অ্যামনিওটিক ফ্লুইড বা গর্ভের পানি কমে যাওয়ার কারণ ও লক্ষণ
অ্যামনিওটিক ফ্লুইড বা গর্ভের পানি কমে যাওয়ার কারণ ও লক্ষণ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চান? তাহলে আপনি সঠিক জায়গায় এসেছেন। আজকের আমরা আমাদের এই ব্লগে জানবো গর্ভাবস্থায় এই সমস্যা কেন হয় বা এর প্রভাব কি এবং এই সমস্যার কোন চিকিৎসার প্রয়োজন আছে কিনা।
গর্ভাবস্থায় পানি খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। এই পানির উপরেই একটি শিশু তার মায়ের গর্ভে বসবাস করে। তাই গর্ভাবস্থায় পানি কমে যাওয়ার কারণে যে সমস্যাগুলো হয় তার চিকিৎসার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে সঠিক তথ্য পেতে আমাদের এই ব্লকটি আজকে আপনাদের জন্য। তাহলে চলুন দেখে নেওয়া যাক।
পোস্ট সূচীপত্রঃ অ্যামনিওটিক ফ্লুইড বা গর্ভের পানি কমে যাওয়ার কারণ ও লক্ষণ বিস্তারিত
- অ্যামনিওটিক ফ্লুইড বা গর্ভের পানি কমে যাওয়ার কারণ ও লক্ষণ
- গর্ভাবস্থায় পানি কমে গেলে করণীয়
- গর্ভাবস্থায় পানি ভাঙার লক্ষণ বিস্তারিত
- গর্ভাবস্থায় কত লিটার পানি পান করা উচিত
- গর্ভাবস্থায় পানি কমে যাওয়ার লক্ষণ
- গর্ভাবস্থায় পানির মত সাদা স্রাব
- পলিহাইড্রামনীওস বা গর্ভাবস্থায় পেটে পানি বেড়ে গেলে করণীয়
- গর্ভাবস্থায় বাচ্চার অক্সিজেন কমে গেলে করণীয়
- অ্যামনিওটিক ফ্লুইড কত সেন্টিমিটার থাকা স্বাভাবিক
- মন্তব্যঃ অ্যামনিওটিক ফ্লুইড বা গর্ভের পানি কমে যাওয়ার কারণ ও লক্ষণ
অ্যামনিওটিক ফ্লুইড বা গর্ভের পানি কমে যাওয়ার কারণ ও লক্ষণ
পলিহাইড্রামনিওস বা গর্ভের পানি কমে যাওয়ার কারণ ও লক্ষণ সম্পর্কে জানা আমাদের খুবই জরুরী। আমাদের গর্ভে যে পানি থাকে তা সাধারণত অ্যামনিওটিক ফ্লুইড নামে পরিচিত। এই পানি ভ্রুনের সঠিক বিকাশ ও সুরক্ষার জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ। পলিহাইড্রামনিওস (অতিরিক্ত পানি) বা গর্ভের পানি কমে যাওয়ার বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে। পলিহাইড্রামনিওস বা পানি কমে যাওয়ায় এ কারণ ও লক্ষণগুলো সম্পর্কে নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো-
অ্যামনিওটিক ফ্লুইডঃ অ্যামনিওটিক ফ্লুইড হল মাতৃগর্ভে গর্ভের শিশুকে ঘিরে থাকা একটি স্বচ্ছ তরল যা তাকে সুরক্ষা ও পুষ্টি প্রদান করে। এই প্রক্রিয়া গর্ভাবস্থার শুরুতে মায়ের রক্ত থেকে তৈরি হয় এবং পরে শিশুর প্রসাব, ফুসফুস ও ত্বকে তরল দিয়ে পরিমাণ বজায় থাকে। এই ফ্লুইড শিশুর নড়াচড়া তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ এবং বিভিন্ন ধরনের আঘাত থেকে রক্ষা করে। স্বাভাবিকভাবে এর পরিমাণ ৮০০-১০০০ হলেও কমে গেলে (অলিগোহাইড্রামনিওস) বা বেড়ে গেলে (পলিহাইডনিওস) জটিলতার সৃষ্টি ঘটতে পারে। তাই গর্ভাবস্থায় একজন গর্ভবতী মাকে তার শিশুর সুরক্ষার জন্য নিয়মিত পর্যবেক্ষণ ও চিকিৎসকের নির্দেশনা অনুসরণ করতে হবে।
অ্যামনিওটিক ফ্লুইড বা গর্ভের পানি কমে যাওয়ার এর কারণঃ সাধারণভাবে বলা যায় যে, অ্যামনিওটিক ফ্লুইড হল গর্ভাবস্থায় মায়ের পেটে ভ্রূণের বড় হওয়ার জন্য যে লিকুইড এর প্রয়োজন হয় তাকে বোঝানো হয়। অ্যামনিওটিক ফ্লুইডগর্ভের পানি কমে যাওয়ার বিভিন্ন ধরনের কারণ থাকতে পারে যা নিচে বর্ণনা করা হলো-
ভ্রুনের কারণঃ অ্যামনিওটিক ফ্লুইড বা গর্ভের পানি কম হওয়ার ফলে ভ্রূণের প্রসাব উৎপাদনে সমস্যা হয় বা কিডনির সঠিক বিকাশ হয় না। এছাড়াও ভ্রুনের খাদ্যনালি বন্ধ থাকলে পানি গলাধঃকরণে বাধা পায় ফলে পানি জমে থেকে যায়। জিনগত ত্রুটি যেমন ক্রোমোজোমের অস্বাভাবিকতা বা মস্তিষ্কের গঠনগত সমস্যা হয়। পেটে যমজ সন্তান থাকলে ”টুইন- টু-টুইন ট্রান্সফিউশন সিনড্রোম” দেখাইতে পারে। যার ফলে একটি ভ্রূণ বেশি পানি পায় এবং অন্য ভ্রূণ টি কম পানি পায়।
মায়ের কারণঃ মায়ের শরীরের ডিহাইড্রেশন বা পানির অভাব হয় এই অ্যামনিওটিক ফ্লুইড বা গর্ভের পানি কম থাকলে। এছাড়াও দীর্ঘস্থায়ী উচ্চ রক্তচাপ, প্রি এক্লেমশিয়া এবং ডায়াবেটিসও এই সমস্যাগুলো সৃষ্টি করতে পারে। পানি কমে যাওয়ার ফলে বিভিন্ন ধরনের ঝুঁকে যেমন গর্ভাবস্থায় সাধারণত সংক্রমণ (ইনফেকশন) যেমন টকসোপ্লাজমোসিস বা রুবেলার মতো বিভিন্ন ধরনের রোগ দেখা দেয়। রক্তের অমিল এবং প্লাসেন্টার কার্যক্ষমতা রাত পেলেও গর্ভের পানি কমতে পারে এবং মায়ের স্বাস্থ্যের অবনতি ভ্রুনের বৃদ্ধিকে বিভিন্নভাবে প্রভাবিত করে।
গর্ভাবস্থার কারণঃ গর্ভাবস্থায় অ্যামনিওটিক ফ্লুইড অর্থাৎ গর্ভের পানি কমে যাওয়ার কারণে সময়ের আগে পানি থলি ফেটে যাওয়া যা ভ্রূণের পানিরাজ করে। প্লাসেন্টার কার্যক্ষমতা রাজ পেলে শিশুর কাছে যথেষ্ট পুষ্টি ও অক্সিজেনের অভাব হয় পৌছাতে পারেনা ফলে পানি কমে যায়। জমজ সন্তান ধারণের ক্ষেত্রে টুইন- টু- টুইন ট্রান্সফিউশন সিনড্রোম হল এক শিশুর পানি কমে যেতে পারে আরেক শিশু বেশি পানি পেতে পারে। গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত রক্ত বা অন্যান্য জটিলতাও দেখা দিতে পারে।
অ্যামনিওটিক ফ্লুইড বা গর্ভের পানি কমে যাওয়ার সৃষ্ট জটিলতাঃ সাধারণত প্রর্ভাবস্থায় গর্ভের পানি কমে গেলে বিভিন্ন ধরনের জটিলতার সৃষ্টি হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য জটিলতাগুলো নিম্নে আলোচনা করা হলো। যেমন-
- অ্যামনিওটিক ফ্লুইডের অভাবে সাধারণত শিশুর অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিশেষ করে ফুসফুস ও হাড়ের বিকাশ সঠিকভাবে হতে পারে না।
- নাভিরজ্জু চাপে পড়ে শিশুর কাছে রক্ত ও অক্সিজেন সরবরাহে বাধাগ্রস্ত হয়।
- পানি কমে গেলে সাধারণত প্রসব দীর্ঘ হতে পারে এবং সি-সেকশনের প্রয়োজন হতে পারে।
- প্লাসেন্টার কার্যক্ষমতা কমে যায় অর্থাৎ শিশুর জন্য পুষ্টি ও অক্সিজেন সরবরাহ হ্রাস পায় যার ফলে তার শারীরিক বিকাশে বিশেষভাবে প্রভাব ফেলে।
- শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা হয় অর্থাৎ অ্যামনিওটিক ফ্লুইড ফুসফুসে বিকাশের সাহায্য করে যার ফলে শিশুর শ্বাস প্রশ্বাসের জটিলতা দেখা দেয়।
- জরায়ুর অভ্যন্তরে পানি না থাকলে শিশুর মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে এমনকি প্রাণহানিও ঘটতে পারে।
- গর্ভের যে ফুটাকে জরায় দেয়াল থেকে আগেই আলাদা হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে।
অ্যামনিওটিক ফ্লুইড বা গর্ভের পানি কমে যাওয়ার লক্ষণ সমূহঃ গর্ভাবস্থায় একজন গর্ভবতী নারীর পেটের মধ্যে পরিমাণ মতো পানি থাকে যেখানে ভ্রুণ বিকাশ লাভ করে। এই পানি পর্যাপ্ত না থাকলে ভ্রুনের বা পেতে থাকার শিশুর বিভিন্ন ধরনের ক্ষতি হতে পারে। আর এই পানি কমে যেতে থাকলে বিভিন্ন ধরনের লক্ষণসমূহ দেখা যায়। সেই লক্ষণ সমূহ নিম্নে বিস্তারিত বর্ণনা করা হলো। যেমন-
- কোন গর্ভবতী নারীর পেটে অস্বাভাবিক চাপ বা সংকোচন অনুভব করলে বুঝতে হবে জরায়ুর পানি কমে গেছে। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ কারণ জরায়ুর পানি কমে গেলে পেট শক্ত ও টানটান অনুভূত হয়।
- গর্ভবতী নারীর পেটে পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি না থাকলে গর্ভস্থ শিশুর নড়াচড়া কমে যায় অর্থাৎ সীমিত হয়ে পড়ে।
- সাধারণত গর্ভের পানি কমে গেলে পেটের আকার অর্থাৎ পেটের মাপ ছোট হয়ে যায়।
- গর্ভের বাচ্চা ৩৪-৩৬ সপ্তাহ হয়ে গেলে সাধারণত অনেক সময় অ্যামনিওটিক ফ্লুইড স্বাভাবিক এর চাইতে কম হয়ে যায়।
- গর্ভের পানি কম হওয়ার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ হল শ্বাসকষ্ট অনুভূত হতে পারে বিশেষ করে গর্ভাবস্থার শেষ দিকে।
- আল্ট্রা সাউন্ড এর মাধ্যমে অ্যামনিওটিক ফ্লুইড ইনডেক্স পরিমাপ করলে পানির ঘাটতি নিশ্চিত হতে পারে।
- গর্ভাবস্থায় গর্ভবতী নারীর পেটে পানি কম থাকলে সাধারণত পেট ব্যথা বা ভারী ভাব অনুভূত হতে পারে
অ্যামনিওটিক ফ্লুইড এর প্রতিকার ও চিকিৎসাঃ পলিহাইড্রামনিওস বা গর্ভের পানি কমে যাওয়া মা ও শিশুর জন্য খুবই ক্ষতিকর যা সুস্থতার জন্য দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে। এই প্রতিকার ও চিকিৎসার সম্পর্কের বিস্তারিত বর্ণনা নিচে দেওয়া হল। যেমন-
- গর্ভাবস্থায় অ্যামনিওটিক ফ্লুইড ইনডেক্স মাপার জন্য সময়মত প্রতিনিয়ত আল্ট্রাসাউন্ড করতে হবে।
- গর্ভস্থ শিশু সঠিকভাবে নড়াচড়া, হৃদস্পন্দন এবং বৃদ্ধি হচ্ছে কিনা তা পর্যবেক্ষণ করতে হবে।
- মায়ের শরীর যেন ডিহাইড্রেশন না হয় তার জন্য মাকে প্রচুর পরিমাণে পানি খেতে হবে।
- শরীরে পানির পরিমাণ ঠিক রাখার জন্য প্রয়োজনে স্যালাইন খেতে দিতে হবে।
- মায়ের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য ডায়াবেটিস বা উচ্চ রক্তচাপ থাকলে তা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
- বিভিন্ন ধরনের সংক্রমণ থাকলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী এন্টিবায়োটিক সেবন করতে হবে।
- প্রসাবের সময় নরমাল স্যালাইন বা লেক্টেড রিঙ্গার্স ফ্লুইড জড়াতে প্রয়োগ করে পানির মাত্রা বৃদ্ধি করতে হবে।
- শিশুর ফুসফুস যাতে দ্রুত বিকাশ লাভ করে তার জন্য ইস্টরয়েড ইনজেকশন দিতে হতে পারে।
- যদি গর্ভাবস্থায় মায়ের পরিস্থিতি গুরুতর হয় তাহলে অবশ্যই চিকিৎসককে সময়মতো সিজারিয়ান বা নরমাল ডেলিভারির সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
- পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে হবে এবং অবশ্যই মাকে পুষ্টিকর খাবার খেতে দিতে হবে।
- ফলমূল শাকসবজি এবং প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় অবশ্যই রাখতে হবে।
- যদি জমজ সন্তান ধারণ করেন তবে অবশ্যই পানি কমে যায় তাই এর পরিমাণ বেশি খেতে হবে এবং বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানে লেজার থেরাপি বা অন্যান্য চিকিৎসা দিতে হতে পারে।
- যে কোন অস্বাভাবিক লক্ষণ দেখা দিলে অবশ্যই দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
- যে কোন সমস্যায় নিজে ওষুধ খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে এবং অবশ্যই সঠিক চিকিৎসকের ব্যবস্থা নিতে হবে।
পরিশেষে বলা যায় যে, পলিহাইড্রামনিওস বা গর্ভের পানি কমে যাওয়া একজন গর্ভবতী নারী এবং শিশুর জন্য কঠিন জটিল অবস্থা। এর বিভিন্ন কারণের মধ্যে মায়ের সাথের অবস্থা গর্ভস্থ শিশুর জিনগত ত্রুটি বা প্রসাবে সমস্যা সহ অন্যান্য কারণ থাকতে পারে। এর লক্ষণ গুলোর মধ্যে পেটের অস্বস্তি, শিশুর নড়াচড়া কমে যাওয়া পানি কম ধরা পড়া। সঠিক সময়ে চিকিৎসা এবং নিয়মিত পর্যবেক্ষণ গর্ভাবস্থায় সমস্যার সমাধান এবং মা ও শিশুর সুস্থতা নিশ্চিত করতে সাহায্য করে।
গর্ভাবস্থায় পানি কমে গেলে করণীয়
গর্ভাবস্থায় পানি কমে গেলে করণীয় হল সবার প্রথমে আমাদেরকে বুঝতে হবে বা জানতে হবে পানি কমার কি কারনে। কারণ গর্ভের ভেতর শিশু তরলের মধ্যে জীবন যাপন করে। সেই তরলের যদি কমে যাওয়ার কারণ না জানতে পারি তাহলে গর্ভের শিশুর মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। সাধারণত গর্ভস্থ শিশুর প্রায় ১২ দিনের মধ্যেই অ্যামনিওটিক ফ্লুইড তৈরি হওয়া শুরু হয়। এই অ্যামনিওটিক ফ্লুইড যার মধ্যে মানব শিশু মাতৃগর্ভে থাকে।
গর্ভাবস্থায় পানি কমে যাওয়া একটি গুরুতর সমস্যা। সাধারণত লিকুইড হিপোমনিওসিস পরিস্থিতি আসলে গর্ভাবস্থায় ভ্রূণ চারপাশে থাকা পানি কমে যাওয়ার কারণে হয় এবং একটি গর্ভাবস্থায় বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দেয়। সাধারণত গর্ভধারণের ৩৪-৩৬ সপ্তাহের মধ্যে পানির পরিমাণ বেড়ে প্রায় এক লিটারের মত হয়। এই পানি শিশু ভূমিষ্ঠ হওয়ার আগ পর্যন্ত ধীরে ধীরে কমতে থাকে। গর্ভাবস্থায় পেটে পানি কমে যাওয়ার কারণ কখনোই বলা যায় না বা বোঝা যায় না। তবে কিছু কারণ থাকে যেমন-
প্রাকৃতিক কারণেঃ সময়ের সাথে সাথে পানি কিছুটা কমতে থাকে বিশেষ করে যদি গর্ভাবস্থা দীর্ঘ হয়।
- গর্ভাবস্থায় জটিলতাঃ হাইপারটেনশন, ডায়াবেটিস বা অন্যান্য শারীরিক জটিলতা থাকলে সাধারণত মায়ের শরীরের পানি কমে যেতে পারে।
- গর্ভাবস্থায় সংক্রমণঃ গর্ভাবস্থায় যদি গর্ভে কোন ধরনের সংক্রমণ ঘটে তাহলে অমনিওটিক ফ্লুইড কমতে থাকে।
- ভ্রুনের সমস্যাঃ গর্ভধারণের পর যদি ভ্রুনটির কোন সমস্যা হয় বা কোন ধরনের ত্রুটির স্বীকার হয় তবে ধীরে ধীরে পানি কমে যায়।
- অতিরিক্ত শারীরিক চাপঃ গর্ভধারণের পর যদি অতিরিক্ত শারীরিক কার্যকলাপ বা কোন দুর্ঘটনার শিকার হয় তাহলে পানি কমতে থাকে।
- অতিরিক্ত ওজনঃ গর্ভাবস্থায় আবার অতিরিক্ত ওজন বা বিশেষ শারীরিক সমস্যা থাকার কারণে ও শরীরে পানির ঘাটতি হতে থাকে।
গর্ভাবস্থায় পানি কমে যাওয়ার লক্ষণঃ গর্ভাবস্থায় যেহেতু একজন গর্ভবতী নারীসহ তার গর্ভের শিশুর জন্য পানি অপরিহার্য তাই অবশ্যই পানি কমে যাওয়ার লক্ষণ গুলোর উপর গুরুত্ব দিতে হবে। দেখতে হবে গর্ভবতী নারীর কোন ধরনের পানি কমে যাওয়ার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে কিনা। গর্ভাবস্থায় পানি কমে যাওয়ার প্রথম লক্ষণ হল মলদ্বারের বাইরে থেকে কিছু পানি পড়া বা তাজা পানি লিক হওয়া। যদি গর্ভাবস্থায় পানি কমে যায় তবে কিছু কিছু নারীর ক্ষেত্রে বাগা দিয়ে ব্যথা অনুভব করতে থাকে। আবার অনেক সময় গর্ভের বাচ্চার নড়াচড়া কমে যায়। পানির পরিমাণটি সঠিকভাবে নড়াচড়া করতে পারে না তাই এই লক্ষণটি হলো অনেক গুরুত্বপূর্ণ।
গর্ভাবস্থায় পানি কমে গেলে করণীয়ঃ গর্ভাবস্থায় পানি কমে যাওয়ার লক্ষণগুলো দেখা দিলে অবশ্যই আপনাকে এর যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। তা গর্ভবতী মা ও গর্ভস্থ শিশুর দুজনেরই মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। করণীয়গুলো হলো-
- দ্রুত চিকিৎসক বা মায়ের স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের সাথে যোগাযোগ করুনঃ গর্ভধারণের পর অবশ্যই একজন ডাক্তারের পরামর্শে রাখতে হবে। গর্ভাবস্থায় পানি কমে যাওয়া একটি জরুরী পরিস্থিতি। তাই এমন পরিস্থিতি হলে অবশ্যই দ্রুত চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।
- হাসপাতালে যাওয়াঃ একজন গর্ভবতী নারীর জন্য যেহেতু একটি গুরুতর সমস্যা হতে পারে তাই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে।
আরও পড়ুনঃ বুকের দুধ বৃদ্ধির ১০টি ঘরোয়া উপায়
- অমনিওটিক ফ্লুইড চেক করাঃ যেহেতু বাচ্চা মায়ের গর্ভে অমনিওটিক ফ্লুইডের ভেতরেই থাকে তাই অবশ্যই চিকিৎসক অমনিওটিক ফ্লুইড এর মাত্রা পরিমাপ করবেন এবং প্রয়োজনে আল্ট্রাস সাউন্ড এর মাধ্যমে পরীক্ষা করবেন।
- ডেলিভারি পরিকল্পনাঃ যদি দেখেন গর্ভবতী নারীর পানি কমে যাচ্ছে যার ফলে ভ্রূণের স্বাস্থ্যের ঝুঁকি থাকে। এ কারণে পানির পরিমাণ কমে যাওয়ার বুঝতে পারলে বাচ্চা ডেলিভারি করার জন্য ব্যবস্থা নিভাবে হয় সিজারিয়ান ডেলিভারি না হলে অন্যান্য চিকিৎসা প্রক্রিয়া নির্ধারণ করতে হবে।
- বিশ্রাম নেওয়াঃ অতিরিক্ত শারীরিক চাপের কারণেও অনেক সময় পানি কম হওয়ার কারণ হতে পারে তাই পর্যাপ্ত পরিমাণ বিশ্রাম নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
- পানি ও পুষ্টি নিয়ন্ত্রণ করাঃ যেহেতু শরীরে পানি কমে গেছে তাই পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি ও পুষ্টি গ্রহণ করার জন্য নিশ্চিত করতে হবে।
পরিশেষে বলা যায় যে, গর্ পানি কমে গেলে অবশ্যই আপনাকে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী পানি বৃদ্ধির জন্য ফ্লুইড রিস্টোরেশন করতে পারেন। তারপরও যদি গর্ভস্থ শিশু হুমকির মধ্যে থাকে তবে অবশ্যই দ্রুত ডেলিভারির ব্যবস্থা করতে হবে। এই পরিস্থিতির সর্বোত্তম পরামর্শ হলো অবশ্যই দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে এবং যেকোনো ধরনের দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে।
গর্ভাবস্থায় পানি ভাঙার লক্ষণ বিস্তারিত
গর্ভাবস্থায় পানি ভাঙার লক্ষণ একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া যা সাধারণত সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার পূর্বে ঘটে অর্থাৎ প্রসবের পূর্বে ঘটে।, এটি সাধারণত গর্ভের শিশুকে ঘিরে থাকা অ্যামনিউটিক স্যাক বা থলিটির ফেটে যাওয়ার ফল। এই অবস্থার ফলে অ্যামনেউটিক ফ্লুইড বের হয়ে যায় যাকে পানি ভাঙ্গা বলা হয়। এই পানি ভাঙার কিছু লক্ষণ রয়েছে যেমন-
একজন গর্ভবতী নারী প্রথমে হালকা পানির মতো বা তরলের ফোঁটা ফোটার মত বের হওয়ার টের পাবেন। আবার এটি হঠাৎ করে বড় প্রবাহের মতো হতে পারে। আর এই তরল সাধারণত পরিষ্কার বা হালকা হলুদ রঙের এবং কিছুটা মিষ্টি গন্ধযুক্ত হয়। যদি তরল বের হওয়া শুরু হয় তবে এটি সাদা প্রসাবেত হয় না এটি খামার বদলে ধীরে ধীরে বের হতে থাকে বিশেষ করে দাঁড়ানোর সময় হঠাৎ বসা থেকে উঠার সময় এই তরল টা বেশি বের হয়।
অনেক ক্ষেত্রে এই লিকুইড বের হওয়ার সময় ব্যথা নাও থাকতে পারে। তবে পানি ভাঙ্গার পরপরই প্রসাবে ব্যথা হতে পারে। আবার অনেক ক্ষেত্রে অনেকেরই ব্যথা দেরিতে শুরু হতে পারে। পানি ভাঙ্গার পর অনেকেরই এই স্যারের গন্ধ বা রং যদি অস্বাভাবিক হয় তবে বুঝবেন এটি সেসুর সংক্রমনের ইঙ্গিত বহন করছে। এক্ষেত্রে দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে এবং ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
যদি গর্ভকালীন ৩৬-৩৭ সপ্তাহের আগে পান ভাঙ্গে তবে এটি প্রিম্যাচিউর রাপচার অফ মেম্ব্রন হিসেবে পরিগণিত হয়। এই অবস্থায় অতিরিক্ত সতর্কতার সাথে দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা প্রয়োজন। গর্ভবতী নারী পানি ভাঙ্গার পর কোন সময় নষ্ট না করে সরাসরি চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। কারণ এই সময় গর্ভের শিশুর সংক্রমণ ঝুঁকি মধ্যে পড়ে এবং প্রসাব প্রক্রিয়া দ্রুত শুরু করার প্রয়োজনও হতে পারে।
পরিশেষে বলা যায় যে, গর্ভবতী নারীর শরীরে পানি ভাঙ্গা খুবই জটিল বিষয়। যদি ডেলিভারির পূর্বমুহূর্তে এই পানি ভাঙ্গে কি করেছি কিন্তু তাহলে বুঝবেন এটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। আর যদি প্রসবকালীন সময়ের আগেই এই পানি ভাঙ্গে তাহলে এটি গর্ভবতী এবং গর্ভস্থ শিশুর জন্য খুব ক্ষতিকর। পানির ধরনটা বুঝতে হবে এবং খুব দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
গর্ভাবস্থায় কত লিটার পানি পান করা উচিত
গর্ভাবস্থায় কত লিটার পানি পান করা উচিত এটি প্রতিটি গর্ভবতী মায়ের জানা ভীষণ জরুরী। একজন নারী গর্ভধারণের পর সাধারণত সে তার গর্ভের সন্তানের জন্য যথেষ্ট পরিমাণ সতর্ক এবং সাবধানে থাকার চেষ্টা করে। এই সময়ে তার ওঠা-বসা চলাফেরা থেকে শুরু করে খাওয়া দাওয়া প্রতিটি বিষয়ে সাবধানতার সাথে অবলম্বন করতে হয়। প্রতিটি মানুষের স্বাভাবিক পানিপানের মাত্রা আছে তবে গর্ভাবস্থায় কত লিটার পানি পান করা উচিত এই সম্পর্কে আজকে আমরা জানবো।
আবহাওয়া যদি গরম থাকে বা শারীরিক পরিশ্রম যদি অতিরিক্ত হয় তবে আমাদের শরীর থেকে ঘাম বের হয়ে যায়, তাই পানির পরিমাণ আরো বাড়াতে হতে পারে। তেমনি একইভাবে বমি বা মর্নিং সিগনেস হলে গর্ভাবস্থায় পানি শূন্য হয়ে পড়তে পারে। এই কারণে এই সময় বেশি বেশি পানি পান করা উচিত। তবে প্রয়োজনের অতিরিক্ত শরীরের জন্য ভালো না। গর্ভবতী নারীর পানির প্রয়োজনীয়তা নির্ধারণে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে বিশেষ করে যদি কোন শারীরিক জটিলতা থাকে যেমন প্রি একলিপসিয়া বা কিডনির সমস্যা।
গর্ভাবস্থায় পর্যাপ্ত পানি পান করা একজন মা ও শিশুর সুস্বাস্থ্যের জন্য বিশেষভাবে অপরিহার্য। সাধারণত একজন গর্ভবতী মাকে দিনে প্রায় ২.৫ থেকে ৩ লিটার পানি পানির পরামর্শ দিয়ে থাকে। এই পানির পরিমাণ নির্ভর করে সাধারণত মায়ের শরীরে কি পরিমান চাহিদা রয়েছে, দৈনন্দিন কাজের উপর এবং বিশেষ করে আবহাওয়ার উপর। পানি শরীরকে হাইডেটেড রাখে এবং গর্ভস্থ শিশুর জন্য অ্যামনিওটিক ফ্লুইডের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে।
একজন নারী গর্ভধারণের পর তার গর্ভাবস্থায় শারে হরমোনের ব্যাপক পরিবর্তনের কারণে শরীর বেশি পানি শোষণ করে। হলে নিয়মিত পানি পান করলে কোষ্ঠকাঠিন্য, ইউরেনারি ট্র্যাক ইনফেকশন এবং ডিহাইড্রেশনের ঝুঁকি কমে যায়। এটি সাধারণত রক্ত চলাচল করতে সাহায্য করে যা শিশুর কাছে পর্যাপ্ত পরিমাণ অক্সিজেন এবং পুষ্টি পৌঁছাতে সাহায্য করে।
আরও পড়ুনঃ গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা
গর্ভাবস্থায় শুধুমাত্র যে পানি পানির মাধ্যমে শরীরের পূর্ণতা লাভ করতে হবে তা নয়। বিভিন্ন ধরনের ফলের রস, দুধ, স্যুপ এবং জলীয় খাবার থেকে প্রয়োজনীয় তরল গ্রহণ করা যেতে পারে। তবে অবশ্যই গর্ভাবস্থায় ক্যাফেঞ্জ যুক্ত পানীয় কমে দেওয়াই ভালো, কারণেরই শরীরের ড্রিহাইড্রেশন বাড়াতে সাহায্য করে। সর্বোপরি হাইড্রেশনের গুরুত্ব বুঝে পানি পান করার অভ্যাস গর্ভাবস্থায় সুস্থ থাকার একটি অন্যতম উপায় বা মাধ্যম।
পরিশেষে বলা যায় যে পানির অপর নাম জীবন, প্রতিটি মানুষের শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণ পানির চাহিদা রয়েছে। তবে দুজন গর্ভবতী নারীকে প্রয়োজনের তুলনায় বেশি পানি পান করতে হয়। কারণ এই সময়ে তার নিজের সাথে সাথে গর্ভস্থ শিশুরও পানির প্রয়োজন হয়। গর্ভাবস্থায় মায়ের যেন শরীরে কোন ভাবেই ডিহাইড্রেশন না হয় সেই খেয়াল রাখতে হবে এবং পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি ও পানি জাতীয় খাবার খেতে হবে।
গর্ভাবস্থায় পানি কমে যাওয়ার লক্ষণ
গর্ভাবস্থায় পানি কমে যাওয়ার লক্ষণ সম্পর্কে একজন গর্ভবতী মাকে অবশ্যই জানতে হবে। গর্ভধারণের পর প্রতিটি কাজ যেন মা ও শিশুর জন্য উপকারী হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। ধারনত গর্ভাবস্থায় মায়ের শরীরে পানি বা অ্যামনিওটিক ফ্লুইড কমে যাওয়াকে চিকিৎসা বিজ্ঞানে অলিগোহাইড্রামনিওস বলে। এর ফলে গড়ের শিশুর জন্য এই অবস্থাটি একটি বিপদজনক হতে পারে। একজন গর্ভবতী মায়ের পানি কমে যাওয়ার লক্ষণ গুলো সম্পর্কে অবশ্যই সচেতনতা সাথে জানতে হবে এবং দ্রুত চিকিৎসা নেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
সাধারণভাবে গর্ভাবস্থায় একজন গর্ভবতী মায়ের পানি কমে গেলে মায়ের পেটে অস্বাভাবিকভাবে চাপ বা টান অনুভূত হতে পারে। পেটের আকার স্বাভাবিকের তুলনায় ছোট হয়ে যায়। যার ফলে শিশুর বৃদ্ধির সমস্যা দেখা দেয়। মায়ের পেটের ব্যথা বা অস্বস্তি হওয়া, বিশেষ করে হাঁটা চলার সমস্যা দেখা দিলে এই লক্ষণগুলোকে গুরুত্বপূর্ণতার সাথে দেখতে হবে।
গর্ভে শিশু ধারণ করার পর তাদের নড়াচড়ার একটা স্বাভাবিক পর্যায়ে থাকবে। যদি শিশুর নাড়াচাড়া স্বাভাবিকের তুলনায় কম হয় তবে অবশ্যই এটি পানি কমে যাওয়ার ইঙ্গিত বহন করে। এ সময় গর্ভের শিশু অক্সিজেন বা পুষ্টি সরবরাহ থেকে বাহাগ্রস্ত হয় যার ফলে নড়াচড়ার উপর প্রভাব। বাচ্চা প্রসবের আগে মায়ের যোনিপথ থেকে অস্বাভাবিকভাবে পানি বা রক্ত বের হলে এটি সাধারণত ফ্লুইড লিক হয়েছে বুঝতে হবে।
গর্ভাবস্থায় ডাক্তারি পরীক্ষার সময় আলট্রাসসাউন্ড করলে আ্যৗমনিওটিক ফ্লুইড ইনডেক্স ইন কম্পাওয়া গেলে নিশ্চিত হওয়া যায় যে গর্ভের পানি কমে গেছে। যার ফলে এটিতে গর্ভে শিশুর বিকাশের উপর প্রভাব ফেলে।
এছাড়াও গর্ভাবস্থায় মায়ের বারবার যদি প্রসবের চাপ থাকা সত্ত্বেও প্রসব কম হয় বা প্রসাবের রং গারো হয় তাহলে বুঝতে হবে যে গর্ভবতী মায়ের শরীরে ডিহাইড্রেশনের লক্ষণ হচ্ছে। এই অবস্থায় শরীরকে পানি বানরের ঘাটতি শিশুর জন্য ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
পরিশেষে বলা যায় যে, যদি উপরের লক্ষণ গুলোর কোন একটি দেখা যায়, তবে অতি দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। চিকিৎসা হিসাবে মা কে হাইড্রেটের রাখতে হবে প্রয়োজনে স্যালাইন দিতে হবে এবং কখনো কখনো এমার্জেন্সি ডেলিভারিরও সিদ্ধান্ত নিতে হবে। সচেতনতা এবং সময়মতো পদক্ষেপ নিলে বিভিন্ন ধরনের মাতৃগর্ভের শিশুর জন্য জটিলতা এড়ানো সম্ভব।
গর্ভাবস্থায় পানির মত সাদা স্রাব
পানির মতো সাদা সাব সাধারণত একটি শারীরবৃত্তীয় ঘটনা। এই ধরনের স্রাবকে চিকিৎসা বিজ্ঞানে লিউকোরিয়া বলা হয়। এটি সাধারনত হরমঞ্জনিত পরিবর্তনের কারণে হয় যা জরায়ুর স্বাস্থ্য বজায় রাখতে সাহায্য করেন। তবে কখনো কখনো এটি শারীরিক জটিলতার ইঙ্গিত দেখা দেয়।
একজন নারী গর্ভবতী হলে সাধারণত তার শরীরে ইস্ট্রোজেন হরমোনের মাত্রা বৃদ্ধি পায় এবং রক্ত সঞ্চালন বাড়তে থাকে। যার জন্য তার যোনি থেকে সাদা বা স্বচ্ছ এক ধরনের স্রাব নির্গত হয়। এই স্রাব টি সাধারণত পাতলা হয়, গন্ধহীন হয় এবং একটু চটচটে হয়। এই স্রাব সাধারণত নারীদের জরায়ুকে সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে এবং যোনিপথ কে পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে। গর্ভাবতার শেষ দিকে এটি আরো বাড়তে পারে যার শরীরের প্রসবের জন্য প্রস্তুতির অংশ হয়ে দাঁড়ায়।
তবে স্রাব এর রং, গন্ধ এবং পরিমাণ যদি অস্বাভাবিক মনে হয় যেমন, স্রাবের রং হলুদ, সবুজ জ বা বাদামী হয়ে যায়, গন্ধ যদি তীব্র হয় কিংবা সেই সাথে যদি চুলকানিয়া থাকে বা জ্বালাপোড়া হয় তাহলে এটি সংক্রমণের লক্ষণ হতে পারে। বিশেষ করে এটি ইউরিনারি ট্র্যাক ইফেকশন বা ইস্ট ইনফেকশনের মত সমস্যা হতে পারে।
আরও পড়ুনঃ গর্ভাবস্থায় ডান পাশে ঘুমালে কি হয়
পানির মতো চাপ যদি অতিরিক্ত হয় এবং থামতে না চায় তবে এটি অ্যামনিওটিক ফ্লুইড লিক হয়েছে বলে মনে করা হয়। এই ধরনের পরিস্থিতিতে সাধারণত নারীর গর্ভস্থ শিশুর জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে এবং এই কারণে দ্রুত চিকিৎসার প্রয়োজন হয়। স্বাভাবিক চাঁদের ক্ষেত্রে ইচ্ছাপ প্রয়োজন হয় না তবে সংক্রমনের লক্ষণ দেখা দিলে বা স্রাব অতিরিক্ত হলে অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
পরিশেষে বলা যায় যে, স্রাব গর্ভাবস্থায় পানির মত দেখা দিলে সেটিকে অবশ্যই ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হবে। কারণ গর্ভাবস্থায় পানির মত সাদা স্রাবও নির্গত হয়। অতিরিক্ত নির্গত হলে গর্ভস্থ শিশুর জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। তাই একজন গর্ভস্থ মায়ের যদি এই ধরনের সমস্যা হয় তাহলে অবশ্যই দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
পলিহাইড্রামনীওস বা গর্ভাবস্থায় পেটে পানি বেড়ে গেলে করণীয়
গর্ভাবস্থায় পেটে পানি বেড়ে গেলে করণীয় আমাদের জানতে হবে। সাধারণভাবে গর্ভাবস্থায় পেটে পানির বেড়ে যাওয়াকে চিকিৎসা বিজ্ঞানে পলিহাইড্রামনীওস। এটি একটি জটিল অবস্থা যেখানে একজন গর্ভবতী নারীর গর্ভের শিশুকে ঘিরে থাকে অ্যামনিওটিক ফ্লুইড স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি হয়। এ সমস্যা হলে মা ও শিশু উভয়ের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়। নিচে এই অবস্থার করণীয় বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
পলিহাইড্রামনীওস কিঃ সাধারণত গর্ভের পানি কমে যাওয়ার কারণ সম্পর্কে জানার আগে আমাদেরকে জানতে হবে পলিহাইড্রামনিওস আসলেই কি? পলিহাইড্রামনিওস হল এমন একটি অবস্থা যেখানে গর্ভের অ্যামনিওটিক ফ্লুইড বা পানি স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হয়ে থাকে। হল গর্ভে শিশুকে সাধারণত সুরক্ষিত রাখে এবং সেই শিশুর বৃদ্ধিতে সাহায্য করার জন্য জরায়ুর ভিতর থাকা তরল পদার্থকে বোঝায় অ্যামনিওটিক ফ্লুইড।
পলিহাইড্রামনীওস বা পেটে পানি বেড়ে যাওয়ার কারণঃ চিকিৎসা বিজ্ঞানে গর্ভাবস্থায় পেটে পানি বেড়ে যাওয়ার প্রক্রিয়াকে পলিহাইড্রামনীওস বলে। সাধারণত গর্ভের শিশুকে অ্যামনিওটিক ফ্লুইড দ্বারা ঘিরে রাখে। এর পরিমাণ বেশি হয়ে গেলে তখন পেটে পানি বেড়ে যায়।। এই সমস্যার পিছনে থাকে বিভিন্ন কারণ সেই কারণ গুলো নির আলোচনা করা হলো। যেমন-
- গর্ভবতী মা যদি ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়ে থাকে এবং সেই ডায়াবেটিসের মাত্রা যদি নিয়ন্ত্রণে না থাকে তবে এটি শিশুর প্রসবের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। যার ফলে অ্যামনিওটিক ফ্লুইড বাড়ায়।
- যদি কোন নারীর পেটে জমজ বা একাধিক শিশু থাকে তবে সে ক্ষেত্রে অ্যামনিওটিক ফ্লুইড ের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যায়। একটি শিশুর বেশি ফ্লুইড উৎপাদন এবং অন্যটির কম উৎপাদন এই সমস্যার কারণ হয়।
- গর্ভস্থ শিশুর যদি শারীরিক বা জিনগত কোন ধরনের ত্রুটি থেকে থাকে, যেমন পাচনতন্ত্রের ব্লকেজ বা স্নায়ুতন্ত্রের সমস্যা তবে শিশুর ফ্লুইড গিলতে অসুবিধা হতে পারে। এর ফলে মায়ের পেটে পানির পরিমাণ বেশি হয়ে যায়।
- গর্ভাব কিছু ভাইরাসজনিত সংক্রমণ যেমন টকশোপ্লাজমোসিস, সিএমভি অ্যামনিওটিক ফ্লুইডের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়।
- গর্ভবতী মা ও গর্ভস্থ শিশুর রক্তের গ্রুপের অমিল থাকলে এর ফলে পানি বেড়ে যাওয়ার কারণ হতে পারে
- যদি গর্ভস্থ শিশুর হৃৎপিণ্ড বাকিডনির কোন সমস্যা থাকে তাহলে এর ফলে পানি বৃদ্ধি হতে পারে।
- অনেক সময় কোন নির্দিষ্ট কারণ ছাড়াই পানি বেড়ে যায় যা ইডিওপ্যাথিক পলিহাইড্রামনিওস নামে পরিচিত।
গর্ভাবস্থায় পানি বেড়ে গেলে করণীয়ঃ যদি দেখেন একজন গর্ভবতী নারী গর্ভাবস্থায় পেটে পানি বেড়ে যাওয়ার লক্ষণ গুলো দেখা যাচ্ছে তাহলে অবশ্যই সঠিক ব্যবস্থাপনা ও দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। নিচে পানি বেড়ে যাওয়ার ফলে করণীয় বিষয়গুলো বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলো। যেমন-
ডাক্তারি পরামর্শ ও নিয়মিত পর্যবেক্ষণঃ গর্ভাবস্থায় সাধারণত গর্ভবতী নারীর পানি বেড়ে যাওয়ার লক্ষণ দেখা দিলে অবিলম্বে চিকিৎসকের সঙ্গে না যোগাযোগ করতে হবে। চিকিৎসক আল্ট্রা সাউন্ড এবং অ্যামনিওটিক থুয়ে ট ইনডেক্স পরীক্ষাতে পানি বৃদ্ধির মাত্রা নির্ধারণ করবেন।
রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণঃ কোন গর্ভবতী নারী গর্ভধারণের আগে বা পরে যদি উচ্চ রক্তচাপ বা ডায়াবেটিসের আক্রান্ত থাকে তবে তা অবশ্যই নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। চিকিৎসকের দেওয়া প্রতিটি পরামর্শ অনুযায়ী ডায়েট এবং ওষুধ গ্রহণ করতে হবে।
অতিরিক্ত ফ্লুইড বের করাঃ যদি গর্ভবতী নারীর পেটে অতিরিক্ত পানি বেড়ে যায় এবং তার মায়ের শারীরিক অসুবিধা সৃষ্টি করে তবে অবশ্যই চিকিৎসক অ্যামনিওসিন্থেসিস পদ্ধতির মাধ্যমে অতিরিক্ত ফ্লুইড বের করে ফেলতে হবে।
ওষুধ সেবনঃ চিকিৎসক প্রোস্টাগল্যান্ডিন ইনহেবিটর জাতীয় ওষুধ গর্ভবতী নারীকে দিতে পারেন যা শিশুর প্রসাবে পরিমাণ কমিয়ে অ্যামনিওটিক ফ্লুইডের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখবে।
শারীরিক বিশ্রামঃ গর্ভধারণের পর একজন গর্ভবতী মাকে পর্যাপ্ত পরিমাণ বিশ্রাম নিতে হবে। অতিরিক্ত পরিশ্রম বা ভারী কাজ এড়িয়ে চলতে হবে কারণ এতে পেটে চাপ বাড়িয়ে জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।
শিশুর নড়াচড়া পর্যবেক্ষণঃ গর্ভস্থ অবস্থায় গর্ভের শিশুর নড়াচড়া স্বাভাবিক আছে কিনা প্রতিটি সময়ে পর্যবেক্ষণ করতে হবে। নড়াচড়া কমে গেলে তাৎক্ষণিকভাবে চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে।
যেকোনো অস্বাভাবিক উপসর্গে দ্রুত চিকিৎসাঃ যদি পেট ব্যথা, যোনিপথ দিয়ে অতিরিক্ত স্রাব বা প্রিটার্ম লেবারের লক্ষণ দেখা দেয় তবে খুব তাড়াতাড়ি চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
পুষ্টিকর খাবার ও পানি নিয়ন্ত্রণঃ গর্ভবতী নারীর শারীরিক পানির ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। অতিরিক্ত পানি এর পরিবর্তে পানি জাতীয় খাবার খেতে হবে এবং অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলতে হবে।
প্রসব পরিকল্পনাঃ গর্ভবতী মায়ের অবস্থা যদি গুরুতর হয় তবে অবশ্যই তাড়াতাড়ি চিকিৎসকের প্রসবের পরিকল্পনা করতে হবে। এ সময় সঠিক চিকিৎসা সেবার জন্য একটি ভালো হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে।
পরিশেষে বলা যায় যে, গর্ভাবস্থায় পেটের পানি বেড়ে যাওয়াকে মোটেও অবহেলা করা যাবে না। কারণ এটি মা ও শিশুর জন্য বেশ জটিলতার অবস্থা সৃষ্টি করে। সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা পদ্ধতি গ্রহণ করতে হবে এবং একজন গর্ভস্থ নারীকে নিয়মিত পর্যবেক্ষণের মধ্যে রাখতে হবে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ, শিশুর নড়াচড়া পর্যবেক্ষণ এবং চিকিৎসকের নির্দেশ মেনে চলা অত্যন্ত জরুরী। এই ধরনের অবস্থায় অবশ্যই চিকিৎসক ব্যবস্থা নেওয়া হলে মা ও শিশু দুজনেই ভালো থাকবে। তাই সচেতন থাকতে হবে নিয়মিত সাতু পরীক্ষা করতে হবে এবং নিজের শরীরের পরিবর্তন সম্পর্কে সচেতন হতে হবে।
গর্ভাবস্থায় বাচ্চার অক্সিজেন কমে গেলে করণীয়
গর্ভাবস্থায় বাচ্চার অক্সিজেন কমে গেলে করণীয় সম্পর্কে আমাদেরকে অবশ্যই জানতে হবে। কারণ মা ও শিশু দুজনেই অনেক জটিল অবস্থায় থাকে। এটি সাধারণত ফিটাল ডিস্ট্রেস বা বাচ্চার বিপদের মধ্যে আছে তার সংকেত দেখায়। এ ধরনের পরিস্থিতিতে যেসব পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। বাচ্চার অক্সিজেন ঘাটতির লক্ষণগুলো শনাক্ত করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক লক্ষণ সনাক্ত করতে না পারলে পেটের মধ্যে বাচ্চার মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে তাই দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে।
বাচ্চার অক্সিজেন কমে যাওয়ার লক্ষণ সমূহ ঃ
- শিশুর নড়াচড়া কমে যাওয়াঃ গর্ভাবস্থায় একজন গর্ভবতী নারী যদি দেখেন তার পেটের শিশুটি নড়াচড়া কমে গেছে তখনই বুঝতে হবে পেটের মধ্যে বাচ্চার অক্সিজেনের ঘাট দিচ্ছে। কারণ শিশুর নড়াচড়া কমে যাওয়া অক্সিজেন ঘাটটির প্রধান লক্ষণ। সাধারণত ২৪ সপ্তাহের পর থেকে শিশুর নড়াচড়া অনুভূত হয় এবং এটি নিয়মিত থাকে। তবে হঠাৎ যদি নড়াচড়া কমে যায় দ্রুত চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে।
- মায়ের পেটে ব্যথা বাটাঃ গর্ভাবস্থায় মায়ের পেটে যদি তীব্র ব্যথা হয় এবং অস্বাভাবিক চাপ অনুভব করে তাহলে বুঝতে হবে যে বাচ্চার অক্সিজেনের ঘাটতি হয়েছে। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ইঙ্গিত বহন করে। এটি জরায়ুর রক্ত প্রবাহের সমস্যার কারণও হতে পারে।
- অস্বাভাবিক হৃদস্পন্দনঃ গর্ভাবস্থায় মাঝে মধ্যে মনিটরিং এ সময় যদি বাচ্চার হার্টবিট খুব ধীর (ব্রাডিকার্ডিয়া) বা দ্রুত হয় (ট্যাকিকার্ডিয়া) তবে এটি অক্সিজেনের ঘাটতি সংকেত দেখা দেয়।
- অ্যামনিওটিক ফ্লুইডের সমস্যাঃ গর্ভাবস্থায় যদি গর্ভের পানি কম হয় তবে এটি শেষ হওয়ার অক্সিজেন সরবরাহ করতে সমস্যা করে। কারণ পানি কমে গেলে বা ফ্লুয়েটে লিক করলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে তা না হলে বাচ্চার ক্ষতি হবে।
- মায়ের উচ্চ রক্তচাপ বা প্রি- এক্লাম্পসিয়াঃ গর্ভবতী নারীর যদি উচ্চ রক্তচাপ সমস্যা থাকে তবে শিশুর অক্সিজেন কমে যেতে পারে। এটি প্লেসেন্টার ঠিক কাজ না করার কারণে হতে পারে।
- অস্বাভাবিক যোনিপথ স্রাব বা রক্তপাতঃ গর্ভাবস্থায় কোন গর্ভবতী নারীর যোনিপথ দিয়ে যদি অস্বাভাবিক স্রাব বা রক্তপাত দেখা যায় তাহলে গর্ভস্থ শিশুর জন্য বিপদ সংকেত হতে পারে।
গর্ভাবস্থায় বাচ্চার অক্সিজেন কমে গেলে করণীয়ঃ গর্ভাবস্থায় বাচ্চার শরীরের অক্সিজেন কমে গেলে এরই মা ও শিশুর জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ অবস্থা। এই অবস্থায় গর্ভের শিশুটি যেকোনো ধরনের বিপদের মধ্যে পড়তে পারে। তাই গর্ভাবস্থায় বাচ্চার অক্সিজেন কমে যাওয়া লক্ষণগুলো দেখা দিলে অবশ্যই এর জন্য করণীয় কাজগুলো করতে হবে। যেমন-
- তাৎক্ষণিক চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে নিনঃ গর্ভাবস্থায় মায়ের যেকোনো অস্বাভাবিক উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। যেমন তীব্র পেটে ব্যথা, বাচ্চার নড়াচড়া কম, মায়ের শারীরিক যেকোনো ধরনের জটিলতা ইত্যাদি এসব বিষয়ে তাৎক্ষণিক চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
- হাসপাতালে ভর্তি হনঃ গর্ভাবস্থায় একজন গর্ভবতী নারী কে তার নিজের সম্পর্কের প্রতি সচেতন ও যত্নবান হতে হবে। অক্সিজেন কমে যাওয়ার লক্ষণগুলি যদি দেখা দেয় তাহলে অবশ্যই দ্রুতগতিতে চিকিৎসার জন্য মাকে হাসপাতালে ভর্তি করাতে হবে।
- ফিটাল মনিটরিংঃ ফিটাল মনিটরিং অর্থাৎ চিকিৎসকরা ফিটার হার্টরেট মনিটর করবেন। একটি বাচ্চার হৃদস্পন্দন এর উপর ভিত্তি করে অক্সিজেনের মাত্রা বুঝতে সাহায্য করে।
- অতিরিক্ত অক্সিজেন প্রদানঃ এই অবস্থায় মা যদি শ্বাসকষ্টে ভোগেন বা বাচ্চার অক্সিজেন লেভেল কমে যায় তাহলে মাকে অক্সিজেন মাস্কের মাধ্যমে অতিরিক্ত অক্সিজেন দিতে হবে।
- তরল এবং ওষুধ প্রয়োগঃ হ্যাঁ গর্ভাবস্থায় যদি মায়ের শরীরের রক্ত প্রবাহ উন্নত করতে স্যালাইন দেওয়া লাগতে পারে। প্রয়োজনে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের জন্য ডাক্তারের পরামর্শে ওষুধ ব্যবহার করা যেতে পারে।
- পজিশন পরিবর্তনঃ গর্ভাবস্থায় একজন মাকে পজিশন পরিবর্তন করতে হয় যেমন বাঁ দিকে শুয়ে থাকা। এর ফলে গর্ভের রক্ত সঞ্চালন ভালো হতে পারে এবং বাচ্চার অক্সিজেন সরবরাহ বৃদ্ধি হতে পারে।
- ইমারজেন্সি ডেলিভারিঃ যদি পরিস্থিতি অত্যন্ত সংকটা পূর্ণ হয় এবং গর্ভের সময় পূর্ণ না হলেও এই অবস্থায় চিকিৎসকের সিজারিয়াম সেকশন বার নরমাল ডেলিভারি করার সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
- বাচ্চার নড়াচড়া পর্যবেক্ষণঃ গর্ভাবস্থায় একজন মায়ের সবচাইতে প্রয়োজনীয় এবং জরুরী কাজ হল বাচ্চার নড়াচড়া নিয়মিত খেয়াল করা। নড়াচড়া কম মনে হলে তা অবহেলা না করে দ্রুত চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে।
- স্ট্রেস এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণঃ গর্ভাবস্থায় একজন গর্ভবতী নারী যেন কোন ধরনের স্ট্রেস বা মানসিক চাপ না রাখে তার জন্য পরিবারের খেয়াল রাখতে হবে। কারণ মানসিক চাপ এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে না থাকলে বাচ্চার আসেনের উপর প্রভাব পড়তে পারে।
- পরিপূর্ণ বিশ্রামঃ গর্ভাবস্থায় একজন মাকে পর্যাপ্ত পরিমাণ বিশ্রাম নিতে হবে। কারণ পর্যাপ্ত ঘুম এবং শারীরিক পরিশ্রম সঠিক না থাকলে বাচ্চার অক্সিজেন নিতে সমস্যা হতে পারে।
- পুষ্টিকর খাবারঃ গর্ভাবস্থায় একজন গর্ভবতী মাকে এমন খাবার খেতে হবে যা রক্তস্বল্পতা দূর করে এবং গর্ভের শিশুর প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করে।
পরিশেষে বলা যায় যে, গর্ভাবস্থায় অক্সিজেন কমে গেলে বুঝতে পারলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিতে হবে। গর্ভবতী মায়ের পর্যাপ্ত বিশ্রামের ব্যবস্থা নিতে হবে এবং সঠিক প্রশ্ন নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা এই অবস্থার উন্নত সাহায্য করে। চিকিৎসকের নির্দেশ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় পরীক্ষা ও চিকিৎসা গ্রহণ করা খুবই জরুরী। গর্ভাবস্থায় শিশুর অক্সিজেনের লক্ষণ গুলো দ্রুত সনাক্ত করতে হবে এবং গর্ভবতী মাকে এই বিষয়ে নিজের লক্ষণ গুলির প্রতি খেয়াল রাখতে হবে এবং জানাতে হবে।
অ্যামনিওটিক ফ্লুইড কত সেন্টিমিটার থাকা স্বাভাবিক
অ্যামনিওটিক ফ্লুইড কত সেন্টিমিটার থাকা স্বাভাবিক এইটা একজন গর্ভবতী নারীর জানা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। কারণ গর্ভধারণের পর এই ফ্লুইডের মধ্যেই একটি শিশু তার গর্ভকালীন জীবন যাপন করে। এইজন্য আমাদের সবার প্রথমে জানতে হবে অ্যামনিওটিক ফ্লুইড কি।
- অ্যামনিওটিক ফ্লুইডঃ অ্যামনিওটিক ফ্লুইড হল একটি স্বচ্ছ বা হালকা রঙের হলুদ তরল যা গর্ভের শিশুকে পেটের ভিতরে ঘিরে রাখে এবং তাকে সুরক্ষা দেয়। এটি শিশুর চারপাশে থাকা অ্যামনিওটিক স্যাকের (ভ্রুণের থলি) ভিতরে এবং পুরো গর্ব অবস্থায় শিশুর সঠিক বৃদ্ধি ও বিকাশে সাহায্য করে।
- অ্যামনিওটিক ফ্লুইড কিভাবে তৈরি হয়ঃ অ্যামনিওটিক ফ্লুইড গর্ভাবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান যা সাধারণত গর্ভস্থ শিশুর বিকাশে সাহায্য করে এবং প্রধান ভূমিকা পালন করে। এটি মূলত গর্ভাবস্থার বিভিন্ন ধাপে ধাপে বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তৈরি হয়।
- প্রাথমিক পর্যায়ে (প্রথম ত্রৈমাসিক): গর্ভবতী নারীর গর্ভাবস্থার প্রথম দিকে অ্যামনিওটিক ফ্লুইড সাধারণত মায়ের রক্ত থেকে নির্গত প্লাজমা থেকে তৈরি হয়। এই তরল অ্যামনিওটিক স্যাক বা ভ্রুনের থলিতে এসে জমা হয় এবং শিশুর চারপাশে একটি সুরক্ষা মূলক স্তর তৈরি করে। যার মধ্যে শিশু তার গর্ভাবস্থার পুরো সময়টা অতিবাহিত করে।
- মধ্যবর্তী পর্যায়ে (দ্বিতীয় ত্রৈমাসিক): এই পর্যায় হচ্ছে গর্ভাবস্থার ১২ থেকে ১৪ সপ্তাহর পর থেকে শুরু হয়। এই সময় শিশুর শরীর অ্যামনিওটিক ফ্লুইড তৈরিতে ভূমিকা রাখতে শুরু করে।
- শিশুর প্রসাবঃ শিশুর কিডনি কাজ শুরু করলে প্রথমে প্রসব তৈরি হয় যা অ্যামনিওটিক ফ্লুইড এর একটি প্রধান উৎস। এটি সাধারণত শিশুর তরলের ভারসাম্য বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
- ফুসফুস থেকে তরলঃ গর্ভাবস্থায় গর্ভের শিশুর ফুসফুস থেকেও কিছু তরল পদার্থ নির্গত হয় যা অ্যামনিওটিক ফ্লুইড এ মিশে যায়।
- পরবর্তী পর্যায়ে (তৃতীয় ত্রৈমাসিক): এই পর্যায়ে অ্যামনিওটিক ফ্লুইড এর প্রধান উৎস হচ্ছে শিশুর প্রসাব। পাশাপাশি শিশুর ত্বক থেকেও কিছু তরল পদার্থ নিঃসরণ হয়। শিশুর ফ্লুইড গিলতে পারা এবং তা পরবর্তীতে প্রসব হিসেবে নির্গত করাও তরলের পরিমাণ স্থিতিশীল রাখতে সাহায্য করে।
- অ্যামনিওটিক ফ্লুইড সামগ্রিক সঞ্চালনঃ অ্যামনিওটিক ফ্লুইড সাইক্লিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কাজ করে। প্রক্রিয়াটি শিশুর তরল গিলতে পাড়া এবং প্রসব করার মাধ্যমে তৈরি হয় ও পুনঃসঞ্চালিত হয়। এছাড়া মায়ের শরীরের তরল এবং রক্তের মাধ্যমে এ ফ্লুইডটা নিয়ন্ত্রিত হয়।
- গর্ভাবস্থায় অ্যামনিওটিক ফ্লুইড এর পরিমাণঃ গর্ভাবস্থায় অ্যামনিওটিক ফ্লুইড এর পরিমাণ গর্ভের বিভিন্ন সময়ে পরিবর্তিত হয়। এটি গর্ভস্থ শিশুর জন্য একটি সুরক্ষামূলক পরিবেশ তৈরি করে।
স্বাভাবিক পরিমাণঃ
- প্রথম ত্রৈমাসিক (১-১২ সপ্তাহ): গর্ভাবস্থার প্রথম দিকে অ্যামনিওটিক ফ্লুইড এর পরিমাণ কম থাকে, যা সময়ের সাথে সাথে ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পায়। এই সময় অ্যামনিওটিক ফ্লুইড এর পরিমাণ ৫০-১০০ মিলিলিটার থাকে।
- দ্বিতীয় ত্রৈমাসিক (১৩-২৬ সপ্তাহ): গর্ভাবস্থায় এই সময়ে অ্যামনিওটিক ফ্লুইড এর পরিমাণ উল্লেখযোগ্য হবে বাড়তে থাকে। গর্ভাবস্থার 20 সপ্তাহে এর পরিমাণ প্রায় ৩৫০ মিলিলিটার হয়ে থাকে ।
- তৃতীয় ত্রৈমাসিক (২৭-৩৪ সপ্তাহ): গর্ভাবস্থার ৩৪-৩৬ সাপ্তাহের মধ্যে অ্যামনিওটিক ফ্লুইড সর্বোচ্চ পরিমাণে উৎপন্ন হয়ে যায় যা প্রায় ৮০০-১০০০ মিলিলিটার হয়। তবে সাধারণত প্রসবের সময় এটি ধীরে ধীরে কমে গিয়ে ৫০০-৬০০ মিলিলিটার পর্যন্ত হতে পারে।
ফ্লুইডের পরিমাণ বেশি বা কম হলেঃ অ্যামনিওটিক ফ্লুইড কমে গেলে (অলিগোহাইড্রামনিওস) গর্ভস্থ শিশুর বৃদ্ধিতে বাধা হতে পারে এবং ডেলিভারির সময় জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। আবার অ্যামনিওটিক ফ্লুইড বেড়ে গেলে (পলিহাইড্রামনিওস) এটি আবার গর্ভের অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে যা প্রি-টার্ম লেবার বা গর্ভফুলের আলাদা হওয়ার ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। অ্যামনিওটিক ফ্লুইড এর পরিমাণ নির্ণয়ে অ্যামনিওটিক ফ্লুইড ইনডেক্স বা ডিপেস্ট পকেট মাপা হয়। স্বাভাবিকভাবে AFI মান সাধারণত ৮-১৮ সেন্টিমিটার হয়।
পরিশেষে বলা যায় যে, অ্যামনিওটিক ফ্লুইড গর্ভাবস্থায় শিশুর সুরক্ষার জন্য এবং বিকাশ ও সুস্থতার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এর পরিমান স্বাভাবিক থাকলে গর্ভে শিশুর অবস্থা অনেক ভালো থাকে। তবে ফ্লুইডের মাত্রা কমে গেলে জটিলতা সৃষ্টি করে আবার বেড়ে গেলেও মা ও শিশুর জটিলতা হয়। অস্থায়ী নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চলতে হবে যাতে অ্যামনিওটিক ফ্লুইড পরিমাণ পর্যবেক্ষণ করে। সময় মত সঠিক ব্যবস্থা গ্রহণ করলে গর্ভাবস্থার যেকোনো জটিলতা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
মন্তব্যঃ অ্যামনিওটিক ফ্লুইড বা গর্ভের পানি কমে যাওয়ার কারণ ও লক্ষণ
অ্যামনিওটিক ফ্লুইড বা গর্ভের পানি কমে যাওয়ার কারণ ও লক্ষণ সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা দেওয়ার চেষ্টা করলাম। আশা রাখি এই বিস্তারিত বর্ণনা আপনাদের অনেক কাজে আসবে। অ্যামনিওটিক ফ্লুইড বা গর্ভের পানি কমে যাওয়ার লক্ষণ নিয়ে মায়েদের সচেতনতা এবং পরিবারের অন্যান্য জনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সময়মতো এর লক্ষণগুলো সবাইকেই সনাক্ত করতে হবে এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অবশ্যই নিতে হবে।
আশা করি এই আলোচনা আপনাকে অনেক ধরনের সহায়তা করবে এবং ভবিষ্যতে এ বিষয়ে আরো সচেতন হতে উদ্বুদ্ধ করবে। আপনার সুস্থ ও সুন্দর গর্ভকালীন যাত্রা কামনা করে আজকের মত এখানেই শেষ করছি। ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন। পরবর্তীতে আবারো দেখা হবে অন্য কোন ব্লগে বা পোস্টে।
প্রশ্ন ২৪ ব্লক এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url