বুকের দুধ বৃদ্ধির ১০টি ঘরোয়া উপায়
বুকের দুধ বৃদ্ধির ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে আমাদেরকে সঠিক তথ্য জানতে হবে। একটি শিশু জন্মগ্রহণের পর তার সবচেয়ে সহজ যোগ্য ও নিরাপদ খাবার হচ্ছে তার মায়ের বুকের দুধ। মায়ের বুকের দুধ শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে। আজকের এই ব্লগে আমরা জানবো মায়ের বুকের দুধ বৃদ্ধির ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে।
আমাদের অনেকেই জানে না মায়ের বুকের দুধের কার্যকারিতা একটি শিশুর জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে জন্মের পর মায়ের বুক থেকে যে শাল দুধ বের হয় সেটা যে প্রাকৃতিক এন্টিবায়োটিক এটা অনেকেই জানে না। তাহলে চলুন দেখে নেয়া যাক আজকে, মায়ের বুকের দুধ বৃদ্ধির ঘরোয়া উপায়।
পোস্ট সূচীপত্রঃ বুকের দুধ বৃদ্ধির ঘরোয়া উপায়
- বুকের দুধ বৃদ্ধির ঘরোয়া উপায়
- বুকের দুধ শুকিয়ে যায় কেন
- প্রসূতি মায়ের বুকের দুধ বৃদ্ধির উপায়
- বুকের দুধ বৃদ্ধি করে যেসব খাবার
- বুকের দুধ বৃদ্ধির দোয়া
- বুকের দুধ বৃদ্ধি ট্যাবলেট অমিডন
- বুকে দুধ না আসার কারণ
- কোন ফল খেলে বুকের দুধ বাড়ে
- বুকের দুধ বৃদ্ধির পাউডার
- মন্তব্যঃ বুকের দুধ বৃদ্ধির ঘরোয়া উপায়
বুকের দুধ বৃদ্ধির ঘরোয়া উপায়
বুকের দুধ বৃদ্ধির ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে আমাদের জানতে হবে কারণ মায়ের বুকের দুধ শিশুর বেড়ে ওঠার জন্য পুষ্টিকর খাবার। একটি শিশুর জন্মের পর প্রায় ৬ মাস তার মায়ের বুকের দুধ খাবারের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। বুকের দুধ শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় আর সাথে একজন মাকেও সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। অনেক সময় বাচ্চা ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর মায়ের পর্যাপ্ত পরিমাণ দুধ আসে না যা একটি শিশুর খাবার যোগায়। এই অবস্থায় একটি শিশুর খাবারের জন্য যথেষ্ট পরিমাণ অসুবিধা হয়। আজকে আমরা জানব কিভাবে মায়ের বুকের দুধ ঘরোয়া পদ্ধতিতে বৃদ্ধি করা যায়।
- পর্যাপ্ত পরিমান পানি পান করাঃ গবেষণায় দেখা যায় যে মায়ের দুধে প্রায় ৯০% পানি থাকে। তাই আপনি যখন আপনার শিশুকে দুধ পান করাবেন তখন আপনার শরীর হাইড্রেটেড হতে পারে। এইজন্য প্রতিদিন নিয়ম করে ৮ থেকে ১০ গ্লাস পানি খাবেন। এছাড়াও বিভিন্ন ধরনের ফলে জুস, ডাবের পানি, দুধ, বিভিন্ন ধরনের স্যুপ খেতে হবে। তাহলে বুকে দুধ হতে সমস্যা হবে না।
- পুষ্টিকর খাবার গ্রহণঃ বুকের দুধ বৃদ্ধি করার জন্য মায়ের সুষম ও পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি। প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় সবুজ শাকসবজি যেমন পালং শাক, মেথি পাতা, ব্রকলি ইত্যাদি নিয়মিত খেলে দুধ উৎপাদন বাড়ে। এছাড়া সকালে ওটস খেলে বুকের দুধ উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ সাহায্য করে। সাবুদানা দুধে রান্না করে খেলে মায়ের বুকের দুধের পরিমাণ বাড়তে থাকে। এছাড়াও গরম দুধে সামান্য হলুদ মিশিয়েও খাওয়া যায়। বেশি করে পেয়াজ দিয়ে ছোট কুচি করে আলু ভাজা ও মুসুর ডালের ভর্তা খেলেও মায়ের বুকে দুধ পর্যাপ্ত পরিমাণ বাড়তে থাকে।
- মেথি বীজ ও রসুনের ব্যবহারঃ মেথিবীজ ও রসুন প্রাকৃতিকভাবে দুধের উৎপাদন বাড়াতে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এক চামচ মেথি বীজ রাতে ভিজিয়ে রেখে সকালে সেদ্ধ করে পানি পান করতে হবে। এছাড়াও মেথি চা দুধ বাড়ানোর অন্যতম উৎস। আবার প্রতিদিন খাবারের সঙ্গে ১-২ কোয়া রসুন খেলে এবং দুধের সাথে রসুন মিশিয়ে খেলে দুধের উৎপাদন বাড়তে থাকে।
- স্তন্যপান করানোঃ নানি দাদিরা বলতেন বাচ্চা যত টেনে মায়ের বুকের দুধ খাবে দুধের উৎপাদন ততই বাড়তে থাকবে। এই কথাটি একেবারেই চিরন্তন সত্য। বাচ্চাকে বেশি বেশি বেস্ট ফিডিং করাতে হবে এতে দুধের উৎপাদন প্রক্রিয়া বাড়ানো সম্ভব। দুই বুকের দুধ আলতার করে খাওয়াতে হবে এবং চেষ্টা করতে হবে দীর্ঘ সময় ধরে খাওয়ানো তাহলে দুধের প্রবাহ বৃদ্ধি পাবে। বাচ্চা ছোট অবস্থায় না হলেও দুই ঘন্টা পর পর খাওয়াতে হবে।
- গরম দুধ এবং দারুচিনিঃ গরম দুধের সাথে দারুচিনি মিশিয়ে খেলে সাধারণত মায়ের বুকের দুধ বাড়তে সাহায্য করে। এক গ্লাস গরম দুধের সাথে এক চিমটি দারুচিনি গুঁড়ো আসাতে সাত বাড়ানোর জন্য হাফ চামচ মধু দিয়ে খেতে পারেন। তবে অবশ্যই মধু কম পরিমাণে ব্যবহার করতে হবে কারণ অতিরিক্ত মধু খেলে আবার পেট গরম হয়।
- বিশ্রাম ও মানসিক প্রশান্তিঃ সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর একজন মায়ের শরীর অনেক ক্লান্ত থাকে। সাধারণত শরীরে দুর্বলতা ও ক্লান্তিক ভাব থাকলে বুকের দুধ কমে যায়। এইজন্য মায়ের পর্যাপ্ত ঘুম ও বিশ্রাম তার শরীরের হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখে। মানসিক চাপ দূর করার জন্য প্রয়োজনে হালকা ব্যায়াম বা মেডিটেশন। এতে হয় কি যথেষ্ট পরিমাণ দুধ বৃদ্ধির সম্ভাবনা হয়।
- মেসেজ ও গরম পানির শেকঃ দুধ বৃদ্ধির ঘরোয়া উপায় হিসেবে মেসেজ ও গরম পানির শেক অনেক গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণত মেসেজ করলে বা গরম পানির শেক নিলে বুকের রক্ত চলাচল ভালো হয় এবং দুধ উৎপাদন বাড়ে। তাই একজন সদ্য ভুমিষ্ট হওয়া মায়ের এই ঘরোয়া পদ্ধতি অবলম্বন করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
- মেথি ও তিলের লাড্ডুঃ মেথি ও তিল এই দুইটি দুধ উৎপাদনের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণত আগের সময়ে সন্তান জন্মের পর দুধ বৃদ্ধির জন্য মেথি গুঁড়া ও তিল দিয়ে লাড্ডু বানিয়ে প্রতিদিন সকালে খেতে দিত। এতে করে মায়ের বুকের দুধ উৎপাদনে যথেষ্ট ভূমিকা রাখে।
- মায়ের পাশ পরিবর্তনঃ একজন মায়ের তার সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়ানো দরকার। এক স্তনের দুধ খাওয়া শেষ হলে অপর স্তনের দুধ খেতে দিতে হবে। এজন্য অবশ্যই মায়ের পাশ পরিবর্তন করে শিশুকে দুধ খাওয়াতে হবে।
পরিশেষে বলা যায় যে, ভূমিষ্ঠ হওয়া থেকে শুরু করে মায়ের বুকের দুধের উপকারিতা একটি শিশুর জন্য এতটাই গুরুত্বপূর্ণ বা বলে শেষ করা যাবে না। কিন্তু অনেক সময় মায়ের বুকের দুধ পর্যাপ্ত পরিমাণ হয় না সন্তানকে খাওয়ানোর জন্য। এই জন্য উপরের বর্ণিত ঘরোয়া পদ্ধতিগুলো অবলম্বন করলে বুকে দুধ আসা শুরু করে। তাই সন্তানের জন্য উপরের পদ্ধতিগুলো অবলম্বন করে শিশুর বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে হবে।
বুকের দুধ শুকিয়ে যায় কেন
বুকের দুধ শুকিয়ে যায় কেন এই কথাটি বলতে গেলে প্রথমেই বলা যায় সাধারণত প্রসূতি মায়ের শারীরিক, মানসিক এবং পরিবেশগত বিভিন্ন কারণের জন্য হতে পারে। এই সমস্যাটি মা ও শিশু দুজনের জন্যই খুবই ক্ষতিকর। একজন শিশুর ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর তার মায়ের বুকের দুধ হল তার প্রধান খাবার। কারণ মায়ের বুকের দুধ পান করলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং একটি সুস্থ সুন্দর শিশুর উপহার পাওয়া যায়। বেশ কিছু কারণে বুকের দুধ শুকিয়ে যেতে পারে নিচে এর কারণগুলোর বিস্তারিত আলোচনা করা হলো-
- শিশুকে কম দুধ খাওয়ানোঃ অনেক প্রস্তুতি মা আছেন যারা সাধারনত শিশুকে সহজে দুধ পান করাতে চান না। দুধ কমে যাওয়ার এটাও একটি বড় কারণ। কথাতেই আছে বাচ্চা যত মায়ের বুকের দুধ টেনে খাবে ততই বুকের দুধ আসবে। আবার অনেক সময় বাচ্চারও অনাগ্রহ থাকে দুধ খাওয়ার প্রতি। যদি শিশুকে নিয়মিত পর্যাপ্ত সময় ধরে দুধ খাওয়ানো হয় তবে অবশ্যই দুধ উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। সঠিকভাবে দুধবানের পদ্ধতি না জানা বা ভুল পজিশনেও দুধ সাধারণত শুকিয়ে যেতে পারে।
- অপর্যাপ্ত খাবার ও পুষ্টির ঘাঁটিঃ সাধারণত একজন গর্ভাবস্থায় নারীকে বিভিন্ন ধরনের খাবার খেতে হয়। অনেক সময় বিভিন্ন কারণে খাবারের ঘাটতি থাকে এর ফলে মায়ের শরীরের পুষ্টির চাহিদা কম হয়। মায়ের খাদ্যাভ্যাস এর পুষ্টির ঘাটতি থাকলে অবশ্যই বুকের দুধ উৎপাদনে ঘাটতি হবে। বিশেষ করে প্রোটিন, ক্যালসিয়াম আয়রন এবং তরল জাতীয় খাবার অভাবে দুধের পরিমাণ হ্রাস হতে পারে।
- মানুষে কাপ ও উদ্বেগঃ একটি পরিবারে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা থাকতে পারে। তাই সদ্য প্রস্তুতিমা যদি কোন মানসিক চাপ, দুশ্চিন্তা বা বিষণ্যতায় থাকে তাহলে সে প্রভাব তার বুকের দুধ উৎপাদনে বাধা দেয়। বুকের দুধ উৎপাদনকারী হরমোন যেমন অক্সিটোসিন ও প্রোল্যাকটিন সাধারণত মানুষের চাপবাদ দুশ্চিন্তায় থাকলে হরমোনের উপরে প্রভাব পড়ে। তাই একজন প্রসূতি মাকে পরিবারের সহায়তায় বা মানসিক সমর্থন না থাকলে সমস্যাটি আরো প্রকট হতে পারে।
- পর্যাপ্ত ঘুম ও বিশ্রামের অভাবঃ শিশুর জন্মের পর মায়ের বিভিন্ন ধরনের অভ্যাসের পরিবর্তন হয়ে যায়। শিশুর জন্মের পর অনেক সময় তারা রাতে ঘুমাতে চায় না এতে মায়ের পর্যটক পরিমান ঘুমের ঘাটতি হয় এবং বিশ্রামও পাই না। এর প্রতিক্রিয়া হিসেবে বুকের দুধ উৎপাদনে বাধা দেয়। তাই একজন প্রস্তুতি মায়ের যদি পর্যাপ্ত ঘুম ও বিশ্রামের অভাবে থাকে তাহলে দুধ উৎপাদন হয় না তা শুকিয়ে যায়।
- হরমোনের অসামঞ্জস্যতাঃ কোন প্রসূতি মায়ের যদি থাইরয়েডের সমস্যা বা পলিসিস্টিক ওভারে সিনড্রোম থাকে তাহলে এগুলো হর মনে পরিবর্তন ঘটিয়ে লেক্টোরেশন কমিয়ে দেয়। যা ধীরে ধীরে বুকের দুধ শুকিয়ে যায়।
- ওষুধের প্রভাবঃ বর্তমান সময়ে অনেক গর্ভবতী নারীর স্বাভাবিক সন্তান ভূমিষ্ঠ হয় না সিজারের মাধ্যমে সন্তান ভূমিষ্ঠ হয়। এই সিজার কালীন সময়ে বিভিন্ন ধরনের ওষুধ খাওয়ার প্রভাবে বুকের দুধের অনেকটা প্রভাব পড়ে। আবার কিছু ওষুধ যেমন জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল, সর্দি কাশির ওষুধ বা যেকোনো অ্যান্টি ডিপ্রেশন এর ওষুধ বুকের দুধের পরিমাণ শুকিয়ে যেতে সাহায্য করে।
- শারীরিক অসুস্থতাঃ কোন প্রসূতি মায়ের যদি দীর্ঘমেয়াদি রোগ যেমন ডায়াবেটিস বা অ্যানিমিয়া থাকে তাহলে দুধের ল্যাকটেশন এ প্রভাব পড়ে। আবার মায়ের শরীরের ডিহাইড্রেশন বা পানির অভাব হলেও বুকের দুধ শুকিয়ে যায়।
- ধূমপান ও অ্যালকোহল সেবনঃ বর্তমান সময়ের আধুনিক যুগে অনেক প্রতিমা আছে যারা ধূমপান বা অ্যালকোহল সেবন করেন। এগুলোর ফলে তাদের বুকের দুধ শুকিয়ে যায়।
- সিজারিয়ান ডেলিভারির প্রভাবঃ সাধারণত প্রাকৃতিকভাবে সন্তান ভূমিষ্ঠ হয়ে একজন মায়ের সবকিছুই সঠিক থাকে ফলে বুকের দুধ আসে। কিন্তু অনেক সময় সিজারিয়ান ডেলিভারির পর মায়ের বুকে দুধ আসতে দেরি হয়। বিভিন্ন ধরনের ঔষধ ও শারীরিক পরিবর্তনের কারণে এই সমস্যা দেখা দেয়।
প্রতিকার ও পরামর্শঃ প্রসূতি মায়ের বুকের দুধ যাতে শুকিয়ে না যায় তার জন্য কিছু ব্যবস্থা করতে হবে। তা না হলে একজন শিশু সন্তানের যথাযথভাবে বেড়ে ওঠা সম্ভব হবে না। কারণ একজন শিশুর প্রধান খাবার হল তার মায়ের বুকের দুধ। যে দুধ ধরেছে শিশুর শরীরের বিভিন্ন ধরনের গুনাগুন। তাই প্রসূতিমাকে কিছু প্রতিকারের ব্যবস্থা করতে হবে যেমন-
- শিশুকে প্রতিদিন নিয়মিত এবং পর্যাপ্ত সময় ধরে বুকের দুধ খাওয়াতে হবে
- প্রসূতি মাকে অবশ্যই প্রতিদিন পুষ্টিকর খাবার বহন যেমন সবুজ শাকসবজি, প্রোটিন, ফলমূল খেতে হবে
- নিয়ম করে প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণ অন্তত ৮-১০ গ্লাস পানি খেতে হবে
- প্রসূতি মাকে অবশ্যই মানসিক চাপ দূর করতে বিশ্রাম ও রিলাক্স থাকতে হবে
- একজন মাকে সঠিকভাবে সন্তানকে স্থান গোপন পদ্ধতি শিখতে হবে এবং প্রয়োজনে ডাক্তার বা ল্যাকটেশন পরামর্শের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে
- যদি প্রসূতি মায়ের বুকের দুধ একেবারে শুকিয়ে যায় তবে অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে যথার্থ কারণ খুঁজে সমাধান নিতে হবে।
পরিশেষে বলা যায় যে, প্রসূতি মাকে বুকের দুধ শিশু সন্তানের জন্য গুরুত্বের সাথে চেষ্টা করতে হবে যাতে সন্তান স্তন্যপানে অনিহা প্রকাশ না করে। নিজেকে যথেষ্ট পরিমাণ পানি এবং তরল জাতীয় খাবার খেতে হবে। অবশ্যই মানসিক টেনশন থেকে নিজেকে মুক্ত রাখতে হবে শুধুমাত্র তার শিশু সন্তানের জন্য।
প্রসূতি মায়ের বুকের দুধ বৃদ্ধির উপায়
প্রসূতি মায়ের বুকের দুধ বৃদ্ধির উপায় সম্পর্কে আজ বিস্তারিত আমরা জানব। সন্তান মায়ের বুকের দুধ পাচ্ছে না এই নিয়ে মায়েদের চিন্তার শেষ নাই। চিন্তা হওয়াটা একজন প্রসূতি মায়ের জন্য খুবই স্বাভাবিক। কারণ একটি সন্তান জন্মের পর তার প্রধান খাদ্যই হচ্ছে মায়ের বুকের দুধ। মায়ের বুকের দুধের সাথে সন্তানের একটি সংযোগ আছে আর সেটি হল বাচ্চা যত দুধ টেনে খাবে দুধ ততই বৃদ্ধি পাবে। তাহলে আজকে দেখে নেয়া যাক প্রসূতি মায়ের বুকের দুধ বৃদ্ধির কিছু উপায়।
- জন্মের পর যত দ্রুত সম্ভব ভূমিষ্ঠ সন্তানকে দুধ খাওয়ানোর ব্যবস্থা করতে হবে। জন্মের এক ঘন্টা পর মায়ের বুক থেকে যে শাল দুধ বের হয় তা খাওয়ানোর ব্যবস্থা করতে হবে।
- জন্মের পর নবজাতক এবং তার মাকে একই বিছানায় ঘুমাতে দিতে হবে যাতে সন্তান তার মায়ের গন্ধ পায় এবং অনুভূতি বোঝে।
- শিশুকে নিয়মিত বেশি বেশি দুধ খাওয়ালে দুধ উৎপাদনের স্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায়
- শিশুকে সঠিক স্তন্যপান পদ্ধতি ব্যবহার করতে হবে অর্থাৎ সঠিক পজিশনে শিশুকে দুধ খাওয়ানো খুবই জরুরী। ভুল পদ্ধতিতে দুধ খাওয়ালে বুকের দুধ উৎপাদন কমে যায়।
- প্রসূতি মাকে বেশি করে প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার যেমন ডিম, মাছ, মাংস, ওটস, বাদাম, দুধ, ফলমূল ও সবুজ শাকসবজি খেতে হবে।
- বেশি করে দুধ উৎপাদনের জন্য প্রস্তুতি বাঁকে প্রতিদিন অন্তত ৮-১০ গ্লাস পানি, ডাবের পানি, স্যুপ বা দুধ পান করতে হবে। এতে বুকে দুধের উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে।
- মেথি বীজ উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এজন্য মেথি চা বা মেথি বীজ সেদ্ধ পানি পান করলে দুধ উৎপাদন বহু গুনে বেড়ে যায়।
- একজন প্রসূতি মানে প্রতিদিন খাবারের সঙ্গে রসুন খেতেই হবে। কারণ রসুনের গুণ উৎপাদনে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।
- একজন প্রসূতি মাকে প্রতিদিন তার বুকে গরম পানির সেক এবং হালকা মেসেজ করতে হবে। এর ফলে বুকের রক্ত সঞ্চালন বাড়ায় যার দুধ উৎপাদন করতে সাহায্য করে।
- প্রসূতি মাকে তার সন্তানের জন্য অবশ্যই মানসিক প্রশান্তি ও পর্যাপ্ত পরিমাণ বিশ্রাম নিতে হবে। কারণ বিশ্রাম এবং মানসিক প্রশান্তি দুধ উৎপাদনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
- শিশুকে রাতে দুধ খাওয়ানোর সময় দুধ উৎপাদনকারী হরমোন প্রলাক্টিন বেশি সক্রিয় থাকে। তাই শিশুকে রাতে ঘন ঘন দুধ খাওয়াতে হবে।
- একজন প্রসূতি মাকে তার বুকের দুধ বৃদ্ধি করার জন্য নিয়মিত হালকা ব্যায়াম করতে হবে কারণ এতে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে এবং হরমোন ভারসাম্য বজায় রাখে।
- প্রসূতি মায়ের বুকের দুধ বৃদ্ধির জন্য মধু ও হলুদ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। সাধারণত মধু ও হলুদ মিশিয়ে খেলে এটি শরীরকে প্রতিযোগায় এবং দুধ উৎপাদন বাড়ায়।
- একজন প্রসূতি মাকে ল্যাকটেশন চা যেমন ফেনোগ্রিক বা ফেনেলযুক্ত চা পান করতে হবে।
- একজন প্রসূতি মায়ের যদি দুধের পরিমাণ অনেক কমে যায় এবং কোন ঘরোয়া পদ্ধতিতেও কাজ হচ্ছে না শিশুসন্তানটি দুধ পাচ্ছে না তাহলে অবশ্যই আপনাকে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
পরিশেষে বলা যায় যে, একজন শিশুর জন্য মায়ের দুধের সাথে অন্য কোন কিছুর বিকল্প হতে পারে না। তাই নবজাতকের জন্য যাতে দুধের সমস্যা না হয় সেটা অবশ্যই পরিবারের লোকজনসহ সবাইকে দৃষ্টি দিতে হবে। একজন নব প্রসূতিকে সব ধরনের সাহায্য করতে হবে যাতে শিশু তার মায়ের বুকের দুধ থেকে বঞ্চিত না হয়।
বুকের দুধ বৃদ্ধি করে যেসব খাবার
বুকে দুধ বৃদ্ধি করে যেসব খাবার সেসব খাবারগুলো অবশ্যই আমাদের প্রসূতি মায়ের প্রতিদিনের খাবার তালিকায় রাখতে হবে। কারণ একজন শিশুর স্বাভাবিক বৃদ্ধির জন্য মায়ের দুধের কোন বিকল্প নাই। শিশুর সঠিক বিকাশের জন্য এবং সঠিক পুষ্টি জ্ঞানের জন্য অবশ্যই আমাদের প্রসূতি মায়ের খাবার তালিকায় পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবার রাখতে হবে। এইজন্য মায়ের বুকের দুধ বৃদ্ধি করতে যেসব খাবার তালিকায় রাখতে হবে সেগুলোর বর্ণনা নিম্নে কিছু দেয়া হলো।
যেসব খাবার দুধ বৃদ্ধি করেঃ
- মেথিবীজঃ প্রসূতি মায়ের বুকের দুধ বৃদ্ধিতে প্রাকৃতিকভাবে সাধারণত মেথি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। এই মেথি বীজে থাকা ফাইটোইস্ট্রোজেন হরমোন সাধারণত দুধ উৎপাদন বাড়াতে সাহায্য করে। মেথি বীজ রাতে ভিজিয়ে রেখে সকালে সেদ্ধ করে সেই পানি খালি পেটে খেতে হবে। এছাড়াও এক চামচ মেথি ভেজ রাতে পানিতে ভিজিয়ে রেখে সকালে সিদ্ধ করে পান করা প্রতিটি মানুষের জন্য খুবই উপকারী। মেথি চা তৈরি করে ও পান করা যেতে পারে। এটি প্রসূতি মায়ের জন্য নিরাপদ এবং দুধ এর প্রবাহ বাড়ায়।
- ওটসঃ সাধারণত ওরস মায়ের বুকের দুধ বৃদ্ধিতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। এতে থাকা ফাইবার, আইরন এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট মায়ের শরীরকে সুস্থ রাখে এবং প্রলেক্টিক হরমোন সক্রিয় করে যা সাধারণত দুধ উৎপাদনে ব্যাপক ভূমিকা রাখে। একজন প্রসূতিমা যদি সকালের নাস্তায় এক বাটি ওটস খায় এবং তার সাথে দুধ মধু বা ফল যোগ করে তাহলে ওটস এর পুষ্টিগুণ আরো বেড়ে যায়। এটি হালকা খাবার হওয়ায় সাহায্য হজম হয় এবং শক্তি যোগায়। নিয়মিত ওরস খেলে দুধের বৃদ্ধির পরিমাণ বেড়ে যায়।
- রসুনঃ রসুন প্রসূতি মায়ের বুকের দুধ বৃদ্ধির জন্য একটি প্রাকৃতিক কার্যকরী উপাদান হিসেবে কাজ করে। রসুন এ থাকা গ্যালাকটোগগু উপ দুধ উৎপাদন বাড়াতে এবং শিশুকে স্তন্যপান করতে উৎসাহিত করে। প্রতিদিন দুই-তিনকো রসুন চিবিয়ে খাওয়া বা খাবারের ওষুধ ব্যবহার করলে প্রসূতি মায়ের জন্য অনেক উপকারে আসে। এটি মায়ের রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে এর ফলে হরমোনের ভারসাম্য বজায় থাকে। যা দুধ উৎপাদনের বৃদ্ধিতে কাজ করে।
- মৌরিঃ মৌরি সাধারণত একজন প্রসূতি মায়ের বুকের দুধ বৃদ্ধি করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। মৌরি শুধু বুকের দুধ বৃদ্ধির জন্য নয় পেটে গ্যাস বা পেট ব্যথার জন্য বিশেষ ভূমিকা পালন করে। মরতে রয়েছে ফাইটোইস্ট্রোজেন। যা বুকের দুধ বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে তাই একজন প্রসূতি মাকে প্রতিদিন মৌরি খাওয়া খুব ভালো।
- সবুজ শাকসবজিঃ সাধারণত সবুজ শাকসবজিতে রয়েছে ক্যালসিয়াম, লৌহ এবং ফলেট বিদ্যমান যা খনিজের মূল উৎস। পালংশাক, মেকিপাতা, পাতাকপি সরষে শাক প্রভৃতি এগুলো খাবারে ভিটামিন থাকায় মায়ের বুকের দুধ বাড়তে সাহায্য করে। প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় একজন প্রসূতি মায়ের সবুজ শাকসবজি রাখতে হবে।
- জিরাঃ জিরা একজন প্রস্তুতি মায়ের বুকের দুধ বৃদ্ধি করতে শুধু সাহায্য করে। তবে জিরা শুধু দুধ বৃদ্ধিতে নয় পেটের কোষ্ঠকাঠিন্য, পেট ফাঁপা, পেট ব্যথা হাজমেও বিভিন্নভাবে সাহায্য করে। জিরা সাধারণত রান্নায় ব্যবহার করতে হবে এছাড়াও রাতে এক কাপ পানিতে জিরা ভিজিয়ে সকালে সেই পানি খেলে প্রসূতি মায়ের বুকের দুধ বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
- গাজরঃ গার্ডর মায়ের বুকের দুধ বৃদ্ধির জন্য একটি কার্যকরী প্রাকৃতিক ভিটামিনযুক্ত খাবার। এ গাজর রয়েছে বিটা ক্যারোটিন, ভিটামিন এ এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা স্তনপানকারী মায়ের জন্য খুবই উপকারী কারণ গাজর দুধ উৎপাদনে সাহায্য করে। প্রতিদিন গাজর কাঁচ চিবিয়ে খাওয়া, স্যুপ বানিয়ে বা গাজরের জুস খেলেও দুধ উৎপাদনের কাজে সাহায্য হয়। গাজর প্রসূতি মায়ের শরীরের প্রলাক্টিন হরমোনের স্তর বাড়িয়ে দুধের প্রবাহ বৃদ্ধি করে।
- সজনে ডাঁটাঃ সজনে ডাঁটা বুকের দুধ উৎপাদনের জন্য একটি প্রাকৃতিক ও কার্যকরী খাদ্য। কারণ এটাতে রয়েছে ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, ক্যালসিয়াম এবং আয়রন সমৃদ্ধ যা দুধ উৎপাদনকারী হরমোনকে বাড়িয়ে তোলে। সজনে ডাঁটার ভাজি বা বিভিন্ন সবজির সাথে রান্না করে খেলে মায়ের শরীরের পুষ্টি সরবরাহ করে এবং দুধের গুণগত মান উন্নত করে।
- ডালঃ মুগ ডাল, মসুর ডাল এবং ছোলার ডাল সাধারণত প্রোটিন, আয়রন, এবং ফাইবার সমৃদ্ধ যা খেলে বুকের দুধ উৎপাদনকারী হরমোন প্রোলেক্টিন কে সক্রিয় করে দুধ বাড়াতে সাহায্য করে। ডাল রান্না করে, ভর্তা করে বা ঘন তরকারি হিসেবেও খাওয়া যায়। এটি মায়ের শরীরের বিশেষ পুষ্টি যোগায় এবং হজমে সহায়তা করে।
- পানি পান করাঃ একজন প্রসূতি মা তার শিশুসন্তানকে দুধ পান করালে শরীর দুই হাত নেশার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই বুকের দুধ পর্যাপ্ত পরিমাণ বাড়াতে প্রচুর পরিমাণে পানি খাওয়া প্রয়োজন। দিনে অন্ততপক্ষে ৮-১০ গ্লাস পানি খাওয়া খুবই জরুরী। সাথে ডাবের পানি, বিভিন্ন ধরনের ফলের জুস খাওয়া শরীরের জন্য খুবই ভালো যা বুকে দুধ উৎপাদনে সাহায্য করে।
পরিশেষে বলা যায় যে মায়ের বুকের দুধ শিশুর জন্য একটি অপরিহার্য পুষ্টি এবং তার সুরক্ষার উৎস। একটি শিশু সন্তানের জন্য মায়ের বুকের দুধের কোন বিকল্প নাই। দুধ বৃদ্ধির জন্য প্রাকৃতিক পদ্ধতি যেমন সুষম খাবার গ্রহণ, পর্যাপ্ত পানি পান করা, ওটস, মেথি, গাজর সজনে ডাটা বিভিন্ন ধরনের পুষ্টিকর খাবার নিয়মিত খেতে হবে। পাশাপাশি মানসিক প্রশান্তি, পর্যাপ্ত বিশ্রাম এবং শিশুকে নিয়মতা স্তন্যপান করাতে হবে। তাহলেই ভাইয়ের বুকে পর্যাপ্ত দুধ আসবে।
বুকের দুধ বৃদ্ধির দোয়া
বুকের দুধ বৃদ্ধির দোয়া আমাদের প্রসূতি মায়ের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ইসলামে মায়ের দুধ পান করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং ফজিলত হিসেবে বিবেচনা করা হয়। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) শিশুদের মায়ের দুধ পান করানোর গুরুত্ব উল্লেখ করে বলেছেন ” নবজাতকের জন্য মায়ের দুধ একটি প্রাকৃতিক রিজিক এবং এটি শিশুর শারীরিক ও আত্মিক কল্যাণের জন্য আল্লাহ প্রদত্ত বিশেষ নেয়ামত”। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) আর ও বলেন ” মায়ের দুধ শিশুর জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে সবচেয়ে বড় খাদ্য”।
আরও পড়ুনঃ গর্ভাবস্থায় প্রথম ৩ মাসের সতর্কতা
আল কুরআনে আল্লাহ তায়ালা মায়ের দুধ পান করার বিষয়ে সরাসরি নির্দেশনা দিয়েছেন (সূরা আল বাকারা-২:২৩৩)। “ মায়েরা তাদের সন্তানদের পূর্ণ দুই বছর দুধ পান করাবে, যদি তারা দুধ পান সম্পূর্ণ করতে চায়” এই আয়াত থেকে বোঝা যায় যে, মায়ের দুধ সন্তানের জন্য অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ উপহার এবং এটি শিশুর প্রাথমিক প্রয়োজন মেটায়।
সূরা লোকমানে আল্লাহ বলেছেন ”আমি মানুষকে তার পিতামাতার প্রতি সদাচরণ করার নির্দেশ দিয়েছি। তার মায়ের কষ্টের পর কষ্ট সহ্য করে তাকে গর্ভে ধারণ করেছে এবং তার দুধ পান করা এসে দুই বছর”
ইসলামিক দৃষ্টিতে মায়ের দুধ শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং সেই শিশুর প্রাথমিক খাদ্য ও পুষ্টির নিশ্চয়তা দান করে। একটি শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশে দুধ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। একজন মায়ের দায়িত্ব হল শিশুকে যত্নের সাথে তার দুধ পান করানো। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন “যে মা তার সন্তানের জন্য বুকের দুধ খাওয়ায় তার জন্য আল্লাহ একধাপ উত্তম জান্নাত দান করেন” ইসলামে দোয়া ও আমলের মাধ্যমে যে কোন ধরনের প্রয়োজন পূরণের জন্য আল্লাহ তায়ালার সাহায্য প্রার্থনা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
দুধ বৃদ্ধির দোয়াঃ
ইসলামে নির্দিষ্ট কোন দুধ পান করার জন্য দোয়া নেই তবে যদি কোন নারীর বুকের দুধ সম্পূর্ণ না হয় তবে দুধ বৃদ্ধির জন্য আল্লাহ তায়ালার কাছে প্রার্থনা করার পাশাপাশি কিছু দোয়া এবং সুন্নাহ আছে যা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নিম্নলিখিত আয়াত বা দোয়া নিয়মিত পড়ে আল্লাহর কাছে বুকের দুধ বৃদ্ধির জন্য দোয়া করা যেতে পারে-
দোয়া-১ঃ ”রাব্বানা হাব লানা মীন আলে কুওয়াইরাত”
অর্থ- হে আমার পূর্ণ! আমাদের জন্য আমাদের পরিবারের সদস্যদের এবং সন্তানের মধ্যে আনন্দের কারণ সৃষ্টি করুন এবং তাদেরকে ঈমানদারদের নেতা করুন। এই দোয়ার মাধ্যমে আপনি আল্লাহর কাছে সন্তান এবং মায়ের জন্য বরকত এবং কল্যাণ চাইতে পারেন।
দোয়া-২ঃ ”আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফিহি ওয়াজিদনা মিনহু”
অর্থ- হে আল্লাহ ! আমাদের এই খাবারে বরকত দিন এবং তা বাড়িয়ে দিন।
দোয়া-৩ঃ ”রব্বি ইন্নি রিমা আনজালতা ইলাইয়া মিন খয়রিন ফাকির”
অর্থ- হে আমার আল্লাহ ! তুমি আমার প্রতি যে কল্যাণ নাযিল করবে, আমি তার জন্য খুবই অভ্যন্তরীণভাবে প্রয়োজনী। এই দোয়া শিশুদের দুধ বৃদ্ধির জন্য আল্লাহর সাহায্য রহমত কামনা করার জন্য বলা যেতে পারে।
দোয়া-৪ঃ ”আস্তাগফিরুল্লাহ আল্লাহুম্মা বারিক লি ফি রিজকি ওয়াজুবি”
অর্থ- আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি, হে আল্লাহ! আমার রিজিক এবং আমার সন্তানদের মধ্যে বরকত দান করুন।
দোয়া কবুলের শর্ত সমূহঃ
- আল্লাহ তায়ালার কাছে দোয়া কবুল করার জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ শর্ত ও আদব রয়েছে যা অনুসরণ করলে আল্লাহ তা'আলা দুয়া কবুল করার তৌফিক দান করেন যেমন-
- করার সময় আল্লাহর প্রতি পূর্ণ বিশ্বাস রাখতে হবে যে তিনি আমাদের সমস্যা সমাধান করতে পারবেন। কুরআনে বলা হয়েছে “ তোমরা আমাকে ডাকো, আমি ডাকে সাড়া দেব”।
- সাধারণত হারাম আয় উপার্জন, হারাম খাদ্য ও পানীয় দোয়া কবুলের পথে বাধা সৃষ্টি করে। তাই রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন ”এক ব্যক্তির দোয়া কবুল হয়না যদি সে হারাম খায়, হারাম পোশাক পরিধান করে এবং তার উপার্জন হারাম হয়”
- দোয়া করার আগে নিজের গুনাহর জন্য আল্লাহর কাছে তওবা ও ইস্তেগফার করে ক্ষমা চাইতে হবে। কুরআনে বলা হয়েছে, ”তোমরা তোমাদের প্রভুর কাছে ক্ষমা চাও। নিশ্চয়ই তিনি পরম ক্ষমাশালী”
- আল্লাহ তায়ালার কাছে দোয়া করতে হবে একান্ত বিনয়ের সাথে এবং আন্তরিক সুহৃদয়ে। আল্লাহ বলেন, ”তোমরা বিনয়ের সাথে এবং গোপনে তোমাদের প্রভুর কাছে প্রার্থনা কর “
- দোয়া কবুল হওয়ার জন্য অন্যতম শর্ত হচ্ছে ধৈর্য রাখা জরুরী। আল্লাহ তার সময় অনুযায়ী দোয়া কবুল করেন। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, ”আল্লাহ বান্দার দোয়া কবুল করেন যদি সে তাড়াহুড়ো না করে এবং বলে না যে, আমি দোয়া করলাম কিন্তু তা কবুল হলো ন “।
- দোয়া হতে হবে এমন কোন জিনিসের জন্য যা শরীয়তে হালাল এবং উত্তম। হারাম বা ক্ষতির কোন জিনিস প্রার্থনা করলে তা কবুল হবে না।
- দোয়া করার জন্য আরবি ভাষা বাধ্যতামূলক নয় যে কোন ভাষায় আন্তরিকভাবে দোয়া করা যায়।
- ইসলাম বিশেষ কিছু সময় রয়েছে যখন আল্লাহ তায়ালা দোয়া কবুল হওয়ার সম্ভাব যেমন তাহাজ্জুদ সময়, জুমার দিন, আজান ও ইকামতের মধ্যবর্তী সময়, রমজানের শেষ তৃতীয়াংশ।
- দোয়া কবুলের জন্য অন্যতম পূর্ব শর্ত সালাত ঠিকভাবে আদায় করতে হবে এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভের চেষ্টা করতে হবে।
বুকের দুধ বৃদ্ধি ট্যাবলেট অমিডন
বুকের দুধ বৃদ্ধি ট্যাবলেট অমিডন যার সক্রিয় উপাদান ডমপেরিডন, যেটা বুকের দুধ বৃদ্ধিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই ওষুধটি সাধারণত তাদের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয় যাদের বুকের দুধের পরিমাণ কম হয়। ডমপেরিডন মূলত প্রোলেক্টিন হরমোনের মাত্রা বৃদ্ধি করে যা স্তন্যপান করার জন্য প্রয়োজনীয় দুধ উৎপাদনকে উদ্দীপিত করে।
অমিডনের ভূমিকাঃ
প্রোল্যাকটিন বৃদ্ধি করেঃ ডমপেরিডন সাধারণত মস্তিষ্কের পিটুইটারি গ্রন্থিকে উদ্দীপিত করে প্রলাক্টিন হরমোনের নিঃসরণ বাড়ায়। সাধারণত এই হরমোন দুধ উৎপাদনের ক্ষেত্রে সরাসরি কাজ করে। যার কারনে যেসব যেসব নারী দুধ হইতে সমস্যা হয় তাদেরকে অমিডন খাওয়ানোর কথা বলেন।
ল্যাকটেশন সমস্যার সমাধানঃ যেসব মায়েদের ডেলিভারি পর বুকে পর্যাপ্ত দুধ আসে না বা দুধ পর্যাপ্ত উৎপাদন করতে পারছে না তাদের ক্ষেত্রে অমিডন ব্যবহারে দুধের সরবরাহ বাড়তে পারে। এইজন্য যাদের দুধ উৎপাদনে সমস্যা হয় ডাক্তার তাদেরকে অমিডনের পরামর্শ দেন।
নবজাতকের পুষ্টি নিশ্চয়তা করাঃ একটি নবজাতক শিশুর প্রধান খাদ্য হচ্ছে তার মায়ের বুকের দুধ। মায়ের বুকের দুধের মাধ্যমে একটি শিশু সকল ধরনের পুষ্টিগুণ শরীরে ধারণ করে। ফলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক গুণ বেড়ে যায়। যে সকল মায়ের বুকের দুধে সমস্যা হয় অমিডন খুব সহায়ক হিসেবে কাজ করে।
হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখেঃ অমিডন সাধারণত প্রলাক্টিন বৃদ্ধিতে সাহায্য করে আর এই প্রলাক্টিন বৃদ্ধির মাধ্যমে বুকে দুধের উৎপাদন স্বাভাবিক করার পারপাসে মায়ের দেহের হরমোনাল এর ভারসাম্য রক্ষা করে। এইজন্য অমিডন খাওয়া খুবই শরীরের জন্য উপকারী।
অমিডন কিভাবে কাজ করেঃ সাধারণত ডমপেরিডন প্রলাক্টিন নামক হরমোনের মাত্রা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। প্রোল্যাকটিন হরমোন মায়ের বুকের দুধ বাড়াতে সাহায্য করে । হলে বুকে দুধের পরিমাণ স্বাভাবিকের তুলনায় বাড়তে থাকে। অমিডন নিয়মিত খেয়ে বুকের দুধে উৎপাদন বৃদ্ধি সহজে হয়।
অমিডন ব্যবহারের নিয়মঃ
ডোজঃ সাধারণত চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী দিনে ২-৩ বার খাওয়া যায়। অমিডন খাবার গ্রহণের আধাঘন্টা আগে খেতে হয়।
সময়কালঃ অমিডন সাধারণত কতদিন ব্যবহার করবেন তা আপনার চিকিৎসক ঠিক করে দেবে । চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী অমিডন গ্রহণ করতে হবে।
পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াঃ অমিডন ব্যবহারের ফলে সাধারণত কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা যায় । যেমন-
- মাথা ঘরা বা ঝিমঝিম ধরা
- পেটে ব্যথা বা অস্বস্তি
- মুখ শুকিয়ে যাওয়া
- ডায়রিয়া বা কোষ্ঠকাঠিন্য
- দীর্ঘমেয়াদী ব্যবহারে কিছু ক্ষেত্রে হৃদযন্ত্রের সমস্যার ঝুঁকি
সতর্কতাঃ
- গর্ভবতী বা স্তন্য দায়ী অবস্থায় এই ওষুধ গ্রহণ করার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে
- হৃদরোগ, লিভার বা কিডনির সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তিরা এটি ব্যবহার করার আগে শতর্ক থাকতে হবে
- দীর্ঘ সময়ের জন্য এই ওষুধ ব্যবহার করা ঠিক নয়
এটি ব্যবহারের আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে কারণ এটি একটি প্রেসক্রিপশনাল ওষুধ যা চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া খাওয়া যায় না।
প্রয়োজনীয় পরামর্শঃ
- মনে রাখতে হবে এটা একটি প্রাথমিক চিকিৎসা নয়, বুকের দুধ কম হলে প্রথমে প্রাকৃতিক উপায় যেমন বারবার এ জন্য পান করানো, পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ, পর্যাপ্ত পানি পান করা, শারীরিক বিশ্রাম নেওয়া এবং মানসিকভাবে সুস্থ থাকার চেষ্টা করতে হবে।
- অবশ্যই একটি নবজাতকের প্রধান খাদ্য হচ্ছে তার মায়ের বুকের দুধ। যদি এ দুটি প্রবলেম হয় তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী অমিডন নিতে হবে।
- দীর্ঘমেয়াদি কোন ওষুধ ব্যবহার করা উচিত নয়। তাই দীর্ঘমেয়াদী ব্যবহারের আগে ও পরে যেকোনো পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিলে অবশ্যই চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করতে হবে।
বুকে দুধ না আসার কারণ
বুকে দুধ না আসার কারণ বিভিন্ন রকমের হতে পারে। শিশু জন্মের পর সাধারণত বিভিন্ন কারণে মায়ের বুকের দুধ পর্যাপ্ত পরিমাণ পায় না। সাধারণত শিশু জন্মের পর ছয় মাস পর্যন্ত মায়ের বুকের দুধের খাওয়ার কথা বলে থাকে। কারণ জন্মের ছয় মাসে যে পুষ্টিগুণ মায়ের বুকের দুধ থেকে পায় অন্যান্য খাবার থেকে তা পাই না। অনেকেই বাচ্চাকে বেস্ট ফিডিং করাতে চাই না বা কিছুদিন করার পর ছেড়ে দেয় তখনই মায়ের বুকের দুধ শুকিয়ে যায়। অনেক সময় সিজারিয়ান বেবি হওয়ার জন্য বুকের দুধ শুকিয়ে যায়।
আরও পড়ুনঃ পিরিয়ডের আগে সাদা স্রাব গর্ভাবস্থার লক্ষণ
সাধারণত বুকে দুধ না আসার বা কম হওয়ার কারণ বিভিন্ন শারীরিক, মানসিক এবং পরিবেশগত কারণ হতে পারে। এটি সাধারণত বেশ কয়েকটি কানের উপর নির্ভর করে এবং এক এক মায়ের ক্ষেত্রে এক এক রকমের সমস্যা হতে পারে যা নিম্নে তুলে ধরা হলো-
- হরমোনাল সমস্যাঃ সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর মেয়েদের শরীরের বিভিন্ন ধরনের হরমোনের পরিবর্তন ঘটে। প্রলেক্টেড সাধারণত হরমোনের কম উৎপাদন করে যার ফলে দুধ উৎপাদন কম হয়। যদি কারো থাইরয়েড বা হরমোনের ভারসাম্যহীনতার সমস্যা থাকে অথবা পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম এর সমস্যা থাকে তাদের সাধারণত বুকে দুধ আসে না।
- স্তন্যপান শুরু করতে দেরি হওয়াঃ সাধারণত প্রসবের পরপরই বাচ্চাদেরকে স্তন্যপান শুরু না করলে দুধ বিলম্বে তৈরি হয়। সিজারিয়ান ডেলিভারির পর সাধারণত দুধ আস্তে দেরি হয় এজন্য জন্মের পর পরে শিশুকে বেস্ট ফিডিং করাতে হবে।
- অপর্যাপ্ত স্তন্যপান বা দুধ বের না হওয়াঃ অনেক সময় নবজাতক কে যদি সঠিক উপায়ে দুধ পান না করায় তাহলে দুধ আস্তে দেরি হয়। সঠিক নিয়মে দুধ পান করাতে হবে। নবাব নবজাতককে যদি কম সময় এবং সংখ্যাতেও কম স্তন্যপান করালে দুধের পরিমাণ কমে যায়। কারণ বলা হয় যে শিশু যতো দুধ খাবে দুধের পরিমাণ তত বাড়তে থাকবে। শিশুর মুখের সমস্যা থাকলে দুধ টানতে ঝামেলা হয় হলে দুধ সঠিকভাবে বের হয় না।
- মায়ের শারীরিক অবস্থাঃ বোঝা ত্বকের মায়ের যদি শারীরিক অবস্থা দুর্বল থাকে অর্থাৎ অতিরিক্ত রক্ত ক্ষরণ বা রক্তস্বল্পতায় অথবা প্রসবের পরবর্তী শারীরিক দুর্বলতা তাহলে দুধ আসতে সমস্যা হয়। মায়ের যদি ক্রনিক রোগ থাকে যেমন ডায়াবেটিস উচ্চ রক্তচাপা বা হৃদরোগ তাহলেও বুকের দুধ আসতে সমস্যা হয়।
- মানসিক চাপ বা উদ্বেগঃ প্রসব পরবর্তী মানসিক চাপ, মানসিক উদ্বেগ বা ঘুমের অভাব হলে সাধারণত বুকে দুধ আসতে সমস্যা হয়। এক্ষেত্রে পরিবার বা পরিবেশের চাপ যদি বেশি হয় তাহলে বুকে দুধ আসতেও সমস্যা হয়।
- খাদ্য এবং পুষ্টির অভাবঃ গর্ভকালীন থাকা অবস্থায় অথবা প্রসব পরবর্তী অবস্থায় যদি অপর্যাপ্ত পুষ্টি বা পর্যাপ্ত ক্যালরি না খাওয়া হয় তাহলে বুকে দুধ আসতে সমস্যা হয়। আবার যদি অনেক সময় পানি পর্যাপ্ত পরিমাণ না পান করে তাহলে বুকের দুধ শুকিয়ে যায়।
- ওষুধ বা চিকিৎসাঃ কিছু কিছু ওষুধ আছে যেমন জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি বা ডিকনজেস্ট্যান্ড দুধ উৎপাদন বাধাগ্রস্ত করতে পারে। সিজারের পরে অতিরিক্ত অ্যান্টিবায়োটিক বা ওষুধ খাওয়ার ফলেও বুকের দুধ শুকিয়ে যায়।
দুধ বাড়ানোর উপায়ঃ
- সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার পরপরই ছোট শিশুকে স্তন্যপান করা শুরু করতে হবে
- সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার এক ঘন্টা পরেই যে মায়ের বুক থেকে শাল দুধ বের হয় সেটি ক্ষয় হবে
- দুধ আস্তে সমস্যা হলেও বারবার এবং পর্যাপ্ত সময় ধরে শিশুকে স্তন্যপান করাতে হবে
- প্রসূতি মানে পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করতে হবে এবং পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে
- যে কোন ধরনের মানসিক চাপ পেরিয়ে রিল্যাক্স থাকার চেষ্টা করতে হবে
- ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে প্রয়োজনে ল্যাকটেশন সাপ্লিমেন্ট বা ওষুধ যেমন ডামপেরিয়ন গ্রহণ করতে পারেন
পরিশেষে বলা যায় যে বুকের দুধ কম হওয়া সাধারণ একটি সমস্যা। বিভিন্ন কারণে বুকের দুধ কম হতে পারে। যেহেতু একটি নবজাতক শিশুর প্রধান খাদক মায়ের বুকের দুধ তাই কম হলে অবশ্যই তার যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। যাতে পর্যাপ্ত পরিমাণ দুধ হয় এবং একটি সুস্থ শিশু সুস্থ ভাবে জীবন যাপন করে। তারপরও সমস্যা দেখা দিলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
কোন ফল খেলে বুকের দুধ বাড়ে
কোন ফল খেলে বুকের দুধ বাড়ে এই প্রশ্নটি সহজেই সকল নবজাতক মায়ের মনের প্রশ্ন। একজন নারী সন্তান ভূমিষ্ঠ করার পর তার মাথাতে একটি চিন্তায় থাকে সেটি হলো তার সন্তানের খাবারের সুস্থতা। মায়ের বুকের দুধ ভূমিষ্ঠ হওয়ার শিশুর জন্য প্রধান খাদ্য। অন্তত ছয় মাস বয়স পর্যন্ত মায়ের বুকের দুধ খাওয়া জরুরি।
মায়ের বুকের দুধে এতটাই পুষ্টিকর যে শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এই দুধ থেকেই পায়। এই মায়ের বুকের দুধ বাড়ানোর জন্য ফলের গুরুত্ব অপরিসীম। ফল সাধারণত প্রোল্যাকটিন হরমোন উৎপাদন বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। একজন নবজাতকের মায়ের শরীর ডিহাইড্রেট রাখতে ফল গুরুত্ব অপরিসীম। ভিটামিন, মিনারেল, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ ফল খেতে হবে।মায়ের বুকের দুধ বাড়াতে যেসব ফল গুরুত্বপূর্ণ তার নিম্নে আলোচনা করা হলো-
- পেঁপেঃ কাঁচা পেঁপে মায়ের বুকের দুধ বাড়াতে সাহায্য করে। কাঁচা পেপে সাধারণত প্রলাক্টিন হরমোনের নিঃসরণ বাড়াতে সাহায্য করে, যা মায়ের বুকের দুধ উৎপাদনে বিশেষ ভূমিকা রাখে। কাঁচা পেঁপেতে রয়েছে সাধারণত ভিটামিন এ, ভিটামিন সি এবং পটাশিয়াম। তাই পেঁপে মায়ের বুকের দুধ বাড়াতে যথেষ্ট অবদান রাখে।
- কমলাঃ কমলা বা অন্য সাইট্রাস ফল যেমন লেবু, মাল্টা প্রভৃতি এগুলো ভিটামিন সি এর একটি ভালো উৎস। এগুলো মায়ের দুধের গুণগত মান উন্নত করতে এবং দুধ উৎপাদনে সাহায্য করে। এইজন্য নবজাতক মাকে প্রতিদিনের খাবার তালিকায় একটি করে ফল রাখা জরুরী।
- আঙুরঃ আঙ্গুর ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফল। সাধারণত একজন মাকে তার শারীরিক সুস্থতার জন্য এবং দুধ উৎপাদনের জন্য ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফল খাওয়া খুবই জরুরী। কারণ ভিটামিন সি এনার্জিতেও অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
- আমঃ আমে ভিটামিন এ, ভিটামিন ই এবং ভিটামিন সি বিদ্যমান। এগুলো সাধারণত মায়ের শরীরে পুষ্টি যোগায় এবং সেই সাথে দুধ উৎপাদনের বৃদ্ধিতেও কাজে লাগে। একজন নবজাতকের মাকে অবশ্যই ফলমূল খেতে হবে।
- জাম্বুরাঃ জাম্বুরা ফল মায়ের বুকের দুধ বৃদ্ধিতে সাহায্য করে এবং মায়ের শরীরের রোগ প্রতির ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। এজন্য সপ্তাহে অন্তত দুইটা জাম্বুরা ফল খাওয়া খুবই উপকারী। প্রতিদিন খাবার তালিকায় ফলমূলের ভ্যারাইটি রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
- কলাঃ কলাতে রয়েছে উচ্চ পরিমাণে ভিটামিন বি৬ এবং কলা পটাশিয়াম সমৃদ্ধ। যার ফলে এই কলা মায়ের শরীরের পুষ্টি সরবরাহ করে এবং বুকের দুধ বাড়াতে সাহায্য করে।
- খেজুরঃ খেজুরে রয়েছে প্রাকৃতিক চিনি, ক্যালসিয়াম এবং আয়রন। এই খেজুর অত্যন্ত শক্তিশালী একটি ফল যা মানুষের শারীরিক বিভিন্ন সমস্যার সমাধান দিতে পারে। প্রতিদিন একটি করে খেজুর খেলে সদ্য নবজাতক মায়ের শারীরিক পুষ্টি রক্ষা করে এবং দুধ উৎপাদন বৃদ্ধি করে।
- বেরি জাতীয় ফলঃ বেরি জাতীয় ফল যেমন ব্লুবেরী, স্ট্রবেরি এবং র্যাম্প বেরি অক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফল। এই ফলগুলি মায়ের বুকের দুধ উৎপাদনে ব্যাপক ভূমিকা রাখে। এইজন্য বেরি জাতীয় ফল মায়ের খাবার তালিকায় রাখতে হবে।
অতিরিক্ত পরামর্শঃ
- শুধুমাত্র ফল খেলেই হবে না ফলের পাশাপাশি পর্যাপ্ত পানি পান করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কারণ বুকের দুধ উৎপাদনের জন্য শরীরকে শরীরকে হাইড্রেট রাখা প্রয়োজন।
- নবজাতকের মাকে অবশ্যই সঠিক পুষ্টিকর খাদ্য খেতে হবে যাতে প্রোটিন, চর্বি বা কার্বোহাইড্রেট তার শরীরে প্রবেশ করে।
- মায়ের বুকের দুধ বাড়ানোর জন্য ফলের পাশাপাশি বিভিন্ন সবুজ শাকসবজি, বাদাম এবং দুধের তৈরি খাবার খেতে হবে।
পরিশেষে বলা যায় যে বুকের দুধ বৃদ্ধির জন্য পুষ্টিকর খাবারের পাশাপাশি পুষ্টিকর ফলমূলক খেতে হবে। কারণ একজন নবজাতকের প্রধান খাবার হচ্ছে তার মায়ের বুকের দুধ। অবশ্যই একটি শিশু ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর ছয় মাস পর্যন্ত শুধুই তার মায়ের বুকের দুধ খাবে। তাই যথার্থ দুধ যেন হয় সে কারণে স্তন্যদানের সময় মায়ের প্রচুর পরিমাণে ফল মূল্য শাক-সবজি খেতে হবে।
বুকের দুধ বৃদ্ধির পাউডার
বুকের দুধ বৃদ্ধির পাউডার বা সাপ্লিমেন্ট বাজারে বিভিন্ন ভ্যারাইটির পাওয়া যায় যেগুলো সাধারণত মায়ের বুকের দুধ বৃদ্ধির জন্য তৈরি করা হয়েছে। এই পাউডার গুলো সাধারণত প্রাকৃতিক উপাদান এবং প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদানের মাধ্যমে তৈরি করা হয়। যেটি খেলে সাধারণত মায়ের শরীরের প্রলাক্টিন হরমোনের নিঃসরণ বাড়তে সাহায্য করে।
পাউডারের বিস্তারিত বর্ণনাঃ
সাধারণত মেথি, শাতাভারি, ফেনেলসিড, মৌরি এবং জিরা এইসব উপাদান দিয়ে তৈরি গ্যালাক্টাগন যা দুধ উৎপাদনের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। এই পাউডারে উচ্চমানের প্রোটিন, ভিটামিন বি, ভিটামিন সি এবং ভিটামিন ই জামাইয়ের শরীরে পুষ্টি সরবরাহ করে এবং বুকের দুধের মান বৃদ্ধি করে।
পাউডারের সাধারণত আয়রন, ক্যালসিয়াম এবং জিংক সমৃদ্ধ পুষ্টি উপাদান থাকে যা মায়ের শরীরের শক্তি বৃদ্ধি করে এবং শিশু ও মায়ের স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এ পাউডার এ আবার ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড থাকে যা মায়ের দুধের পুষ্টিগুণ বাড়ায় এবং শিশুর মস্তিষ্কে বিকাশ ঘটাতে সাহায্য করে।
এই পাউডার খাওয়ার ফলে প্রাকৃতিক উপাদান প্রলাক্টিন এবং অক্সিটোসিন হরমোনের নিঃসরণ বাড়ায় এবং বুকের দুধ বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। পাউড মায়ের দৈনন্দিন পুষ্টির চাহিদা পূরণ করে এবং তাকে শারীরিকভাবে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। বুকের দুধ বৃদ্ধির জন্য এই পাউডার খাওয়ায় মায়ের বুকের দুধ পুষ্টিকর হলে, শিশুর সঠিক বৃদ্ধি রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
এ পাউডার খাওয়ার কিছু নিয়ম রয়েছে যেমন সাধারণত এ পাউডার দুধ বা পানির সঙ্গে মিশিয়ে দিনে ১-২ বার খাওয়া যেতে পারে। কোন কোন সময় আবার এই পাউডার গরম পানিতে চা বা সুপের মতো করেও খাওয়া যেতে পারে। মায়ের সঠিক পুতির জন্য এর সঠিক ডোজ এবং ব্যবহারের নিয়ম চিকিৎসকের বা প্যাকেটের নির্দেশকে অনুযায়ী অনুসরণ করে খেতে হবে।
বাজারে পাওয়া বুকের দুধ বৃদ্ধি পাউডার যেমন ল্যাকটন গ্রানুলস, মাদার হরলিক্স, প্রলেক্ট পাউডার। এগুলো সাধারণত প্রাকৃতিক উপাদানে তৈরি মায়ের বুকের দুধ বৃদ্ধিতে এবং মায়ের পুষ্টি যোগাতে সাহায্য করে। প্রোল্যাক্ট পাউডার বিশেষভাবে মায়ের বুকের দুধ উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে।
তবে এই দুধ ব্যবহারের জন্য কিছু সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। বুকের দুধ বৃদ্ধির জন্য পাউডার ব্যবহার করতে চাইলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। দীর্ঘমেয়াদী এ পাউডার ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকতে হবে কারণ প্রাকৃতিক উপায়ে বা বারবার স্তন্যপান করিয়ে এবং পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করে বুকের দুধ উৎপাদন বৃদ্ধি করা খুবই প্রয়োজন। কোনরকম পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
পরিশেষে বলা যায় যে, বুকের দুধ বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন ধরনের পাউডার রয়েছে। সে পাউডার গুলো মায়ের শারীরিক পুষ্টির জন্য এবং দুধ বৃদ্ধির উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। অবশ্যই আমাদেরকে মনে রাখতে হবে যে প্রাকৃতিক উপায়ে যদি দুধ বৃদ্ধি হয় তাহলে পাউডার তাকে পাশে রাখাই ভালো।
মন্তব্যঃ বুকের দুধ বৃদ্ধির ঘরোয়া উপায়
বুকের দুধ বৃদ্ধির ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা দেওয়ার চেষ্টা করলাম। উপরের বর্ণিত সকল তথ্য আশা রাখি আপনাদের ব্যবহারিক জীবনে অবশ্যই কাজে আসবে। আজকের আমার এই আলোচনায় সঙ্গে থাকার জন্য আপনাদেরকে আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ। আপনার মূল্যবান সময় এবং আগ্রহ আমাদের প্রতিটি কথায় নতুন প্রাণযোগায়। আশা করি আজকের এই বিষয়টির প্রয়োজনীয় তথ্য ও সঠিক দিকনির্দেশনা দিতে পেরেছি।
মনে রাখবেন প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর খুদ পাওয়ার জন্য জিজ্ঞাসা হচ্ছে প্রথম ধাপ। একজন সুস্থ মায়ের সুস্থ সন্তান প্রতিটি সমাজকে করে তোলে সুস্থ। তাই মায়ের বুকের দুধ যেন একটি নবজাতক শিশু সুস্থভাবে খেতে পারে তার নিশ্চয়তা তৈরি করতে হবে। কারণ একজন নবজাতক শিশুর সর্বোত্তম খাদ্য হলো তার মায়ের বুকের দুধ। যেটা থেকে সে শারীরিক সম্পূর্ণ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করবে। যেকোনো প্রশ্নবাজ গ্যাস আই দ্বিধা করবেন না। নিজের এবং পরিবারের সুস্থতা নিশ্চিত করুন এবং ভালো থাকবেন। আবারো দেখা হবে অন্য কোন ব্লগে বা অন্য কোন পোস্টে।
প্রশ্ন ২৪ ব্লক এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url