গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা

গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা সাধারণত মা ও শিশুর জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একটি শিশুর স্বাভাবিকভাবে বেড়ে উঠার প্রধান হাতিয়ার হল সুষম খাবার। যেহেতু গর্ভাবস্থায় মায়ের মাধ্যমে একটি শিশু সব খাবারের পুষ্টিগুণ পায় তাই একজন মায়ের পুষ্টিকর খাবার তালিকা অত্যন্ত অপরিহার্য। 

গর্ভবতী-মায়ের-খাবার-তালিকা

একজন নারী যখন গর্ভবতী হয় তখন তার স্বাভাবিক চলাফেরা, খাওয়া-দাওয়া মোট কথা সব কিছুরই পরিবর্তন আসে। গর্ভবতী নারী তখন একজন মেয়ে হিসাবে নয়, একজন মা হিসেবে চিন্তা করে। তার মাধ্যমে কিভাবে একটি সুস্থ সন্তান এই পৃথিবীর বুকে আসবে। আজকের এই ব্লগে আমরা জানব একজন গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা সম্পর্কে।

পোস্ট সূচীপত্রঃ গর্ভবতী মায়ের খাবার তারকা

গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা

গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা তার এবং তার মধ্যে বেড়ে ওঠা সন্তানের সুস্থতার ওপর ভিত্তি করেই সাধারণত নির্বাচন করা হয়। একজন নারী যখন গর্ভবতী হয় তখন সব প্রথমে তার মাথায় আসে কি ধরনের খাবার খেলে তার সন্তানের উপকার হবে। সন্তান সুস্থ এবং স্বাস্থ্যবান থাকবে।

একজন নারী গর্ভবতী হলে তখন তার অতিরিক্ত পুষ্টিকর খাবারের চাহিদা বাড়ে, যা সাধারণত সঠিক খাদ্যাভ্যাসের মাধ্যমে তা পূরণ হয়। সাধারণত একজন গর্ভবতী মায়ের খাদ্য তালিকায় অবশ্যই প্রোটিন, আয়রন, ক্যালসিয়াম, ফলিক এসিড, জিংক, আয়োডিন, বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবার থাকা লাগবে।

এছাড়াও তাজা শাকসবজি, ফলমূল, দুধ, ডাল, মাছ, মাংস, ডিম এবং শস্য জাতীয় যেমন লাল চাল বা লাল আটা রুটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মোটকথা একটি সুস্থ সন্তানের জন্য একটি সুস্থ মায়ের প্রয়োজন হয়। কারণ একজন সুস্থ মা-ই একজন সুস্থ সন্তান জন্ম দিতে পারেন। তাই একজন গর্ভবতী নারীর খাবার তালিকা অত্যন্ত পুষ্টিকর হতে হবে। একজন গর্ভবতী নারী কে পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করতে হবে যেন সে হাইড্রেটেড থাকে। নিচে একজন গর্ভবতী নারীর খাদ্য তালিকার কিছু বর্ণনা দেয়া হলো। যেমন-

প্রোটিনঃ একজন গর্ভবতী মায়ের গর্ভাবস্থায় শিশুর জন্য প্রোটিনের ভূমিকা অতিব গুরুত্বপূর্ণ। শিশুর শারীরিক গঠনে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। এটি গর্ভের শিশুর কোষ তৈরি, টিসু বৃদ্ধি এবং মস্তিষ্ক গঠনে সহায়তা করে। এছাড়াও গর্ভকালীন সময়ে গর্ভবতী নারীর হরমোন ও বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের কার্যক্রম সঠিকভাবে পরিচালনা করে। প্রোটিন জাতীয় খাবার যেমন মাছ, ডিম, মুরগির মাংস, গরুর দুধ, কম চর্বিযুক্ত মাংস, ডাল, ছোলা, মসুর, সয়াবিন, চিনা বাদাম, বাদাম, চিয়া সিড, দই, পনি র এবং লো ফ্যাট যুক্ত দুধ প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় রাখতে হবে।

আয়রনঃ একজন গর্ভবতী মায়ের জন্য অবশ্যই আয়রন যুক্ত খাবার প্রয়োজন। আয়রন যুক্ত খাবার সাধারণত শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। তাই আয়রনযুক্ত খাবারের ঘাটতি হলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। অনেক শিশুর জন্মের পরপরই হিমোগ্লোবিন বা শরীরে রক্ত কমে যায়। যার কারণে গর্ভবতী মাকে প্রচুর আয়রন যুক্ত খাবার খাওয়াতে হবে। আয়রনযুক্ত খাবার যেমন- কলমি শাক, পালং শাক, মিষ্টি কুমড়ার শাক, কচুর শাক, কাঁঠালের বীজ, মসুর ডাল, মুরগি বা গরু লিভার, লাল মাংস, ডিমের কুসুম, শিং মাছ, মাগুর মাছ, ইলিশ মাছ রাখতে হবে।

ক্যালসিয়ামঃ ক্যালসিয়াম যুক্ত খাবার একজন গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকার অপরিহার্য খাদ্য উপাদান। কারণ ক্যালসিয়াম সাধারণত শিশুর হাড় গঠনে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। গর্ভস্থ মা যদি সঠিক পরিমাণে ক্যালসিয়াম যুক্ত খাবার না খায় তবে শিশুর হাড় দুর্বল হয়ে যায়। এতে শুধু শিশুর ক্ষতি হবে তা না একজন গর্ভবতী মায়েরও কোমর ও পায়ের গোড়ালিতে ব্যথা অনুভব করে।

গর্ভস্থ শিশুর হৃদপিণ্ড, স্নায়ু এবং মাংসপেশির কার্যক্রমের জন্য প্রতিদিন গর্ভাবস্থায় একজন মায়ের ১০০০-১২০০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়ামের প্রয়োজন হয়। তাই একজন গর্ভবতী মায়ের প্রতিদিনের খাবার তালিকায় সাধারণত অবশ্যই ক্যালসিয়াম জাতীয় খাবার রাখা লাগবে। 

ক্যালসিয়ামযুক্ত খাবার যেমন- গরুর দুধ, দই, পনির, পালং শাক, ব্রকলি, সয়াবিন ছোলা, চিয়া সিড, ছোট মাছ, স্যামন, কমলালেবু কিসমিস আমলকি রাখতে হবে। বিশেষ দুর্বলতার কারণে যদি এসব খাবার খেয়েও ক্যালসিয়ামের অভাব থাকে তাহলে অবশ্যই ডাক্তারের সাথে পরামর্শ রাখতে হবে।

ফলিক অ্যাসিডঃ একজন গর্ভবতী মায়ের জন্য ভিটামিন বি কমপ্লেক্স অর্থাৎ ফলিক এসিড সমৃদ্ধ খাবার খুবই প্রয়োজন। ফলিক অ্যাসিড সাধারণত গর্ভস্থ শিশুর হৃদপিণ্ড, সায়তন্ত্রের সঠিক বিকাশ এবং নিউরাল টিউব ডিফেক্ট (যেমন স্পাইনা বিফিডা) প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। এছাড়াও ফলিক অ্যাসিড রক্ত উৎপাদন, ডিএনএ তৈরি ও কোষ বিভাজনে সাহায্য করে। 

ফলিক অ্যাসিড সমৃদ্ধ খাবার যেমন- পালং শাক, মিষ্টি কুমড়ার শাক, ব্রকলি, বাঁধাকপি, লাল চাল, সয়াবিন, ছোলা, মসুর ডাল, কমলা, বেদানা, পাকা পেঁপে, কলা, সূর্যমুখীর বীজ, তিল, বাদাম, ডিমের কুসুম, গরুর দুধ গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকায় রাখতে হবে।

জিংকঃ জিংক জাতীয় খাবার সাধারণত গর্ভবতী মায়ের শরীরের জন্য গুরুত্বপূর্ণ খনিজ পদার্থ যা গর্ভের শিশুর বৃদ্ধি এবং বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। জিংক গর্ভবতী মায়ের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি এবং হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখে। গর্ভাবস্থায় একজন মায়ের প্রতিদিন ১১-১৩ মিলিগ্রাম জিংক যুক্ত খাবারের প্রয়োজন হয়। কেননা জিংক এর অভাবে সাধারণত গর্ভস্থ শিশুর জন্মগত ত্রুটি, শিশুর ওজন এবং গর্ভকালীন উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বাড়াতে সাহায্য করে।

আয়োডিনঃ গর্ভাবস্থায় একজন গর্ভবতী নারী এবং তার ঘরকে সন্তানের জন্য আয়োডিনযুক্ত খাবার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণত আয়োডিন গর্ভের শিশুর মস্তিষ্ক ও স্নায়ুতন্ত্রের বিকাশের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আয়ডিনের অভাবে শিশুর জন্মগত ত্রুটি, ও মানসিক প্রতিবন্ধী এবং গর্ভপাতের ঝুঁকি বাড়াতে সাহায্য করে। 

গর্ভাবস্থায় প্রতিদিন অন্তত ২৫০ মাইক্রগ্রাম আয়োডিনযুক্ত খাবার খেতে হবে। আয়োডিন সমৃদ্ধ খাবার যেমন আয়োডিনযুক্ত লবণ, ইলিশ মাছ, টুনা মাছ, শ্যামন মাছ, চিংড়ি, দুধ, দই, পনির, লাল চাল, মসুর ডাল, ছোলা, আলু, ব্রকলি, স্ট্রবেরি, ডিমের কুসুম খেতে হবে। একজন নারী যতদিন গর্ভবতী থাকবে সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত এই আয়োডিন সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে। 

ভিটামিন এঃ আমরা প্রায় সবাই জানি ভিটামিন এর অভাবে রাতকানা রোগ হয়। একজন গর্ভবতী নারীকে তার গর্ভাবস্থায় অবশ্যই প্রতিদিন ভিটামিন এ সমৃদ্ধ খাবার দিতে হবে। ভিটামিন শিশুর দেহের বৃদ্ধি ও চর্ম, দাঁতের গঠন, অস্থির গঠনে সাহায্য করে। গর্ভাবস্থায় একজন গর্ভবতী মায়ের প্রতিদিন ৭৫০- ৭৭০ মাইক্রগ্রাম ভিটামিন এ এর প্রয়োজন হয়। 

ভিটামিনের সমৃদ্ধ খাবার গরু বা মুরগির লিভার, ডিমের কুসুম, দুধ এবং দুধ জাতীয় খাবার, গাজর, মিষ্টি কুমড়া, পালং শাক, ব্রকলি, আম, পাকা পেঁপে, কমলা লেবু কাজুবাদাম, মাছের তেল জাতীয় খাবার খেতে দিতে হবে। সঠিক পরিমাণে ভিটামিন এ গ্রহণ গর্ব শিশুর সুস্থ বিকাশ এবং মায়ের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সহায়তা দান করে।

ভিটামিন ডিঃ গর্ভবতী মায়ের খাবারে ভিটামিন ডি এর গুরুত্ব অপরিসীম। ভিটামিন ডি সাধারণত গর্ভস্থ শিশুর হাড় ও দাঁতের গঠনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ভিটামিন ডি শরীরের ক্যালসিয়াম ভিটামিন ডি শরীরের ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস শোষণে সাহায্য করে। ভিটামিন ডি শিশুর ইমিউন সিস্টেম গঠনে সাহায্য করে এবং গর্ভাবস্থায় প্রি- এক্লেমশিয়া, ডায়াবেটিস এবং সময়ের আগে শিশুর জন্মের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। 

ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার যেমন-স্যামন মাছ, টুনা মাছ, চিংড়ি মাছ চিংড়ি মাছ, দুধ, দই, পনির, ডিমের কুসুম, সোয়াদুদ বা বাদাম দুধ খেতে হবে। এছাড়াও ভিটামিন ডি সবচেয়ে প্রতিদিনের সূর্যের আলোতে পাওয়া যায়। প্রতিদিন ১০ থেকে ১৫ মিনিট সরাসরি সূর্যালোকে থাকতে হবে।

গর্ভবতী মায়ের আদর্শ খাবার রুটিনঃ একজন গর্ভবতী মায়ের অবশ্যই একটি আদর্শ খাবার রুটি প্রয়োজন। শুধু শারীরিক ওজন বাড়ালে হবে না একটি আদর্শ খাবার রুটিন আদর্শ খাবারের সাথে থাকতে হবে। উপরে উক্ত খাবারের সাথে সাথে একজন গর্ভবতী মাকে নিয়ম করে খেতে হবে। কারণ গর্ভাবস্থায় বিভিন্ন ধরনের সমস্যা থাকতে পারে। নিচে একজন গর্ভবতী নারীর আদর্শ খাবারের রুটিন দেয়া হলো যেমন-

  • সকালের খাবারঃ একজন গর্ভবতী নারী সাধারণত সকালে দুর্বল ফিল করেন। তাই সকালে ঘুম থেকে উঠে উঠেই ভারি খাবারের প্রয়োজন নাই। সকালে সবার আগে উঠে হালকা হাঁটা চলাফেরা করবেন এবং তারপর হালকা খাবার খাবেন। সকালে রুটি, সিদ্ধ ডিম কিছু কাজ বাদাম, একবারটি সবজি, হালকা মৌসুমী ফল খেতে পারেন। তাছাড়া সকাল ১১ টা থেকে বারোটার মধ্যে এক গ্লাস গরম দুধ, এক বাটি দই এক মুঠো শুকনো ফল খেতে পারেন।
  • দুপুরের খাবারঃ দুপুরে দুপুরে সাধারণত একটু ভারী খাবার খেতে হয়। লাল চালের ভাত বা রুটি, এক বাটি ডাল, মাছ বা মুরগির মাংস, এক বাটি সবজি, সবুজ শাক, এক বাটি সালাত খেতে পারেন। প্রতিদিন খাবার তালিকায় অবশ্যই ভিটামিন সি সমৃদ্ধ একটি কাঁচা মরিচ খাবেন এবং সেই সাথে খাবেন একটু টক দই। এতে খাবার হজমে সহায়তা হবে।
  • বিকালের নাস্তাঃ গর্ভাবস্থায় একজন মায়ের বিকালের নাস্তা টাও অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই সময় এক বাটি সবজি বা চিকেন স্যুপ, কয়েকটি বিস্কুট বা মুড়ি, একটি ছোট মৌসুমী ফল খেতে পারেন।
  • রাতের খাবারঃ একজন গর্ভবতী মায়ের দুপুরের খাবার যেমন গুরুত্বপূর্ণ ঠিক তেমনি রাতের খাবারও বেশ গুরুত্বপূর্ণ। প্রয়োজন অনুযায়ী গর্ভবতী নারী ভাত-বা রুটি খেতে পারে। তবে সাথে শাক বাদ দিয়ে সবজি, ডাল, মাছ বা মাংস খেতে পারেন। বিছানা যাওয়ার আগে অবশ্যই এক গ্লাস গরম দুধ প্রয়োজনে এক চিমটি হলুদ মিশিয়ে খেতে হবে সাথে খেতে হবে এক মুঠো বাদাম।

পরিশেষে বলা যায় যে, একজন গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই সময় একজন মাকে দুইজন মানুষের খাবার খেতে হয়। মাকেও সুস্থ থাকতে হবে সাথে গর্ভের সন্তানের সঠিক বিকাশের জন্য আদর্শ খাবার খেতে হবে। তাই অবশ্যই সচেতনতার সাথে প্রতিদিন ৮ থেকে ১০ গ্লাস পানি পান করতে হবে, ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে, বিভিন্ন প্রক্রিয়াজাত খাবার থেকে দূরে থাকতে হবে, খাবারের লবণ এবং চিনির পরিমাণ কম রাখতে হবে। অবশ্যই একজন চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চলতে হবে।

গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা ছবি 

গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা ছবি অনেক ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। ছবি থেকেও অনেক সময় অনেক সময় অর্জন করি। একজন গর্ভবতী মায়ের বিভিন্ন ধরনের খাবার তালিকা রয়েছে। নিচে সে গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকার কিছু ছবি দেয়া হল 




১ মাসের গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা

১ মাসের গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা সম্পর্কে বলতে গেলে সাধারণত আমরা বলতে পারি যে, একজন নারী গর্ভবতী কিনা তা সাধারণত প্রথম মাসে বোঝা যায় না। গর্ভাবস্থার প্রথম মাস গর্ভধারণের শুরু, যখন গর্ভস্থ শিশুর কোষ বিভাজন এবং প্রাথমিক অঙ্গগঠনের প্রক্রিয়া শুরু হয়। এই সময়টা খুবই ভয়ানক এবং ভয়াবহ। কারণ এই সময় একজন গর্ভবতী মায়ের শারীরিক ও মানসিক ব্যাপক পরিবর্তন ঘটে।

১ মাসে সাধারণত একজন নারীর মাসিক বন্ধ হয় এতে শরীরে ক্লান্তি এবং দুর্বলতা আসে। সকালে বমি বমি ভাব হয়, তান্নি স্পর্শকাতরতা আসে, মেজাজ এর পরিবর্তন হয়। এই এক মাসে মা সাধারণত কিছুটা অনুমান করতে পারে তার গর্ভে সন্তান এসেছে। প্রথম মাসে সাধারণত ভ্রূণের কোষ বিভাজন থেকে শুরু করে প্লাসেন্টার গঠন শুরু হয় যা পরবর্তী সময়ে শিশুর পুষ্টি যোগায়। স্নায়ুতন্ত্র ও হৃদপিন্ডের প্রাথমিক গঠন শুরু হয়।

১ মাসে একজন গর্ভবতী নারীর খাবারে অরুচি আসে খেতে পারেনা। তাই গর্ভধারণের খবর নানার পর সাধারণত ফলিক এসিড, আয়রন, ক্যালসিয়াম যুক্ত সুষম খাবার খেতে হবে। কারণ প্রথম মাস থেকে একটি শিশুর স্নায়ুতন্ত্রের গঠন এবং স্পাইনালাইফিড এর মত জন্মগত সমস্যার সৃষ্টি হয়। তাই গর্ভধারণের খবর বোঝার পর থেকেই একজন গর্ভবতী মাকে অবশ্যই যত খাবার দেওয়া শুরু করতে হবে। কারণ একজন গর্ভবতী নারীর প্রথম তিন মাস গর্ভস্থ শিশুর শারীরিক গঠনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ প্রধান সময়।

তাই ১ মাসে ফলিক এসিড সমৃদ্ধ খাবার যেমন পালং শাক, লেবু, ব্রকলি অবশ্যই খেতে হবে। প্রতিদিন একজন গর্ভবতী নারীকে অবশ্যই ৮-১০ গ্লাস পানি পান করতে হবে। এই সময় খাবারের অরুচি এবং বিভিন্ন অনিয়মের কারণে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা হতে পারে। তাই কোষ্ঠকাঠিন্য এড়াতে বিভিন্ন ধরনের ফল, শাকসবজি এবং শস্যদানা সমৃদ্ধ খাবার দিতে হবে।

 আরও পড়ুনঃ গর্ভাবস্থায় প্রথম ৩ মাসের সতর্কতা 

এই সময় একজন গর্ভবতী নারী বিভিন্ন ধরনের সমস্যায় ভোগে এবং গর্ভের সন্তানের জন্য প্রথম তিন মাস খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যে কোন সামান্য ভুলের কারণে গর্ভপাতের সমস্যা হতে পারে। এই জন্য অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী আয়রন, ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করতে পারেন। বিভিন্ন ধরনের কাঁচা বা আধা সেদ্ধ মাংস, ক্যাফেইন এবং রাসায়নিক যুক্ত খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। গর্ভাবস্থার এই গর্ভাবস্থার এই প্রথম মাসের খাবার তালিকা একজন মায়ের এবং গর্ভস্থ শিশুর সঠিক বিকাশে নিশ্চিত করতে সাহায্য করে।

৩ মাসের গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা

৩ মাসের গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা একজন গর্ভবতী মায়ের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গর্ভাবস্থায় একজন গর্ভবতী নারীর প্রতিটি সময় খুবই মূল্যবান এবং স্পর্শকাতর। বিশেষ করে প্রথম এই তিন মাস একজন শিশুর শরীর গঠনের মূল সময়। একটি শিশুর প্রাইমারি গঠন সাধারণত এই প্রথম তিন মাসেই হয় এবং এই তিন মাসেই বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সম্মুখীনও হয়। 

গর্ভবতী-মায়ের-খাবার-তালিকা

দুর্ভাগ্যবশত এই তিন মাস সতর্ক সাবধান না থাকলে গর্ভকালের ঝুঁকিও বাড়ে । এইজন্য গর্ভবতী মায়ের এই তিন মাস একটু বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়। গর্ভাবস্থার প্রথম তিন মাসের খাবারের উপর একটি সন্তানের দৈহিক কাঠামো গঠন নির্ভর করে এবং একজন গর্ভবতী মায়ের শারীরিক অবস্থাও নির্ভর করে।

একজন গর্ভবতীর প্রথম তিন মাস হল প্রাথমিক সময়। কোন কিছুর তৈরীর ভিক্তি যেমন মজবুত হতে হয় ঠিক তেমনি একটি শিশুর এই প্রথম তিন মাস শারীরিক গঠনের ভিত্তির প্রস্তরের সময়। একজন গর্ভবতী নারীর তিন মাসের খাবার তালিকা একজন গর্ভবতী নারীর তিন মাসের খাবার তালিকা কেমন হবে তা নিচে বর্ণনা করা হলো-

গর্ভাবস্থায় একজন গর্ভবতী নারীর গর্ভধারণের পর তার শরীরে হরমোনের মাত্রা পরিবর্তন হতে শুরু করে। হরমোনের পরিবর্তনের কারণে বমি বমি ভাব শুরু হয়। বিশেষ করে এর সময় প্রোজেস্টেরন হরমোনের নিঃসরণের ফলে খাবার হজম হতে সমস্যা হয় যা কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যায় ভুগতে থাকে। আপনার গর্ভের অনাগত শিশুর প্রথমে অনেক শক্তির প্রয়োজন হয় যা আপনার মাধ্যম থেকেই সে পায়। এজন্যই আপনার শরীর থেকে সে খাদ্য উপাদান গ্রহণ করে। এইজন্য প্রথম তুই মাসিকের খাবার আপনার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিদিন আপনাকে ২০০০ ক্যালোরি খাবার খেতে হবে।

প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবারঃ একজন গর্ভবতী নারীর জন্য তার গর্ভস্থ শিশুর প্রয়োজনে প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে। সকল প্রকার মাছ, মাংস, ডিম পরিমাণ মতো খেতে হবে। বিভিন্ন ধরনের সামুদ্রিক মাছ বা টুনা মাছ না খাওয়াই ভালো। যেসব মাছের মার্কারি লেভেল কম যেসব মাছের মার্কারি লেভেল কম সেসব মাছ খাওয়া যাবে যেমন স্যামন মাছ, ইলিশ মাছ এই ধরনের মাছ খাওয়া যাবে। 

এই সময় একজন গর্ভবতী মাকে ৭০ থেকে ১০০ গ্রাম প্রতিদিন প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার প্রয়োজন। গর্ভাবস্থার প্রথম তিন মাসে চর্বি যুক্ত খাবার পরিহার করতে হবে এবং অবশ্যই পরিমাণমতো দুধ রাখা প্রয়োজন।

আঁশ জাতীয় খাবারঃ একজন গর্ভবতী নারীর জন্য আজযুক্ত খাবার খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিশেষ করে প্রথম ত্রৈমাসিকে। কারণ এই সময়ে সাধারণত গর্ভবতী নারীর খাবার হজমে সমস্যা হয় এবং কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যায় ভুগতে থাকে। এই কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা থেকে দূর হওয়ার জন্য আঁশ জাতীয় খাবার খেতে হবে। আঁশযুক্ত খাবার যেমন লাল চালের ভাত, বাদাম, ওটস, সবুজ মটর, ভুট্টা, ব্রকলি ছোলা, শাকসবজি জাতীয় জাতীয় খাবার খেতে হবে। গর্ভাবস্থার প্রথম তিন মাস ডিহাইড্রেশন মুক্ত থাকার জন্য অবশ্যই পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি খেতে হবে।

ভিটামিন যুক্ত খাবারঃ গর্ভাবস্থার প্রথম তিন মাসে ভিটামিনযুক্ত খাবার একজন গর্ভবতী নারী ও শিশুর জন্য অতাবশ্যকীয়। ভিটামিন এ, বি, সি, ডি ও ভিটামিন নাইন সমৃদ্ধ খাবার খুবই জরুরী। একজন গর্ভবতী মায়ের জন্য প্রথম তিন মাসে ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবার অবশ্যই দিতে হবে।

আয়রন সমৃদ্ধ খাবারঃ একজন গর্ভবতী নারীর জন্য আয়রনসমৃদ্ধ খাবার ভীষণভাবে প্রয়োজন। কারণ আমাদের সমাজের মেয়েরা অনেক ভাবেই দুর্বল হয়ে থাকে। একজন সুস্থ সন্তানের জন্য একজন সুস্থ মায়ের দরকার হয়। তাই একজন গর্ভবতী নারীকে অবশ্যই আয়রন সমৃদ্ধ খাবার দিতে হবে। একজন গর্ভবতী নারীর শরীরে আয়রনের ঘাটতি হলে সাধারণত শিশু অক্সিজেন সঠিকভাবে পায় না। যার ফলে শিশুর শরীর গঠন ও বৃদ্ধিতে সমস্যা হয় এবং প্রিম্যাচিউর ডেলিভারি অনেক সময় হয়ে যায়। তাই আয়রনসমৃদ্ধ খাবার যেমন ডিম, মুরগির মাংস, পালং শাক, কচুর শাক, ছোলা, খেজুর, কলা অবশ্যই খেতে হবে।

ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবারঃ সাধারণত গর্ভস্থ শিশুর হাড় ও দাঁত গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার বলতে প্রথমেই আসে দুধ, দই, পনি, মাছ, শুটকি মাছ, পালং শাক, লাল শাক, ডাটা শাক ডুমুর, ব্রকলি, বাঁধাকপি, চিয়া সিড, বিভিন্ন ধরনের বাদাম ইত্যাদি। প্রথম তিন মাসে গর্ভবতী মা কে ক্যালসিয়াম যুক্ত খাবার প্রচুর পরিমাণে দিতে হবে। কারণ মায়ের শরীরে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি হলে শিশুর শরীরেও ক্যালসিয়ামের ঘাটতি হবে। 

শিশু মায়ের শরীর থেকে ক্যালসিয়াম গ্রহণ করবে যার ফলে মা দুর্বল হয়ে যাবে। এজন্য একজন সুস্থ মায়ের প্রয়োজনে প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়ামযুক্ত খাবার দিতে হবে। এই ক্যালসিয়াম যুক্ত খাবারের পাশাপাশি ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী প্রতিদিন ১০০০ মিলিগ্রাম করে সাপ্লিমেন্ট খেতে হবে যা শিশুর শরীরের বিকাশে সাহায্য করবে।

জিংক সমৃদ্ধ খাবারঃ গর্ভাবস্থার প্রাথমিক পর্যায়ে একজন গর্ভবতী মাকে প্রতিদিন ১১ মিলিগ্রাম জিংক এর প্রয়োজন। জিংক সাধারণত একটি শিশুর শরীর বিকাশে সাহায্য করে। সাধারণত এই সময় চিকিৎসকরা জিংক সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করার জন্য পরামর্শ দেবে। তবে অবশ্যই আপনাকে এই ড্রিঙ্ক সাপ্লিমেন্টের পাশাপাশি জিংক সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে। এজন্য জিংক সমৃদ্ধ খাবার যেমন- ডিম, গরুর মাংস, মুরগির মাংস, দুধ, সিমের বিচি, চিনা বাদাম, কাজুবাদাম, আমন্ড, বিভিন্ন ধরনের ডাল প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় রাখতে হবে।

একজন গর্ভবতী নারীর খাবারের উপরে নির্ভর করে এক শিশুর প্রাথমিক বিকাশ। গর্ভস্থ শিশু কতটা সুস্থ হবে, কতটা মেধাবী তা নির্ভর করে সাধারণত মায়ের খাদ্য তালিকার উপর। যে মা যতটা বেশি খাবার সচেতন হবে তার সন্তান ততটা বেশি সুস্থ এবং নিরাপদ হবে। প্রথম এই তিন মাসে একজন মাকে সবচেয়ে যত্নবান হতে হবে এবং নিজের খাবারের প্রতি যত্নশীল হতে হবে। কারণ এই সময়ে একজন গর্ভবতী নারীর গর্ভপাত বা অন্যান্য গর্ভকালীন সমস্যার দেখা দেয়। এ সময় তাকে অনেক সচেতন হতে হবে।

এই প্রথম তিন মাসে একজন গর্ভবতী মা নিজেকে সুন্দর ও মজবুত করে তৈরি করবে। যাতে তার মাঝ থেকে একটি সুস্থ সন্তান জন্ম গ্রহণ করে। একটি সুস্থ মায়ের একটি সুস্থ সন্তান জন্ম দিতে পারে। জন্মের পর কোন শিশু যদি অপুষ্টিতে ভোগে তার একমাত্র দায়ভার হচ্ছে তার মায়ের। এই জন্য মনে রাখা উচিত একটি শিশুসন্তান খাবার পায় তার মায়ের শরীর থেকে। অপুষ্টিতে ভোগা মা কখনো একজন সুস্থ সন্তান জন্ম দিতে পারবে না। গর্ভবতী মায়ের এই তিন মাসের খাবার তালিকা হতে হবে শক্তিশালী।

 গর্ভবতী মায়ের ফল খাবার তালিকা

গর্ভবতী মায়ের ফল খাবার তালিকা গর্ভস্থ অবস্থার শিশুর বিকাশের জন্য অত্যন্ত জরুরী। গর্ভাবস্থা হচ্ছে একজন নারীর সব জীবনের চাইতে সেরা সময়। এই সময়ে নারীর মনে উঁকি দেয় অনেক ধরনের আশার আলো ও মনের তৃপ্ততা। পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দরতম অনুভূতি মা হওয়া। তাই একজন নারী যখন গর্ভবতী হয় তখন সে বিভিন্ন ধরনের খাবারের প্রতি মনোযোগী হয়। 

গর্ভাবস্থায় খাদ্যাভ্যাসে আসে ব্যাপক পরিবর্তন। বিভিন্ন ধরনের ফল আছে তবে অনেক ফলের মধ্যে কোন ফল তার জন্য উপকারী এটা অনেকেই জানতে চায়। কারণ প্রতিটি মা তার সন্তানের জন্য অনেক সচেতন। এই সময় যেহেতু তার মাধ্যমেই তার সন্তান সব ধরনের পুষ্টিগুণ পায় পারলে সচেতনতার সাথে খাবার খায়। গর্ভাবস্থায় একজন গর্ভবতী মাকে কি কি ফল খাওয়া উচিত তার একটি তালিকা নিম্নে দেয়া হলো-

আপেলঃ আপেল সাধারণত ভিটামিন সি এবং পটাশিয়াম সমৃদ্ধ ফল। আপেলে রয়েছে পেকটিন নামক একটি উপাদান যা আমাদের শরীরে ভালো ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। নিয়মিত এই ফল খেলে সাধারণত পেটের গ্যাস ও এসিডিটির মতো সমস্যা থেকে মুক্ত থাকতে পারে। এইজন্য একজন গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকায় আপেল রাখা খুবই জরুরী।

আপেল সাধারণত রোগ প্রতিরোধ ও শিশুর স্বাভাবিক বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। গর্ভবতী মহিলারা তাদের গর্ভকালীন সময়ে আপেল খেলে তার গর্ভস্থ শিশুর সাধারণত এলার্জি ও হাঁপানি রোগ হাওয়ার সম্ভাবনা থেকে দূরে থাকে। কারণ আপেলের মধ্যে রয়েছে ভিটামিন সি, ভিটামিন এ, ফাইবার, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, আয়রন ও পেকটিনের মত পুষ্টি উপাদান, যা একজন গর্ভবতী নারীর জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একজন গর্ভবতী নারীর প্রতিদিনের খাবার তালিকায় অবশ্যই একটি আপেল রাখা জরুরী।

পেয়ারাঃ খুব সহজলভ্য ও দেশি ফলের মধ্যে প্রথমেই আসে পেয়ারা। পেয়ারা এমন একটি ফল যা সারা বছর এবং হাতের নাগালেই পাওয়া যায়। পেয়ারাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি। এই ফলটি বেশিরভাগ মানুষের বাড়িতেই গাছে পাওয়া যায়। যা অনেক সময় কেনার প্রয়োজনও হয় না। সাধারণত বলা হয় একটি পেয়ারার গুণ সাধারণত চারটি আপেল ও চারটি কমলা লেবুর সমান এবং কোষ্ঠকাঠিন্য  এর মত সমস্যায় বিশেষ ভূমিকা পালন করে। তাই একজন গর্ভবতী নারীর প্রতিদিনের খাবার তালিকায় একটি পেয়ারা অবশ্যই জরুরি।

আরও পড়ুনঃ পিরিয়ডের আগে সাদা স্রাব গর্ভাবস্থার লক্ষণ

কলাঃ গর্ভকালীন অবস্থায় একজন গর্ভবতী নারীর প্রতিদিনের খাবার তালিকায় অবশ্যই একটি কলা রাখতে হবে। কারণ বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে যে কলায় থাকা ফাইবার সাধারণত কোষ্ঠকাঠিন্যে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। সাধারনত কলাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ পটাশিয়াম, যা একজন গর্ভবতী নারীর অত্যন্ত জরুরি।  ইলেক্ট্রোলাইটোসের ভারসাম্য ঠিক রাখার জন্য স্নায়ু এবং মাংসপেশের কাজ সঠিকভাবে চলে। গর্ভাবস্থায় শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাবার কারণে এই কলা অত্যন্ত উপকারে আসে । তাই একজন গর্ভবতী নারীর খাবার তালিকায় কলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।

কমলাঃ কমলাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি। আর এই ভিটামিন সি আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি আয়রন শোষণের উপকারী। একজন গর্ভবতী নারীর প্রতিদিনের খাবার তালিকায় অবশ্যই একটি কমলা রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গর্ভাবস্থায় রক্তের স্বল্পতা দূর করতে কমলালেবুর অবদান অনস্বীকার্য।

কমলা হচ্ছে ফাইবার ও ফলিক এসিডের অন্যতম উৎস। শিশুর ধনের মস্তিষ্ক ও মেরুদন্ডের গঠনের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান আছে এই কমলাতে। তাই অনাগত শিশু সন্তানের আগমনের জন্য একজন গর্ভবতী মাকে প্রতিদিনের খাবার তালিকায় অবশ্যই কমলা রাখা জরুরি। 

অ্যাভোকাডোঃ বর্তমান সময়ের সবচেয়ে পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ একটি ফল এই অ্যাভোকাডো। এই ফলে রয়েছে ভিটামিন কে, ভিটামিন বি, ভিটামিন সি, ফাইবার, ম্যাগনেসিয়াম, কোলিন এবং পটাশিয়াম সমৃদ্ধ একাধিক উপাদান। তাই গর্ভবতী মায়ের প্রতিদিনের খাবার তালিকায় এই অ্যাভোকাডো রাখলে পুষ্টির ঘাটতি অবশ্যই পূরণ হবে। গর্ভবতী মায়েরা প্রতিদিনের খাবার হিসেবে এই ফল খেতে পারেন। যা মানুষের শরীরের প্রয়োজনীয় পুষ্টি জোগাতে সাহায্য করে।

কিউইঃ গর্ভাবস্থায় যেসব ফলের প্রয়োজন তার মধ্যে কেউই একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ফল। এই ফলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি, ভিটামিন ই, ফলিক অ্যাসিড ক্যারোটেনয়েডস ফাইবার এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এসব খাদ্য উপাদান একজন গর্ভবতী নারীর জন্য অপরিহার্য কারণ এটি হার্টের জন্য ভালো এবং গর্ভাবস্থায় কোলেস্টেরলের মাত্রা সঠিক রাখতে সাহায্য করে। এইজন্য একজন গর্ভবতী নারীর প্রতিদিনের খাবার তালিকায় এই ফল রাখা অত্যন্ত জরুরী।

পরিশেষে বলা যায় যে, গর্ভাবস্থায় একজন নারীর খাবারের গুরুত্ব অপরিসীম। মায়ের শরীর সুস্থ থাকলে সে একজন সুস্থ সন্তানের জন্ম দিতে পারবেন। একজন শিশুর দেহের সকল ধরনের গঠন যেহেতু মায়ের গর্ভে হয়, তাই মায়ের খাদ্য তালিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একজন মায়ের খাবারের তালিকায় ফলের গুরুত্ব অপরিসীম। পরিমিত ফল একজন মানুষের শারীরিক ও মানসিক বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে।

 গর্ভাবস্থায় কি কি ফল খাওয়া যাবে না

গর্ভাবস্থায় কি কি ফল খাওয়া যাবে না তা জানা একজন গর্ভবতী নারীর প্রথম এবং গুরুত্বপূর্ণ কাজ। গর্ভধারণের পর একজন নারীর প্রথমেই মনে আসে তার অনাগত সন্তানের জন্য কি খাওয়া যাবে আর কি খাওয়া যাবেনা। কারণ একজন মায়ের শরীর থেকেই একজন শিশু সবকিছু গ্রহণ করে। তাই গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। 

বিভিন্ন কারণে একজন গর্ভবতী মহিলা সব ধরনের ফল খেতে পারেনা। কারণ কোন ফল শরীরে তাপমাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে আবার কোন ধরনের ফল শরীরের প্রয়োজনীয় গুণ বের করে দেয়। তাই একজন গর্ভবতী নারীর জানা দরকার কি ফল খাওয়া যাবে আর কি ফল খাওয়া যাবে না। যে সব ফল খাওয়া যাবেনা তার বর্ণনা নিচে দেয়া হল-

  • আনারসঃ গর্ভাবস্থায় গর্ভবতী মহিলাকে অবশ্যই বিভিন্ন ধরনের উষ্ণ জাতীয় ফল খাবার থেকে দূরে থাকতে হবে। আনারসে বিদ্যমান বিভিন্ন ধরনের পুষ্টিউপাদান ও এন্টিঅক্সিডেন্ট থাকলেও এই ফল খাওয়া গর্ভবতী মহিলাদের উচিত না। আনারসে বিদ্যমান ব্রোমেলিন নামে একটি এনজাইম রয়েছে যা সাধারণত প্রোটিনকে ভেঙে দেয়। ফলে জরায়ুতে অত্যান্ত যন্ত্রণার শুরু হয় যা প্রসব যন্ত্রণার ওপর প্রভাব পড়ে। তাছাড়া অতিরিক্ত আনারস খাওয়ার ফলে ডায়রিয়া হতে পারে যার শরীরে পানি শূন্যতার দেখা দেয়। তাই গর্ভাবস্থায় আনারস এড়িয়ে চলা উচিত।
  • পেঁপেঃ আধা পাকা বা কাঁচা পেঁপে তে রয়েছে ল্যাটেক্স যা গর্ভাপাতের জন্য গভীরভাবে দায়ী। এটি খেলে সাধারণত পেটে টান ধরায় যা প্রসবের আগে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে পেঁপে ভ্রুনের বৃদ্ধিতে প্রভাবিত করে। এর জন্য গর্ভাবস্থায় কোন ভাবে কাঁচা বা পাকা পেঁপে খাওয়া যাবেনা।
  • আঙুরঃ গর্ভাবস্থায় একজন গর্ভবতী নারীকে বিশেষ করে শেষ তিন মাসে অবশ্যই আঙ্গুর খাওয়া যাবে না। আঙুর সাধারণত শরীরে গরম ধরায়। একটি পরিণত পরিমাণে খাওয়া যায় তবে না খাওয়াই ভালো। কারণ আঙ্গুর শরীরে গরম ধরিয়ে প্রসবের বেদনা উঠিয়ে দেয়।
  • তরমুজঃ তরমুজ সাধারণত আমাদের অনেক পছন্দের একটি খাবার। গ্রীষ্মকালের সবচেয়ে লোভনীয় এবং আরামদায়ক খাবার হচ্ছে এই তরমুজ। তরমুজ সাধারণত আমাদের শরীর থেকে টক্সিন বের করে দেয় এবং হাইড্রেট রাখে যার ফলে শিশুর শরীরে প্রভাব ফেলে। এইজন্য গর্ভাবস্থায় একজন গর্ভবতী নারীকে তরমুজ খেতে নিষেধ করে।
  • খেজুরঃ খেজুরে বিদ্যমান আয়রন ও খনিজ পদার্থ থাকার কারণে এটি একটি পুষ্টিকর খাবার। তবে এই পুষ্টিকর খাবারটি একজন গর্ভবতী মহিলাকে খেতে নিষেধ করে। কারণ এটি শরীরের তাপমাত্রা কে বাড়িয়ে দেয় যা একজন গর্ভবতী নারীর জন্য খুবই ক্ষতিকর। এই উচ্চ তাপমাত্রা আবার জরায়ুতে আঘাত করে যা প্রসব বেদনা শুরু করে। যার জন্য গর্ভবতী নারীকে খেজুর খেতে নিষেধ করা হয়।

পরিশেষে বলা যায় যে একজন গর্ভবতী নারীকে অবশ্যই বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকর খাবার থেকে দূরে থাকতে হবে। কোন ধরনের ফ্রোজেন খাবার খাওয়া যাবে না। একজন গর্ভবতী নারীকে অবশ্যই টাটকা ফর্মুল খেতে হবে। আগে থেকে কেটে রাখা ফলমূল খাওয়া যাবে না। কোন ধরনের হিমায়িত ফল খাওয়া যাবেনা। একজন সুস্থ মা একজন সুস্থ সন্তান জন্ম দেয়। তাই একজন গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকায় এই ধরনের ফল রাখা যাবে না।

গর্ভাবস্থায় ফল খাওয়ার সঠিক সময়

গর্ভাবস্থায় ফল খাওয়ার সঠিক সময় এই কথাটি বলতে গেলে অনেকেই মনে করবেন যে ফল খাও কি কোন সময় থাকতে পারে? অবশ্যই পারে, আপনি জানলে অবাক হবেন যে ফল খাওয়ার একটি নির্দিষ্ট সময় আছে। একেবারে সব ফল একসাথে না খেয়ে ভাবে অল্প অল্প করে খাওয়াই ভালো। আর একজন গর্ভবতী নারীকে অবশ্যই নিয়মিত নিয়ম করে সব ধরনের খাবার খাওয়াই ভালো। ফল খাওয়ার সঠিক সময় সম্পর্কে নিচে বর্ণনা দেওয়া হলো-

  • সকালের নাস্তাঃ একজন গর্ভবতী নারীর সকালের নাস্তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু আপনি যদি সকালে ঘুম থেকে উঠে ফল খান তবে অবশ্যই আপনার জন্য তা ক্ষতিকর। আপনি অবশ্যই সকালে হালকা নাস্তা করার পর ফল খাবেন। এতে আপনার শরীরে যথার্থ শক্তি যোগাবে এবং ক্লান্তি দূর করবে। এই জন্য অবশ্যই সকালে হালকা নাস্তা করার পর ফল খাবেন।
  • দুপুরের খাবারঃ সাধারণত দুপুর বেলায় একজন গর্ভবতী নারী যদি ফল রাখেন তাহলে অবশ্যই অনেক পুষ্টিগুণ পাওয়া যায়। এই ফল আপনি অবশ্যই সালাদ আকারে বা জুস আকারে খেতে পারেন। দুপুরবেলায় খাবারের সাথে ফলের সালাদ আপনার মুখের রুচি বাড়াবে সেই সাথে পাবেন পুষ্টিগুণ।
  • বিকালের নাস্তায়ঃ একজন গর্ভবতীর নারীর শরীরে খাবারের পুষ্টিগুণ ভালোভাবে প্রয়োজন। কারণ সে তার শরীরে অন্য আরেকটি শরীর বহন করে তাই খাবারের প্রয়োজনীয়তাও বেশি। গর্ভবতী নারীর খাবারের চাহিদা অন্যান্যদের চেয়ে অনেক গুণ বেশি। তাই বিকালে ফল দিয়ে নাস্তা করার অভ্যাস রাখুন। এতে আপনার শরীরের রক্তের গুজের মাত্ররাও সঠিক থাকবে।
  • রাতের খাবারের পরঃ একজন গর্ভবতী নারী যদি রাতের খাবারের পর একটি ফল খাওয়ার অভ্যাস রাখেন তাহলে তার জন্য এবং তার গর্ভস্থ শিশুর জন্য খুবই উপকারী। রাতে খাবারের পর ফল খেলে ত্বকের সৌন্দর্যতা বৃদ্ধি পায় স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ভালো।

পরিশেষে বলা যায় যে একজন গর্ভবতী নারী স্বাভাবিক মানুষের মত জীবন ধারণ করতে পারে না। তবে প্রতিটি মানুষের জন্যই খাবারের একটি নিয়ম রয়েছে। আপনি যদি নিয়ম করে খাবার খান তাহলে সে খাবারের গুনাগুন আপনি অবশ্যই পাবেন। তাই একজন গর্ভবতী নারীকে অবশ্যই সময় অনুযায়ী ফল খেতে হবে। যা তার এবং তার সন্তানের সুস্থতায় অত্যন্ত উপকারী।

 গর্ভবতী মায়ের নিষিদ্ধ খাবার তালিকা

গর্ভবতী মায়ের নিষিদ্ধ খাবার তালিকা অত্যাধিক গুরুত্বপূর্ণ। একজন নারী গর্ভধারণের পর তার প্রথম এবং মূল কাজ হল সময় মত এবং সঠিক খাবার গ্রহণ করা। কিছু খাবার আছে যা একজন গর্ভবতী মায়ের কোনভাবেই খাওয়া যাবে না। গর্ভবতী মায়ের নিষিদ্ধ খাবারের তালিকার বিবরণ নিচে দেয়া হলো-

গর্ভবতী-মায়ের-খাবার-তালিকা

  • অর্ধ সিদ্ধ মাছঃ গর্ভ অবস্থায় অর্ধ সিদ্ধ মাছ খাওয়া কোনভাবেই নিরাপদ নয়। কারণ অর্ধ সিদ্ধ বা কাঁচা মাছ বিভিন্ন ধরনের ব্যাকটেরিয়া এবং পরজীবীর মাধ্যমে শরীরে জটিল জটিল রোগের সৃষ্টি করতে পারে। ওটা সিদ্ধ মাছের মধ্যে সালমোনিলা, লিস্টেরিয়া, টোক্সোপ্রাজমা, ভিব্রিও ইত্যাদি ক্ষতিকর জীবাণু শরীরের মধ্যে ঢুকে বিভিন্ন ধরনের জটিল রোগের সৃষ্টি করে। FREE TRIAL EXPIREDএগুলো গর্ভের শিশুর বিকাশে বাধা সৃষ্টি করে এবং গর্ভপাতের আশঙ্কা বৃদ্ধি করে। এইজন্য অর্ধ সিদ্ধ মাছ এড়িয়ে চলাই ভালো।
  • অর্ধ সিদ্ধ ডিমঃ একজন গর্ভবতী মায়ের অর্ধ সিদ্ধ ডিম খাওয়া নিরাপদ নয়। কারণ অর্ধশুদ্ধ টিমে সালমোনেলা ব্যাকটেরিয়া থাকতে পারে যা খাদ্যে বিষক্রিয়া ঘটায়। এটি সাধারণত ডায়রিয়া, বমি, পেটে ব্যথা এবং জ্বরের কারণ হতে পারে যা গর্ভবতী মায়ের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। মেয়েটি ডিহাইড্রেশন এবং প্রিম্যাচিউর লেবার সৃষ্টি করতে পারে। এছাড়া কাঁচা বা অর্ধ ডিম শিশুর স্বাভাবিক বিকাশে সমস্যা সৃষ্টি করে। এর জন্য একজন গর্ভবতী মায়ের অর্ধ সিদ্ধ ডিম মোটেও খাওয়া উচিত নয়।
  • অর্ধ সিদ্ধ মাংসঃ সাধারণত গর্ভবতী মায়ের অর্ধ সিদ্ধমাংশ খাওয়া একেবারেই নিরাপদ নয়। এতে Toxoplasma, Salmonella এবং E.coli এর মত ক্ষতিকর পরজীবী ও ব্যাকটেরিয়া থাকে। এটি সাধারণত গর্ভপাত, শিশুর বিকাশে বাধা এবং জন্মগত ত্রুটি তে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। অর্ধ সিদ্ধ মাংসে থাকা ব্যাকটেরিয়া এবং পরজীবী মায়ের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা পেয়ে বাধা দেয় এবং শারীরিক জটিলতা বাড়ায়। তাই গর্ভকালীন সময়ে কখনোই অর্ধশিত মাংস খাওয়া যাবেনা।
  • কাঁচা দুধঃ কাঁচ দুধে অনেক ধরনের জীবাণু থাকতে পারে তাই এটি মানব শরীরের জন্য খুবই ক্ষতিকর। গ্রামের মানুষের ধারণা কাঁচা দুধে অনেক ভিটামিন থাকে আসলে এটি একটি ভ্রান্ত ধারণা। কাঁচা দুধে যেমন ভিটামিন থাকে তেমনি বয়েল দুধেও ভিটামিন থাকে। গাভীর দুধে তাপ দেওয়ার ফলে এর মধ্যে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া গুলো মারা যায়। এই জন্য একজন গর্ভবতী মাকে কখনো দুধ দেয়া যাবে না।
  • অতিরিক্ত চা বা কফিঃ একজন গর্ভবতী মহিলার যদি চাপা কফি খাওয়ার অভ্যাস থাকে তাহলে অবশ্যই গর্ভধারণের পর তা কমিয়ে দিতে হবে। কারণ অতিরিক্ত চাপা কফি শিশুর ওজন বিকাশে বাধা দেয়। সর্বোচ্চ দিনে ১ থেকে ২ বার খাওয়া যেতে পারে তবে এর চাইতে বেশি না।
  • ভাজাপোড়া খাবারঃ গর্ভবতী মায়ের অবশ্যই ভাজাপোড়া খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। কারণ ভাজাপোড়া খেলে গ্যাস বা এসিডিটির সমস্যা হয়। আর একজন গর্ভবতী নারীকে তো অবশ্যই এসিডিটি থেকে দূরে থাকতে হবে। তাড়াতাড়ি ভাজাপোড়া খাওয়া মোটেও ঠিক নয়।
  • মসলাযুক্ত খাবারঃ একজন গর্ভবতী নারীকে অতিরিক্ত মসলাযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। অতিরিক্ত মসলাযুক্ত খাবার খেলে গ্যাসের সমস্যা হয় যা একজন গর্ভবতী নারীর জন্য খুবই সমস্যা। তাই মসলাযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলতে হবে।
  • ধূমপান বা মদ পানঃ গর্ভবতী মায়ের ধূমপান বা মদ পান করা থেকে বিরত থাকতে হবে কারণ এটি গর্ভের শিশুর স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। ধূমপানে থাকা নিকোটিন এবং কার্বন-মনোক্সাইড শিশুর অক্সিজেন সরবরাহ করতে বাধা দেয় যা কম ওজনের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। তাই গর্ভাবস্থায় ধূমপান ও মধ্যপ্রাণ সম্পূর্ণভাবে এড়িয়ে চলা উচিত।

পরিশেষ বলা যায় যে একজন গর্ভবতী নারী সব সময় সব ধরনের খাবার খেতে পাই না। কারণ তার মাঝে বাস করে অন্য আরেকটি জীবন। এবং তার খাবারের সাথে জড়িয়ে আছে সেই শিশুর সবকিছু। এই জন্য একজন গর্ভবতী মায়ের সব ধরনের খাবার খাওয়া যায় না।

গর্ভবতী মায়ের কিছু গুরুত্বপূর্ণ টিপস

  • গর্ভবতী মায়ের কিছু গুরুত্বপূর্ণ টিপস মেনে চলা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। গর্ভাবস্থায় একজন নারী কি করবে, কি খেতে পাবে কি খেতে পাবে না সবকিছুই তাকে নিয়ম অনুযায়ী করতে হবে। কিছু গুরুত্বপূর্ণ টিপস নিচে দেয়া হল-
  • প্রতিদিনের খাবারে প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, ফ্যাট, ভিটামিন, মিনারেল এবং ফাইবার অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। শাক-সবজি, পূর্ণ শস্য, দুগ্ধজাত খাবার এবং প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার নিয়মিত খেতে হবে
  • গর্ভাবস্থায় আয়রনফরিক অ্যাসিড শরীরে রক্তের পরিমাণ বাড়াতে এবং স্নায়ুতন্ত্রের বিকাশের সাহায্য করে। এজন্য পালংশাক, ব্রকলি, লেবু, ডাল, মাছ, ডিম খেতে হবে।
  • হারো দাঁতের গঠনের সহায়তা করে এবং ভিটামিন ডি ক্যালসিয়াম শোষণের সাহায্য করে। দুধ, দই পনির, সূর্যালোক, সামুদ্রিক মাছ খেতে হবে
  • গর্ভাবস্থায় পানি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ডিহাইড্রেশন রক্ষা করার জন্য প্রতিদিন অন্তত ৮-১০ গ্লাস পানি পান করতে হবে। ডিহাইড্রেশন রোধে ফলের রস, নারকেল পানি এবং লেবুর রস খেতে হবে।
  • গর্ভাবস্থায় বমি বা পুষ্টি নিশ্চিত করতে পাঁচ থেকে ছয় বেলা খাবার গ্রহণ করতে হবে
  • বিভিন্ন ধরনের প্রক্রিয়াজাত খাবার যেমন চিপস, জাঙ্ক ফুড, সফট ড্রিঙ্কস খাবার পরিহার করতে হবে
  • ক্যাফিন যুক্ত খাবার সীমিত পরিমাণে গ্রহণ করতে হবে এবং অ্যালকোহল এড়িয়ে চলতে হবে
  • তেল মসলাযুক্ত খাবার গ্যাস বা অ্যাসিডিটি এড়াতে খাবার পরিহার করতে হবে
  • গর্ভাবস্থায় সোজা হয়ে না শুয়ে বাম কাতে ঘুমাতে হবে
  • সব সময় চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী আয়রন, ক্যালসিয়াম, ফলিক এসি ড বা বিভিন্ন ধরনের সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করতে হবে
  • সবসময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন খাবার খেতে হবে
  • রান্নার আগে সবকিছু ভালোভাবে পরিষ্কার করে ধুতে হবে
  • মানসিকভাবে চাপমুতো থাকতে হবে

মন্তব্যঃ গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা

গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা সম্পর্কে আপনাদেরকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দেওয়ার চেষ্টা করেছি। মায়ের স্বাস্থ্য এবং গর্ভস্থ শিশুর সঠিক বিকাশের জন্য সুষম খাবার এবং উপুষ্টিকর খাবার খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আখেরি লেখায় গর্ভবতী মায়ের খাবারের তালিকা, প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান এবং সচেতন বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। স্বাস্থ্য এবং সন্তানের সঠিক বিকাশ নিশ্চিত করতে পুষ্টিকর খাবার এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অবশ্যই মেনে চলতে হবে।

আমার এই লেখাটি আপনাকে অনেক সহায়তা প্রদান করবে। একজন গর্ভবতী মায়ের সবচেয়ে বড় পাওয়া হলো একজন সুস্থ সুন্দর সন্তান। প্রতিটি গর্ভবতী মায়ের চিন্তা শুধুমাত্র তার গর্ভের সন্তান। আপনার গর্ভকালীন যাত্রা হোক আনন্দময় এবং স্বাস্থ্যসম্মত। আশা রাখি আপনারা ভালো থাকবেন এবং পরবর্তী সময়ে দেখাবে আবারও কোন একটি পোস্টে বা ব্লগে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

প্রশ্ন ২৪ ব্লক এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url