জন্ডিস রোগীর খাবার তালিকা
জন্ডিস রোগীর খাবার তালিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি তাদের সুস্থতায় দ্রুত সহায়তা করতে পারে। জন্ডিস জটিল রোগ এটা অনেকেরই জানা। জন্ডিসের সময় লিভার দুর্বল হয়ে যায় এবং পুষ্টিকর ও সহজপাচ্য খাবার শরীরের বিষাক্ত উপাদান গুলো বের করতে সাহায্য করে।
জন্ডিস লিভারকে আক্রান্ত করে তাই রোগীদের এমন খাবার বেছে নেওয়া উচিত যা লিভারের উপর চাপ কমায়, দ্রুত শক্তি প্রদান করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এই তালিকায় হালকা, পুষ্টিকর ও স্বাস্থ্যসম্মত খাবার। আজকের ব্লগে জন্ডিস আক্রান্ত রোগীর খাবার সম্পর্কে বলা হবে।
পোস্ট সুচীপত্রঃ জন্ডিস রোগীর খাবার তালিকা
জন্ডিস রোগীর খাবার তালিকা
জন্ডিস রোগীর খাবার তালিকা তৈরি করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কারণ এই সময় লিভার অত্যন্ত দুর্বল থাকে। এই সময় এমন কোন খাবার দেয়া যাবে না যাতে লিভারের উপর চাপ পড়ে। এমন খাবার দিতে হবে যেন লিভারের উপর চাপ কমায় এবং দ্রুত পুনরুদ্ধারের সাহায্য করে। জন্ডিস রোগীদের খাবারের তালিকায় নিম্নলিখিত খাবার গুলো অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে-
- পানি ও তরল জাতীয় খাবারঃ জন্ডিসের জন্য প্রচুর পানি পান করা অত্যন্ত জরুরি , কারণ এটি শরীর থেকে টক্সিন বের করতে সহায়তা করে। এছাড়া ডাবের পানি, ফলের রস( বিশেষ করে আঙ্গুর, কমলা, লেবু) হারবাল চা এবং পাতলা স্যুপ উপকারী।
- ফল ও সবজিঃ সহজ পাচ্য ও ফাইবার যুক্ত সবুজ সবজি যেমন শসা, মুলা, টমেটো, গাজর ও অন্যান্য ফল যেমন আপেল, পেঁপে এবং কলা খুব উপকারী। এগুলো লিভারের সুস্থতায় সহায়তা করে এবং শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
- প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবারঃ জন্ডিসের রোগীদের প্রোটিন যুক্ত খাবার খাওয়া উচিত যা লিভার পুনরুদ্ধারে সহায়তা করে। এতে ডাল, মসুর, মুগ, মটর, অল্প তেলে রান্না করা মাছ এবং ডিমের সাদা অংশ অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে।
- কার্বোহাইড্রেটঃ লিভারের ওপর চাপ না বাড়াতে রোগীদের সহজে হজম যোগ্য কার্বোহাইড্রেট যুক্ত খাবার যেমন সেদ্ধ চাল, ওটস, আলু, সুজি এবং খিচুড়ি খেতে বলা হয়।
- হালকা ফ্যাটঃ চর্বি কম রাখতে হবে, তবে কিছু সুস্থ ফ্যাট যেমন অলিভ অয়েল বা সামান্য ঘি খাওয়া যেতে পারে।
- শস্য দানাঃ জন্ডিসের গোটা শস্য যেমন ওটস, বাদামী চাল, গমের রুটি এবং যব খুব উপকারী। এগুলোতে প্রচুর ফাইবার থাকে, যা হজম প্রক্রিয়ায় সহায়তা করে এবং লিভার পরিষ্কার রাখতে ভূমিকা রাখে। গোটা শস্যে থাকা ভিটামিন ও খনিজ লিভারের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে এবং শক্তি যোগায়, যা জন্ডিস রোগীর সুস্থতায় সহায়ক।
- বাদামঃ জন্ডিসের জন্য বাদামও সুটি খুবই পুষ্টিকর এবং উপকারী। বাদামে প্রাকৃতিক ফ্যাট, ভিটামিন ই এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে যা, লিভার কোষগুলোর সুরক্ষা ও পুনর্গঠনে সহায়তা করে। তবে বেশি ফ্যাটের কারণে বাদাম খুব অল্প পরিমানে খেতে হবে।
- কফি এবং ভেষজ চাঃ জন্ডিসের রোগীদের ক্ষেত্রে কফির চা ভেষজ চা অনেক বেশি উপকারী। কফিতে ক্যাফেইন থাকে, যা লিভারের উপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে তাই কফি এড়িয়ে চলাই ভালো। এর পরিবর্তে আদা, পুদিনা পাতা বা হলুদের মতো উপাদান দিয়ে ভেষজ চা রোগীর শরীরকে সুরক্ষা প্রদান করে।
- ভেষজ চা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ, যা লিভারের ক্ষতিকর টক্সিন দূর করতে সহায়তা করে। এটি হজম প্রক্রিয়া উন্নত করে বমি ভাব কমায় এবং লিভার সুস্থ রাখতে সহায়ক, ফলে জন্ডিস থেকে দ্রুত আরোগ্য লাভে সহায়তা করে।
জন্ডিস হলে কি ওষুধ খাব
জন্ডিস কোন রোগ নয়, জন্ডিস হল একটি লক্ষণ যা লিভারের অসুস্থতা বা রক্তের বিলিরুবিনের স্তর বৃদ্ধির কারণে দেখা দেয়। এই অবস্থায় ত্বক, চোখের সাদা অংশ এবং মিউকাস ঝিল্লি হলুদ বর্ণ ধারণ করে। সাধারণত লিভারের সমস্যা, পিত্তনালী ব্লকেজ অথবা রক্তে বিলিরুবিনের অতিরিক্ত মাত্রা এর জন্য দায়ী।
জন্ডিস হলে সঠিক চিকিৎসা ও খাদ্যাভ্যাস দুই দরকার। যেহেতু এটি লিভারজনিত সমস্যা তাই যেকোনো ওষুধ নেওয়ার আগে ডাক্তারের পরামর্শ অবশ্যই নিতে হবে। সাধারণত জন্ডিসের চিকিৎসা বিভিন্ন ধরনের, তবে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ নেয়ায় উত্তম। তবে কিছু ওষুধ এর নির্দেশনা নিচে উল্লেখ করা হলো-
হেপাটাইটিস নিরাময়ে ওষুধঃ
- হেপাটাইটিস ভাইরাসের কারণে জন্ডিস হলে ভাইরাসের ধরন অনুযায়ী আলাদা চিকিৎসা প্রয়োজন
- হেপাটাইটিস এ এবং ই এর ক্ষেত্রে সাধারণত বিশ্রাম, পুষ্টিকর খাবার ও প্রচুর পানি পানই প্রধান চিকিৎসা।
- হেপাটাইটিস বি এবং সি-তে অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ এবং প্রয়োজনে লিভার টনিক বা সাপোর্টিভ ওষুধ দেয়া হয়
লিভার সাপোর্টও ওষুধঃ
- কিছু লিভা সাপোর্ট ওষুধ, যেমন- সিলিমারিন বালিভার টনিক, লিভারের কোষ পুনর্গঠনে সহায়ক হতে পারে
- এ ধরনের ওষুধ লিভারের কার্যকারিতা উন্নত করতে সহায়তা করে। তবে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া এইসব ওষুধ গ্রহণ করা উচিত নয়
অ্যান্টিবায়োটিক ও আন্টি-ইনফ্লামেটরি ওষুধঃ
- জন্ডিসের কারণ ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণ হলে অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োজন হতে পারে
- পাশাপাশি, প্রদাহ বা ইনফ্লামেশন কমানোর জন্য আন্টি-ইনফ্লামেটরি ওষুধ প্রয়োজন হতে পারে। এগুলোরও ব্যবহার অবশ্যই ডাক্তারের নির্দেশনা অনুযায়ী করতে হবে
বিলিরুবিন কমানোর জন্যঃ
- কিছু ক্ষেত্রে ডাক্তাররা ওষুধ বা ইনজেকশনের মাধ্যমে বিলুরুবিন কমানোর চেষ্টা করেন, তবে এটি নির্ভর করে রোগীর পরিস্থিতি ও বিলুরুবিনের মাত্রার ওপর
খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাপনঃ
- জন্ডিস হলে ভাজাপোড়া, তেলযুক্ত খাবার এবং অ্যালকোহল এড়িয়ে চলতে হবে কারণ এগুলো লিভারের ওপর চাপ বাড়ায়
- পানি ও তরল জাতীয় খাবার বেশি খেতে হবে। দই, টক দই, শসা, সবুজ শাকসবজি, সেদ্ধ চাল, ওটমিল এবং ফলমূল খেতে বলা হয়
জন্ডিসের ওষুধী কিছু পাতা ঃ
- কিছু অড়হড় পাতা পরিষ্কার করে ধুয়ে রস বানিয়ে নিন। অড়হড় পাতার রস জন্ডিসের জন্য খুবই উপকারী
- এই রসের সাথে কিছু লেবুর রস মিশিয়ে পান করুন
- করোলার পাতার রস জন্য খুবই উপকারী। আধা লিটার পানিতে 10-12 টি করলার পাতা সিদ্ধ করে সেই পানি পান করুন
- মুলার পাতাও বেশ উপকারী। প্রতিদিন আধা লিটার মুলার পাতার রস খেলে জন্ডিস ভালো হয়ে যেতে পারে
- পেপে পাতা জন্ডিসের জন্য ভীষণভাবে উপকারী। এমনকি ছোট কাঁচা পেঁপে সকালবেলা খালি পেটে খেলে লিভারের বিভিন্ন অসুখ থেকে বিশেষ করে জন্ডিস অনেক উপকার করে
- তুলসী পাতার রস জন্ডিসের জন্য খুবই উপকারী। প্রতিদিন সকালে তুলসী পাতার এক গ্লাস রস খাওয়া লিভারের জন্য খুব ভালো
জন্ডিস হলে অবশ্যই ঘরে বসে ওষুধ না নিয়ে ডাক্তারের পরামর্শ মেনে চিকিৎসা নিতে হবে। জন্ডিসের জন্য অবশ্যই আপনাকে সঠিকভাবে বিশ্রাম এবং পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করে দ্রুত সুস্থতা আনতে হবে। কারণ সঠিক ট্রিটমেন্ট না করলে জন্ডিস থেকে লিভার ক্যান্সার, লিভার সিরোসিসের মত মরণব্যাধি রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। এইজন্য দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে।
জন্ডিস হলে কি কলা খাওয়া যাবে
জন্ডিস রোগীর খাবার তালিকা একজন জন্ডিসে আক্রান্ত রোগীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ। কারণ জন্ডিসের প্রধান ওষুধ হল খাবারের সাবধানতা এবং বিশ্রাম নেওয়া। জন্ডিস হলে কলা খাওয়া সাধারণত নিরাপদ ও উপকারী। এটি হালকা ও সহজপাচ্য ফল হওয়ায় লিভারের ওপর বাড়তি চাপ ফেলে না এবং রোগীকে পুষ্টি যোগাড়তে সহায়তা করে।
কলাতে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম, হাইবার এবং প্রাকৃতিক চিনি থাকে, যা জন্ডিসের রোগীদের জন্য বিশেষভাবে উপকারী হতে পারে। কলা জন্ডিসের রোগীদের জন্য নিম্নলিখিত উপায়ে সহায়ক হতে পারে-
- শক্তি প্রদানঃ জন্ডিসের কারণে শরীর দুর্বল হয়ে যেতে পারে এবং রোগীদের জন্য দ্রুত শক্তির উৎস প্রয়োজন হয়। কলাতে প্রাকৃতিক চিনি ( যেমন গ্লুকোজ, সুক্রোজ, ফ্রুক্টোজ) থাকে জাগ্রত শক্তি সরবরাহ করে এবং দুর্বলতা দূর করতে সহায়তা করে।
- হজমের সহায়তাঃ জন্ডিসে হজম শক্তি কিছুটা দুর্বল হয়ে যায়। কলা সহজে হজম হয় এবং এতে থাকা ফাইবার হজম প্রক্রিয়ায় সহায়ক হয়, লিভারের ওপর অতিরিক্ত চাপ না ফেলে হজম প্রক্রিয়া সহজ করে তোলে।
- পটাশিয়াম ও ইলেক্ট্রোলাইট সমৃদ্ধঃ কলাতে পটাশিয়াম থাকে, যা শরীরে ইলেকট্রোলাইট ভারসাম্য বজায় রাখতে সহায়তা করে। জডিসের কারণে শরীরে পানির অভাব হলে পটাশিয়াম জরুরি হয়ে ওঠে এবং কলা সেই অভাব পূরণে সহায়তা করে।
- বিলুরুবিন নির্গমনে সহায়কঃ জন্ডিসের বিলুরুবিন বেড়ে যায়, যা লিভারের মাধ্যমে শরীর থেকে বের করতে হয়। কলাতে থাকা কুস্তি উপাদান গুলো লিভারের কার্যকারিতা বাড়াতে সহায়তা করে এবং শরীর থেকে টক্সিন দ্রুত বের করতে সাহায্য করে।
- খাবার তালিকায় অন্তর্ভুক্তিঃ কলা সকালে বা দুপুরে খাওয়া ভালো, তবে অতিরিক্ত না খেয়ে প্রতিদিন একটি বা দুইটি কলা খাওয়া যথেষ্ট। অন্যান্য ফলের সঙ্গেও এটি খাওয়া যেতে পারে।
যদিও কলা জন্ডিস রোগীদের জন্য উপকারী, তবে অতিরিক্ত কলা খাওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত, কারণ লিভারের ওপর বাড়তি প্রভাব পড়তে পারে। আপনাকে সব সময় অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী খাদ্য তালিকা তৈরি করে নিতে হবে। কারণ একটি সঠিক খাদ্য অভ্যাস এর রোগ থেকে নিরাময় দিতে পারে।
জন্ডিস হলে কি কি সমস্যা হয়
জন্ডিস রোগীর খাবার তালিকা বা জন্ডিস হলে কি কি সমস্যা হয় তা জানার আগে আমাদেরকে অবশ্যই জন্ডিস কি এই সম্পর্কে জানতে হবে। জন্ডিস আসলে একটি লক্ষণ, যা সাধারণত লিভারের অসুস্থতা, পিত্তনালীর সমস্যা বা রক্তের বিলুরুবিনের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার কারণে দেখা দেয়। এতে ত্বক, চোখের সাদা অংশ এবং মিউকাস দিল্লি হলুদ হয়ে যায়।
জন্ডিসের আক্রান্ত রোগীরা সাধারণত দুর্বলতা, বমি ভাব, ক্ষুধামন্দ, ওজন কমা এবং ত্বকে বিভিন্ন ধরনের চুলকানি সমস্যায় আক্রান্ত হয়। এই অবস্থায় লিভারের সঠিক যত্ন ও বিশেষ খাদ্য তালিকা প্রয়োজন যা বিষাক্ত পদার্থ বের করতে এবং শরীর পুনর্গঠন এর সহায়তা করে।
জন্ডিসের প্রকারভেদঃ
জন্ডিস সাধারণত লিভার ও পিত্তোনালীর সমস্যার কানে দেখা দেয় এবং এর কয়েকটি প্রধান প্রকারভেদ রয়েছে। সেগুলো সম্পর্কে নিম্নে কিছু বলা হল
- হোমোলাইটিক জন্ডিসঃ এই ধরনের জন্ডিস রক্তের লালকণিকা ভেঙ্গে দ্রুত বিলিরুবিন তৈরি হয় দেখা দেয়। এতে লিভার অতিরিক্ত বিলিরুবিন প্রসেস করতে পারেনা। অ্যানিমিয়া বা ম্যালেরিয়ার মত রোগ এটির কারণ হতে পারে।
- হেপাটোসেলুলার জন্ডিসঃ এটি লিভারের কোষে সংক্রমণ বা প্রদাহের কারণে হয়।। হেপাটাইটিস ভাইরাস সংক্রমণ বা লিভার এর দীর্ঘস্থায়ী অসুখ, যেমন সিরোসিস এই জন্ডিসের কারণ। এতে লিভার বিভিন্ন ধরনের কার্যকারিতা হারিয়ে ফেলে এবং বিলিরুবিন জমা হয়।
- অবস্ট্রাক্টিভ জন্ডিসঃ পিত্তনালীর অবরোধের কারণে পিত্ত লিভার থেকে বের হতে না পারলে এই ধরনের জন্ডিস দেখা দেয়। পিত্তোনালীর পাথর, টিউমার বা পিত্তোনালীর সংকোচন এর প্রধান কারণ। এতে ত্বক ও চোখের রং বেশি হলুদ হয়ে যায় এবং তীব্র চুলকানি হয়।
- নবজাতকের জন্ডিসঃ নবজাতক শিশুদের ক্ষেত্রে জন্মের পর পরই জন্ডিস দেখা দিতে পারে। এটি নবজাতকের লিভারের অপরিপক্কতার কারণে হয়, যা সময়ের সাথে নিজে থেকেই ভালো হয়ে যায়।
জন্ডিসের বিভিন্ন প্রকারভেদ আছে যার কারণে কে কোন জন্ডিসে আক্রান্ত হয়েছে তা অবশ্যই পরীক্ষা করতে হবে। আক্রান্তের ধরন অনুযায়ী ডাক্তারের পরামর্শ দেয়া হবে। প্রতিটি যন্ত্রের ধরন অনুযায়ী চিকিৎসা ভিন্ন ভিন্ন। তাই নির্ভরযোগ্য কৃষকের মাধ্যমে জন্ডিসের চিকিৎসাতে হবে কারণ জন্ডিস একটি মরণব্যাধি মরণব্যাধি রোগ।
জন্ডিসের কারনঃ
জন্ডিসের বিভিন্ন কারণ রয়েছে, যা সাধারনত, লিভার, পিত্তনালী বা রক্তের সমস্যার সঙ্গে সম্পর্কিত। জন্ডিসের কারণগুলো নিচে দেখানো হলো-
- হেপাটাইটিস ভাইরাস সংক্রমণঃ হেপাটাইটিস এ, বি, সি, ডি এবং ই ভাইরাস সংক্রমণ লিভারের প্রদাহ সৃষ্টি করে যা জন্ডিসের অন্যতম কারণ। হেপাটাইটিস ও লিভার সিরোসিস অ্যালকোহল যুক্ত লিভারের রোগ বিশেষ মাত্র। এইসবের কারণে লিভার ক্যান্সার হয় এবং মানুষ মৃত্যুর মুখে পতিত হয়।
- অ্যালকোহলিক লিভার ডিজিজঃ দীর্ঘমেয়াদি অতিরিক্ত অ্যালকোহল সেবন লিভার এর কোচ কে ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং লিভার সিরোসিস এর কারণ হতে পারি যার জন্ডিস সৃষ্টি করে।
- পিত্তনালীর বাধাঃ পিত্তনালীতে পাথর, টিউমার বা প্রদাহ পিত্তের প্রবাহকে বাধাগ্রস্ত করে, যা বিলুরুবিন জমিয়ে জন্ডিস সৃষ্টি করে।
- হোমোলাইটিক অ্যানিমিয়াঃ এই অবস্থায় রক্তের লাল কণিকা দ্রুত ভেঙে অতিরিক্ত বিলুরুবিন তৈরি হয়, যা লিভারের প্রক্রিয়াকরণ ক্ষমতাকে অতিক্রম করে জন্ডিসের কারণ হতে পারে।
- লিভার সিরোসিসঃ দীর্ঘস্থায়ী লিভার ক্ষতির কারণে লিভারের কার্যক্ষমতা কমে যায় এবং সিরোসিস দেখা দেয়, যা বিলিরুবিনের প্রক্রিয়াকরণে ব্যাঘাত ঘটিয়ে জন্ডিস সৃষ্টি করে।
- জেনেটিক অসুখঃ গিলবার্ট সিনড্রোমের মত কিছু জেনেটিক সমস্যা লিভারকে ঠিকভাবে বিলিরুবিন প্রসেস করতে বাধা দেয়, যা জন্ডিসের কারণ হতে পারে।
- নবজাতকের লিভার অপরিপক্কতাঃ নবজাতকদের লিভার পুরোপুরিভাবে বিকশিত না হওয়ার কারণে সাময়িকভাবে বিলিরুবিন জমা হতে পারে, যা জন্ডিসের কারণ হয়।
- পিত্তনালীর পাথরঃ পিত্তনালীতে পাথর বা টিউমার থাকলে পিত্তের প্রবাহ ব্যাহত হয়, যা বিলিরুবি ন জমিয়ে জন্ডিসের সৃষ্টি করে।
- দীর্ঘস্থায়ী কিছু ওষুধ সেবনঃ কিছু ওষুধ লিভারের ওপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করতে পারে, যা দীর্ঘমেয়াদী লিভারের ক্ষতি করে এবং জন্ডিসের ঝুঁকি বাড়ায়।
- বিষাক্ত পদার্থের সংস্পর্শঃ কিছু বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ লিভারের কোষে ক্ষতি করে, যার ফলে জন্ডিস হয়।
জন্ডিসের বিভিন্ন সমস্যা বা লক্ষণ সমূহঃ
- রক্তে বিলিরুবিনের মাত্রা বেড়ে গেলে ত্বক এবং চোখের সাদা অংশ হলুদ হয়ে যায়, যা জন্ডিসের প্রধান লক্ষণ
- লিভার ঠিকমতো কাজ না করলে রোগী সবসময় ক্লান্তি ও দুর্বলতা অনুভব করে
- খাওয়ার প্রতি রুচি কমে যায় এবং ক্ষুধা কম লাগে
- বমি ভাব বা প্রায়ই বমি হওয়ার প্রবণতা দেখা দেয়
- শরীরে বিলিরুবিন জমা হলে ত্বকের চুলকানি হতে পারে
- জন্ডিসের কারণে মলের রং ফ্যাকাসে বা হালকা হয়ে যায়
- মুত্রের রং গাঢ় হলুদ বা বাদাম হয়ে যায়
- বিশেষ করে পেটের ডান পাশে ব্যাথা হতে পারে, কারণ এখানে লিভার অবস্থিত
- ক্ষুধামন্দা ও দুর্বলতার কারণে ওজন কমতে থাকে
- কিছু কিছু ক্ষেত্রে হালকা থেকে মাঝারি জ্বর হতে পারে
- শরীরে দুর্বলতা বেড়ে গেলে মাথা ঘোরার সমস্যা দেখা দিতে পারে
- শরীরের পানি শূন্যতার কারণে বেশি তৃষ্ণা অনুভূত হতে পারে
- দীর্ঘস্থায়ী জন্ডিসের রোগীরা মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়তে পারেন
- লিভার ঠিকভাবে কাজ না করলে শরীরে পানির অভাব দেখা দেয়
- দুর্বলতা ও ক্লান্তির কারণে রোগী দৈনন্দিন কা করতে অক্ষম হয়ে পড়ে
এই লক্ষণ গুলো দেখা দিলে অতি দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। কারণ এগুলো জন্ডিসের লক্ষণসমূহ। সঠিকভাবে জন্ডিসের ট্রিটমেন্ট না হলে মারাত্মক ব্যাধিতে পরিণত হবে।
জন্ডিসের রোগ নির্ণয় পদ্ধতিঃ
জন্ডিস নির্ণয় সাধারণত লিভারের কার্যক্ষমতা ও রক্তে বিলিরুবিনের মাত্রা পরীক্ষা করা হয়। কিছু সাধারণ নির্ণয় পদ্ধতি সম্পর্কে বলা হলো-
- রক্ত পরীক্ষা ( বিলিরুবিন টেস্ট): রক্তে বিলিরুবিনের মাত্রা নির্ধারণ করতে বিলিরুবিন টেস্ট করা হয়। এটি দেখায় বিলিরুবিনের মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি কিনা এবং কোন ধরনের জন্ডিস রয়েছে।
- লিভার ফাংশন টেস্ট (LFT): লিভারের কার্যক্ষমতা নির্ণয়ের জন্য লিভার ফাংশন টেস্ট করা হয়। এটি রক্তে এলানাইন ট্রান্স এমিনেজ (ALT) এবং অ্যাসপার্টেট ট্রান্সএমিনেজ (AST) এর মত এনজাইমের মাত্রা নির্ণয় করে, যা লিভারের সমস্যা ইঙ্গিত দেয়।
- আল্ট্রাসনোগ্রাম (USG) : পেটের আলট্রাসনোগ্রাম করে লিভার, পিত্তোনালী এবং পিত্তথলির অবস্থা পর্যবেক্ষণ করা হয়। এটি দেখায় পিত্তনালী কোন ব্লকেজ বা টিউমার আছে কিনা।
- সিটি স্ক্যান (ST স্ক্যান): লিভার এবং পিত্তোনালীর আরো বিস্তারিত চিত্র পাওয়ার জন্য সিটি স্ক্যান করা হয়, যা টিউমার বা ক্ষতির চিহ্ন শনাক্ত করতে সহায়তা করে।
- এমআরআই (MRI): লিভারের আরো বিস্তারিত চিত্র পাওয়া যায় এমআরআই এর মাধ্যমে। এটি বিশেষ করে পিত্তনালীর ব্লকেজ বা গঠনগত সমস্যা নির্ণয়ে সহায়ক।
- বায়োপসিঃ লিভারের সমস্যা গুরুতর হলে লিভারের টিস্যু সংগ্রহ করে মাইক্রোস্কোপে পরীক্ষা করা হয় যা লিভারের ক্ষতির প্রকৃতি বুঝতে সাহায্য করে
এই পরীক্ষা ও পদ্ধতি গুলো সঠিকভাবে প্রয়োগ করে জন্ডিসের কারণ ও ধরনের নির্ণয় করা হয়, যার চিকিৎসকের চিকিৎসা নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
জন্ডিস হলে কি ডিম খাওয়া যাবে
জন্ডিস রোগীর খাবার তালিকা হতে ডিম খাওয়া যাবে কিনা তা একটি গুরুত্বপূর্ণ কথা। জন্ডিস যাকে আমরা সাধারণত হলুদ জর বলে থাকি। জন্ডিস সাধারণত অতিরিক্ত বিলিরুবিন রক্তে জমা হওয়ার কারণে হয় এটি সাধারণত লাল রক্ত কণিকা কে ভেঙে দেয়। জন্ডিস একটি লক্ষণ, যা সাধারনত লিভারের অসুস্থতা, পিত্তনালীর অবরোধ বা রক্তে বিলিরুবিন জমে যাওয়ার কারণে হয়।
জন্ডিস কোন সংক্রামক রোগ নয়। জন্ডিসের মূল লক্ষণ হল ত্বক ও চোখ হলুদ হওয়া, ক্লান্তি, দুর্বলতা এবং ক্ষুধামান্দা। জন্ডিসের কারণ হতে পারে হেপাটাইটিস, লিভারের রোগ, পিত্তনালীর সমস্যা বা কিছু জেনেটিক সমস্যা।
জন্ডিস হলে ডিম খাওয়া নিয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বিবেচনা করতে হয় কারণ ডিমে প্রটিন চর্বি থাকে, যা লিভারের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। তবে সঠিক পরিমাণ ও উপযুক্ত পদ্ধতিতে ডিম খেলে এটি উপকারী হতে পারে।
জন্ডিসে ডিমের উপকারিতাঃ
ডিমে উচ্চ মানের প্রোটিন, ভিটামিন বি, ভিটামিন ডি, আয়রন, সেলিনিয়াম এবং ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড থাকে, যা জন্ডিস রোগীর জন্য পুষ্টিকর। প্রোটিন শরীরের কোষ পুনর্গঠনে ও মেরামতে সহায়তা করে, যা লিভারের পুনর্গঠনে সহায়ক হতে পারে। তাছাড়া ডিমে থাকা ভিটামিন ও খনিজ লিভারের কার্যক্ষমতা উন্নত করতে সাহায্য করতে পারে।
ডিম খাওয়ার সীমাবদ্ধতাঃ
ডিমের কুসুমে কিছু চর্বি থাকে, যা লিভারের ওপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করতে পারে। তাই জন্ডিস রোগীদের জন্য ডিমের কুসুম খাওয়ার ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত। এক্ষেত্রে ডিমের সাদা অংশ খাওয়া যেতে পারে, যা সহজপাচ্য এবং লিভারের ওপর অতিরিক্ত চাপ ফেলে না।
কিভাবে ডিম খাওয়া যেতে পারেঃ
- সেদ্ধ ডিমঃ সেদ্ধ ডিম খাওয়া উত্তম, কারণ এটি সহজ পাচ্য এবং এতে অতিরিক্ত তেল বা মসলার প্রয়োজন হয় না
- ভাজা ডিম এড়িয়ে চলাঃ তেলেভাজ বা বেশি মসলাযুক্ত ডিম খাওয়া জন্ডিস রোগীদের জন্য অনুপযুক্ত, কারণ এতে লিভারের ওপর চাপ পড়ে।
ডাক্তারের পরামর্শঃ জন্ডিসের রোগীকে ডিম খাওয়ার আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। ডাক্তারের নির্দেশনা অনুযায়ী নির্দিষ্ট পরিমাণে ডিম খেলে পুষ্টি পাওয়া যায়, তবে অতিরিক্ত ডিম খেলে লিভারের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে।
সুতরাং জন্ডিসের ডিম খাওয়া যায়, তবে শুধুমাত্র সঠিক পরিমাণে এবং সঠিক উপায়, যা লিভারের জন্য উপকারী হতে পারে। এই জন্য আমরা অবশ্যই তবে তা হতে হবে সঠিক উপায়ে। কারণ লিভারের যেকোনো ধরনের অসুখ অত্যন্ত মারাত্মকর। এতে মৃত্যুর সম্ভাবনা থাকে অনেক বেশি। কারণ লিভারের সমস্যা থেকে লিভার সিরোসিস হয় যা মরণব্যাধি।
জন্ডিস কতদিনে ভালো হয়
জন্ডিস সেরে উঠতে কতদিন লাগে তা নির্ভর করে রোগের কারণ, রোগীর স্বাস্থ্য অবস্থা এবং চিকিৎসকের গুণগত মানের উপর। সাধারণত জন্ডিসের প্রাথমিক লক্ষণ দেখা দেওয়ার পর ছেড়ে উঠতে ২ থেকে ৬ সপ্তাহ পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। তবে জন্ডিসের ধরন এবং রোগীর সাড়া দেওয়ার ক্ষমতার উপর ভিত্তি করে সময়সীমা ভিন্ন হতে পারে।
জন্ডিসের ধরন ও সুস্থতার সময়ঃ
- হেপাটাইটিস এ ও ই জনিত জন্ডিসঃ এই ধরনের জন্ডিস ভাইরাসজনিত সংক্রমণের কারণে হয়ে থাকে এবং সাধারণত ২-৬ সপ্তাহের মধ্যে সেরে যায়। রোগীকে পর্যাপ্ত বিশ্রাম এবং সঠিক খাদ্যাভ্যাস অনুসরণ করতে হয়।
- হেপাটাইটিস বি ও সি জনিত জন্ডিসঃ এই ধরনের জন্ডিস বেশি সময় ধরে চলতে পারে এবং কখনো কখনো দীর্ঘস্থায়ী ও হতে পারে। এতে সেরে উঠতে কয়েক মাস থেকে কয়েক বছর পর্যন্ত সময় লাগতে পারে।
- অ্যালকোহলিক বা লিভার সিরোসিসঃ অ্যালকোহলিক বা লিভার সিরোসিস জনিত জন্ডিস সাধারণত দীর্ঘস্থায়ী হয় এবং লিভারের স্থায়ী ক্ষতি করে। চিকিৎসার পরও অনেক সময় পুরোপুরি সুস্থ হওয়া সম্ভব হয়ে ওঠেনা।
জন্ডিস থেকে দ্রুত সেরে ওঠার উপায়ঃ
জন্ডিসের দ্রুত সেরে উঠতে কিছু সাধারন স্বাস্থ্যকর অভ্যাস এবং অবশ্যই চিকিৎসক এর চিকিৎসা মেনে চলা অতীব গুরুত্বপূর্ণ যেমন-
- বিশ্রামঃ শরীরকে পূর্ণ বিশ্রাম দিতে হয়, যাতে লিভার নিজেকে পুনর্গঠন করতে সময় পায়।
- স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসঃ সহজপাচ্য ও কম ফ্যাট যুক্ত খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। প্রচুর পরিমাণে পানি ও তরল গ্রহণ করতে হয়, যাতে শরীর হাইড্রেট থাকে এবং টক্সিন গুলো সহজে বের হয়ে যেতে পারে।
- চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলাঃ জন্ডিসের সঠিক চিকিৎসা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। চিকিৎসকের নির্দেশ অনুযায়ী ওষুধ ও খাদ্য গ্রহণ রোগীর সুস্থতায় সহায়তা করে।
সাধারণত, জন্ডিসের প্রাথমিক লক্ষণ কমে আসা১-২ সপ্তাহ লাগে, তবে পুরোপুরি সুস্থ হতে এক মাস বা তার বেশি সময় লাগতে পারে। একমাস পর অবশ্যই একজন জন্ডিস আক্রান্ত রোগীকে চিকিৎসকের কাছে গিয়ে পরীক্ষা করতে হবে যে শরীরে আর তার কোন ভাইরাস পজেটিভ আছে কিনা। তা না হলে অদূর ভবিষ্যতে লিভার ক্যান্সার বা লিভার সিরোসিস এর মতো জটিল রোগে আক্রান্ত হতে পারে।
জন্ডিস রোগীর একদিনের একটি খাদ্য তালিকা
জন্ডিস রোগীদের জন্য এমন খাবার খাবার পরামর্শ দেওয়া হয় যা সহজপাচ্য, কম ফ্যাট যুক্ত এবং লিভারের জন্য সহায়ক। নিচে এমনই একটি দিনের জন্য উদাহরণস্বরূপ খাদ্য তালিকা দেওয়া হলো, যা জন্ডিস রোগীদের পুষ্টি সরবরাহ করতে সহায়ত করবে এবং লিভারের উপর থেকে চাপ কমাবে। আসুন দেখে নেই এই একদিনের খাদ্য তালিকা-
সকালের নাস্তা
- এক গ্লাস তাজা ফলের রসঃ বিশেষ করে পেঁপে, আপেল বা গাজরের রস, যা লিভারের জন্য উপকারী এবং হজমে সহায়ক।
- ওটমিল বা পোহাঃ মিলে ফাইবার এবং সহজপাচ্য কার্বোহাইড্রেট থাকে, যা জন্ডিস রোগীদের জন্য হালকা ও পুষ্টিকর। এতে কিছু ফলের টুকরো দিয়ে খাওয়া যেতে পারে।
- হালকা সেদ্ধ ডিমের সাদা অংশঃ লিভারে আক্রান্ত রোগীদের শরীরে প্রোটিনের প্রয়োজন রয়েছে। তাই হালকা সেদ্ধ ডিমের সাদা অংশ যাতে প্রোটিন রয়েছে এবং যা লিভারের পুনর্গঠনে সহায়ক এটি খেতে হবে।
সকালের মাঝখানে (মিড মর্নিং স্ন্যাক):
- কাঁচা পেঁপে বা পাকা কলাঃ পেঁপে লিভারের জন্য খুবই উপকারী এবং সহজে হজম হয়। কাঁচা একদম ছোট পেঁপে সেটিকে ধুয়ে সকালবেলা খালি পেটে চিবিয়ে খেতে হবে। এতে সহজে লিভার পরিষ্কার হয়। পাকা কলায় প্রাকৃতিক শর্করা এবং ফাইবার থাকে যার শরীরকে শক্তি দেয়। তবে পরিমিত খেতে হবে।
দুপুরের খাবারঃ
- সেদ্ধ চালের ভাতঃ সেদ্ধ চালের ভাত লিভারের জন্য সহজপাচ্য এবং এতে জটিল কার্বোহাইড্রেট থাকে।
- মসুর ডালের স্যুপঃ মসুর ডালে প্রচুর প্রোটিন রয়েছে যা হালকা ও সহজপাচ্য। এতে লবণ কম এবং তেল এড়িয়ে রান্না করতে হবে। এইভাবে খেলে জন্ডিসে আক্রান্ত রোগীদের লিভারের জন্য বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
- সবজিঃ লাউ, কুমড়া, শিম বা পটল দিয়ে তৈরি সবজি কম মসলা দিয়ে সেদ্ধ করে খাওয়া যেতে পারে।
- দইঃ মিষ্টি দই বা টক দই বাড়তি পুষ্টি এবং হজমের জন্য সামান্য খাওয়া যেতে পারে।
- বিকালের নাস্তাঃ
- এক গ্লাস নারকেলের পানিঃ এতে প্রাকৃতিক ইলেক্ট্রোলাইট থাকে যার শরীরে হাইড্রেটেড রাখে এবং লিভারের জন্য উপকারী।
- একটু মুড়ি ও কাঁচা শসাঃ হালকা ও সহজে হজম যজ্ঞ তাই এটি বিকালের জন্য উপযুক্ত।।
রাতের খাবারঃ
- সবজি স্যুপঃ লাউ, গাজর বা কুমড়ার স্যুপ হালকা এবং পুষ্টিকর, যা লিভারের জন্য অতীব সহায়ক।
- এক টুকরো রুটি বা সেদ্ধ ভাতঃ রাতে হালকা খাবার খাওয়া ভালো যা সহজেই হজম হয়। কারণ লিভারে আক্রান্ত রোগীদের খাবার যতটা সহজপাচ্য হবে ততই ভালো।
- পাকা পেঁপেঃ রাতের শেষে কিছু পাকা পেঁপে খেতে পারেন যা লিভারের জন্য খুব ভালো। কারণ পাকা পেঁপে খাবার হজম করতে সাহায্য করে।
এই খাদ্য তালিকায় জন্ডিস রোগীর জন্য উপকারী একটি মাধ্যম, তবে সঠিক পরিমাণ এবং খাদ্য তালিকার উপাদান নির্ধারণে চিকিৎসকের পরামর্শ অবশ্যই নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। কারণ জন্ডিস যেহেতু একটি মরণব্যাধি অসুখ তার কারনে আমাদের অনেক গুরুত্বের সাথে চিকিৎসা করতে হবে।
জন্ডিস হলে কি খেতে নেই
পৃথিবীর সবচাইতে সুখ হল নিজের সুস্থকর জীবন। জীবন যদি সুস্থ না থাকে তবে কোন কিছুই ভালো লাগেনা। এই জন্য সুস্থ জীবন একটি অনবদ্য উপহার। বিভিন্ন ধরনের অসুখ রয়েছে তবে এরমধ্যে কিছু অসুখ জীবনের সাথে যুদ্ধ করতে হয়, তারই একটি বহিঃপ্রকাশ জন্ডিস।
জন্ডিস হলে লিভারের কার্যক্ষমতা হ্রাস পায়, খাদ্য নির্বাচনে বিশেষ যত্ন নেওয়া প্রয়োজন। কিছু খাবার লিভারের উপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করতে পারে এবং রোগের উন্নতিতে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। নিচে এমন কিছু খাবারের বিস্তারিত বর্ণনা দেওয়া হল যা জন্ডিসের রোগীদের এড়িয়ে চলতে হবে-
ফ্যাট বা চর্বি সমৃদ্ধ খাবারঃ
- ভাজা পোড়া খাবারঃ তেলে ভাজা খাবার যেমন ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, পাকোড়া এবং সমচা লিভার জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর কারণ এগুলো হজমে সমস্যা সৃষ্টি করে। মোটকথা লিভারের অসুস্থতার জন্য যেকোনো ধরনের ভাজাপোড়া খাবার এড়িয়ে চলতে হবে।
- দুধের ঘন চর্বিযুক্ত পণ্যঃ ফুল ক্রিম দুধ, পনির এবং ঘি- এর মত খাবারে উচ্চমাত্রার সেচুরেটেড ফ্যাট থাকে যা লিভারের ক্ষতি বাড়ায়। কারণ এগুলো লিভার হজম করতে পারে না তাই এই ধরনের খাবার এড়িয়ে চলতে হবে।
প্রক্রিয়াজাত খাবারঃ
- জাঙ্ক ফুড ও ফাস্টফুডঃ বার্গার, পিৎজা প্রক্রিয়াজাত মাংস যেমন সসেজ, সালামি ইত্যাদিতে ট্রান্স ফ্যাট ও সংরক্ষণকারী উপাদান থাকে, যা লিভারের জন্য ক্ষতিকর।
- কৃত্রিম মিষ্টি ও সফট ড্রিংকসঃ কোমল পানীয়, ক্যান্ডি ও ডেজার্টে উচ্চমাত্রার চিনি থাকে, যা লিভারে অতিরিক্ত কারণ হতে পারে। এই জন্য প্রক্রিয়াজাত খাবার আমাদেরকে লিভারের সুস্থতায় এড়িয়ে চলতে হবে।
বেশি লবণযুক্ত খাবারঃ
- লবণাক্ত স্ন্যাকস ও প্রক্রিয়া যা খাবারঃ চিপস, প্রক্রিয়াজাত সুপ এবং প্যাকেটজাত খাবার এ অতিরিক্ত লবণ থাকে, যা লিভারে প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে এবং শরীরে পানি জমিয়ে ফেলে। যার জন্য এই সকল খাবার আমাদের খাবার তালিকা থেকে বাদ দিতে হবে।
- আচার ও সসঃ এসব খাবারে অতিরিক্ত লবণ ও বিভিন্ন ধরনের কৃত্রিম মশলা থাকে যা লিভারের জন্য ক্ষতিকর।
প্রোটিন সমৃদ্ধ লাল মাংসঃ
- গরু ও খাসির মাংসঃ এতে বেশি পরিমাণে প্রোটিন ও চর্বি থাকে, যা লিভারের হজম প্রক্রিয়ায় সমস্যা সৃষ্টি করে। জন্ডিসের সময় এসব মাংস এড়িয়ে চলা উচিত কারণ এটি বিলিরুবিনের মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে।
অ্যালকোহলঃ
- অ্যালকোহলঃ এটি লিভারের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর এবং লিভারের পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়ায় বাধা সৃষ্টি করে। জন্ডিসের সময় অ্যালকোহল সেবন লিভারের উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে। প্রতিদিন অ্যালকোহল খেলে লিভার সিরোসিস বা লিভার ক্যান্সার এর মত জটিল রোগে আক্রান্ত হতে পারি। তাই আমাদের জীবন থেকে অ্যালকোহল মুক্ত রাখতে হবে।
কফি ও ক্যাফেইন যুক্ত পানীয়ঃ
- কফি ও এনার্জি ড্রিংকঃ এতে থাকা ক্যাফেইন লিভারের ওপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করতে পারে এবং জন্ডিস রোগীর জন্য ব্যাপকভাবে ক্ষতিকর হতে পারে। এজন্য আমাদের কফি ও বিভিন্ন ধরনের সফট ড্রিঙ্কস এড়িয়ে চলতে হবে।
সুতরাং, জন্ডিসের সময়ই এই খাবারগুলো অবশ্যই খাবারের তালিকা থেকে দূরে রাখতে হবে। কারণ একটি সুস্থকর খাবার তালিকা একটি সুস্থ জীবন দিতে পারে। যেহেতু সুস্থতা জীবনের মূল চাবিকাঠি। লিভার কে বিশ্রাম দিয়ে সহজ পাচ্য, পুষ্টিকর এবং লো ফ্যাট যুক্ত খাবার গ্রহণ করতে হবে, যা লিভারের পুনরুদ্ধারে সাহায্য করবে।
জন্ডিস প্রতিরোধে করণীয়
জন্ডিসের সংক্রমণ মূলত ভাইরাসজনিত কারণে হতে পারে। হেপাটাইটিস এ এবং ই ভাইরাস সাধারণত দূষিত পানি বা খাদ্যের মাধ্যমে ছড়ায়। হেপাটাইটিস বি এবং সি ভাইরাস আক্রান্ত ব্যক্তির রক্ত, শরীরের তরল পদার্থ বা সংক্রমিত সুদের মাধ্যমে ছড়ায়। এছাড়া আক্রান্ত মায়ের থেকে শিশুর মধ্যেও এটি ছড়াতে পারে।
সুতরাং লিভারের কার্যক্ষমতা রাশের কারণে জন্ডিস হয় এবং এটি নিরাময়ে লিভারের কার্যকারিতা পুনরুদ্ধার করতে চিকিৎসা প্রয়োজন। জন্ডিস প্রতিরোধে কিছু গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্যকর অভ্যাস এবং সচেতনতা অবলম্বন করা প্রয়োজন, কারণ এটি লিভারের কার্যকারিতার উপর নির্ভরশীল একটি সমস্যা।
জন্ডিসের মূল কারণ হলো লিভার সংক্রমণ ও দূষিত খাদ্য এবং পানীয়। তাই কিছু নির্দিষ্ট করণীয় মেনে চললে জন্ডিস থেকে সুরক্ষা বা মুক্তি পাওয়া সম্ভব। জন্ডিস প্রতিরোধের জন্য আমাদের কিছু করণীয় কাজ আপনাদের জন্য নিম্নে দেয়া হলো-
পরিশেষে বলা যায় যে, এই অভ্যাসগুলো মেনে চললে জন্ডিস প্রতিরোধ করা অনেকটাই সম্ভব এবং লিভার সুস্থ রাখা যায়। পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুম, বিশ্রাম, স্বাস্থ্যকর খাবার, সুস্থ পরিবেশ সবকিছু নির্ভর করে আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখার জন্য। অতএব একটি সুস্থ জীবনের জন্য আমাদের লিভারের যত্ন রাখতে হবে।
মন্তব্য | জন্ডিস রোগীর খাবার তালিকা
জন্ডিস রোগীর খাবার তালিকা সাজাতে গেলে প্রধান বিষয়টি হল লিভারের ওপর চাপ না ফেলা এবং তাকে সুস্থ করার মতো সহজপাচ্য, পুষ্টিকর খাবার নির্বাচন করা। রোগীর জন্য প্রতিটি খাবার যেন হয় প্রশান্তির বার্তা, যেন তার প্রতিটি আহারে থাকে লিভারের সুরক্ষার উপাদান।প্রথমেই রোগীর প্রতিদিনের তালিকায় রাখা উচিত সহজে হজম হয় এমন খাবার।
লিভার যেন নতুন করে আবার আপন শক্তিতে ভরে ওঠে, নতুন আলোর বার্তা নিয়ে রোগীকে আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনে। আমরা প্রত্যেকেই যেন আমাদের নিজেদের সুস্থতার কথা চিন্তা করি। আমার এই ব্লগে একজন জন্ডিস রোগীর সকল ধরনের তথ্য দেওয়ার চেষ্টা করেছি। ভুল ত্রুটি এবং ক্ষমা মার্জনিয় ভাবে দেখবেন এবং আপনাদের সাথে দেখা হবে পরবর্তী কোনো ব্লগে।
প্রশ্ন ২৪ ব্লক এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url