গর্ভাবস্থায় প্রথম ৩ মাসের সতর্কতা
গর্ভাবস্থায় প্রথম ৩ মাসের সতর্কতা একজন মায়ের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি সময়। এই সময়ে মায়ের শরীরের মধ্যে শিশুর বিকাশ ঘটে যা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আপনি কি জানেন সঠিক খাবার, পর্যাপ্ত বিশ্রাম এবং মানসিক স্বস্তি কিভাবে এ সময়টাকে সহজ ও সুন্দর করে তুলতে পারে?
আমাদের আজকের এই ব্লগে জানতে পারবেন এই সময়ের সঠিক পুষ্টি, করণীয় এবং এড়িয়ে চলার বিষয়গুলো। গর্ভাবস্থার প্রথম ধাপকে স্বাস্থ্যকর ও নিরাপদ করতে আমাদের পরামর্শ আপনার সহায়ক হবে। আসুন সচেতন হই এবং নিজের ও শিশুর জন্য একটি সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়ে তুলি। তাহলে চলুন দেখে নেয়া যাক।
পোস্ট সূচিপত্রঃ গর্ভাবস্থায় প্রথম ৩ মাসের সতর্কতা
- গর্ভাবস্থায় প্রথম ৩ মাসের সতর্কতা
- গর্ভাবস্থায় প্রথম মাসের লক্ষণ
- প্রেগনেন্সির প্রথম তিন মাস সহবাস
- গর্ভাবস্থায় প্রথম ৩ মাসের খাবার তালিকা
- গর্ভবতী মায়ের প্রথম তিন মাসের ওষুধ
- ৩ মাসের গর্ভবতী বাচ্চার নড়াচড়া
- গর্ভাবস্থায় প্রথম তিন মাসে পেট ব্যথা
- গর্ভাবস্থায় শেষ ৩ মাসের সতর্কতা
- গর্ভাবস্থার প্রথম তিন মাসে গর্ভধারণের যত্ন নিন
- মন্তব্যঃ গর্ভাবস্থায় প্রথম ৩ মাসের সতর্কতা
গর্ভাবস্থায় প্রথম ৩ মাসের সতর্কতা
গর্ভাবস্থায় প্রথম তিন মাসের সর্তকতা একটি মায়ের ও শিশুর জন্য গুরুত্বপূর্ণ সময়। গর্ভাবস্থায় প্রথম ৩ মাস সময়টি মায়ের এবং গর্ভস্থ শিশুর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই সময়টিতে একটি শিশুর শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের বিকাশ শুরু হয় এবং মায়ের শরীরেরও পরিবর্তন ঘটে। এই সময় সঠিক যত্ন ও সচেতনতা নিশ্চিত করা, গর্ভাবস্থা সুস্থতা এবং সন্তানের সুস্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত অপরিহার্য। এখানে গর্ভাবস্থায় প্রথম ৩ মাসের প্রধান সতর্কগুলো বিস্তারিত আলোচনা করা হলো-
- পুষ্টিকর খাবারের গুরুত্বঃ একটি শিশুর প্রথম প্রেম মাসিকের সময়ে তার মস্তিষ্ক, হৃদপিণ্ড এবং মেরুদন্ডের গঠন শুরু হয়। তাই একজন গর্ভবতী মাকে পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। প্রোটিন, ফলিক অ্যাসিড, ক্যালসিয়াম, আয়রন এবং ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবার এই সময়ে খুবই প্রয়োজন। শাকসবজি, ফল, ডিম, দুধ এবং বাদাম খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। বিশেষ করে ফলিক অ্যাসিড শিশুর স্নায়ুতন্ত্রের গঠন সঠিক রাখতে সাহায্য করে।
- অস্বাস্থ্যকর খাদ্য এড়িয়ে চলাঃ গর্ভাবস্থায় সাধারণত অতিরিক্ত তৈলাক্ত, মসলাদার এবং কাঁচা বা আধা পাকা খাবার খাওয়া খুবই বিপদজনক। অতিরিক্ত ক্যাফেইন যুক্ত পানীয় যেমন- কফি, চা এবং কোমল পানীয় খাওয়া যাবেনা। পাস্তুরাইজড নয় এমন দুধ বা দুগ্ধজাত পণ্য এবং অপরিষ্কারক খাদ্য থেকে দূরে থাকতে হবে।
- পর্যাপ্ত বিশ্রামঃ একজন গর্ভবতী মায়ের শরীরে এই সময়ে অনেক পরিবর্তন হয় যা তাকে ক্লান্তিময় করে তোলে। তাই পর্যাপ্ত বিশ্রাম গর্ভবতী মায়ের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ঘুমের ঘাটতি হলে মায়ের শরীরে চাপের তৈরি হয় যা শিশুর স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব ফেলতে পারে। এই সময়ে একজন গর্ভবতী মাকে প্রতিদিন অন্তত ৭-৮ ঘন্টা গভীর ঘুম নিশ্চিত করতে হবে।
- মানসিক স্বস্তি বজায় রাখাঃ গর্ভাবস্থায় প্রথম তিন মাস খুবই সাবধানতার সাথে চলতে হবে। এই সময়ে মায়ের মানসিক চাপ শিশুর বিকাশে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। তাই সব ধরনের মানসিক স্বস্তি বজায় রাখা অত্যন্ত জরুরী। যে যে ধর্মের সেই ধর্মের পালন করতে হবে, হালকা ব্যায়াম করতে হবে বা বই পড়ার মতো কার্যক্রম মানুষের মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে।
- ওষুধ ও চিকিৎসকের পরামর্শঃ একজন গর্ভবতী নারী গর্ভধারণের পর যেকোনো ওষুধ সেবনের আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। সাধারণ সর্দি-কাশি বা ব্যথার জন্য নিজের ইচ্ছা মত ওষুধ সেবন করা যাবে না, এতে বিপদ হতে পারে। এছাড়া গর্ভধারণের প্রথম দিকে নিয়মিত চিকিৎসকের কাছে গিয়ে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা ও পরামর্শ নেওয়া উচিত।
- শারীরিক পরিশ্রম ও ভারী কাজ এড়িয়ে চলাঃ গর্ভাবস্থার প্রথম তিন মাস অতিরিক্ত সতর্ক থাকার কারণে এই সময় ভারী কাজ করা বা অতিরিক্ত পরিশ্রমের কাজ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। হঠাৎ কোনো কাজ বা মুভমেন্ট এর ফলে গর্ভপাতের ঝুঁকি বাড়তে পারে। এই কারণে অন্তত প্রথম তিন মাস অত্যন্ত পর্যবেক্ষণের মধ্যে থাকতে হবে।
- ধূমপান ও অ্যালকোহল থেকে দূরে থাকাঃ ধূমপান ও অ্যালকোহল থেকে দূরে থাকা এই কথাটি অনেকের মনে শুনতে অবাক লাগবে। কারণ মেয়েরা সাধারণত ধূমপান বা অ্যালকোহল খাই না। কিন্তু ধূমপান ও অ্যালকোহল গর্ভের শিশুর বিকাশে মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে। এগুলো শিশুর ওজন কমানো, জন্মগত ত্রুটি এবং গর্ভপাতের ঝুঁকি বাড়ায়। তাই যারা ধূমপান ও অ্যালকোহল সেবন করে তাদের পাশ থেকে দূরে থাকতে হবে।
- সঠিক হাইড্রেশন নিশ্চিত করাঃ একজন গর্ভবতী নারীকে তার শরীরের হাইড্রেশন সঠিকভাবে ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। কারণ পর্যাপ্ত পানি পান করা মায়ের শরীরের পানির ভারসাম্য বজায় রাখে এবং এর ফলে শিশুর বিকাশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। প্রতিদিন অন্তত ৮-১০ গ্লাস পানি পান করা উচিত।
- শরীরের পরিবর্তন সম্পর্কে সচেতন থাকাঃ প্রথম ত্রৈমাসিকে বিভিন্ন মেয়ের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে যেমন কারো কারো বমি ভাব, মাথা ঘোরা বা ক্লান্তি অনুভূত হতে পারে। এগুলো স্বাভাবিক হলেও যদি অত্যাধিক রক্তক্ষরণ, তীব্র ব্যথা অন্য কোন অস্বাভাবিক লক্ষণ দেখা দেয়, তবে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
পরিশেষে বলা যায় যে, গর্ভাবস্থার প্রথম ৩ মাস নতুন জীবনের সূচনা ঘটে। একটি জানের মধ্যে আরেকটি জীবনকে আশ্রয় দেওয়া। এ সময় সঠিক যত্ন, পুষ্টি এবং জীবনধারার পরিবর্তন গর্ভাবস্থার সুস্থতা নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। সাধারণের ঝুঁকি এড়িয়ে এবং নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চললে মা ও শিশুর সুস্থতা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।
গর্ভাবস্থায় প্রথম মাসের লক্ষণ
গর্ভাবস্থায় প্রথম মাসের লক্ষণ জীবনের এক নতুন যাত্রার সূচনা। গর্ভাবস্থার প্রথম মাস একটি গুরুত্বপূর্ণ সময় কারণ একটি শরীরের মধ্যে আর একটি নতুন জীবনের সূচনা হয়। এই সময় শরীরের ভিতরে নানা ধরনের পরিবর্তন ঘটতে থাকে, যা একজন নারীকে গর্ভাবস্থার ইঙ্গিত দেয়।
যদিও এ লক্ষণগুলো সবার ক্ষেত্রে একভাবে প্রকাশ পায় না, তবে কিছু সাধারণ লক্ষণ থাকে যা বেশিরভাগ মহিলার ক্ষেত্রেই দেখা যায়। এখানে গর্ভাবস্থার প্রথম মাসের লক্ষণ ও তার বিস্তারিত বর্ণনা দেওয়া হলো-
- ঋতুস্রাব বন্ধ হয়ে যাওয়াঃ একজন নারীর গর্ভাবস্থার প্রথম লক্ষণ গুলোর মধ্যে প্রধান হলো ঋতুস্রাব বন্ধ হয়ে যাওয়া। যদি একজন নারীর ঋতু চক্র নিয়মিত হয় এবং তারা হঠাৎ বন্ধ হয়ে যায়, তবে এটি গর্ভধারণের ইঙ্গিত বহন করে। তবে কখনো কখনো কারো ক্ষেত্রে হালকা রক্তপাত হতে পারে, যা সাধারণত ইমপ্ল্যান্টেশন ব্লিডিং নামে পরিচিত।
- বমি ভাব এবং বমি করাঃ অনেক নারীর ক্ষেত্রে প্রথম মাসে বমি ভাব বা বমি করার অভিজ্ঞতা লাভ করতে পারে, যা সাধারণত ”মর্নিং সিকনেস” নামে পরিচিত। এটি সকালে বেশি হলেও দিন বা রাতের যেকোনো সময় ঘটতে পারে। তবে সবার ক্ষেত্রে এই বমি ভাব নাও হতে পারে। সাধারণত হরমোনের পরিবর্তনের ফলে এই লক্ষণগুলো দেখা দেয়।
- ক্লান্তি ও ঘুম ঘুম ভাবঃ প্রথম মাসে সাধারণত প্রোজেস্টেরন হরমোনের মাত্রা দ্রুত বৃদ্ধি পায়, যার শরীরকে ক্লান্ত করে তোলে। মেয়েদের এই সময়ে অতিরিক্ত ঘুম বা বিশ্রামের প্রয়োজন হয়। অনেক সময় বিছানা থেকে উঠতেই মন চায় না যা প্রথম মাসের লক্ষণ।
- স্তনের পরিবর্তনঃ স্তনে ফুলে যাওয়া, কোমলতা এবং স্পর্শকাতরতার মত পরিবর্তন এর সময়ে খুবই সাধারণ একটি বিষয়। অনেক নারী স্তনে হালকা ব্যথা অনুভব করে বা ঝিনঝিন অনুভূতি লক্ষ্য করে।
- ঘনঘন প্রসবের প্রবণতাঃ গর্ভধারণের প্রথম দিকে রক্তের প্লাকও বেড়ে যায় যাক কিডনির কার্যক্রম বাড়িয়ে দেয়। এর ফলে মায়ের প্রসবের প্রবণতা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায়।
- মেজাজ এর পরিবর্তনঃ গর্ভধারণের পর একজন নারীর শরীরে হরমোনের মাত্রা উঠানামা করায় মানসিক অবস্থাতেও ভালো প্রভাব ফেলে। এই সময়ে প্রথম মাসে অনেক নারী হঠাৎ মন খারাপ হওয়া, উত্তেজনা, মেজাজ খিটমিটি হওয়া এবং উদ্বেগ অনুভব করেন।
- গন্ধ ও খাবারের প্রতি সংবেদনশীলতাঃ একজন নারী গর্ভধারণের শুরুতে একটা নির্দিষ্ট খাবারের প্রতি আকর্ষণ বা অরুচিও হতে পারে। কোন খাবারের গন্ধ ভালো লাগে আবার কোন খাবারের গন্ধে বমি আসে আবার কোন গন্ধ ও অস্বস্তি দুটোই তৈরি করে। আবার কিছু খাবারের প্রতি অনেক আকর্ষণ লাভ করে।
- হালকা পেটের ব্যাথা বা ক্র্যাম্পঃ প্রথম মাসে মাসিক চক্রের সময় অনেক নারী পেটের নিজের অংশে হালকা ব্যথা বা চাপ অনুভব করেন। এটি যে প্রথম মাসেই তা নয় কয়েক মাস এই অনুভূতিটা অনুভব করেন। এটি জরায়ুতে শিশুর বিকাশের প্রস্তুতির জন্য ঘটে। তবে যদি ব্যাথার তীব্র হয়, দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
- শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধিঃ গর্ভধারণের পর একজন নারীর শরীরের পেশাল মেটাবলিক রেট (BMR) বৃদ্ধি পায় যা সামান্য তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণ হতে পারে, এর সাধারণত গর্ভাবস্থার প্রাথমিক লক্ষণ গুলোর মধ্যে পড়ে।
- হজমের সমস্যাঃ গর্ভাবস্থার প্রথম মাসে অনেক নারীর হজমে সমস্যা দেখা দেয়। গ্যাস, কোষ্ঠকাঠিন্য বা আমলের মত লক্ষণগুলো বেশ সাধারণ।
- লক্ষণগুলো নিয়ে সচেতনতাঃ গর্ভাবস্থার প্রথম মাসে লক্ষণগুলো সাধারণত হলেও এগুলোর তীব্রতা বা প্রকৃতি একেক নারীর ক্ষেত্রে একেকরকমের হতে পারে। কিন্তু নারী খুব স্পষ্ট লক্ষণ অনুভব করেন, আবার কিছু ক্ষেত্রে লক্ষণগুলো ধীরে ধীরে প্রকাশ পায়। তাই এই লক্ষণগুলো শরীরে দেখা দিলে অবশ্যই সাবধানতার সাথে অবলম্বন করতে হবে।
- চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়াঃ যদি গর্ভধারণের লক্ষণগুলো স্পষ্ট হয়, তবে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে গর্ভধারণ নিশ্চিত করা হয়। পাশাপাশি প্রাথমিক ধাপে শিশুর সঠিক বিকাশ নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় দিক-নির্দেশনা পাওয়া যায়। কারণ শুরু থেকেই সঠিক দিকনির্দেশনায় একজন সুস্থ শিশু জন্ম হয়।
পরিশেষে বলতে পারি, গর্ভাবস্থার প্রথম মাস একটি বিশেষ সময় বা মুহূর্ত যা নারীর জীবনের শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন নিয়ে আসে। এই সময়ের লক্ষণগুলোকে গুরুত্ব দিয়ে পর্যবেক্ষণ করা উচিত এবং সঠিক যত্ন চিকিৎসা নিশ্চিত করা আবশ্যক। এইভাবেই একটি সুস্থ সুন্দর গর্ভাবস্থায় ভিত্তি স্থাপন করা হয়।
প্রেগনেন্সির প্রথম তিন মাস সহবাস
প্রেগনেন্সির প্রথম তিন মাস সহবাস সাধারণত নিরাপদ হলেও কোন জটিলতা বা অস্বস্তি থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। প্রেগনেন্সির প্রথম তিন মাস বা প্রথম প্রেম মাসিক একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়, কারণ এ সময়ে গর্ভস্থ শিশুর প্রাথমিক বিকাশ শুরু হয়। ভ্রূণের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ গঠনের পাশাপাশি মায়ের শরীরের ও উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন ঘটে।
এ সময়ে সহবাস নিয়ে অনেক দম্পত্তির মনে প্রশ্ন থাকে- এটি কি নিরাপদ, নাকি ঝুঁকিপূর্ণ? সঠিক তথ্য জানা এবং সতর্কতা অবলম্বন করায় এই সময়ে সহবাস নিয়ে যেকোনো উদ্যোগ দূর করতে সাহায্য করে। প্রেগনেন্সির প্রথম তিন মাস সহবাস এর বিস্তারিত বর্ণনা নিচে দেওয়া হল-
প্রথম তিন মাসে সহবাস- এটি কি নিরাপদঃ সাধারণত প্রথম তিন মাসে কোন জটিলতা না থাকে সহবাস নিরাপদ। ভ্রুন শক্তিশালী জরায়ু প্রাচীর এবং এম্ব্রিওনিক ফ্লুইড দ্বারা সুরক্ষিত থাকে, যা শিশুকে বাইরের চাপ বা প্রভাব থেকে রক্ষা করে। তবে এই সময় সহবাসে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে মায়ের শারীরিক ও মানসিক অবস্থার কথা বিবেচনায় রাখা উচিত।
সহবাসের সুবিধাঃ
- দম্পতির মানসিক সম্পর্ক মজবুত করাঃ প্রেগনেন্সি অনেক দাম্পত্যের জন্য মানসিকভাবে চাপ পূর্ণ হতে পারে। সাধারণত সহবাস এর চাপ কমাতে সাহায্য করে এবং দম্পত্তির ঘনিষ্ঠতা বৃদ্ধি করে।
- হরমোনের ভারসাম্য উন্নত করাঃ সহবাসের মাধ্যমে সুখের হরমোন (এন্ডরফিন) নিঃসৃত হয়, যা মায়ের মানসিক অবস্থাকে স্বস্তিদায়ক করে তোলে।
- রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধিঃ সহবাসের সময় শরীরের রক্ত সঞ্চালন বাড়ে যা গর্ভাবস্থায় মায়ের সুস্থতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
প্রথম তিন মাসে সহবাসে সতর্কতাঃ
- শারীরিক অবস্থার প্রতি খেয়াল রাখাঃ সাধারণত প্রথম তিন মাসে নারীদের ক্লান্তি, বমি ভাব এবং শরীরের হরমোন জনিত পরিবর্তন হতে পারে। এই অবস্থায় একজন গর্ভবতী মায়ের আরাম এবং ইচ্ছাকে প্রাধান্য দেওয়া উচিত এবং জরুরী।
- সহজ ভঙ্গি নির্বাচনঃ গর্ভধারণের পর একজন নারীর শরীরের যেহেতু পরিবর্তন ঘটে সেহেতু সহবাসের এমন নির্বাচন করা উচিত যা মায়ের পেটের উপর কোন চাপ সৃষ্টি না করে।
- সহবাসের সময় নরম ও সতর্ক থাকাঃ একজন গর্ভবতী মায়ের স্বস্তি ও সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য ধীরগতিতে এবং কোমল ভাবে সহবাস করতে হবে। তার সাথে কথার বোঝাপড়ার মাধ্যমে সহবাস করতে হবে।
যেসব ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ প্রয়োজনঃ প্রথম তিন মাসে নিচের যে কোন সমস্যা থাকলে সহবাস এড়িয়ে চলা উচিত এবং দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে-
- অতিরিক্ত রক্তপাত বা ধরনের অস্বাভাবিক স্রাব
- গর্ভপাতের ইতিহাস থাকলে
- জরায়ুর কোন অস্বাভাবিক অবস্থা যেমন প্লাসেন্টা প্রিভিয়া
- তীব্র পেটের ব্যথা বা অন্য কোন অস্বস্তিকর লক্ষণ
- জমজ বা একাধিক সন্তানের গর্ভধারণ
সহবাস নিয়ে সাধারণ ভুল ধারণাঃ অনেক দম্পতি মনে করেন গর্ভাবস্থায় সহবাস করলে গর্ভপাতের ঝুঁকি বাড়ে। তবে প্রমাণিত সত্য হলো গর্ভাবস্থার প্রাথমিক পর্যায়ে সহবাস সাধারণত গর্ভপাতের কারণ নয়। গর্ভপাত সাধারণত ভ্রুনের জিনগত সমস্যা বা মায়ের শারীরিক জটিলতার কারণে ঘটে।
সহবাসে সময় যা এড়িয়ে চলা উচিতঃ
- মায়ের শরীরে চাপ সৃষ্টি করে এমন ভঙ্গি
- মায়ের মানসিক বা শারীরিক অস্বস্তি
- যে কোন সংক্রমণের আশঙ্কা থাকলে সুরক্ষার ব্যবস্থা নেওয়া
সহবাসের মানসিক দিকঃ প্রেগনেন্সির প্রথম দিকে মায়ের হরমোন পরিবর্তন এবং মানসিক চাপের কারণে সহবাসের প্রতি আগ্রহ কমে যেতে পারে। এটি একটি স্বাভাবিক বিষয় এবং এটি নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়া প্রয়োজন এই সময় পার্টনারের মধ্যে বোঝাপড়া এবং সমর্থন থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
শেষে বলা যায় যে, প্রেগনেন্সির প্রথম তিন মাসে সহবাস সাধারণত নিরাপদ, তবে মায়ের আরাম, ইচ্ছা এবং শারীরিক অবস্থার ওপর ভিত্তি করে এটা করা উচিত। কোন অস্বাভাবিক লক্ষণ দেখা দিলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। সঠিক তথ্য ও সচেতনতার মাধ্যমে এ সময় তিরা তাদের সম্পর্ককে আরো দৃঢ় করতে একটি স্বাস্থ্যকর গর্ভাবস্থার জন্য প্রস্তুতি নিতে পারেন।
গর্ভাবস্থায় প্রথম ৩ মাসের খাবার তালিকা
গর্ভাবস্থায় প্রথম ৩ মাসের খাবার তালিকা তৈরি করা মা ও শিশুর জন্য অত্যন্ত জরুরি, এই সময় গর্ভের শিশুর সঠিক বৃদ্ধি এবং মায়ের শরীরের সুস্থতা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। একজন নারীর গর্ভাবস্থার প্রথম প্রেম মাসিকে সংবেদনশীল মাস বলা হয়, কারণ এই সময়ে সাধারণত শিশুর অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের গঠন শুরু হয়। তাই সঠিক পুষ্টির অভাব হলে শিশুর শারীরিক ও মানসিক বৃদ্ধিতে প্রভাব ফেলতে পারে।
পুষ্টির গুরুত্বঃ একজন গর্ভবতী নারীর প্রথম তিন মাসের খাবারের মাধ্যমে পর্যাপ্ত পরিমাণ পুষ্টিগুণ দিতে হবে। এই সময়ে মায়ের শরীরের হরমোন জনিত পরিবর্তন হয় এবং অনেকেই বমি বমি ভাব, ক্ষুধা মন্দা বা অতিরিক্ত ক্লান্তি অনুভব করেন। এই ধরনের সমস্যা মোকাবেলা করতে সঠিক খাবার বেছে নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।
গর্ভাবস্থায় প্রথম তিন মাসের খাবারের তালিকাঃ
ফলিক এসিড সমৃদ্ধ খাবারঃ একটি শিশুর মস্তিষ্ক ও স্পাইনাল কর্ডের সঠিক গঠন তৈরি করতে গর্ভের প্রথম তিন মাসে সাধারণত ফলিক এসিড সমৃদ্ধ খাবার গর্ভবতী মাকে দিতে হবে। এজন্য খাবারে তালিকায় রাখা উচিত-
- শাকসবজি-পালং শাক, লাউ শাক
- ফল- কমলা, আঙ্গুর, কলা
- ডাল ও বাদাম
প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবারঃ প্রোটিন সাধারণত শিশুর কোষ বৃদ্ধি ও টিস্যু গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই একজন গর্ভবতী মায়ের খাদ্য তালিকায় অবশ্যই প্রতিদিন প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার রাখা দরকার। যেমন-
- দিন
- দুধ ও দই
- মাছ ও মুরগির মাংস
- মসুর ডাল ও ছোলা
ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবারঃ একটি শিশুর হাড়, দাত এবং স্নায়ুতন্ত্র গঠনের জন্য ক্যালসিয়াম প্রয়োজন। তাই গর্ভবতী মহিলার জন্য ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একজন গর্ভবতী মহিলার প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। যেমন-
- দুধ ও দুগ্ধ জাত খাবার- দই, ছানা, পনির
- সবজি- পালং শাক, ব্রকলি, বাঁধাকপি
- ডিম
- বাদাম ও বীজ- তিল, আখরোট, কাজু
- সামুদ্রিক মাছ যেমন সার্ভিন
- সয়াভিত্তিক খাবার- টোফূ, সয়া দুধ
- ফল- কমলা, কিসমিস
- ডাল ও শস্য- চানা, মসুর
এই ধরনের খাবার একজন গর্ভবতী মহিলাকে প্রতিদিন খাবার তালিকায় দিতে হবে কারণ একজন শিশুর বিকাশের জন্য এইসব খাবার প্রথম তিন মাসে অত্যাধিক প্রয়োজনীয়। গর্ভবতী মাকে প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করতে হবে। কারণ একজন সুস্থ মা মানে একজন সুস্থ সন্তান।
আয়রন সমৃদ্ধ খাবারঃ আয়রন সমৃদ্ধ খাবার একজন গর্ভবতী মহিলার খাবার তালিকায় অবশ্যই রাখতে হবে। কারণ এটি রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়ায় এবং শিশুর অক্সিজেন সরবরাহ নিশ্চিত করতে সাহায্য করে। তাই প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় অবশ্যই আয়রন সমৃদ্ধ খাবার রাখতে হবে। যেমন-
- পালং শাক ও অন্যান্য শাকসবজি
- কলিজা (স্বাভাবিক পরিমাণে)
- ডাল- মসুর, ছোলা
- বাদাম ও বীজ- সূর্যমুখী বীজ, কাজু
- লাল মাংস (মাঝারি পরিমানে)
- শুকনো ফল- কিসমিস, খেজুর
- ডিমের কুসুম
- মাছ-সার্ডিন, চিংড়ি
- আয়রন সমৃদ্ধ শস্য- ওটস, ব্রাউন রাইস
একজন গর্ভবতী মহিলার প্রথম তিন মাস অনেক গুরুত্বপূর্ণ। তার খাবার একজন শিশুর বিকাশের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে । তাই এই খাবারগুলো ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবারের সঙ্গে খেলে আয়রন শোষণ করা আরো ভালো হবে । যা মা এবং শিশু উভয়েরই জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবারঃ একজন গর্ভবতী মহিলার জন্য ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার অত্যন্ত প্রয়োজন, কারণ এটি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, আয়রন শোষণের সহায়তা করে এবং গর্ভস্থ শিশুর টিস্যু গঠনে সাহায্য করে। একজন গর্ভবতী মহিলার খাবার তালিকায় অবশ্যই ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার রাখতে হবে। যেমন-
ফলমূলঃ
- লেবু, কমলা, মালটা
- পেয়ারা (ভিটামিন সি- এর অন্যতম সেরা উৎস)
- কিউই, আনারস
- স্ট্রবেরি, আমলকি
শাক সবজিঃ
- টমেটো, ক্যাপসিকাম
- ব্রকলি, বাঁধাকপি
- পালং শাক
- অন্যান্যঃ
- আলু (বিশেষ করে সেদ্ধ)
- লংকা মরিচ
ভিটামিন সি সাধারণত তাপ সংবেদনশীল হওয়ায় এটি রান্না করতে গেলে এর ভিটামিন নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তাই এই খাবারগুলো কাঁচা ও অল্প সেদ্ধ করে খাওয়া উচিত। প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় এই খাবারগুলো অন্তর্ভুক্ত করা হলে মা ও শিশুর পুষ্টির কোন ঘাটতি হবে না।
ওমেগা-৩ ফ্যাট সমৃদ্ধ খাবারঃ গর্ভবতী মহিলার জন্য ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড সমৃদ্ধ খাবার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি একটি শিশুর মস্তিষ্ক, স্নায়ুতন্ত্র এবং চোখের সঠিক গঠনে সাহায্য করে। এটি একজন গর্ভবতী মহিলার হৃদস্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী। গর্ভাবস্থায় ওমেগা-৩ সমৃদ্ধ খাবার অবশ্যই একজন গর্ভবতী মহিলার প্রতিদিনের খাবার তালিকায় রাখা প্রয়োজন।
সামুদ্রিক মাছঃ
- স্যামন, সার্ডিন, মেকারেল
- টুনা (সতর্ক পরিমাণে)
বাদাম ও বীজঃ
- আখরোট
- চিয়া সিড
- ফ্লাক্সসিড (তিসির বীজ)
উদ্ভিজ্জ তেলঃ
- ফ্লাক্সসিড তেল
- রেপসিড ও সয়াবিন তেল
সয়া ও উদ্ভিজ্জ প্রাণীঃ
- সয়া দুধ
- টোফু
- ডিম
ওমেগা-৩ গ্রহণের সময় অবশ্যই একজন গর্ভবতী মহিলাকে ভাজা খাবার এড়িয়ে চলে হবে। খাবারগুলো রান্না বা ব্যাক করে খাওয়া খুব ভালো। সপ্তাহে ২-৩ বার সামুদ্রিক মাছ খাওয়া ও প্রতিদিন বাদাম বীজ খাওয়া মায়ের ও শিশুর পুষ্টির নিশ্চিত করে।
পানি ও হাইড্রেশনঃ একজন গর্ভবতী মহিলার জন্য পর্যাপ্ত পানি এবং হাইড্রেশন তার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি শরীরে পানির ভারসাম্য বজায় রাখে, রক্ত সঞ্চালনে উন্নত করে এবং শিশুর স্বাস্থ্য রক্ষায় সুরক্ষিত রাখে। গর্ভাবস্থায় পানি শূন্যতা এড়াতে নিম্নলিখিত পানীয় খাবারগুলো খাদ্যের তালিকায় রাখা উচিত। যেমন -
- প্রতিদিন ৮-১০গ্লাস বিশুদ্ধ পানি পান করুন
- ডাবের পানি- প্রাকৃতিক ইলেকট্রোলাইট সমৃদ্ধ
- লেবুর শরবত- ভিটামিন সি সরবরাহ করে
- তারা ফলের রস- কমলা, পেয়ারা বা আনারসের রস হতে পারে
হাইড্রেটিং খাবারঃ
- শসা, তরমুজ, লাউ, পেঁপে
- স্ট্রবেরি, আনারস, কমলা
- দুধ ও স্যুপঃ
- দুধ ও দই- ক্যালসিয়াম ও প্রোটিন সরবরাহ করে
- চিকেন বা সবজি সুপ- পুষ্টি ও হাইড্রেশন বজায় রাখে
একজন গর্ভবতী মহিলাকে অবশ্যই ক্যাফেইন যুক্ত পানি এড়িয়ে চলা উচিত, কারণ এটি দেহের পানির অভাব ঘটাতে সাহায্য করে। সঠিক পরিমাণ পানি ও হাইড্রেটিং খাবার গর্ভবতী মায়ের স্বাস্থ্যের পরিচর্যার জন্য গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। তাই একজন মা ও শিশুর সঠিক শাস্ত্রক্ষায় গর্ভবতী অবস্থায় পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করতে হবে।
খাবারে যা এড়িয়ে চলা উচিতঃ একজন গর্ভবতী নারী কে প্রথম তিন মাস অবশ্যই কিছু খাবার এড়িয়ে চলতে হবে কারণ এগুলো মায়ের স্বাস্থ্য ও শিশুর বিকাশের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। একজন শিশু যেহেতু একজন মায়ের সাথে সম্পর্কযুক্ত তাই একজন গর্ভবতী মহিলাকে এই সকল খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। যেমন-
- কাঁচা ডিম, আধা পাকা মাংস বা মাছ খাওয়া যাবে না কারণ এতে ব্যাকটেরিয়া বা পরজীবী সংক্রমনের ঝুঁকি থাকে
- প্যাকেটজাত খাবার, কোল্ড কাটস, সশেজ এ জাতীয় খাবার খাওয়া যাবেনা কারণ এতে সংরক্ষণকারী রাসায়নিক ক্ষতিকর হতে পারে
- চা, কফি বা সফট ড্রিংক এর অতিরিক্ত ক্যাফেইন ক্ষতিকর এগুলো খাওয়া যাবেনা
- অতিরিক্ত তেল মসলাদার খাবার খাওয়া যাবে না কারণ এটি গ্যাস বা হজমের সমস্যা বাড়ায়
- অ্যালকোহল এড়িয়ে চলতে হবে কারণ এটি শিশুর মস্তিষ্ক ও অঙ্গ গঠনে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে
- অতিরিক্ত লবণযুক্ত খাবার খাওয়া যাবে না কারণ অতিরিক্ত লবণ উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বাড়ায়
- নির্দিষ্ট মাছ এড়িয়ে চলতে হবে যেমন হাঙর, সোর্ডফিশ বা বড় সামুদ্রিক কাজ অর্থাৎ বেশি পারদ যুক্ত
- অনিরাপদ দুগ্ধজাত পণ্য খাওয়া যাবেনা যেমন কাঁচা দুধ বা পাস্তুরাইজড নয় এমন দুধ থেকে তৈরি পণ্য
কিছু সাধারন টিপসঃ
- গর্ভবতী মাকে একেবারে অনেক খাবার না খেয়ে অল্প অল্প করে বারবার খাবার অভ্যাস করতে হবে
- সকালে খালি পেটে হালকা খাবার বা ফল খান যা বমি বমি ভাব কমাতে পারে
- নিজেকে সব সময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে
- সময় তো গোসল এবং সময়মতো খাবার খেতে হবে
- যে কোন প্রয়োজনে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করতে হবে
পরিশেষে বলা যায় যে, একজন গর্ভবতী মহিলার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল তার প্রতিদিনের খাবারের তালিকা। সঠিক খাবার গ্রহণ গর্ভাবস্থার এই সময়ে মায়ের শরীরকে সুস্থ রাখে এবং শিশুর সঠিক বিকাশে সাহায্য করে। তাই একজন সুস্থ মা এবং একজন সুস্থ শিশুর জন্য আপনাকে অবশ্যই আপনার খাবারের তালিকায় পুষ্টিকর খাবার রাখতে হবে। পুষ্টিকর খাবার খাওয়া ও ভারসাম্যপূর্ণ খাদ্য অভ্যাস বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
গর্ভবতী মায়ের প্রথম তিন মাসের ওষুধ
গর্ভবতী মায়ের প্রথম তিন মাসের ওষুধ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এই সময় গর্ভস্থ শিশুর অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের গঠন শুরু হয়। এইজন্য একজন গর্ভবতী মায়ের বিভিন্ন জটিলতা প্রতিরোধে সঠিক পুষ্টি ও প্রয়োজনীয় ওষুধ প্রয়োজন। তবে গর্ভবতী নারীকে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ গ্রহণ করতে হবে। প্রথম প্রেমাসীকে মায়ের জন্য প্রয়োজনীয় ওষুধ ও তাদের প্রভাব নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
ফলিক অ্যাসিড সাপ্লিমেন্টঃ সাধারণত একজন গর্ভবতী নারীর ফলিক এসিড প্রথম তিন মাসে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সাপ্লিমেন্ট হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এর সাধারণত নিউরাল টিউবের ত্রুটি প্রতিরোধ করে এবং শিশুর মস্তিষ্ক ও মেরুদন্ডের সঠিক গঠন নিশ্চিত করে।
- প্রতিদিন ৪০০-৮০০ মাইক্রগ্রাম ফলিক অ্যাসিড গ্রহণের পরামর্শ দেয়া হয়।
- এটি শিশুর বিকাশ জনিত জন্মগত ত্রুটি যেমন স্পাইনা বাইফিডা প্রতিরোধে কার্যকর।
আয়রন সাপ্লিমেন্টঃ একজন গর্ভবতী নারীর শরীরে রক্তের চাহিদা বৃদ্ধি পায়। আয়রন সাপ্লিমেন্ট রক্তশূন্যতা প্রতিরোধে সহায়তা করে।
- আয়রন গ্রহণের পরিমাণ নির্ধারণ করা হয় মায়ের শারীরিক অবস্থার উপর ভিত্তি করে
- আয়রন ট্যাবলেট এর সঙ্গে ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার (যেমন লেবুর রস) গ্রহণ করলে শোষণ ক্ষমতা বাড়ে।
ক্যালসিয়াম সাপ্লিমেন্টঃ একজন গর্ভবতী নারীর শরীরে ক্যালসিয়াম সাপ্লিমেন্ট এর প্রয়োজনীয়তা পরে কারণ ক্যালসিয়াম শিশুর হাড় ও দাঁতের গঠন এবং মায়ের হাত শক্তিশালী রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
- প্রতিদিন ১০০০-১২০০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম গ্রহণ করা উচিত
- দুধ, দই ইত্যাদি খাবারের পাশাপাশি সাপ্লিমেন্ট প্রয়োজন হলে চিকিৎসক তা নির্ধারণ করেন
ভিটামিন ডি সাপ্লিমেন্টঃ একজন গর্ভবতী নারীর জন্য ভিটামিন ই সাপ্লিমেন্ট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ ভিটামিন ডি ক্যালসিয়ামের শোষণে সহায়তা করে এবং শিশুর হাড় ও ইমিউন সিস্টেমের বিকাশে ভূমিকা রাখে।
- প্রতিদিন ৬০০ আই, ইউ. ভিটামিন ডি গ্রহণের পরামর্শ দেওয়া হয়
ওমেগা-৩ সাপ্লিমেন্টঃ মাতৃগর্ভে থাকা শিশুর মস্তিষ্ক ও চোখের গঠন নিশ্চিত করতে ওমেগা-৩ এসিড সাপ্লিমেন্ট এর প্রয়োজন হয়। যেমন-
- এটি সামুদ্রিক মাছ বা ফেস অয়েল ক্যাপসুল থেকে পাওয়া যায়
- ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী সঠিক মাত্রায় গ্রহণ করা উচিত
প্রোবায়োটিক সাপ্লিমেন্টঃ গর্ভধারণের পর একজন গর্ভবতী মহিলার সাধারণত হজম প্রক্রিয়ায় ব্যাঘাত ঘটে। হজম প্রক্রিয়া সঠিক রাখতে এবং পেটের সমস্যা দূর করতে প্রবায়োটিক সাপ্লিমেন্ট কার্যকর। যেমন-
- এটি অন্ত্রের স্বাস্থ্য রক্ষায় সাহায্য করে
যৌগিক ভিটামিন সাপ্লিমেন্টঃ অনেক গর্ভবতী মহিলা আছেন যাদের বিভিন্ন ধরনের খাদ্যাভ্যাস থেকে প্রয়োজনীয় পুষ্টিপূরণ সম্ভব নয়, তাদের জন্য প্রেনাটাল ভিটামিন সাপ্লিমেন্ট দেওয়া হয়। যেমন-
- এতে ফলিক অ্যাসিড, আয়রন, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন ডি এবং ভিটামিন বি-১২ থাকে
গর্ভাবস্থায় সাধারণ সমস্যার ওষুধঃ
- বমি বা বমি ভাবের জন্য- ডক্সিমালিন এবং ভিটামিন বি-৬ সমৃদ্ধ ওষুধ নিরাপদ
- গ্যাস্ট্রিক বা এসিডিটির জন্য- অ্যান্টাসিড যেমন ক্যালসিয়াম কার্বনেট নিরাপদ
- কোষ্ঠকাঠিন্যের জন্য- ফাইবার সাপ্লিমেন্ট বা ল্যাক্সেটিভের পরামর্শ দেওয়া হয়
সতর্কতাঃ
- যেকোনো ওষুধ গ্রহণের আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে
- হারবাল বা প্রাকৃতিক ওষুধ এড়িয়ে চলুন, কারণ সেগুলোর প্রভাব সব সময় জানা যায় না
- মায়ের খাদ্যাভ্যাসের পাশাপাশি সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করে পুষ্টির চাহিদা পূরণ করুন
- নিজে থেকে কোন ওষুধ শুরু বা বন্ধ করবেন না
পরিশেষে বলা যায় যে, একজন গর্ভবতীর গর্ভাবস্থার প্রথম তিন মাসে সঠিক ওষুধ ও পুষ্টি গ্রহণ মায়ের সুস্থতা এবং শিশুর সঠিক বৃদ্ধি নিশ্চিত করে। সঠিক পরিকল্পনা ও চিকিৎসকের পরামর্শে এই সময়টা নিরাপদ সুস্থ রাখা সম্ভব। তাই একজন গর্ভবতী মহিলাকে অবশ্যই ডাক্তারের প্রমোশন অনুযায়ী বিভিন্ন ধরনের সাপ্লিমেন্ট দিতে পারেন।
৩ মাসের গর্ভবতী বাচ্চার নড়াচড়া
৩ মাসের গর্ভবতী বাচ্চার নড়াচড়া অনুভূত হয় না, কারণ এ সময়ে শিশুর নড়াচড়া খুবই ক্ষীর এবং তা আল্ট্রাস সাউন্ড এর মাধ্যমে দেখা যেতে পারে। ৩ মাসের গর্ভবতী অবস্থায় শিশুর শরীরের গঠন দ্রুত বিকাশ লাভ করে। এ সময় শিশুর ছোট ছোট অঙ্গ-প্রতঙ্গ যেমন হাত, পা, আঙুল এবং মুখের বিভিন্ন অংশ গঠিত হয়। যদিও গর্ভবতী মা এর সময়ে সরাসরি শিশুর নড়াচড়া অনুভব করতে পারেন না তবে শিশুর ভ্রুন তার নিজস্ব ছোটখাটো নড়াচড়া শুরু করে। আল্ট্রাসাউন্ড পরীক্ষায় এসব নড়াচড়া দেখা যায়।
শিশুর নড়াচড়ার বৈশিষ্ট্যঃ
- শিশুর গঠন ও ওজনঃ তিন মাসে গর্ভস্থ শিশুর গড় ওজন প্রায় ১৪-২০ গ্রাম হাই এবং দৈর্ঘ্য প্রায় ৩-৪ ইঞ্চি। তার হাত, পা এবং আঙ্গুলগুলো কার্যকর হতে শুরু করে। এগুলো অত্যন্ত ক্ষীন, হলে শিশুটি ধীরে ধীরে নড়াচড়া করতে সক্ষম হয়।
- শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশঃ তিন মাসে শিশুর মস্তিষ্ক দ্রুত বিকাশ লাভ করে। মস্তিষ্কের স্নায়ুতন্ত্র ও পেশির সংযোগের কারণে শিশু পেশির নড়াচড়া শুরু করে।
- অঙ্গ-প্রত্যংগের সক্রিয়তাঃ তিন মাসের শিশুটি তার হাত পা নাড়ানো, আঙ্গুল মুঠো করা বা পা টেনে নেওয়ার মতো নড়াচড়া করে। তবে এই নড়াচড়াগুলো খুবই ধীর এবং ক্ষীন যা গর্ভের ভেতরে তরল পরিবেশে সীমিত থাকে।
গর্ভবতী মায়ের অনুভূতিঃ
- শিশুর নড়াচড়া অনুভব না হওয়াঃ এ সময়ে শিশুর নড়াচড়া এত সূক্ষ্ম যে তা মা অনুভব করতে সম্ভব হয় না। সাধারণত গর্ভাবস্থার ১৮-২২ সপ্তাহে মা প্রথমবার শিশুর নড়াচড়া অনুভব করেন।
- শারীরিক পরিবর্তনঃ শিশুর নড়াচড়া অনুভব না হলেও মা তার শরীরে পরিবর্তন যেমন ক্লান্তি, বমি ভাব, পেটের ফোলাভাব ইত্যাদি অনুভব করতে পারেন।
আল্ট্রাসাউন্ড এর মাধ্যমে নড়াচড়া দেখাঃ
- গর্ভাবস্থার ১২ সপ্তাহে আল্ট্রাসন করে শিশুর নড়াচড়া পরিষ্কারভাবে দেখা যায়
- শিশুর মাথা নাড়ানো, হাত নেড়ে টোকা দেওয়া এবং পা টেনে নেওয়ার মতো ছোট ছোট কাজগুলো শুরু করে
নড়াচড়ার প্রভাব ও গুরুত্বঃ
- শিশুর সুস্থতার ইঙ্গিতঃ তিন এই হালকা গুলো শিশুর বেশি স্নায়ুতন্ত্র এবং অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সঠিক বিকাশের প্রমাণ দেয়
- বিকাশে ধাপঃ শিশুর এই নড়াচড়াগুলো ভবিষ্যতে বর্ণড়া চড়ার ভিত্তি স্থাপন করে যা চার-পাঁচ মাসের সময় মা সারা সরাসরি অভাব করতে পারে।
গর্ভবতী মায়ের করনীয়ঃ
- সঠিক পুষ্টি গ্রহণ করতে হবে যাতে শিশুর শারীরিক মানসিক বিকাশ সঠিকভাবে গঠিত হয়
- নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী আলট্রাসন করতে হবে, যাতে শিশুর বিকাশ সঠিকভাবে নিরীক্ষা করা যায়
- মানসিক চাপ এড়িয়ে ইতিবাচক জীবন যাপন করতে হবে, কারণ এটি শিশুর বিকাশে প্রভাব ফেলতে পারে
পরিশেষে বলা যায় যে গর্ভাবস্থার তিন মাসে শিশুর নড়াচড়া শুরু হলেও মায়ের জন্য তা অনুভব করা খুব একটা সম্ভাব হয় না। তবে শিশুর এই নড়াচড়া তার বিকাশের গুরুত্বপূর্ণ ইঙ্গিত দেয়। এজন্য নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং সঠিক পুষ্টি নিশ্চিত করলে এই সময়টি মা ও শিশুর জন্য স্বাস্থ্যকর ও নিরাপদ হয়।
গর্ভাবস্থায় প্রথম তিন মাসে পেট ব্যথা
গর্ভাবস্থায় প্রথম তিন মাসে পেট ব্যথা সাধারণত স্বাভাবিক হলেও যদি তা তীব্র হয় তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। গর্ভাবস্থার প্রথম তিন মাসে পেট ব্যথার কারণ এবং এর সম্পর্কিত বিষয়গুলো ব্যাখ্যা করলে বিভিন্ন দিক উল্লেখ করতে হবে। তবে এই ব্যথা যে কোনো কারণে হতে পারে বা স্বাভাবিক হতে পারে। তবে এই সময়ের যেকোনো ব্যথা কে গুরুত্ব দিতে হবে। বিস্তারিত নিচে বলা হলো-
- গর্ভাশয়ে পরিবর্তন ও বৃদ্ধিঃ গর্ভাবস্থার শুরুতে গর্ভাশয় সাধারণত ধীরে ধীরে বড় হতে থাকে। যার ফলে তলপেটে মৃদু টান ধরার বা চাপ অনুভূতির মতো ব্যথা হতে পারে।
- হরমোনের পরিবর্তনঃ প্রজেস্টেরন ও অন্যান্য হরমোনের মাত্রার বৃদ্ধির ফলে বেশি শিথিলতা দেখা দেয়। এর ফলে এটি পেটে গ্যাস আকারে জমে থাকে বা হালকা ব্যথা কারণ হতে পারে।
- গ্যাস বা কোষ্ঠকাঠিন্যঃ গর্ভাবস্থায় শারীরিক পরিবর্তনের কারণে হজম প্রক্রিয়া ধীরগতি হয়। যার ফলে গ্যাস বা কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো সমস্যা হতে পারে। এই তলপেটে টান অনুভব করায়।
- ইমপ্লান্টেশন পেইনঃ গর্ভ সঞ্চারের প্রথম দিকে ভ্রন যখন গর্ভাশয়ের দেয়ালে সংযুক্ত হয় তখন সামান্য ব্যথা বা রক্তপাত হতে পারে।
- রাউন্ড লিগামেন্ট ব্যথাঃ গর্ভাবস্থার সময় লিগামেন্ট গুলোর টান পড়ে যা তলপেটে হঠাৎ ব্যথার কারণ হতে পারে।
- ইনফেকশন বা ইউরিনারি সমস্যাঃ প্রসাবের সংক্রমণ গর্ভাবস্থায় ব্যথা বা অস্বস্তির কারণ হতে পারে। এর সঙ্গে জ্বালাপোড়া জল বা অন্যান্য লক্ষণও দেখা দেয়।
- গর্ভপাতের আশঙ্কাঃ যদি পেটের ব্যথা সঙ্গে অতিরিক্ত রক্তপাত বা ক্রাম্প হয় তবে এটি গর্ভপাতের পূর্বাভাস হতে পারে।
- একটপিক প্রেগনেন্সিঃ ভ্রুন যদি গর্ভসাইয়ের বাহিরে হয় ( অধিকাংশ ক্ষেত্রে ফ্যালোপিয়ান টিউবে) বা বিকাশ লাভ করে তবে এটি তীব্র ব্যথার কারণ হতে পারে।
করণীয়ঃ
- ব্যাথা স্বাভাবিক মনে হলে বিশ্রাম ও পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করতে হবে
- অতিরিক্ত ব্যথা, রক্তপাত বা অন্যান্য অস্বাভাবিক লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে
- নিজে থেকে ওষুধ কোনভাবে সেবন করা যাবে না
পরিশেষে বলা যায় যে, প্রতিটি নারীর শরীর আলাদা, তাই ব্যথার প্রকৃতি বা ধরনও আলাদা এবং কারণ বিভিন্ন হতে পারে। একজন নারী গর্ভবতী হলে অবশ্যই তার নিয়মিত চেকআপের মাধ্যমে ঝুঁকি হ্রাস করতে হবে। গর্ভধারণের পর পেটে যেকোনো ধরনের ব্যাথা হতে পারে। তবে কোন ব্যথাকেই অবহেলা করা যাবে না। দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী যত্ন নিতে হবে।
গর্ভাবস্থায় শেষ ৩ মাসের সতর্কতা
গর্ভাবস্থায় শেষ ৩ মাসের সতর্কতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একজন মা ও শিশুর সুস্থতায়। গর্ভাবস্থার শেষ তিন মাস যা তৃতীয়তাই মাসিক হিসেবে পরিচিত মায়ের এবং শিশুর উভয়ের জন্যই এতটাই গুরুত্বপূর্ণ যে আমাদের প্রত্যেককেই সতর্ক এবং সচেতন অবস্থায় দেখাশুনা করতে হবে। এই সময়টিতে শরীরের পরিবর্তন এবং প্রসবের প্রস্তুতির জন্য বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। মায়ের গর্ভে শিশুর দ্রুত বৃদ্ধি ঘটে এবং এটি প্রসবের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করে তোলে। তাই এই সময়ে কিছু বিশেষ বিষয় আমাদের প্রত্যেকেরই মাথায় রাখা আবশ্যক।
প্রথমত, খাদ্যাভ্যাস এর প্রতি মনোযোগ দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। মায়ের শরীরের পুষ্টি সরবরাহ শিশুর বৃদ্ধিতে সরাসরি প্রভাব ফেলে। এই কারণে সাধারণত প্রোটিন, আয়রন, ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবার নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরী। এই সময়ে প্রচুর পানি পান করা এবং অতিরিক্ত লবণ ও চর্বি জাতীয় খাবার পরিহার করা উচিত। অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি বা শরীরে পানি জমে যাওয়ার সমস্যা এড়ানোর জন্য সুষম খাদ্য অভ্যাস বজায় রাখা জরুরী।
শারীরিক পরিশ্রম এই সময়টিতে সীমিত রাখায় ভালো। তবে একদম ঘরে বসে বা শুয়ে থাকা ঠিক নয়। ঘরের হালকা কাজকাম, হালকা ব্যায়াম যেমন হাঁটাচলা বা প্রসাবকালীন ব্যায়াম উপকারী হতে পারে, তবে অতিরিক্ত ক্লান্তি এড়ানো প্রয়োজন। পর্যাপ্ত পরিমাণ বিশ্রাম নিতে হবে এবং ভালো ঘুম মা ও শিশু সুস্থতার জন্য অপরিহার্য।
এছাড়া নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া ও চেকআপ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নির্দেশনা অনুযায়ী আল্ট্রা সাউন্ড ও অন্যান্য পরীক্ষাগুলো সম্পন্ন করতে হবে। রক্তচাপ, রক্তশূন্যতা এবং শিশুর যন্ত্রের কার্যক্রম প্রতিনিয়ত পর্যবেক্ষণ করতে হবে। কোন রকম ব্যথা অস্বাভাবিক উপসর্গ বা রক্তক্ষরণ হলে আপনাদের দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
শেষ ত্রৈমাসিকে আমাদের অবশ্যই মানসিক স্বার্থের যত্ন নিতে হবে কারণ এই সময় অত্যন্ত ভয়ংকর এবং জটিল। গর্ভধারণের শেষের দিকে অনেক মা উদ্যোগ বা মানসিক চাপ অনুভব করতে পারেন। বিভিন্ন ধরনের নেগেটিভ মাইন্ডের কথা তাদের মনে আসতে থাকে। তারা ভাবতে থাকে ডেলিভারির সময় তারা মারা যেতে পারে। এই ধরনের মানুষের সমস্যা থেকে তাদেরকে মুক্ত রাখতে হবে। ইতিবাচক মন সাহায্য দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। রিলাক্সেশন বা মেডিটেশন এই সময়ের মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে।
প্রসবের জন্য প্রস্তুত থাকার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। জরুরী পরিস্থিতিতে কিভাবে হাসপাতালে পৌঁছানো যাবে, সে বিষয়ে আগে থেকেই পরিকল্পনা রাখতে হবে। প্রসবকালীন প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র আগেভাগেই গুছিয়ে রেখে দিতে হবে। যাতে সেই মুহূর্তে কোন ধরনের পেরেশানিতে না পড়তে হয়।
পরিশেষে বলা যায় যে, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল গর্ভাবস্থার শেষ তিন মাসে নিজেকে শারীরিক মানসিকভাবে সুস্থ রাখার জন্য সচেতন থাকতে হবে। সঠিক যত্ন ও চিকিৎসা নিশ্চিত করতে পারলে মা এবং শিশু দুজনেই নিরাপদ ও সুস্থ থাকতে পারবেন।
গর্ভাবস্থার প্রথম তিন মাসে গর্ভধারণের যত্ন নিন
গর্ভাবস্থার প্রথম তিন মাসে গর্ভধারণের যত্ন নিন এটাই মূল বিষয়। গর্ভাবস্থায় প্রথম তিন মাস যা প্রথম ত্রৈমাসিক হিসেবে পরিচিত একটি মা এবং শিশুর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সময়। এই সময়ের মধ্যে একটি শিশুর শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ তৈরি হয় এবং মায়ের শরীরের এক ধরনের বড় পরিবর্তন আসে। তাই এই সময় মা ও শিশুর বিশেষ যত্ন নেওয়া প্রয়োজন যাতে দুজনেই সুস্থ থাকে।
সন্ত্রে মাসিকে পুষ্টির দিকে বিশেষ মনোযোগ দেওয়া জরুরি। গর্ভবতী মায়ের শরীরের বাড়তি পুষ্টির প্রয়োজন হয় যাতে শিশুর সঠিক বিকাশ হয়। ফলিক অ্যাসিড, আয়রন, প্রোটিন এবং ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করতে হবে। ফুলিক অ্যাসিড গর্ভধারণের শুরুর দিকে শিশুর স্নায়ুতন্ত্রের বিকাশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ তবে তা অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী নিতে হবে।
এই সময় মায়ের শরীর কিছু সাধারণ শারীরিক পরিবর্তন দেখা যায় যেমন বমি বমি ভাব, মাথা ঘোরানো, ক্লান্তি খাবারের রুচি এবং অরুচি, কোমর বা পেটে অস্বস্তি। এসব লক্ষণ সাময়িক হলেও যদি কোন সময় বেশি তীব্র হয়ে ওঠে তাৎক্ষণিক চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। একজন গর্ভবতী নারীকে পর্যাপ্ত বিশ্রাম ও ঘুম শরীরকে স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করবে।
গর্ভাবস্থার প্রথম তিন মাসে শারীরিক পরিশ্রম সীমিত রাখা হবে। অতিরিক্ত কাজ করা শারীরিক পরিশ্রমে অসুস্থতা বা ক্লান্তির অনুভূতি বৃদ্ধি পেতে পারে, যা মা ও শিশুর জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর বা ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। নিয়মিত হালকা ব্যায়াম যেমন হাটা বা যোগব্যায়াম উপকারী হতে পারে, তবে এত অতিরিক্ত চাপ দেওয়া উচিত নয়।
গর্ভধারণের প্রথম প্রেমিকের সময় মায়ের আবেগ গত পরিবর্তনও লক্ষ্য করা যায়। মায়ের মানসিক অবস্থা ও সন্তানের বিকাশের উপর প্রভাব ফেলে তাই একজন গর্ভবতী নারীকে অবশ্যই মানসিকভাবে শান্তিতে যেন থাকতে পারে সে ব্যবস্থা করতে হবে। প্রয়োজনে পরিবারের সবাইকে তাকে সাহায্য করতে হবে।
গর্ভাবস্থার প্রথম তিন মাসে সঠিক সময়ে চিকিৎসকের পরামর্শ দিতে হবে এবং ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী আল্ট্রা সাউন্ড অন্যান্য পরীক্ষা করতে হবে। এছাড়া কোন অস্বাভাবিক লক্ষণ যেমন অতিরিক্ত রক্তপাত, তীব্র পেট ব্যথা ও উচ্চ রক্তচাপ হলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
সবশেষে গর্ভাবস্থার প্রথম তিন মাসে মায়ের শারীরিক, মানসিক এবং পুষ্টিগত যত্ন নিশ্চিত করা হলে শিশুর সুস্থ বিকাশ সম্ভাব হয় এবং মা অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক শক্তিশালী থাকেন। একটি সুস্থ সন্তান জন্ম দিতে গেলে আমাকেও একটি সুস্থ শরীর তৈরি করতে হবে। তাই একজন সুস্থ সন্তান জন্ম দেওয়ার জন্য গর্ভবতী নারীকে নিজের প্রতি খেয়াল রাখতে হবে।
মন্তব্যঃ গর্ভাবস্থায় প্রথম ৩ মাসের সতর্কতা
গর্ভাবস্থায় প্রথম ৩ মাসের সতর্কতা সম্পর্কে আপনাদের সামনে তথ্য তুলে ধরা হয়েছে, এটি প্রমাণিত হয়েছে যে একজন গর্ভবতী নারীর সঠিক যত্ন নিতে হবে। আপনাদের সাথে এই বিশেষ যাত্রা শেয়ার করতে পেরে আমি অত্যন্ত আনন্দিত। গর্ভাবস্থার প্রথম তিন মাস এবং শেষ তিন মাসের সতর্কতা সম্পর্কে আলোচনা, আশা করছি আপনি অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়ে উপকৃত হয়েছেন। এই সময়ের প্রতি সচেতনতা এবং যত্ন আমাদের জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান দুটি সৃষ্টি মা ও শিশুর সুস্থতার জন্য অপরিহার্য।
যত্ন ও ভালোবাসায় আপনার গর্ভকথা আরো সুন্দর ও নিরাপদ হোক। পরিবারের প্রত্যেকে যেন একজন গর্ভবতীর প্রতি শ্রদ্ধাশীল এবং যত্নশীল থাকে। এবার বিদায় নিচ্ছে তবে আশা করছি আপনি সব সময় সুস্থ থাকবেন এবং গর্ভকালীন যত্নে সচেতন থাকবেন। ভবিষ্যতে আরো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য নিয়ে আপনাদের সঙ্গে দেখা হবে। সুখী ও সুস্থ থাকুন, সবাইকেই শুভকামনা।
প্রশ্ন ২৪ ব্লক এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url