গর্ভাবস্থায় ডান পাশে ঘুমালে কি হয়
গর্ভাবস্থায় ডানপাশে ঘুমালে কি হয় এই কথাটি প্রত্যেকটি গর্ভবতী নারীর জানা প্রয়োজন। একজন নারী গর্ভধারণের পর শিশুর সঠিক বিকাশের জন্য তাকে অনেক কিছুই জানতে হয়। এই জন্য একজন গর্ভবতী নারীর মনে প্রশ্ন থাকে সে কিভাবে ঘুমাবে। একজন নারী তার শরীরে অন্য একজনকে বহন করে।
নারীদের মনে এই গর্ভধারণের বিভিন্ন প্রশ্ন ঘুরতে থাকে। বিভিন্ন বিশেষজ্ঞরা বিভিন্নভাবে তাদেরকে পরামর্শ দেন যে ডান কাতে ঘুমাবে নাকি বাম কাতে ঘুমাবে। আজকের আমার এই ব্লগে আমরা জানবো যে একজন গর্ভবতী নারী ডান পাশে ঘুমালে কি হয় বা তাকে কোন পজিশনে ঘুমাতে হবে। তবে চলুন আজকের এই ব্লগে জেনে নেয়া যাক।
পোস্ট সূচীপত্রঃ গর্ভাবস্থায় ডানপাশে ঘুমালে কি হয়
- গর্ভাবস্থায় ডান পাশে ঘুমালে কি হয়
- গর্ভাবস্থায় কত ঘন্টা ঘুমানো উচিত
- গর্ভাবস্থায় বেশি ঘুমালে কি হয়
- গর্ভাবস্থায় বাম কাত হয়ে শোয়ার উপকারিতা
- গর্ভাবস্থায় প্রথম ৩ মাস ঘুমানোর উপায়
- গর্ভাবস্থায় পানি কম খেলে কি হয়
- গর্ভাবস্থায় কিভাবে বসা উচিত
- গর্ভাবস্থায় চিত হয়ে শোয়া যাবে কি
- গর্ভাবস্থায় বাচ্চা পেটের কোন পাশে থাকে
- মন্তব্যঃ গর্ভাবস্থায় ডানপাশে ঘুমালে কি হয়
গর্ভাবস্থায় ডান পাশে ঘুমালে কি হয়
গর্ভাবস্থায় ডানপাশে ঘুমালে কি হয় এই প্রশ্নটি প্রতিটি গর্ভবতী নারীর মনে আসে। সারাদিন কর্মব্যস্ততার পরে যখন একজন গর্ভবতী নারী রাতে ঘুমাতে যায় তখনও তার মনে প্রশ্ন আসে কোন ভাবে ঘুমালে তার গর্ভের সন্তান ভালো থাকবে। গর্ভাবস্থায় একজন নারীর ঘুম সহজে হয় না। সারাদিন পরিশ্রমের পর যখন শরীরের প্রত্যেকটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ স্বস্তি চাই, তখন একজন গর্ভবতী নারী ভাবে সে কোন ভাবে ঘুমালে ভালো থাকবে।
গর্ভাবস্থায় একজন নারী বিভিন্নভাবে অসুস্থ থাকে, কখনো মাথাব্যথা, কখনো বমি, কখনো শরীর ব্যথা, আবার কখনো এতটাই অরুচি হয় যে সে খাবার খেতে পারে না। গর্ভাবস্থায় অনেক সময় রাতে ঘুম আসে না, এতে অল্পতেই একজন গর্ভবতী নারী ক্লান্ত হয়ে পড়ে। একজন গর্ভবতী নারীর ৭ থেকে ৮ ঘন্টা ঘুম খুবই জরুরী। নিজের শরীরের ভেতরে শিশুর সুরক্ষা এবং নিজের স্বার্থের জন্য একজন গর্ভবতী নারীকে ঘুমানোর ভঙ্গি পাল্টাতে হয়।
সাধারণত, চিকিৎসকরা গর্ভবতী নারীকে পরামর্শ দেন যে ডান পাশে না ঘুমিয়ে বাম পাশে কাত হয়ে ঘুমাতে। কারণ এতে রক্ত সঞ্চালন সহজ হয় যা শিশুর বৃদ্ধির জন্য উপকার হতে পারে। ডানপাশে ঘুমানোর ফলে কিছু সমস্যা হতে পারে। একজন গর্ভবতী মায়ের অবশ্যই জানতে হবে ডানপাশে ঘুমালে কি হয় এবং বাম পাশে ঘুমালে কি হয়।
ডান পাশে কাত হয়ে ঘুমালে সাধারণত শরীরের ওজন, প্রধান শিরা গুলোর উপরে চাপ ফেলতে পারে, যা রক্ত সঞ্চালন কমায়। গর্ভবতী মায়ের শরীরে অস্বস্তি তৈরি করতে পারে এবং এর জন্য তার মাথা ঘোরা বা বমি বমি ভাবও হতে পারে। এতে গর্ভের শিশুর জন্য সমস্যা হয় এবং গর্ভের শিশু পর্যাপ্ত পরিমাণ অক্সিজেন নাও পেতে পারে। সাধারণত এইসব কারণে চিকিৎসকরা বাম কাতে ঘুমানোর জন্য পরামর্শ দেন।
একজন গর্ভবতী মা যে কোন পজিশনে ঘুমাতে পারবেন তার নিজের ইচ্ছে অনুযায়ী। সে বাম কাতে ঘুমালেও সমস্যা হবে না আবার ডান কাতে ঘুমালেও সমস্যা হবে না। আবার নিজের সুবিধার জন্য দুই পায়ের মাঝে বালিশ দিয়ে শুলেও কোন ঝামেলা হবে না। সে যেভাবে ঘুমালে আরাম পাবে সে ঘুমাতে পারে। কারণ একই ভঙ্গিতে ঘুমানো কঠিন তাই যখনই সম্ভব বামদিকে ঘুমানোর চেষ্টা করুন বা ডান দিকে।
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে যে সাধারণত গর্ভবতী নারীরা বামদিকে কাত হয়ে ঘুমালে শিশু বেশ স্বাচ্ছন্দভাবে থাকতে পারে। এতে মায়ের হৃদযন্ত্রের ওপর চাপ কমায় এবং কিডনির কার্যক্ষমতা উন্নত করে ফলে শরীর ফুলে যাওয়া থেকে শুরু করে পানি জমা পর্যন্ত প্রতিরোধ করে। এতে প্রমাণিত হয় যে একজন গর্ভবতী নারী বামদিকে কাত হয়ে ঘুমালে শিশু স্বাচ্ছন্দ বোধে অক্সিজেন নিতে পারে। তবে দীর্ঘক্ষণ বাম দিকে শুয়ে লেগে গেলে সে ডান দিকে ঘুরেও ঘুমাতে পারবে। একজন গর্ভবতী নারী তার স্বাচ্ছন্দ্যবোধ অনুযায়ী ঘুমাতে পারবে।
সব গর্ভবতী নারীর শরীর এক রকম নয়, একে একজনের শরীর একেক রকম, কেউ কোন সমস্যার সম্মুখীন হলে অবশ্যই তাকে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। যদি দেখেন চিৎ হয়ে শুয়ে আছেন তবে ঘুম থেকে উঠে পানি পান করুন এবং নিজেকে রিফ্রেস করে আবারও বাম হাত হয়ে ঘুমাতে পারেন। এ সময় একটা গর্ভবতী নারীকে নরমাল এবং দুশ্চিন্তা মুক্ত থাকতে হবে। তাই আপনার শিশুর সুবিধার্থে বাম কাতে ঘুমালে ভালো হয় তবে ডান কাতেও ঘুমানো যাবে। গর্ভাবস্থার প্রতিটি ধাপে আপনাকে সচেতন থাকতে হবে।
গর্ভাবস্থায় কত ঘন্টা ঘুমানো উচিত
গর্ভাবস্থায় কত ঘন্টা ঘুমানো উচিত তার সম্পর্কে একজন গর্ভবতী মহিলার পূর্ণাঙ্গ ধারণা থাকা উচিত। ঘুম মানব জীবনের একটি মহা ঔষধ। আর গর্ভবতী নারীর জন্য ঘুম অপরিহার্য। একজন গর্ভবতী নারী প্রতিদিন অন্ততপক্ষে ৭ থেকে ৯ ঘন্টা ঘুমানো দরকার। তবে এই ঘুম একনাগারে নয় রাত দিন মিলেই এই ৭ থেকে ৯ ঘণ্টা ঘুমাতে হবে।
গর্ভাবস্থায় একজন নারীর শরীরের বিভিন্ন ধরনের পরিবর্তন হয়ে থাকে যেমন, হরমোনের পরিবর্তন, শরীর ব্যথা, পেট বড় হওয়া এবং ঘন ঘন প্রসাব হওয়া। অনেক সময় গর্ভবতী নারীর রাতে ঘুম কম হলে তারা দুশ্চিন্তায় ভোগে যে, ঘুম কেন হয় না। এই ঘুম কেন হয় না এটাতেই ঘুম আরো নষ্ট হয়ে যায়। এতে দুশ্চিন্তা বেড়ে যায়, যার ফলে শরীরে সমস্যা আসে এবং বাচ্চারও সমস্যা হয়।
একজন গর্ভবতী মায়ের প্রয়োজন হয় পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুম এবং বিশ্রামের। এবং বিশ্রাম সঠিক পর্যায়ে না হলে গর্ভধারণের সময় নানা জটিলতার সম্মুখীন হতে হয় যেমন উচ্চ রক্তচাপ বেড়ে যায় বা গর্ভকালীন ডায়াবেটিস দেখা যায়। ঘুমের প্রয়োজনীয়তা ট্রাইমেস্টার এর উপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হয়। বরং দুশ্চিন্তা না করে আপনার ঘুম কেমন করে সহজ হবে সেই চিন্তা করাটাই যথেষ্ট।
একজন গর্ভবতী নারীকে অবশ্যই তার ঘুমের পরিবেশ সুন্দর করতে হবে। ঘরের পরিবেশ যেন সুন্দর থাকে, ঘর অন্ধকার থাকে, কোন ধরনের আলো যেন চোখে না আসে তার জন্য ব্যবস্থা করতে হবে। এক কথায় আপনার রুমের পরিবেশ এমন করতে হবে যেন খুব সহজেই আপনি ঘুমাতে পারেন।
গর্ভাবস্থায় প্রথম তিন মাসে হরমোনের পরিবর্তন ঘটে এবং শরীরের অতিরিক্ত কাজের কারণে অনেক গর্ভবতী নারী বেশি ঘুমায়। দ্বিতীয় ট্রাইমেস্টারে কিছু আরামদায়ক সময় পাওয়া যায়, যা এ সময় একটু ঘুম ভালো হয়। কিন্তু তৃতীয় পর্যায়ে পেট বড় হয়ে যাওয়ার কারণে একজন গর্ভবতী নারীর ঘুমাতে অসুবিধা হয়।
গর্ভাবস্থায় আপনাকে অবশ্যই নিয়মিত সময় ধরে ঘুমাতে হবে। রাতে ঘুমাবার সময় কোন ধরনের ভারী খাবার খাওয়া যাবে না এবং অবশ্যই হালকা ঢিলাঢালা পোশাক পড়তে হবে। অবশ্যই আপনাকে রাতে টিভি বা মোবাইল ব্যবহার করা যাবে না। শরীরের আরামদায়ক একটি ভঙ্গি খুঁজে বের করতে হবে। প্রয়োজনে বাম পাশে কাত হয়ে ঘুমানো অথবা দুই পায়ের মাঝে বালিশ দিয়েও ঘুমাতে পারেন। বিশেষ করে বাম পাশে শোয়ার চেষ্টা করবেন বেশি কারণ এতে রক্ত সঞ্চালন সহজ হয়।
আরও পড়ুনঃ পিরিয়ডের আগে সাদা স্রাব গর্ভাবস্থার লক্ষণ
নিয়মিত ঘুমানোর অভ্যাস করতে হবে। যদি রাতে ঘুম না হয় তার মানে এই অর্থ নয় যে দিনে ঘুমিয়ে পূরণ করতে হবে। কারণ দিনে ঘুমালে রাতে ঘুম সহজে আসতে চায় না। যার কারণে আপনার ঘুমের নিয়ম ব্যাহত হতে পারে। প্রতিদিন রুটিন অনুযায়ী ঘুমালে মা সহ বাচ্চার অনেক উপকারে আসে। রাতে যদি ঘুম না আসে তাহলে অবশ্যই হালকাভাবে ২০ থেকে ৩০ মিনিট হাটাহাটি করে আবার ঘুমাতে যেতে হবে। প্রয়োজনে হালকা কুসুম গরম পানি দিয়ে গোসল করলে ঘুমাতে সাহায্য করে ।
পর্যাপ্ত ঘুম শুধু একজন গর্ভবতী মায়ের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখে না বড় শিশুর সঠিক বিকাশেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ঘুমের গুরুত্বকে অবহেলা না করে সঠিক সময়ে পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুমানোর চেষ্টা করতে হবে। আর একজন গর্ভবতী মহিলার রাতের ঘুম বিশেষভাবে জরুরী। যদি ঘুমের বেশি সমস্যা হয় তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
গর্ভাবস্থায় বেশি ঘুমালে কি হয়
গর্ভাবস্থায় বেশি ঘুমালে কি হয় এই কথাটি যারা প্রথমবার গর্ভবতী হয়েছে তাদের মধ্যে প্রশ্ন বেশি আসে। কারণ গর্ভ অবস্থায় ঘুম বেশি আসবে এটাই স্বাভাবিক কারণ এই সময়ে শরীরের অনেক কিছুর পরিবর্তন হয়। এ সময়ে একজন মায়ের অতিরিক্ত বিশ্রামের প্রয়োজন হয় কারণ মা ও শিশুর শরীরের কাজ দ্বিগুণ হাড়ে বেড়ে যায়। তবে বেশি ঘুমানো ভালো আবার খারাপ দুটি হতে পারে। অতিরিক্ত কোন কিছুই ভালো না।
গর্ভাবস্থায় প্রথম ত্রৈমাসিকে আপনার হরমোনের পরিবর্তনের কারণে প্রোজেস্টরিনের মাত্রা বৃদ্ধি পায় এতে শরীরে ক্লান্তি বোধ আসে এবং ঘুমের পরিমাণ বেশি হয়। দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে শারীরিক চাপের কারণে ঘুম বেশি হয় এবং শেষ ত্রৈমাসিকে পেটের আকার বড় হওয়ার কারণে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে।
এই সময়ে পর্যাপ্ত ঘুম শিশুর সঠিক বিকাশ ঘটাতে সাহায্য করে এবং গর্ভবতী নারীর শারীরিক ও মানসিকভাবে সবকিছু স্থির করতে সাহায্য করে। শরীরের কোষগুলো ঠিকভাবে কাজ করতে পারে বিধায় মা সুস্থ থাকে। আর মা সুস্থ মানেই তার সন্তান বা শিশু সুস্থ।
তবে অতিরিক্ত ঘুমের কিছু নেতিবাচক দিক রয়েছে। অনেক বেশি ঘুমালে শরীরের অলসতা বেড়ে যায় এর ফলে শারীরিক ওজনও বৃদ্ধি পায়। শারীরিক ওজন বেশি বৃদ্ধি পেলে এতে গর্ভবতী মায়ের এবং বাচ্চার অসুবিধা হয় অনেক সময় প্রিম্যাচিউর প্রেগনেন্সি হয়ে যায়। দীর্ঘক্ষণ একভাবে শুয়ে থাকলে রক্ত সঞ্চালনও সমস্যা হয়। এতে সাধারণত ডায়াবেটিস বা উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বাড়তে পারে।
সে কারণে একজন গর্ভবতী নারী কে সঠিক ভারসাম্য বজায় রেখে ঘুমানো জরুরী। সাধারণত প্রতিদিন ৭ থেকে ৯ ঘণ্টা ঘুমানো যথেষ্ট। যদি বেশি ঘুম ঘুম মনে হয় তাহলে অবশ্যই হালকা ব্যায়াম, একটু হাঁটাহাঁটি বা বই পড়ার মতো কাজ করতে হবে। আর ঘুম সমস্যা বা অতিরিক্ত ক্লান্তিবোধ মনে করলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। গর্ভাবস্থায় ঘুম, শরীর ও মনের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ তবে অবশ্যই তা সচেতনতার মধ্যে।
গর্ভাবস্থায় বাম কাত হয়ে শোয়ার উপকারিতা
গর্ভাবস্থায় বাম কাত হয়ে শোয়ার উপকারিতা হ্যালো এটি রক্ত সঞ্চালন উন্নত করে, কিডনির কার্যক্ষমতা বাড়ায় এবং শিশুর জন্য পর্যাপ্ত অক্সিজেন সরবরাহ করে। চিকি মেডিকেলের ভাষায় বলা হয় যে একজন গর্ভবতী মহিলা যদি বাম হাত হয়ে ঘুমায় তাহলে তার শরীরে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পায় যার ফলে বাচ্চা অক্সিজেন সরবরাহ করতে পারে। বাম কাতে শোয়ার অনেক উপকারিতা রয়েছে যেমন-
- রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করেঃ একজন গর্ভবতী মহিলা যদি বাম কাতে ঘুমায় তাহলে তার শরীরে প্রধান রক্তনালী ইনফেরিয়র ভেনা কাভাতে চাপ কম পড়ে। যার ফলে হৃৎপিণ্ড ও গর্ভাশায়ের পর্যাপ্ত রক্ত সঞ্চালন করতে সাহায্য করে এবং এর মাধ্যমে একজন গর্ভের শিশু পর্যাপ্ত পরিমাণে অক্সিজেন পায়।
- কিডনির কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করেঃ একজন গর্ভবতী নারী বামদিকে শোয়ার সময় কিডনির উপরে চাপ কম পড়ে হলে শরীর থেকে বজ্র ও অতিরিক্ত তরল বের করতে সাহায্য করে এর ফলে গর্ভাবস্থায় হাত পা ফোলা বা পানি জমা থেকে বিরত থাকে।
- গর্ভের শিশুর সুরক্ষা নিশ্চিত হয়ঃ যদি আপনি সুস্থ প্রেগনেন্সির মাধ্যমে একটি শিশু সন্তানের জন্ম দেওয়া হয় তবে অবশ্যই আপনাকে বাম কাতে বেশি শুতে হবে কারণ বাঁচাতে শোয়ার ফলে রক্ত প্রবাহ সহজ হয় এবং শিশু বাচ্চাটি খুব সহজেই অক্সিজেন পায়ফলে গল্পের জটিলতা কমে যায়।
- পেটের চাপ কমানোঃ গর্ভধারণের পর দিন দিন পেট বড় হতে থাকে। পেটের ভিতর বাচ্চা বড় হওয়ার সাথে সাথে পেটো বড় হয় জাপানে মায়ের শরীরের ভারসাম্য রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়ে। বামদিকে শোয়ার ফলে পেটে একটু চাপ কম পড়ে যা গর্ভবতী নারীর আরাম ঠিক থাকে।
- হজমে সহায়তাঃ গর্ভধারণের পর শরীরে বিভিন্ন পরিবর্তনের ফলে জীবনের পরিবর্তন হতে থাকে। গর্ভধারণের পর একজন গর্ভবতীর খাবার সহজে হজম হয় না। বাম কাতে ঘুমালে খাবার হজম প্রক্রিয়াকে সহজ করে এবং গ্যাস ও এসিডিটির সমস্যা থেকে মুক্ত করে।
- উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ রাখেঃ গর্ভবতী নারীর শরীরে হরমোনের পরিবর্তনের কারণে সবকিছুই পরিবর্তন ঘটে। বেশিরভাগ সময় ঘুমের পরিবর্তনের কারণে অতিরিক্ত ওজন বা রক্তচাপের ঝুঁকি বাড়তে থাকে। কিন্তু একজন গর্ভবতী মা যদি বাম কাতে ঘুমায় তাহলে রক্ত প্রবাহ সহজ হয় এবং উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি কমে যায়। এইজন্য বাম হাতে ঘুমালে একজন গর্ভবতী নারী ও শিশু দুজনে ভালো থাকে।
গর্ভবতী নারীর ঘুমের জন্য কিছু করণীয়ঃ
- একজন গর্ভবতী নারীকে শুরু থেকেই একটি ভালো ভঙ্গিতে শোয়ার অভ্যাস করতে হবে
- প্রয়োজনে আরামদায়ক গদি বা বালিশ ব্যবহার করতে হবে। এই গদিবা বালিশ দিয়ে পেট ও পিঠে সাপোর্ট হিসেবে ব্যবহার করতে হবে
- ঘুমের সময় অনেক ক্ষেত্রে বুকে জ্বালাপোড়া বা ব্যথা হতে পারে তার জন্য মাথা উঁচু করে শুতে হবে
- গর্ভবতী নারীরা অনেক সময় শ্বাসকষ্টের মতো সমস্যায় পড়তে পারে, এর কারণে শরীরের উপরের অংশটুকু বালিশের উপরে দিয়ে শুতে হবে
- ঘুমের সময় অন্যদিকে ঘুরে গেলে চিন্তিত হওয়ার দরকার নেই প্রয়োজনে আমি দিক পরিবর্তন করতে পারেন।
- পেট বড় হয়ে যাওয়ার কারণে চিৎ হয়ে শোয়া যায় না এ কারণে প্রয়োজনে মাঝেমধ্যে শোয়ার জন্য সোফা ব্যবহার করতে পারেন
একজন নারী যখন গর্ভধারণ করে তখন জীবনের সবকিছুই পরিবর্তন শুরু করতে হয়। পেটের শিশু সন্তানের সুস্থতার জন্য এবং নিজেও সুস্থভাবে থাকার জন্য অনেক ধরনের কৌশল অবলম্বন করতে হয়। অনেক সময় গর্ভধারণের পর শ্বাসকষ্টের মতো জটিল সমস্যা হতে পারে। এই সমস্যায় এক পেটের শিশুর ও সমস্যা হতে পারে তাই আপনাকে অবশ্যই সাবধানতার সাথে জীবনের গতিপথ পরিবর্তন করতে হবে। যেহেতু বাম কাত হয়ে ঘুমালি রক্তের সঞ্চালন বৃদ্ধি পায় এবং এতে মা ও শিশু দুজনে ভালো থাকে তাই অবশ্যই আপনি চেষ্টা করবেন যেন আপনার ঘুমটি বাম কাতে হয়।
গর্ভাবস্থায় প্রথম ৩ মাস ঘুমানোর উপায়
গর্ভাবস্থায় প্রথম ৩ মাস ঘুমানোর উপায় হল আরামদায়ক ভঙ্গিতে শোয়া, প্রয়োজনে পাশে কুশন ব্যবহার করা এবং অবশ্যই ঘুমানোর একটি রুটিন প্রস্তুত রাখা। গর্ভাবস্থায় প্রথম ৩ মাসে শরীরের অনেক পরিবর্তন ঘটে, যার প্রভাব ঘুমের উপর বেশি পড়ে। গুণগতমান নির্ধারণ করার জন্য অবশ্যই আপনাকে কিছু পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে। যেমন-
আরামদায়ক ঘুমের ভঙ্গি বেছে নিনঃ
- গর্ভধারণের প্রথম তিন মাসে সাধারণত পেট তেমন একটা বড় হয় না তাই এই সময় গর্ভবতী নারীর সোজা পিঠ বা পাশ ফিরে শোয়া সম্ভব। তবে ধীরে ধীরে অবশ্যই একজন গর্ভবতী নারীকে বাম দিকে শোয়ার অভ্যাস করতে হবে। কারণ এটি ভবিষ্যতে রক্ত সঞ্চালনে উন্নত করবে এবং গর্ভের শিশুর জন্য অক্সিজেন সরবরাহ সুবিধা হবে
- গর্ভবতী নারী কে বিশেষ বডি পিলো বা মেটারনিটি পিলো ব্যবহার করতে হবে। এটি শরীরকে বিভিন্নভাবে সাপোর্ট দেয় এবং আরামদায়ক ঘুম দিতে সাহায্য করে।
- গর্ভাবস্থায় অবশ্যই আপনাকে চিত হয়ে শোয়া যাবেনা কারণ চিৎ হয়ে শুলে শরীরের ইনফিরিয়র ভেনা কাভাতে চাপ পড়ে খালি হৃদপিন্ডে কম রক্ত প্রবেশ করে। এরফলে রক্তচাপ বেড়ে যায়, যার জন্য শিশুর অক্সিজেন কমে যায়।
সুষম খাদ্য গ্রহণ ও পানিঃ
- একজন গর্ভবতী নারীকে তার গর্ভের শিশুর জন্য অবশ্যই তাকে সুষম খাবার খেতে হবে। ঘুমানোর অন্তত দুই ঘণ্টা আগে রাতের খাবার খেতে হবে যাতে হজম ভালো হয় এবং এসিডিটির সমস্যা না হয়
- গর্ভাবস্থায় পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে। পানির অপর নাম জীবন। একজন গর্ভবতী নারীর জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি অপরিহার্য তবে অবশ্যই রাতে ঘুমানোর বেশ আগে পানি পান করতে হবে, তা না হলে প্রসাবের জন্য বারবার উঠতে হবে এতে ঘুমে ব্যাঘাত ঘটতে পারে।
নিয়মিত রুটিন তৈরিঃ
- গর্ভধারণের পর আপনাকে অবশ্যই প্রতিদিন একই সময়ে ঘুমানোর চেষ্টা করতে হবে।
- ঘুমানোর আগে প্রয়োজনে হালকা গরম পানি দিয়ে গোসল করতে হবে যাতে ঘুম ভালো হয়। কারণ একজন গর্ভবতী নারীর ঘুমের অবদান অনস্বীকার্য।
হরমোন জনিত ক্লান্তিঃ
- প্রথম তিন মাসে প্রজেস্টেরন হরমোনের কারণে শরীরে অতিরিক্ত ক্লান্তি হয়। যার ফলে এই তিন মাস অত্যন্ত ঘুম ঘুম লাগে। একজন গর্ভবতী নারীকে প্রতিদিন অন্তত ৭ থেকে ৯ ঘন্টা ঘুমাতে হবে। কারন একজন গর্ভবতী নারী অমূল্য সম্পদ, একটি সুস্থ শিশু জন্মদানের জন্য।
ঘরের পরিবেশ সুন্দর করুনঃ
- ঘুমাতে সমস্যা যেন না হয় তার জন্য তার ঘুমানোর ঘরটি যেন শীতল, অন্ধকার এবং নিরিবিলি হয়। কোনভাবেই যেন তার ঘুমে ব্যাঘাত না ঘটে।
- বিছানা আরামদায়ক করার জন্য প্রয়োজনে ম্যাট্রেস বা তুলতুলে বালিশ ব্যবহার করতে হবে
স্ট্রেস বা উদ্বেগ কমানোঃ
- প্রথম তিন মাসে একজন গর্ভবতী নারী তার ভবিষ্যৎ প্রেগনেন্সি নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকেন, যা তার ঘুমে প্রভাব ফেলে। প্রয়োজনে পরিবারের বাকি সদস্যদের তাকে বোঝাতে হবে বা তাকে ঘুমানোর জন্য ব্যবস্থা করে দিতে হবে। প্রয়োজন হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
- স্ট্রেস কমানোর জন্য প্রতিনিয়ত নিয়ম করে শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম করতে হবে বা যোগ ব্যায়াম করতে হবে।
প্রযুক্তি দূরে রাখতেঃ
- গর্ভধারণের পর একজন গর্ভবতী মহিলাকে অবশ্যই বিভিন্ন ধরনের প্রযুক্তি থেকে দূরে থাকতে হবে। কোন ধরনের টিভি, মোবাইল বা ল্যাপটপ ব্যবহার করা যাবে না। ব্লু-লাইট মস্তিষ্কের মেলাটোনিন হরমোনের বাধা দেয় যা একজন গর্ভবতী নারীর ঘুমের ব্যাঘাত ঘটানোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
অনেক নারী গর্ভধারণের পর প্রথম প্রথম বমি বমি ভাব, এসিডিটি, ঘনঘন প্রসাব বা অন্য কোন কারণে ঘুমে ব্যাঘাত ঘটে তাহলে অবশ্যই দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। প্রথম তিন মাসের ঘুমের অভ্যাস ঠিক করলে পরবর্তী সময়ের জন্য তা আরামদায়ক ও স্বাস্থ্যকর গর্ভাবস্থার নিশ্চিত হবে। একজন গর্ভবতী নারীর সুস্থ শিশু জন্ম দানের জন্য সুষম খাবার এবং পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুম সবচেয়ে জরুরী।
গর্ভাবস্থায় পানি কম খেলে কি হয়
গর্ভাবস্থায় পানি কম খেলে কি হয় এই কথাটি বলতে প্রথমেই আসে, "পানির অপর নাম জীবন"। আমাদের শরীরে প্রায় ৬০ শতাংশ পানি থাকে। পানি আমাদের শরীরের ক্ষতিকর টক্সিন বের করতে সাহায্য করে, শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে এবং আমাদের মস্তিষ্ক সচল রাখতে সাহায্য করে। তাই একজন সুস্থ স্বাভাবিক মানুষের জীবনে পানির গুরুত্ব অপরিসীম। ঠিক সেই ভাবেই গর্ভাবস্থায় একজন গর্ভবতী নারীর পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করা খুবই জরুরী।
গর্ভাবস্থায় একজন গর্ভবতী নারী কতটুকু পানি খাবে এই প্রশ্ন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ একজন নারীর গর্ভাবস্থা তার জন্য অতীব গুরুত্বপূর্ণ একটি সময়। কারণ সামান্য ভুল ত্রুটি হলেই গর্ভাবস্থা সমস্যার সম্মুখীন হতে পারে এবং পড়তে পারে নানা জটিলতায়। শরীরে পানির ঘাটতি দেখা দিলে মা ও শিশুর জন্য বিভিন্ন ধরনের সমস্যা তৈরি করে। প্রথম সমস্যা পানি কম খাওয়ার ফলে ডিহাইড্রেশন বা পানি শূন্যতা সমস্যায় ভুগতে পারে। এতে একজন গর্ভবতী নারীর শরীরে ক্লান্তি দেখা দেয়, মাথা ঘুরায় এবং বমি বমি ভাবের সৃষ্টি করে।
গর্ভাবস্থায় গর্ভের শিশুকে ঘিরে থাকে অম্লিওটিক ফ্লুইড যার মাত্রা কমে গেলে সাধারণত শিশুর বিকাশের উপর প্রভাব ফেলে মারাত্মক। এছাড়াও পানি কম খেলে একজন গর্ভবতী নারীর প্রসব ঘন হয়ে যায়, যার ফলে মূত্রনালীতে সংক্রমণ বা ইউরিনারিতে ইনফেকশনেরও ভয় থাকে। একজন শিশু মায়ের গর্ভে সাধারণত ফ্লুইড এর মধ্যেই থাকে, তাই পানি কম খেলে তখন শিশুর অনেক ক্ষতি হয়। তাছাড়া মায়ের বুকে দুধ তৈরির জন্যও পানি অপরিহার্য।
সাধারণত ডিহাইড্রেশন এর কারণে গর্ভবতী নারীর গর্ভাশায় সংকোচন হয়ে আসে যা অনেক সময় অকাল প্রসবের ঝুঁকি বাড়ায়। পানি কম খাওয়ার ফলে আবার হজমের সমস্যা হয়, যেমন ধরেন কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দেয় যা একজন গর্ভবতী নারীর জন্য খুবই কষ্টদায়ক। একজন গর্ভবতী নারীর শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে পানির গুরুত্ব অপরিসীম। পানি কম খেলে অতিরিক্ত গরম লাগা বা হিট স্ট্রোক হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
দৈনন্দিন একজন স্বাভাবিক মানুষ সাধারণত গড়ে ২ লিটার পানি পান করে। এছাড়াও বিভিন্ন রসাত্মক খাবারের মাধ্যমে আমাদের শরীরে পানি প্রবেশ করে। সবচেয়ে বড় কথা একজন গর্ভবতী নারীর শরীরের অভ্যন্তরে আরেকটি প্রাণ বড় হয় যা অনেক রিস্ক হয়ে থাকে। পানি কম খাওয়ার ফলে শিশুর জন্মের সময় আবার ওজনও কম হতে পারে এবং তার শারীরিক বা মানসিক বিকাশে সমস্যা হতে পারে। তাই গর্ভের সন্তানের স্বাস্থ্য এবং একজন গর্ভবতী নারীর নিজের স্বাস্থ্যের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করতে হবে। যেহেতু স্বাভাবিক অবস্থায় ২লিটার পানি পান করা জরুরী তাই এই সময় আরো আধা লিটার পানি যোগ করে খাওয়া উচিত এবং সেই সাথে রসালোযুক্ত ফল।
গর্ভাবস্থায় কিভাবে বসা উচিত
গর্ভাবস্থায় কিভাবে বসা উচিত তা একজন গর্ভবতী নারীর অবশ্যই জানা প্রয়োজন। কারণ গর্ভাবস্থায় একজন নারীর শরীরের বিভিন্ন পরিবর্তন হয়ে থাকে বিশেষ করে ওজন বৃদ্ধি হয়। তাই এই অবস্থায় ঠিকমত না বসলে শরীরের অনেক ক্ষতি হতে পারে। সাধারণত পিঠে ব্যথা, কোমরে ব্যথা এবং শরীরের অন্যান্য অংশেও ব্যথা বা অস্বস্তি হতে পারে। তাই একজন গর্ভবতী নারীকে অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে কোন ভঙ্গিতে বসতে হবে যে তাহলে তার ভালো হবে।
সাধারণত সোজা হয়ে বসা বা সোজা হয়ে চলাফেরা করা অর্থাৎ আপনার দেহ থেকে সঠিকভাবে পরিচালনা করার নামই ভালো ভঙ্গি। এক কথায় বলা যায় যে সোজা হয়ে দাঁড়ানো থেকে সঠিকভাবে বসা পর্যন্ত প্রত্যেকটি মানুষেরই এই নিয়ম দরকার। আর গর্ভধারণের পর তো একজন গর্ভবতী নারীর অবশ্যই সঠিকভাবে বসতে হবে, দাঁড়াতে হবে এবং শুতে হবে। সঠিকভাবে না হলে যে কোন মুহূর্তেই যে কোন ধরনের বড় সমস্যার সম্মুখীন হতে পারে। কারণ একজন গর্ভবতী একা না তার সাথে একজন শিশু জড়িয়ে আছে।
প্রথমত অবশ্যই একজন গর্ভবতী নারীকে বসার সময় পেট সোজা রেখে বসতে হবে। কারণ কুজো হয়ে বসলে মেরুদন্ডের উপর অতিরিক্ত চাপ পড়বে যার জন্য পিঠ ও কোমরের ব্যথা বাড়িয়ে দিবে। কোন জায়গায় বসতে গেলেও এমন একটি আসন বেছে নিতে হবে যেখানে পিঠ সোজাভাবে থাকে বা ভালোভাবে সাপোর্ট পায়। প্রয়োজনে আরামদায়ক করার জন্য কোমরের নিচে একটা ছোট বালিশ বা মোটা কাপড় রাখতে হবে। তাহলে মেরুদন্ড বসার সময় সোজা হয়ে থাকবে।
একজন গর্ভবতী নারী কে বসার সময় খেয়াল করে বসতে হবে যেন তার পায়ের পাতা গুলো সোজা হয়ে সমানভাবে থাকে। এমনভাবে বসতে হবে যেন আপনার বসাটা প্রায় ৯০ ডিগ্রি অ্যাঙ্গেলের মত হয়। যাতে আপনার কান, কাধ বরাবর সোজা হয়ে থাকে এর ফলে নিতম্বের সাথে একটি সঙ্গতি হয়ে থাকবে। এছাড়াও গর্ভাবস্থায় যখন চেয়ারে বা উঁচু কোন জায়গায় বসা হবে তখন অবশ্যই পায়ের নিচে একটি ছোট টুল রাখতে হবে। যেটাকে সাধারণত ফুটস টুল বলে। এর ফলে কোমর বা পিঠের ওপর যে চাপ পড়ে তা একটু কম হয়। আর যদি এই ধরণের টুল ব্যবহার করা না হয় বা হাতের কাছে না থাকে তাহলে অবশ্যই যে আসনটিতে বসা হবে সেটি যেন অবশ্যই নিচু হয়। যাতে পায়ের পাতা গুলো মেঝেতে সোজা স্পর্শ করে থাকে।
একজন গর্ভবতী নারীকে অবশ্যই কোন জায়গায় একটানা বসে থাকা উচিত না। আর যদি বাধ্য হয়ে একটানা বসে থাকতে হয় তাহলে অবশ্যই বসে থাকা অবস্থায় পায়ের কিভিন্ন ধরনের ব্যায়াম করতে হবে। এতে পায়ের রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পাবে এবং কোন ধরনের ক্রাম্প বা টান পড়বে না। অনেক সাবধানতার সাথে পায়ের ব্যায়াম করে নিজেকে স্বস্তির মধ্যে রাখতে হবে। কখনোই তাকে ক্রশ করে রেখে বসা যাবে না এতে পায়ের রক্ত সঞ্চালনে বাধা সৃষ্টি করে ।
একজন গর্ভবতী নারীর কখনোই একটি বসা জায়গা থেকে হুট করে ওঠা যাবে না। উঠতে হলে অবশ্যই চেয়ার ধরে ধীরে ধীরে কোমরটাকে নিচু করে তারপর সোজা হয়ে দাঁড়াতে হবে। আপনি যদি কোন কর্ম ক্ষেত্রে কাজ করেন তবে অবশ্যই আপনাকে সেখানেও সজাগ থাকতে হবে। কোন জায়গায় বসার সময় অবশ্যই সামনে কোন টেবিল বা এমন কোন আসন এর সামনে বসবেন যেখানে হাত দিয়ে সাহায্য পেয়ে নিজে দাঁড়াতে পারেন। এতে আপনার কাধগুলো যেমন আরাম পাবে ঠিক তেমনি আপনিও ভালো থাকতে পারবেন । বেশিক্ষণ বসে না থেকে মাঝেমধ্যে একটু হাটাহাটি করতে হবে।
কোন গর্ভবতী নারীর হুট করে নিচে কোন পড়া জিনিস তোলা ঠিক নয়। যদি মাটি থেকে কিছু তুলতে হয় তবে সরাসরি না ঝুঁকে হাঁটু ভেঙ্গে বসে তারপর তুলতে হবে। হঠাৎ করে বসলে পিঠে অপ্রয়োজনীয় চাপ পড়ে এবং পেটে বাচ্চার ও ক্ষতি হতে পারে। মাটিতে বসার ক্ষেত্রে আরও সাবধানতার সাথে বসতে হবে যেমন দুই পা মুরে সুন্দর করে বসা যায়। দূরে কোথাও জার্নিতে গেলে গাড়িতে বসার সময়ও সতর্ক থাকতে হবে। অবশ্যই গাড়িতে বসার সময় সিটবেল্ট সঠিকভাবে বেধে দিতে হবে এবং কোমরের পেছনে সাপোর্ট দিতে পারলে আরো আরামদায়ক হবে।
একজন গর্ভবতী নারীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো আরাম। গর্ভবতী নারী সহ গর্ভের শিশুকে আরাম এবং স্বস্তি দেওয়ার জন্য, কোন অবস্থানে যদি বসতে অস্বস্তি হয়, তাহলে অবশ্যই সেই অবস্থান পরিবর্তন করতে হবে। একটি জীবনের মধ্যে আরেকটি জীবনকে বহন করা খুবই কঠিন। এই জন্য একজন গর্ভবতী নারীর প্রথম কাজ হল সাবধানে সতর্কতার সাথে প্রত্যেকটি কাজ করা। একজন স্বাভাবিক মানুষ হুটহাট করে যেমন সব কাজ করতে পারলেও একজন গর্ভবতী নারীর ক্ষেত্রে তা হবে ভিন্ন। প্রয়োজনে একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। সঠিকভাবে অভ্যাস গড়ে তুললে শুধু মায়ের স্বাস্থ্যের জন্যই নয়, গর্ভের সন্তানের সুরক্ষার জন্যও জরুরী।
গর্ভাবস্থায় চিত হয়ে শোয়া যাবে কি
গর্ভাবস্থায় চিত হয়ে শোয়া যাবে কি প্রশ্নটি স্বাভাবিক মনে হলেও আসলে অনেক জটিল এবং বোঝার বিষয় আছে। একজন গর্ভবতী নারীর প্রথম পদক্ষেপ হলো তার গর্ভধারণের পর তার প্রতিদিনের চলাফেরার করণীয়র একটি তালিকা তৈরি করা। যত দিন যাবে তালিকার পরিমাণও তত দিন দিন বড় হবে। গর্ভাবস্থায় একজন নারীর বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হয়ে থাকে, বিশেষ করে শোয়া, ওঠা-বসা সব ক্ষেত্রেই একটু সমস্যা হয়। তাই আপনি কিভাবে ভালো থাকবেন তা আপনাকেই তৈরি করতে হবে।
সাধারণত চিকিৎসকরা গর্ভবতী নারীকে চিৎ হয়ে শোয়ার জন্য নিষেধ করেন। গর্ভাবস্থায় প্রথমদিকে চিৎ হয়ে ঘুমালে তেমন কোন সমস্যা হয় না। তবে গর্ভের বয়স বাড়ার সাথে সাথে এর সমস্যা ও বাড়তে থাকে। প্রথম ত্রৈমাসিকে সাধারণত চিৎ হয়ে শুতে পারে এই সময় তেমন কোন সমস্যা হয় না। তবে বিশেষ করে দ্বিতীয় ও তৃতীয় ত্রৈমাসীকে চিৎ হয়ে শোয়া মা ও শিশু দুজনের জন্যই অনেক ঝুঁকিপূর্ণ। পেট বড় হওয়ার সাথে সাথে ভর হওয়ার ফলে জরায়ু পিঠের বড় রক্তনালী এবং হৃদপিন্ডে ওপর বিভিন্ন ধরনের চাপ সৃষ্টি করে।
চিত হয়ে শোয়ার কারণে শরীরের রক্ত সঞ্চালন কমে যায়। পিঠের নিচে থাকা বৃহৎ শিরা, ভেনা কাভা যেটি রক্তকে পায়ের দিক থেকে হৃদপিন্ডে ফিরিয়ে আনে সেটার ওপর চাপ ফেলে। ফলে হৃদযন্ত্রের রক্ত প্রবাহ কমে যায় এবং রক্তচাপ কমে যেতে পারে। যার ফলে মা ও শিশুর শরীরে রক্ত সঞ্চালনে সমস্যা হয়। এই সমস্যার ফলে সাধারণত শিশুর ওজন কমে যায়, প্রি ম্যাচিওর বেবি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, ধ্রুণের বৃদ্ধি হ্রাস পায় বা মৃত শিশুর জন্ম হতে পারে। তবে সব গর্ভবতী নারী এক রকম নয় বা সবার ওজনও একরকম নয়, তাই অবশ্যই একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
এছাড়াও গর্ভবতী নারীর চিৎ হয়ে শুয়ে থাকার কারণে গর্ভের শিশুর কাছে পর্যাপ্ত পরিমাণ অক্সিজেন পৌঁছাতে পারেনা যার ফলে শিশুর সঠিক বৃদ্ধি বা বিকাশে সমস্যা দেখা দেয়। গর্ভাবস্থায় এমনিতেই নারীদের হরমোনের পরিবর্তন দেখা দেয়। এই হারমোনাল পরিবর্তনের কারণে মাংসপেশী ও লিগামেন্ট গুলো নরম হয়ে যায়। যার জন্য চিৎ হয়ে শোয়ার ফলে কোমর বা পিঠের এই ব্যথাগুলো আরো বাড়িয়ে তোলে। কোন গর্ভবতী নারী যদি কোন সময় চিৎ হয়ে ঘুমায়, তবে ঘুম ভাঙার পরে ভয় না পেয়ে বা না ঘাবরিয়ে সুন্দরভাবে আবার আরেক কাত হয়ে ঘুমাতে হবে। কারণ হঠাৎ করে কোন উদ্যোগ হলে গর্ভের সন্তানের ক্ষতি হয়।
সাধারণত চিকিৎসকরা গর্ভাবস্থায় একদিকে কাত হয়ে শোয়ার পরামর্শ দেন এবং সেই দিকটি হল বাম দিক। তবে গর্ভের ২৪ সপ্তাহ পরে যদি ডানদিকে কাত হয়ে ঘুমানো হয় তবে একই সমস্যায় ভোগ করবে। বামদিকে শোয়া রক্ত এবং পুষ্টি সহজেই গর্ভের শিশুর কাছে পৌঁছাতে পারে, ফলে কিডনির কার্যক্ষমতা বাড়ায় এবং শরীরের তরল ধরা রাখার সমস্যা কমায়। তবে ঘুমের সময় শরীরের অবস্থান বারবার পরিবর্তন হওয়া স্বাভাবিক। চিৎ হয়ে শুয়ে থাকলে অনেক ক্ষতি হয় তবে যদি মনে হয় তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে এবং গর্ভাবস্থা সুরক্ষিত রাখতে হবে।
গর্ভাবস্থায় বাচ্চা পেটের কোন পাশে থাকে
গর্ভাবস্থায় বাচ্চা পেটের কোন পাশে থাকে এটি নিয়ে আমাদের নানাজনের নানান কথা রয়েছে। একজন নারী যখন গর্ভবতী হয় তখন তার শরীরের বিভিন্ন ধরনের পরিবর্তন হয়। এই পরিবর্তনের সাথে সাথে সেই গর্ভবতী নারীর মনে ওঠে হাজারো ধরনের প্রশ্ন। বাচ্চা কোন পাশে আছে ডান পাশে নাকি বাম পাশে? বাম পাশে থাকলে ছেলে হবে নাকি ডান পাশে থাকলে মেয়ে হবে, বিভিন্ন ধরনের প্রশ্ন। কিন্তু সবচেয়ে বড় প্রশ্ন মনে আসে সেটি হচ্ছে বাচ্চাটি কোন পাশে আছে।
সাধারণত গর্ভধারণের সময় বাচ্চাটি গর্ভাশয় অবস্থান করে এবং তার অবস্থান সময়ের সাথে সাথে বদলাতে থাকে। প্রথমে বাচ্চা খুব ছোট থাকে তাই তার সুনির্দিষ্ট অবস্থান সম্পর্কে কিছুই বলা যায় না। এটুকু বোঝা যায় যে, এই সময়ে সে বাচ্চাটি গর্ভাশয় এর মাঝামাঝি অংশে আছে। গর্ভধারণের দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে প্রবেশ করার সাথে সাথে তখন বাচ্চা দ্রুত বড় হতে থাকে এবং তার নড়াচড়া শুরু হয়। এই সময় একজন গর্ভবতী নারী পরিষ্কারভাবে অনুভব করতে পারে বাচ্চার নড়াচড়া বা তার অবস্থান। কোন সময় বাচ্চা ডানদিকে নড়ে আবার কোন সময় বাচ্চা বামদিকে নড়ে। তবে এটা খুব স্বাভাবিক বাচ্চা গর্ভাশয় এর ভিতরে যে কোন দিকে ঘুরে বেড়ায়।
গর্ভাবস্থার শেষ তৃতীয় ত্রৈমাসীকে বাচ্চার জন্য গর্ভাশয় এর জায়গা কম হয়ে যায় এবং সে একটি নির্দিষ্ট জায়গায় অবস্থান করে। এই সময় সাধারণত বাচ্চার মাথা থাকে নিচের দিকে এবং পা থাকে উপরের দিকে যাকে হেড-ডাউন পজিশন বলা হয়। অবস্থাটা শুধুমাত্র স্বাভাবিক প্রসবের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত। কিছু ক্ষেত্রে আবার অনেক সময় বাচ্চার মাথা উপরের দিকে থাকে এবং বাচ্চার পা নিচের দিকে থাকে যাকে ব্রিচ পজিশন বলা হয়।
বাচ্চা মায়ের পেটের কখনো বাম দিকে থাকতে পারে আবার কখনো ডানদিকে থাক পারে। তবে সাধারণত বাম দিকে থাকলে বাচ্চার শরীরে রক্ত প্রবাহ ভালো হয় এবং সে অক্সিজেন ভালো পায়। এই জন্য চিকিৎসকরা পরামর্শ দেন বাম কাতে শোয়ার জন্য। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বাচ্চার অবস্থান মায়ের শরীরের ভঙ্গি অনুযায়ী বদলাতে থাকে। বাচ্চার অবস্থান সম্পর্কে সঠিক তথ্য পেতে আল্ট্রাসাউন্ড সবচেয়ে উত্তম কার্যকর পদ্ধতি। চিকিৎসকরা আল্ট্রাসাউন্ডের মাধ্যমে দেখতে পারেন বাচ্চা পেটের কোন দিকে এবং কি অবস্থায় রয়েছে।
সাধারণত আমাদের দাদি নানিরা বলে বাচ্চা মায়ের পেটের ডান দিকে থাকে। কিন্তু আসলে তা নয় মনে রাখবেন এটি শুধুমাত্রই নিতান্ত একটি ধারণা, বৈজ্ঞানিক কোনো ব্যাখ্যা নয়। কারণ গর্ভাবস্থায় কখনোই বলা যায় না বাচ্চা কোন দিকে অবস্থান করছে। তবে বাচ্চা পেটের ডান বা বাম যেদিকেই অবস্থান করুক না কেন, এটি একটি স্বাভাবিক বিষয়। বড় কথা হল যদি বাচ্চার নড়াচড়া কম অনুভব হলে অবশ্যই দ্রুত চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।
মন্তব্যঃ গর্ভাবস্থায় ডানপাশে ঘুমালে কি হয়
গর্ভাবস্থায় ডান পাশে ঘুমালে কি হয় আজকের এই ব্লগ পড়ে অবশ্যই তা বুঝতে পেরেছেন। একজন গর্ভবতী নারী অবশ্যই তার নিজের স্বাচ্ছন্দ্যবোধ অনুযায়ী ঘুমাবেন। কিন্তু তারপরেও যখন নারী গর্ভধারণ করেন তখন অবশ্যই তার পেটের সন্তানের কথা বিবেচনা করে সব ভালো বিষয়গুলো করতে চান। ডান পাশে ঘুমালে যেহেতু বাচ্চার জন্য ক্ষতি এবং সেই সাথে মায়ের জন্য ক্ষতি তাই ডান পাশে না ঘুমিয়ে বাম পাশে ঘুমানো সর্বোত্তম।
একজন মা তার সন্তানের জন্য পৃথিবীর সবকিছুই করতে পারে। একটি সন্তানকে পৃথিবীর আলোর মুখ দেখানোর জন্য অনেক কষ্ট করেন। তাই সন্তানের ভালোর জন্য হাজারো কষ্ট হলেও একজন মা সাধারণত বাম কাতে ঘুমাতে সচেষ্ট থাকেন। আমার এই ব্লগে আপনাদেরকে একজন গর্ভবতী নারীর ডান পাশে বা বাম পাশে বা গর্ভবতী নারী কিভাবে ভাল থাকবে তার যথেষ্ট তথ্য দেওয়ার চেষ্টা করেছি। আশা রাখি এই তথ্য আপনাদের জন্য অনেক কাজে আসবে। ভালো থাকবেন আবারো হয়তো দেখা হবে অন্য কোন ব্লগে।
প্রশ্ন ২৪ ব্লক এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url