দাঁতের রুট ক্যানেল করতে কত টাকা লাগে
দাঁতের রুট ক্যানেল করতে কত টাকা লাগে এই বিষয়টি খুব গুরুত্বপূর্ণ। একটি গুরুত্বপূর্ণ ডেন্টাল প্রক্রিয়া, যা সাধারনত দাঁতের মজ্জা বা নার্ভে সংক্রমণ বা ক্ষয় ঘটলে করা হয়। আমাদের অনেকেরই দাঁতে সমস্যা হয়। কিন্তু অনেক খরচ হবে বলে আমরা রুট ক্যানেল করার কথা ভাবি না।
অনেকের মনেই প্রশ্ন জাগে, “রুট কেনেন করতে কত খরচ হবে”? এই উত্তর একেবারে নির্দিষ্ট করে বলা কঠিন, কারণ এটি বিভিন্ন বিষয়ের উপর নির্ভর করে। তাই সঠিক খরচ জানতে আজকে আমার এই ব্লগে আপনাদের সাথে বিস্তারিত আলোচনা করব, রুট ক্যানেল করতে কত টাকা খরচ লাগে।
পোষ্ট সূচিপত্রঃ দাঁতের রুট ক্যানেল করতে কত টাকা লাগে
- দাঁতের রুট ক্যানেল করতে কত টাকা লাগে
- ঢাকা ডেন্টাল কলেজে রুট ক্যানেলের খরচ
- রুট ক্যানেল কতদিন স্থায়ী হয়
- দাঁতের রুট ক্যানেল কেন করা হয়
- রুট ক্যানেল করার নিয়ম
- দাঁতের ক্যাপ কতদিন থাকে
- দাঁতের রুট ক্যানেল কি
- রুট ক্যানেল এর ক্ষতিকর দিক
- দাঁতের রুট ক্যানেলে কিভাবে নির্ধারণ হয় এর খরচ
- মন্তব্যঃ দাঁতের রুট ক্যানেল করতে কত টাকা লাগে
দাঁতের রুট ক্যানেল করতে কত টাকা লাগে
দাঁতের রুট ক্যানেল করতে কত টাকা লাগে তা আমাদের অনেকেরই মনের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। দাঁতের রুট ক্যানেল চিকিৎসা অনেকের জন্যই প্রয়োজনীয় হয়ে ওঠে। বিশেষ করে যখন দাঁতের নার্ভে সংক্রমণ বা ক্ষয় দেখা দেয়।
সাধারণত রুট ক্যানেল প্রক্রিয়াটি দাঁতের গভীরে উপস্থিত মজ্জা সরিয়ে, দাঁতের সংক্রমণ মুক্ত করার একটি কার্যকর পদ্ধতি। এটি দাঁতের ব্যথা ও সংক্রমণ থেকে মুক্তি দেয় এবং দাঁতকে পুনরায় কার্যক্ষম করে। কিন্তু এই প্রক্রিয়ায় খরচ নির্ভর করে বিভিন্ন বিষয়ের উপরে। যার বিস্তারিত বর্ণনা নিম্নে দেয়া হলো-
স্থান ভেদে পার্থক্যঃ দাঁতের রুট ক্যানেল এর খরচ স্থানভেদে ভিন্ন হতে পারে। একেক জায়গায় একেক রকম, যেমন-
- শহর ও গ্রাম ভেদে পার্থক্যঃ ঢাকার মত বড় শহরে সাধারণত রুট ক্যানেল এর খরচ বেশি, যেখানে গ্রামীণ এলাকায় তুলনামূলকভাবে কম খরচ হতে পারে।
- বিভিন্ন শহর ও এলাকাঃ ঢাকার বাইরে চট্টগ্রাম, সিলেট, রাজশাহী এবং খুলনায় রুট ক্যানেল এর খরচ বিভিন্ন হতে পারে। ঢাকার পর চট্টগ্রামে খরচ কিছুটা বেশি থাকে, অন্য শহরগুলোতে সাধারণত এদের তুলনায় কম।
- সরকারি বনাম বেসরকারি হাসপাতালঃ সরকারি হাসপাতালে ক্যানেল করতে খরচ তুলনামূলক কম হয়, তবে সেবা পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে হতে পারে। বেসরকারি ক্লিনিক বা ডেন্টাল চেম্বারে দ্রুত সেবা পাওয়া যায় তবে খরচ বেশি হতে পারে।
বিশেষজ্ঞের অভিজ্ঞতাঃ অভিজ্ঞ ডেন্টিস্ট বা এন্ডোডোন্টিস্ট দ্বারা রুট ক্যানেল করলে খরচ বেশি হতে পারে, যা সাধারণত বড় সাহস বা বিশেষায়িত ডেন্টাল ক্লিনিক গুলোতে পাওয়া যায়।
- প্রযুক্তির ব্যবহারে পার্থক্যঃ উন্নত প্রযুক্তি ও আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করলে রুট ক্যানেলের খরচ বেড়ে যায়, যা সাধারণত বড় শহর বা বিশেষ সাহিত্য ডেন্টাল ক্লিনিক গুলোতে পাওয়া যায়।
- ডেন্টিস্টের অভিজ্ঞতাঃ ডেন্টিস্টে অভিজ্ঞতা অনুযায়ী রুট ক্যানেল এর খরচে বিভিন্নতা দেখা যায়। প্রত্যেকটি চিকিৎসার অভিজ্ঞতা এক অনন্য উপায় যেমন-
- বিশেষজ্ঞ ও সাধারণ ডেন্টিস্টঃ একজন অভিজ্ঞ এন্ডোডোন্টিস্ট (রুট ক্যানেল বিশেষজ্ঞ) দ্বারা রুট ক্যানেল করালে খরচ বেশি হয়। সাধারণ ডেন্টিস্ট এর ক্ষেত্রে তুলনামূলকভাবে কম খরচ হতে পারে।
- প্রশিক্ষণ ও অভিজ্ঞতার স্তরঃ ডেন্টিস্টের প্রশিক্ষণ ও অভিজ্ঞতা যত বেশি, খরচও তত বেশি হতে পারে। অভিজ্ঞ ডেন্টিস্ট উন্নত ও নিরাপদ সেবা দিতে পারেন, যার জন্য খরচ একটু বেশি হয়।
- সুনাম ও সেবার মানঃ যে ডেন্টিস্টে সুনাম ও সেবার মান ভালো, তার ফি সাধারণত বেশি হয়। একটি ভালো সেবার মান ও ফলাফলের নিশ্চয়তার জন্য আমরা অনেকেই অভিজ্ঞ ডেন্টিস্ট পছন্দ করি।
- বিশেষ কৌশলঃ উন্নত প্রযুক্তি ও বিশেষ কৌশল প্রয়োগ করেন যার জন্য খরচ একটু বেশি হয়।
ক্লিনিকের ধরনঃ ক্লিনিকের ধরন অনুযায়ী দাঁতের রুট ক্যানেল এর খরচের পার্থক্য দেখা যায়। বিভিন্ন জায়গার ক্লিনিক বিভিন্নভাবে প্রভাবিত যেমন-
- বেসরকারি এবং সরকারি ক্লিনিকঃ সরকারি ক্লিনিকে খরচ তুলনামূলক কম হয় তবে সেবা পেতে অপেক্ষা হতে পারে। বেসরকারি ক্লিনিকে খরচ বেশি হলেও দ্রুত সেবা পাওয়া যায়।
- বিশেষায়িত ডেন্টাল ক্লিনিকঃ উচ্চমানের যন্ত্রপাতি ও অভিজ্ঞ বিশেষজ্ঞদের উপস্থিতির কারণে বিশেষায়িত ডেন্টাল ক্লিনিক গুলোতে খরচ একটু বেশিই হয়।
- সাধারণ হাসপাতাল এবং বিশেষ ডেন্টাল চেম্বারঃ সাধারণ হাসপাতালে রুট ক্যানেলের খরচ তুলনামূলক কম হতে পারে। কিন্তু ডেন্টাল চেম্বারে ব্যক্তিগত যত্ন ও উন্নত প্রযুক্তি থাকায় খরচ একটু বেশি হয়।
- সুবিধা ও পরিষেবার মানঃ যেসব ক্লিনিকে উন্নত পরিষেবা, আরামদায়ক পরিবেশ এবং আধুনিক যন্ত্রপাতি রয়েছে, সেসব ক্লিনিকের খরচ বেশি হয়।
প্রযুক্তির ব্যবহারঃ প্রযুক্তির ব্যবহারের উপর দাঁতের রুট ক্যানেল এর খরচ ভিন্ন হতে পারে যেমন-
- লেজার প্রযুক্তিঃ প্রযুক্তি ব্যবহার করে রুট ক্যানেল করলে খরচ বেশি হতে পারে, কারণ এটি দ্রুত এবং কার্যকর প্রক্রিয়া হলেও ব্যয়বহুল।
- মাইক্রোস্কপিক রুট ক্যানেলঃ মাইক্রোস্কোপিক প্রযুক্তি দ্বারা নির্ভুলভাবে রুট ক্যানেল করা হয়, তবে এর খরচ সাধারণ পদ্ধতির তুলনায় অনেক বেশি।
- ডিজিটাল এক্স-রেঃ উন্নত মানের ডিজিটাল এক্স-রে মেশিন ব্যবহারে খরচ কিছুটা বাড়ে, কারণ এটি সঠিকভাবে দাঁতের ভেতরের অবস্থা নির্ণয়ে সহায়তা করে।
- আধুনিক যন্ত্রপাতি ও যন্ত্রাংশঃ উন্নত মানের যন্ত্রপাতি এবং যতরাংশ ব্যবহারে খরচ বাড়ে, যা সাধারণত বড় শহরের বিশেষায়িত ক্লিনিক গুলোতে পাওয়া যায়।
রুট ক্যানেলের স্তরঃ রুট ক্যানেল এর স্তরের উপর ভিত্তি করে খরচের ভিন্নতা হতে পারে যেমন-
- সংক্রমনের মাত্রাঃ দাঁতের সংক্রমণ বেশি হলে রুট ক্যানেল প্রক্রিয়াজিল হতে পারে যা খরচ বাড়ায়। সংক্রমণ গভীর হলে অতিরিক্ত চিকিৎসা প্রয়োজন হয়।
- দাঁতের অবস্থাঃ ভাঙ্গা বা ক্ষতিগ্রস্ত দাঁতের রুট ক্যানেলে খরচ বেশি হতে পারে, কারণ এটি বেশি সময় ও যত্নের দাবি করে।
- প্রক্রিয়ার ধাপঃ দাঁতের অবস্থান অনুযায়ী রুট ক্যানেল এর ধাপ ও স্তর বাড়তে পারে যা খরচ বাড়িয়ে দেয়। অনেক ক্ষেত্রে একাধিক সেশন প্রয়োজন হয়।
- এন্ডোডোন্টিক চিকিৎসাঃ যদি বিশেষ এন্ডোডোন্টিক চিকিৎসা প্রয়োজন হয়, তাহলে খরচ সাধারণত রুট ক্যানেলের তুলনায় বেশি হয়, কারণ এটি বিশেষ দক্ষতা ও প্রযুক্তি দাবি করে।
বীমা ও কিস্তি সুবিধাঃ রোড ক্যানেলের খরচ সহজলভ্য করতে বিভিন্ন ক্লিনিকে বীমা ও কিস্তি সুবিধা পাওয়া যায় যেমন-
- স্বাস্থ্য বীমাঃ অনেক বীমা কোম্পানি ডেন্টাল চিকিৎসার আওতায় রুট ক্যানেল খরচের একটি অংশ কভার করে, যা রোগীর জন্য আর্থিক সহায়তা দেয়।
- কিস্তি সুবিধাঃ অনেক কিস্তিতে বিল পরিশোধে সুযোগ দেয়, যাতে রোগী একেবারে পুরো খরচ বহন না করেও চিকিৎসা নিতে পারেন।
- বীমা কাভারেজের সীমাঃ বীমা পলিসির আওতায় কভারেজ সীমিত হতে পারে, তাই রুট ক্যানেল এর পুরো খরচ হয়তো সব সময় কাভার হবেনা।
- বীমা ও কিস্তির সুবিধা যাচাইঃ চিকিৎসা শুরু করার আগে ক্লিনিক এর সাথে বীমা ও কিস্তি সুবিধা যাচাই করা উচিত, যাতে সঠিক অর্থনৈতিক পরিকল্পনা করা যায়।
সাধারণ খরচঃ রুট ক্যানেল করতে সাধারণ কত খরচ হয় যেমন-
- বাংলাদেশে সাধারণ খরচঃ সাধারণত একটি দাঁতের রুট ক্যানেল করতে ৩০০০ থেকে ১৫,০০০ টাকা খরচ হতে পারে, যা স্থান ডেন্টিস্ট এবং ক্লিনিকের উপর নির্ভর করে।
- শহর ভেদে ভিন্নতাঃ ঢাকার মতো বড় শহরে রুট ক্যানেল এর খরচ তুলনামূলক বেশি তবে গ্রামীন এলাকায় খরচ কম হতে পারে।
- রুট ক্যানেল এর জটিলতাঃ দাঁতের সংক্রমণ ও ক্ষয়ের মাত্রা বেশি হলে খরচ বেশি হয় কারণ অতিরিক্ত চিকিৎসা এবং সময় প্রয়োজন হয়।
- বেসরকার এবং সরকারি খরচঃ সরকারি হাসপাতালে রুট ক্যানেল তুলনামূলক কম খরচে করা যায় কিন্তু একটি বেসরকারি হাসপাতালে রুট ক্যানেলের খরচ দ্রুত ও ব্যক্তিগত সেবা পাওয়ার জন্য বেশি হয়।
পরিশেষে বলা যায় যে, অনেক ডেন্টাল ক্লিনিক রুট ক্যানেল প্রক্রিয়ায় খরচকে আরো সহজলভ্য করার জন্য স্বাস্থ্য বীমা বা কিস্তিতে পরিষদের সুবিধা দেয় যা রোগীর জন্য আর্থিকভাবে সহায়ক হতে পারে। তাই রুট ক্যানেল করতে হলে প্রথমে নির্ভরযোগ্য ক্লিনিকে গিয়ে পরামর্শ নেওয়া উচিত, যেখানে প্রয়োজন অনুযায়ী সর্বোত্তম এবং সাশ্রয়ী চিকিৎসা পাওয়া যাবে।
ঢাকা ডেন্টাল কলেজে রুট ক্যানেলের খরচ
ঢাকা ডেন্টাল কলেজে রুট ক্যানেলের খরচ তুলনামূলকভাবে সাশ্রয়ী এবং বাংলাদেশে অন্যান্য বেসরকারি ডেন্টাল ক্লিনিকের চেয়ে কম। সরকারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে এই কলেজে রোগীদের জন্য সাশ্রয়ী মূল্যে চিকিৎসা প্রদান করা হয়। রুট ক্যানেল চিকিৎসা সাধারণত দাঁতের সংক্রমণ বা ক্ষয়জনিত কারণে প্রয়োজন হয়।
এই প্রক্রিয়াটি দাঁতের অভ্যন্তরে আক্রান্ত মজ্জা ও নার্ভ সরিয়ে দাঁত সংরক্ষণে সহায়তা করে। ঢাকা ডেন্টাল কলেজে রুট ক্যানেলের খরচ সাধারণত ২০০০ থেকে ৫০০০ হাজার টাকার মধ্যে থাকে, যা ব্যক্তিগত ডেন্টাল চেম্বার এর চেয়ে কম। এখানে শিক্ষানবিশ এবং অভিজ্ঞ ডেন্টিসদের তত্ত্বাবধানে রোগীদের চিকিৎসা প্রদান করা হয়।
সাধারণত খরচ কম হলেও সেবার মান নিশ্চিত করতে উন্নত মানের যন্ত্রপাতি এবং প্রক্রিয়া ব্যবহার করা হয়। এছাড়া সরকারি ডেন্টাল কলেজ হাওয়ায় এখানে সব ধরনের পরীক্ষার খরচ তুলনামূলকভাবে কমে আসে। তবে সরকারি প্রতিষ্ঠানে চিকিৎসা নিতে চাইলে রোগীদের জন্য অপেক্ষার সময় বেশি হতে পারে।
সাধারণত এখানে অনেক রোগী আসেন এবং চিকিৎসার প্রক্রিয়া সময় সাপেক্ষ হয়। যারা তাড়াতাড়ি সেবা নিতে চান, তাদের জন্য এই অপেক্ষা কিছুটা অসুবিধার হতে পারে। যেহেতু ঢাকা ডেন্টাল কলেজে স্বল্পমূল্যে উন্নত মানের সেবা প্রদান করা হয় তাই সাশ্রয়ী মূল্যে ভালো মানের চিকিৎসা পাওয়ার জন্য এটি একটি নির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠান।
রুট ক্যানেল কতদিন স্থায়ী হয়
রুট ক্যানেল কতদিন স্থায়ী হয় তা নির্ভর করে দাঁতের সমস্যা এবং সঠিক চিকিৎসকের মাধ্যমে চিকিৎসা প্রদান। রুট ক্যানেল চিকিৎসা দাঁতের অভ্যন্তরীণ সংক্রমণ বা ক্ষয়জনিত সমস্যার সমাধান করতে ব্যবহৃত একটি পদ্ধতি, যা দাঁত কে সংরক্ষণ করতে সহায়ক।
সঠিকভাবে এবং সফলভাবে রুট ক্যানেল করা হলে এটি দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে। তবে এই চিকিৎসার স্থায়িত্ব কিছু নির্দিষ্ট বিষয়ের উপর নির্ভর করে, যা নিচে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলো-
- চিকিৎসার মান ও ডেন্টিস্টের দক্ষতাঃ রুট চ্যানেল কতদিন স্থায়ী হবে তা অনেকাংশেই নির্ভর করে চিকিৎসার গুণমান এবং ডেন্টিস্টের দক্ষতার উপর। অভিজ্ঞ ডেন্টিসরা সঠিকভাবে রুট ক্যানেল করতে পারেন, ফলে দাঁত সংক্রমণ মুক্ত থাকে এবং দীর্ঘস্থায়ী হয়। দক্ষ ডেন্টিস্টের ব্যবহারিত উন্নত মানের যন্ত্রপাতি এবং সঠিক পদ্ধতি চিকিৎসার স্থায়িত্ব বাড়ায়।
- কোর ক্রাউন বা কভারিংঃ রুট ক্যানেল এর পর দাঁতকে মজবুত করার জন্য সাধারণত ক্রাউন বা কভারিং ব্যবহার করা হয়, যা দাঁতকে অতিরিক্ত চাপ এবং চিড় থেকে রক্ষা করে। উন্নত মানের এবং সঠিকভাবে লাগানো ক্রাউন রোড ক্যানেল এর স্থায়িত্ব বাড়াতে সহায়তা করে। যদি কোর বা ক্রাউন সঠিকভাবে না দেওয়া হয় তবে দাঁত দুর্বল হয়ে ভেঙে যেতে পারে।
- পরবর্তী যত্নঃ রুট ক্যানেল এর পরে মুখের স্বাস্থ্য এবং দাঁতের সঠিক যত্ন নেওয়া অত্যন্ত জরুরী। নিয়মিত ব্রাশ করা, ফ্লস করা এবং ডেন্টাল চেকআপ করানো হলে রুট ক্যানেল এর স্থায়িত্ব বাড়ে। খাবার গ্রহণের সময় খুব শক্ত বা চিবানোর জন্য কঠিন বস্তু এড়িয়ে চলা উচিত, কারণ এগুলো দাঁত ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
- দাঁতের অবস্থা এবং সংক্রমণঃ রুট ক্যানেল করা দাঁতের সংক্রমণ যদি পুরোপুরি দূর করা না হয়, তবে পরবর্তীতে আবারও সংক্রমণ দেখা দিতে পারে। সঠিকভাবে সংক্রমণ মুক্ত করা হলে রুট ক্যানেল দীর্ঘদিন স্থায়ী হতে পারে, অনেক সময় তা জীবনের শেষ পর্যন্তও কার্যকর থাকতে পারে।
- জীবনযাত্রার প্রভাবঃ কিছু মানুষের দাঁত বেশি শক্তিশালী এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভালো থাকে, তাই তাদের ক্ষেত্রে রুট কেনেন বেশিদিন স্থায়ী হতে পারে। অন্যদিকে, ধূমপান বা অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস রুট ক্যানেলের কার্যকারিতা কমাতে পারে। এ কারণে স্বাস্থ্যকর জীবন যাত্রা অনুসরণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
- উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহারঃ আধুনিক প্রযুক্তি এবং উন্নত মানের উপকরণ ব্যবহারের মাধ্যমে আজকাল রুট ক্যানেল চিকিৎসা আগের চেয়ে অনেক বেশি কার্যকর এবং দীর্ঘস্থায়ী হয়। উন্নত উপকরণ যেমন বায়োসিরামিক, ফাইবার পোস্ট ইত্যাদি ব্যবহার করলে রুট ক্যানেল এর স্থায়িত্ব অনেক বেড়ে যায়।
- রুট ক্যানেল এর পুনঃচিকিৎসাঃ কোন কারণে যদি রুট ক্যানেল এর সমস্যা দেখা দেয় তবে পুনরায় রুট ক্যানেল বা এপিকো ectomy নামক একটি ছোট সার্জারি করে পুনরায় চিকিৎসা করা যেতে পারে। তবে, প্রথম রোড ক্যানেল এর পরে যদি যথাযথ যত্ন নেওয়া হয়, তাহলে এ ধরনের পুনঃচিকিৎসার প্রয়োজন পড়ে না।
সার্বিকভাবে, রুট ক্যানেল চিকিৎসা সাধারণত সঠিক যত্নের মাধ্যমে হলে তা ১০ থেকে ১৫ বছর বা তার চেয়ে বেশি স্থায়ী হতে পারে। এই জন্য আমাদেরকে সঠিক জায়গায় সঠিক ডাক্তারের মাধ্যমে রোড ক্যানেলে চিকিৎসা করাতে হবে। কারণ দাঁত মানুষের জীবনে অমূল্য সম্পদ। দাঁতের সঠিক যত্নে অবশ্যই আমরা ভালো জায়গায় রুট ক্যানেল করাব।
দাঁতের রুট ক্যানেল কেন করা হয়
দাঁতের রুট ক্যানেল কেন করা হয় তা মূলত দাঁতের অভ্যন্তরে সংক্রমণ বা ক্ষয়জনিত সমস্যা সমাধানের জন্য। দাঁতের মজ্জা (পাল্প) সংক্রমিত বা প্রবাহিত হলে রুট ক্যানেল করে সেই মজ্জা সরিয়ে, দাঁত থেকে সংরক্ষিত করা হয়। দাঁতের মজ্জা দাঁতের ভেতরের একপ্রকার নরম টিস্যু, যাতে নার্ভ এবং রক্তনালী গুলো থাকে।
মজ্জায় সংক্রমণ বা প্রদাহ দেখা দিলে তা দাঁতের ব্যথা শুরু হয় এবং বিভিন্ন ধরনের রোগ জীবাণু সৃষ্টি করে, যা পুরো দাঁতকেই ধ্বংস করে দেয়। নিচে দাঁতের রুট ক্যানেল কেন করার প্রয়োজনীয়তা তা বর্ণনা করা হলো-
গভীর ক্ষয় বা ক্যাভিটিঃ দাঁতের ভেতরে গভীর ক্ষয় বা ক্যাভিটি তৈরি হইলে ব্যাকটেরিয়া দাঁতের মজ্জায় পৌঁছে যেতে পারে। আর এ কারণেই প্রচন্ড দাঁতের ব্যথা বা সংক্রমণ হয়ে থাকে। এইরকম অবস্থায় ব্যথা ও সংক্রমণ দূর করতে আমাদের দাঁতের রুট ক্যানেল এর প্রয়োজন হয়। কোন কিছু খেলে বা মুখে গেলেই সেই ক্যাভিটির মধ্যে থেকে যায় এবং ব্যথার সৃষ্টি করে।
দাঁতের বেশি ক্ষয় না হলে রুট ক্যানেল করা যায়। রুট ক্যানেলের মাধ্যমে মজ্জা বের করে, সেই অংশ পরিস্কার করে দিয়ে এবং সিল করা হয়, যাতে ব্যাকটেরিয়া আর সেখানে প্রবেশ করতে না পারে বা সংক্রমণ ঘটাতে না পারে।
ভাঙ্গা বা চিড় ধরা দাঁতঃ দুর্ঘটনা বা আঘাতের কারণে দাঁতে চির ধরলে বাধা ভেঙে গেলে মজ্জা সংক্রমিত হতে পারে। চিড় বা ফাটল দিয়ে ব্যাকটেরিয়া মজ্জায় ঢুকে যায় যা সংক্রমণ সৃষ্টি করে এমন পরিস্থিতিতে রুট চ্যানেল করালে দাঁতের সংক্রমণ দূর হবে এবং দাঁতটি সুরক্ষিত থাকবে।
গভীর সংক্রমণ বা আবসেসঃ দাঁতের মূলে অ্যাবসেস (ফোড়া) তৈরি হলে এটি আশেপাশের হাড়েও ছড়িয়ে যেতে পারে। যার ফলে মারাত্মক ব্যথা এবং প্রদাহের কারণ হয়। অ্যাবসেস হলে ব্যাকটেরিয়ার টানে দাঁতের মূলে পুঁজ জমা হয়, যা রুট ক্যানেল এর মাধ্যমে পরিষ্কার করা হয়। এভাবে আপনারা দাঁত কে সংক্রমণ মুক্ত ও সুস্থ রাখতে পারবেন।
দাঁতের সংরক্ষণের জন্যঃ দাঁত মানুষের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে এবং খাবার খেতে সাহায্য করে। সংক্রমিত দাঁত না উঠিয়ে তা সংরক্ষণ করা অনেক ভালো কারণ প্রাকৃতিক দের মত কাজ কোন কৃত্রিম দাঁতের মধ্যে পাওয়া যাবে না। প্রাকৃতিক দাঁত ঠিক থাকলে খাবার চিবানো, কথা বলা এবং দাঁতের সাজ বা সমন্বয় স্বাভাবিক থাকে।
দাঁতের সৌন্দর্য বজায় রাখাঃ সংক্রমণ বা ক্ষয়ের কারণে দাঁতে সমস্যা থাকলে অনেক সময় কালো হয়ে যায় বা তার স্বাভাবিক আকৃতি বা সৌন্দর্যতা নষ্ট হয়। রোড ক্যানেলে মাধ্যমে আপনারা দাঁতকে সংক্রমণ মত ও মজবুত করতে পারবেন। ফলে দাঁতের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বজায় থাকবে।
পরবর্তী জটিলতা এড়ানোঃ সময়মতো রুট ক্যানেল না করলে সংক্রমণ ছড়িয়ে যেতে পারে এবং এতে দাঁতের অবস্থা আরো খারাপ হতে পারে এবং পাশের দাঁত কেউ আক্রমণ করতে পারে। এই অবস্থা এমনকি হাড় পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। রুট ক্যানেল কলে পরবর্তী জটিলতা এড়াতে পারবেন।
সর্বোপরি দাঁতের রুট ক্যানেল চিকিৎসা একটি কার্যকর পদ্ধতি যা সংক্রমণ ও দাঁতের প্রচন্ড ব্যথা দূর করে দাঁতকে দীর্ঘস্থায়ী এবং কার্যকরী রাতে সাহায্য করে। কথা দাঁত থাকতে দাঁতের মর্যাদা দিন। কোন কারনে দাঁত সংক্রমিত হলে আমরা রুট ক্যানেল এর মাধ্যমে তাকে ফিরিয়ে আনব। দাঁতের যত্নে রুট ক্যানেল অবশ্যই অপরিহার্য।
রুট ক্যানেল করার নিয়ম
রুট ক্যানেল করার নিয়ম আমাদেরকে সঠিকভাবে জানতে হবে। রাতের রুট ক্যানেল একটি পদ্ধতি যা মূলত দাঁতের ভেতরের মজ্জা বা পাল্প যখন সংক্রমিত বা ক্ষতিগ্রস্ত হয় তখন প্রয়োগ করা হয়। এই পদ্ধতির মাধ্যমে দাঁতকে সংরক্ষণ করা হয় এবং ব্যাথা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
রুট ক্যানেল এর মাধ্যমে দাঁতের অভ্যন্তরীণ অংশ পরিষ্কার করে জীবাণুমুক্ত করে সিটিসেল করে দেওয়া হয়। যাতে দাঁতের ব্যথা আর না হয় এবং জীবাণু যেন আর ক্ষতি করতে না পারে। কারণ একটি সংক্রমিত দাঁত পাশের দাঁতেরও ক্ষতি করে ফেলে। দাঁতের রুট ক্যানেল করার এই পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো-
প্রাথমিক মূল্যায়ন এবং এক্স-রেঃ প্রথমে দাঁতের ডাক্তার দাঁতের সমস্যা নির্ণয় করতে আপনার দাঁতের পরীক্ষা করবে এবং সাথে এক্স-রেও করবে। এক্স-রে -এর মাধ্যমে দাঁতের মূলে এবং আশেপাশের সংক্রমনের মাত্রা বোঝা যায়। এর ফলে ডেন্টিস্ট সঠিকভাবে জানতে পারবে আপনার দাঁতে কোন স্থানে ক্ষতি হয়েছে এবং কাজ করতে হবে।
অ্যানেসথেসিয়া প্রয়োগঃ রোগীর যাতে কোন ধরনের ব্যথা অনুভূত না হয় বা ভয় না পাই সেজন্য লোকাল এ্যানাসথেসিয়া বা স্থানীয় অবশকারী প্রয়োগ করা হয়। দাঁত এবং আশেপাশের এলাকে অবশ করে দেয়, ফলে ডাক্তারের চিকিৎসা করতে সুবিধা হয়। এতে আপনি ভয় পাবেন না এবং ডাক্তার সম্পূর্ণ স্বস্তিতে আপনার দাঁতের চিকিৎসা করতে পারবে।
রাবার ড্যাম দিয়ে দাঁত আলাদা করা দাঁতের সংক্রমণ এড়াতে রুট ক্যানেলের সময় নির্দিষ্ট দ্বারকে আলাদা রাখার প্রয়োজন হয়। এই জন্য রাবার ড্যাম নামক একপ্রকার রাবারের শীট দিয়ে আক্রান্ত দাঁতটি আলাদা করা হয়, যাতে চিকিৎসার সময় মুখের লালা দাঁতের সংস্পর্শে না আসে।
ক্ষয়কৃত অংশ এবং মজ্জা সরানোঃ এরপর ডেন্টিস্ট দাঁতের ক্ষতিগ্রস্ত অংশটি ড্রিলের মাধ্যমে পরিষ্কার করে সংক্রমিত মজ্জা (পাল্প) বের করে ফেলেন। মজ্জা সারানোর ফলে দাঁতের ভেতরে থাকা ব্যাকটেরিয়া এবং ক্ষতিকর টিস্যু অবসারণ হয়, যা সংক্রমণ কমাতে সহায়তা করে।
রুট ক্যানেল প্যাসেজ পরিষ্কার এবং জীবাণুমুক্ত করাঃ মজ্জা সরানোর পর দাঁতের মূলে রুট ক্যানেল প্যাসেজটি পরিষ্কার করা হয়। এরপর কেমিক্যাল জীবাণুনাশক ব্যবহার করে ভেতরের অংশটি জীবাণুমুক্ত করা হয় যা, পরবর্তী সংক্রমণ প্রতিরোধে সহায়তা করে।
রুট ক্যানেল পূর্ণ করাঃ রুট ক্যানেলটি পরিষ্কার এবং জীবাণুমুক্ত করার পর সেটি সিল করা হয়। এই অংশটি বিশেষ পদার্থ (গাটাপার্চা) দিয়ে পূর্ণ করা হয়, যা দাঁতের মূলের অংশটি সুরক্ষিত রাখে এবং ভবিষ্যতে ব্যাকটেরিয়া প্রবেশ বন্ধ করে।
অস্থায়ী বা স্থায়ী ফিলিংঃ রুট ক্যানেল সম্পূর্ণ করার পর দাঁতের ওপর একটি অস্থায়ী ফিলিং দেওয়া হয় যা, দাঁতকে সুরক্ষিত রাখে। পরে রোগী যদি স্থায়ী ভাবে ফিলিং বা ক্রাউন বসানোর পরিকল্পনা করেন তাহলে দাঁতের স্থায়ী ফিলিং বা কোর ক্রাউন বসানো হয়। একটি দাঁতকে মজবুত রাখে এবং চিড় ধরার আশঙ্কা কমায়।
চিকিৎসার পরবর্তী যত্নঃ রুট ক্যানেল শেষে দাঁত সুস্থ রাখতে কিছু পরামর্শ দেওয়া হয় যা আপনাকে অবশ্যই পালন করতে হবে। প্রথম কয়েকদিন ব্যথা বা সংবেদনশীলতা থাকতে পারে, এজন্য ডেন্টিস্ট পেইনকিলার বা অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধের। এছাড়াও শক্ত খাবার জীবাণু থেকে বিরত থাকতে বলা হয় এবং নিয়মিত দাঁতের যত্ন নিতে পরামর্শ দেওয়া হয়।
পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে সঠিকভাবে রুট ক্যানেল সম্পন্ন করা হলে স্বাভাবিক কার্যকারিতা ফিরিয়ে দেয় এবং তাকে দীর্ঘদিন সংরক্ষণে সহায়তা করে। রুট ক্যানেল এর দাঁত কে অবশ্যই আমাদের অনেক যত্ন নিতে হবে তাহলেই দাঁত ভালো থাকবে। দাঁতের মাধ্যমে খাবার হজম হয় এবং আমরা সুস্থ থাকি। তাই দাঁতের যত্ন নিতে হবে।
দাঁতের ক্যাপ কতদিন থাকে
দাঁতের ক্যাপ কতদিন থাকে তা সঠিক ডাক্তার এবং সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে বোঝা যায়। দাঁতের ক্যাপ, যাকে ডেন্টাল ক্রাণও বলা হয়, দাঁতকে রক্ষা এবং শক্তিশালী করতে ব্যবহার করা হয়। সাধারণত রুট ক্যানেল, দাঁতের চিড়, ক্ষয় বা ফিলিংয়ের পরে দাঁতের গঠন ভালো রাখতে ক্যাপ ব্যবহার করা হয়।
ক্যাপ দাতের উপর একটি আচ্ছাদনের মত বসানো হয়, যা দাঁতকে ক্ষয়, ভাঙ্গন এবং বাহ্যিক চাপ থেকে সুরক্ষা দেয়। সাধারণভাবে একটি ডেন্টাল ক্যাপ বা ক্রাউন 10 থেকে 15 বছর পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। তবে আপনাদের সঠিক যত্নে এটি আরো দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে। এর স্থায়িত্ব নির্ভর করে বিভিন্ন বিষয়ের উপর যেমন-
- ক্যাপ এর উপাদানঃ ক্যাপ বা ক্রাউন এর স্থায়িত্ব মূলত এর নির্মাণ উপাদানের ওপর নির্ভর করে। পোরসেলিন, সেরামিক, মেটাল এবং রজন বিভিন্ন উপাদানের মধ্যে মেটাল বা মেটাল-ফিউশন ক্যাপ তুলনামূলকভাবে বেশি টেকসই। পোরসেলিন বা সেরামিক ক্যাপও দীর্ঘস্থায়ী হয় তবে এটি কিছুটা স্পর্শকাতর হওয়ায় খুব কঠিন কিছু খাওয়ার সময় ভাঙতে পারে।
- মুখের স্বাস্থ্য এবং যত্নঃ ক্যাপের স্থায়িত্ব বাড়াতে নিয়মিত ব্রাশ ও ফ্লস করা, ডেন্টিস্টের নির্দেশ অনুসারে মুখের স্বাস্থ্য রক্ষা করতে হবে। দাঁতের ক্যাপ দীর্ঘস্থায়ী করতে নিয়মিত ডেন্টাল চেকআপ করা প্রয়োজন। আমরা যদি নিয়মিত মুখের স্বাস্থ্য ভালো রাখি এবং ক্যাপের সঠিক যত্ন নিই তবে এটি দীর্ঘসময় কার্যকর হতে পারে।
- ব্যবহার এবং জীবনযাত্রাঃ ক্যাপের স্থায়ী তে জীবনযাত্রা ও খাওয়ার অভ্যাসেরও ভূমিকা রয়েছে। ক্যাপ লাগানোর পর আমাদেরকে অবশ্যই মনে রাখতে হবে যেন শক্ত বস্তু যেমন বরফ, পেন বা চুইংগাম, বিভিন্ন ধরনের শক্ত হাড় জীবাণুর অভ্যাস বাদ দিতে হবে এতে ক্যাপ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এছাড়াও ধূমপান বা অসাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসও ক্যাপের স্থায়ী তে প্রভাব ফেলে।
- ডেন্টিস্টের দক্ষতাঃ ক্যাপ বসানোর পদ্ধতিও এর স্থায়িত্বে ভূমিকা রাখে। যদি ডেন্টিস্ট সঠিকভাবে একটি বসান এবং উপযুক্ত উপকরণ ব্যবহার করেন, তবে এটি দাঁতের হাতে মজবুতভাবে যুক্ত থাকে এবং দীর্ঘস্থায়ী হয়। এই জন্য আমাদেরকে প্রথমেই একজন ভালো ডেন্টিস্ট নির্বাচন করতে হবে। যাতে আমরা সঠিক সমাধান পায়।
পরিশেষে বলা যায় যে, আমরা যদি সঠিক ডেন্টিস্ট এবং সঠিক জায়গা নির্বাচন করতে পারি তাহলে আমাদের ক্যাপ বসানো সার্থকতা হবে। কারণ উপযুক্ত যত্ন, সঠিক ডেন্টিস্ট এবং সঠিক পদ্ধতিতে বসানো হলে তাদেরকে ১০-১৫ বছর বা তারও বেশি দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে।
দাঁতের রুট ক্যানেল কি
দাঁতের রুট ক্যানেল কি এই সম্পর্কে আগে আমাদের জানতে হবে। রুট ক্যানেল একটি দাঁতের অভ্যন্তরীণ চিকিৎসা পদ্ধতি, যা দাঁতের মূলের ভেতরের অংশে সংক্রমণ বা ক্ষত সৃষ্টি হলে ব্যবহার করা হয়। দাঁতের মজ্জা (পাল্প) দাঁতের ভেতরের নরম টিস্যু, যা নার্ভ এবং রক্তনালী গুলির সমন্বয়ে গঠিত।
দাঁত যদি গভীর ক্ষয়, সংক্রমণ বা আদারের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয় তবে দাঁতের এই মজ্জায় প্রদাহ বা সংক্রমণ হতে পারে। এ ধরনের সংক্রমণ দাঁতের তীব্র ব্যথা এবং সংবেদনশীলতার কারণে হয়ে দাঁড়ায় এবং এটি যদি চিকিৎসা করা না হয়, তবে সংক্রমণ দাঁতের মূল এবং আশেপাশের হাড়ে ছড়িয়ে পড়তে পারে।
রুট ক্যানেল পদ্ধতিতে প্রথমে সংক্রমিত বা ক্ষতিগ্রস্ত মজ্জা সরানো হয়। এরপর দাঁতের অভ্যন্তরীণ ক্যানেল পরিষ্কার করে জীবাণুমুক্ত করা হয় এবং তারপর সেটি বিশেষ পদার্থ দিয়ে পূর্ণ করা হয়, যা পরবর্তীতে দাঁতে সংক্রমণ প্রতিরোধে সহায়তা করে। শেষ পর্যায়ে দাঁতটিকে আরো মজবুত করার জন্য একটি ক্রাউন বা কভার দিয়ে আচ্ছাদিত করা হয় যা দাঁতটিকে শক্তি এবং স্থায়িত্ব দেয়।
রুট ক্যানেলের প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে দাঁত কে সংক্রমণ মুক্ত করে সেটি সংরক্ষণ করা। প্রাকৃতিক দাঁত সংরক্ষণ করা সব সময় ভালো কারণ এটি মুখের গঠন খাবার চিবানো এবং কথা বলার ক্ষমতা বজায় রাখার জন্য অনেক সাহায্য করে। আমাদের খাবার হজমে একমাত্র মাধ্যম হলো দাঁত। সে কারণে দাঁতের যথাযথ যত্ন নিতে হবে।
পরিশেষে বলা যায় যে এটি একটি কার্যকর পদ্ধতি যা অনেক ক্ষেত্রেই দাঁত সরিয়ে ফেলার চেয়ে বেশি কার্যকরী এবং স্থায়ী সমাধান প্রদান করে। সব রোগের দাঁতের গভীর ক্ষয় বা ব্যথা রয়েছে, তারা সাধারণত রুট ক্যানেল করে তাদের দাঁত কে দীর্ঘ সময়ের জন্য সুস্থ রাখতে পারেন। যথাযথ আমাদের দাঁতের যত্ন নিতে হবে।
রুট ক্যানেল এর ক্ষতিকর দিক
রুট ক্যানেলের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে আমাদের জানা অবশ্যই অপরিহার্য। দাঁতের রুট ক্যানেল একটি প্রচলিত এবং কার্যকর চিকিৎসা পদ্ধতি হলেও একটি কিছু ক্ষেত্রে কিছু ক্ষতিকর দিয়ে বা পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া রাখতে পারে।
রুট ক্যানেল মূলত দাঁতের মজ্জা (পাল্প) বের করে দাঁতের অভ্যন্তরীণ সংক্রমণ দূর করে, তবে এ পদ্ধতির কিছু নেতিবাচক দিকও রয়েছে। প্রত্যেক জিনিসই বিপরীত প্রতিক্রিয়া রয়েছে ঠিক তেমনি এর বিপরীত ক্ষতিকর কিছু দিকে রয়েছে সেগুলো নিম্নে আলোচনা করা হলো-
- পরবর্তী সংক্রমণের ঝুঁকিঃ রুট ক্যানেলের পরে দাঁতের ভেতর থেকে সব জীবাণু অপসারণ না হলে বা সঠিকভাবে জীবাণুক্ত না হলে পরবর্তী সময়ে পুনরায় সংক্রমিত হতে পারে এবং মাঝে মাঝে দাঁতের ব্যথা থেকে যায়। কিছু ক্ষেত্রে, মাইক্রো ব্যাকটেরিয়া রুট ক্যানেল এর সময় মজ্জার কিছু অংশে থেকে যেতে পারে যা পুনরায় সংক্রমণ ঘটাতে পারে।
- স্থায়িত্বের অভাবঃ রুট ক্যানেল করা দাঁত প্রাকৃতিক দাঁতের মতো শক্তিশালী হয় না, কারণ এ কোন নার্ভ থাকে না যা দাঁত কে পুষ্টি সরবরাহ করে। ফলে সময়ের সাথে দা দুর্বল হয়ে চিড় বা ভেঙ্গে যেতে পারে। যদিও ক্রাউন বা কভার ব্যবহার করা হয়, তবে তাও সব সময় দাগকে সম্পূর্ণভাবে রক্ষা করতে সক্ষম হয় না।
- দাঁতের বর্ণ পরিবর্তনঃ অনেক সময় রুট ক্যানেল এর পর দাঁতের রং পরিবর্তিত হয়ে কালচে বা হলুদ বর্ণ হতে পারে। এটি দাঁতের সৌন্দর্যের প্রভাব ফেলতে পারে বিশেষ করে সামনের দিকের দাঁতে। যদিও এ সমস্যা সমাধানে দাঁতের উপর একটি কোর বা কভার বসানো হয় তবুও প্রাকৃতিক দাঁতের তুলনায় এই পরিবর্তন অনেক সময় অসন্তোষজনক হতে পারে।
- ব্যথা এবং অস্বস্তিঃ রুট ক্যানেল এর পরে কিছুদিন দাঁতের ব্যথা বা সংবেদনশীলতা থাকতে পারে। যদিও অধিকাংশ ক্ষেত্রে এটি স্বাভাবিক এবং ওষুধের মাধ্যমে এই ব্যথা নিয়ন্ত্রণে আনা যায় তবে কারো কারো ক্ষেত্রে এ ব্যথা দীর্ঘমেয়াদী হতে পারে। এমনকি সঠিক ইচ্ছার পরও কিছু রোগী অনুভব করেন যে দাঁতে কিছু ব্যথা বা অস্বস্তি রয়ে গেছে।
- সফল না হওয়ার ঝুঁকিঃ কিছু ক্ষেত্রে রুট ক্যানেল সম্পূর্ণ সফল হয় না এবং সংক্রমণ বা ব্যথা থেকে যায়। এটি হতে পারে দাঁতের গঠন জটিল হলে বা যদি চ্যানেলটি সম্পূর্ণ পরিষ্কার না হয়। এমন ক্ষেত্রে পরবর্তীতে দাঁতটি আবার রুট কানের প্রয়োজন হতে পারে যা সময় সাপেক্ষ এবং ব্যয়বহুল হতে পারে।
- এলার্জি ও সংবেদনশীলতাঃ রুট ক্যানেল এর জন্য ব্যবহারিত কিছু উপকরণ যেমন গাটাপারচা বা অন্য কিছু ফিলিং বাদাম, কারো কারো ক্ষেত্রে এলার্জির প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। এর ফলে দাঁতে অসতি এবং জ্বালাপোড়া হতে পারে।
- হাড়ের ক্ষয়ঃ রুট ক্যানেলের পর আপনাদের মূলের চারপাশের হাড় কিছুটা দুর্বল হয়ে যেতে পারে, কারণ দাঁতের নার্ভ সরিয়ে নেওয়ার কারণে হাড়ের পুষ্টির অভাব দেখা দেয়। এ কারণে অনেক সময় দাঁতের চারপাশের হাড়ের স্বাভাবিক গঠন ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
সার্বিকভাবে, রুট ক্যানেল পদ্ধতি সাধারণত নিরাপদ হলেও কিছু ক্ষেত্রে এসব ক্ষতিকর দিক দেখা দিতে পারে। তাই রুট ক্যানেল করার আগে এবং পরে নিয়মিত ডেন্টাল চেকআপ করা, ডেন্টিস্টের পরামর্শ অনুসরণ করা এবং ভালোভাবে যত্ন নেওয়া প্রয়োজন, যাতে এ ধরনের ঝুঁকে বা ক্ষতিকর প্রভাব কমে আসে।
দাঁতের রুট ক্যানেলে কিভাবে নির্ধারণ হয় এর খরচ
দাঁতের রুট ক্যানেলে কিভাবে নির্ধারণ হয় এর খরচ তা বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বিবেচনার উপর। মূলত রোগীর অবস্থান, দাঁতের অবস্থা, ডেন্টিস্টের অভিজ্ঞতা, প্রযুক্তির ব্যবহার এবং ক্লিনিক এর মান এর উপর ভিত্তি করে এই খরচেব বৈচিত্র দেখা যায় যা প্রতিটি বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হল-
- ডেন্টিস্টের অভিজ্ঞতা এবং দক্ষতাঃ অভিজ্ঞ এবং উচ্চমান সম্পন্ন ডেন্টিস্টদের ফি সাধারণত বেশি হয়, কারণ তারা উন্নতমানের চিকিৎসা প্রদান করেন। এমনকি যদি জটিল দাঁতের ক্ষেত্রে উচ্চতা ও সরঞ্জাম প্রয়োজন হয় তাহলে খরচ বাড়তে পারে।
- ক্লিনিকের নাম এবং অবস্থানঃ শহর বা এলাকার উপর ভিত্তি করে খরচ পরিমাণ ভিন্ন হতে পারে। যেমন রাজধানী বা বড় শহরের ক্লিনিক গুলোর খরচ তুলনামূলক বেশি হয়ে থাকে। এ ছাড়াও উন্নত মানের বা বিলাসবহুল ক্লিনিকে খরচ বেশি হয়, যেখানে রোগী জন্য উন্নত সুবিধা প্রদান করা হয়।
- রোগীর দাঁতের অবস্থাঃ দাঁতের সমস্যা যদি বেশি জটিল হয়, যেমন মূলে সংক্রমণ বিস্তৃত হয় বা অতিরিক্ত জীবাণুমুক্ত করতে হয় তাহলে এই চিকিৎসায় খরচ বেড়ে যায়। সাধারণত রুট ক্যানেল এর তুলনায় জ্যোতিকে সে অতিরিক্ত পদক্ষেপের প্রয়োজন হয়, যা খরচ বাড়াতে পারে
- প্রযুক্তি এবং সরঞ্জামঃ উন্নত প্রযুক্তি এবং আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হলে রুট ক্যানেল এর খরচ বাড়ে। অনেক ক্লিনিক উন্নত লেজার, ডিজিটাল এবং মাইক্রোস্কোপ ব্যবহার করে এবং ফলাফল নিশ্চিত করে।
- রুট ক্যানেলের স্তরঃ কিছু ক্ষেত্রে একাধিক রুট ক্যানেল প্যাসেজ থাকলে খরচ বাড়াতে পারে। সাধারণত সামনের দাঁতের তুলনায় পেছনের দাঁতে ক্যানেল বেশি থাকে যা চিকিৎসা ডিল করে তোলে এবং খরচ বাড়ায়।
- বীমা ও কিস্তি সুবিধাঃ কিছু ডেন্টাল ক্লিনিকে স্বাস্থ্য এবং কিস্তির সুবিধা পাওয়া যায়, যা রোগীর জন্য খরচ বহন করতে সহজ হয়। তবে সুবিধা থাকলেও কখনো কখনো চিকিৎসা ব্যয় পুরোপুরি কভার নাও করতে পারে।
পরিশেষে বলা যায় যে রোড ক্যানেলের খরচ নির্ধারণের ক্ষেত্রে এসব বিষয়গুলো বিবেচনায় নেওয়া হয় যা রোগীকে সঠিক খরচের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে।
মন্তব্যঃ দাঁতের রুট ক্যানেল করতে কত টাকা লাগে
দাঁতের রুট ক্যানেল করতে কত টাকা লাগে তা জানতে চান? তাহলে আপনি সঠিক জায়গায় এসেছেন। দাঁতের সমস্যার সমাধান ও দাঁত রক্ষা করতে রুট ক্যানেল পদ্ধতির অত্যন্ত কার্যকর, তবে এর খরচ নির্ধারণে বেশ কিছু বিষয় বিবেচ্য। ডেন্টিস্ট এর দক্ষতা, ক্লিনিকের মান, ব্যবহার করা প্রযুক্তি এবং রোগীর দাঁতের অবস্থা এসবের উপর ভিত্তি করে খরচ পরিমাণ ভিন্ন হতে পারে।
বড় শহরের আধুনিক ক্লিনিক এবং অভিজ্ঞ ডেন্টিস্টদের ক্ষেত্রে এই খরচ কিছুটা বেশি হলেও, এটি দাঁতকে সুস্থ ও সংরক্ষণে দীর্ঘমেয়াদী সমাধান দেয়। আপনি যদি রুট ক্যানেলের খরচ এবং পদ্ধতি নিয়ে চিন্তিত হন, তবে এই তথ্যগুলো আপনাকে সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করবে। সবমিলিয়ে আপনার দাঁতের জন্য সেরা মত চিকিৎসা পেতে একবার ডেন্টিস্টের সাথে পরামর্শ করুন।
প্রশ্ন ২৪ ব্লক এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url