বাচ্চাদের ঘন ঘন জ্বর হওয়ার কারণ

বাচ্চাদের ঘন ঘন জ্বর হওয়ার কারণ নিয়ে আপনারা চিন্তিত? জ্বর শিশুদের জন্য সাধারণ সমস্যা হলেও এর পিছনে লুকিয়ে থাকতে পারে শারীরিক ও পরিবেশগত বিভিন্ন কারণ। আপনি কি জানতে চান কিভাবে এই সমসামোকাবিলা করবেন এবং বাচ্চার শরীর সুস্থ থাকবে।

বাচ্চাদের-ঘন-ঘন-জ্বর-হওয়ার-কারন

এই আর্টিকেলে পাবেন জ্বরের কারণ, লক্ষণ ও তার সঠিক প্রতিকার সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। আজকের আমার এই পোস্টটি পড়ুন এবং আপনার শিশুর সাথে জন্য প্রয়োজনীয় জ্ঞান অর্জন করুন। তাহলে চলুন দেখে নিয়ে যাক বাচ্চাদের ঘন ঘন জ্বর হওয়ার কারণ।

পোস্ট সূচীপত্রঃ বাচ্চাদের ঘন ঘন জ্বর হওয়ার কারণ

 বাচ্চাদের ঘন ঘন জ্বর হওয়ার কারণ

বাচ্চাদের ঘন ঘন জ্বর হওয়ার কারণ বুঝতে পারলে, তার প্রতিকার ও প্রতিরোধ করা খুব সহজ। কিন্তু যদি বাচ্চাদের ঘন ঘন জ্বর হওয়ার কারণ বোঝা না যায় তবে বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। জ্বর সাধারণত একজন মানুষের শরীরের খুব স্বাভাবিক একটি বিষয়। কিন্তু অনেক সময় এই জ্বর বিরাট আকার ধারণ করে বিভিন্ন ধরনের সমস্যায় ফেলে দেয়। জ্বর হওয়া ভালো তবে যখন বাচ্চাদের ঘন ঘন জ্বর হয় তখন অবশ্যই আপনাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া লাগবে। ঘন ঘন জ্বর হওয়ার কারণগুলো দেখে নেওয়া যাক-

  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমঃ বাচ্চাদের শরীরে সাধারণত রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা পরিপূর্ণ থাকেনা। তাদের ইমিউন শক্তি সিস্টেম একটু কম থাকে। এজন্য তারা খুব সহজেই বিভিন্ন ধরনের ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সংক্রমিত বেশি হয়। বাচ্চাদের শরীরে যখন কোন ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া প্রবেশ করে তখন সেটা জ্বর আকারে প্রকাশিত হয়।
  • ভাইরাস সংক্রমণঃ শিশুদের জ্বরের প্রধান কারণ হচ্ছে ভাইরাস সংক্রমিত জ্বর। শিশুরা ভাইরাস সংক্রমণে বেশি নিপতিত হয়। রেসপিরেটরি সিনসাইটিয়াল ভাইরাস, ইনফ্লুয়েঞ্জা, রাইনো ভাইরাস ইত্যাদি এইসব ভাইরাস দিয়ে শিশুরা বেশি আক্রান্ত হয়। এসব ভাইরাস আক্রান্তের ফলে ফ্লু বা সর্দি কাশি জাতীয় অসুখের মাধ্যমে জ্বরের সৃষ্টি হয়।
  • ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণঃ বাচ্চাদের জ্বর যদি দীর্ঘস্থায়ী হয় বা তাপমাত্রা যদি উচ্চ থাকে তবে বুঝতে হবে এটি ব্যাকটেরিয়া সংক্রমিত জ্বর। ব্যাকটেরিয়া সংক্রমিত জ্বর যেমন টনসিলাইটিস, ইউরিন ইনফেকশন বা নিউমেনিয়ার মাধ্যমে আক্রান্ত হয়।
  • স্কুলের সংস্পর্শঃ অনেক সময় বাচ্চাদের সংস্পর্শের কারণেও জ্বর হতে পারে। যেসব বাচ্চারা স্কুলে যায় তারা বিভিন্ন শিশুর সাথে মেলামেশা করে। এতে সাধারণত সংক্রমনে ঝুঁকি বেড়ে যায় কারণ এক শিশুর সংক্রমণ সহজেই অন্য শিশুর মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। স্কুলের এই সংস্পর্শের ফলে বাচ্চাদের ঘন ঘন জ্বর হতে থাকে।
  • পরিছন্নতার অভাবঃ অনেক সময় পরিচ্ছন্নতার অভাবে বাচ্চাদের জ্বর আসে। শিশুরা যেহেতু অনেক কিছু বোঝেনা বা তারা বলতে পারেনা তাই তাদের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা সব সময় খেয়াল রাখতে হবে। যেসব পরিবারে শিশুরা সচেতনতা মানতে পারেনা, তাদের হাতের স্পর্শ মুখ, নাক বা চোখে দেয়, তার মাধ্যমে জীবাণু শরীরে প্রবেশ করে। যার ফলে বাচ্চারা খুব দ্রুত জ্বরে আক্রান্ত হয়।
  • এলার্জি বা পরিবেশগত কারণঃ যেসব বাচ্চারা সাধারণত ধুলোবালি, পরাগরেণু বা ধোয়ার সংস্পর্শে আসে সেসব শিশুরা খুব দ্রুত সর্দি কাশি বা শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত হয়। কারণ ধুলোবালি বা ধোয়ায় বিভিন্ন ধরনের জীবাণু বিদ্যমান থাকে। যেটাতে আক্রান্ত হলে সেই অবস্থায় জ্বর দেখা দেয়।
  • ভ্যাকসিনের অভাবঃ যেসব শিশুদের সাধারণত ভ্যাকসিনেসাইন করা হয় না তারা খুব দ্রুত জ্বরে আক্রান্ত হয়। যেসব শিশুকে নিয়মিত টিকা না দেয়া হয় তারা, মিজলস, মাম্পস বা রুবেলার মত সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হয়, যা জ্বর হওয়ার অন্যতম কারণ।
  • দেহের স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়াঃ সাধারণত শিশুদের দেহে কোন ভাইরাস সংক্রমণ হলে শরীরের ভিতরে গিয়ে ভেতরের ভাইরাসের সাথে যুদ্ধ করে। জীবাণুর বিরুদ্ধে লড়াই করতে গিয়ে এর তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়। যার কারণে ঘন ঘন জ্বর দেখা দিতে পারে।
  • অপুষ্টি বা দুর্বল শারীরিক অবস্থাঃ যেসব বাচ্চাদের শরীরে পুষ্টির অভাব রয়েছে বা যারা শারীরিকভাবে দুর্বল তারা সাধারণত খুব সহজেই ভাইরাস দ্বারা সংক্রমিত হয়। যার ফলে তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। ফলে তারা খুব দ্রুতই জ্বরে আক্রান্ত হয়।
  • আবহাওয়ার পরিবর্তনঃ এক মৌসুম থেকে আরেক মৌসুম পরিবর্তনের সময় অর্থাৎ বর্ষাকাল থেকে শীতকালে পরিবর্তনের সময় শিশুদের দেহ দ্রুত ঠান্ডা গরমের প্রভাব অনুভব করে। এই আবহাওয়া বদল এর কারণে খুব দ্রুতই বাচ্চাদের জ্বর আসে। কখনো ঠান্ডা কখনো বা গরম এই আবহাওয়া বাচ্চাদের শরীরে নিতে পারেনা যার কারণে জ্বর আসে।

সমাধান ও প্রতিরোধের উপায়ঃ

  • শিশুদেরকে বিভিন্ন পুষ্টিকর খাবার খাওয়াতে হবে যেন তাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়
  • ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী অবশ্যই শিশুকে ভ্যাকসিনেশন করতে হবে
  • বাচ্চাদেরকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে অবশ্যই নিয়মিত হাত ধোয়া এবং পরিষ্কার কাপড়-চোপড় পড়াতে হবে
  • যেসব বাচ্চারা স্কুলে যায় তাদের অবশ্যই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার উৎসাহিত করতে হবে বা শিক্ষাদান দিতে হবে
  • বাচ্চাদের যদি ঘন ঘন জ্বর আসে তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে
  • আবহাওয়া পরিবর্তনের সময় বাচ্চাদেরকে বিশেষভাবে যত্নের সাথে রাখতে হবে
  • শরীরে যাতে কোন ধরনের ইনফেকশন না হয় সে খেয়াল রাখতে হবে
  • তারা অনেক কিছু সম্পর্কেই অজানা তাদেরকে বোঝাতে হবে জানাতে হবে

পরিশেষে বলা যায় যে বাচ্চাদের ঘন ঘন জ্বর হওয়ার মূল কারণ আপনাদেরকে বুঝতে হবে। বাচ্চারা অনেক দুর্বল এবং ছোট হওয়ায় তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকায় তাদের প্রতি যত্ন ও খেয়াল রাখতে হবে। অবশ্যই বাচ্চাদের ঘন ঘন জ্বর হওয়া থেকে বিরত রাখতে হবে তা না হলে জটিল কোন রোগের সমস্যায় পড়তে পারে।

৮ মাসের শিশুর জ্বর হলে করণীয়

৮ মাসের শিশুর জ্বর হলে করণীয় কি তা নিয়ে অভিভাবকদের মনে নানা ধরনের প্রশ্ন উঠে আসে। কারণ ৮ মাসের বাচ্চা এতটাই ছোট যে সে তার অনুভূতির মাধ্যমেও বলতে পারে না যে কি সমস্যা হচ্ছে। এই সময় একজন মাকে তার অনুভূতি দিয়ে বুঝতে হয় শিশুটির কি সমস্যা হচ্ছে। ৮ মাসের শিশুর জ্বর হলে তার অভিভাবকদেরকে অবশ্যই সতর্ক এবং যত্নবান হতে হবে। এই সময় শিশুর শরীর সংবেদনশীল অবস্থায় থাকে, যেখানে সঠিক পদক্ষেপ নেওয়া অত্যন্ত জরুরী। নিচে এই বিষয়ে কিছু আলোচনা করা হলো।

জ্বর চিহ্নিতকরণঃ ৮ মাসের শিশুর শরীর খুবই ছোট এবং তাদের অনুভূতি নেই বা বলার শক্তি নেই। এই সময় যদি কোন শিশুর শরীরের তাপমাত্রা ১০O.৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তার বেশি হয় তবে এটিকে জ্বর হিসেবে গণ্য করা হয়। জ্বর হলো সাধারণত শিশুর শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার একটি সাধারন প্রতিক্রিয়া।

জ্বরের কারণঃ শিশু বয়সে জ্বর সাধারণত কোন ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ থেকে হতে পারে। এছাড়া ছোট শিশুকে যে টিকা দেওয়া হয় তার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হিসেবে জ্বর আসতে পারে। এছাড়াও দাঁত ওঠার সময় অথবা যেকোনো সাধারণ ঠান্ডা জ্বরের কারণেও হতে পারে।

শিশুর জ্বর হলে করণীয়ঃ ৮ মাস বয়সী শিশু বা ছোট শিশুর জ্বর হলে সাধারণত সর্বপ্রথম আমাদের কাজ তার শরীরের তাপমাত্রা পরীক্ষা করা। ডিজিটাল থার্মোমিটারের সাহায্যে অবশ্যই শিশুর শরীরের তাপমাত্রা সঠিকভাবে মাপতে হবে। রেক্টাল থার্মোমিটার সাধারণত নির্ভুল ফলাফল দিয়ে থাকে। প্রতি চার থেকে ছয় ঘন্টা পর পর শিশুর তাপমাত্রা মাপতে হবে।

শিশুর শরীরে হালকা ও নরম কাপড় পরাতে হবে। ভারি কম্বল বা অতিরিক্ত কাপড় দিয়ে না জড়ানোই ভালো। এই সময়টা অস্বস্তি অনুভব করে এবং বিরক্তি হয়। অনুভূতি প্রকাশ করতে না পারায় তারা বোঝাতে পারে না তাই এই সময় হালকা কাপড় পড়ানোই ভালো। কুসুম গরম পানিতে একটি পরিষ্কার কাপড় ভিজিয়ে শুকা করে চেপে পুরো শরীর মুছে দিতে হবে। তবে খুব ঠান্ডা পানি ব্যবহার করা যাবে না কারণ এটি শিশুকে আরও অস্বস্তিতে ফেলে। এই সময় বাচ্চাকে যত হালকা রাখবেন ততই ভালো।

জ্বরের সময় শিশুকে সবসময় তরল খাবার খাওয়াতে হবে। মায়ের বুকের দুধ তো অবশ্যই খাওয়াতে হবে কারণ এটি শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। যদি শিশু অন্যান্য তরল খাবার খায় তবে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী সেই খাবারগুলো খাওয়াতে হবে। সাধারণত শরীর পানি শূন্যতা এড়াতে এই সঠিক পরিমাণ তরল খাবার দেওয়া খুবই জরুরী।

শিশুর জ্বর কমাতে পেডিয়েট্রিশিয়ান বা শিশুরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অনুযায়ী প্যারাসিটামল বা ইমু প্রোফাইল সিরাপ ব্যবহার করতে পারেন। তবে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোন ধরনের ওষুধ খাওয়াবেন না। ওষুধের ডোজ শিশুর বয়স ওজন অনুযায়ী ঠিক রাখতে হবে এই কারণে ডাক্তারের পরামর্শ খুবই জরুরী। কখনোই নিজের থেকে থেকে কোন ওষুধ ব্যবহার করা যাবে না। 

শিশুর জ্বর হলে সাধারণত তাকে বেশি ঘুমাতে দিতে হবে। এই সময় শিশুরা যত ঘুমাবে ততই তাদের শরীরের জন্য ভালো হবে। কারণ বিশ্রামের সময় শরীরের প্রতিরোধ ব্যবস্থা কাজ করে। শিশুর ঘুমানোর পরিবেশ শান্ত করতে হবে এবং যাতে আরামদায়ক হয়। 

আরও পড়ুনঃ কাঁচা রসুন খাওয়ার ১০টি উপকারিতা

শিশুদের জ্বর ২৪ ঘন্টার বেশি স্থায়ী হলে এবং তাপমাত্রা ১০২° F এর বেশি হলে অবশ্যই চিকিৎকের শরণাপন্ন হতে হবে। কারণ বেশি জ্বর হলে শিশুরা শ্বাসকষ্ট সমস্যা হয়, খাওয়া বন্ধ করে দেয় ফলে দুর্বল হয়ে পড়ে। এতে খিচুনি বা অস্বাভাবিক নড়াচড়া দেখা দেয় যার কারণে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।শিশুদের টিকা দেওয়ার সময় জ্বর আসতে পারে এই তথ্যটি অবশ্যই চিকিৎসককে জানাতে হবে।

শিশুর জ্বর আসলে শিশুকে অতিরিক্ত ঠান্ডা বা গরম পরিবেশে রাখা যাবে না। ডাক্তারের অনুমতি ছাড়া কোন ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক বা ওষুধ খাওয়ানো যাবে না। অনেকেই শিশুর জ্বর হলে জ্বর কমাতে অ্যালকোহল দিয়ে শরীর মুছে দেয় এইটা করা যাবে না। 

শিশুকে এই জ্বর থেকে প্রতিরোধ করার জন্য, শিশুর সময়মতো টিকা দেয়া লাগবে । মায়ের বুকের দুধ এর মত শক্তি কোন খাবারে নাই তাই নিয়মিত শিশুকে মায়ের দুধ খাওয়াতে হবে। শিশুকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার মধ্যে রাখতে হবে এবং শিশুর খেয়াল গুলো জীবাণুমুক্ত করতে হবে।

পরিশেষে বলা যায় যে, ৮ মাসের ছোট শিশু তাদের কোন অনুভূতি নেই। তাদের কোন সমস্যা হলে বোঝানোর ক্ষমতা নেই। তাই ৮ মাসের শিশুর জ্বর হলে দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে সঠিক যত্ন নিতে হবে। যাতে শিশু দ্রুত আরোগ্য লাভ করে। কোন রোগী অবহেলা করার মতো না তবে ছোট শিশুর ক্ষেত্রে মোটেও নয়। তাই দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়ায় ভালো।  

শিশুর জ্বর ১০৪ ডিগ্রি হলে করণীয়

শিশুর জ্বর ১০৪ ডিগ্রি হলে করণীয় বলতে এটির ব্যবস্থা দ্রুত তাৎক্ষণিক গতিতে করতে হবে। কারণ ১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট জ্বর মানে এটি একটি গুরুতর অবস্থা যা যেকোনো সময় ক্ষতি হতে পারে। বিভিন্ন কারণে জ্বর হতে পারে, তবে জ্বর ১০৪ ডিগ্রি হলে তার প্রতিকার দ্রুত গতিতে করতে হবে কারণ এটি খুবই বিপদজনক। এই অবস্থায় কি কি করণীয় তা নিম্ন আলোচনা করা হলো।

জ্বরের প্রাথমিক মূল্যায়নঃ জ্বর হল শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রা পার হয়ে একটি নির্দিষ্ট সীমায় গিয়ে পৌঁছানো। জ্বর সাধারণত তিন থেকে পাঁচ দিন স্থায়ী হয় তবে তা ১০২° থেকে ১০৩°। কিন্তু জ্বর যখন ১০৪ ডিগ্রী পার হয় তখন শিশুর শরীর অত্যন্ত উত্তপ্ত থাকে। এ সময় শিশুর শ্বাসকষ্ট. খাওয়ার ইচ্ছা কমে যায়, অস্বাভাবিক অস্থিরতা বা অতিরিক্ত দুর্বলতা দেখা দেয়। এই সময় সাধারণত খিচুনি শুরু হয় বা মাথায় রক্ত ক্ষরণ হয়।

যার আজকে হল তা পরের বেলাতেই যে কমে যাবে সেটা নয়। জ্বর সাধারণত ২-৩ দিন স্থায়ী থাকে। এই জন্য প্রথম দিনই অ্যান্টিবায়োটিক বা কোন ধরনের ওষুধ খাওয়া যাবেনা। কারণ যার কখনো এক দিনেই ভালো হয় না। জ্বর বিভিন্ন কারণে হতে পারে তবে ভাইরাস জ্বর এ কখনোই অ্যান্টিবায়োটিক একদিনেই কাজ করে না। ইনফেকশনের জ্বর যদি হয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই অ্যান্টিবায়োটিক দিতে হবে কিন্তু তা পরীক্ষা করার পর। তাই জ্বর হলে প্রথম দিনেই ওষুধ না খেয়ে স্বাভাবিক থাকতে হবে।

জ্বরের প্রাথমিক পদক্ষেপঃ জ্বর সাধারণত বিভিন্ন জনের বিভিন্ন কারণে হতে পারে । জ্বরে ধরনও ভিন্ন হতে পারে যেমন ভাইরাসজনিত জ্বর, ইনফ্লুয়েঞ্জা, টাইফয়েড, ডেঙ্গু, করোনাভাইরাস, চিকুনগুনিয়া, হাম এবং প্রসব সহ যেকোনো ধরনের ইনফেকশনে আসতে পারে। কপালে হাত দিলেই বুঝতে পারবেন যে জ্বরে গা পুড়ে যাচ্ছে, তখনই বুঝবেন জ্বরের পরিমাণ তীব্র। এইসময় থার্মোমিটারের সাহায্যে প্রথমে দেখতে হবে।

শিশুদের শরীর ঠান্ডা রাখার জন্য একটি পরিষ্কার নরম কাপড় হালকা কুসুম গরম পানিতে ভিজিয়ে শুকনা করে পুরো শরীর অর্থাৎ গলা, কপাল, হাত-পা, পিঠের দাড়িসহ মুছে দিতে হবে। তবে অবশ্যই ভুলেও কখনো বরফ ঠান্ডা পানি ব্যবহার করবেন না কারন এটি শিশু শরীরে ক্ষতি হতে পারে। অতিরিক্ত গরমে ঠান্ডা দিলে শক লাগার মতোই অবস্থা হয়। এতে বাচ্চার হৃদপিণ্ড দ্রুত উঠানামা করে যার ফলশ্রুতিতে ক্ষতি হয়। শিশুদেরকে আরামদায়ক ও হালকা সুতি কাপড় পড়াতে হবে। ভারী কম্বল বা অতিরিক্ত কাপড় দিয়ে কখনোই ঢেকে রাখার চেষ্টা করবেন না এতে তাপমাত্রা না কমে আরো বাড়তে পারে।

শিশুদেরকে জ্বরে অবশ্যই তরল খাবার দিতে হবে যাতে শরীরে পানি শূন্যতা দেখা না যায়। বুকের দুধ সবচেয়ে ভালো কারণ একটি পুষ্টিকর ও নিরাপদ। তাছাড়াও বয়স অনুযায়ী অন্যান্য তরল খাবার দিতে হবে যেন সেগুলো তাদের শরীরে উপকারে আসে। সাধারণত এই সময় ডাবের পানি, বিভিন্ন ফলের জুস, শরবত, চিকেন স্টক পানি প্রভৃতি খাবার নিয়ম করে খাওয়াতে হবে যাতে শরীর থেকে পানি শূন্যতার অভাব না হয়।

প্রতিটি শিশুর শারীরিক অবস্থা একরকম নয় এক একজনের একেক রকম। তাই জ্বর হলে অবশ্যই তাদেরকে পরিপূর্ণ বিশ্রাম দিতে হবে এবং অবশ্যই ফ্যানের নিচে ঘুমাতে দিতে হবে। যেকোনো ধরনের জ্বর জ্বর হোক না কেন জ্বর হলে শিশুকে অবশ্যই মশারির নিচে রাখতে হবে।

শিশুদেরকে জ্বর কমানোর ওষুধ দিতে হবে অবশ্যই। শিশুদের পেডিয়াট্রিশিয়ানের পরামর্শ অনুযায়ী বা বড়দের ডাক্তারের পরমাণুর অনুযায়ী প্যারাসিটামল সিরাপ বা ওষুধ দিতে পারেন। তবে অবশ্যই ডোজ বয়স অনুযায়ী দিবেন ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী। অবস্থাতেই নিজেই ওষুধ দিবেন না ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া।

যখন ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবেঃ শিশু যেকোনো বয়সে বাচ্চাদের জ্বর হলে ডাক্তারের শরণাপন্ন কখন হতে হবে যেমন-

  • শিশুর জ্বর যদি ২৪ ঘন্টার বেশি স্থায়ী হয় এবং ওষুধে না কমে। 
  • শিশুর শরীরের তাপমাত্রা যদি ১০৪° থেকে ১০৫° ডিগ্রি বা তারও বেশি হয়
  • শিশুর শরীরে যদি খেজুরে শুরু হয়
  • সাধারণত শিশুর শ্বাসকষ্ট, তীব্র কাঁপুনি বা কোন অস্বাভাবিক উপসর্গ দেখা দিলে
  • হ্যাঁ শিশুদের যদি প্রসাবের পরিমাণ কম হয় বা চোখ মুখ শুকিয়ে যায় অর্থাৎ পানি শূন্যতার লক্ষণ হলে
  • যদি শিশু খুব দুর্বল অনুভব করে বা অতিরিক্ত চুপচাপ হয়ে যায়

শিশু বা যেকোনো বয়সী বাচ্চাদের অতিরিক্ত গরম বা ঠান্ডা পরিবেশে রাখা ঠিক নয়। সাধারণত যেকোনো ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক বা শক্তিশালী ওষুধ ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া খাওয়া যাবে না। শিশুর জ্বর কমানোর জন্য কোন ধরনের একা হল বা বরফের ঠান্ডা পানি ব্যবহার করে শরীর হাত মুছা যাবে না। শিশুকে অবশ্যই খাওয়ানোর চেষ্টা করতে হবে যেন সে দুর্বল না হয়ে যায়।

পরিশেষে বলা যায় যে, শিশুর ১০৪° ডিগ্রি জ্বর উঠলে সাধারণত সেটা স্বাভাবিক জ্বর নয়। এই জ্বর হয়তো ভাইরাস সংক্রমণ, ইনফ্লুয়েঞ্জা, নিউমোনিয়া, ডেঙ্গু, করোনাভাইরাস, ইউরিন ইনফেকশন অথবা টিকাদানের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার কারণে হতে পারে। তবে সঠিক কারণ অবশ্যই নির্ণয় করতে হবে চিকিৎসকের মতামত অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক যত্ন ও দ্রুত পদক্ষে শিশুদের উচ্চ তাপমাত্রা থেকে যেকোনো ধরনের বিপদে রক্ষা করে। তাই উপসর্গ বুঝে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে এবং অবশ্যই প্রয়োজনে চিকিৎসা শরণাপন্ন হতে হবে।

 ঘন ঘন জ্বর হওয়া কিসের লক্ষণ

ঘন ঘন জ্বর হওয়া কিসের লক্ষণ এটা আমরা অনেকেই বুঝতে পারি না। তবে মনের মধ্যে প্রশ্ন জাগে জ্বর এত ঘন ঘন আসছে কেন। অনেক সময় বিভিন্ন ধরনের ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া আক্রমণের কারণে আমাদের জ্বর ঘন ঘন আসতে পারে। তবে অবশ্যই আমাদের এটা বের করতে হবে যে এই জ্বর কোন ইনফেকশনের জন্য হচ্ছে কিনা। আজকে আমরা জানব ঘন ঘন জ্বর হওয়া কিসের লক্ষণ হতে পারে।

বাচ্চাদের-ঘন-ঘন-জ্বর-হওয়ার-কারন

ঘন ঘন জ্বর কেন হয়ঃ ঘন ঘন জ্বর সাধারণত বিভিন্ন ধরনের ভাইরাস আক্রমণের কারণে হয়ে থাকে। যা দেহের স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া থেকে শুরু করে গুরুতর অসুস্থতার ইঙ্গিত বহন করে। চর সাধারণত আমাদের শরীরের প্রতিরক্ষার একটি ব্যবস্থার সংকেত বহন করে যা বিভিন্ন সংক্রমণ ও অস্বাভাবিক অবস্থায় আছি তার ব্যাখ্যা দেয়।

শরীরের দুর্বলতাঃ জ্বর সাধারণত আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা সক্রিয় হওয়ার হলে হয়। কিন্তু যাদের ইমিউন সিস্টেম অনেক দুর্বল বা স্বাভাবিক কাজ করে না তারা সহজেই বারবার এই জ্বরের সংক্রমণের শিকার হন। বিশেষ করে শিশু বয়স্ক বাজাদের পুষ্টির অভাব রয়েছে তাদের এই সমস্যা বেশি দেখা যায়। 

ভাইরাস সংক্রমণঃ বেশিরভাগ জ্বর সাধারণত ভাইরাস সংক্রমনের কারণেই হয়। সর্দি-কাশি, ইনফ্লুয়েঞ্জা কিংবা অ্যাডেনেও ভাইরাসের মতো সংক্রমণ বারবার দেহে আক্রমণ করে এবং জ্বরে সৃষ্টি করে। কখনো কখনো একই ধরনের সংক্রমণ শরীরে নতুন ভাবে ফিরে আসে ফলে ঘন ঘন জ্বর হতেই থাকে। কিছু ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাস শরীরে অনেকদিন ধরে সংক্রমণের সৃষ্টি করে। যেমন যক্ষা (টিউবারকিউলোসিস), ম্যালেরিয়া অথবা টাইফয়েড এগুলো দীর্ঘদিন শরীরে স্থায়ী থাকে এবং এর ফলে ঘন ঘন জ্বর হয়।

অটো ইমিউন রোগঃ অনেক সময় নিজের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা নিজের সুস্থ কোষের বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করে এইটাকে বলা হয় অটো ইমিউন সমস্যা। এর ফলে ঘন ঘন জ্বর দেখা দেয় যেমন লুপাস বা রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিসের মত বিভিন্ন রোগ হয়।

এলার্জি এবং পরিবেশগত কারণঃ ঘন ঘন জ্বর হওয়ার আরেকটি লক্ষণ হচ্ছে এলার্জি বা বিভিন্ন প্রদেশগত কারণে। বিভিন্ন ধুলাবালি দূষণ বা এলার্জিজনিত উপাদান শ্বাসনালীতে প্রবেশ করে সংক্রমণের সৃষ্টি করে যার ফলে শ্বাসকষ্ট বা ঘন ঘন জ্বরের কারণ হতে পারে।

ইনফেকশন প্রবণতাঃ শরীরে ঘন ঘন জ্বরের আরেকটি প্রধান প্রবণতা হচ্ছে ইনফেকশন। যদি শরীরে কোন নির্দিষ্ট স্থানে সংক্রমণ থাকে যেমন কান, গলা, মূত্রনালী অথবা দাঁত তবে সেটির কারণে ঘন ঘন জ্বরের হতে পারে।

পুষ্টির অভাবঃ শিশুদের দেহে প্রয়োজনীয় ভিটামিন, খনিজ বা পুষ্টি উপাদানের ঘাটতি থাকে তবে অবশ্যই শরীর সহজেই রোগাক্রান্ত হয় এবং ভাইরাস আক্রান্ত করে। ওয়াপুষ্টি দেহের প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয় যার ফলে সংক্রমণ বেশি হয় এবং ঘন ঘন জ্বর দেখা দেয়।

দেহের অভ্যন্তরীণ প্রদাহ ও হরমোনের ভারসাম্যতাঃ সাধারণত শিশুদের দেহে দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহ জনিত রোগ যেমন ইনফ্লামেটরি বাউল ডিজিজ বা ক্রনিক ইনফেকশন দেহের অভ্যন্তরে সৃষ্টি করে এর ফলে জ্বর বারবার দেখা দেয়। আবার দেহে হরমোন জনিত অস্বাভাবিকতার কারণেও ঘন ঘন জ্বর হতে পারে।

 আরও পড়ুনঃ বাচ্চাদের দাঁত ওঠার সময় করণীয় 

টিকাদানের প্রভাবঃ বাচ্চাদের শরীরে টিকা দিলে কিছু ক্ষেত্রে টিকা দেওয়ার পরে দেহে টিকার প্রতিক্রিয়া হিসেবে জোর দেখা দেয় তবে এটি খুব সাধারণ এবং খুব সাময়িক। এইটার জন্য কোন ওষুধ বাজটিলতা সৃষ্টি হয় না।

প্রতিরোধ ও চিকিৎসাঃ সাধারণত এই ঘন ঘন জ্বরের প্রতিরোধ ও চিকিৎসা নিতে হলে প্রথমে এর মূল কারণ খুঁজে বের করা অত্যন্ত জরুরী। তবে পুষ্টিকর খাবার, পর্যাপ্ত ঘুম, পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা এবং সঠিক চিকিৎসা গ্রহণ করলে এই সমস্যা প্রতিরোধ করা সম্ভব। তবে যদি ঘন ঘন জ্বর ভালো না হয় তবে অবশ্যই ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ নিতে হবে।

পরিশেষে বলা যায় যে, কিছু জটিল বা দীর্ঘস্থায়ী রোগ যেমন ক্যান্সার, রক্তস্বল্পতা বা লিউকমিয়া, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাল করে দেয় এর ফলে বারবার জ্বর হয়। তাই অবশ্যই আমাদেরকে সাবধানতার সাথে এর চিকিৎসা করাতে হবে এবং অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। তা না হলে আমরা কোন জটিল রোগে আক্রান্ত হতে পারি।

 বাচ্চাদের ভাইরাস জ্বরের লক্ষণ

বাচ্চাদের ভাইরাস জ্বরের লক্ষণ একটি সাধারন সমস্যা যা মূলত ভাইরাসের আক্রমণে হয়ে থাকে। এটি সাধারণত স্বল্প মেয়াদী এবং তেমন বিপদজনক নয়। তবে অবশ্যই ভাইরাস জ্বরের লক্ষণ সম্পর্কে আমাদের সচেতন থাকতে হবে। আমাদের শরীরের তাপমাত্রা ৯৮ ডিগ্রি ফারেনহাইট। এ তাপমাত্রা অতিক্রম করলে সাধারণত জ্বর হয়। ভাইরাস জ্বর বয়স অনুযায়ী তারতম্য দেখা যায়। দেশে করোনাভাইরাস আসার পর অনেকেই অনেক সচেতন একটু জ্বর হলেই ভাবে করোনা হয়ে গেল নাকি দিয়ে তার চিকিৎসা চলতে থাকে। ভাইরাস জ্বরের বিস্তারিত বর্ণনা দেয়া হলো-

সাধারণত আমরা কপালে হাত দিলে আমাদের কপাল গরম থাকলে বা অনুভব করি যে আমাদের জ্বর হয়েছে। জ্বর হলে স্বভাবতই আমরা থার্মোমিটার ব্যবহার করি এবং তাপমাত্রা পরীক্ষা করে। তাপমাত্রা আমাদের ৯৮ ডিগ্রি এর বেশি হলে আমরা বলি যে ঝড় হয়েছে। যার বিভিন্ন রকমের হতে পারে তবে ভাইরাস জনিত জ্বর সাধারণত কিছু লক্ষণ দেখা যায়। যদি এইসব লক্ষণ শিশুদের শরীরে থাকে তাহলে আমরা বুঝবো যে এটি ভাইরাসজনিত জ্বর।

জ্বরের লক্ষণসমূহঃ

  • ভাইরাস জ্বরে বাচ্চাদের শরীরে তাপমাত্রা সাধারণত ১০০° ফারেনহাইট থেকে ১০৪° ডিগ্রী ফারেনহাইট পর্যন্ত উঠতে পারে
  • ভাইরাস জনিত জ্বর সাধারণত আস্তে আস্তে বাড়তে পারে যা আবার হঠাৎ করে বেশি হয়ে যায়
  • বাচ্চারা সাধারণত জ্বরের সঙ্গে শীত অনুভব করে এবং শরীরে কাঁপুনি দিতে পারে অনেক সময় হাত-পা ঠান্ডা হয়ে যেতে পারে জলীয় তাপমাত্রা শরীরে বেশি থাকে
  • ভাইরাস জ্বরে আক্রান্ত হলে বাচ্চারা খুবই দুর্বল হয়ে পড়ে তারা সাধারণত খেলতে বা স্বাভাবিক কাজকর্মের আগ্রহ হারিয়ে ফেলে
  • ভাইরাসজনিত জ্বরে শরীরের পেশি, হাত-পা এবং মাথাব্যথা হয় তবে বড় বাচ্চারা মাথা ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে ব্যথার কথা বলতে পারে।
  • সর্দি, নাক দিয়ে পানি পড়া, নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া অথবা বারবার হাঁচি আসা, গলায় খুসখুসে বা গলা ব্যথা ভাইরাস জ্বরের সাধারণ লক্ষণ
  • ভাইরাস জনিত জ্বরে সাধারণত শুষ্ক ও কম যুক্ত কাশি হতে পারে। অনেক সময় এটি রাতে বা ভোর রাতের দিকে বেশ বাড়ে
  • ভাইরাসজনিত জ্বরে চোখ লাল হয়ে যায় এবং অনেক ক্ষেত্রে চোখ দিয়ে পানি ঝরতে পারে বা চোখ চুলকাতে পারে
  • ভাইরাস জনিতরে বাচ্চাদের ক্ষুধা কমে যায় এবং তারা স্বাভাবিকভাবে খাবার খেতে চাই না। দুধ পানীয় বাচ্চাদের অনাগ্রহ দেখা যায়
  • গলায় সংক্রমণ ভাইরাস জ্বরের একটি সাধারণ লক্ষণ কারণ এটিতে বাচ্চার কথা বলে বা খাবার গিলতে সমস্যা হয়
  • বাচ্চারা ভাইরাস ধরে অনেক সময় বমি, পেটে ব্যথা বা ডায়রিয়া হতে পারে। ছোট শিশুদের ক্ষেত্রে বারবার পায়খানা হতে পারে
  • কিছু কিছু ভাইরাস যেমন মিজেলস বা চিকেন পক্স, তাকে লালচে ফুসকুড়ি বা দাগ তৈরি করতে পারে। এটি অবশ্য জ্বরের কয়েকদিন পর দেখা দেয়
  • ভাইরাসজনিত জ্বরে জ্বর কমার সময় বাচ্চাদের অতিরিক্ত ঘাম হয় এতে শরীরে তাপমাত্রা হঠাৎ কমে যায় এবং বাচ্চারা দুর্বল হয়ে পড়ে
  • কিছু তো ভাইরাসজনিত জ্বরে আবার ফুসফুস বাসনালের সংক্রমণ ঘটায় যার ফলে বাচ্চারা শাস্তিতে কষ্ট পায়
  • অতিরিক্ত জ্বর হলে আবার শিশুর ফেব্রুয়ারির কনভালশন অর্থাৎ খিচুনি হতে পারে

এখন ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া জরুরিঃ

  • জ্বর সাধারণত ১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট পার হলে
  • শিশুদের জ্বর ৩ দিনের বেশি স্থায়িত্ব হলেন
  • শিশুরা পিছনে হলে বা অজ্ঞান হয়ে গেলে
  • শিশুদের শ্বাসকষ্ট তীব্রকাশী দেখা দিলে 
  • শিশুর প্রসব কম হলে বা চোখ মুখ খুব শুকিয়ে গেলে
  • শিশুদের তাকে আসা ভাবে ফুসকুড়ি দেখা দিলে

প্রতিরোধ যত্নঃ

  • ছোট বাচ্চাদেরকে সঠিক পরিমাণে তরল খাওয়ার খাওয়াতে হবে
  • মায়ের বুকের দুধ অবশ্যই খাওয়াতে হবে
  • পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে হবে এবং শিশুর চারপাশ জীবাণুমুক্ত রাখতে হবে
  • টিকা দেয়ার সময়সূচী মেনে চলতে হবে

পরিশেষে বলা যায় যে শিশুদের ভাইরাসজনিত জ্বর কয়েক দিনের মধ্যেই সেরে যায় তবে অবশ্যই তাদের নিয়মিত যত্ন এবং সঠিক পরিমাণে খাবার ওষুধ দিতে হবে। যেহেতু তারা ছোট শিশু বেশি সমস্যা হলে অবশ্যই চিকিৎসকের কাছে দ্রুত নিয়ে যেতে হবে।

 বর্তমান সময়ে শিশুর জ্বর হলে কি করবেন

বর্তমান সময়ে শিশুর জ্বর হলে কি করবেন এই প্রশ্নটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ একজন শিশুর জ্বর মানে তার পরিবার তাকে নিয়ে বেশ উদ্বিগ্ন। আবার যাকে যদি সাধারণ ভাবা যায় তাহলে অনেক ধরনের বিপদ হয়ে যায়। যদি জ্বর হওয়াটা অনেক সময় স্বাভাবিক বিষয়। তবে জ্বর কি কারণে হয়েছে তা আমাদেরকে খতিয়ে দেখতে হবে।

করোনা মহামারী হওয়ার পরে আমরা প্রত্যেকে জ্বর নিয়ে অনেক উদ্বিগ্ন থাকি। জ্বর হলে আমাদের মনে প্রথম হয় আসে যে করোনা হলো নাকি না আবার ডেঙ্গু হলো। এক সময় জ্বর স্বাভাবিক হলেও বর্তমান সময়ে জ্বর হওয়াটা খুবই উদ্বিগ্নের বিষয়। যার বিভিন্ন ধরনের হতে পারে যেমন-

টাইফয়েডঃ টাইফয়েড হল ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণ যা প্রধানত সালমোনিলা তাইফিন নামক ব্যাকটেরিয়া দ্বারা আক্রান্ত হয়। এটি বেশ গুতর এবং শিশুর শরীরের বিভিন্ন অংশে প্রভাব ফেল করে। টাইফয়েড সাধারণত দূষিত খাবার, পানীয় বা অপরিষ্কার পরিবেশের ছড়ায় যা শিশুরা তুলনামূলকভাবে বেশি ঝুঁকিতে থাকে। কারণ বয়স্করা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন এবং তারা সজাগ থাকার চেষ্টা করে। 

উচ্চ তাপমাত্রা জ্বর, অতিরিক্ত ক্লান্তি, পেটে ব্যথা, ডায়রিয়া বা কোষ্ঠকাঠিন্য, বমি ভাব, ফুসকুরে,, শরীরে ব্যথা, বিরক্তি বা মনোযোগের অভাব খাবারের অনীহা এগুলো সবই টাইফয়েডের লক্ষণ। সঠিক সময়ে এ টাইফয়েডের চিকিৎসা না করলে বাচ্চাদের অনেক ক্ষতি হয়ে যায়।

নিউমোনিয়াঃ বাচ্চাদের শরীরে নিউমোনিয়া সাধারণত ফুসফুসের একটি সংক্রমণ যা ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া বা ফাঙ্গাসের কারণে হয়ে থাকে। নিউমোনিয়া হলে ফুসফুসে প্রদাহ সৃষ্টি হয় এবং বাচ্চারা শ্বাস নিতে কষ্ট পায়। বিভিন্ন লক্ষণ এর মধ্যে জ্বর,, কাশি শ্বাসকষ্টের সমস্যা, শ্বাস নেওয়ার সময় ঘরঘর শব্দ, দুর্বলতা ইত্যাদি। যেসব শিশুরা সাধারণত ৫ বছরের নিচে তারা ঝুঁকিতে থাকে। আর দ্রুত চিকিৎসা না করালে এটি অনেক বিপদজনক হয়ে ওঠে। সঠিক যত্ন নিতে হবে পুষ্টিকর খাবার, টিকা এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা নিউমোনিয়া প্রতিরোধে সাহায্য করে।

টনসিলে সংক্রমণঃ বাচ্চাদের মূলত ভাইরাস ভাবে ব্যাকটেরিয়ার কারণে হতে পারে। অনেক সময় বাচ্চারা দুধ খেতে গিয়ে কানের মধ্যে ঢুকে যায় যার ফলে ওর জমে উঠে এবং সে কারণে কানে ব্যথা হয় এবং টনসিলও হয়। এই ব্যথার ফলে বাচ্চাদের অনেক জ্বর আসে।

রক্তআমাশাঃ শিশুদের পেটে ব্যাকটেরিয়া আক্রমণের ফলে পেট ব্যথার পাশাপাশি গ্যাস, রক্তআমাশা বা পাতলা পায়খানা হতে পারে। অবশ্যই শিশুদেরকে যত্নের সাথে রাখতে হবে যাতে কোন ধরনের ব্যাকটেরিয়া বা ফাঙ্গাস তাদের পেটে না যায়।

জ্বরের পাশাপাশি যেসব বিষয় খেয়াল রাখা লাগবেঃ সাধারণত শিশুদের জ্বর হলে আমাদেরকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় খেয়াল রাখতে হবে, যারে জ্বরের কারণে শিশুর তেমন কোনো ক্ষতি না হয় বা অন্যান্য কোন বিপদ না আসে। যেমন-

  • জ্বরে শরীর থেকে বেশি পরিমাণ পানি হারিয়ে যায় ফলে ডিহাইড্রেশন হতে পারে। এই জন্য জ্বর অবস্থায় শিশুকে তরল খাবার বেশি দিতে হবে। মায়ের বুকের দুধের পাশাপাশি পর্যাপ্ত পানি, ওর স্যালাইন, বা বিভিন্ন পানীয় জাতীয় খাবার দিতে হবে।
  • শিশুদের কিছুক্ষণ পরপর জ্বরের মাত্রা থার্মোমিটারের সাহায্যে দেখতে হবে। শিশির জ্বর যদি ১০২° c বা তার বেশি হয় তাহলে অবশ্যই সাথে সাথে মাথায় পানি ঢালতে হবে তারপর চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
  • শিশুর জ্বর যদি ১০২° ডিগ্রী ফারেনহাইট উঠে আসে তাহলে সাপোজিটার দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে কারণ সাপোজিটারে কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই এবং অতিরিক্ত জ্বর নেমে যায়।
  • শিশুদের জ্বর হলে সাধারণত বেশিরভাগ শিশুর ক্ষেত্রেই তাদের শ্বাসকষ্ট বা বুক ধরফর করে নিঃশ্বাস নিতে সমস্যা হয় এমনটি হলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
  • শিশুদের জ্বর হলে তাদের খাবারে অনাগ্রহ দেখা যায় যা একটি শিশুর জন্য মোটেও সুস্থ কর নয়। তাই এই সময় শিশু যাতে খাবার বাদ না দেয় সে অবস্থা করতে হবে।
  • শিশুদের জ্বর হলে সাধারণত তারা বেশিরভাগ সময় বমি বা পাতলা পায়খানা করে। যদি কোন শিশুর বমি বা পাতলা পায়খানা হয় তাহলে অবশ্যই তাকে বেশি বেশি তরল খাবার দিতে হবে।
  • যদি শিশুদের গায়ে কোন ফুসকুড়ি বা লাল দাগ দেখা যায় তাহলে এটি ভাইরাস বা অন্যান্য সংক্রমনের লক্ষণ হতে পারে।
  • শিশুদের জ্বরের অবস্থায় প্রসবের পরিমাণ কম হয় এবং এতে ডিহাইড্রেশন হতে পারে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
  • অনেক সময় অতিরিক্ত জ্বরের কারণে খিচুনি হয় সেই মুহূর্তে তাৎক্ষণিকভাবে ঠান্ডা কাপড় দিয়ে শরীর মুছে দিতে হবে এবং চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
  • শিশুদের জ্বর হলে চেষ্টা করতে হবে তারা যেন পর্যাপ্ত পরিমাণ বিশ্রাম পায় বা তাদের ঘুমানোর ব্যবস্থা করতে হবে।
  • শিশুদের যার যদি তিন দিনের বেশি স্থায়ী হয় তবে অবশ্যই ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে হবে।

পরিশেষে বলা যায় যে, বর্তমান সময়ে আবহাওয়ার পরিবর্তন বা বিভিন্ন কারণে ছোট বাচ্চাদের জ্বর হতে পারে। বাচ্চারা যেহেতু অনুভূতি লেশ তারা কিছু যেহেতু প্রকাশ করতে পারে না তাই তাদের দিকে বিশেষ যত্ন রাখতে হবে। শিশুদের খাওয়া-দাওয়ার পাশাপাশি প্রয়োজন বোধহে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া লাগবে।

 বাচ্চাদের জ্বর হলে কি ওষুধ খাওয়া উচিত

বাচ্চাদের জ্বর হলে কি ওষুধ খাওয়া উচিত এটা নির্ভর করে সাধারণত বাচ্চার জ্বরের কারণে উপর। প্রথমে আমাদের কে ভালোভাবে জানতে ও বুঝতে হবে যে, বাচ্চার জ্বর কেন, কি কারণে হয়েছে। প্রথমে বাচ্চার শারীরিক অবস্থা বুঝে নিয়ে তার সংক্রমণের লক্ষণ এবং এটি নিয়ন্ত্রণ করার জন্য কোন ওষুধ ব্যবহার করতে হবে সে বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে হবে। নিচে যত মানবের জন্য ব্যবহারিত সাধারণ ঔষধ এবং যত্নের বিস্তারিত আলোচনা করা হলো-

শিশুদের জ্বর হলে শুরুতেই প্যারাসিটামল দেয়ার দরকার নেই। প্যারাসিটামল সাধারণত যেকোনো ধরনের ব্যাথা, সর্দি কাশি এবং জ্বরেও ব্যবহার করা হয়। তবে জ্বর যদি ১০১ পার হয় তাদের অবশ্যই প্যারাসিটামল খাওয়াতে হবে। এটি বাচ্চাদের জন্য সবচেয়ে নিরাপদ ওষুধ। প্যারাসিটামল শরীরের জল কমানো এবং শরীরের ব্যথা উপশম করতে সাহায্য করে। শিশুর ওজন অনুযায়ী সঠিক ডোজে দিতে হবে। বাংলাদেশে প্যারাসিটামল বিভিন্ন ধরনের ওষুধ যেমন নাপা, এইস, ফাস্ট, রেনোভা, টামেন, প্যারাপাইরাল ব্রান্ডের ওষুধ বাচ্চাদের খাওয়ানো হয়।

আরও পড়ুনঃ মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার উপায় 

এই ওষুধগুলো সাধারণত জ্বর ও শরীরের প্রদাহ কমাতে ব্যবহৃত হয়। তবে জ্বরের পরিমাণ যদি বৃদ্ধি পায় তাহলে অবশ্যই সাপোটার ব্যবহার করবেন। সাপোজিটার ব্যবহারের ফলে কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই। যে ঘরেই ছোট সন্তান আছে সেই ঘরে অবশ্যই প্যারাসিটামল এবং সাপোজিটার রাখা খুবই প্রয়োজন।

এসপিরিন জাতীয় ওষুধ কখনোই বাচ্চাদের জন্য নিরাপদ নয় কারণ এটি র‌্যাস সিনড্রমের ঝুঁকি বাড়ায়। যেকোনো ওষুধের মাত্রা বেশি দেওয়া যাবে না কারণ ছোট বাচ্চারা এই ওষুধের মাত্রা সহ্য করতে পারে না তাই ডোজ আবার স্কিপও করা যাবে না প্রয়োজন অনুযায়ী দিতে হবে। অতিরিক্ত বা অপ্রয়োজনীয় কোন ওষুধ দেওয়া যাবে না এবং অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী দিতে হবে।

শিশুদের কোন বয়সে প্যারাসিটামল দেয়া যাবেঃ সাধারণত প্রয়োজনের জন্য শিশুর দুই মাস বয়স থেকেই প্যারাসিটামল দেয়া যেতে পারে। তবে ট্যাবলেট দেয়া যাবে না কারণ এই সময় তারা ট্যাবলেট খেতে পারবে না এর জন্য সিরাপ জাতীয় ওষুধ দিতে হবে। তবে ডাক্তারের পরামর্শ অবশ্যই নিতে হবে।

কিছু কিছু বাচ্চার ক্ষেত্রে প্যারাসিটামল দেওয়ার জন্য ডাক্তারের পরামর্শ অবশ্যই নিতে হবে। যেসব বাচ্চাদের ওজন বয়সের তুলনায় আকারে ছোট বা ওজন কম। লিভার অথবা কিডনির যদি সমস্যা থাকে বা খিচুনির সমস্যা থাকে তাহলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। যদি যক্ষা বা টিবি রোগের ওষুধ খাওয়ানো হয় তাহলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী প্যারাসিটামল দিতে হবে।

প্যারাসিটামল ডোজঃ শিশুদের বয়সের পার্থক্য ভেদেই প্যারাসিটামল দেওয়া হয়। সব শিশুর প্যারাসিটামল দেওয়ার এক রকম নয়। ধারনা তো ৬ বছর বয়সের আগের বাচ্চাদের সিরাপ দেওয়া হয়। ছয় বছরের পরের বাচ্চাগুলোকে ট্যাবলেট খাওয়ানোর জন্য বলা হয়। সাধারণত দুই মাসের বাচ্চাকে আধা চা চামচ প্যারাসিটামল খাওয়াতে হবে। তিন মাস থেকে এক বছরের বাচ্চাকে এক চা চামচ প্যারাসিটামল দেয়া যায়। ১-৫ বছরের বাচ্চাকে সাধারণত ১-২ চামচ প্যারাসিটামল দেয়া যায় এবং পাঁচ বছরের উপরের বয়সের বাচ্চাদের সিরাপ না দিয়ে ট্যাবলেট খাওয়ানোর অভ্যাস করাতে হবে।

শিশুদের জ্বরের ওপরে প্যারাসিটামল খাওয়ানোর ডোজ নির্ভর করে যেমন জ্বর যদি থাকে তাহলে ২৪ ঘন্টায় চার বার প্যারাসিটামল দেয়া যায়। আবার অতিরিক্ত জ্বর হলে সাপোজিটার ব্যবহার করা হয়। সাপোজিটার সাধারণত একটি কাঠের মত যা পায়ুপথে রাস্তায় দিতে হয়। সাপোজিটর সাধারণত ব্যবহার করা অনেক ভালো কারণ এটি পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া মুক্ত। তিন মাস থেকে এক বছরের বাচ্চাকে ৬০-১২৫ mg, এক বছর থেকে পাঁচ বছরের কম বাচ্চাকে ১২৫-১৫০ mg এবং পাশ থেকে ১২ বছরের বাচ্চাদেরকে ২৫০-৫০০ mg ডোজের সাপোজিটর ব্যবহার করা যায়।

শিশুদেরকে কোনভাবেই প্যারাসিটামলের অতিরিক্ত ডোজ দেয়া যাবে না। কিন্তু যদি ভুলবশত প্যারাসিটামলের অতিরিক্ত ডোজ দিয়ে ফেলেন তাহলে অবশ্যই পরবর্তী ২৪ ঘন্টা পর্যবেক্ষণ করতে হবে। আর যদি তারপরেও সমস্যা হয় তাহলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।

সিরাপ খাওয়ার নিয়মঃ সিরাপ শিশুদেরকে খাওয়ানোর আগে অবশ্যই ভালো হবে বোতলটিকে ঝাকিয়ে নিতে হবে। তারপর প্যাকেটে থাকা চামচ বের করে পরিমাণ মতো নিয়ে খাওয়াতে হবে। সব সময় একই চামচ দিয়ে খাওয়াতে হবে এবং খাওয়ানোর পর চামচ ভালোভাবে ধুয়ে রাখতে হবে। অনেক সময় বাচ্চারা নাপা খেতে চায় না তাই নাপা খাওয়ানোর পর পরই তাদের মুখে কিছু একটা দিতে হবে। ওষুধ সব সময় পানি দিয়ে খাবেন। তাই বাচ্চাদেরকে নাপা ট্যাবলেট দিলে অবশ্যই পানি দিয়ে ভালোভাবে খেতে হবে।

পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াঃ শিশুদের জ্বর হওয়ার কারণে প্যারাসিটামল খাওয়ানো হয় তবে আর কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে। যেমন-

  • চুলকানি বা শরীরে ফুসকুড়ি দেখা দিতে পারে তার জন্য ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে
  • প্যারাসিটামল বেশি মাত্রায় সেবনে পেটব্যথা, বমি ভাব বা অম্বল হতে পারে এই সময় দ্রুত ডাকাতের পরামর্শ নিতে হবে
  • অনেক সময় প্যারাসিটামল খাওয়ার কারণে শিশুদের মুখ, জিহ্বা বা ঠোঁট ফুলে যেতে পারে
  • বুক চেপে ধরে থাকতে পারে মনে হবে শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে এই সময় দ্রুত ডাক্তারের কাছে যেতে হবে
  • যেসব শিশুর হাঁপানি রোগ আছে, তারা সাধারণত প্যারাসিটামল খেলে বুক ধরফর করে বা সমস্যা হয় ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া প্যারাসিটামল খাওয়া যাবে না।

পরিশেষে বলা যায় যে, বাচ্চাদের জ্বর হলে ঔষধ খেতে হবে তবে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী। আমরা জানি জ্বর হলে নাপা বা প্যারাসিটামল জাতীয় সিরাপ খাওয়াতে হয়। কিন্তু শিশুদের ক্ষেত্রে কোন ধরনের রিস্ক না নিয়ে সরাসরি ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে ওষুধ খাওয়া অনেক ভালো। বাচ্চাদের ক্ষেত্রে জ্বর হলে তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে এবং তাদেরকে অতি যত্ন করে রাখতে হবে।

 বাচ্চাদের হঠাৎ জ্বর হলে করণীয়

বাচ্চাদের হঠাৎ জ্বর হলে করণীয় প্রথমে ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হবে কি কারনে জ্বর এসেছে। জ্বর হওয়া অথবা অন্য কোন অসুখের সতর্কবার্তা। সাধারণত জ্বর হলে বাবা মার উদ্বিগ্ন হয়ে যায় যে সন্তানের জ্বর কেন হলো। তাই জ্বর নিয়ে উদ্বিগ্ন না হয়ে আগে দেখা হবে যে কি কারণে জ্বর এসেছে। হঠাৎ জ্বর হলে কি করতে হবে তা নিয়ে কিছু আলোচনা নিচে করা হলো।

বাচ্চাদের-ঘন-ঘন-জ্বর-হওয়ার-কারন

জ্বরের লক্ষণঃ সাধারণত জ্বর আসার আগে কপাল গরম হয়ে যায়, মুখ লাল হয়ে যায়, বেশি বেশি পানি পিপাসা লাগে, অনেক সময় আবার বমিও হয়। তাই এইসব লক্ষণ দেখা দিলে অবশ্যই থার্মোমিটার দিয়ে জ্বর মাপতে হবে যে জ্বরের মাত্রা কতখানি। এগুলো সবই জ্বর আসার সাধারণত লক্ষণ।

জ্বরের জন্য যা করতে হবেঃ প্রথমত জ্বর এর মাত্রা প্রথমে খুব বেশি ওঠেনা। তারপরও যদি দেখা যায় জ্বর ১১০.৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট বেশি তাহলে অবশ্যই তার জ্বর হিসেবে পরিগণিত হবে। আরো খেয়াল রাখতে হবে জ্বরের সঙ্গে কোন ধরনের খিঁচুনি, শ্বাসকষ্ট অথবা শরীরে কোন ধরনের ফুসকুড়ি উঠেছে কিনা।

শিশুর জ্বর উঠলে তার ওজন অনুযায়ী প্যারাসিটামল সিরাপ দিতে হবে। অবশ্যই তার ওজন বাব বয়স অনুযায়ী চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী প্যারাসিটামল দিতে হবে। প্যারাসিটামল সাধারণত গায়ের ব্যথা, শরীরের তাপমাত্রা কমানোর জন্য বিশেষ ভূমিকা পালন করে।

শিশুর হালকা কুসুম গরম পানিতে পরিষ্কার কাপড় ভিজিয়ে  কপাল, গলা, বগল, পিঠের দাড়ি ভালোভাবে মুছে দিতে হবে। এতে হয় কি শিশুর শরীরের তাপমাত্রা দ্রুত কমতে সাহায্য করে। তবে অবশ্যই বরফ ঠান্ডা পানি বা বিভিন্ন অ্যালকোহল ব্যবহার থেকে দূরে থাকবেন।

শিশুর জ্বর হলে সাধারণত তাদের শরীর থেকে পানি চলে যায় এবং ডিহাইড্রেশন হতে পারে। তাই অবশ্যই শিশুকে পর্যাপ্ত পরিমাণ তরল খাবার খাওয়াতে হবে। মায়ের বুকের দুধের পাশাপাশি পানি, ওর স্যালাইন, লেবুর শরবত, হালকা সুপ খাওয়াতে পারেন।

শিশুর জ্বর হলে তখনই ঘরের দরজা জানালা বন্ধ করে রাখতে হয় না। আপনারা অনেকেই ঘরের দরজা জানালা বন্ধ করে মোটা কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখেন এটাতে বেশি ক্ষতি হয়। জ্বর হলে তাকে হালকা কাপড় বা আরামদায়ক পোশাক পড়াতে হবে যাতে শরীরের তাপ সহজেই বের হতে পারে। খাবারের দিকে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে কারণ জ্বর হলে সাধারণত শিশুরা খাওয়ার প্রতি অনাগ্রহ দেখায়। যা তাদের শরীরের জন্য খুবই ক্ষতিকর। সহজ পাঠ্য এবং পুষ্টিকর খাবার দিতে হবে।

চিকিৎসকের শরণাপন্ন কখন হবেঃ শিশুর তোর যদি তিন দিনের বেশি স্থায়ী হয় এবং সেই জ্বরের পরিমাণ যদি ১০৪° ফারেনহাইট হয় তাহলে অবশ্যই ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে। তবে ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়ার আগে প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য ১০৪ ডিগ্রি জ্বর উঠলে মাথায় পানি ঢালতে হবে। যদি দেখেন শিশুর শ্বাসকষ্ট, খিচুনি, ওকে ফুসকুড়ি বা অন্য কোন গুরুতর সমস্যা হচ্ছে তাহলে দেরি না করে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।

পরিশেষে বলা যায় যে, বাচ্চাদের হঠাৎ জ্বর হতেই পারে। সেই সময়ে উদ্বিগ্ন না হয়ে কি কারণে জ্বর হয়েছে সেটা পর্যবেক্ষণ করতে হবে। সেইটা পর্যবেক্ষণ করার পর ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী শিশুর সেবা যত্নের পাশাপাশি ওষুধ খাওয়াতে হবে।

বাচ্চাদের ঘন ঘন জ্বর হওয়ার কিছু গুরুত্বপূর্ণ টিপস

বাচ্চাদের ঘনঘন জ্বর হওয়ার পেছনে অনেক ধানের কারণ রয়েছে, যেমন দুর্বলতার কারণে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা না থাকার কারণে, ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমের ফলে, এলার্জি বা পুষ্টিকর খাবার ঘাটতির জন্য। এইসব জ্বর থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য বা বাচ্চাকে সুস্থ রাখার জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ টিপস নিচে দেয়া হল।

  • শিশুদের হাত নিয়মিত ধোয়াতে হবে বিশেষ করে খাবারের আগে ও বাইরে থেকে ঘরে ফেরার পর
  • বাচ্চারা যেসব খেলনা বা অন্যান্য সামগ্রী ব্যবহার করে সেগুলো অবশ্যই পরিষ্কার করে রাখতে হবে
  • বাচ্চারা যেসব জায়গায় খেলে সেসব জায়গাগুলো নিয়মিত পরিষ্কার রাখতে হবে
  • বাচ্চাকে বিভিন্ন ধরনের পুষ্টিকর খাবার দিতে হবে যাতে ভিটামিন, মিনারেল, প্রোটিন ও আঁশযুক্ত যথেষ্ট পরিমাণে থাকে
  • প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় অবশ্যই ফলমূল ও শাক সবজি রাখতে হবে
  • জিংক সমৃদ্ধ খাবার ও ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবার যেমন কমলা লেবু পেয়ারা বা বাদাম এই ধরনের খাবার খাওয়াতে হবে প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
  • জ্বর হলে বাচ্চার শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি বা তরল জাতীয় খাবার দিতে হবে যাতে ডিহাইড্রেশন থেকে মুক্তি পায়
  • অসুস্থ বা জ্বর হলে বাচ্চাদের পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুমের ব্যবস্থা কোটা হবে কারণ অতিরিক্ত ক্লান্তি বা অনিয়মিত রুটিন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়।
  • বাচ্চাদের জ্বর হলে তাকে হালকা কুসুম গরম পানি দিয়ে গোটা শরীর মুছে দিতে হবে। অতিরিক্ত কাপড় বা কম্বল ব্যবহার করা যাবে না এবং ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী প্যারাসিটামল বা অন্যান্য ওষুধ দিতে হবে
  • ঠান্ডা আবহাওয়ায় বা সিজেন পরিবর্তনের সময় পরিবেশ অনুযায়ী বাচ্চাকে জামা কাপড় পরিয়ে রাখতে হবে। বৃষ্টিতে ভেজা বা ঠান্ডা জাতীয় খাবার খাওয়া থেকে বিরত রাখতে হবে।
  • যদি বাচ্চা ঘন ঘন জ্বরে আক্রান্ত হয় বাজারের সঙ্গে অন্য কোন উপসর্গ থাকে তাহলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
  • শিশুদেরকে সময়মতো ভ্যাকসিনেসন করতে হবে। এতে বিভিন্ন ধরনের সংক্রমণ থেকে সুরক্ষিত থাকে
  • বাচ্চাকে সাধারণত ধুলাবালি, ধোঁয়া বা বিশেষ করে ধূমপানের সংস্পর্শ থেকে দূরে রাখতে হবে
  • বাচ্চাকে যেন মশাই না কামড়ায় তার জন্য মশারি ব্যবহার করতে হবে কারণ মশার কামড়ে বিভিন্ন ধরনের জ্বর হয় এবং তা হয় প্রাণঘাতি জ্বর।

পরিশেষে বলা যায় যে, ছোট শিশু বা বাচ্চারা অবুজ হয় তারা তাদের সব সময় অনুভূতি শেয়ার করতে পারেনা। তারা চাইলেও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে পারেনা এটা সম্পূর্ণ দায়িত্ব একটি পরিবারের। তাই একজন সুস্থ শিশুর শরীরের জন্য আপনাকে পরিশ্রম করতে হবে তাদেরকে যথেষ্ট যত্ন করতে হবে।

মন্তব্যঃ বাচ্চাদের ঘন ঘন জ্বর হওয়ার কারণ

বাচ্চাদের ঘন ঘন জ্বর হওয়ার কারণ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য দেওয়ার চেষ্টা করেছি। আশা করি আপনার মূল্যবান সময় দিয়ে বাচ্চাদের ঘনঘন জর হওয়ার সমস্যার সমাধান গুলো আপনাদের এ সাহায্য করবে। সন্তানের সুস্থতা, হাসিখুশি জীবন প্রতিটি বাবা-মায়ের কাম্য এবং প্রয়োজনীয়তা। কোন প্রশ্ন বা মতামত থাকলে নিশ্চিন্তে জানাতে পারেন।

শিশুর একটি সুস্থ জীবন মানে একটি সুস্থ পরিবার অসুস্থ পরিবার মানে একটি সুস্থ সমাজ। আমাদেরকে শিশুর সুন্দর জীবন বিকাশের জন্য তাদের প্রতি যত্নবান হতে হবে। নিয়মিত দেখাশোনা, সচেতনতা এবং ভালোবাসা দিয়েই আমাদের ছোট্ট প্রিয়জনদের সুস্থ রাখা সম্ভব হবে। ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন আবারও দেখা হবে অন্য কোন বিষয়ের সাথে অন্য কোন ব্লগে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

প্রশ্ন ২৪ ব্লক এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url