কলার খোসা দিয়ে রুপচর্চা
কলার খোসা দিয়ে রুপচর্চা ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ানো, দাগ কমানো এবং প্রাকৃতিকভাবে ত্বক মসৃণ করার একটি সহজ উপায়। কলার খোসা হতে পারে আপনার ত্বকের যত্নের জন্য একটি চমৎকার সমাধান। এর মধ্যে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ভিটামিন যা এর উজ্জ্বলতা বাড়ায়।
কলার খোসার ভেতরের দিকটি আপনার ত্বকে ঘুষে নিন এবং ফলাফল দেখুন। চোখের নিচে কালো দাগ এবং ঠোঁটের শুষ্কতা দূর করতেও কলার খোসার জুড়ি নেই। তাহলে চলুন আজকে আমার এই ব্লগ জুড়ে, কালার খোসা দিয়ে রূপচর্চা করার বিভিন্ন উপায় সম্পর্কে জানি।
পোস্ট সূচিপত্রঃ কলার খোসা দিয়ে রূপচর্চা
- কলার খোসা দিয়ে রূপচর্চা
- পাকা কলার ফেসপ্যাক
- কলার খোসার ব্যবহার
- কলার খোসা দিয়ে সার তৈরি
- কলার খোসার উপকারিতা
- কলার খোসার অপকারিতা
- কলা দিয়ে মুখ ফর্সা
- চুলের যত্নে কলার খোসা
- কলা দিয়ে ফেসিয়াল
- লেখকের মন্তব্যঃ কলার খোসা দিয়ে রূপচর্চা
কলার খোসা দিয়ে রূপচর্চা
কলার খোসা দিয়ে রূপচর্চা ত্বকের যত্নে একটি প্রাকৃতিক ও কার্যকরী পদ্ধতি। আমরা বর্তমান সময়ে সবাই আমাদের চেহারার সৌন্দর্য নিয়ে সচেতন। আমরা অনেকেই অনেক কিছুই ব্যবহার করি সৌন্দর্য সুরক্ষিত রাখার জন্য। কিন্তু কলা যে আমাদের এত উপকারে আসে তা আমরা অনেকেই জানিনা। নিচে কলে খোসা দিয়ে রূপচর্চার কিছু পদ্ধতি দেখানো হলো-
- প্রাকৃতিক উপায়ে ত্বকের যত্নঃ কলার খোসা খুব সহজেই পাওয়া যায় এবং এটি একটি প্রাকৃতিক উপাদান, যা আমাদের ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে। কলার খোসায় রয়েছে ভিটামিন এ, বি, সি এবং ই, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, জিংক, পটাশিয়াম এবং লুটেইন যা ত্বকের বলিরেখা কমাতে, উজ্জ্বলতা বাড়াতে এবং বিভিন্ন ধরনের ত্বকের সমস্যা সমাধান করে।
- ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতেঃ কলার খোসা প্রাকৃতিক ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কলার খোসার ভেতরের দিকটি ত্বকে ঘষে নিলে আমাদের ত্বক উজ্জ্বল ও মসৃণ হয়। কলা ত্বকের মৃতকোষ দূর করে এবং ত্বকের প্রাকৃতিক উজ্জ্বলতা রক্ষা করে।
- দাগ ও ব্রণ দূরীকরণঃ কলার খোসা আমাদের ত্বকের দাগ ও ব্রণ দূর করতে অনেক সাহায্য করে। খোসার ভেতরের অংশ সারাম মুখে লাগিয়ে ১০ থেকে ১৫ মিনিট অপেক্ষা করে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে নিন। এর ফলে আপনার মুখের ব্রণ এবং দাগ দুটোই দূর হবে। খোসাদ ভিতরের অংশটুকু মুখের দাগ হালকা করার জন্য খুবই কার্যকরী উপায়।
- বলিরেখা ও বার্ধক্য প্রতিরোধঃ আমরা প্রায় সবাই মুখের বলিরেখার জন্য বা বার্ধক্য প্রতিরোধ করার জন্য অনেক কিছুই ব্যবহার করি। কলার খোসায় থাকে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান যা ত্বকের বলে রেখা কমাতে সাহায্য করে এবং ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা বজায় রাখতে সাহায্য করে। এটি ত্বককে মসৃণ ও কমল রাখি। তাই বলিরেখাও বার্ধক্য প্রতিরোধে করার খোসার ব্যবহার অতুলনীয়।
- চোখের নিচের ফোলা ভাব দূর করেঃ চোখের নিচে ফোলা ভাব দূর করতে কলার খোসার ব্যবহারে জুরি নেই। কলার খোসার কিছু টুকরা চোখের উপর রেখে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করুন দেখবেন আপনার চোখের নিচের ফোলা ভাব বা কালো দাগ অনেকখানি কমে গেছে। কলার খোসা ব্যবহারে ফোলা ভাব কমিয়ে তাকে সতেজ করে।
- ঠোটের শুষ্কতা দূর করতেঃ ঠোঁটের শুষ্কতা দূর করতে কলার খোসা ব্যবহার করতে পারেন। খোসার ভেতরের অংশ ঠোঁটে ঘষুন এবং ১০ মিনিট রেখে দিন, এতে ঠোঁটে শুষ্কতা কমে গিয়ে অনেক নরম এবং মসৃণ দেখায়।
কলার খোসার ব্যবহারের সহজ উপায়ঃ কলার খোসা ব্যবহারের কিছু উপায় রয়েছে যা নিম্নে দেয়া হলো-
- প্রথমে একটি পাকা কলা থেকে খোসা ছাড়িয়ে নিন
- খোসার ভেতরের দিকটি ত্বকের প্রয়োজনীয় স্থানে ঘষে নিন
- ১০ থেকে ১৫ মিনিট পর হালকা কুসুম গরম পানি দিয়ে প্রয়োজন স্থান ধুয়ে নিন
পরিশেষে বলা যায় যে কলা খোসা ত্বকের যত্নে একটি সহজ, সাশ্রয়ী এবং প্রাকৃতিক উপাদান। এটি তাদের উজ্জ্বলতা বাড়াতে, বলিরেখা কমাতে, চোখের ফোলা ভাব দূর করতে, ঠোঁটের শুষ্কতা রক্ষার করতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। রাসায়নিক মুক্ত এই পদ্ধতি নিয়মিত অবলম্বন করে আপনি আপনার ত্বকের কোমল, মসৃণ প্রাণবন্ত করতে পারেন।
পাকা কলার ফেসপ্যাক
পাকা কলার ফেসপ্যাক ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে এবং ত্বকের ডাক দূর করতে প্রাকৃতিক একটি কার্যকরী সমাধান। পাকা কলা শুধু একটি স্বাস্থ্যকর খাবার নয় এটি ত্বকের যত্নেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এতে রয়েছে ভিটামিন এ, বি, সি এবং ই। পাকা কলার খোসায় প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও পটাশিয়াম থাকায় এটি ত্বকের যত্নে উপযোগী।
পাকা কলার ফেস প্যাক তৈরির উপকরণঃ ত্বকে ব্যবহার করার জন্য ফেসপ্যাক এর জুরি নেই। ত্বকে পাকা কলার ফেসপ্যাক ব্যবহারের উপকরণগুলো নিম্নরূপ-
- একটি মাঝারি আকারের পাকা কলা
- এক চামচ মধু ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখার জন্য
- এক টেবিল চামচ দই, দই ত্বকের মৃত কোষ কে দূর করে
- কয়েক ফোঁটা লেবুর রস কারণ লেবুর রস মুখে দাগ হালকা করতে চেষ্টা করে ( তবে যাদের ত্বক সংবেদনশীল তারা লেবু ব্যবহার নাও করতে পারেন)
ফেসপ্যাক তৈরীর পদ্ধতিঃ ত্বকে ব্যবহার করার জন্য কিভাবে ফেসপ্যাক তৈরি করবেন তার নিম্নে দেয়া হলো-
- প্রথমে একটি পাকা কলা ভালোভাবে চটকে নিন
- তারপর চামচ মধু, দই এবং লেবুর রস মিশিয়ে সুন্দর করে মসৃণ ভাবে পেস্ট তৈরি করে নিন
- কলা সহ অন্যান্য উপাদানগুলো একসাথে মিশিয়ে ফেসপ্যাক টি ব্যবহারের জন্য প্রস্তত
ব্যবহারের পদ্ধতিঃ পাকা কলার ফেসপ্যাক কিভাবে ত্বকে ব্যবহার করবেন তা নিম্নে দেয়া হলো-
- প্রথমে মুখ পরিষ্কার করে শুকিয়ে নিন
- ফেসপ্যাকটি এবার মুখে এবং গলায় সমানভাবে লাগিয়ে নিন
- এরপর ১৫ থেকে ২০ মিনিট অপেক্ষা করুন যাতে একটি আপনার ত্বকে ভালোভাবে শুকিয়ে যায়
- এরপর হালকা গরম পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন এবং তোয়ালে দিয়ে চেপে চেপে মুখের পানি শুকায় নিন
পাকা কলার ফেসপ্যাক এর উপকারিতাঃ তাকে পাকা করার ফেসপ্যাক অনেক উপকার করে যা-
- ত্বকের উজ্জ্বলতাঃ পাকা কলা ত্বকের গভীর থেকে ময়লা পরিষ্কার করে ত্বকের মলিনতা দূর করে উজ্জ্বলতা বাড়ায়।
- শুষ্কতা দূর করাঃ পাকা কলা এবং মধুর মিশ্রন এই দুইটি মিলে ত্বকের শুষ্কতা দূর করে।
- ব্রণ প্রতিরোধঃ মুখের ব্রণ প্রতিরোধ করার জন্য পাকা কলার ফেসপ্যাক এর জুড়ি নেই। দইয়ের ল্যাকটিক অ্যাসিড ত্বকের মৃত কোষ দূর করে ব্রণের ঝুঁকি কমায়।
- দাগ হালকা করেঃ পাকা কলা এবং লেবুর মিশ্রণের ফেসপ্যাক মুখের দাগ দূর করতে সাহায্য করে।
- বলিরেখা দূর করেঃ পাকা কলায় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এর পরিমাণ বেশি থাকায় ত্বকের গুলি রেখা কমাতে সাহায্য করে এতে বয়সে ছাপ কম দেখায়।
সতর্কতাঃ যাদের মুখের ত্বক অতিরিক্ত সংবেদনশীল তারা অবশ্যই লেবুর রস বাদ দিবেন। লেবুর রস দিয়ে ফেসপ্যাক মুখে দেওয়ার আগে অবশ্যই পরীক্ষা করে নিবেন।
আরও পড়ুনঃ মিল্ক শেক এর ১০টি উপকারিতা ও অপকারিতা
পরিশেষে বলা যায় যে পাকা কলার ফ্রেশ ব্যাগ একটি সাশ্রয়ী এবং প্রাকৃতিক উপায়ে যা ত্বকের উজ্জ্বলতা, আদ্রতা এবং প্রাণবন্ত রাখতে সাহায্য করে। প্রতিদিন পাকা কলার ফেসপ্যাক ব্যবহারে ত্বকের উজ্জ্বলতা বেড়ে যায় এবং বলিরেখা কম পড়ে। এতে ত্বকের বয়সের ছাপ দূর করে। পাকা কলার ফেসপ্যাক ত্বকের জন্য নিরাপদ।
কলার খোসার ব্যবহার
কলার খোসার ব্যবহার ত্বকের যত্নে, চুলের যত্নে, দাঁতের উজ্জ্বলতা এবং ঘরোয়া পরিষ্কারের প্রাকৃতিক ও ও গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। কলার খোসা সাধারণত আমরা ফেলে দেই তবে এটি দিয়ে যে বিভিন্ন ধরনের কাজ হয় এটা আমরা অনেকেই জানিনা। যেমন ত্বক, চুল এবং ঘরোয়া পরিষ্কার এ এর ব্যবহার অনেক, এটি একটি পরিবেশবান্ধব।
কলার খোসায় ভিটামিন এ, বি, সি, ই এবং পটাশিয়াম ও প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে যার জন্য আমাদের ত্বক ও চুলের জন্য খুবই উপকারী। বলার খোসা ফেলে না দিয়ে আমরা এটিকে আমাদের বিভিন্ন উপকারে ব্যবহার করুন যেমন-
ত্বকের যত্নে কলার খোসাঃ কলার খোসা যে আমাদের ত্বকের যত্নে ব্যবহার করা হয় তা আমরা অনেকেই জানিনা। আমরা অনেকেই কলার খোসা ফেলে দেই। ত্বকের যত্নে এ কলার খোসা যেভাবে উপকারে আসে তা হল-
- মুখের ব্রণ ও দাগ দূর করেঃ কলার খোসা আমাদের মুখের ব্রণ ও দাগ দূর করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। খোসার ভেতরের অংশটি ত্বকে ঘষে ১০-১৫ মিনিট অপেক্ষা করে হালকা কুসুম গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এতে আপনার মুখের ব্রণ বা কালো দাগ হালকা হয়ে যাবে।
- চোখের ফোলা ভাব দূর করতেঃ কলার খোসার টুকরো গুলো চোখের নিচে রেখে কয়েক মিনিট অপেক্ষা করুন। কিছুক্ষণ পর পরিষ্কার করে দেখুন চোখের ফোলা ভাব দূর হয়ে গেছে এবং অনেক ক্লান্তিও কমে যায়।
- বলি রেখা দূর করতেঃ কলার খোসা ত্বকের বলে রেখা দূর করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এতে থাকা প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বকের বার্ধক্যের লক্ষণ আমাই এবং ত্বককে টানটান রাখে।
চুলের যত্নে কলার খোসাঃ কলার খোসা চুলের যত্নেও ব্যবহার করা যায়। চুলের আদ্রতা বজায় রাখার জন্য কলার খোসা ব্যবহার করা হয়। চটকে নেওয়া কলার খোসা চুলে লাগিয়ে বিশ মিনিট পর ধুয়ে ফেললে চুল নরম ও মসৃণ হয়। আমাদের চুলের ভেঙ্গে যাওয়া বা আগা ফাটা এবং শুষ্ক ভাব কমায়। চুলের যত্নে কলার খোসার অবদান অনেক।
দাঁতের যত্নে কলার খোসাঃ কলার খোসা শুধু ত্বকের যত্ন বা চুলের যত্নে ব্যবহৃত হয় না এটি কে দাঁতের যত্নেও ব্যবহার করা যায়। কলার খোসায় থাকা খনিজ পদার্থ দাঁতের হল ভাব দূর করতে সাহায্য করে। কলার ভিতরের অংশ দাঁতে ঘষে কয়েক মিনিট অপেক্ষা করুন এবং ব্রাশ করুন। এটি দাঁত কে উজ্জ্বল এবং পরিষ্কার রাখে।
ঘর পরিষ্কারে কলার খোসাঃ কলার খোসা যে আমাদের দৈনন্দিন জীবনেও ব্যবহৃত হয় তা আমরা অনেকেই জানিনা যেমন-
- চামড়া ও জুতার পালিশঃ কলার খোসা দিয়ে চামড়ার পণ্য যেকোনো ধরনের ব্যাগ বা জুতা ঘষে নিলেই চক করে।
- গাছের পাতা পরিষ্কারঃ বাড়িতে শোভা বর্ধনের জন্য যে গাছপালাগুলো রাখা হয় তা কলার খোসা দিয়ে পরিষ্কার করলে পাতা উদদোল দেখায়।
উদ্যান তত্ত্বে কলার খোসাঃ
- জৈব সার হিসেবে কলার খোসা মাটিতে পুঁতে দিলে তা গাছে পুষ্টি বৃদ্ধি করে
- কীটনাশক হিসেবে কলার খোসা গাছ রাখলে এটি কিছু পোকামাকড় দূর করতে সাহায্য করে
পরিশেষে বলা যায় যে কলার খোসা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে একটি সাশ্রয়ী ও প্রাকৃতিক উপাদান যা ত্বক ও চুলের যত্নে, দাঁতের পরিচর্যা এবং ঘরোয়া কাজে অসাধারণ সাহায্য করে। পরিবেশবান্ধব এই উপাদানটি ব্যবহার করে আমরা খুব সহজেই আমাদের জীবনের সমস্যাগুলো দূর করতে পারি। তাই ব্যবহার করে এবং উপকারিতা উপভোগ করুন।
কলার খোসা দিয়ে সার তৈরি
কলার খোসা দিয়ে সার তৈরি করলে তা মাটির পুষ্টি বৃদ্ধি করে এবং গাছের উন্নতি বৃদ্ধিতে নিশ্চিত ভূমিকা পালন করে। কলার খোসা যে শুধু আমাদের এর জন্য উপকার করে না এটি আমাদের প্রাকৃতিক পরিবেশের জন্যও উপকারী। কলার খোসা দিয়ে আদর্শ সার তৈরি করা যায় জাজৈ বউ উপাদান বা কম্পোস্ট সার হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
কলার খোসায় থাকা পটাশিয়াম, ফসফরাস, ক্যালসিয়াম এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ খনিজ পদার্থ বিদ্যমান যা মাটির পুষ্টি বাড়াতে সাহায্য করে এবং গাছের জন্য ভীষণভাবে উপকারী। কলার খোসা দিয়ে সার তৈরির প্রক্রিয়া খুবই সহজ এবং এটি মাটির স্বাস্থ্য রক্ষা করে সাহায্য করে।
কলার খোসা দিয়ে সার তৈরির উপকরণঃ
- পরিমাণ মতো পাকা কলার খোসা
- পরিমাণ মতো পানি
- একটি ছোট বা মাঝারি আকারের পাত্র পাত্র
- যদি সম্ভব হয় তবে কিছু অন্যান্য উপাদান যেমন শুকনো পাতা বা পুরনো অন্যান্য ফলের খোসা
সার তৈরির প্রক্রিয়াঃ
- কলার খোসা সংগ্রহ করুনঃ প্রথমে বেশ কিছু পাকা কলার খোসা সংগ্রহ করুন। এটি দেব সার তৈরিতে ব্যবহৃত হবে আপনি যতটা প্রয়োজন মনে করেন ঠিক ততটাই খোসা নিতে পারেন। কলার খোসাগুলো ছোট ছোট টুকরো করে কেটে নিন। এটি সারের পুষ্টি উপাদান জাগ্রত মাটিতে শোষিত হতে সাহায্য করবে।
- পানীয় খোসা মেশানঃ কাঁটা কলার খোসা গুলো একটি পাত্রে রাখুন এবং এর উপরে পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি ঢালুন। কিছু সময় অর্থাৎ 24 থেকে 48 ঘন্টা পানি এবং কলার খোসা একসাথে মিশিয়ে রাখুন। এই প্রক্রিয়ায় কলার খোসা থেকে পটাশিয়াম, ফসফরাস, ক্যালসিয়াম এবং অন্যান্য খনিজ উপাদান পানিতে মিশে যাবে।
- পর্যাপ্ত সময় অপেক্ষা করুনঃ এই মিশনটিকে কয়েকদিন যাবত রেখে দিন যাতে খোসা এবং পানি একত্রিত হয়ে একটি প্রাকৃতিক জৈব সার তৈরি হতে পারে। কিছুদিন পর এটি খুব ভালোভাবে সুগন্ধি কম্পোস্টের মত হয়ে উঠবে।
- মাটি ও গাছের কাছে প্রয়োগঃ এই প্রক্রিয়ায় সার তৈরি হওয়ার পর এটি মাটিতে প্রয়োগ করুন। খোলামেলা মাটিতে সঠিকভাবে প্রয়োগ করলে গাছের শিকড় পুষ্টি পাবে এবং সুষ্ঠুভাবে বেড়ে উঠবে।
কলার খোসা দিয়ে সার তৈরির উপকারিতাঃ কলার খোসা দিয়ে সার তৈরি করে আমরা বিভিন্ন গাছে বা বিভিন্ন জমিতে ব্যবহার করতে পারি যেমন-
- কলার খোসার মধ্যে থাকা পটাশিয়াম ক্যালসিয়াম এবং ফসফরাস গাছের জন্য প্রয়োজনীয় পরিমাণ পুষ্টির যোগান দেয়।
- কলার খোসার সার মাটির উর্বরতা বাড়ায় এবং মাটির কাঠামো উন্নত করে এতে যেকোনো ধরনের ফসল ভালো উৎপন্ন হয়।
- কলার খোসা দিয়ে সার তৈরি করলে পরিবেশের উপর কোন খারাপ প্রভাব পড়ে না কারন এটি একেবারে জৈব উপাদান
- কলার খোসার এইসার গাছের শিকড় কে শক্তিশালী করে এবং ফুল ফল ও পাতার বৃদ্ধিতে উন্নতি সাধন করে
পরিশেষে বলা যায় যে কলার খোসা দিয়ে সার তৈরি একটি সাশ্রয়ী ই প্রক্রিয়া, পরিবেশবান্ধব এবং সহজ পদ্ধতি যা গাছের পুষ্টি বৃদ্ধি করে এবং মাটির উর্বরতা রক্ষা করে। কলার খোলার সার রাসায়নিক সার ব্যবহারের বিকল্প হিসাবে ব্যবহার করা যেতে পারে। নিয়মিতভাবে এই জৈব সার ব্যবহার করলে গাছের বৃদ্ধি আর ফলন উন্নত হয়।
কলার খোসার উপকারিতা
গলার খোসার উপকারিতা যা ত্বকের যত্ন, চুলের পুষ্টি, দাঁতের উজ্জ্বলতা, গাছের সার এবং ঘরোয়া পরিষ্কার সহ নানাভাবে উপকার করে থাকে। কলার খোসা সাধারণত অপ্রয়োজনীয় মনে করে আমরা ফেলে দেয়। কিন্তু এই কলার খোসা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে যে কত উপকারে আসে তা আমরা অনেকেই জানিনা।
আরও পড়ুনঃ কিভাবে পেটের চর্বি কমানো যায়
আমরা যদি কলার খোসার উপকারিতা সম্পর্কে জানি তাহলে তা আমরা কখনোই ফেলে দিব না বা অপচয় করব না। ত্বকের শুরু করে, মাটির উর্বরতা পর্যন্ত বিভিন্নভাবে আমাদের উপকার করে। এতে থাকা ভিটামিন এ, বি, সি, ই এবং এন্টিঅক্সিডেন্ট, পটাশিয়াম এবং প্রাকৃতিক তেল যা আমাদের বিভিন্নভাবে কাজে আসে।
ত্বকের যত্নে কলার খোসাঃ কলার খোসার এন্টিঅক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান যা ত্বকের জন্য অত্যন্ত উপকারী।
- দাগ দূর করতেঃ কলার প্রসার ভেতরের অংশ ত্বকের দাগ যুক্ত জায়গায় ঘষলে তাহালকা হয়ে যায়
- ব্রণ প্রতিরোধেঃ খোসার এন্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান ব্রণ কমায় এবং ত্বককে কোমল ও উজ্জ্বল রাখে
- বার্ধক্য প্রতিরোধেঃ এতে থাকা এন্টিঅক্সিডেন্ট যা ত্বকের বলিরেখা কমিয়ে ত্বককে টানটান রাখতে সাহায্য করে
দাঁতের যত্নে কলার খোসাঃ কলার খোসা দাঁতের হলদে ভাব দূর করতে অনেক সাহায্য করে।
- দাঁত উজ্জ্বল করতেঃ প্রসার ভেতরের অংশ দিয়ে দাঁত ঘষলে এতে থাকা পটাশিয়াম এবং ক্যালসিয়াম দাঁতের রং উজ্জ্বল করে
- ক্ষয় রোধের সহায়তাঃ এটি দাঁতের এনামেল রক্ষা করতে সাহায্য করে
চুলের যত্নে কলার খোসাঃ কলার খোসা চুলের জন্য একটি প্রাকৃতিক কন্ডিশনার হিসেবে কাজ করে।
- আদ্রতা বৃদ্ধিঃ চটকে নেওয়া কলার খোসা চুলে লাগিয়ে কিছুক্ষণ পর ধুয়ে ফেললে সেই চুল নরম ও মসৃণ হয়।
- খুশকি প্রতিরোধঃ করার খোসা আমাদের চুলের খুশকি প্রতিরোধ করতেও সাহায্য করে, খোসার ভিটামিন ও খনিজ চুলের শুষ্কতা কমিয়ে খুশকি দূর করে
গাছের যত্নে কলার খোসাঃ
- জৈব সারঃ কলার খোসা পচে সার হিসেবে ব্যবহার করলে তা গাছের পুষ্টি উপাদান বৃদ্ধি করে
- কীটনাশকঃ কলার খোসা গাছের গোড়ায় রাখলে কিছু পোকামাকড় দূরে থাকে
ঘরোয়া কাজে কলার খোসাঃ
- জুতা ও চামড়ার পণ্য পরিষ্কারঃ খোসা দিয়ে ঘষলে চামড়া এবং জুতা তৈরি বিভিন্ন জিনিস পরিষ্কার ও উজ্জ্বল দেখায়
- গাছের পাতা পরিষ্কারঃ বাড়িতে শোভাবর্ধন ধুলোমাখা গাছের পাতা কলার খোসা দিয়ে মুছলে তা উজ্জ্বল হয়
পুষ্টিগুণঃ কলার খোসায় থাকা ভিটামিন, পটাশিয়াম এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট মাটি, ত্বক এবং চুলের জন্য পুষ্টি যোগায়
পরিশেষে বলা যায় যে কলার খোসা শুধু পরিবেশবান্ধব নয় এটি দৈনন্দিন জীবনের বিভিন্ন সমস্যার সমাধানের কার্যকরী একটি পদ্ধতি। এটি ত্বক, দাঁত এবং গাছের যত্নে ব্যবহার করলে প্রাকৃতিক ভাবে অনেক উপকার পাওয়া যায়। তাই কলার খোসা ফেলে না দিয়ে তা আমরা অবশ্যই আমাদের প্রতিদিনের কাজে ব্যবহার করব যা আমাদের অনেক উপকারে আসবে।
কলার খোসার অপকারিতা
কলার খোসা অপকারিতা হল এটি ব্যবহার করার পর অবশ্যই তা সঠিকভাবে পরিষ্কার না করলে তাকে অ্যালার্জি বা সংবেদনশীলতার সমস্যা দেখা দিতে পারে। কলার খোসার বহুমুখী উপকারী উপাদান থাকলেও কিছু অপকারিতা রয়েছে। খোসার পুষ্টি ও কার্যকারিতা যেমন প্রশংসনীয় তেমনি ভুল ভাব অতিরিক্ত ব্যবহারে এটি সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
ত্বক, স্বাস্থ্য এবং পরিবেশের জন্য কিছু সম্ভাব্য ঝুঁকি রয়েছে যা জানলে এর সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করা সম্ভব। নিচে এর অপকারিতা সম্পর্কে বর্ণনা দেয়া হলো-
তাকে অ্যালার্জি ঝুঁকিঃ গলার খোসায় কিছু প্রাকৃতিক রাসায়নিক উপাদান থাকে যা সংবেদনশীল তাকে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে এবং ক্ষতি করে যেমন-
- অ্যালার্জিঃ সরাসরি কলার খোসা ত্বকে ঘষার ফলে চুলকানি বা লালচে দাগ বা জ্বালাপোড়া হতে পারে।
- অতিরিক্ত ব্যবহারঃ আমরা যদি প্রতিদিন অতিরিক্ত করার খোসা ব্যবহার করি তাহলে ত্বকের যে প্রাকৃতিক তেল রয়েছে তা ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং ত্বককে শুষ্ক করে দেয়।
চুলে অতিরিক্ত তৈলাক্ত ভাবঃ আমরা চলে কলার খোসা ব্যবহার করলে চুলের আর্দ্র যোগায় তবে অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে চুলকে অস্বাভাবিকভাবে তৈলাক্ত করতে পারে।
- চুলের ঝলমল ভাব হারানোঃ কলার খোসায় থাকা তেল চুলে সঠিকভাবে পরিষ্কার না করলে চুল চটচটে ও ভারী হয়ে যায়।
- স্ক্যাল্পের সংক্রমণঃ কিভাবে কলার খোসা ধোয়ানা হলে খোসার অবশিষ্ট অংশ স্ক্যাল্পের জমে গিয়ে চুল পড়ার কারণ হতে পারে।
পরিবেশের সমস্যা সৃষ্টিঃ যদিও করার খোসা আমাদের জন্য পরিবেশ বান্ধব তবে সঠিকভাবে বচন না হলে এটি একটি সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে।
- অপচয়ঃ যত্রতত্র ফেলা হলে এটি দুর্গন্ধ ছড়ায় এবং কীটপতঙ্গ কে আকর্ষণ করে
- পচনঃ অপরিকল্পিতভাবে ফেলা খোসা পরিবেশে দূষণ সৃষ্টি করতে পারে।
অতিরিক্ত ফাইবারে সমস্যাঃ কিছু মানুষ কলার খোসা খাওয়ার অভ্যাস করেন কারণ এতে রয়েছে প্রচুর ফাইবার। তবে অতিরিক্ত ফাইবার হজমের সমস্যা এবং পেটের অস্বস্তি সৃষ্টি করতে পারে।
ব্যবহারে সর্তকতাঃ
- পরিষ্কার রাখাঃ ব্যবহারের আগে খোসা ভালোভাবে ধুয়ে নিন কারণ এতে রাসায়নিক বা মাটি লেগে থাকতে পারে
- পরীক্ষা করাঃ সরাসরি ব্যবহার করার আগে ত্বকের একটি ছোট অংশে পরীক্ষা করুন, যাতে এলার্জি বা প্রতিক্রিয়া বোঝা যায়।
- সঠিক পদ্ধতিঃ অতিরিক্ত ব্যবহার না করে সঠিক সময়ে এবং মাত্রায় খোসার উপকারিতা গ্রহণ করুন
পরিশেষে বলা যায় যে যদিও কলার খোসা একটি বহুমুখী উপাদান তবে এর সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত না করে যা ত্বক, চুল বা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। সঠিক পদ্ধতিতে ব্যবহার করলে যেমন এর উপকারিতা পাওয়া সম্ভব তেমনি অসতর্ক হলে এর অপকারিতা। তাই কলার খোসার গুনাগুনের পাশাপাশি এর ব্যবহার জনিত ঝুঁকিও মনে রাখা প্রয়োজন।
কলা দিয়ে মুখ ফর্সা
কলা দিয়ে মুখ ফর্সা করার জন্য আমাদের নিয়মিত কলার খোসার ভেতরের অংশ মুখের ত্বকে ঘুষন এতে ত্বকের দাগ হালকা হয়ে মুখ ফর্সা ও উজ্জ্বল করতে সাহায্য করবে। কলার খোসা শুধুমাত্র কলার আবরণী নয় বরং ত্বকের যত্নে এটি একটি প্রাকৃতিক উপাদান।
আরও পড়ুনঃ আপেল সিডার ভিনেগার ১৫ টি স্বাস্থ্য উপকারিতা
কলার খোসায় বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন যেমন ভিটামিন এ, বি, সি, ই এবং পটাশিয়াম, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও বিভিন্ন ধরনের এনজাইম থাকার ফলে এটি খুব সহজেই মুখের রং উজ্জ্বল করতে সাহায্য করে। রাসায়নিক মত এবং খুব সহজেই পাওয়া যায় বলে এটি সহজলভ্য হওয়ায় তৎ ফর্সা করার জন্য এটি একটি চমৎকার উপাদান। কলার খোসা দিয়ে মুখ ফর্সা করার পদ্ধতি নিম্নে বর্ণনা করা হলো-
ত্বক ফর্সা করতে কলার খোসা কার্যকারিতাঃ
- মৃত কোষ দূর করাঃ কলার খোসায় থাকে প্রাকৃতিক এনজাইম যা ত্বকের মৃত কোষকে দূর করতে সাহায্য করে এবং নতুন কোষ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এতে ত্বকে মসৃণতা এবং উজ্জ্বলতা ফিরে আসে।
- দাগ ও ব্রণ হ্রাস করাঃ কলার খোসায় থাকে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান যা ত্বকের কালো দাগ এবং ব্রণ দূর করতে সাহায্য করে। এটি ত্বকের টোন সমান করে এবং ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
- ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখেঃ কলার খোসায় এক ধরনের প্রাকৃতিক তেল বিদ্যমান যেটার ব্যবহারে ত্বককে আদ্র রাখে, যা শুষ্কতা কমিয়ে ত্বককে ফ্রেশ এবং প্রাণবন্ত করে তোলে।
ব্যবহারের পদ্ধতিঃ
- প্রথমে একটি পাকা কলার খোসা নেই
- কলার খোসার ভেতরে অংশ নরম ত্বকে ঘোষুণ
- ১০-১৫ মিনিট পর আলতো হাতে ঘষা দিয়ে হালকা কুসুম গরম পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন
- এটি সপ্তাহে ২-৩ বার ব্যবহার করলে ত্বক উজ্জ্বল এবং মসৃণ হবে।
ফেসপ্যাক তৈরিঃ
- কলার খোসাকে প্রথমে চটকে নিন এবং এর সঙ্গে মধু বা দই মিশিয়ে একটি ফেসপ্যাক তৈরি করুন
- এটি আপনার ত্বকে লাগিয়ে ২০ থেকে ২৫ মিনিট অপেক্ষা করুন
- শুকিয়ে গেলে হালকা কুসুম গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন
লেবুর সঙ্গে মিশ্রণঃ
- কলার খোসা চটকে এর সঙ্গে কয়েক ফোটা লেবুর রস মিশিয়ে মুখে লাগান
- এটি ত্বকের দাগ হালকা করতে কার্যকর কারণ এখানে লেবুরও সংমিশ্রণ আছে
সতর্কতাঃ
- কলার খোসার ব্যবহারের আগে এটি অবশ্যই পরিষ্কার পানিতে ভালোভাবে ধুয়ে নিবেন, যাতে তার গায়ে লেগে থাকা রাসায়নিক পদার্থ বা ময়লা না লেগে থাকে।
- অনেকেরই কলার খোসায় এলার্জি হতে পারে। এজন্য অবশ্যই এলার্জির পরীক্ষা করে নিবেন। প্রথমে ত্বকের একটু ছোট্ট অংশে লাগিয়ে একটি ব্যবহার করে দেখেন।
- কলার খোসা অতিরিকও ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন, কারণ এটি ত্বকের প্রাকৃতিক তেল কমিয়ে দিতে পারে এইজন্য সপ্তাহে দুই-তিনবার ব্যবহারিক যথেষ্ট।
পরিশেষে বলা যায় যে কলার খোসা ত্বক ফর্সা করার জন্য একটি প্রাকৃতিক উপাদান এবং নিরাপদ ও কার্যকর উপাদান। এটি নিয়মিত ব্যবহার করলে আপনাদের ত্বক দাগ মুক্ত, মসৃণ, উজ্জ্বল এবং বলিরেখাও কমাতে সাহায্য করবে। তাই রাসায়নিক পণ্য ব্যবহার না করে ঘরোয়া পদ্ধতি ব্যবহার করুন যা আপনার ত্বক ভালো থাকবে এবং আপনি সুস্থ থাকবেন।
চুলের যত্নে কলার খোসা
চুলের যত্নে কলার খোসা ব্যবহার করলে চুল নরম, শক্তিশালী এবং উজ্জ্বল মসৃণ হয়। কলার খোসা সাধারনত আমরা ফেলে দেই, কিন্তু এই কলার খোসা যে আমাদের চুলের জন্য কতটা উপকারী তা আমরা কেউ জানিনা। কলার খোসায় রয়েছে ভিটামিন, মিনারেল এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এটি প্রাকৃতিক উপায়ে চুলকে মসৃণ, শক্তিশালী এবং উজ্জ্বল করে তোলে।
কলার খোসায় থাকা পটাশিয়াম, ভিটামিন এ, বি, সি এবং ই চুলের যত্নে বা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এছাড়াও চুলকে রাখে খুশকি মুক্ত। রাসায়নিক মুক্ত এবং সহজলভ্য হওয়ায় এটি আমরা আমাদের চুলের যত্নে ব্যাপকভাবে ব্যবহার করতে পারি। নিচে চুলের যত্নে খোসার ব্যবহার সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-
চুলের জন্য কলার খোসার উপকারিতাঃ
- চুলের শুষ্কতা দূরঃ কলার কোথায় থাকা প্রাকৃতিক তেল যা চুলের শুষ্কতা কমিয়ে আর্দ্রতা ধরে রাখে। এটি চুলকে করে নরম ও মসৃণ যা আমাদের কাঙ্ক্ষিত চাহিদা।
- খুশকি প্রতিরোধঃ কলার খোসায় এন্টি ইনফ্লেমেটরি উপাদান থাকায় চুলের স্ক্যাল্পে থাকা খুশকি কমায় এবং চুলকানি দূর করতে সাহায্য করে।
- চুলের বৃদ্ধিঃ কলার খোসায় থাকা পটাশিয়াম এবং ভিটামিন চুলের শিকড় কে শক্তিশালী করে যা, চুল পড়া রোধ করে এবং চুলের দ্রুত বৃদ্ধি নিশ্চিত করে।
- প্রাকৃতিক কন্ডিশনারঃ কলার খোসা চুলে প্রাকৃতিক কন্ডিশনার হিসেবে কার করে যা চুলে আলাদা উজ্জ্বলতা যোগ করে।
ব্যবহারের পদ্ধতিঃ চুলের যত্নে পাকা কলার খোসা ব্যবহারের পদ্ধতি নিচে দেখানো হলো-
সরাসরি ব্যবহারঃ
- একটি তাজা কলার খোসা চটকে মিহি পেস্ট তৈরি করে নিন
- পেস্টিটি স্ক্যাল্প এবং লাগান
- ২০ মিনিট রেখে হালকা শ্যাম্পু করে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন
ডিম এবং মধুর সঙ্গে মিশ্রণঃ
- একটি কলার খোসার পেস্টের সঙ্গে একটি ডিম এবং দুই চামচ মধু মেশান
- এই মিশ্রণটি চুলে লাগিয়ে ২০-৩০ মিনিট ধরে রেখে দিন
- পরে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন
নারকেল তেলের সঙ্গে মিশ্রণঃ
- কলার খোসা চটকে এর সঙ্গে দুই চামচ নারকেল তেল
- এটি স্ক্যাল্পে আলতোভাবে মালিশ করুন এবং ১৫-২০ মিনিট রেখে দিন
- শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন
সতর্কতাঃ
ব্যবহারের আগে অবশ্যই কলার খোসা ভালোভাবে ধুয়ে পরিষ্কার করুন যাতে কোন রাসায়নিক পদার্থ বা ধুলো ময়লা না থাকে
- যদি চুলে কোন প্রতিক্রিয়া দেখা দেয় তবে ব্যবহার বন্ধ করুন
- সপ্তাহে দুই তিনবার ব্যবহার সর্বোচ্চ উপকার পাওয়া যায়
পরিশেষে বলা যায় যে চুলের যত্নে কলার খোসা একটি প্রাকৃতিক এবং কার্যকরী উপাদান। কলার খোসা ব্যবহারে চুলের শুষ্কতা দূর, খুশকি প্রতিরোধ এবং চুলের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক কোন ব্যবহারের চেয়ে কলার ঘোষা ব্যবহার করা চুলের জন্য অনেক ভালো যা চুলের স্বাস্থ্যকর ও উজ্জ্বল রাখতে সাহায্য করবে। তাই ঘরোয়া চুলের যত্নে কলার খোসার ব্যবহার নিশ্চিত করুন।
কলা দিয়ে ফেসিয়াল
কলা দিয়ে ফেসিয়াল করলে আমাদের ত্বক উজ্জ্বল, মুসলিম ও আদ্র হয়। কল শুধু যে পুষ্টিকর তা নয় এটি ত্বকের জন্য প্রাকৃতিক ফেসিয়াল এর একটি দুর্দান্ত উপাদান। এতে রয়েছে ভিটামিন এ, বি, সি, ই এবং পটাশিয়াম অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বা প্রাকৃতিক তেল যা ত্বককে পরিষ্কার করে মসৃণ এবং ক্ষুদ্র করতে সাহায্য করে। রাসায়নিক মুক্ত এই কলা দিয়ে ফেসিয়ালের কিছু উপকারিতা নিচে দেয়া হল-
কলার খোসা দিয়ে ফেসিয়ালের উপকারিতাঃ
- ত্বকের দাগ হালকা করেঃ ত্বকের দাগ হালকা করতে কলার ফেসিয়াল অনেক দুর্দান্ত একটি প্রক্রিয়া। চলার খোসায় থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন ত্বকের কালো দাগ, ব্রনের দাগ এবং পিগমেন্টেশন হালকা করতে সাহায্য করে।
- ব্রণ প্রতিরোধঃ কলায় থাকা এন্টি ইনফ্লামেটরি উপাদান ব্রণ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। এটি ত্বকের ব্যাকটেরিয়া দূর করে এবং প্রদাহ কমায়।
- বার্ধক্য প্রতিরোধঃ কলার খোসায় থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বকের বলে রেখা কমায় এবং ত্বককে টানটান ও প্রাণবন্ত রাখে।
- আর্দ্রতা বজায় রাখাঃ কলার খোসায় থাকে প্রাকৃতিক তেল এবং ভিটামিন যা ত্বকের শুষ্কতা দূর করে এবং তাকে নরম ও আদ্র রাখতে সাহায্য করে।
- কলার খোসা দিয়ে ফেসিয়ালের ধাপসমূহঃ কলার খোসা দিয়ে যে ত্বকের ফেসিয়াল করা হয় তার প্রত্যেকটি ধাপ নিম্নে দেয়া হলো-
- ত্বক পরিষ্কার করাঃ প্রথমে ভালোভাবে মুখ পরিষ্কার করুন এবং তোয়ালে দিয়ে মুখটা শুকায় নেন। এটি তার থেকে ময়লা দূর করবে।
- খোসা দিয়ে ত্বকে মেসেজঃ একটি পাকা কলার খোসা নিন এবং ভিতরের নরম অংশ ত্বকে আলতোভাবে কিছুক্ষণ মেসেজ করুন। গোলাকার ভাবে মেসেজ করলে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পায়।
প্যাক তৈরিঃ
- কলা খোসা চটকে নিয়ে এর সঙ্গে এক চামচ মধু এবং একটা চামচ দই মিশিয়ে ফেসপ্যাক তৈরি করুন।
- এই মিশ্রণটি ত্বকে লাগিয়ে ১৫-২০ মিনিট অপেক্ষা করুন
- শুকিয়ে গেলে হালকা কুসুম গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন
টনিংঃ ফেসিয়ালের পর গোলাপজল কটন দিয়ে ত্বকে টোনিং করুন। এটি ত্বককে সতের ও সুন্দর রাখবে।
সতর্কতা ও টিপসঃ
- কলার খোসা ব্যবহার করার আগে অবশ্যই ভালোভাবে পানিতে ধুয়ে নিন
- যাদের ত্বকে এলার্জি বা সংবিধানশীলতা আছে তারা অবশ্যই একটি ব্যবহার বন্ধ রাখবেন
- সপ্তাহে ১-২ বার এই ফেসিয়াল করলে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়
পরিশেষে বলা যায় যে প্রাকৃতিক ও সাশ্রয়ী উপায়ে ত্বকের যত্নে কলার খোসা দিয়ে ফেসিয়াল একটি দুর্দান্ত সমাধান। এই ফেস প্যাকটি ত্বককে দাগমুক্ত, উজ্জল এবং মসৃণ করতে সাহায্য করে। নিয়মিত ব্যবহারে রাসায়নিক পণ্যের পরিবর্তে এই পদ্ধতি গ্রহণ করুন এবং ত্বকের সুস্থতা বজায় রাখুন।
লেখকের মন্তব্যঃ কলার খোসা দিয়ে রূপচর্চা
কলার খোসা দিয়ে রূপচর্চা বর্তমান সময়ে একটি রাসায়নিক মুক্ত এবং প্রাকৃতিক উপাদান হিসেবে সর্বোচ্চ ব্যবহারিত। কলার ঘোষার বহুমুখী ব্যবহার সম্পর্কে আজকের আলোচনায় আমরা জেনেছি, কলার খোসা শুধু ফলের অবশিষ্ট অংশ নয় বরং এটি আমাদের ত্বক, চুল এর যত্নে একটি প্রাকৃতিক সমাধান। রাসায়নিক মুক্ত ও সহজ হওয়ায় এর ব্যবহার প্রাণবন্ত।
তবে সবকিছু ব্যবহারের আগে অবশ্যই আমাদেরকে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে যাতে সঠিক মাত্রায় সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারি সেই দিকে আমাদেরকে খেয়াল রাখতে হবে। দৈনন্দিন জীবনে প্রাকৃতিক পদ্ধতি গুলোর ব্যবহার হয়ে উঠুক গ্রহণযোগ্য এবং বিশ্বাসযোগ্য। সময় নিয়ে পড়ার জন্য ধন্যবাদ। সুস্থ ও সুন্দর থাকুন আবার দেখা হবে নতুন বিষয় নিয়ে।
প্রশ্ন ২৪ ব্লক এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url