লাউ এর ১২ টি কার্যকরী উপকারিতা ও অপকারিতা
লাউ এর উপকারিতা ও অপকারিতা দুটোই আছে। লাউ এমন একটি পুষ্টিকর সবজি যা গ্রামে বা শহরে উভয় জায়গার মানুষই ভীষণ পছন্দ করেন। লাউ সাধারণত মানুষ হজম শক্তি বৃদ্ধি, ওজন কমানো, ত্বকের যত্ন এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে ব্যবহার করে।
লাউ প্রায় প্রত্যেক মানুষ বিভিন্নভাবে রান্না করে খেতে পছন্দ করেন। আপনি কি জানতে চান লাউ কিভাবে আপনার স্বাস্থ্যকে উপকৃত বা ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে? লাউয়ের উপকারিতা ও অপকারিতার সম্পূর্ণ গায়ের জানতে পড়ুন আমাদের ব্লগ এবং আপনার পুষ্টি সচেতনতার একধাপ এগিয়ে যান।
পোস্ট সূচিপত্রঃ লাউ এর উপকারিতা ও অপকারিতা
- লাউ এর উপকারিতা ও অপকারিতা
- লাউ এর পুষ্টি উপাদান
- লাউ খেলে কি ঠান্ডা লাগে
- লাউ এর রসের উপকারিতা
- গর্ভাবস্থায় লাউ খাওয়ার উপকারিতা
- মিষ্টি লাউয়ের উপকারিতা
- লাউয়ের ১২ টি ব্যবহারের কার্যকরী টিপস
- লাউ খেলে কি ওজন কমে
- লাউয়ের বিভিন্ন ব্যবহার
- মন্তব্যঃ লাউ এর উপকারিতা ও অপকারিতা
লাউ এর উপকারিতা ও অপকারিতা
লাউ এর উপকারিতা ও অপকারিতা বর্তমান সময়ে একে অপরের পৃষ্ঠপোষক। লাউ একটি পুষ্টিকর সবজি যা গ্রামীণ এবং শহরের জীবনের উভয় পরিবেশেই খুব জনপ্রিয়। অবশ্য এই প্রাচীনকাল থেকে ভেষজ গুণের জন্য বহুল পরিচিত। নিচে লাউয়ের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য দেওয়া হলো-
লাউয়ের উপকারিতাঃ লাউকে সাধারণত একটি পুষ্টিগুণ এবং স্বাস্থ্যকর সবজি হিসেবে চেনে। লাউ এর মাঝে পুষ্টিগুণ বেশ ভরপুর। প্রাচীনকাল থেকেই লাউ একটি ভেষজ উপাদান হিসাবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। নিচে লাউয়ের উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো-
- হজম শক্তি উন্নত করেঃ লাউ হচ্ছে একটি সহজপাচ্য সবজি এবং এতে থাকা ফাইবার হজম প্রক্রিয়া উন্নত করতে সাহায্য করে। আমাদের প্রায় অনেক মানুষেরই কোষ্ঠকাঠিন্য নিয়ে ঝামেলা হয় কিন্তু এই লাউ আমাদের কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে এবং অন্ত্র পরিষ্কার রাখতে একটি অত্যান্ত কার্যকরী ভূমিকা রাখে।
- ওজন কমাতে সাহায্য করেঃ লাউ হচ্ছে কম ক্যালরিযুক্ত একটি সবজি এবং এতে পানিতে ভরপুর। লাউ কম ক্যালরি এবং পানি বেশি থাকায় এটি শরীরের চর্বি পোড়াতে সাহায্য করে। লাও আপনাদের ডায়েটের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হতে পারে।
- শরীর ঠান্ডা রাখেঃ লাউ সাধারণত ঠান্ডা জাতীয়। গরমকালে লাউ খেলে শরীর ঠান্ডা থাকে এবং দেহের অস্বস্তি দূর করে। লাউ সাধারণত গ্রীষ্মকালে বেশি পাওয়া যায় অর্থাৎ এটি গ্রীষ্মকালীন সবজি। লাউয়ের প্রাকৃতিক পানির মাত্রা শরীরে পানির ভারসাম্য রক্ষা করে।
- ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করেঃ লাউ সাধারণত ডায়াবেটিস রোগীরা তাদের খাদ্য তালিকায় রাখতে পছন্দ করে। কারণ লাউয়ের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম থাকায় এটি রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে যা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ভীষণভাবে উপকারী।
- রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করেঃ লাউ যেহেতু ঠান্ডা জাতীয় সবজি এবং পানিতে ভরপুর তাই এটি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে ভীষণভাবে সাহায্য করে। লাউ এ সাধারণত পটাশিয়াম বেশি থাকে। এটিতে পটাশিয়াম বেশি থাকায় উচ্চ রক্তচাপ কমাতে এবং হৃদরোগে প্রতিরোধে সাহায্য করে।
- ত্বক ও চুলের যত্নে সাহায্য করেঃ আমাদের নারীরা সাধারণত ত্বক এবং চুলের যত্ন করতে স্বাচ্ছন্দ বোধ করেন। কারণ এই দুইটি সৌন্দর্যের প্রধান গুণ। লাউয়ের রস ত্বকে উজ্জ্বলতা বাড়ায় এবং ত্বককে বিভিন্ন প্রকার ব্রণ থেকে রক্ষা করে। এছাড়াও ত্বকের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে। লাউ চুল পড়া রোধেও বেশ কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিঃ লাউকে সাধারণত অনেক ক্ষেত্রে ঔষধ হিসেবে ব্যবহার করে। যেমন লাউয়ে থাকা ভিটামিন সি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং সর্দি কাশি প্রতিরোধে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
- হৃদরোগ প্রতিরোধঃ লাউ হচ্ছে একটি নির্ভেজাল সবজি। এটিতে ভরপুর পানি থাকায় আমাদের শরীরে বিভিন্ন ধরনের ভারসাম্য রক্ষা করে। লাউ খেলে খারাপ প্লেস্টোরলের মাত্রা কমে যা হৃদপিন্ডের কার্যকারিতা ভালো রাখতে সাহায্য করে। এই জন্য বেশি বেশি লাউ খেতে হবে।
পরিশেষে বলা যায় যে লাউ সচেতন ব্যক্তিদের জন্য একটি অপরিহার্য গুরুত্বপূর্ণ সবজি। লাউ কে সঠিকভাবে রান্না করে নিয়মিত খাদ্য তালিকায় রাখতে হবে যেন শরীর ও মনের জন্য অসাধারণ উপকারিতা নিয়ে আসে।
লাউ এর অপকারিতাঃ লাউ এমন একটি সবজি যা ছোট বড় সকলেই খেতে পছন্দ করে। যদিও লাউ অত্যন্ত পুষ্টিকর এবং উপকারী সবজি তারপরেও কিছু বিশেষ পরিস্থিতিতে এটি শরীরের জন্য ক্ষতি বয়ে আনে। লাউয়ের উপকারিতা গুলো সম্পর্কে আপনাদের সচেতন থাকতে হবে এবং এর নেতিবাচক প্রভাব থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব, যার বিস্তারিত বর্ণনা দেওয়া হল-
- অতিরিক্ত খাওয়ার কারণে হাইপোগ্লাইসেমিয়াঃ সব কিছুরই একটা সঠিক মাত্রা আছে। অতিরিক্ত কোন কিছুই কারো জন্যই ভালো না। লাউ রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে সহায়ক। তবে ডায়াবেটিস রোগী ও স্বাভাবিক মানুষ যদি অতিরিক্ত লাউ খায়, এটি রক্তের শর্করার মাত্রা বিপদজনক হারে কমিয়ে দেয়, যা হাইপোগ্লাসিমিয়ার কারন হতে পারে।
- কাঁচা লাউয়ের রস বিষাক্ত হতে পারেঃ অনেক ধরনের সবজি আছে যা কাঁচা কোন ভাবে খাওয়া ঠিক নয়। তেমনি কাঁচা লাভের রস অনেক সময় তিক্ত হয়ে বিষাক্ত হতে পারে। এটি সঠিকভাবে প্রক্রিয়াজাত না হলে বমি, ডায়রিয়া, পেটে ব্যথা, এমনকি শরীরের মারাত্মক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে।
- এলার্জি বা ত্বকের সমস্যাঃ আমাদের প্রায় সবার শরীরেই কমবেশি এলার্জি সমস্যা আছে। কিছু কিছু মানুষের আবার লাউয়ে এলার্জি হতে পারে। এটি ত্বকে চুলকানি, ফুসকুড়ি বা প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে। বিশেষভাবে একটু লাউ খাওয়া বা এর রস ব্যবহার করলে এই সমস্যা দেখা দিতে পারে।
- এসিডিটি ও পেটের সমস্যাঃ অনেক সময় লাউ ঠান্ডা বলে আমরা পেটের জন্য খায়। কিন্তু আবার অনেক সময় পাকা বারদীপ্ত লাউ খেলে পেটে গ্যাস, বমি ভাব বা এসিডিটির সমস্যা হতে পারে। এটি অন্ত্রের প্রদাহের কারণ হতে পারে।
- কিডনির জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারিঃ লাউয়ে পটাশিয়ামের পরিমাণ বেশি থাকে। যারা কিডনি রোগে ভুগছেন বা কিডনির কার্যক্ষমতা অনেক কম তাদের জন্য অতিরিক্ত লাউ খাওয়া বিপদজনক হতে পারে।
- অতিরিক্ত রস গ্রহণের ক্ষতিঃ লাউয়ের রস বেশি খেলে শরীর দুর্বল অনুভব করতে পারে। বিশেষভাবে যদি এটি পচা ব্যতিক্ত হয় তাহলে শরীরের জন্য ক্ষতিকর এবং তে বিষক্রিয়া হওয়ারও ঝুঁকি থাকে।
- ঠান্ডা জনিত কারণে ক্ষতিঃ আমরা লাউ সাধারণত ঠান্ডা হিসেবে খায়। কিন্তু যাদের ঠান্ডার সমস্যা বা শ্বাসকষ্টের সমস্যা আছে তাদের এই লাউ বেশি খাওয়া ঠিক নয়। অনেক সময় অতিরিক্ত লাউ ঠান্ডা জনিত কারণে অসুস্থ বেশি হতে পারে।
সবশেষে বলা যেতে পারে যে, লাউ খাওয়ার সময় আপনাকে অবশ্যই ভালোভাবে দেখে নিতে হবে এটি তাজা ও সঠিক সাদীর কিনা। তিক্ত লাউ বা তিক্ত লাউয়ের রস খাওয়া থেকে এড়িয়ে চলতে হবে। যেকোনো সমস্যা অনুভব করলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। লাভ খাওয়ার ক্ষেত্রে পরিমিত ও সর্তকতা মেনে চললে এ সমস্যা এড়ানো সম্ভব।
লাউ এর পুষ্টি উপাদান
লাউ এর পুষ্টি উপাদান গুলোর মধ্যে রয়েছে পানি, ফাইবার, ভিটামিন সি, ভিটামিন ডি, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম এবং পটাশিয়াম, যা শরীরের সুস্থতা রাখতে সাহায্য করে। লাউ একটি পুষ্টিকর সবজি যা স্বাস্থ্য সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। লাউ কম ক্যালরি এবং উচ্চ পুষ্টিগনের জন্য প্রায় সবাই লাউ খেতে পছন্দ করে। লাভে যে পুষ্টি উপাদানগুলো রয়েছে তার শরীরে বিভিন্ন চাহিদা পূরণ সাহায্য করে। বিস্তারিত দেয়া হলো-
লাউয়ের পুষ্টি উপাদান সম্পর্কে বিস্তারিত (প্রতি ১০০ গ্রাম)ঃ
- পানিঃ লাউয়ের প্রায় ৯৫-৯৬% অংশই পানি, যার শরীরকে হাইড্রেটেড রাখতে সাহায্য করে। বিশেষ করে গ্রীষ্মকালে শরীর ঠান্ডা রাখা এবং তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে এটি অনেক কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।
- ক্যালোরিঃ লাউ কম ক্যালরিযুক্ত সবজি। প্রতি ১০০ গ্রামে ১৫-২০ ক্যালোরি থাকে যা ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। এটি বিশেষ করে ওজন কমানোর জন্য যারা ডায়েট করেন তারা প্রথম সারিতে রাখে।
- ফাইবারঃ লাউ একটি উচ্চ ফাইবার যুক্ত ( ডায়েটারি ফাইবার) রয়েছে, যা হজম প্রক্রিয়া উন্নত করতে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে। এটি অন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখে এবং পেট পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে। তাই কোষ্ঠকাঠিন্যের জন্য লাউ সব খাবারের রেসিপিতে থাকে।
- প্রোটিনঃ প্রতি ১০০ গ্রাম লাগে প্রায় ১ গ্রাম প্রোটিন থাকে। এটির শরীরের কোষের পুনর্গঠনে সাহায্য করে এবং শক্তি যোগায়।
- ভিটামিন সিঃ লাউ একটি ভালো ভিটামিন সি সমৃদ্ধ সবজি। এটি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখে এবং ক্ষতিকর ফ্রি রেডিক্যাল থেকে শরীরকে রক্ষা করে।
- ভিটামিন বি গ্রুপঃ লাউএ ভিটামিন বি-৩ ( নিয়াসিন), বি৫ (প্যান্টিথেনিক অ্যাসিড) এবং বি৬ (পাইরিডক্সিন) রয়েছে। এগুলো স্নায়ুতন্ত্রের কার্যক্ষমতা উন্নত করে এবং বিপাক প্রক্রিয়া গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
- পটাশিয়ামঃ লাউ এ পটাশিয়ামের পরিমাণ অনেক বেশি। এটি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে এবং হৃদপিন্ডের কার্যক্ষমতা উন্নত রাখতে সাহায্য করে।
আরও পড়ুনঃ গাজর খাওয়ার ১০টি উপকারিতা ও অপকারিতা
- ম্যাগনেসিয়ামঃ লাভের ম্যাগনেসিয়াম পেসিয়া স্নায়ুর কার্যক্ষমতা উন্নত করে এবং হাড় শক্তিশালী করে।
- আয়রন ও ক্যালসিয়ামঃ লাউ এ আয়রন এবং ক্যালসিয়াম রয়েছে, যা রাখতে হিমোগ্লোবিন তৈরি এবং হাড়ো দাঁতের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে সাহায্য করে।
- অ্যান্টিঅক্সিডেন্টঃ লাউ এ ফ্লাবোনয়েব এবং পলিফেনোল জাতীয় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে, যা দেহকে ক্ষতিকারক ফ্রী রেডিক্যাল থেকে রক্ষা করে এবং ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়।
- সোডিয়ামঃ লাউয়ে সোডিয়ামের মাত্রা খুব কম যা কিডনি এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে উপকারী।
পরিশেষে বলা যায় যে লাউ একটি পুষ্টি সমৃদ্ধ এবং সহজলভ্য সবজি যা শরীর কে হাইড্রেটেড রাখে, হজম শক্তি বৃদ্ধি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং অরণ্য নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। যেমন ১০০ গ্রাম লাউ এ প্রায় ০,৬ গ্রাম আমিষ, ৩.৩ গ্রাম শর্করা, ১.২ গ্রাম আঁশ, ০.১ গ্রাম চর্বি এবং ২৬ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম থাকে যা পুষ্টি ও স্বাস্থ্য রক্ষায় কার্যকর। প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় লাউ অন্তর্ভুক্ত করলে এটি শরীরের জন্য দীর্ঘ মেয়াদে উপকার বয়ে আনতে পারে।
লাউ খেলে কি ঠান্ডা লাগে
লাউ খেলে কি ঠান্ডা লাগে এই কথাটি বলতে গেলে বলা যায় যে লাউ খেলে শরীর ঠান্ডা থাকে এবং গরমকালে শরীরে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। আসলে লাউ এর উপকারিতা ও অপকারিতা দুটিই আমাদের জীবনের সাথে জড়িয়ে আছে। গরমকালে শরীর ঠান্ডা রাখা এবং তাপ জনিত অস্বস্তি দূর করতে এই লাউ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
লাউয়ের শীতল করার বৈশিষ্ট্য বহু প্রাচীনকাল থেকে পরিচিত এবং এটি শুধু পুষ্টির জন্য নয় বরং চিকিৎসা ও আরামদায়ক খাবার হিসেবেও ব্যবহৃত হয়ে আসে । এখানে লাউ খেলে ঠান্ডা লাগার কারণ এবং এর প্রভাব নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো-
- প্রাকৃতিক শীতলকারীর ভূমিকাঃ সাধারণত লাউ এ প্রায় ৯৫-৯৬ ভাগ পানি থাকে, যা শরীরকে হাইড্রেটেড রাখে। পানি আমাদের শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে অত্যাধিক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। লাউ খাওয়ার ফলে শরীরের ভেতরকার তাপমাত্রা হ্রাস পায় এবং শরীর প্রাকৃতিকভাবে ঠান্ডা অনুভব করে।
- তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়কঃ লাউ খেলে শরীরে ঘাম কম হয় কারণ এটি শরীরের ভেতরকার তাপকে শোষণ করে তাপমাত্রা স্থিতিশীল করে। বিশেষ করে এখন আমরা যখন গ্রীষ্মকালে লাউ খায় তখন শরীরকে গরমের ক্লান্তি থেকে মুক্তি দেয়।
- ডিহাইড্রেশন রোধঃ লাউয়ে থাকা প্রাকৃতিক ইলেকট্রোলাইট শরীরের পানির ভারসাম্য বজায় রাখে। এতে সোডিয়াম এবং পটাশিয়ামের মত খনিজ উপাদান রয়েছে, যার তরলের চাহিদা পূরণ করে এবং ডিহাইড্রেশন রোধ করে। এটি গ্রীষ্মকালে বিশেষ উপকারী।
- ডিটক্সিফিকেশন ক্ষমতাঃ লাউ প্রাকৃতিক ডিটক্সি ফায়ার হিসেবে কাজ করে। লাউ আমাদের লিভার ও কিডনির মাধ্যমে শরীরে বিষাক্ত পদার্থ দূর করতে সাহায্য করে। শরীরের ভেতর থেকে পরিষ্কার হওয়ার ফলে শরীর আরামদায়ক এবং ঠান্ডা অনুভব করে।
- এন্টি-ইনফ্লেমেটরিঃ লাউ এর অ্যান্টি- ইনফ্লামেটরি বৈশিষ্ট্য শরীরের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। এটি শরীরের তাপ জনিত সমস্যা যেমন ত্বকের লালচে ভাব, ফোলা ভাব এবং পেটের অস্বস্তি দূর করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এর ফলে আমাদের শরীর সতেজ এবং ঠান্ডা থাকে।
- হজমের জন্য উপকারীঃ লাউ হালকা খাবার হিসেবে পরিচিত যা হজমে সাহায্য করে। এটি ভেতরের অন্ত্রের কার্যক্রম উন্নত করে এবং হজমের ফলে সৃষ্ট অতিরিক্ত তাপ দূর করে। ফলে শরীরে শীতল অনুভূতি তৈরি হয়।
- ঘামের প্রবণতা কমানোঃ লাউ খাওয়ার ফলে শরীরে ঘামের প্রবণতা কমে যায় এটি শরীর থেকে তাপ দূর করে এবং ঠান্ডা রাখে। গ্রীষ্মকালে অতিরিক্ত ঘাম থেকে মুক্তি পেতে আমাদের লাউ খাওয়া খুবই জরুরী।
- মানসিক প্রশান্তি বৃদ্ধিঃ লাউ এর রস কেবল শরীর ঠান্ডা রাখে না এই মানসিক চাপ কমাতেও সাহায্য করে। এটি স্নায়ু প্রশান্ত করে এবং দেহ ও মনকে শীতল অনুভূতি দেয়।
- শরীরের শক্তি যোগায়ঃ গরমে শরীরে শক্তি কমে গেলে লাউতা পূরণ করে। এতে থাকা প্রাকৃতিক চিনি এবং পুষ্টি উপাদান শরীরে শীতল অনুভূতির পাশাপাশি শক্তি যোগায়।
- চিকিৎসায় ব্যবহারঃ আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় লাউকে ”শীতলকারী” উপাদান হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এটি শরীর থেকে তাপ দূর করে এবং শারীরিক ভারসাম্য বজায় রাখে। যাদের ঠান্ডার সমস্যা আছে তাদেরকে লাউ খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে কারণ ঠান্ডা লাউ এ আরো ঠান্ডার সমস্যা হয়।
- কেন লাউ খেলে ঠান্ডা লাগেঃ হ্যাঁ লাউ খেলে শরীরে ঠান্ডা অনুভব করে বা ঠান্ডা লাগে কারণ লাউ এর মধ্যে প্রায় ৯৫-৯৬% পানি ছাড়ে যার শরীরকে হাইডেটেড রাখে। অতিরিক্ত তাপমাত্রা হ্রাস করতে সাহায্য করে।
এটি শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ভূমিকা পালন করে বিশেষ করে গরম কালে। লাউ হালকা খাবার হওয়ায় এটি সহজে হজম হয় এবং শরীরের অভ্যন্তরীণ শীতলতা বজায় রাখে। তবে এই ব্যক্তির শারীরিক অবস্থা ও পরিবেশের উপর নির্ভর করে লাউ খেতে হবে।
যদিও লাউ শরীর ঠান্ডা রাখতে সহায়ক, তিক্ত লাউ বা পচা লাউ খেলে হজমের সমস্যা এবং বিষক্রিয়ার ঝুঁকি থাকে। তাই লাউ কেনার সময় সতর্ক থাকতে হবে এবং রান্নার আগে এর সাত পরীক্ষা করা উচিত।
পরিশেষে বলা যায় যে লাউ খাওয়া শরীরকে প্রাকৃতিকভাবে ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে। এর পানি, পটাশিয়াম এবং অন্যান্য পুষ্টি উপাদান শরীরকে তার থেকে রক্ষা করে এবং আরামদায়ক অনুভূতি দেয়। তাই বিশেষ করে গরমকালে শরীর ঠান্ডা রাখে এবং পুষ্টি চাহিদা পূরণে লাউ খাড়ো তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
লাউ এর রসের উপকারিতা
লাউ এর রসের উপকারিতা হল এটি সাধারণত শরীরকে শীতল রাখে, হজম শক্তি বাড়ায়, ক্ত উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে এবং ওজন কমাতে সাহায্য করে। লাউয়ের রস এক ধরনের প্রাকৃতিক পানীয় যা পুষ্টিগুনে ভরপুর এবং শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী।
এটি শরীরকে হাইড্রেটেড রাখে, ওজন কমায় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর সহ বিভিন্ন ধরনের উপকার করে। নিচে লাউয়ের রসের উপকারিতার বিস্তারিত আলোচনা করা হলো-
- শরীরকে শীতল রাখেঃ আমরা অনেকেই জানিনা যে লাউয়ের রসে প্রচুর পরিমাণে পানি থাকার কারণে এটি আমাদের শরীরকে ঠান্ডা রাখতে সহায়তা করে। বেশিরভাগ মানুষ লাউ রান্না করে কিন্তু লাউয়ের রসও যে খাওয়া যায় এটা অনেকেই জানেনা। গরমকালে লাউয়ের এই রস শরীরের অভ্যন্তরীণ তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে এবং তাপ জনিত অসস্তি দূর করে।
- হজম শক্তি উন্নত করেঃ লাউয়ের রস হজম শক্তি বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি সাধারণত আমাদের পাকস্থলীর কার্যক্ষমতা উন্নত করে, পেট ফাঁপা থেকে রক্ষা করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে। লাউয়ের রস খেলে হালকা খাবারের অনুভূতি দেয় কিছুক্ষণ খাবার না খাওয়ার জন্য সাহায্য করে।
- ওজন কমাতে সাহায্য করেঃ আমরা অনেকেই জানিনা যে লাউয়ের রস ওজন কমানো জন্য গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে। লাউয়ের রসে ক্যালোরি কম এবং ফাইবার বেশি থাকে। এটি ক্ষুধা কমায় এবং দীর্ঘসময় পেট ভরা রাখে যা ওজন কমানোর জন্য একটি কার্যকরী পদক্ষেপ।
- রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে কার্যকরঃ লাভের রসে প্রচুর পরিমাণ পটাশিয়াম থাকে, যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। এটি উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি কমায় এবং হৃদরোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে।
- ডিটক্সিফিকেশন ক্ষমতাঃ সাধারণত লাউ এর রস আমাদের শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ দূর করতে সাহায্য করে। লাউয়ের রস আমাদের লিভার ও কিডনির কার্যক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে, যার শরীরের ডিটক্সিফিকেশন প্রক্রিয়ায় সাহায্য করে।
- কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে সহায়কঃ লাউয়ের রস রক্তে খারাপ কোলেস্টরেলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। লাউয়ের রস সকালে খেলে অনেক উপকারে আসে। এটি হৃদপিণ্ড সুস্থ রাখে এবং এথেরসক্লোরোসিসের ঝুঁকি হ্রাস করে।
- ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করেঃ আমরা অনেকেই লাউয়ের সবজি খায় ত্বকের উপকারিতার জন্য। কিন্তু লাউয়ের রস খেলে যে আমাদের ত্বকের অনেক উপকারে আসে তা আমরা অনেকেই জানিনা। লাউয়ের রসে ভিটামিন সি এবং আন্টি অক্সিডেন্ট থাকে যা ত্বকের কোর্সগুলো পুনর্গঠন করে এবং ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে সাহায্য করে। এটি ব্রণ ও ত্বকের অন্যান্য সমস্যার প্রতিকারেও সহায়ক।
- চুলের যত্নে উপকারীঃ লাউয়ের রস চুলের গোড়া মজবুত করে এবং চুল পড়া রোধে সহায়ক। নারকেল তেলের সাথে লাভের রস গরম করে মাথায় দিলে চুল পড়া রোধ করে। এতে থাকা প্রাকৃতিক পুষ্টি উপাদান চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে কার্যকর ভূমিকা পালন করে।
- হজমজনিত গ্যাস্ট্রিক সমস্যা দূর করেঃ লাউ এর রস গেটট্রিক ও আম্বল দূর করতে সহায়ক। এটি পেটের অ্যাসিড নিয়ন্ত্রণ করে এবং হজম প্রক্রিয়াকে স্বাভাবিক রাখে।
- ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করেঃ লাউয়ের রস ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের জন্য খুবই উপকারী। কারণ লাউয়ের রস রক্তের শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ রাখতে সাহায্য করে। এটি ইনসুলিন সংবেদনশীলতা উন্নত করে এবং ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য অত্যন্ত উপকার করে।
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করেঃ লাউয়ের রসের ভিটামিন এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এটি ফ্রিরেডিকালের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষা করে।
- কিডনির কার্যকারিতা উন্নত করেঃ লাউয়ের রস কিডনিতে জমে থাকা অতিরিক্ত ইউরিক অ্যাসিড দূর করতে সাহায্য করে। এটি কিডনির পাথরের ঝুঁকি কমায় এবং প্রসাবের পরিমাণ বাড়িয়ে কিডনি পরিষ্কার রাখে।
- মানসিক প্রশান্তি বৃদ্ধিঃ লাউয়ের রস স্নায়ুতন্ত্র কে প্রশান্ত করে এবং আমাদের মানসিক চাপ কমাতে অনেক সাহায্য করে। আমরা রাতের ঘুম থেকে বিরক্তি ফিল হলে এটি অনেক রাত দূর করতে সাহায্য করে এবং মস্তিষ্ক শিখিল রাখে।
আরও পড়ুনঃ মিল্ক শেক এর ১০টি উপকারিতা ও অপকারিতা
- হাড় ও দাঁতের জন্য উপকারীঃ লাউয়ের রসে প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম থাকে যা হাড় ও দাঁত শক্তিশালী করতে সাহায্য করে। এটি বয়সজনিত হাড় ক্ষয়ের ঝুঁকি হ্রাস করে।
- কিভাবে লাউয়ের রস প্রস্তুত করবেনঃ লাউয়ের রস তৈরি করতে প্রথমে আমাদেরকে একটি তাজা লাউ নিতে হবে। লাউ টিকে ভালোভাবে হয়ে ছোট ছোট করে কেটে ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে নিতে হবে। অতিরিক্ত তিক্ততা থাকলে পরিমাণ মতো পানি মিশিয়ে সাত পরীক্ষা করতে হবে। রসের জন্য কচি লাউ খুব ভালো। এই রসটি সকালে খালি পেটে পান করলে সর্বোচ্চ উপকারে পাওয়া যায়। এটি এমন একটি পানীয় যা ওজন কমানো থেকে শুরু করে ডায়াবেটিস পর্যন্ত সকলেই কাজে আসে।
- সতর্কতাঃ লাউয়ের রস যেহেতু অনেক উপকারে আসে তাই এই রসটি যেন ভালো হয় তার দিকে নজর দিতে হবে। তিক্ত লাউয়ের রস পান করবেন না এতে প্রথমত অরুচি আসে দ্বিতীয়ত পেটে অস্বস্তি ও বিষক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। তাই তাজা ও ভালো মানের লাউ ব্যবহার করা খুবই জরুরী।
পরিশেষে বলা যায় যে লাভের রস আমাদের শরীর স্বার্থের জন্য একটি প্রাকৃতিক ও নিরাপদ পানীয়। এই পানীয়তে কোন ধরনের কেমিক্যাল মিশ্রিত থাকে না তাই শরীরের জন্য ভীষণভাবে উপকারী। এটি শরীরের হাইড্রেশন বজায় রাখে, ওজন কমাতে সাহায্য করে, ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায় এবং ডিটক্সিফিকেশন সহ নানা উপকারে আসে। তবে এটির ব্যবহার অবশ্যই সতর্কতার সাথে করতে হবে
গর্ভাবস্থায় লাউ খাওয়ার উপকারিতা
গর্ভাবস্থায় লাউ খাওয়ার উপকারিতা হল এটি হজম শক্তি বৃদ্ধি করে, শরীরকে ঠান্ডা রাখে, শরীরের পুষ্টি সরবরাহ করে এবং সবচেয়ে বড় কথা যেটি কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে। লাও একটি পুষ্টিগুণে ভরপুর সবজি, যা গর্ভাবস্থায় মায়ের ও শিশুর স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী। শরীরের পুষ্টি চাহিদা পূরণ করে বিভিন্ন ধরনের উপকারে আসে যার বিস্তারিত বর্ণনা দেয়া হলো-
- পুষ্টি চাহিদা পূরণ করেঃ লাউয়ে সাধারণত ভিটামিন সি, ভিটামিন বি-কমপ্লেক্স, ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম এবং আয়রনের মত উপাদান থাকে। গর্ভাবস্থায় এগুলো মা ও শিশির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই লাউয়ের পুষ্টি উপাদান গর্ভের শিশুর হাড়, দাঁত এবং মস্তিষ্কের বিকাশে বিশাল বড় ভূমিকা পালন করে।
- হজম শক্তি বৃদ্ধি করেঃ গর্ভাবস্থায় একজন মহিলার সবচেয়ে বড় সমস্যা হল তার হজম শক্তি। এই সময় হরমোনজনিত পরিবর্তনের কারণে হজমে সমস্যা হতে পারে। লাউ খাইবা সমৃদ্ধ হওয়ায় এটি সাধারণত অন্ত্রের কার্যক্ষমতা উন্নত করে এবং কোষ্ঠকাঠিন থেকে দূর করতে সাহায্য করে। লাউ একজন গর্ভবতী নারীর খাদ্য হজমে অনেক সাহায্য করে।
- শরীর ঠান্ডা রাখেঃ লাউয়ের মধ্যে ৯০-৯৬% পানি থাকে যা গর্ভাবস্থায় শরীরকে হাইড্রেটেড রাখতে এবং অতিরিক্ত তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়ক। এটি গরমে আরামদায়ক অনুভূতি দেয় এবং শরীরের চাপ কমায়।
- রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করেঃ গর্ভ অবস্থায় বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। এই সময়টা অত্যন্ত নমনীয় হওয়ায় রক্তচাপ একটি সাধারণ সমস্যা। লাউ এ থাকার পটাশিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ভূমিকা পালন করে। এটি রক্ত সঞ্চালন উন্নত করে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
- অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধির ঝুঁকি কমায়ঃ লাউ ক্যালরি কম এবং হ্যাক ইন হওয়ায় এটি ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধির সমস্যা থাকলে লাভ একটি নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর খাদ্য।
- কিডনি ও লিভার কে সুরক্ষিত রাখেঃ গর্ভ অবস্থায় কিডনি ও লিভারের কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। লাউ প্রাকৃতিক ডিটক্সি ফায়ার হিসেবে কাজ করে এবং কিডনি লিভারের কার্যক্ষমতা উন্নত করে। এই জন্য গর্ব অবস্থায় একজন নারীকে লাউ খাওয়ানো খুব জরুরী।
- মানসিক চাপ কমায়ঃ একজন নারীর গর্ভাবস্থায় হরমোন পরিবর্তনের কারণে বিভিন্ন ধরনের মানসিক সমস্যা হয়ে থাকে। গর্ভাবস্থায় মানসিক চাপ বা উদ্বেগ সাধারণত একটি সমস্যা। লাউ খেলে এটি স্নায়ুতন্ত্র কে শান্ত করে এবং মানসিক প্রশান্তি বৃদ্ধি করে।
- ত্বকের স্বাস্থ্য উন্নত করেঃ সাধারণত নারীরা গর্ভধারণ করলে হরমোন পরিবর্তনের কারণে ত্বকে বিভিন্ন সমস্যার দেখা দেয়। লাভে থাকা ভিটামিন সি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট মায়ের ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে। এটি গর্ভাবস্থার কারণে ত্বকে হওয়া ফোলা ভাব বা লালচে ভাব কমাতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।
- রক্তস্বল্পতা দূর করেঃ লাউ এ আইরন ও ফলিক এসিড বিদ্যমান। যার ফলে গর্ব অবস্থায় রক্তস্বল্পতা দূর করতে অত্যন্ত সহায়ক। গর্ভাবস্থায় হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বৃদ্ধি করে এবং মা ও শিশুকে সুস্থ রাখে।
- প্রসবজনিত জটিলতা কমাতে সহায়কঃ লাভের লাউয়ের পুষ্টিগুণ গর্ভাবস্থায় শক্তি যোগায় এবং প্রসবকালীন জটিলতা কমাতে সাহায্য করে। এটি শরীরের ইলেকট্রোলাইট ভারসাম্য বাজায় রাখে।
- কিভাবে গর্ভাবস্থায় লাউ খাবেনঃ একজন নারী যখন গর্ভধারণ করেন তখন তার জীবনের প্রত্যেকটি মুহূর্তই পরিবর্তন হয়ে যায় তার চলাফেরা খাওয়া-দাওয়া সব কিছুতেই। গর্ভাবস্থায় লাউ সেদ্ধ, ঝোল বা সুপ হিসেবে খাওয়া নিরাপদ। তবে কাঁচালাও বা তীর্থ লাউ খাওয়া এড়িয়ে চলুন।
পরিশেষে বলা যায় যে, লাউ এর উপকারিতা ও অপকারিতা দুটিই আছে। গর্ভাবস্থায় লাউ খাওয়া মা ও শিশুর স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এটি পুষ্টি চাহিদা পূরণ করে, শরীর ঠান্ডা রাখে এবং নানা শারীরিক সমস্যা দূর করতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। তবে যে কোন খাবার খাওয়ার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ অবশ্যই নিতে হবে।
মিষ্টি লাউয়ের উপকারিতা
মিষ্টি লাউয়ের উপকারিতা হলো এটি শরীরকে শীতল রাখে, হজম শক্তি বৃদ্ধি করে, ওজন কমায় এবং প্রতিরোধ ক্ষমতা উন্নত করে। মিষ্টি লাউ পুষ্টির জন্য সমৃদ্ধ এবং স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এটি প্রাকৃতিক ভাবে আগামীটি ৭যুক্ত হওয়ায় বিভিন্ন খাবারে সহজেই যোগ করা যায়। শরীরের পুষ্টি চাহিদা পূরণ করার পাশাপাশি নানা শারীরিক সমস্যার সমাধান ও কার্যকর।
- হজম বৃদ্ধি করেঃ মিষ্টি লাউ খাইবারের সমৃদ্ধ, যা অন্ত্রের কার্যক্ষমতা বাড়াই এবং হজম প্রক্রিয়াকে উন্নত করে। এটি কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে এবং পেটের অস্বস্তিকমায়।
- শরীর ঠান্ডা রাখতে সহায়কঃ মিষ্টি লাউয়ের প্রায় ৯৫% পানি থাকে, যার শরীরকে শীতল রাখতে এবং ডিহাইড্রেশন রোধে সাহায্য করে। বিশেষ করে গরম কালে এটা শরীরে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে কার্যকর।
- ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করেঃ মিষ্টি লাউ ক্যালোরি ও ফ্যাট কম হওয়ায় এটি ওজন কমানোর ডায়েটের খাবার হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এটি দীর্ঘ সময় পেট ভরা খেয়ে ফলে অতিরিক্ত খাবার খাওয়ার প্রবণতা কমে।
- হৃদরোগ প্রতিরোধে কার্যকরঃ মিষ্টি লাউয়ের পটাশিয়াম হৃদ যন্ত্রের কার্যকারিতা উন্নত করে এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। এটি আমাদের শরীরের খারাপ কোলেস্টেরল কমিয়ে হৃদরোগ ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
আরও পড়ুনঃ কিভাবে পেটের চর্বি কমানো যায়
- ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়ক ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়কঃ মিষ্টি লাউ রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং ইনসুলিনের কার্যক্ষমতা উন্নত করে। মিষ্টি লাউয়ে প্রাকৃতিকভাবে তিনি থাকায় এটি শরীরের ইনসুলিন। মাত্রা ঠিক রাখতে সাহায্য করে মাত্রা ঠিক রাখতে সাহায্য করে। ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য একটি নিরাপদ খাবার।
- ত্বক ও চুলের জন্য উপকারীঃ মিষ্টি লাভে থাকা ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায় এবং বার্ধক্যের প্রভাব কমায়। এটি চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে এবং চুল পড়া রোধ করতে সাহায্য করে।
- ডিটক্সসিফিকেশন ক্ষমতাঃ মিসকলাও লিভার ও কি পরিষ্কার রাখতে সহায়ক এটি শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ বের করে শরীরের সিফিকেশন প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে।
পরিশেষে বলা যায় যে মিষ্টি লাউ একটি সহজলভ্য ও উপকারী সবজি। এটি আমাদের শরীরের বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি চাহিদা পূরণের পাশাপাশি ওজন নিয়ন্ত্রণ, হৃদরোগ প্রতিরোধ এবং ত্বকের যত্নে কার্যকর। নিয়মিত মিষ্টি লাউ খেলে শরীর সুস্থ ও সতেজ থাকে।
লাউয়ের ১২ টি ব্যবহারের কার্যকরী টিপস
লাউয়ের ১২ টি ব্যবহারের কার্যকরী টিপস খুবই গুরুত্বপূর্ণ। লাউ একটি পুষ্টিকর সবজি, যা শুধুমাত্র খাওয়ার জন্য নয়, বরং স্বাস্থ্য, সৌন্দর্য এবং দৈনন্দিন জীবনের নানা সমস্যার সমাধানে কার্যকর। এখানে লাউয়ের বারোটি ব্যবহার ও তার কার্যকারী টিপস তুলে ধরা হলো-
- লাউয়ের ফাইবার সমৃদ্ধ গঠন অন্ত্রের কার্যকারিতা উন্নত করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। প্রতিদিন লাউ সেদ্ধ বা ঝোল খেলে হজম শক্তি উন্নত হয়
- লাউ ক্যালোরি কম এবং ফ্যাট হওয়ায় এটি ওজন কমাতে সাহায্য করে। লাভের পেটে পান করলে ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণ থাকে এবং মেদ কমে।
- হয়ে থাকা ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়। লাউয়ের রস দিয়ে ত্বকে মেসেজ করলে ত্বকের শুষ্কতা দূর হয় এবং ব্রণ কমে যায়।
- লাউয়ের রস চুলের গোড়া মজবুত করে। নারকেল তেলের সাথে লাউয়ের রস গর করে চুলে ব্যবহার করলে চুল পড়া রোধ করে এবং চুলে প্রাকৃতিক উজ্জ্বলতা আনতে সাহায্য করে। এমন কি চুল ধোয়ার আগে লাউয়ের রস ব্যবহার করতে পারেন
- লাউয়ের রস রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। ডায়াবেটিস রোগীরা নিয়মিত লাউসিদ্ধ খেতে পারেন
- লাউ প্রাকৃতিক ডিটক্সিফায়ার হিসেবে কাজ করে। শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ দূর করতে সকালে লাভের রস পান করুন
- লাউ কিডনি ও লিভারের কার্যক্ষমতা বাড়ায়। এটা প্রসাবের পরিমাণ বাড়িয়ে কিডনিতে জমে থাকা বজ্র পদার্থ বের করে দেয়।
- লাউএ পটাশিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম থাকে যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক। এটি জীবজন্তুকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
- লাউ এ প্রায় ৯৫% পানি থাকে, শরীরকে হাইড্রেটেড রাখে। গরমের দিনে লাভের রস বা ঝোল খাওয়া শরীরকে সতেজ রাখে
- লাউ স্নায়ুতন্ত্রকে শান্ত করে এবং মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে। আমাদের অনিদ্রা দূর করতে সেদ্ধ লাউ খাওয়া অত্যন্ত কার্যকর
- জ্বর বা তাপ জনিত অসুস্থতায় লাউ খেলে শরীরের তাপমাত্রা দ্রুত কমে। এটি প্রাকৃতিকভাবে শরীরকে ঠান্ডা রাতে সাহায্য করে।
- গর্ভাবস্থায় লাউ খাওয়া মায়ের পুষ্টি চাহিদা পূরণ করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। একটি গর্ভস্থ শিশুর হাড় ও মস্তিষ্কের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ সাহায্য করে
পরিশেষে বলা যায় যে লাউ শুধু খাবার নয়, এটি স্বাস্থ্য ও দৈনন্দিন জীবনের নানা সমস্যা কার্যকর সমাধান দিতে আমাদেরকে ভীষণভাবে সাহায্য করে। লাউয়ের পুষ্টিগুণের জন্য আমাদের প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় অবশ্যই লাভের রেসিপি রাখতে হবে।
লাউ খেলে কি ওজন কমে
লাউ খেলে কি ওজন কমে এই কথা বলতে গেলে অবশ্যই বলবা লাউ খেলে ওজন কমে। কারণ লাউয়ের ক্যালরি এত কম যে যার ফলে এটি ওজন কমানোর জন্য বাইকের একটি আদর্শ সবজি খাবার। প্রতি ১০০ গ্রাম লাউএ মাত্র ১৫ ক্যালোরি থাকে, যা অন্যান্য সবজির তুলনায় অনেক কম। এটি খুব সহজে হজম হয় এবং শরীরে অতিরিক্ত ফ্যাট জমতে দেওয়া থেকে বিরত রাখে।
লাউ একটি পুষ্টিকর সবজি যা ওজন কমানোর প্রক্রিয়ায় সহায়ক হতে পারে। লাউ সাধারণত স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী এবং মেটাবলিজম বানাতে সাহায্য করে। এখানে লাউ খাওয়ার মাধ্যমে ওজন কমানোর কয়েকটি উপকারিতা তুলে ধরা হলো যেমন-
- কম ক্যালরিঃ লাউ অত্যন্ত যুক্ত একটি সবজি হওয়ায় এটি ওজন কমানোর জন্য বিশেষভাবে উপকারী। যারা ডায়েট প্ল্যান করেন তারা প্রত্যেকেই খাবার তালিকায় লাউ এর রেসিপি থাকতেই হবে। কেননা এক কাপ কাটা লাউয়ে মাত্র ২০-২৫ ক্যালোরি থাকে, যা অতিরিক্ত ক্যালরি গ্রহণের প্রবণতা কমায়।
- বহুল পরিমাণ পানিঃ লাউয়ের ৯৫ শতাংশ বেশি পানি থাকে, যা শরীরের সঠিক হাইড্রেশন বজায় রাখতে সাহায্য করে। ভালো হাইড্রেশন ত্বক এবং শরীর স্বাস্থ্যও উন্নত করতে সাহায্য করে এবং পানির বেশিরভাগ অংশ মেটাবলিজম রেড বাড়ায়, ফলে চর্বি পড়াতে সহায়ক হতে পারে।
- ফাইবারের উঁচু পরিমাণঃ লাউএ উচ্চ পরিমাণে ফাইবার রয়েছে, যা হজমে সাহায্য করে এবং দীর্ঘসময় পেট পূর্ণ রাখে। এটি খেলে খুব দ্রুত খোলা অনুভূত হয় না ফলে অতিরিক্ত খাওয়ার প্রবণতা কমে যায় এবং খাবারের পরিমাণও নিয়ন্ত্রণে রাখে। এতে ওজন কমাতে সহায়ক হয়।
- প্রাকৃতিক ডিটক্সিফিকেশনঃ লাউয়ে এন্টিঅক্সিডেন্ট গুণাবলী রয়েছে, যার শরীরের থেকে বিষাক্ত পদার্থ বের করতে সাহায্য করে। এটি লিভার ও কিডনির কার্যক্ষমতা বাড়ায় এবং শরীরকে পরিষ্কার রাখে ফলে মেটাবলিজমের ক্ষমতা উন্নত হয়।
আরও পড়ুনঃ আপেল সিডার ভিনেগার ১৫ টি স্বাস্থ্য উপকারিতা
- সোডিয়াম কম এবং পটাশিয়াম উচ্চঃ লাউয়ে সোডিয়াম কম এবং পটাশিয়াম বেশি থাকাই এটি শরীর থেকে অতিরিক্ত জল বের করে দেয় এবং ফ্লুইড রিটেনশন কমিয়ে দেয় যা বডি ফ্যাট কমানোর প্রক্রিয়ায় সাহায্য করে।
- গ্লাইসোমিক ইনডেক্স কমঃ লাউয়ের গ্লাইডেমিক ইনডেক্স কম, যার মানে এটি রক্তে শর্করার স্তর দ্রুত বাড়ায় না। এটি ইনসুলিনের মাত্রা কে স্থিতিশীল রাখে যা চর্বি জমতে বাধা দেয়।
- ভিটামিন এবং খনিজঃ লাউ এ ভিটামিন সি, ভিটামিন এ এবং কিছুক্ষণের যেমন ক্যালসিয়াম ও আয়রন থাকে, যা শরীরের পুষ্টির চাহিদা পূরণ করতে সাহায্য করে। এই উপাদানগুলি স্বাস্থ্য বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
পরিশেষে বলা যায় যে, লাউ খাওয়া ওজন কমানোর জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সহায়ক যা প্রাকৃতিক উপায় হতে পারে, তবে শুধুমাত্র লাউ খাওয়ায়ই একাই যথেষ্ট নয়। ওজন কমাতে হলে একটি ভালো খাদ্য তালিকা তৈরি করতে হবে এবং নিয়মিত ব্যায়ামও করতে হবে।
লাউয়ের বিভিন্ন ব্যবহার
লাউ এর বিভিন্ন ব্যবহার স্বাস্থ্য, রান্না এবং সৌন্দর্য যত্নে উপকারী, যেমন এটি পুষ্টিকর খাবার, ত্বক ও চুলের যত্নে এবং শরীরে ডিটক্সিফিকেশনে সহায়ক। আমরা লাউকে বিভিন্নভাবে ব্যবহার করে থাকি যেমন-
- পুষ্টিকর রেসিপি প্রস্তুতিতে লাউয়ের ব্যবহারঃ লাউ রান্নার ক্ষেত্রে একটি জনপ্রিয় সবজি। লাউ সেদ্ধ, ভাজি, ঝোল বা দইয়ের সঙ্গে মিলিয়ে খাওয়া যায়। লাউ দিয়ে তৈরি লাউয়ের ঝোল, লাউ চিংড়ি বা লাউ দিয়ে পুষ্টিকর খিচুড়ি এবং সুস্বাদু বিভিন্ন রেসিপি তে ব্যবহৃত হয়।
- লাউয়ের রস শরীরের জন্য উপকারীঃ লাউয়ের রস সাধারনত আপনারা যদি সকালে খালি পেটে পান করেন তবে আপনাদের শরীর ডিটক্সিফাই হয়। এটি ওজন কমাতে এবং রক্তপাত নিয়ন্ত্রণ করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
- সুস্বাদু লাউয়ের ঝোলঃ লাউ দিয়ে মাছ বা মাংসের ঝোল রান্না করে খাওয়ার অভ্যাস বহু পুরনো। এটি এক দিকে যেমন সহজপাঠ্য অন্যদিকে তেমন পুষ্টিকর এবং সুস্বাদু। বিশেষ করে গরমে লাউয়ের ঝোল শরীরকে ঠান্ডা রাখতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে।
- মিষ্টি খাবারে লাউয়ের ব্যবহারঃ আপনারা অনেকেই জানেন না যে লাউ দিয়ে পায়েস ও হালুয়া বাঙ্গালীদের একটি অন্যতম খাদ্য তালিকায় অন্তর্ভুক্ত। লাউয়ের পায়েসে নারকেল ও গুড় যোগ করে ভিন্ন স্বাদ আনা যায়। এটি পরিবারের বিশেষ আয়োজনে পরিবেশন করানো যায়।
- গরমকালে লাউয়ের স্যুপঃ লাউ দিয়ে কিন্তু অনেক মজাদার সুপ তৈরি করা যায় যা শরীরকে হাইড্রেট রাখে এবং গরমে ক্লান্তি দূর করে। লাউয়ের সুপে একটু আদা, একটু গোলমরিচ, একটু সোয়াসস, হালকা কাঁচা মরিচ এবং সাথে ধনিয়া পাতা যোগ করলে সুখটি অত্যাধিক সুস্বাদু ও স্বাস্থ্যকর হয়।
- ত্বকের যত্নে লাউয়ের রসঃ লাউ এর রস প্রাকৃতিক ত্বকের যত্নে ব্যবহার করা হয়। এটি ব্রণ দূর করে এবং ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে। মুখে লাউয়ের রস মেসেজ করলে ত্বকের শুষ্কতা দূর হয় এবং বলিরেখা তে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
- কিডনি ও লিভারের সুরক্ষায় লাউঃ লাউয়ের রস কিডনি ও লিভারের কার্যক্ষমতা বাড়ায়। এটি শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ বের করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নিয়মিত লাউয়ের রস সকালে পান করলে প্রসবের পরিমাণ বাড়ে পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে।
- শিশুর জন্য লাউ পিউরিঃ শিশুর প্রথম খাবার হিসেবে লাউ একটি আদর্শ খাবার। সেদ্ধ লাউ ব্লেন্ড করে লবণ ছাড়া পিউরি তৈরি করে খাওয়ানো যায়। আর এই সেদ্ধ লাউ এর সাথে একটু চিনি মিশিয়েও খাওয়ানো যায়। এটি হালকা এবং সহজপাচ্য যা শিশুদের খাবারের জন্য বিশেষ উপযোগী।
- সালাদে লাউয়ের ব্যবহারঃ সেদ্ধ লাউ কিউব ব্রেক কেটে টমেটো, শসা এবং লেবুর রসের সঙ্গে মিশিয়ে একটি হালকা ও স্বাস্থ্যকর শালা তৈরি করা যায়। এই সালাদে একটু কাঁচা মরিচ, একটু বিট লবণ, একটু সয়াসস একটু টমেটো সস যোগ করলে সালাদটি অনেক মজাদার এবং সুস্বাদু হয়। এই ডায়েট খাবারের হিসেবেও উপযোগী একটি সালাদ।
- লাউয়ের খোসার ভর্তা ও ভাজিঃ লাউ এমন একটি পুষ্টিকর সবজি যার কোন অংশই ফেলা যায় না। তার সব অংশই আমরা খাবার হিসাবে ব্যবহার করি। লাউয়ের খোসার ভর্তা এতটাই মজাদার যা বলার শেষ নেই। এটি ফাইবার সমৃদ্ধ এবং অন্ত্রের কার্যক্ষমতা বাড়ায়। লাউয়ের খোসার ভাজিও খাওয়া যায়। চিকন করে কেটে আলুর সাথে বেশি করে পেয়াজ দিয়ে ভাজি অনেক সুস্বাদু হয়।
- পুষ্টিকর লাউ চিংড়িঃ লাউ দিয়ে চিংড়ি মাছ রান্না এটি আমাদের বহু আগের প্রিয় খাবার। এটি বাঙালির একটি পছন্দনীয় রেসিপি লাউ চিংড়ি। ভাতের সঙ্গে খেতে বা রুটির সঙ্গে খেতে অত্যন্ত সুস্বাদু, মজাদার। এতে লাউয়ের ননসাদ চিংড়ির মশলার সঙ্গে মিশে এক অসাধারণ স্বাদ তৈরি হয়।
- লাউ পাতার ভাজিঃ লাউয়ের পাতার ভাজি আরেক মজাদার খাবার। লাউয়ের পাতায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এবং মিনারেল। পাতাকে কুচি করে কেটে তার সাথে হালকা আলু দিয়ে ভাজি করলে অত্যাধিক সুস্বাদু একটি রেসিপি তৈরি হয়। যা গরম ভাতের সাথে মজাদার।
- রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে লাউঃ লাউয়ের রস রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। এটি বিশেষ করে উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের জন্য খুবই কার্যকরী।
পরিশেষে বলা যায় যে লাউ কেবলমাত্র সবজি নয়, এটি পুষ্টি ও স্বাস্থ্যের জন্য বহুমুখীভাবে ব্যবহার করা যায় এবং তার কোন অংশই ফেলা যায় না। লাউয়ের পাতা থেকে শুরু করে চোকা পর্যন্ত সবকিছুই খাবারের উপযোগী। তাই খাবার রান্না থেকে ত্বকের যত্ন লাউয়ের ব্যবহার জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে কার্যকর।
মন্তব্যঃ লাউ এর উপকারিতা ও অপকারিতা
লাউ এর উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে সবই জানলাম। লাউ একটি পুষ্টিগীনে ভরপুর সবজি যা, আমাদের শরীরের জন্য ভীষণ উপকারী। এটি হজম শক্তি বাড়ানো, ওজন নিয়ন্ত্রণ করা, হৃদযন্ত্র সুস্থ রাখা এবং ত্বকের যত্নে কার্যকর হলেও অতিরিক্ত লাউ খেলে হজমে সমস্যা বা ঠান্ডাজনিত অসুবিধা হতে পারে। তাই পরিমিত এবং সঠিক উপায়ে লাউ খাওয়ায় উত্তম।
আমাদের লাউ সম্পর্কে আজকের এই আলোচনা এখানেই শেষ। লাউয়ের উপকারিতা ও অপকারিতা নিয়ে এই লেখাটি যদি আপনাদের কাজে আসে তবে আমি নিজেকে ধন্য মনে করব এবং তা অবশ্যই মন্তব্যে জানাবেন। ভালো থাকুন সচেতন থাকুন, পরবর্তীতে আবারও কোন লেখায় আপনাদের সাথে দেখা হবে।
প্রশ্ন ২৪ ব্লক এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url