মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার উপায়

 

মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার উপায় হলো নিয়মিত বিশ্রাম নেওয়া, পছন্দের কাজ করা এবং ইতিবাচক চিন্তা করা। মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখা আমাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সফলতার মূল ভিত্তি। এটি শুধু মনের স্থিতি ছিল তা নয় বরং সুখী ও স্বার্থপর জীবন যাপনে চাবিকাঠি।

মানসিক-স্বাস্থ্য-ভালো-রাখার-উপায়

মানসিক সুস্থতা বজায় রাখতে সচেতন হওয়া এবং নিয়মিত কিছু অভ্যাস চর্চা করা আমাদের জীবনের অত্যন্ত জরুরি একটি কাজ। আমরা অনেকেই জানিনা যে মানসিক সুস্থটা কতটা জরুরী। আসুন আজকের এই ব্লগে মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়ার কার্যকর উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত জানি এবং সুখী সমৃদ্ধ জীবন গড়ে তুলি।

পোস্ট সূচিপত্রঃ মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার উপায়

 মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার উপায়

মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার উপায় হচ্ছে আমাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সফলতার একটি মূল ভিত্তি। মানসিক স্বাস্থ্য হচ্ছে আমাদের মানুষের সামগ্রিক সুস্থতার একটি মূল চাবিকাঠি। এটি আমাদের চিন্তা, আবেগ, অনুভূতি এবং আচরণকে সুন্দরভাবে প্রভাবিত করে। 

মানসিকভাবে সুস্থ থাকা কেবল সুখী জীবনের জন্য নয় বরং সম্পর্ক, কর্মজীবন এবং দৈনন্দিন কাজে সফলতার জন্য অপরিহার্য। নিম্নে মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার কিছু গুরুত্বপূর্ণ উপায় নিয়ে আলোচনা করা হলো-

  • পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণঃ পুষ্টিকর খাবার শুধু শারীরিক স্বাস্থ্য নয়, মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য অপরিহার্য। মস্তিষ্ক আমাদের জীবনে অনেক বড় একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ফল, শাকসবজি, বাদাম, মাছ, মাংস এবং পর্যাপ্ত পানিগ্রহণ মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়ায় এবং আমাদের মনকে শান্ত রাখে। চিনি বা বিভিন্ন প্রক্রিয়া যা খাবার আমাদেরকে পরিহার করতে হবে মানসিক স্থিতি বজায় রাখার জন্য।
  • পর্যাপ্ত ঘুমঃ পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুম আমাদের জীবনের সাথে অতপ্রতভাবে জড়িয়ে আছে। প্রতিদিন অন্তত ৭-৮ ঘন্টা ঘুম একটি মানুষের মানসিক সুস্থতার জন্য অত্যন্ত জরুরি। ঘুম যদি পর্যাপ্ত পরিমাণে না হয় তাহলে মস্তিষ্ক আমাদের সঠিকভাবে কাজ করতে পারে না। বরং এটি আমাদের উদ্বেগ বাড়ায় ও হতাশা বাড়িয়ে দেয়। সেজন্য একটি নির্দিষ্ট সময়সূচিতে ঘুমে অভ্যাস গড়ে তোলা গুরুত্বপূর্ণ অপরিহার্য বিষয়।

  • নিয়মিত শরীর চর্চাঃ কথায় আছে সুস্বাস্থ্য সকল সুখের মূল, অর্থাৎ সুখী সমৃদ্ধ একটি মানসিক অবস্থা পেতে গেলে আমাদেরকে অবশ্যই শরীরচর্চা করতে হবে। নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম আমাদের মস্তিষ্কে এন্ডরফিন হরমোন নিঃসরণে সাহায্য করে, যে হরমোন আমাদের মনকে ভালো রাখতে এবং সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটা, দৌড়ানো বা যোগ ব্যায়ামের মত অনুশীলন করা মানসিক চাপ কমায়।
  • ইতিবাচক চিন্তা করাঃ আমরা যাই ভাবি সেটা আমাদের মস্তিষ্ককে তাই ভাবাতেই চেষ্টা করে। এই কারণে নেতিবাচক চিন্তা থেকে দূরে থেকে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রাখা মানসিক স্থিতি ধরে রাখতে সাহায্য করে। নিজের সফলতা এবং ভালো কাজের জন্য নিজেকে প্রশংসা করতে হবে বা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার ইতিবাচক মানসিকতা গড়ে তুলতে হবে।

  • সামাজিক সম্পর্ক বজায় রাখাঃ মানুষ সামাজিক জীব অর্থাৎ সমাজবদ্ধ ছাড়া মানুষ কখনোই মানুষ হতে পারে না। পরিবার, বন্ধু বা প্রিয়জনের সঙ্গে সময় কাটানো এবং খোলামেলা আলোচনা করা মানসিক চাপ দূর করতে সাহায্য করে। একাকীত্ব মানসিক সমস্যার সবচেয়ে বড় কারণ, তাই আমাদের অবশ্যই এই একাকীত্ব এড়িয়ে চলতে হবে। সবার সাথে মিশতে হবে কথা শেয়ার করতে হবে।
  • মানসিক চাপ ব্যবস্থাপনাঃ মানসিক চাপ নিয়ে কেউ কখনো সুস্থ স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারে না। তাই মানুষের চাপ কমানোর জন্য আপনাকে নিয়মিত মেডিটেশন, শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম বা প্রাকৃতিক পরিবেশে সময় কাটানোর অভ্যাস করতে হবে। চাপ কমানোর জন্য প্রয়োজনে নিজের প্রিয় কাজ যেমন- গান শোনা, বই পড়া, ছবি আঁকা বা আপনাকে আনন্দ দেয় যে কোন ধরনের কাজ।
  • লক্ষ্য স্থির করাঃ লক্ষ্যছাড়া মানুষের জীবন চলতে পারে না। আপনার নিজের জীবনের লক্ষ্য গুলোকে আগে ছোট ছোট ধাপে বিভক্ত করুন। একটি কাজ শেষ হওয়ার পরে পরবর্তী কি কাজ করবেন তা পরে মনোযোগ দিবেন। একসঙ্গে কখনোই অনেক কাজ করতে যাবেন না এতে মানসিক চাপ বাড়ানো হবে। এটার পরিবর্তে সময়কে সঠিকভাবে কাজে লাগানোর অভ্যাস গড়ে তুলুন।

  • প্রযুক্তি থেকে দূরে থাকুনঃ যদিও বর্তমান সময়টা ডিজিটাল যুগ তারপরেও প্রযুক্তির অতিরিক্ত ব্যবহার বিশেষ করে সোশ্যাল মিডিয়া, মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। দিনশেষে কিছুটা সময় নিজের জন্য নির্ধারণ করুন, প্রযুক্তি থেকে দূরে থাকবেন শুধুমাত্র নিজের জন্য সময়টুকু বেছে নিন।
  • নিজেকে সময় দেওয়াঃ বর্তমান সময়ের সবচেয়ে বড় কঠিন একটি কাজ হল নিজের জন্য সময় বের করা। আমরা সবাই এতটাই ব্যস্ততা মাঝে জীবনকে বিলিয়ে দিয়েছি যে নিজের জন্য সময় বের করতে ভুলে গেছি। নিজের শখ বা ভালোলাগার কাজগুলোর জন্য সময় বের করুন। এটি আপনার মন ভালো রাখতে এবং আত্মতৃপ্তি অর্জনে সাহায্য করবে। 

  • পছন্দের কাজ করাঃ আমরা অনেক সময় মানুষ কি ভাববে এই কথাটির জন্য নিজের পছন্দের কাজগুলো থেকে দূরে থাকি । কিন্তু আসলে তা নয় যদি সেই কাজটা প্রকৃতির নিয়ম অনুযায়ী হয় তবে অবশ্যই আমাদেরকে আমাদের পছন্দের কাজগুলো করতে হবে। নিজেকে নিয়োজিত করতে হবে যেটা আপনার পছন্দের এবং আপনার মনের ।
  • প্রকৃতির সান্নিধ্যে থাকাঃ প্রকৃতি এক অনন্য সুন্দর যা আমাদের জীবনের অনেক কিছুর সমস্যার সমাধানের একমাত্র জায়গা। প্রকৃতি থেকেই আমরা সবকিছু সমাধান করে থাকি। সময় কাটানো যেমন হাঁটতে যাওয়া, খোলা বাতাসে নিজেকে বিলিয়ে দেওয়া, আমার নদীর পাশে নিজেকে উপস্থাপন করা এই সব কিছুই আমাদের মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে ।

  • নিজের প্রতি যত্নশীল হওয়াঃ আমরা অনেকেই আছে যারা নিজেকে ভুলে গেছি। কিন্তু আসলে কি তা ঠিক, নিজের প্রতি দয়ালু হন, নিজেকে চিনেন, নিজেকে নিয়ে ভাবেন নিজের ভুল-ত্রুটিগুলো ক্ষমা করেন এবং নিজেকে নতুন ভাবে শুরু করার সুযোগ দিন। 
  • পেশাদারের সাহায্য নেওয়াঃ আপনারা নিজেকে এতটাই কর্মমুখী করে তুলেছেন যে আপনি যে মানসিক চাপে ভুগছেন সেটাও আপনি বুঝতে পারেন না। যদি মনে হয় মানসিক চাপ বা উদ্যোগ সহনীয় পর্যায়ে নেই, তবে অবশ্যই আপনাকে মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে। এটি লজ্জার কোন বিষয় নয় বরং সঠিক সময়ে সহায়তা নেওয়া ভবিষ্যতের জন্য উপকারী।

পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে, আমাদের প্রত্যেককেই নিজেকে ভালবাসতে হবে তা না হলে আমরা আমাদের মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে পারব না। মানসিক স্বার্থ ভালো রাখার জন্য সবচেয়ে সচেতন হতে হবে এবং নিয়মিত কিছু অভ্যাস চর্চা করা আমাদের প্রয়োজন। একটি সুস্থ গাছ যেমন সুস্থ ফল বা ফুল উপহার দেয় ঠিক তেমনি সুস্থ মানসিকতা একটি সুস্থ জীবন বা মানসিকতা উপহার দেয়। 

শুধু ব্যক্তিগত জীবন নয় পেশাগত জীবনেও এই সুস্থ মানবিকতা ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। ছোট ছোট পরিবর্তন গুলো বড় সুখের পথে ধাপে ধাপে এগিয়ে নিতে পারে। মন সুস্থ থাকলে জীবন হবে আনন্দময় এবং স্বর্গের মতো আলোকিত। তাই সুস্থ জীবন যাপনের জন্য সুস্থ মানসিকতা অত্যন্ত অপরিহার্য।

 সামাজিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার উপায়

সামাজিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার উপায় হল আমাদের সম্পর্কগুলোকে আন্তরিকতার সাথে বজায় রাখতে হবে, সহানুভূতিশীল হতে হবে এবং তাদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করতে হবে। সামাজিক স্বাস্থ্য বলতে বোঝায় ব্যক্তি তার পরিবার, বন্ধুবান্ধব এবং বৃহত্তর সমাজের সঙ্গে যে সম্পর্ক ও আন্ত সম্পর্ক বজায় রাখে।

সামাজিকতা এটি একটি সুখী এবং পরিপূর্ণ জীবনের জন্য অপরিহার্য একটি অংশ। সামাজিকভাবে সুস্থ থাকলে মানুষ তার একাকীত্ব দূর করে, নিজের প্রতি আস্থা বৃদ্ধি করে এবং মানসিক শান্তি পায়। তাই সামাজিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার গুরুত্বপূর্ণ উপাদানই হলো গভীর সম্পর্ক এবং আন্তক্রিয়া বজায় রাখা।

  • সম্পর্কের গভীরতা বৃদ্ধি করুনঃ আমরা ভাবি কোন সম্পর্ক শুধু যোগাযোগের মাধ্যমেই সীমাবদ্ধ থাকে কিন্তু আসলে তা নয়, সম্পর্কের গভীরতা ধরে রাখা গুরুত্বপূর্ণ। বন্ধুদের সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা করতে হবে, তাদের সাথে সময় কাটাতে হবে, বিভিন্ন ধরনের সমস্যায় একসাথে থাকতে হবে, তাদেরকে বোঝাতে হবে আমরা আছি, থাকবো, ভয় নেই। তাই প্রয়োজনে তাদের সাহায্য করতে হবে এবং তাদের সাহায্য চাইতেও দ্বিধাবোধ করা যাবে না।
  • নতুন মানুষের সঙ্গে বন্ধুত্ব গরুনঃ কথায় আছে- "Man can not live alone" তাই নতুন মানুষের সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ার মানসিকতা রাখতে হবে। আপনার সামাজিক বৃত্তকে সম্প্রসারিত করতে নতুন মানুষের সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে তুলতে হবে। আন্তরিকভাবে পরিচিত হতে এগিয়ে যান তাদের কথা মনোযোগ দিয়ে শুনতে হবে এবং সাধারণভাবে আগ্রহ খুঁজে বের করতে হবে। বিশ্বাস ও সম্মান বজায় রেখে আন্তরিকতা প্রদর্শন করলে নতুন বন্ধুত্ব শক্তিশালী হবে।

  • দলগত কাজে অংশগ্রহণঃ আপনাদেরকে যেকোনো ধরনের দলগত কাজ যেমন স্বেচ্ছাসেবী কার্যক্রম বা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করলে মানুষের সাথে যোগাযোগ বাড়বে। শুধু সামাজিক দক্ষতাই বৃদ্ধি পাবে না বরং মানুষের প্রতি সহানুভূতি এবং নিজের দায়িত্ববোধ ও গড়ে উঠবে।
  • প্রযুক্তি ও সামাজিক মাধ্যমের সঠিক ব্যবহারঃ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বন্ধুত্ব বজায় রাখার গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম, তবে আপনাদের এর অতিরিক্ত ব্যবহার সম্পর্কে গভীরতায় বাধার সৃষ্টি করতে পারে। ভার্চুয়াল সম্পর্কের পাশাপাশি সরাসরি দেখা করে বা ফোনে কথা বলে সম্পর্ক দৃঢ় করতে হবে। কেননা কথায় আছে চোখের আড়াল, মানেই মনের আড়াল।

  • সহনাভূতিশীল মনোভাব গড়ে তোলাঃ মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব তাই আপনাদের মাঝে অবশ্যই সহানুভূতিশীল মনোভাব গড়ে তুলতে হবে। মানুষের সমস্যাগুলো বুঝতে চেষ্টা করুন এবং সহানুভূতিশীল হন। অন্যের দুঃখ-কষ্টে পাশে দাঁড়ালে সম্পর্কের দৃঢ়তা বাড়ে এবং এটি সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতাও জাগ্রত হয়।
  • সমবয়সীদের সঙ্গে সময় কাটানঃ আপনার বয়সের সাথে সামঞ্জস্য রেখে যেকোনো বয়স বা আগ্রহের সঙ্গে মিলে এমন মনের মানুষের সঙ্গে সময় কাটালে আপনি মানসিক চাপ থেকে মুক্তি পাবেন। এতে মানসিক চাপ যেমন কমবে তেমনি সম্পর্কের আনন্দ দ্বিগুণ হবে। অভিন্ন অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করে সমাজবন্ধনকে মজবুত করতে হবে।

  • মানসিক চাপ কমানোর উপায় খুঁজুনঃ যেকোনো ধরনের মানসিক চাপ সাধারণত যেকোনো সম্পর্কের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। সেই কারণে নিয়মিত শরীর চর্চা, মেডিটেশন বা মন ভালো রাখার কাজগুলো করলে ব্যক্তিগত বা সামাজিক জীবনে স্থিতি বজায় থাকে।
  • ভিন্নমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হনঃ একটি সমাজে ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি এবং ভিন্ন মতাদর্শের লোকজন বসবাস করে। এই জন্য সবার চিন্তা ভাবনা একরকম হয় না। এগুলোকে শ্রদ্ধা করতে হবে। এর মাধ্যমে আপনার চিন্তাধারা বুঝতে এবং একটি সহনশীল পরিবেশ তৈরি করতে পারবেন।

আরও পড়ুনঃ জন্ডিস রোগীর খাবার তালিকা 

  • নিজের প্রতি যত্নশীল হনঃ আপনি যদি সুস্থ থাকেন তাহলে আপনার চারপাশের পরিবেশ হবে সুস্থ কিন্তু আপনি যদি অসুস্থ থাকেন আপনার চারপাশের পরিবেশ সুস্থ থাকলেও আপনার কাছে লাগবে অসুস্থ। তাই সামাজিক স্বাস্থ্য বজায় রাখতে নিজের শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা ভালো রাখার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সুস্থ থাকা মানে আপনি অন্যদের সঙ্গে আরও ভালোভাবে সম্পর্ক স্থাপন করতে পারবেন।
  • সাহায্য করতে প্রস্তুত থাকুনঃ আমরা প্রত্যেকেই এটা অপরের সহযোগী প্রতিযোগী নয় এ কথাটাই মনে প্রানে ভাবতে হবে। মানুষের বিপদের পাশে দাঁড়ানো শুধু সম্পর্ক মজবুত করে না বরং নিজেকে একটি বৃহত্তর সমাজের অংশ হিসাবে অনুভব করায়। এই ধরনের কাজগুলো অবশ্যই আপনাকে একটা মানসিক শান্তি দেবে এবং দেবে পরিপূর্ণ তৃপ্তি।

পরিশেষে আমরা বলতে পারি মানুষ সামাজিক জীব, তাই সামাজিক স্বাস্থ্য একটি ব্যক্তির সামগ্রিক সুস্থতা গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এটি কখনো এককভাবে অর্জন করা সম্ভব নয় বরং পারস্পারিক সহযোগিতা এবং আন্তরিকতার সম্পর্কের মাধ্যমে এটি আমরা অর্জন করতে পারি। নিজের জীবনকে সুখী ও অর্থবহ করে তুলতে এবং সমাজের ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে সামাজিক স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়া অত্যন্ত অত্যাবশ্যক।

 মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার খাবার

মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার খাবার হল ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড, প্রোবায়োটিক, সবুজ শাকসবজি, ফলমূল এবং ডার্ক চকলেট। মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে হলে আপনাকে আপনার খাদ্যাভাস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। স্বাস্থ আবার কেবল শারীরিক স্বাস্থ্য উন্নত করে না এটি মানুষের স্বাস্থ্যের উপর ও ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। 

বিভিন্ন গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে, মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার উপায় তে সঠিক পুষ্টি মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা উন্নত করে, স্ট্রেস কমায় এবং মানসিক শক্তি বাড়ায়। নিচে মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সহায়ক কিছু খাবারের তালিকা ও তাদের প্রভাব বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলো- 

  • ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ খাবারঃ ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড মস্তিষ্কের গঠন এবং কার্যকারিতা উন্নত করে। এটি বিষন্নতা ও উদ্বেগ কমাতে সাহায্য করে। সামুদ্রিক মাছ যেমন- স্যামন, ম্যাকারেল, সারডিন এবং চিয়া বীজ, ফ্লেক্স সিড, আখরোট প্রভৃতি ওমেগা-৩ এর ভালো উৎস। নিয়মিত এই খাবারগুলো যদি গ্রহণ করেন তবে মস্তিষ্কের নিউরোট্রান্সমিটারগুলোর কার্যক্ষমতা উন্নত হবে এবং মানসিক চাপ হ্রাস পাবে।
  • পর্যাপ্ত প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবারঃ আমাদের মস্তিষ্কের কাজ করার জন্য নিউরোট্রান্সমিটারগুলো ডোপামিন এবং সেরোটোনিনের মত রাসায়নিক উৎপন্ন করে। প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার যেমন ডিম, মুরগির মাংস, দই, বাদাম এবং সিম জাতীয় খাবার এই রাসায়নিক তৈরিতে সাহায্য করে। বিশেষ করে ডিমে থাকা ট্রিপটোফ্যান সেরেটোনিনের মাত্রা বৃদ্ধি করে যা মানসিক স্থিতি ছিল তা আনতে সাহায্য করে।
  • সবুজ শাকসবজি এবং ফলমূলঃ সবুজ শাকসবজি যেমন পালং শাক, ব্রকলি এবং ফলমূল যেমন ব্লুবেরী, স্ট্রবেরি, আপেল, কমলালেবু মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য চমৎকার উৎস। এগুলো অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ, যা মস্তিষ্ককে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস থেকে রক্ষা করে। ভিটামিন সি এবং ই সমৃদ্ধ ফল মানসিক চাপ কমাতে কার্যকর।
  • পর্যাপ্ত জল এবং পানীয়ঃপানির অপর নাম জীবন” জান শরীরের পাশাপাশি মস্তিষ্কের কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখে। পর্যাপ্ত জল পান করা ডিহাইড্রেশন প্রতিরোধ করে, যা ক্লান্তি এবং মানসিক ওয়াইস্পষ্টতা দূর করে। এছাড়া হারবাল চা যেমন গ্রিন টি বা কেমোমাইল চা, মানুষ চাপ কমিয়ে প্রশান্তি আনে।

  • ফার্মেন্টেড ফুড বা প্রবায়োটিক সমৃদ্ধ খাবারঃ গাট-মস্তিষ্ক সংযোগের কারণে প্রোবায়োটিক সমৃদ্ধ খাবার মানসিক স্বাস্থ্যে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। দই, কেফির, কম্বুচা এবং ফার্মেন্টেড সবজি পেটের ভালো ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা বাড়ায় যা মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায়।
  • পুরো শস্য এবং জটিল কার্বোহাইড্রেটঃ পুরো শস্য যেমন ব্রাউন রাইস, ওটস এবং জটিল কার্বোহাইড্রেট মস্তিষ্কে ধীরে ধীরে গ্লুকোজ সরবরাহ করে, যা মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বজায় রাখতে সাহায্য করে। এগুলো সাধারণত বিষন্নতা দূর করতে এবং মনোযোগ বাড়াতে সাহায্য করে।
  • ডার্ক চকলেটঃ ডার্ক চকলেটের মধ্যে ফ্ল্যাভোনয়েডস এবং ম্যাগনেসিয়াম রয়েছে, যা স্ট্রেস হ্রাস করে এবং মন ভালো রাখে। একটি প্রবাদ বাক্য আছে যে, মানুষের মন খাবার দিয়ে জয় করা যায়। তাই প্রতিদিন পরিমিত পরিমানে ডার্ক চকলেট খেলে মানসিক প্রশান্তি পাওয়া যায়।

  • ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবারঃ ভিটামিন ডি সরাসরি মানসিক স্বাস্থ্য উন্নত করতে সাহায্য করে। ডিমের কুসুম, সামুদ্রিক মাছ এবং সূর্যের আলো ভিটামিন ডি-এর ভালো উৎস। ভিটামিন ডি এর অভাবে বিষন্নতা বাড়তে পারে তাই এটি নিশ্চিত করা প্রয়োজন।
  • বাদাম এবং বীজঃ বাদাম এবং বীজ যেমন কাজু, আখরোট, কুমড়ার বীজ, সূর্যমুখী বীজ মানসিক স্বাস্থ্য উন্নত করতে ব্যাপকভাবে সাহায্য করে। এগুলো সাধারণত ম্যাগনেসিয়াম, জিংক এবং স্বাস্থ্যকর ফ্যাটের ভালো উৎস।
  • মসলা এবং ভেষজ উপাদানঃ হলুদে থাকা কারকিউমিন একটি শক্তিশালী আন্টি-ইনফ্লামাটরি উপাদান, যা মস্তিষ্কের প্রদাহ কমায়। আদা এবং দারুচিনি মানসিক চাপ হ্রাসে কার্যকর।

সব শেষে বলা যায়, মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে খাবারের পাশাপাশি নিয়মিত ব্যায়াম, পর্যাপ্ত ঘুম এবং ইতিবাচক জীবনধারা বজায় রাখা প্রয়োজন। খাদ্যাভ্যাস সঠিক থাকলে মানসিক চাপ কমে, কর্ম ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং জীবন আরো সুখী হয়ে ওঠে।

 শারীরিক ও মানসিক ভাবে সুস্থ থাকার উপায়

শারীরিক ও মানসিক ভাবে সুস্থ থাকার উপায় হল সঠিক খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত ব্যায়াম, পর্যাপ্ত ঘুম এবং ইতিবাচক চিন্তাভাবনা। শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ থাকা জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলের মধ্যে একটি। শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্য একে অপরের উপর নির্ভরশীল। 

মানসিক-স্বাস্থ্য-ভালো-রাখার-উপায়

শারীরিকভাবে সুস্থ থাকা মানে শরীরের সব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ স্বাভাবিকভাবে কাজ করা, আর মানসিকভাবে সুস্থ থাকা মানে মনের ভারসাম্য বজায় রাখা এবং ইতিবাচক চিন্তা করা। অর্থাৎ মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার উপায়ের এখানে শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ থাকার কিছু কার্যকর উপায় নিয়ে আলোচনা করা হলো-

সঠিক খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখাঃ শরীর এবং মন একে অপরের সাথে জড়িত। শরীরের পাশাপাশি মস্তিষ্কের কার্যকারিতা উন্নত করতে পুষ্টিকর খাবার অপরিহার্য। প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, স্বাস্থ্যকর ফ্যাট, ভিটামিন এবং খনিজ সমিত খাবার নিয়মিত খাওয়া প্রয়োজন।

  • শারীরিকভাবে শক্তিশালী থাকতে তাজা শাক-সবজি, ফলমূল, পূর্ন শস্য এবং কঠিন সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে
  • মানসিক স্বাস্থ্য বজায় রাখতে ওমেগা-৩ ফেটি অ্যাসিড (যেমন- সামুদ্রিক মাছ, আখরোট) এবং প্রোবায়োটিক (যেমন- দই, কেফির) সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া জরুরি।
  • নিয়মিত ব্যায়াম করাঃ নিয়মিত ব্যায়াম শরীর এবং মনের জন্য সমানভাবে উপকারী।
  • প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাটা, দৌড়ানো, যোগব্যায়াম বাজে কোন শারীরিক কার্যক্রম রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে এবং শারীরিক কার্যক্ষমতা বাড়ায়।
  • ব্যায়াম মানসিক চাপ কমায়, ডোপামিন ও সেরোটোনিনের মত সুখের ”হরমোন” উৎপন্ন করে যা মন ভালো রাখতে সাহায্য করে।

পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিতঃ পর্যাপ্ত পরিমান ঘুম আমাদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান

  • একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের জন্য ২৪ ঘন্টায় ৭ থেকে ৯ ঘণ্টার ঘুম প্রয়োজন।
  • ঘুম শরীরকে পুনরুজ্জীবিত করে এবং মানসিক ক্লান্তি থেকে দূর করে।
  • স্ট্রেস ব্যবস্থাপনাঃ মানসিক সুস্থতার জন্য স্ট্রেস নিয়ন্ত্রণে রাখা অত্যন্ত জরুরি।
  • ধ্যান, শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম এবং যোগব্যায়াম মানসিক চাপ কমাতে কার্যকর।
  • পছন্দের কাজ করা, প্রিয়জনদের সঙ্গে সময় কাটানো এবং ইতিবাচক চিন্তা করার অভ্যাস গড়ে তোলার মানসিক ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে।

পর্যাপ্ত পানি পান করাঃ পানি শরীরের কোষগুলোকে স্বনিও রাখে এবং শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ দূর করে।

  • প্রতিদিন অন্তত ৮-১০ গ্লাস পানি পান করা উচিত।
  • পর্যাপ্ত পানি মানসিক স্পষ্টতা এবং শারীরিক শক্তি বজায় রাখে।
  • সামাজিক সম্পর্ক বজায় রাখাঃ মানুষ স্বাস্থ্য উন্নত রাখতে পরিবার ও বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
  • সমাজের সঙ্গে জড়িত থাকা, মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা মানসিক স্থিতিশীলতা আনে।

খারাপ অভ্যাস এড়িয়ে চলাঃ শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার জন্য ধূমপান মদ্যপান এবং অতিরিক্ত প্রক্রিয়াজাত খাবার এড়িয়ে চলা উচিত।

  • এই অভ্যাসগুলো শরীরের ক্ষতি করে এবং মানসিক চাপ বাড়ায়।
  • নিজের জন্য সময় বের করাঃ আমরা নিজেকে একদম ভুলে যাই কিন্তু নিজের পছন্দের কাজ করার জন্য সময় বের করা মানসিক প্রশান্তি এনে দেয়।
  • বই পড়া, ছবি আঁকা, গান শোনা অথবা প্রাকৃতিক পরিবেশে সময় কাটানো মানসিক চাপ দূর করতে যথেষ্ট সহায়ক।

চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়াঃ শারীরিক কোন সমস্যা বা মানুষের অস্থিরতা থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

  • পরীক্ষা করিয়ে নিয়মিত শারীরিক অবস্থা থেকে নজর রাখা প্রয়োজন।

ইতিবাচক মনোভাব বজায় রাখাঃ জীবনের চ্যালেঞ্জগুলো মেনে নিয়ে ধৈর্য ধরে কাজ করা এবং ইতিবাচক মনোভাব বজায় রাখা মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য অপরিহার্য।

শেষে সার্বিকভাবে শারীরিক, ও মানসিকভাবে সুস্থ থাকার জন্য জীবন যাত্রায় শৃঙ্খলা আনা এবং স্বাস্থ্যকার অভ্যাস গড়ে তোলা অত্যন্ত জরুরী। শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য একসঙ্গে ভালো থাকলে জীবন আরও সুখময় ও সুফল হয় কারণ এরা একে অপরের সাথে জড়িত।

 আজীবন সুস্থ থাকার উপায়

আজীবন সুস্থ থাকার উপায় হল সঠিক খাদ্যভাস নিয়মিত ব্যায়াম, পর্যাপ্ত ঘুম, মানসিক শান্তি বজায় রাখা এবং খারাপ অভ্যাস এড়িয়ে চলা। আজীবন সুস্থ থাকার জন্য একটি সুশৃংখল জীবনধারা বজায় রাখা অপরিহার্য। আপনারা যদি আপনাদের শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি যত্নবান থাকেন তাহলে দীর্ঘ মেয়াদে অবশ্যই সুস্থ থাকা সম্ভব। এখানে আজীবন সুস্থ থাকার জন্য কিছু উপায় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো-

সুষম খাদ্য অভ্যাস বজায় রাখাঃ সুস্থ থাকার জন্য প্রথম শর্ত হলো সঠিক এবং পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ। আমরা যদি সঠিক নিয়মে খাবার গ্রহণ না করি তাহলে আমরা সুস্থ থাকতে পারবো না। তাই প্রথম সুস্থ থাকার পদক্ষেপ হলো সুষম খাদ্য অভ্যাস গড়ে তোলা।

  • প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় শাকসবজি, ফলমূল শস্য এবং প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া উচিত
  • প্রক্রিয়াজাত খাবার, অতিরিক্ত চর্বি, চিনি এবং লবণযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলা উচিত
  • প্রচুর পানি পান করে শরীরের টক্সিন দূর করে এবং শরীরকে আলো রাখা উচিত

নিয়মিত ব্যায়াম করাঃ শরীর এবং মন সুস্থ রাখতে হলে অবশ্যই প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট ব্যায়াম করার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।

  • হালকা দৌড়, হাটা, যোগব্যায়াম বা সাইক্লিন শরীরের রক্ত সঞ্চালন উন্নত করে এবং হৃদযন্ত্রকে সরল রাখে।
  • ব্যায়াম কেবল শরীরের জন্যই নয় মানসিক প্রশান্তির জন্য উপকারী। এটি এর স্ট্রেস কমাতে এবং শুকানুভূতির জন্য প্রয়োজনীয় হরমোন নিঃসরণে সাহায্য করে।

পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করাঃ ঘুম শরীর ও মনের জীবনের জন্য একটি অপরিহার্য উপাদান। ঘুম হচ্ছে  মানসিক একটি প্রশান্তি।

  • একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের ২৪ ঘন্টায় ৭-৮ ঘন্টা ঘুম প্রয়োজন
  • পর্যাপ্ত ঘুম শরীরের হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখে এবং রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা বাড়ায়

এক্সপ্রেস ও মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণঃ মানসিক চাপ দীর্ঘ মেয়াদে শরীর ও মনের জন্য ক্ষতিকর।

  • ধ্যান, শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম এবং পছন্দের কাজ করার মাধ্যমে স্ট্রেস কমানো যায়
  • মানসিক চাপমুক্ত জীবন যাপন করলে হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ এবং অন্যান্য মানসিক সমস্যা থেকে মুক্ত থাকা সম্ভব

সম্ভাব্য খারাপ অভ্যাস এড়িয়ে চলাঃ আজীবন সুস্থ থাকার জন্য ধূমপান, মদ্যপান এবং অন্যান্য ক্ষতিকারক বাস গুলো এড়িয়ে চলা উচিত

  • এই অভ্যাসগুলো শরীরের অভ্যন্তরীণ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি করে এবং জীবনকাল হ্রাস করতে পারে।

নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষাঃ সুস্থ থাকার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হল আমাদেরকে নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে হবে। নিজের শরীরের প্রতি যত্ন রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

  • নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করলে বিভিন্ন প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত করা সম্ভব
  • রক্তচাপ, ডায়াবেটিস এবং কোলেস্টেরলের মাত্রা সময় মত পরীক্ষা করা উচিত

সামাজিক সম্পর্ক বজায় রাখাঃ মানসিক স্বাস্থ্য উন্নতির জন্য পরিবার-পরিজন, আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখা উচিত।

  • সামাজিক সম্পর্ক জীবনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে এবং একাকীত্ব দূর করে

প্রাকৃতিক পরিবেশের সঙ্গে সংযোগ রাখাঃ প্রাকৃতিক পুলিশে সময় কাটানো শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী।

  • প্রকৃতির মাঝে হাটা বা সময় কাটানো স্ট্রেস দূর করে এবং মন ভালো রাখে

ইতিবাচক মনোভাব বজায় রাখাঃ জীবনে ইতিবাচক চিন্তা এবং ধৈর্য ধরে কাজ করার অভ্যাস সুস্থ থাকার জন্য আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।

  • হতাশা এবং নেতিবাচক চিন্তা এড়িয়ে নিজের উপর বিশ্বাস রাখতে হবে।
  • সময় ব্যবস্থাপনা করা সময় ব্যবস্থাপনা জীবনের ভারসাম্য বজায় রাখে-
  • কাজ, বিশ্রাম এবং অবসরের জন্য আলাদা সময় নির্ধারণ করে জীবনে শৃঙ্খলা সম্ভব

পরিশেষে বলা যায় যে আজীবন সুস্থ থাকতে হলে শরীর এবং মনের প্রতি সম্মান যত্ন নিতে হবে। সঠিক খাদ্যাভ্যাস, ব্যায়াম, পর্যাপ্ত বিশ্রাম এবং ইতিবাচক জীবন যাপন এই প্রক্রিয়ার অবিচ্ছেদ্য অংশ। সুস্থ থাকে বল দীর্ঘায়ু নয় বরং জীবনের গুণগত মানব বৃদ্ধি করে। নিয়মিত সুস্থ জীবনধারা অনুসরণ করলে জীবনের প্রতিটি মুহূর্তকে আরো উপভোগ করে তোলা সম্ভব।

 সামাজিক স্বাস্থ্য ভালো করার ১০ টি উপায়

সামাজিক স্বাস্থ্য ভালো করার ১০টি উপায় হল সম্পর্ক বজায় রাখা, সহমর্মিতা প্রকাশ, গঠনমূলক যোগাযোগ রক্ষা এবং অন্যের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা। আসলেই সামাজিক স্বাস্থ্য বলতে সমাজের সমগ্র অংশের কল্যাণটাকে বোঝায়। একজন ব্যক্তির পারিবারিক সামাজিক ও পেশাদার সম্পর্কে মান উন্নয়নের মাধ্যমে জীবনের স্থিতিশীলতা ও সুখ এনে দেয়। 

সামাজিক ব্যবস্থা এমন একটি ব্যবস্থা যেখানে শুধু আত্মকেন্দ্রিক চিন্তা করলেই হয় না সেখানে সমগ্র মানুষের কথা চিন্তা করে নিজের কথা চিন্তা করতে হয়। এখানে সামাজিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার ১০ টি উপায় সম্পর্কে কিছু আলোচনা করা হলো-

  1. সম্পর্ক বজায় রাখাঃ সামাজিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার প্রথম পদক্ষেপ হলো মানুষের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক গড়ে তোলা ও তা সুন্দরভাবে বজায় রাখা। জীবনের সব মুহূর্তেই পরিবার, বন্ধু বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন প্রতিবেশী ও সহকর্মীদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতে হবে। প্রয়োজনে ফোনে, চিঠিতে বা সরাসরি সাক্ষাৎ করে সম্পর্ককে দৃঢ় করতে হবে। সম্পর্ক উন্নত হলে ব্যক্তিগত সামাজিক জীবন আনন্দময় হয়।
  2. সহমর্মিতা ও সহানুভূতি প্রকাশঃ অন্যের প্রতি সহমর্মিতা ও সহানুভূতি প্রকাশ যে কোন সম্পর্কের গভীরতা বাড়ায়। কোন বন্ধু বা সহকর্মী সমস্যায় পড়লে তার পাশে দাঁড়াতে হবে বা তাকে সব ধরনের মানসিক সামর্থ্য দিতে হবে। মানুষের কষ্ট বা আনন্দ ভাগ করে নিলে সাধারণত সম্পর্ক মজবুত হয় এবং একে অপরের প্রতি আস্থা তৈরি হয়।
  3. গঠনমূলক যোগাযোগ রক্ষাঃ পরিষ্কার ও ইতিবাচক ভাবে কথা বলা সামাজিক সুস্বাস্থ্যের জন্য অপরিহার্য। আপনি যখন কথা বলবেন তখন অন্যকে গুরুত্ব দিন এবং তার কথা মনোযোগ দিয়ে শুনুন। আবেগ নিয়ন্ত্রণ করে নম্রভাবে কথা বললে সম্পর্ক সুন্দর মধুর হয়। এর পাশাপাশি অপ্রয়োজনীয় সমালোচনা এড়িয়ে চলে সম্পর্কের স্থায়িত্ব নিশ্চিত করতে হবে।
  4. সময় ব্যয় করাঃ প্রিয়জন বা আপনজনদের সঙ্গে সময় কাটানো সামাজিক সম্পর্ক উন্নয়নের একটি কার্যকর উপায়। পরিবারের সঙ্গে একত্রে খাওয়া, বাইরে কোথাও বেড়াতে যাওয়া বা মজার মজার কাজ করার অভ্যাস করতে হবে। সম্পর্কের গুণগত মান উন্নয়নে এই অভ্যাস গুলো গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে।
  5. মানুষকে সম্মান করাঃ সম্মান এমন একটা জিনিস যে, আপনি যদি কাউকে সম্মান করেন তাহলে অবশ্যই আপনিও আরো কাছ থেকে সম্মান পাবেন। সবাইকে সম্মান দেওয়া সামাজিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ। প্রত্যেক ব্যক্তির মতামত, সংস্কৃতি, বিশ্বাস এবং পছন্দের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করতে হবে। ভিন্নমাত গ্রহণ করার মানসিকতা গড়ে তুলতে হবে। এই গুণ পারস্পরিক সম্পর্ক উন্নত করে।
  6. আত্মবিশ্বাস তৈরি করাঃ নিজের আত্মবিশ্বাস তৈরি করেন এবং অন্যদের মধ্যে ইতিবাচক মনোভাব গড়ে তুলতে হবে। আত্মবিশ্বাসী মানুষ সব সম্পর্ককে মজবুত করতে পারে। জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে আত্মবিশ্বাস আপনার সামাজিক দক্ষতা বৃদ্ধি করে এবং সম্পর্কের টানাপোড়া কমায়।
  7. সাহায্য যাওয়া ও দেওয়াঃ কোন সমস্যায় পড়লে সাহস করে সাহায্য চাইতে হবে। কোন কাজই মানুষ একা করতে পারে না। তাই সামাজিক স্বাস্থ্য রক্ষার্থে অনেক সমস্যায় সাহায্যে হাত বাড়িয়ে দিতে হবে। সাহায্যের আদান-প্রদান মানুষের মধ্যে সৌহার্দ্য ও সহযোগিতার সম্পর্ক তৈরি করে।
  8. গঠনমূলক সমালোচনা গ্রহণ করাঃ আপনাদের সামাজিক সম্পর্ক উন্নত করার জন্য গঠনমূলক সমালোচনা গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি। অন্যদের কাছ থেকে বিভিন্ন পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে এবং তা থেকে শিখতে হবে। একইসঙ্গে অন্যকে পরামর্শ দেওয়ার সময় তাদের অনুভূতিকে সম্মান করতে হবে।
  9. মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ করাঃ মানসিক চাপ যে কোন সম্পর্কের জন্য ক্ষতিকর প্রভাব হতে পারে। তাই চাপমুক্ত থাকতে আপনাকে অবশ্যই যোগ ব্যায়াম, ধ্যান বা সৃজনশীল কাজে মনোযোগী হতে হবে। চাপমুক্ত মানুষ সামাজিক সম্পর্ক উন্নত করতে সক্ষম রাখে।
  10. স্বেচ্ছা সেবামূলক কাজে অংশগ্রহণঃ সমাজের উন্নয়নে স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজে অংশগ্রহণ সামাজিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে্ এতে আপনি নতুন মানুষের সঙ্গে পরিচিত হতে পারবেন এবং সমাজে নিজের অবস্থান শক্তিশালী করতে পারবেন।

পরিশেষে বলা যায় সামাজিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে এইসব অভ্যাস চর্চা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এগুলো শুধু ব্যক্তিজীবনের উন্নতি করে না বরং সমাজের সামগ্রিক কল্যাণেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। সামাজিক স্বাস্থ্য ভালো থাকলে মানুষ আত্মবিশ্বাসী ও সুখী জীবন যাপন করতে পারে। সামাজিক জীবনের সাথে আর্থিক জীবনের মিল থাকায় আমাদেরকে সাহায্য করতে হবে।

 শরীর স্বাস্থ্য ভালো করার উপায়

শরীর স্বাস্থ্য ভালো করার উপায় হল সুষম খাদ্য গ্রহণ, নিয়মিত ব্যায়াম, পর্যাপ্ত ঘুম, মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা। আসলেই শরীর সুস্থ রাখা জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। সুস্থ শরীর আমাদের মানসিক প্রশান্তি দেয় এবং সেই সাথে কার্যক্ষমতা বাড়ায়। শারীরিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে কিছু নির্দিষ্ট অভ্যাস চর্চা করা প্রয়োজন যেগুলো হল-

  • সুষম খাদ্য গ্রহণঃ শরীর সুস্থ রাখার মূল ভিত্তি হল সুষম খাদ্য। প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, ফ্যাট, ভিটামিন, খনিজ এবং ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার অবশ্যই আপনার প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় রাখুন। ফাস্টফুড ও অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। দিনে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করতে হবে যাতে আপনার শরীরের অভ্যন্তরীণ প্রক্রিয়া সঠিকভাবে পরিচালনা করে।
  • নিয়মিত ব্যায়ামঃ আপনার শরীরের স্বাস্থ্য উন্নত করার অন্যতম মাধ্যম হলো নিয়মিত ব্যায়াম করা। যোগ ব্যায়াম, দৌড়, হাটা বা সাঁতার কাটা শরীরকে সুস্থ কফি রাখে। প্রতিদিন আপনি অন্তত ৩০ মিনিট ব্যায়াম করার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। এটি কেবল শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণ করে না বরং ও অন্যান্য দীর্ঘমেয়াদী রোগের ঝুঁকি কমায়। কথায় আছে শরীর ফিট তা আপনি হিট।

  • পর্যাপ্ত ঘুমঃ আপনাদের শরীর সুস্থ রাখতে প্রতিদিন অবশ্যই ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ৭-৮ ঘন্টা ঘুম খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ঘুম হচ্ছে এমন একটি ওষুধ যা শরীরের কোষগুলো মেরামত করে এবং মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে। অনিয়মিত ঘুমালে শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।
  • মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণঃ আপনারা অনেকেই বুঝতে পারেন না যে মানসিক চাপ শরীরের উপরে বিরূপ প্রভাব ফেলে। তাই মেডিটেশন, ধ্যান বা পছন্দের কাজ করে মানসিক চাপ মুখ রাখার চেষ্টা করতে হবে। নিয়মিত মানসিক শান্তি শারীরিক সুস্থতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
  • পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতাঃ পরিস্কার-পরিছন্নতা যেমন- নিয়মিত গোসল করা, হাত ধোয়া, নখ কাটা ও পরিষ্কার জামা কাপড় পরা স্বাস্থ্য ও মন ভালো রাখতে সাহায্য করে। পরিবেশের পরিছন্নতা বজায় রাখাও সমান গুরুত্বপূর্ণ শরীর সুস্থতার জন্য।
  • খারাপ অভ্যাস পরিহারঃ শরীর স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য আপনাকে কিছু কিছু খারাপ অভ্যাস আছে যা পরিহার করতে হবে যেমন ধূমপান, অ্যালকোহল এবং মাদকদ্রব্য গ্রহণ থেকে বিরত থাকতে হবে, কারণ এগুলো শরীরের জন্য ক্ষতিকর। এসব অভ্যাস ত্যাগ করতে হবে এবং স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাপন করতে হবে।

  • নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষাঃ নিজের শরীরের অবস্থা সম্পর্কে সচেতন থাকতে আপনাদেরকে অবশ্যই নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার মধ্যে থাকতে হবে। প্রাথমিক অবস্থায় যেকোনো রোগ যেন শনাক্ত করা যায় তাহলে তার পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হবে। একটি সুস্থ শরীর, একটি সুস্থ মন, মানে একটি সুস্থ সমাজ।
  • ধিরে খাওয়া ও পরিমিত আহারঃ আমরা অনেকেই জানিনা যে খাবার ধীরে ধীরে চিবিয়ে খেলে হজম ভালো হয়। কারো অভ্যাস, কারো প্রয়োজনের তাগিদায় খাবার খুব দ্রুত খায়। পরিমিত আহার করতে হবে এবং বেশি খাওয়া এড়িয়ে চলতে হবে কারণ এটি ওজন বৃদ্ধি এবং হজমের সৃষ্টি করতে পারে।

পরিশেষে বলা যায় যে, শারীরিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য সুষম খাদ্য, নিয়মিত ব্যায়াম, পর্যাপ্ত ঘুম, মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন জীবন যাপন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই অভ্যাসগুলো চর্চা করলে শরীর শক্তিশালী এবং রোগমুক্ত থাকবে। সুস্থ শরীরই সুন্দর জীবনের চাবিকাঠি।

মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার ১০ টি উপায়

মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার দশটি উপায় আমাদের জীবনকে পরিবর্তন করে দেয়। মানসিক স্বাস্থ্য জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। আমাদের আবেগ, চিন্তা এবং আচরণের উপর প্রভাব ফেলে। মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখলে আমরা জীবন উপভোগ করতে পারি এবং বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ সহজেই মোকাবেলা করতে পারি। এখানে মাসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার ১০টি কার্যকরী উপায় আলোচনা করা হলো-

মানসিক-স্বাস্থ্য-ভালো-রাখার-উপায়

  1. নিয়মিত ব্যায়াম করাঃ শারীরিক ব্যায়াম শুধু শরীরের জন্য নয়, এটি আমাদের মন ভালো রাখার জন্যও কার্যকর। ব্যায়াম করার সময় শরীরে এন্ডোফিন নামক হরমোন মিশ্রিত হয়, যা মানসিক প্রশান্তি দেয় এবং স্ট্রেস কমায়। প্রতিদিন আপনাদের অন্তত ৩০ মিনিট হাটা, দৌড়ানো বা যোগব্যায়াম রাখতে হবে কারণ এগুলো মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে।
  2. সুষম খাদ্য গ্রহণঃ মন সাধারণত মস্তিষ্ককে কম্যান্ড দেয়। মস্তিষ্কের সুস্থতার জন্য সুষম খাদ্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ফল, শাকসবজি, বাদাম, প্রোটিন এবং ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ খাবার মন কে সতেজ রাখে। চিনি ও প্রক্রিয়াজাত খাবার কম খাওয়ার চেষ্টা করতে হবে কারণ এগুলো মানসিক অস্থিরতা বাড়াতে কার্যকর।
  3. পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করাঃ ঘুম আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলে। পর্যাপ্ত ঘুম মানুষকে এনে দেয় মানসিক প্রশান্তি এবং আবেগ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য প্রতিদিন অন্তত ৭-৮ ঘন্টা ঘুমানো প্রয়োজন। সঠিক পরিমাণের ঘুম মস্তিষ্কের খাদ্য।
  4. মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ করাঃ বর্তমান সময়ে আমরা এতটাই ব্যস্ত যে আমরা মানসিক চাপে সবসময়ই সময় অতিবাহিত করি। এজন্য ধ্যান, মেডিটেশন বা শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম মানসিক চাপ কমাতে অত্যন্ত কার্যকর। দিনের ব্যস্ততার মাঝে কিছু সময় নিজের জন্য বের করতে হবে এবং নিজের মানসিক শান্তির জন্য কাজ করতে হবে।
  5. ইতিবাচক সম্পর্ক বজায় রাখাঃ বর্তমান ডিজিটাল যুগে আমরা সবাই শুধু কর্মব্যস্ত তাই লিপ্ত। যার ফলে আমাদের মেজাজ সব সময় ক্ষিতমির থাকে। পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক বজায় রাখতে হবে কারণ মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য এটা অপরিহার্য। অন্যের সঙ্গে কথা বলা, সময় কাটানো এবং সুখ-দুঃখ ভাগ করে নেওয়া আবেগগত ভারসাম্য বজায় রাখে।
  6. নিজের পছন্দের কাজ করাঃ আমরা বর্তমানে দায়িত্বের চাপে এতটাই ব্যস্ত যে নিজের পছন্দ অপছন্দ কোন কিছুই মাথায় থাকে না। কিন্তু নিজের পছন্দের কাজ করার মাধ্যমে অনেক মানসিক প্রশান্তি পাওয়া যায়। যেমন গান শোনা, বই পড়া, ছবি আঁকা আঁকি বা যেকোন শখ পূরণের জন্য নিজেকে সময় দিতে হবে। এটি আপনাদের মানসিক চাপ কমাতে এবং আনন্দ বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
  7. নিজেকে মূল্যায়ন করুনঃ সবচেয়ে কঠিন কাজ হচ্ছে আমরা কেউ কখনো নিজেকে মূল্যায়ন করি না। মানসিক স্বাস্থ্য সুস্থ রাখার জন্য এটি একটি অন্যরকম কাজ। নিজের কাজের প্রতি গর্বিত হওয়া এবং নিজেকে ভালোবাসা মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। নেতিবাচক চিন্তা দূরে রাখতে হবে এবং নিজের অর্জনগুলোকে উদযাপন করতে হবে।
  8. গঠনমূলক চিন্তা চর্চাঃ সব সময় আপনাদেরকে ইতিবাচক চিন্তা করা উচিত কারণ এটিতে মানসিক প্রশান্তি বাড়ায়। নেতিবাচক চিন্তা এড়িয়ে নিজেকে উৎসাহিত করার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। এটি আত্মবিশ্বাস বাড়ায় এবং মানসিক স্থিতিশীলতা আনতে সাহায্য করে।
  9. প্রয়োজনীয় বিরতি নেওয়াঃ সময়ের সাথে সাথে কাজেরও পরিবর্তনের মাত্রা বদল হয়েছে। বর্তমানে সবাই কাজের চাপ থেকে মাঝে মাঝে বিরতি নেওয়ার অভ্যাস করতে হবে। দীর্ঘসময় কাজ করার ফলে মানসিক চাপ বাড়তে পারে যার কারণে বিভিন্ন ধরনের নেতিবাচক সমস্যা দেখা দেয়। কিছু, ধ্যান বা শিথিল হওয়ার জন্য নিজেকে সময় দিতে হবে।
  10. ডাক্তারের সহায়তা নেওয়াঃ যদি মানসিক অস্থিরতা দীর্ঘস্থায়ী হয় বা নিজের নিয়ন্ত্রণে বাইরে চলে যায় তাহলে অবশ্যই মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে পরামর্শ নিতে হবে। কারণ বর্তমান সময়ে বিভিন্ন থেরাপি বা কাউন্সিলিং অনেক ক্ষেত্রেই মানসিক সমস্যা সমাধানে সাহায্য করে।

পরিশেষে বলতে পারি মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে এই উপায়গুলো অবশ্যই চর্চা করতে হবে যা আপনাদের জীবনের ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে। একটি সুস্থ মন শুধু ব্যক্তিগত জীবনেই নয়, পেশাগত জীবনেও সফলতা আনতে সহায়তা করে। মানসিক শান্তি ও সুস্থতার জন্য নিয়মিত নিজের যত্ন নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

চাপমুক্ত জীবনের উপায়

চাপমুক্ত জীবনের উপায় হল আপনাকে নিয়মিত ব্যায়াম, ধ্যান করা, সঠিকভাবে সময় ব্যবস্থাপনা করা, পছন্দের কাজ করা এবং ইতিবাচক চিন্তা চর্চা করা। চাপমুক্ত জীবনযাপন করা মানে জীবনের দৈনন্দিন চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলা করে মানসিক এবং শারীরিকভাবে সুস্থ থাকতে হবে। এটি অর্জন করতে হলে কিছু কার্যকার অভ্যাস ও মানসিকতা গ্রহণ করতে হবে। উপায় গুলো হলো-

  • মানসিক সুস্থতার যত্নঃ চাপমুক্ত জীবনের প্রথম ধাপ হলো মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি যত্নশীল হতে হবে। প্রতিদিন কিছুটা সময় আপনার জন্য রাখতে হবে। বিভিন্ন ধরনের ব্যায়াম যেমন ধ্যান, যোগব্যায়াম কিম্বা গভীর শ্বাস নেওয়ার অনুশীলন করতে পারেন। এগুলো আপনাকে মানসিক চাপ কমাতে অত্যন্ত সাহায্য করবে।
  • বদ্ধতা সীমাবদ্ধতা বোঝা এবং গ্রহণ করাঃ আমাদের জীবনের সবকিছুই আমাদের নিয়ন্ত্রণে থাকে না। এই কথাটি যদি আমরা মেনে নেই এবং বাস্তবসম্মত প্রত্যাশা তৈরি করি তাহলে অবশ্যই মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করবে। জীবনের সীমাবদ্ধতা গুলোকে ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করতে হবে এবং অপ্রয়োজনীয় উদ্যোগ থেকে মুক্ত থাকতে হবে।
  • সময় ব্যবস্থাপনাঃ সঠিক সময় ব্যবস্থাপনা চাপ কমাতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে। প্রত্যেকটি কাজে অগ্রাধিকার ঠিক করতে হবে এবং সময় মত কাজ গুলো শেষ করার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।
  • পরিপূর্ণ জীবনযাপনের প্রতি মনোযোগঃ আমাদের সবাইকে এই ব্যস্ততার সময়ে জীবনের ছোট ছোট আনন্দ উপভোগ করতে শিখতে হবে। প্রকৃতির সৌন্দর্য, প্রিয়জনের সঙ্গে সময় কাটানো, বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে এক কাপ কফি, কিম্বা নিজের পছন্দের কাজের মধ্যে ডুবে যাওয়া আপনার মনকে দেবে প্রশান্তি।
  • সক্ষমতাকে বাড়ানোঃ যে কাজ বা সমস্যা আপনার জন্য চাপ সৃষ্টি করবে তার সমাধানের দক্ষতা অর্জনের চেষ্টা করতে হবে। প্রয়োজনীয় জ্ঞান ও দক্ষতা বৃদ্ধি করলে আত্মবিশ্বাস বাড়ে এবং মানসিক চাপ কমে। 

  • অস্বাস্থ্যকর অভ্যাস এড়িয়ে চলাঃ কিভাবে জীবন যাপন করতে হলে বা জীবনকে একটি জায়গায় দাড় করাতে হলে কিছু অভ্যাস আপনাকে এড়িয়ে চলতে হবে। ধূমপান অতিরিক্ত অ্যালকোহল সেবন বা অস্বাস্থ্যকর খাদ্য অভ্যাস মানসিক চাপ বাড়িয়ে দেয়। ফলে এগুলোকে আপনাকে এড়িয়ে সুষম খাদ্য গ্রহণ, পর্যাপ্ত ঘুম এবং নিয়মিত শরীরচর্চা অভ্যাস করতে হবে।
  • মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নঃ যারা বিশ্বাসযোগ্য এবং ইতিবাচক মানুষের সঙ্গে বন্ধুত্ব বা সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে। মনের কথা শেয়ার করার মাধ্যমে একজন আপনজন থাকা জরুরী এতে মানসিক চাপ কমানোর অন্যতম উপায়।
  • নিজের প্রতি দয়া দেখানোঃ নিজেকে সব সময় সমালোচনা করবেন না। নিজের প্রতি সহানুভূতিশীল হতে হবে এবং ভুলগুলো থেকে শিক্ষা নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে।
  • জীবনটাকে সরল রাখাঃ কে দূরে সরিয়ে রেখে সরল জীবন যাপনের দিকে মনোযোগ দিতে হবে। অতিরিক্ত ভোগবাদ থেকে দূরে থাকা হবে এবং প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রে সন্তুষ্ট থাকতে হবে।

পরিশেষে বলা যায় যে চাপমুক্ত জীবনযাপন মূলত আপনার মানসিক ও শারীরিক অবস্থার ভারসাম্য বজায় রাখা এবং জীবনকে ইতিবাচক ভাবে গ্রহণ করার উপর নির্ভর করে। এই জন্য ধৈর্য এবং ধারাবাহিক প্রচেষ্টার প্রয়োজন। মানসিক চাপমুক্ত জীবন আপনার একটি সুস্থ স্বাভাবিক জীবন। তাই আমাদের প্রত্যেকটি ধাপ মেনে চলতে হবে।

মন্তব্যঃ মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার উপায়

মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার উপায় নিয়ে পাঠকদের উদ্দেশ্যে বলা হয়েছে যে, মনোবল শক্তিশালী রাখতে শারীরিক এবং মানসিক সুস্থতার মধ্যে সামঞ্জস্য বজায় রাখা অত্যন্ত জরুরি। নিয়মিত ব্যায়াম, স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস এবং পরিপূর্ণ ঘুম মনকে সতেজ রাখে। এছাড়াও নিজেকে সময় দেওয়া এবং পছন্দের কাজ করা মানসিক প্রশান্তি আনে।

আবারো পাঠকদেরকে মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার গুরুত্ব স্মরণ করে দিয়ে বলেন, পুষ্টিকর খাদ্য পর্যাপ্ত ঘুম এবং ধ্যানের মাধ্যমে জীবনের শান্তি আনা সম্ভব। তিনি আরো বলেন নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাসী হয়ে জীবনের যে কোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে পারেন। সবার সুখী ও সুস্থ জীবন কামনা করে বিদায় জানায়। আবারও দেখা হবে অন্য কোন লেখায়।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

প্রশ্ন ২৪ ব্লক এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url