিয়ে কোন জটিলতা থাকলে যেমন মাড়ির নিচে দাঁতের অস্বাভাবিক অভস্থান, দাঁত উঠায় দেরি হতে পারে।
  • গুরুতর সংক্রমণ বা অসুস্থতাঃ সাধারণত বাচ্চার শারীরিক অসুস্থতা যেমন দীর্ঘস্থায়ী সংক্রমণ, দাঁতের বিকাশের স্বাভাবিক প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করে।
  • মাড়ির অতিরিক্ত ঘনটিস্যুঃ কিছু বাচ্চার মাড়ি অত্যন্ত ঘন বা শক্ত হতে পারে যার ফলে দাঁত ওঠা একটু কঠিন হয়ে পড়ে।

সম্ভাব্য করণীয়ঃ

  • শিশুর খাদ্য তালিকায় ক্যালসিয়াম ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার যোগ করতে হবে
  • যদি বাচ্চার দাঁত এক বছর বয়সে না উঠে তবে দন্তচিকিৎসক বা শিশু চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করতে হবে
  • হরমোন বা জন্মগত সমস্যার সম্ভাবনা পরীক্ষা করার জন্য বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে
  • দাঁত ওঠার প্রক্রিয়া বিলম্বিত হলেও মাড়ির পরিষ্কার ও স্বাস্থ্যকর রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ

পরিশেষে বলা যায় যে, বাচ্চাদের দাঁত ওঠার বিলম্ব সাধারণত গুরুত্ব কোন সমস্যা নাই, তবে এটি নির্ভর করে বিশেষ কিছু কারণ এর ওপর। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সঠিক পুষ্টি ও পরিচর্যার মাধ্যমে দাঁত ওঠার প্রক্রিয়া স্বাভাবিক থাকতে পারে। তবে যে কোন অস্বাভাবিকতা বা দুশ্চিন্তা দেখা দিলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।

 বাচ্চাদের দাঁত উঠার সময় পায়খানা

বাচ্চাদের দাঁত উঠার সময় পায়খানা সমস্যা একটি সাধারণ বিষয় বলে অনেক অভিভাবক মনে করেন। তবে দাঁত উঠার সাথে পায়খানার কোন সম্পর্ক নেই। এটি একটি প্রচলিত ধারণা হলেও এ সময়ে শিশুর শরীরে কিছু পরিবর্তন এবং আচরণগত বিষয় থাকে, যা পায়খানার সমস্যা ঘটাতে পারে। নিচে এ বিষয়ে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো-

দাঁত ওঠার সময় পায়খানার সমস্যা কেন হয়ঃ দাঁত ওঠার সময় শিশুর মাড়িতে অস্বস্তি, ব্যথা এবং চুলকানি হয়। এ সময় তারা তাদের সেই সমস্যা দূর করার জন্য হাতের কাছে যা পায় তাই মুখে চিবাই। এতে তাদের চুলকানি বা ব্যথা অনেকটা কম হয়। এই বস্তুগুলো জীবাণুযুক্ত হতে পারে যা শিশুর পরিপাকতন্ত্রের সংক্রমণ ঘটিয়ে পায়খানার সমস্যা সৃষ্টি করে।

এছাড়াও দাঁত উঠার সময় শিশুর শরীর কিছুটা দুর্বল হতে পারে এবং লালা নিঃসরণ বেড়ে যায়। এই অতিরিক্ত লালা তারা গিলে ফেলে যার কারণে শিশুর পরিপাকতন্ত্রে অস্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া হতে পারে যা পায়খানা পাতলা হওয়ার বিশেষ কারণ।

লক্ষণ সমূহঃ

  • পাতলা বা ঢিলা পায়খানা
  • দিনে বারবার পায়খানা হওয়া
  • পায়খানা সঙ্গে হালকা আঁষটে গন্ধ বা অস্বাভাবিক রং

কি করলে এই সমস্যা কমানো যায়ঃ

  • পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখাঃ দাঁত ওঠার সময় শিশু যা কিছু মুখে দিচ্ছে সেগুলো নজরে রেখে পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত জেনে নিতে হবে
  • পানির ঘাটতি এড়ানোঃ পায়খানার সময় শিশুর শরীরে পানির অভাব দেখা দেয়। সেজন্য এই সময়ে শিশুদেরকে পর্যাপ্ত তরল খাবার বিশেষ করে মায়ের বুকের দুধ, গ্লুকোজ পানে বা ওআরএস খাওয়ানো উচিত।
  • স্বাস্থ্যকর খাদ্য প্রদানঃ শিশুকে সহজবাচ্য এবং পুষ্টিকর খাবার খাওয়ানোর চেষ্টা করতে হবে যাতে তার পেটের সমস্যা সহজেই নিয়ন্ত্রণে থাকে।
  • চিকিৎসকের পরামর্শঃ যদি পায়খানার সমস্যা তিন দিনের বেশি হয়, শিশুর পায়খানা সঙ্গে রক্ত দেখা যায় বা অতিরিক্ত দুর্বলতা দেখা দেয় তবে ঘৃণা করে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
  • দাঁত ওঠা এবং পায়খানার ভুল ধারণাঃ বেশিরভাগ পেডিয়াট্রিশিয়ানরা মনে করেন যে দাঁত ওঠা সরাসরি পায়খানা সৃষ্টি করে না। তবে দাঁত উঠার সময় শিশুর আচরণগত পরিবর্তন এবং পরিছন্নতার অভাবে পায়খানার কারণ হতে পারে।

পরিশেষে বলা যায় যে, দাঁত উঠার সময় শিশুর পায়খানা হওয়া অভিভাবকদের জন্য দুশ্চিন্তার কারণ হতে পারে, তবে এটি খুব সাধাণ ও সাময়িক এবং সঠিক পরিচাচার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা এবং পর্যাপ্ত তরল সরবরাহ শিশু আরাম নিশ্চিত করতে সহায়ক। তবে পরিস্থিতি যদি গুতারও হয় তবে অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।

 বাচ্চাদের দাঁত না উঠলে করণীয়

বাচ্চাদের দাঁত না উঠলে করণীয় হল অবশ্যই ডাক্তারের কাছে যেতে হবে। বাচ্চাদের সময় হলো সাধারণত ৬ মাস থেকে শুরু করে এবং ৩ বছরের মধ্যে তা সম্পন্ন হয়। তবে সব শিশুরই একই রকম সময় নেয় না কারো আগে ওঠে কারো আবার দাঁত উঠতে বিলম্ব হতে পারে। এই পরিস্থিতি অভিভাবকদেরকে উদ্বিগ্ন করে, তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এটি কোন গুরুতর সমস্যা না। দাঁত না উঠলে কি কি করণীয় তা নিচে বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হলো-

বাচ্চাদের-দাঁত-ওঠার-সময়-করনীয়

দাঁত না ওঠার সম্ভাব্য কারণগুলো বোঝাঃ আপনাদের বাচ্চাদের দেখে প্রথমে বোঝার চেষ্টা করতে হবে কেন দাঁত উঠতে বিলম্ব হচ্ছে। এর কয়েকটি কারণ হতে পারে। যেমন-

  • জেনেটিক কারণঃ পরিবারের অন্য সদস্যদের দাঁত ওঠার সময় যদি দেরি হয়ে থাকে তাহলে পারিবারিক জেনেটিক কারণে বাচ্চা সমস্যা হতে পারে।
  • পুষ্টির ঘাটতিঃ যদি বাচ্চার শরীরে পুষ্টির ঘাটতে থাকে তাহলে দাঁত উঠতে দেরি হতে পারে যেমন ক্যালসিয়াম, ফসফরাস এবং ভিটামিন ডি এর ঘাটতিতে দাঁতের গঠনে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
  • প্রিম্যাচিউর বেবিঃ সময়ের আগে জন্ম নেওয়া শিশুর ক্ষেত্রে তার শারীরিক দুর্বলতার কারণে দাঁতের বিকাশ ধীরগতিতে হতে পারে।
  • হরমোন জনিত সমস্যাঃ যদি থাইরয়েড বা পিটুইটারি গ্রন্থির সমস্যার কারণে দাঁত উঠার প্রক্রিয়া ধীর হতে পারে।
  • দাঁতের বিকাশের ত্রুটিঃ দাঁতের অংকুর মাড়ির নিচে সঠিকভাবে না গঠিত হলে দাঁত উঠতে দেরি হতে পারে।

করণীয়ঃ যদি দেখেন যে বাচ্চার দাঁত উঠতে দেরি হচ্ছে, তাহলে অবশ্যই আপনাকে দাঁত না ওঠার কারণ নির্ণয় করার পর নির্দিষ্ট পদক্ষেপগুলো নিতে হবে-

চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়াঃ

  • শিশুর বয়স বারো মাস পার হয়ে গেলে এবং কোন দাঁত না উঠে তবে দমতো চিকিৎসক বা শিশু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে।
  • যদি ডাক্তার মনে করেন, তবে দাঁতের এক্সরে বা অন্যান্য পরীক্ষা করে দেখতে পারেন দাঁত মাড়ির নিচে ঠিকমতো আছে কিনা।

সঠিক পুষ্টি নিশ্চিত করাঃ

  • শিশুর খাদ্য তালিকায় পর্যাপ্ত ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি যোগ করতে হবে
  • দুধ, দুই, পনির, ডিমের কুসুম, মাছ এবং সূর্যালোকে সময় কাটানো শিশুর দাঁতের বিকাশে সাহায্য করে 

মাড়ির যত্ন নেওয়াঃ

  • দাঁত না উঠলে মাড়ি পরিষ্কার রাখা অত্যন্ত জরুরী। প্রতিদিন একটি নরম কাপড় গরম পানিতে ভিজিয়ে মাড়ি পরিষ্কার করে দিতে হবে
  • মাড়িতে হালকা ম্যাসেজ করলে রক্ত সঞ্চালন বাড়ে যা দাঁত ওঠার প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করতে পারে

শিশুকে চিবানোর অভ্যাস তৈরি করাঃ

  • নরম টিথিং খেলনা বা সেদ্ধ করা নরম খাবার দিয়ে শিশুর জীবাণু প্রবণতা বাড়াতে হবে। এটি মাড়িতে উৎসাহিত করে এবং দাঁত উঠার প্রক্রিয়া সহজ হয়

সম্ভাব্য সমস্যা মোকাবেলা করাঃ

  • যদি হরমোন জনিত কোন সমস্যা থাকে, তবে চিকিৎসকের মাধ্যমে থাইরয়েড বা পিটুইটারি সমস্যা সমাধান করতে হবে
  • জন্মগত ত্রুটির ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞের নির্দেশনা অনুযায়ী সঠিক চিকিৎসা গ্রহণ করা উচিত।

যখন দুশ্চিন্তা করবেনঃ

  • বয়স শিশুর বয়স ১৫ মাস বা তার বেশি হলে যদি দাঁত না ওঠে
  • শিশুর শারীরিক বৃদ্ধি ও ওজন স্বাভাবিকের চেয়ে কম হলে
  • দাঁত উঠার লক্ষণ (মাড়ি ফুলে যাওয়া বা চুলকানি) একেবারেই দেখা না গেলে
  • মাড়ির মধ্যে অস্বাভাবিক ফোলা ভাব বা কোন জটিলতা দেখা গেলে

পরিশেষে বলা যায় যে দাঁত ওঠায় দেরি সাধারণত বড় কোন সমস্যা নয়, তবে অভিভাবকদের দেরি না করে উপযুক্ত পদক্ষেপ নিতে হবে। সঠিক পোস্টটি এবং পরিচর্যা শিশুর দাঁতের বিকাশ নিশ্চিত করতে সাহায্য করে। তবে সমস্যাটি যদি জটি হয় তবে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ।

শিশুর দাঁত ওঠার সময় বমি

শিশুর দাঁত ওঠার সময় বমি হওয়া একটি তুলনামূলকভাবে স্বাভাবিক ঘটনা, তবে অনেক অভিভাবক এটিকে দাঁত উঠার সঙ্গে সম্পর্কিত বলে মনে করেন। বাস্তবে দাঁত ওঠার কারণে সরাসরি বমি হওয়ার বৈজ্ঞানিক কোনো প্রমাণ নেই। ওঠার সময়ে শিশুর আচরণ এবং শারীরিক অবস্থার পরিবর্তনের ফলে সাধারণত বমি হতে পারে। এই সময়ে শিশুর স্নায়বিক উত্তেজনা, অস্বস্তি এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কিছুটা দুর্বল হওয়ার ফলে এমন লক্ষণ দেখা দিতে পারে। নিচে এর বিস্তারিত বর্ণনা দেওয়া হল-

কেন দাঁত ওঠার সময় বমি হতে পারেঃ বাচ্চাদের দাঁত ওঠার সময় অনেকেই বমি হয়। তাই বলে সবার ক্ষেত্রে যে হয় তা নয় কারো কারো ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম হতে পারে। দাঁত ওঠার সময় বমি হওয়ার সম্ভাব্য কারণগুলো হলো-

  • অতিরিক্ত লালা গিলে ফেলাঃ দাঁত ওঠার সময় শিশুর লালা নিঃসরণ বেড়ে যায়। এই অতিরিক্ত লালা গিলে ফেলার কারণে তাদের বমি হয়।
  • মারের অস্বস্তি ও সংক্রমণঃ দাঁত উঠার সময় মাড়ি ফুলে যায় এবং সংবেদনশীল হয়। যদি শিশুর মুখে অপরিষ্কার বস্তু বা খেলনা ঢুকে, তবে সংক্রমণ হতে পারে, যা পেটে সমস্যার পাশাপাশি বমির কারন হতে পারে।
  • অস্বাস্থ্যকর বস্তু মুখে দেওয়াঃ দাতের অস্বস্তি কমাতে গিয়ে বাচ্চারা হাতের কাছে যা পায় তাই মুখে কামড় দেয়। এতে জীবাণু পেটে যাওয়ার কারণে হজমের সমস্যা সৃষ্টি হয় যার ফলে বমি হয়।
  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হওয়াঃ সময় শিশুর ইমিউন সিস্টেম কিছুটা দুর্বল হয়ে পড়ে। ফলে ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া আক্রমণে শিশুর বমি হতে পারে।
  • অতিরিক্ত উত্তেজনা ও অস্বস্তিঃ বাচ্চাদের দাঁত উঠার কারণে ব্যথা এবং চাপ শিশুর শারীরিক ও মানসিক অস্থিরতা বাড়িয়ে দেয়। এই অস্থিরতা অনেক সময় বমির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

লক্ষণঃ

  • মুখ থেকে অতিরিক্ত লালা পড়া
  • খাবার খেতে না চাওয়া বা খাবার খাবার পর বমি করে
  • পেট ফুলে যাওয়া বা অস্বস্তি
  • খিটখিটে মেজাজ এবং কান্না

করণীয়ঃ

  • শিশুর লালা নিয়মিত পরিষ্কার রাখুন। মুখের চারপাশে শুকনো রাখতে নরম কাপড় ব্যবহার করুন
  • লালার অতিরিক্ত নিঃসরণ কমাতে ঠান্ডা টিথিং রিং দিতে পারেন
  • শিশুর ব্যবহারিত খেলনা এবং মুখে দেওয়া বস্তু জীবাণুমুক্ত রাখতে হবে
  • শিশুর হাত এবং মুখ সবসময় পরিষ্কার রাখতে হবে
  • শিশুকে এমন খাবার খাওয়ান যা সহজে হজম হয় যেমন দুধ, স্যুপ, বা পাতলা খাবার
  • বেশি খাবার খাওয়ানোর চেষ্টা করবেন না
  • বমি কারণে শরীরে পানি শূন্যতা হতে পারে তাই মায়ের দুধ, ফর্মুলা দুধ বা ওআরএস দিতে হবে
  • নরম কাপড় দিয়ে মাড়ি মুছে দিন
  • মাড়িতে ঠান্ডা চামচ বা টিথিং রিং দিয়ে হালকা মেসেজ করুন

চিকিৎসকের পরামর্শ কখন জরুরীঃ

  • বমি বারবার হলে এবং তিন দিনের বেশি স্থায়ী হলে
  • বমির সঙ্গে জ্বর, ডায়রিয়া বা শরীর দুর্বল দেখালে
  • যদি শিশুর খাবারের প্রতি একেবারে আগ্রহ না থাকে
  • বমিতে রক্ত বা অস্বাভাবিক রং দেখা দিলে

পরিশেষে বলা যায় যে দাঁত উঠার সময় বমি হওয়া সরাসরি দাঁত উঠার সঙ্গে সম্পর্কিত না হলেও এই সময়ের অস্বস্তি ও আচরণগত পরিবর্তনের ফলে বমি হয়। সঠিক যত্ন এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখলে এই সমস্যা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। তবে পরিস্থিতি গুরুতর হলে আপনাকে অবশ্যই ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে।

মন্তব্যঃ বাচ্চাদের দাঁত ওঠার সময় করণীয়

বাচ্চাদের দাঁত উঠার সময় করণীয় হল অভিভাবকদেরকে অবশ্যই সচেতন হতে হবে। শিশুর দাঁত উঠার সময়টা অভিনন্দন জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু ধৈর্যের পরীক্ষা। সঠিকভাবে যত্ন, পরিছন্নতা এবং পুষ্টি করার মাধ্যমে এই সময়ের চ্যালেঞ্জগুলো সহজ করা সম্ভব। আপনার ছোট্ট সোনামনির জন্য এই সময়টা স্মরণীয় করে তুলতে তাকে ভালোবাসা ও আরামের পরিবেশ দিবেন।

মনে রাখবেন দাঁত ওঠার সময় প্রতিটি শিশু ভিন্ন ভিন্ন ভাবে প্রতিক্রিয়া জানায়, তাই ধৈর্য রাখতে হবে এবং তার প্রয়োজন গুলো বুঝার চেষ্টা করতে হবে। যদি কোন জটিলতা বা উদ্যোগ দেখা দেয় তবে অবশ্যই দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। আমাদের লেখা পড়ার জন্য ধন্যবাদ। আপনার শিশুর হাসি সুস্থ এবং সুন্দর হোক- এটাই আমাদের কামনা। আবারও দেখা হবে অন্য কোন ব্লগে ভালো থাকবেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

প্রশ্ন ২৪ ব্লক এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url