ফ্যাটি লিভার থেকে মুক্তির উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন
ফ্যাটি লিভার থেকে মুক্তির উপায় সম্পর্কে জানতে চাইছেন? তাহলে আপনি সঠিক জায়গায় এসেছেন কারণ এখানে কার্যকরী পরামর্শ পাবেন, যা আপনাকে সুস্থ ও সতেজ রাখতে সাহায্য করবে। বর্তমান সময়ে ফ্যাটি লিভার যেন একটি সাধারণ অসুখে পরিণত হয়েছে। ফ্যাটি লিভার একটি মরণঘাতী ব্যাধির প্রাথমিক পর্যায়।
নিয়ম ছাড়া কোন জীবনের পথ সঠিক হতে পারে না। তাই প্রতিটি মানুষের জীবনে সঠিক খাদ্যাভাস, নিয়মিত ব্যায়াম এবং জীবনধারার পরিবর্তন আনতে হবে। লিভার মানুষের শরীরে দ্বিতীয় বৃহত্তম অঙ্গ। আপনার লিভারের সঠিক যত্ন নিতে, প্রয়োজনীয় তথ্য জানতে আমাদের এই ব্লগ পোস্টটি আপনাদের জন্য।
পোস্ট সূচিপত্রঃ ফ্যাটি লিভার থেকে মুক্তির উপায়
- ফ্যাটি লিভার থেকে মুক্তির উপায়
- ফ্যাটি লিভার হলে কি সমস্যা হয়
- ফ্যাটি লিভার গ্রেড-1 এর চিকিৎসা
- ফ্যাটি লিভার গ্রেড-2 এর চিকিৎসা
- ফ্যাটি লিভার কি ভাল হয়
- ফ্যাটি লিভার হলে ডিম খাওয়া যাবে
- ফ্যাটি লিভার হলে কি খাওয়া উচিত
- ফ্যাটি লিভার দূর করার ঘরোয়া উপায়
- ফ্যাটি লিভার হলে কি গরুর মাংস খাওয়া যাবে
- মন্তব্যঃ ফ্যাটি লিভার থেকে মুক্তির উপায়
ফ্যাটি লিভার থেকে মুক্তির উপায়
ফ্যাটি লিভার থেকে মুক্তির উপায় সম্পর্কে জানতে আজকের এই পোষ্টের সাথেই থাকুন। লিভার একটি মানুষের শরীরে দ্বিতীয় বৃহত্তম অঙ্গ। লিভার সুস্থ না থাকলে শরীরের কোন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সুস্থ থাকতে পারে না। ফ্যাটি লিভার যাকে সাধারণত ”হেপাটিক স্টেটোসিসও” বলা হয়। বর্তমান বিশ্বে নন অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভারে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফ্যাটি লিভার সাধারণত দুই ধরনের হয়। একটি হল অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার যা অ্যালকোহল সেবনে হয়। আরেকটি হলো নন অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার যা সাধারণত অনিয়মিত খাদ্যা অভ্যাস ও চলাফেরায় হয়।
ফ্যাটি লিভার থেকে মুক্তির উপায় সম্পর্কে জানার আগে আমাদের জানতে হবে ফ্যাটি লিভার আসলে কি। ফ্যাটি লিভার হল একটি লিভারের অসুখ যা সাধারণত অ্যালকোহল বা বিভিন্ন কারণে লিভারে চর্বি জমা কে ফ্যাটি লিভার বলা হয়। প্রতিটি মানুষের লিভারে হালকা পরিমাণ চর্বি থাকে, তবে এ পরিমান বেশি হলেই তখন তাকে ফ্যাটি লিভার বলে। ফ্যাটি লিভার থেকে আবার লিভার সিরোসিস এর মত মরণঘাতি অসুখও হতে পারে। তাই আমাদেরকে সচেতন থাকার জন্য নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করতে হবে।
খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনঃ সাধারণত নন অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার বর্তমান সময়ে খুব দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। শুধুমাত্র অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস, অনিয়ন্ত্রিত জীবন ব্যবস্থা এবং অসংলগ্ন চলাফেরা করার কারণে। আমাদেরকে সাধারণত পুষ্টিকর এবং লো-ক্যালোরি খাবার বেছে নিতে হবে। কারণ সুস্থ জীবন যাপন করতে হলে আমাদেরকে অবশ্যই খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনতে হবে। আমাদেরকে সাধারণত উচ্চ ফাইবার যুক্ত খাবার যেমন পালং শাক, ব্রকলি, আপেল ও বেরি জাতীয় সবজি ও ফলমূল খেতে হবে কারণ এগুলো ফ্যাটি লিভারের ঝুঁকি কমায়।
প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবারও খেতে হবে এমন মুরগির মাংস, ডাল, এবং মসুর জাতীয় খাবার লিভারের জন্য খুবই উপকারী। আমাদেরকে অবশ্যই রিফাইন কার্বোহাইড্রেট এড়িয়ে চলতে হবে যেমন সাদা চাল, ময়দা এবং চিনি যুগ থেকে দূরে থাকতে হবে। আমাদেরকে অবশ্যই বাইরের ফাস্টফুড খাবার ও ভাজাপোড়া খাবার থেকে দূরে থাকতে হবে।
সঠিক ওজন বজায় রাখাঃ অতিরিক্ত ওজন কোন কিছুর জন্যই ভালো না। সাধারণত আমাদের শরীরের অতিরিক্ত ওজন আমাদেরকে বিভিন্ন ধরনের অসুখে নিপতিত করে। এই অতিরিক্ত ওজন আমাদের লিভারে চর্বি জতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই আমাদেরকে অতিরিক্ত ওজন কমাতে হবে এবং লিভারকে চর্বি মুক্ত রাখতে হবে। সাধারণত গবেষণায় দেখা গেছে যে শরীরের মোট ওজনের ৭-১০% কমালে লিভারের কার্যক্ষমতা উন্নত হয়। তাই আমাদেরকে অবশ্যই আমাদের ওজন নিয়ন্ত্রণ রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কর্তব্য।
অ্যালকোহল থেকে বিরত থাকাঃ সাধারণত অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার এই অ্যালকোহল পান করার কারণেই হয়। অ্যালকোহল সাধারণত লিভারের কোষগুলোকে নষ্ট করে এবং ফ্যাটি লিভার কে আরো বেশি জটিলতায় ফেলে দেয়। এই অ্যালকোহল লিভার সিরোসিস এর জন্য বিশেষভাবে দায়ী থাকে। তাই অবশ্যই আমাদেরকে অ্যালকোহল থেকে দূরে থাকতে হবে। যারা ফ্যাটি লিভার সমস্যায় আক্রান্ত তারা তো অবশ্যই দূরে থাকবেন।
শারীরিক ব্যায়ামঃ ফ্যাটি লিভার থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে শারীরিক ব্যায়াম বা শারীরিক সক্রিয়তা বজায় রাখা। লিভার থেকে চর্বি কমাতে হলে সংযত খাবারের পাশাপাশি শারীরিক ব্যায়াম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং অপরিহার্য। কারণ শারীরিক ব্যায়াম লিভারের চর্বি কমানোর সাথে সাথে শরীরের ইনসুলিন কমাতেও সাহায্য রাখে। প্রতিদিন অবশ্যই ৩০ মিনিট হাঁটতে হবে তার সাথে দৌড়ানো, সাইক্লিন বা যোগব্যায়াম অপরিহার্য। কার্ডিও ও ওজন তোলার ব্যায়াম লিভারের কার্যক্ষমতা বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
স্ট্রেস নিয়ন্ত্রণঃ স্ট্রেস সাধারণত যেকোনো অসুখ তৈরি করার হাতিয়ার। অতিরিক্ত মানসিক চাপ আমাদের শরীরের হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করে। এই ভারসাম্য নষ্ট হওয়ার তালে লিভারের উপর চাপ সৃষ্টি করে। লিভার বৃহত্তম অঙ্গ হওয়ার কারণে তার ওপরের প্রভাব সহজে বোঝা যায় না কিন্তু নীরবে আঘাত হানে। দীর্ঘদিন মানসিক স্ট্রেস থাকলে লিভারের ব্যাপক পরিমাণ ক্ষতি হয়। এই কারণে ধ্যান, মেডিটেশন ও পর্যাপ্ত ঘুম মানসিক স্ট্রেস কমাতে সাহায্য করে যা লিভারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
প্রাকৃতিক উপাদানের ব্যবহারঃ সাধারণত ফ্যাটি লিভার থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য কিছু প্রাকৃতিক উপাদান যেমন গ্রিন টি, হলুদ, চিয়া সিড, অ্যাপেল সিডার ভিনেগার, মেথি পানি, দারুচিনি পানি বিভিন্ন ধরনের পানীয় লিভারের কার্যক্ষমতা উন্নত করতে সাহায্য করে। তবে এগুলো নিয়মিত পর্যাপ্ত পরিমাণে ব্যবহার করতে হবে এবং অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী। কারণ দীর্ঘদিন লিভারে ফ্যাট থাকলে লিভার সিরোসিসের মত জটিল রোগের সৃষ্টি হয়।
চিকিৎসকের পরামর্শঃ আপনার লিভারে ফ্যাট জমা হলে আপনাকে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। কারণ লিভারের নিয়ন্ত্রণ যদি বাইরে চলে যায় তবে আপনার শরীরকে নিঃশেষ করে দিতে বড় ভূমিকা পালন করে। তাই এটা কিছু প্রয়োজনীয় ওষুধ, পরীক্ষা-নিরীক্ষা মাধ্যমে উপযুক্ত চিকিৎসার সাহায্যে কমানো যায়। তাই অবশ্যই আপনাকে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
পরিশেষে বলা যায় যে ফ্যাটি লিভার অত্যন্ত ভয়ংকর অসুখের প্রাথমিক পর্যায়ে। আমাদের লিভারে ফ্যাট জলে তা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য ধৈর্য ও সচেতনতা জরুরী। তাই ভয় না পেয়ে নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা, সঠিক খাদ্যাভ্যাস, ওজন নিয়ন্ত্রণ এবং স্বাস্থ্যকর জীবন যাপনের মাধ্যমে খুব সহজেই ফ্যাটি লিভার থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
ফ্যাটি লিভার হলে কি সমস্যা হয়
ফ্যাটি লিভার হলে কি সমস্যা হয় এই তথ্যটি জানা আমাদের অপরিহার্য দায়িত্ব। কারণ লিভার আমাদের শরীরের দ্বিতীয় বৃহত্তম অঙ্গ। লিভারে কোন ধরনের সমস্যা হলে আমাদের জীবনযাত্রার মান ব্যাহত হয় এবং জীবন শেষের দিকে চলে যায়। আমাদের শরীরে সাধারণত ৫% চর্বি সহনীয় পর্যায়ে থাকে। কিন্তু লিভারে যদি ৫% এর চাইতে চর্বি বেশি হয় তবে তাকে আমরা ফ্যাটি লিভার বলে থাকি।
ফ্যাট লিভার এমন একটি অবস্থা যেখানে লিভারের কোষে অতিরিক্ত চর্বি জমা হতে থাকে এবং এটি শুরুতে তেমন জটিল মনে না হলেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এটি শারীরিক সমস্যা তৈরি করে। তাহলে চলুন ফ্যাটি লিভারের ফলে সৃষ্ট জটিলতা বা সমস্যাগুলোর বিস্তারিত আলোচনা করি-
- লিভারের কার্যক্ষমতা হ্রাসঃ সাধারণত লিভার আমাদের শরীর থেকে ডিটক্সিফিকেশন এর মাধ্যমে বিষমুক্ত করার প্রধান অঙ্গ হিসাবে কাজ করে। যদি লিভারে চর্বি জমতে থাকে তবে এর কার্যক্ষমতা ধীরে ধীরে কমে যায় এবং বিষাক্ত পদার্থ জমতে শুরু করে। লিভারে বিষাক্ত পদার্থ জমা হওয়ার কারণে শরীরের অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হতে থাকে। এর ফলে সময়ের ব্যবধানে লিভারের কার্যক্ষমতা হ্রাস পায়।
- অ্যাকিউট ইনফ্লামেশনঃ লিভারে ফ্যাট জমলে আমাদের শরীরে বিভিন্ন ধরনের প্রদাহ সৃষ্টি করে তখন এটিকে নন অ্যালকোহলিক স্টেটোহিপাটিস বলা হয়, যা লিভারের গুরুতর একটি রূপ। ইনফ্লামেশন লিভারের কোষগুলো ক্ষতিগ্রস্ত করে যা দাগ তৈরি করে। যার ফলে লিভার এর কার্যকারিতা দিন দিন কমতে থাকে।
- লিভার সিরোসিসের ঝুঁকিঃ লিভার সিরোসিস লিভারের এমন একটি অসুখ, যা মানুষকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়। লিভার সিরোসিস হবার অন্যতম প্রধান কারণ হলো লিভারে ফ্যাট জমা। সাধারণত লিভারে দীর্ঘদিন ফ্যাট জমার ফলে এবং চিকিৎসা না করানোর ফলে তা সিরোসিসে পরিণত হয়। লিভারের কোষ গুলোকে স্থায়ীভাবে নষ্ট করে দেয় এবং এর স্বাভাবিক কার্যক্ষমতাও নষ্ট করে দেয়। এটি মারাত্মক আকার ধারণ করে এবং মৃত্যুর দিকে ধাবিত করে যা লিভার ফেইলিওর হতে বাধ্য করে।
- লিভার ক্যান্সারের সম্ভাবনাঃ সাধারণত ফ্যাটি লিভার থেকে সিরোসিস এবং সিরোসিস দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহের ফলে লিভার ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়। এই ফ্যাটি লিভারের চিকিৎসা না করালে এটি একটি প্রাণঘাতী হতে পারে। তাই ফ্যাটি লিভার ক্যান্সারের ঝুকি বাড়াতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
- ডায়াবেটিস সম্ভাবনাঃ ফ্যাটি লিভার সাধারণত ডায়াবেটিস এর ঝুঁকি বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। গবেষণায় দেখা গেছে টাইপ-২ ডায়াবেটিস হাওয়া অনেকাংশে ফ্যাটি লিভার দায়ী। কারণ ফ্যাটি লিভার সাধারণত ইনসুলিন রেজিস্টেন্স এর সঙ্গে বিশেষভাবে সম্পর্কযুক্ত। আর ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে চর্বি জমার জন্য যথেষ্ট। তাই ফ্যাটি লিভারে আক্রান্ত হলে ডায়াবেটিস হবার সমূহ সম্ভাবনা থাকে।
আরও পড়ুনঃ বাচ্চাদের দাঁত ওঠার সময় করণীয়
- কার্ডিও ভাস্কুলার ডিজিজের ঝুঁকিঃ লিভারে অতিরিক্ত চর্বি সরাসরি হৃদরোগ এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে যে, যাদের লিভারে চর্বি জমা থাকে সেই সব ব্যক্তিদের রক্তে খারাপ কোলেস্টোরেলের মাত্রা বেশি থাকে, যা তার আর্টারিতে ব্লক তৈরি করতে পারে। এই থেকে বোঝা যায় যে, ফ্যাটি লিভার সাধারণত হৃদরোগ বা স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়াতে সাহায্য করে।
- হজমজনিত সমস্যাঃ লিভারে ফ্যাট জমে যাওয়ার কারণে সাধারণত লিভারের কার্যকারিতা কমে যায়। আর কার্যকারিতা কমে গেলে পিত্তরসের উৎপাদন হ্রাস পায়। এই পিত্তরাস কমে যাওয়ার ফলে আবার হজম হতে বাধা দেয়, বিশেষ করে চর্বিযুক্ত খাবার। যার ফলে আমাদের বদহজম, পেট ফাঁপা এবং এসিডিটির মতো সমস্যায় পড়তে হয়।
- শক্তি এবং কার্যক্ষমতা হ্রাসঃ যেহেতু লিভার শরীরের দ্বিতীয় বৃহত্তম অঙ্গ অতএব ফ্যাট যুক্ত লিভার তার পুরোপুরি কার্যক্রম সম্পন্ন করতে পারে না, ফলে শরীরের শক্তি উৎপাদন কমে যায়। শক্তি উৎপাদন কম হওয়ার ফলে এটি ক্লান্তি, দুর্বলতা এবং একটানা কাজ করার সক্ষমতাকেও হ্রাস করে। তাই ফ্যাটি লিভারের ফলে শরীরের শক্তি ও কার্যক্ষমতা হ্রাস পেয়ে যায়।
- মস্তিষ্কের কার্যক্রমঃ সাধারণত লিভার আমাদের শরীর থেকে অ্যামোনিয়া এবং অন্যান্য বিষাক্ত টক্সিন বের করে দেয়। লিভারে ফ্যাট জমার কারণে এই প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়, যার ফলে টক্সিন মস্তিষ্কে গিয়ে জমা হয়। টক্সিন মস্তিষ্কে জমা হলে Hepatic Encephalopathy নামক সমস্যা সৃষ্টি করে। এতে আমাদের স্মৃতিভ্রংশ, বিভ্রান্তি, এমনকি কোমায় পর্যন্ত চলে যায়।
- ওজন বাড়া এবং হরমোনাল ইমব্যালেন্সঃ লিভারে চর্বি জমলে আমাদের শরীরের মেটাবলিজমে স্বাভাবিক প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়। যার ফলে আমাদের ওজন দ্রুতার সাথে বৃদ্ধি পায়। ওজন অতিরিক্ত বৃদ্ধির ফলে থাইরয়েড হরমোন বা অন্যান্য হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করে। তাই ফ্যাটি লিভার হলে ওজন বেড়ে যায় এবং হরমোনাল ইমব্যালান্স দেখা দেয়।
পরিশেষে বলা যায় যে ফ্যাটি লিভার ভীষণ একটি গুরুত্বপূর্ণ মারাত্মক সমস্যা। ফ্যাটি লিভার সাধারণত শুরুতে তেমন কোন ধরনের লক্ষণ প্রকাশ করে না, তাই অনেকেই না বুঝে এটিকে অবহেলা করে। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে এটি ভয়ানক এবং ভয়ংকর পরিস্থিতিতে উপস্থাপন করেন। এটি আমাদের শরীরে সময়ের সাথে সাথে নানা রকম শারীরিক ভয়াবহ জটিলতা তৈরি করে। সঠিক সময়ে চিকিৎসা, স্বাস্থ্যকর জীবনধারা এবং নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা না করলে এই সমস্যাগুলো থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে না। তাই ফ্যাটি লিভার হলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
ফ্যাটি লিভার গ্রেড-1 এর চিকিৎসা
ফ্যাটি লিভার গ্রেড-1 এর চিকিৎসা সম্পর্কে আমাদেরকে অবশ্যই জানতে হবে। কারণ লিভারে ফ্যাট জমা যদি গ্রেড-1 এ চলে যায় তবে সময় মত এর চিকিৎসা না করালে আমরা লিভার সিরোসিস বা লিভার ক্যান্সারের মতো জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। তাই লিভারে ফ্যাট জমলে অবশ্যই সেটিকে আমাদের দমন করার চেষ্টা করতে হবে। ফ্যাটি লিভার গ্রেড-1 এ চলে গেলে এর কিছু যুক্তিযুক্ত পদক্ষেপ বা চিকিৎসা রয়েছে।
আমাদেরকে জানতে হবে গ্রেড-1 ফ্যাটি লিভার ডিজিজটা কি? গ্রেড-1 ফ্যাটি লিভার হল একটি লিভারে ফ্যাট জামার প্রাথমিক পর্যায়ে, যেখানে সাধারনত লিভারের কোষে চর্বি জমতে শুরু করে। এই অবস্থা সাধারণত লক্ষণহীন হয় এবং তেমন কোন গুরুতর ক্ষতি করে না। তবে সঠিক সময়ে সচেতনতার মধ্য দিয়ে চিকিৎসা না করালে এটি গ্রেড-২ পৌঁছে জটিলতা ধারণ করতে পারে।
ফ্যাটি লিভার এমন একটি সমস্যা যা সাধারণত কোন লক্ষণ প্রকাশ না করার ফলে সহজে বোঝা যায় না। এটি আবার শুধুমাত্র রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমেও বোঝা যায় না। অনেক সময় আল্ট্রা সাউন্ডের ফলে বোঝা যায়, যে লিভারে চর্বি জমেছে। আল্ট্রা সাউন্ড সহ বিভিন্ন ধরনের রক্ত পরীক্ষা বা এনজাইম পরীক্ষার মাধ্যমে বোঝা যায় যে লিভারে ফ্যাট জমা হয়েছে। গ্রেড-1 ফ্যাটি লিভারকে সাধারণত গুরুতর অবস্থায় না ফেললেও এটিকে হালকাভাবে নেয়া যায় না। এটির যদি সঠিক চিকিৎসা না হয় তবে লিভারে প্রদাহ থেকে সিরোসিস বা ক্যান্সার রাখার ধারণ করে।
লিভারে ফ্যাট জমা সাধারণত খুব কম সময়ের মধ্যে হয় না। এটি ধীরে ধীরে জমে থাকে। এ সময় সহনীয় মাত্রার উর্ধ্বে উঠে গেলে তখন ফ্যাটি লিভারের আকার ধারণ করে। গ্রেড-1 ফ্যাটি লিভারের কয়েকটি সাধারণ কারণ রয়েছে যেমন-
- আমাদের শরীরে অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতার ফলে শরীরে অতিরিক্ত চর্বি জমা হয়, যা লিভারেও জমতে শুরু করে
- আমাদের অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস যেমন চর্বি, চিনি এবং বিভিন্ন প্রক্রিয়াজাত খাবার বেশি খাওয়ার ফলে লিভারে চর্বি জমা হতে পারে
- আমরা বেশিরভাগ সময় অলস জীবনযাপন করি। শারীরিক পরিশ্রম বা ব্যায়ামের অভাবে সাধারণত মেটাবলিজম জমে গিয়ে লিভারে চর্বি জমে
- অ্যালকোহল লিভারের জন্য খুবই ক্ষতিকর। অল্প পরিমাণ অ্যালকোহল লিভারে চর্বি জমাতে সাহায্য করে যা ঝুঁকিতে পড়তে হয়।
- আমাদের শরীরে অতিরিক্ত চর্বি টাইপ-২ ডায়াবেটিস এবং ইন্সুলিন রেজিস্টেন্স এর জন্য দায়ী।
- শরীরের উচ্চমাত্রার চর্বির কারণে ট্রাইগ্লিসারাইড ও খারাপ কোলেস্টেরলের ফলে ফ্যাটি লিভারের ঝুঁকি বাড়ায়।
- যদি দীর্ঘদিন মাদক বা বিভিন্ন ধরনের ওষুধ ব্যবহার করে তবে লিভারের চর্বি জমতে সাহায্য করে।
- কিছু জেনেটিক কারণে অর্থাৎ পরিবারের ইতিহাসে যদি কেউ ফ্যাটি লিভারে আক্রান্ত থাকে তাহলে সেই ক্ষেত্রে ফ্যাটি লিভারের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
- গ্রেড-1 ফ্যাটি লিভার চিকিৎসাঃ ফ্যাটি লিভারে আক্রান্ত হওয়া অনেক সময় বোঝায় যায় না। সাধারণত এটি একটি নীরব ঘাতক। শরীরের কিছু পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায় যেমন পেটের উপরের ডান দিকে ব্যথা, ঘন ঘন আমাশা হওয়া, শরীরের এলার্জি বের হওয়া, মানসিক উৎফুল্লতা থেকে দূরে থাকা, অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি পাওয়া। এই ধরনের সমস্যাগুলো দেখা দিলে অবশ্যই দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে এবং চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে।
- জীবন যাত্রার মান পরিবর্তনঃ একটি সুস্থ শরীর, একটি সুস্থ মন একটি সুস্থ সমাজ উপহার দেয়। বর্তমান সময়ের প্রায় ৫০% লোক এই এটি লিভার, লিভার সিরোসিস বা লিভার ক্যান্সার মতো রোগে আক্রান্ত। আমাদের প্রত্যেকের জীবন যাত্রার মান পরিবর্তন করতে হবে। ফ্যাটি লিভারের সাধারণত ঔষধ নেই এটিকে জীবন যাত্রার মান পরিবর্তনের মাধ্যমেই নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
- সুষম খাদ্য গ্রহণঃ স্বাস্থ্যসম্মত ফল, শাকসবজি, চর্বিহীন প্রোটিন, গোটা শস্য সমৃদ্ধ খাবারের একটি তালিকা তৈরি করতে হবে। যা প্রতিদিন এর খাদ্য তালিকায় রেখে জীবন যাপন করতে হবে। উচ্চ কার্বোহাইড্রেট যুক্ত খাবার, চর্বিযুক্ত খাবার, অ্যালকোহলিক সেবন্দিকে বিরত থাকতে হবে।
- ওজন কমানোঃ শারীরিক ওজন বৃদ্ধি পাওয়া মানে শরীরে চর্বি জমেছে একথাটি আমাদের মনে প্রানে রাখতে হবে। এর জন্য অবশ্যই আমাদেরকে ওজন কমাতে হবে। আমাদের শরীরের ৭-১০% ওজন কমালেই লিভারে চর্বির পরিমাণ কমে যায়। তাই আমাদের প্রধান কাজই হল শারীরিক ওজন কমানো।
- ব্যায়ামঃ ফ্যাটি লিভারের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসা হচ্ছে শারীরিক ব্যায়াম। আমাদের জীবনযাত্রার তালিকায় অবশ্যই শারীরিক ব্যায়াম প্রথম স্তরে রাখতে হবে। আমাদের প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটতে হবে, তার সাথে সাইক্লিং, দৌড়ানো যোগব্যায়াম প্রকৃতি করতে হবে।
- ডাক্তারের পরামর্শঃ ফ্যাটি লিভারের চিকিৎসার জন্য শুধুমাত্র খাবার, জীবনধারার মান ব্যায়ামের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখলে হবে না। তার সাথে অবশ্যই আপনাকে ডাক্তারের পরামর্শ দেয়া হবে। ডাক্তারের পরামর্শ সহ জীবন যাপনের মান উন্নয়ন করলে আমরা দ্রুততার সাথে ফ্যাটি লিভার থেকে মুক্ত হতে পারব।
পরিশেষে বলা যায় যে, ফ্যাটি লিভার একটি মারাত্মক ও ভয়াবহ অবস্থা। যেটাতে লিভারের কার্যক্ষমতা নষ্ট করে দেয়। আমাদের সব সময় মনিটরিং এর মধ্যে রাখতে হবে। আমাদের জীবন যাত্রার মান উন্নত করতে হবে, অতিরিক্ত ওজন কমাতে হবে, ব্যায়াম করতে হবে এবং সেই সাথে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চলতে হবে। যাতে আমরা এই মরণব্যাধি লিভার সিরোসিস বা লিভার ক্যান্সারের মত রোগ থেকে বাঁচতে বাঁচতে পারি।
ফ্যাটি লিভার গ্রেড-2 এর চিকিৎসা
ফ্যাটি লিভার গ্রেড-2 এর চিকিৎসা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ লিভারে ফ্যাট জমে যাওয়ার কারণে সাধারণত লিভার সিরোসিস বা লিভার ক্যান্সারের মতো মারাত্মক ব্যাধি সৃষ্টি হয়। ফ্যাটি লিভার গ্রেড-১ থাকলে তখন পর্যাপ্ত পরিমাণ চিকিৎসা ব্যবস্থা না নিলে সাধারণত গ্রেড-২ তে চলে যায়। গ্রেড-২ হল লিভারের মধ্যম পর্যায়ে যেটা থেকে লিভার সিরোসিস বা লিভার ক্যান্সার হয়।
ফ্যাটি লিভার গ্রেড-২ হলে সাধারণত লিভারে ব্যথা হয় এবং ”হেপাটিক স্টেটোসিস “ দিকে ধাবিত হয়। লিভার ফাইব্রোসিস সাধারণত ফ্যাটি লিভার গ্রেড-২ এর কারণে হয়। গ্রেড-২ তে আসলে সাধারনত জীবন যাত্রার সঠিক মান, সুষম খাদ্যাভ্যাস, যথাযোগ্য শারীরিক ব্যায়াম এবং ডাক্তারের পরামর্শের মাধ্যমেই নিরাময় হয়।
- ফ্যাটি লিভার গ্রেড-২ এর চিকিৎসাঃ গ্রেড-২ ফ্যাটি লিভার হল এমন একটি লিভারের পর্যায়, যেখানে লিভারের চর্বি জমে যাওয়ার পরিমাণ বেশি হয়ে যায়, যার ফলে লিভারের কার্যক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়। যদিও এই পর্যায়ে লিভারের কার্যক্ষমতা পুরোপুরি নষ্ট হয় না। সাথে প্রতিরোধ করা সম্ভব তবে সঠিক চিকিৎসা এবং জীবনধারার পরিবর্তন অত্যন্ত অপরিহার্য। এই পরিবর্তন নিচে বর্ণনা করা হলো-
- খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনঃ ফ্যাটি লিভারে সাধারণত প্রথম গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনা। সুষম ও স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস ফ্যাটি লিভার নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। লোক্যালরি এবং লো ফ্যাট ডায়েট খাবার সাধারণত চর্বি এবং ক্যালরির পরিমাণ কমে লিভারে জমা চর্বি হ্রাস করতে সাহায্য করে। শাকসবজি এবং উচ্চ ফাইবারযুক্ত খাবার লিভারের প্রদাহ কমায় এবং কার্যক্ষমতা বাড়ায়। পরিশোধিত কার্বোহাইড্রেট খাবার যেমন সাদা চিনি, সাদা চাল এবং প্রভিয়াজাত খাবার লিভারের জন্য ক্ষতিকর।
- ওজন নিয়ন্ত্রণঃ গ্রেড-২ ফ্যাটি লিভার থেকে মুক্ত হওয়ার প্রথম শর্তই হচ্ছে ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। অধিক তো ওজন বা স্থূলতা ফ্যাটি লিভারের মূল কারণগুলোর একটি অন্যতম। ধীরে ধীরে ওজন কমানোর মাধ্যমে সাধারণত লিভারের কার্যক্ষমতা বাড়ানো দেয়। গবেষণায় দেখা গেছে যে ওজনের ৭-১০% কমালে লিভারের চর্বি অনেকাংশে কমে যায়।
- নিয়মিত বিয়ামঃ শরীর থেকে চর্বি কমানোর জন্য নিয়মিত ব্যায়াম খুবই প্রয়োজন। শারীরিক পরিশ্রম সাধারণত লিভারের চর্বি কমাতে বা ইনসুলিন সংবেদনশীলতা উন্নত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। হাঁটা দৌড়ানো বা সাইক্লিং করলে লিভারের চর্বি কমে। সাথে সাথে ওজন তোলার মতো ব্যায়ামও করতে হবে এতে লিভারও শরীরের মেটাবলিজম বাড়াতে সাহায্য করে। সপ্তাহে অন্তত পাঁচ দিন ৩০ মিনিটের ব্যায়াম ফ্যাটি লিভারের জন্য অতীব গুরুত্বপূর্ণ।
- অ্যালকোহল পরিহারঃ ফ্যাটি লিভার গ্রেড-২ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য আপনাকে অবশ্যই অ্যালকোহল পরিহার করতে হবে। কারণ অ্যালকোহল লিভারের কোর্স নষ্ট করে এবং চর্বির পরিমাণ বাড়ে। এই জন্য অ্যালকোহল সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ।
- ডায়াবেটিস ও কোলেস্টোরাল নিয়ন্ত্রণঃ সাধারণত ডায়াবেটিস টাইপ-২ এবং উচ্চ কোলেস্টরা ফ্যাটি লিভারের ঝুঁকি বাড়ায়। নিয়মিত ডায়াবেটিসের জন্য রক্তের গ্লুকোজ এবং কোলেস্টেরলের মাত্রা পরীক্ষা করতে হবে এবং তার জন্য ওষুধ খেতে হবে।
আরও পড়ুনঃ মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার উপায়
- ওষুধ চিকিৎসকের পরামর্শঃ গ্রেড-২ ফ্যাটি লিভার এ অবশ্যই আপনাকে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। কারণ এই অবস্থা থেকে লিভার সিরোসিস বা লিভার ক্যান্সার হওয়া খুবই স্বাভাবিক। তাই আপনাকে প্রতি যত্নের সাথে নিজেকে পরিচালিত করতে হবে। ভিটামিন ই এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সাধারণত লিভারের কোষের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। ইনসুলিন সেনসিটাইজার ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য কার্যকর ওষুধ। লিভারের কার্যক্ষমতা পর্যবেক্ষণের জন্য প্রতিনিয়ত আলট্রাসাউন্ড, ফাইব্রোস্ক্যান বা রক্ত পরীক্ষা করা খুবই জরুরী।
- মানসিক চাপ কমানোঃ মানুষের টেনশন বা স্ট্রেস সাধারণত লিভারের কার্যক্ষমতার উপর ভূমিকা পালন করে। ক্ষতিগ্রস্ত লিভার মানসিক টেনশনে আরো বেশি চাপের মধ্যে পড়ে। সেই জন্য যোগ ব্যায়াম, ধ্যান বা রিলাক্সেশন থেরাপি নিতে হবে যাতে স্ট্রেস কমাতে সাহায্য করে।
পরিশেষে বলা যায় যে, গ্রেড-২ ফ্যাটি লিভার খুবই মারাত্মক ক্ষতিকর। লিভারের এই অবস্থায় আসলে অবশ্যই আমাদেরকে অতি যত্নের সাথে জীবনধারণ করতে হবে। কারণ এই অবস্থা শুধুমাত্র সঠিক চিকিৎসা এবং সচেতনতার মাধ্যমেই নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে এবং নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও জীবন ব্যবস্থার মাধ্যমে সুস্থ থাকতে হবে।
ফ্যাটি লিভার কি ভাল হয়
ফ্যাটি লিভার কি ভাল হয় এটি বর্তমান সময়ের একটি কমন প্রশ্ন। কারণ দেশের জনসংখ্যার প্রায় ৬০% লোকজন ফ্যাটি লিভারে আক্রান্ত। ফ্যাটি লিভার এমন একটি পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে যে প্রায় ঘরে ঘরে ফ্যাটি লিভারের মতো অসুখ উপস্থিত আছে। ফ্যাটি লিভার অবশ্যই ভালো হয় তবে অনেক সচেতনতার মধ্যে দিয়ে। সাধারণত লিভারে অতিরিক্ত চর্বি জমা হওয়া ফ্যাটি লিভার যা চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় হেপাটিক স্টেটোসিস বলে।
ফ্যাটি লিভার সাধারণত দুই ধরনের হতে পারে যেমন অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার ডিজিজ যা অতিরিক্ত মদ্যপানের কারণে হয়। আরেকটি হলো নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার যা মদ্যপানের সাথে তো সম্পর্কিত নয় তবে এটা সাধারণত মেটাবলিক কারণে হয়। যেমন অতিরিক্ত স্থূলতা, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ এবং রক্তে উচ্চ কোলেস্টেরল।
সাধারণত আমাদের জীবন যাত্রার মান পরিবর্তন করে এই ফ্যাটি লিভার নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। আমাদের শারীরিক ওজন ৫-১০% কালে সাধারনত লিভারের চর্বি অনেকখানি কমে যায়। ফ্যাটি লিভারের জন্য অবশ্য আমাদেরকে স্বাস্থ্যসম্মত স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে হবে। উচ্চ ফাইবারযুক্ত খাবার যেমন শাকসবজি, ফলমূল, বাদাম, কম চর্বিযুক্ত প্রোটিন, মাছ, মুরগি এবং অলিভ অয়েল তেল ব্যবহার করতে হবে।
ফ্যাটি লিভার থেকে মুক্তি পেতে হলে আমাদেরকে অবশ্যই প্রতিদিন ৩০ থেকে ৪০ মিনিটের ব্যায়াম বা শারীরিক পরিশ্রম করতে হবে যা লিভারের ফ্যাট কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। অবশ্যই খাদ্যাভ্যাসে নিয়ন্ত্রণ রাখতে হবে যেমন সুগার ও কার্বোহাইড্রেট যুক্ত খাবার যেমন চিনি, সাদা রুটি, পেস্ট্রি বিভিন্ন ধরনের খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। ফলিক এসিড ও ভিটামিন সমৃদ্ধ খাদ্য খেতে হবে কারণ এগুলো লিভারের কার্যক্ষমতা বাড়ায়। আমাদেরকে অবশ্যই ফাস্টফুড ও প্রক্রিয়াজাত খাবার এড়িয়ে চলতে হবে।
লিভারের সাধারণত কোন সরাসরি ও নির্দিষ্ট ওষুধ নেই তবে মেটাবলিক সমস্যা গুলোর চিকিৎসা করে ফ্যাটি লিভার কে ভালো রাখা যায়। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সাপ্লিমেন্ট নন ভিটামিন এ সমৃদ্ধ ওষুধ ব্যবহার করা যেতে পারে। যদি ফ্যাটি লিভারের কারণে লিভারে ব্যথা হয় বা সিরোসিস দেখা দেয় তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। ফ্যাটি লিভারের জন্য অ্যালকোহল ও ধূমপান খুবই ক্ষতিকর আমাদেরকে অবশ্যই এগুলো বর্জন করতে হবে।
ফ্যাটি লিভার হল লিভারে একটি পরিমান চর্বি থাকে যা সাধারণত ৫% মধ্যে। এই ৫% বেশি পরিমাণ লিভারে চর্বি জমা হলে অবশ্যই তা ফ্যাটি লিভার হয়। ফ্যাটি লিভার আমাদেরকে ধীরে ধীরে মরণব্যাধিতে পরিণত করে। তাই নিয়মিত লিভার অবস্থা পরীক্ষা করানোর জন্য আল্ট্রাসাউন্ড, লিভার ফাংশন টেস্ট করতে হবে। আর অবশ্যই আমাদেরকে মানসিক চাপ মুক্ত থাকতে হবে। কারণ মানসিক চাপ হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করে যার ফলে লিভারকে খারাপ করতে আরো সাহায্য করে।
পরিশেষে বলা যায় যে প্রাথমিক অবস্থায় ফ্যাটি লিভার ধরা পড়লে অবশ্যই তা ভালো করা সম্ভব। তবে এটি দীর্ঘদিন অবহেলা করলে সাধারণত লিভার সেরোসিস বা ক্যান্সারে পরিণত হয়। তাই ফ্যাটি লিভার ধরা পড়লেই আমাদেরকে অবশ্যই জীবনযাত্রার মান উন্নত করে, খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করে, সঠিক ব্যায়াম বা শারীরিক পরিশ্রমের মাধ্যমে ফ্যাটি লিভার থেকে মুক্তি পেতে পারি।
ফ্যাটি লিভার হলে ডিম খাওয়া যাবে
ফ্যাটি লিভার হলে ডিম খাওয়া যাবে এই নিয়ে বিভিন্ন জনের বিভিন্ন মত। তবে এটি খাওয়া যাবেম কি যাবে না সেটা নির্ভর করে লিভারের অবস্থার ওপর। তাছাড়া ডিম শুধুমাত্র প্রোটিন নয়, এতে ফ্যাটও আছে পর্যাপ্ত পরিমাণ। এছাড়া ডিমের কুসুমে আছে ভিটামিন ডি, ভিটামিন সি এবং কলিন। তাই ডিম যেহেতু প্রোটিন, ভিটামিন, মিনারেল এবং এমাইনো এসিড এর সমৃদ্ধ তাই এটি লিভারের কোষের পুনর্গঠনে সাহায্য করে।
সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে যে ডিমের কুসুমে উচ্চমাত্রার কোলেস্টরেল থাকায় লিভারের কোলেস্টেরলের মাত্রায় সরাসরি প্রভাব ফেলে না। তাই ফ্যাটি লিভারের রোগীরা পরিমিত পরিমাণে ডিম খেতে পারবে। ডিমে ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে যা লিভারের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। ডিমে থাকা উচ্চতর প্রোটিন, ভিটামিন ডি এবং কোলিন যা লিভারের কোষের মেরামত করে, লিভারের চর্বি কমাতে সাহায্য করে এবং লিভারকে উন্নত করে।
তবে ফ্যাটি লিভারে ডিম খেতে গেলে আপনাকে কিছু সতর্কতার সাথে খেতে হবে। ফ্যাটি লিভারে সাধারণত সপ্তাহে দুই তিনটির বেশি ডিমের কুসুম না খাওয়া ভালো। কারণ ডিমের কুসুমে স্যাচুরেটেড থাকে যা লিভারের জন্য সমস্যা হতে পারে। ফ্যাটি লিভারে ডিম খেতে গেলে অবশ্যই সেদ্ধ বা ডিম পোচ খেতে পারেন। ডিমের ভাজা বা মাখন দিয়ে রান্না করা খাওয়া যাবে না কারণ এতে অতিরিক্ত তেল বা চর্বি থাকে।
যেদিন ডিম খাবেন সেদিন অন্যান্য চর্বিযুক্ত খাবার খাবেন না বা কম খাবেন। তাহলে লিভারের ওপর চাপ কমতে সাহায্য করবে। যদি আপনার ফ্যাটি লিভারের পাশাপাশি ডায়াবেটিস বা উচ্চ কোলেস্টোরালের সমস্যা থাকে তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ডিম খাবেন। ডিম সম্পূর্ণভাবে বাদ দেওয়া যাবে না বরং পরিমিত পরিমাণে ডিম খেতে হবে। কুসুম খাওয়াতে সতর্ক থাকতে হবে, সাদা অংশটা খেলে অনেক উপকারে আসবে। যদি আপনার লিভারের অবস্থা গুরুতর হয় তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
পরিশেষে বলা যায় যে, ফ্যাটি লিভার থাকলে অবশ্যই ডিম খাওয়া যাবে তবে পরিমিত পরিমাণে খেতে হবে। প্রতিদিন না খেয়ে সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন খেতে পারবেন। প্রয়োজনে ডিমের কুসুম বাদ দিতে পারেন। তবে কুসুম বাদ দিতে হলে অবশ্যই আপনার লিভারের কন্ডিশন দেখেই বাদ দিতে হবে। কারণ কুসুমেও আছে অনেক গুন। তবে ফ্যাটি লিভার হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী খাদ্য তালিকায় খাবার খেলে বেশি ভালো।
ফ্যাটি লিভার হলে কি খাওয়া উচিত
ফ্যাটি লিভার হলে কি খাওয়া উচিত এই প্রশ্নটি বর্তমান জীবনযাত্রার সাথে জড়িয়ে আছে। বর্তমান সময়ের জীবনযাত্রার অনিয়মের কারণে ফ্যাটি লিভারের আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। লিভার সাধারণত আমরা যা খায় তা হজম করতে, সেইখান থেকে শক্তি সঞ্চয় করতে থেকে বজ্র পদার্থ বের করে দিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। ফ্যাটি লিভার সাধারণত দুই ধরনের হয়ে থাকে একটি অ্যালকোহলিক এবং অন্যটি নন অ্যালকোহলিক। ফ্যাটি লিভারে কি কি খাবেন তার নিচে বিস্তারিত দেয়া হলো-
- সবুজ শাকসবজি ও ফলমূলঃ সবুজ শাক সবজির মধ্যে রয়েছে পলিফেনল ও নাইট্রেট। যা সাধারণত লিভারের কার্যক্ষমতায় সাহায্য করে। পালং শাক, ব্রকলি, বাঁধাকপি সাধারণত লিভারের চর্বি কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আপেল, ব্লুবেরি, স্ট্রবেরি, কমলা, নাশপাতি এগুলো সব অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ ফলমূল যা লিভারের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। উচ্চ ফাইবারযুক্ত খাবার যেমন গাজর, বিট, মটরশুঁটি লিভারের কাজ করার ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
- ডাল ও বীজ জাতীয় খাবারঃ ডাল ও বিষ জাতীয় খাবার যেমন বাদামী চাল, ওটস, উচ্চ ফাইবার যুক্ত এবং হাজাম প্রক্রিয়া উন্নত করতে সাহায্য করে। বার্লি এবং রাই সাধারণত লিভারের চর্বি নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
আরও পড়ুনঃ দাঁতের রুট ক্যানেল করতে কত টাকা লাগে
- স্বাস্থ্যকর চর্বি ও প্রোটিনযুক্ত খাবাঃ সাধারণত ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড সমৃদ্ধ খাবার যেমন সামুদ্রিক মাছ, আখরোট, চিয়া বীজ ওমেগা-৩ সমৃদ্ধ খাবার সরবরাহ করে। এই ধরনের খাবার লিভারের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। চর্বি কম এই ধরনের মাংস যেমন মুরগির বুকের মাংস, ডাল, মসুর ডাল, ডিমের সাদা অংশ উচ্চ মানের প্রোটিন সরবরাহ করে যা লিভারের জন্য ভালো। ফার্মেন্টেড খাবার যেমন টক দই বা কেফির এই খাবারগুলো লিভারের জন্য খুবই উপকারী।
- পানীয় জাতীয় খাবারঃ পরিমাণ মতো পানীয় জাতীয় খাবার খেতে হবে এতে লিভারের ডিটক্সিফিকেশন সাহায্য করবে। এই ধরনের খাবারে এন্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে যা লিভারকে কার্যক্ষমতা উন্নত করে। যেমন পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি, গ্রিন টি, কফি ইত্যাদি।
যেসব খাবার এড়িয়ে চলতে হবেঃ
- প্রক্রিয়াজাত খাবার যেমন জাঙ্ক ফুড প্যাকেটজাত খাবার খাওয়া যাবে না।
- অতিরিক্ত চিনি জাতীয় খাবার যেমন মিষ্টি, কার্বনেটেড পানীয় এইসব খাওয়া যাবেনা
- স্যাচুরেটেড এবং ট্রান্স ফ্যাট জাতীয় খাবার যেমন ভাজাপোড়া, ফাস্টফুড খাওয়া যাবেনা
- অতিরিক্ত লবণ ও অ্যালকোহল জাতীয় খাবার খাওয়া যাবে না
পরিশেষে বলা যায় যে ফ্যাটি লিভার এমন একটি সমস্যা যা আপনাকে অবশ্যই সতর্কতার সাথে জীবনযাপন করতে হবে। আপনাকে অবশ্যই একটি খাদ্য তালিকা বানাতে হবে যেখানে থাকবে ডায়েট সমৃদ্ধ এবং পুষ্টিকর সমৃদ্ধ খাবার যা লিভারের জন্য উপকারী। পাশাপাশি অবশ্যই আপনাকে ওজন নিয়ন্ত্রণ, শারীরিক কার্যকলাপ নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে।
ফ্যাটি লিভার দূর করার ঘরোয়া উপায়
ফ্যাটি লিভার দূর করার ঘরোয়া উপায় খুব গুরুত্বপূর্ণ। লিভারে চর্বি জমলে সাধারণত ফ্যাটি লিভার হয় এবং এই ফ্যাটি লিভার থেকে লিভার সিরোসিস বা লিভার ক্যান্সারের মতো জটিল রোগের সৃষ্টি হয়। এই ফ্যাটি লিভার দূর করার জন্য কতগুলো ঘরোয়া উপায় বা পদ্ধতি রয়েছে। এই ঘরোয়া পদ্ধতি গুলো নিম্নে আলোচনা করা হলো-
- হলুদঃ হলুদে রয়েছে সাধারণত কারকিউমিন যা লিভারের প্রদাহ কমায়। রাতে ঘুমানোর আগে এই হলুদ এক গ্লাস গরম দুধের সাথে আধা চামচ হলুদ মিশিয়ে দিনে ১-২ বার পান করতে হবে। এই হলুদ এবং দুধের মিশ্রণে লিভার থেকে চর্বি কমাতে সাহায্য করবে।
- আদাঃ আদার মধ্যে সাধারণত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট লিভারের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। সকালে খালি পেটে অথবা খাবার পরে এক কাপ উষ্ণ আদা পানি পান করলে চর্বি বিপাক ক্রিয়া সংঘটিত হয় এবং খাবার হজম হয়। আধা সাধারণত পিত্তরাস উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যা খাদ্য হজমে সহায়ক। রান্নায় আদার ব্যবহার করতে হবে যাতে লিভারে উপকারে আসে।
- রসুনঃ রসুন লিভারের চর্বি কমায় এবং ফ্যাট বার্নিং প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করে। রসুনে রয়েছে সালফার যা হেপাটিক এনজাইম কাজ করে। কাঁচা রসুন খেতে পারলে অনেক ভালো। রান্নায় বেশি পরিমাণ রসুন ব্যবহার করতে হবে
- গ্রিন টিঃ লিভার থেকে চর্বি কমানোর জন্য গ্রিন টি অনেক উপকারী। গ্রিনটিতে রয়েছে ক্যাটেচিনস নামে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা ফ্যাটি লিভার কমাতে সাহায্য করে।
- মেথিঃ ফ্যাটি লিভার কমাতে মেথির ব্যবহার খুবই অনন্য। রাতে এক গ্লাস পানিতে এক চামচ মেথি ভিজিয়ে। খালি পেটে সেই মেয়েটি পানি খেয়ে নিলে লিভার থেকে চর্বি কমে যাবে।
- লেবু পানিঃ লেবুর রসে রয়েছে ভিটামিন সি যা লিভারকে ডিটক্সিফিকেশন করতে সাহায্য করে। সাধারণত সকালে খালি পেটে হালকা কুসুম গরম পানিতে লেবু মিশিয়ে খেলে লিভার থেকে চর্বি কমে যায়।
- আপেল সিডার ভিনেগারঃ আপেল সিডার ভিনেগার লিভারে চর্বি কমাতে সাহায্যরে। এক গ্লাস হালকা উষ্ণ গরম পানিতে এক চামচ আপেল সিডার ভিনেগার মিশিয়ে দিনে দুইবার ব্যবহার করতে পারেন।
- আমলকিঃ আমলকিতে রয়েছে ভিটামিন সি এবং প্রচুর পরিমাণে এক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা ফ্যাটি লিভার কে কমাতে সাহায্য করে। সকালে খালি পেটে এক দুইটি আমলকি রস করে অথবা কাঁচা খেলে লিভারের চর্মী কমে যায়।
- পর্যাপ্ত পানি পানঃ পানি সাধারণত লিভারের ডিটক্সিফিকেশন প্রক্রিয়ায় কাজ করে। তাই প্রতিদিন অন্তত আট দশ গ্লাস পানি পান করতে হবে। ডাবের পানি বা হারবাল চা পান করলেও লিভারের জন্য উপকারী।
- দারুচিনি ও মধুর পানিঃ দারুচিনি ও মধু একসাথে মিশিয়ে পান করলে লিভারে চর্বি কমাতে সাহায্য করে। এক টুকরা দারুচিনি গরম পানিতে ভিজিয়ে রেখে মধু যোগ করে সকালে খালি পেটে পান করতে হবে।
- অ্যালোভেরা জুসঃ এলোভেরা লিভারের চর্বি কমাতে বেশ উপকারী। সকালে এক গ্লাস এলোভেরা জুস ফ্যাটি লিভারের জন্য বিশেষ উপকারী।
পরিশেষে বলা যায় যে ফ্যাটি লিভার সাধারণত ঘরোয়া উপায় গুলি ব্যবহার করে দ্রুত পরিত্রাণ পাওয়া যায়। এইসব পদ্ধতি অবলম্বনে সাথে সাথে হালকা ব্যায়াম, সুষম খাবার গ্রহণ এর মাধ্যমে ফ্যাটি লিভার কমানো যায়।
ফ্যাটি লিভার হলে কি গরুর মাংস খাওয়া যাবে
ফ্যাটি লিভার হলে কি গরুর মাংস খাওয়া যাবে এই প্রশ্নটি প্রায় যারাই ফ্যাটি লিভারে আক্রান্ত তাদের মনের প্রথম প্রশ্ন। ফ্যাটি লিভার গরুর মাংস খাওয়া যাবে কি যাবে না সেটা নির্ভর করে আপনার লিভারের অবস্থার ওপর। লিভার আমাদের শরীরের বৃহত্তম অঙ্গ। সাধারণত লিভারের প্রকৃত কোন ওষুধ নেই। এটি শুধুমাত্র নিয়ন্ত্রিত জীবন ব্যবস্থার ওপর ভিত্তি করেই ভালো থাকে।
আরও পড়ুনঃ জন্ডিস রোগীর খাবার তালিকা
ফ্যাটি লিভারে সাধারণত গরুর মাংস খাওয়া যাবে কিনা তা নির্ভর করে মাংসের ধরন পরিমাণ এবং প্রস্তুত প্রণালী উপর। ফ্যাটি লিভারে অবশ্যই আপনাকে রেড মিট খাওয়াই কিছু বিষয় মেনে চলতে হবে। লাল মাংসে সাধারণত সেচুরেটেড ফ্যাট এবং কোলেস্টেরল বেশি থাকে, যা লিভারে চর্বি জমাতে সাহায্য করে। গরুর মাংসের চর্বি লিভারের জন্য বেশ ক্ষতিকর। তাই অবশ্যই আপনাকে চর্বিযুক্ত মাংস এড়িয়ে চলতে হবে।
গরুর মাংস খাওয়ার জন্য আপনাকে কমজোর বিযুক্ত অংশ বেছে নিতে হবে। যে চর্বি গুলো দেখা যায় সেগুলো ফেলে দিতে হবে। গরুর মাংস অবশ্যই রান্নার সময় পদ্ধতি পরিবর্তন করতে হবে এবং কম মসলা ব্যবহার করতে হবে। ভাজা বা ফ্রাই করা গরুর মাংস খাওয়া যাবেনা । গরুর মাংস খেতে গেলে গ্রিল, সিদ্ধ বা বেক করা পদ্ধতিতে রান্না করে খেতে হবে এবং অবশ্যই তেল মশলা কম ব্যবহার করতে হবে।
গরুর মাংস ফ্যাটি লিভারের পরিমিত পরিমাণে খেতে হবে। দিনে ৫০-১০০ গ্রাম পর্যন্ত খেতে পারেন তবে অবশ্যই প্রতিদিন না খেয়ে সপ্তাহে ১-২ দিন খেতে হবে। তবে এটি নির্ভর করবে আপনার লিভারের ওপর। গরুর মাংস কে অবশ্যই সুষম খাদ্য তালিকার পাশে রাখতে হবে। মাংস খাওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের সবুজ সবজি ও উচ্চ ফাইবার যুক্ত সমৃদ্ধকর খেতে হবে। প্রসেসড মাংস এড়িয়ে চলতে হবে।
ফ্যাটি লিভার থাকলে অবশ্যই নিজের প্রয়োজনে গরুর মাংস খাওয়ার বিকল্প বেছে নিতে হবে। প্রোটিনের জন্য মুরগির মাংস, মাছ, ডাবা ডিমের সাদা অংশ খাওয়া যেতে পারে। এসব খাবারে কম চর্বি থাকে এবং তার লিভারের জন্য তুলনামূলকভাবে ভালো।
পরিশেষে বলা যায় যে, ফ্যাটি লিভারে গরুর মাংস সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ নয় তবে না খাওয়া সর্বোত্তম। খেলেও চর্বি মুক্ত অংশ খেতে হবে এবং সঠিক রান্না পদ্ধতি মেনে চলতে হবে। সুষম খাদ্য অভ্যাস গ্রহণ লিভারের উপর মাংসের ক্ষতিকর প্রভাব মতে সাহায্য করবে তাই মাংসের পাশাপাশি শাকসবজি জাতীয় খাবার রাখতে হবে। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চলতে হবে।
মন্তব্যঃ ফ্যাটি লিভার থেকে মুক্তির উপায়
ফ্যাটি লিভার থেকে মুক্তির উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা উপরে দেওয়া হয়েছে। লিভার থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য সঠিক জীবনযাত্রা, স্বাস্থ্যকর খাদ্যা অভ্যাস এবং নিয়মিত ব্যায়াম অপরিহার্যের উপর গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। কারণ সাধারণত ফ্যাটি লিভারের ওষুধ নাই জীবনযাত্রার মানির উপরেই নির্ভর করে মুক্তি পাওয়া যায়। প্রাকৃতিক উপাদান যেমন লেবু পানি, গ্রিন টি, আদা এবং হলুদ লিভারের স্বাস্থ্য উন্নত করতে সাহায্য করে।
এর পাশাপাশি অবশ্যই আপনাকে মদ্য পান এড়িয়ে চলতে হবে এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চলতে হবে। কারণ ফ্যাটি লিভার থেকে লিভার সিরোসিস বা লিভার ক্যান্সারের মতো মরণঘাতী অসুখ হয়। তবে মনে রাখবেন ফ্যাটি লিভার দীর্ঘমেয়াদী প্রক্রিয়ায় ভালো হয়, তাই ধৈর্য ধরে নিয়ম মেনে চলে স্বাস্থ্যকর জীবন যাপন করতে হবে। আশা রাখি আপনার জন্য এই পোস্টটি অনেক উপকার। ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন দেখা হবে পরবর্তী আবার কোন ব্লগে
প্রশ্ন ২৪ ব্লক এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url