সকালে ঘুম থেকে উঠার ৩০ টি উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন

সকালে ঘুম থেকে উঠার ৩০ টি উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানতে চান? তবে আপনি সঠিক জায়গায় এসেছেন। আজকে আমাদের এই ব্লগে আমরা জানব সকালে ঘুম থেকে উঠার উপকারিতা সম্পর্কে। প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠার অভ্যাস বদলে দিতে পারে আপনার এ জীবন। কথায় আছে আর্লি টু রাইজ, আর্লি টু বেড, হেলদি ওয়েলদি এন্ড অয়েজ।

সকালে-ঘুম-থেকে-উঠার-উপকারিতা-সম্পর্কে-বিস্তারিত-জানুন

সকালে ঘুম থেকে ওঠা শুধুমাত্র শারীরিক অবস্থার উন্নতি করে না এটি আমাদের মানসিক অবস্থারও উন্নতি করতে সাহায্য করে। সকালে ঘুম থেকে উঠলে আমাদের ত্বক উজ্জ্বল করে, আমাদের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং আমরা হৃদরোগের প্রতিরোধ করতে সাহায্য হয়। তাহলে চলুন আজকে আমরা জানি সকালে ঘুম থেকে ওঠার উপকারিতা।

পোস্ট সূচিপত্রঃ সকালে ঘুম থেকে উঠার ৩০ টি উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন

 সকালে ঘুম থেকে উঠার ৩০ টি উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন

সকালে ঘুম থেকে উঠার ৩০ টি উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন, কারণ ভোরের শান্তি আপনাকে শক্তি দেয় দিনের লড়াই জিততে। সকাল বা ভোর প্রতিটি মানুষের জন্য এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যা সারা দিনের কার্যক্রমের প্রধান হাতিয়ার। সকালে ঘুম থেকে ওঠার অভ্যাস আমাদের শারীরিক, মানসিক এবং সামাজিক জীবনের জন্য এতটাই গুরুত্বপূর্ণ যা বলে বোঝানো যায় না। ভোরের পাখি যেমন সবার আগে খাবার পায়, ঠিক তেমনি আমরা যদি ভোরের শুরুতেই কাজ শুরু করি তাহলে সাফল্য আমাদের আসবেই। তাহলে চলুন সকালে ঘুম থেকে ওঠার ৩০ টি উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানি-

  1. আমরা যদি সকালে বা খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠি তাহলে আমাদের শরীরের মেটাবলিজমকে সক্রিয় করে রাখে যা সারা দিনের জন্য প্রয়োজনীয় শক্তির সরবরাহ করতে সাহায্য করে।
  2. ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য আমাদের প্রথম কাজই হচ্ছে ভরে ঘুম থেকে উঠে রুটিন অনুযায়ী খাওয়া ও শরীর চর্চা শুরু করা।
  3. সূর্য স্নান আমাদের জন্য খুবই উপকারী। সকালের পর্যাপ্ত সূর্যের আলো থেকে ভিটামিন ডি শরীরের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। চিকিৎসকসহ বিভিন্ন জ্ঞানীগুণী ব্যক্তি বলেন, ঘরের প্রথম যে সূর্য উঠে সেই আলোটা পুরো শরীরে নিতে হবে।
  4. আমরা যদি ভোরে ঘুম থেকে উঠি এবং আমাদের পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুম হয় তবে এটি আমাদের ত্বককে সাথে করে এবং উজ্জ্বলতা দেখায়। ত্বকের উজ্জ্বলতা পাওয়ার জন্য সকালে ঘুম থেকে ওঠা এবং ত্বকের কিছু ব্যায়াম করা খুবই উপকারী।
  5. আমরা যদি ভোরে ঘুম থেকে উঠে ব্যায়াম করি তাহলে আমাদের হৃদরোগ প্রতিরোধে অনেক সাহায্য হয়। এর ফলে আমাদের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং আমাদের হৃদযন্ত্র ভালো থাকে।
  6. ভোরের পরিষ্কার বিশুদ্ধ বাতাস সঠিক সময়ে শ্বাসনালীর মাধ্যমে নিলে আমাদের শ্বাসতন্ত্রের জন্য অনেক উপকার হয়। এইজন্য ভরে ঘুম থেকে উঠে স্বাসতন্ত্রের জন্য ভোরের বিশুদ্ধ বাতাস গ্রহণ করতে হবে।
  7. আমরা যদি সকালে ঘুম থেকে উঠে শরীরকে সঠিক সময়ে খাবার দিই তাহলে আমাদের হজম প্রক্রিয়া উন্নত হয়। এর ফলে খুব সহজেই আমাদের খাদ্য পাচনতন্ত্র উন্নত হয়।
  8. খুব সকালে ঘুম থেকে উঠে বাইরের বাতাস নিয়ে চলাফেরা করলে আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। যা শরীরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
  9. সুস্থ জীবনধারার জন্য আমাদেরকে সকালে ওঠার অভ্যাস করতে হবে এর ফলে আমাদের সামগ্রিক স্বাস্থ্য ভালো থাকবে। সকালের প্রকৃতির নির্মল বাতাস আমাদের জীবনকে সাহায্য সুন্দর করে।
  10. ভোরের সূর্যালোকে আমাদের জন্য রয়েছে ভিটামিন ডি। যা আমাদের হাড়ের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই ভিটামিন ডি আমরা যদি শরীরে গ্রহণ করি তাহলে আমাদের হাড় মজবুত হবে। এইজন্য ভোরে বা সকালে ঘুম থেকে উঠা অত্যন্ত জরুরী।
  11. সকালে বাপরে ঘুম থেকে উঠা শুধু আমাদের শারীরিক উন্নতির জন্য নয় আমাদের মানসিক উন্নতির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সকালে ঘুম থেকে উঠলে আমাদের মানসিক চাপ ও উদ্যোগকে কমাতে সাহায্য করে।
  12. ঘরে বা সকালে ঘুম থেকে উঠলে অনেকটা সময় নিয়ে নিজেকে প্রস্তুত করার সুযোগ পাওয়া যায়। যার ফলে আমাদের মনের স্থিরতা বৃদ্ধি পায়।
  13. সকালের বা ভোরের সৌন্দর্য প্রতিটি মানুষকে করে অনেক আকর্ষিত। সকালে প্রকৃতির এই নীরবতা এবং সৌন্দর্য মানুষের মনকে ইতিবাচক করে তোলে। যার ফলে বিভিন্ন ধরনের চিন্তা মুক্ত হয়ে ইতিবাচক চিন্তাধারার প্রভাব আনতে সক্ষম হয়।
  14. সকালে ঘুম থেকে উঠলে সাধারণত আমাদের মস্তিষ্ক সতেজ থাকে যা বিভিন্ন ধরনের তথ্য উপাত্ত ভালোভাবে ধরে রাখতে সাহায্য করে। যার ফলে আমাদের স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পায় এবং আমরা আমাদের দৈনন্দিন কাজে ব্যবহার করতে পারি। 
  15. খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠার ফলে আমাদের মস্তিষ্ক পরিষ্কার থাকে যার ফলে আমরা সৃজনশীল কাজের জন্য নিজেকে সুন্দরভাবে প্রস্তুত করতে পারি।
  16. সকালের প্রকৃতির নিস্তব্ধতায় এবং ধীরস্থির পরিবেশের জন্য বিভিন্ন ধরনের কাজ করলে আমাদের ধৈর্য শক্তি বৃদ্ধি পায়।
  17. সকালে বা ভরে ঘুম থেকে উঠলে আমাদের মন অনেক সতেজ থাকে যার ফলে এ প্রশান্ত পরিবেশে আমাদের মনোযোগ যে কোন বিষয়ে বাড়াতে সাহায্য করে। এইজন্য সকালে উঠে পড়াশোনা করলে সেই পড়া মনে থাকে।
  18. সকালে ঘুম থেকে উঠে প্রকৃতির মাঝে নিজেকে বিলিয়ে দিলে আমাদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি পায়। যার ফলে সঠিকভাবে পরিকল্পনা ও কাজ শুরু করতে পারি এবং আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠে।
  19. সকালে ঘুম থেকে উঠে প্রকৃতির সঙ্গে সংযোগ রাখলে আমাদের মানসিক শান্তি প্রদান করে। যার ফলে বিভিন্ন ধরনের মানসিক সমস্যা থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য অনেক উপকার করে।
  20. আমরা যদি ভোরে ঘুম থেকে উঠে তাহলে দিনটিকে সঠিকভাবে সাজানোর একটি সুযোগ পায়। অনেকটা সময় পায় এবং প্রতিটি কাজ আমরা সুষ্ঠুভাবে এবং সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করতে পারি।
  21. সকালে ঘুম থেকে উঠলে সাধারণত আমরা আমাদের মধ্যে সময় নষ্ট হওয়ার একটি গুণ তৈরি করতে পারি। যে কোন কাজ আমরা সময়মতো করার একটি মানসিকতা তৈরি করতে পারি।
  22. আমরা যদি খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে আমাদের কাজগুলো শুরু করি তাহলে দিনের কাজে দ্রুত ও সঠিক কার্যকর ভাবে শেষ করা সম্ভব হয়।
  23. খুব ভোরে বা সকালে ঘুম থেকে উঠার ফলে আমরা সারাদিনে কোন ধরনের কাজ করব বা কিভাবে করব এই পরিকল্পনাগুলো করার সুযোগ পাওয়া যায়। যার ফলে প্রতিদিনের জীবনযাপনে কোন ধরনের কাজ পরের দিনের জন্য আটকে থাকে না।
  24. ভোরে ঘুম থেকে উঠলে পরিবারের সাথে সময় কাটানোর সুযোগ পাওয়া যায়। কারণ দৈনন্দিন জীবনে আমরা সবাই প্রতিনিয়ত ব্যস্ততার মধ্যে কাটাতে হয়। যার ফলে একে অপরের সাথে সময় দেওয়া খুব কষ্টসাধ্য হয়ে যায়।
  25. সকালে কাজ করার অভ্যাস তৈরি করলে আমাদের কর্মজীবনে সাফল্য বয়ে আনতে খুব সহজ হবে।
  26. ভোরে ঘুম থেকে ওঠা আমাদের ব্যক্তিগত বা পেশাগত জীবনে একটি শৃঙ্খলাবোধ নিয়ে আসে। যার ফলে আমরা শৃঙ্খলার মধ্যে জীবন যাপন করতে অভ্যস্ত হই।
  27. সকালে ঘুম থেকে উঠলে এবং কাজ শুরু করলে সারাদিন জোরে উদ্যমে থাকা যায়। যার ফলে প্রতিটি মানুষের মধ্যে একটি উদ্যমী মনোভাব তৈরি হয়।
  28. সকালে ঘুম থেকে উঠলে কাছের মানুষের সঙ্গে সময় দিতে পারা যায় যার ফলে সম্পর্কের উন্নতি হয়।
  29. সকালের এ অভ্যাস সামগ্রিকভাবে আমাদের জীবনযাপনের জন্য মান উন্নয়ন বা মান উন্নত করে তোলে।
  30. খুব ভোরে উঠে বা সকালে কাজুর করলে আমাদের কর্ম ক্ষমতা বৃদ্ধি হয়। যার ফলে দিনের কাজ দ্রুত ও কার্যকর ভাবে শেষ করতে পারি।

সকালের সোনালী আলো-কেন ভোরে ওঠা জীবনের সেরা বিনিয়োগ?

সকালের সোনালী আলো- কেন ভোরে ওঠা জীবনের সেরা বিনিয়োগ? এ সম্পর্কে আমাদের প্রত্যেকেরই জানা উচিত। বেনজামিন ফ্রাংকলিন বলেছেন, ”সকালের সময়টি সোনা দিয়ে কেনার মত মূল্যবান”। তাহলে সকালের সোনালী আলো আমাদের জীবনের জন্য কতটা সেরা বিনিয়োগ হতে পারে এই কথাটিতেই অনেকখানি বোঝা যায়। সকালে ওঠা আমাদের জীবনের জন্য যে কতটা উপকারী তা সম্পর্কে নিচে বর্ণনা করা হলো-

সকালে ঘুম থেকে উঠার অভ্যাস আমাদের প্রত্যেকের জীবনের প্রতিটি দিককে অনেক সমৃদ্ধশালী করে তোলে। এটি আমাদের শারীরিক, মানসিক, সামাজিক এবং পেশাগত জীবনকে করে তোলে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একটি স্বাস্থ্যকর অভ্যাস নয় এটি আমাদের দিন এবং পুরো জীবনকে বদলে দেওয়ার একটি অন্যতম হাতিয়ার। আসন ভরে উঠার উপকারিতা এবং এর প্রভাব সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করি।

ভোরে উঠার প্রভাব ও উপকারিতাঃ

শারীরিক স্বাস্থ্য উন্নয়নঃ ভরে ঘুম থেকে উঠে আমরা যখন আমাদের প্রকৃতির সঙ্গে নিজেকে বিলিয়ে দিই তখনই আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারিতা নিয়ে আসে। ভরে থাকা পরিবেশের মধ্যে বিশুদ্ধ বাতাস ও অক্সিজেন আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী। আমরা যে প্রতিনিয়ত সকালে ঘুম থেকে উঠে যার ফলে আমাদের শরীরের করটিসল ও মেলাটোনিন হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখে। ভোরে ঘুম থেকে উঠার প্রভাব ও উপকারিতা হল আমাদের শরীরের হরমোনের ভারসাম্য ঠিক রাখতে সাহায্য করে।

ভোরে ঘুম থেকে ওঠার আরেকটি উপকারিতা হল আমাদের শরীরে শক্তি বাড়ায় এবং আমাদের হৃদরোগ প্রতিরোধ করে। ভোরে উঠে আমাদের শারীরিক কার্যক্রম শুরু করলে আমাদের বিপাকক্রিয়া সক্রিয় হয় এবং আমরা সারাদিনের জন্য আমাদের শরীরের শক্তি সঞ্চয় করি। আবার সকালে হাঁটাচলা ফেরা বা হালকা ব্যায়াম আমাদের   ‍হৃদযন্ত্রের জন্য খুবই উপকারী। ভরে ওঠে শারীরিক এই ব্যায়াম আমাদের হৃদযন্ত্রের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে।

ভরে ঘুম থেকে উঠার আরেকটি উল্লেখযোগ্য প্রভাব ও উপকারিতা হল আমাদের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারি এবং আমরা ভিটামিন ডি পাওয়ার সুযোগ পায়। সকালে উঠে আমরা যদি আমাদের শারীরিক কার্যক্রম শুরু করি এবং শরীরচর্চা ও খাওয়ার নিয়ন্ত্রণ করে তাহলে খুব সহজেই আমরা আমাদের ওজন কমাতে পারি। আবার ভোরের সূর্যের আলোতে থাকে ভিটামিন ডি। এই ভিটামিন ডি আমাদের শরীরে নিয়ে এর মাত্রা বাড়িয়ে হাড়কে মজবুত রাখতে পারি।

মানসিক প্রশান্তি ও কার্যক্ষমতা বৃদ্ধিঃ সকালের শান্ত পরিবেশ আমাদের মানসিক প্রশান্তি রাখতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এর প্রাকৃতিক আলোর উপস্থিতিতে আমাদের মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে। এর ফলে আমাদের মনোযোগ ও স্মৃতিশক্তি বাড়াতেও সাহায্য করে। কারণ মস্তিষ্ক শান্ত এবং কর্মক্ষম হলে আমাদের মানসিক প্রশান্তি ও কার্যক্ষমতাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ভোর বেলার স্নিগ্ধ সতেজৎ পরিবেশ আমাদের মনকে শান্ত রাখে এবং আমাদের নেতিবাচক চিন্তাকে দূরে রেখে আমাদের ইতিবাচক মনোভাব তৈরি করে।

ভোর বেলায় ঘুম থেকে উঠলে এবং সেই সময়ে আমরা যে ধ্যান বা যোগব্যায়াম করি এর ফলে আমাদের স্ট্রেস হরমোন উৎপাদন হয় যা আমাদের মানসিক আপ কমাতে সাহায্য করে। এছাড়াও আমরা যখন সকালে ঘুম থেকে উঠে দ্রুত কাজ শুরু করি তখন সারাদিনের জন্য আমাদের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।

সফলতা ও ব্যক্তিগত উন্নয়নঃ একজন ব্যক্তির সফলতা এবং ব্যক্তিগত উন্নয়ন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অ্যারিস্টোটাল বলেছেন, ”ভোরবেলা উঠে পরিকল্পনা কর, কারণ দিন শুরু করার সঠিক সময় এটি”। অতএব আমাদের ভরে ঘুম থেকে ওঠা আমাদের জীবনকে শৃঙ্খলা ও সফলতার দরজা খুলে দিতে সাহায্য করে। আমরা যদি সময়ের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করি তাহলে সারা দিনের পরিকল্পনা করার জন্য যথেষ্ট সময় দেয়।

সারাদিনের কাজগুলো আমরা কিভাবে সম্পন্ন করব তা নির্ধারণ করতে হলে আমাদের সেরা সময় হলো সকাল যা আমাদের পরিকল্পনার দক্ষতা বাড়াতে সাহায্য করে। কল্পনা করতে গিয়ে নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাসও বাড়ায়। তাই সময় মত উঠতে পারলে এবং নিজেকে গুছাতে পারলে নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠা খুবই সহজ। ভরে ওঠ তাদের সময়কে সঠিকভাবে কাজে লাগাতে সক্ষম হয় এবং আমাদের জীবনের সাফল্য নিয়ে আসে।

সামাজিক ও সম্পর্ক উন্নয়নঃ বর্তমান সময়ে আমরা এতটাই কর্ম ব্যস্ততায় নিজেকে নিয়োজিত রাখি যে আমরা আমাদের সামাজিক সম্পর্কগুলো সঠিকভাবে ধরে রাখতে পারি না। নিজের পরিবারের সাথে সময় কাটানোর সুযোগ পায় না। তাই আমরা যদি ভোরে ঘুম থেকে উঠে তাহলে আমাদের হাতে অফুরন্ত সময় থাকে যা আমরা আমাদের পরিবারের সাথে করতে পারি। খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে আমরা যখন হার্ট বের হই তখন আমাদের প্রতিবেশী বা আশপাশের মানুষের সাথে দেখা হয় যা আমাদের সামাজিক সম্পর্ক রাখতে সাহায্য করে।

আরও পড়ুনঃ লেবুর উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে ২০টি কার্যকরী উপায় 

প্রকৃতির সঙ্গে সংযোগঃ ভোরের সোনালী আলো আমাদের ব্যক্তিগত মানসিক প্রশান্তি দেয় এবং আমাদের সৃজনশীলতাকে বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করে। সকাল বেলার পাখিদের কিরমিচির শব্দ এবং প্রকৃতির নির্মল স্নিগ্ধতায় আমাদের মানসিক চাপ কমতে সাহায্য করে। সূর্যোদয়ের সময় প্রকৃতির যে এত সৌন্দর্যতা সেটা আমরা দেখতে পাই এবং আমাদের মধ্যে এক ধরনের সৃজনশীলতার অভিজ্ঞতা কাজে আসে। যার ফলে আমরা বিভিন্ন ধরনের কাজের জন্য নিজেকে অনুপ্রাণিত করতে পারি।

দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্য উপকারিতাঃ আমরা যদি নিয়মিত খুব ভরে ঘুম থেকে উঠে আমরা আমাদের জীবনের কার্যক্রম শুরু করতে পারি তাহলে আমরা বিভিন্ন ধরনের অসুখ থেকে দূরে থাকবো। দীর্ঘ দীর্ঘমেয়াদী অসুস্থতা যেমন ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ এবং আয়ুষ্কাল ভালো রাখার জন্য ভরে ঘুম থেকে উঠা খুবই জরুরী। এর ফলে আমাদের দীর্ঘ মেয়াদে স্বাস্থ্য উপকারিতা ভালো পাওয়া যায়।

পরিশেষে বলা যায় যে, সকাল বেলার সোনালী আলো শুধুমাত্র একটি প্রাকৃতিক দৃশ্য নয় এটা আমাদের জীবনের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ভোরে ঘুম থেকে ওঠার অভ্যাস শুধুমাত্র দিনের ভালো শুরু করে তেমন নয় বরং এটি আমাদের সফল, সুস্থ এবং সুখী জীবন যাপনের জন্য অত্যাধিক গুরুত্বপূর্ণ। তাই আমাদের সুন্দর এবং সুস্থ সুখী জীবনের জন্য সবচেয়ে বড় বিনিয়োগ এই ভোরে ঘুম থেকে ওঠা। তাই আজ থেকে আমরা সবাই এই অভ্যাসটি তৈরি করব এবং আমাদের জীবনকে বদলে দিব।

সকালে ঘুম থেকে না উঠলে কি হয়

সকালে ঘুম থেকে না উঠলে কি হয় এই সম্পর্কে আমরা অনেকেই জানিনা। অনেকেই অজানা বলে আমরা এই ভুলটা করে থাকি। প্রতিটি জিনিসেরই একটি সরল, সহজ এবং সঠিক দিকনির্দেশনা রয়েছে। ঠিক তেমনি সকালে ঘুম থেকে দেরি করে উঠলে আমাদের শারীরিক এবং মানসিক কত যে সমস্যা হয় তা আমাদের অনেকেই জানে না। দেরিতে ঘুম থেকে উঠলে যে আমাদের জীবনের ছন্দে ব্যাঘাত ঘটে তার বিস্তারিত বর্ণনা নিচে আলোচনা করা হলো।

সকালের প্রথম ঘন্টা গুলি আমাদের জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি বিনিয়োগ, এই কথাটি বলেছিলেন দালাইলামা। প্রতিটি জিনিসের যেমন একটি নির্দিষ্টতা আছে, ঠিক তেমনি আমাদের শরীরের একটি অভ্যন্তরীণ ঘড়ি রয়েছে যাকে বলা হয় সার্কাডিয়ান রিদম। এই সাধারণত আলোর সাথে সামঞ্জস্য রেখে আমাদের শরীরের অভ্যন্তরে কাজ করে। যখন আমরা দেরিতে ঘুম থেকে উঠি তখন তার এই ছন্দে ব্যাঘাত ঘটে, যার ফলে ঘুমের মান কম হয়ে যায়। 

আমরা যদি সকালে দেরি করে ঘুম থেকে উঠি তাহলে আমাদের সকালের খাবার বা নাস্তা বাদ পড়ে যায়, অনেক সময় খাওয়া হয় না। এর ফলে আমাদের শরীরে বিপাক ক্রিয়ার উপর প্রভাব ফেলে যা সাধারণত ওজন বৃদ্ধির কারণ হতে পারে। আমাদের মস্তিষ্কে সেরোটোনিন উৎপাদন হয় যা সাধারণত সকালের তাজা বাতাস ও সূর্যের আলোতে তৈরি হয়। কিন্তু আমরা যদি দেরি করে ঘুম থেকে উঠি তাহলে এই সেরোটোনিন উৎপন্ন হয় না, যার ফলে আমারে মানসিক চাপ এবং বিষন্নতার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।

খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠলে আমরা আমাদের প্রতিদিনের কাজ প্রতিদিনই শেষ করতে পারি। কিন্তু যদি তাড়াতাড়ি উঠতে না পারি দেরি করে উঠে তাহলে আমাদের কাজের সময়ে সংকুচিত হয়ে যায় ফলে আমরা সব কাজ সেদিন শেষ করতে পারি না। যার ফলে আমাদের কাজের অসম্পূর্ণ অংশ থেকেই যায়। পরের দিন একইভাবে উঠলে সেদিনের ও কাজে অংশ থেকে যায়। এভাবে প্রতিদিনই কিছু অংশ থেকে যাওয়ার ফলে আমাদের জীবন অনেকটা পিছিয়ে যায়। 

আবার অনেক সময় ঘুম থেকে দেরি করে উঠার কারণে আমাদের শারীরিক কার্যকলাপ নষ্ট হয়ে যায়। দেরি করে ঘুম থেকে উঠলে এবং রাত জেগে থাকলে আমাদের লিভারের ওপর প্রভাব পড়ে। এছাড়াও হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ এবং অন্যান্য দীর্ঘস্থায়ী রোগের ঝুঁকি বাড়াতে সাহায্য করে। দেহে বিভিন্ন ধরনের রোগের বাসা বাঁধলে আমাদের শরীরে ক্লান্তি বোধ আসতে থাকে। যার ফলে আমাদের শরীর বেশি সক্রিয় থাকতে পারে না শক্তির অভাব ঘটে।

দেরি করে ঘুম থেকে উঠার ফলে আমাদের পরিকল্পনাগুলো ঠিকভাবে সম্পন্ন হয় না। যার ফলে ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনের অনেক কিছুর উপর প্রভাব পড়ে। আমরা বিভিন্ন ধরনের কর্মক্ষেত্র থেকে পিছিয়ে পড়ি। আবার সকালে সূর্যের আলো আমাদের শরীরের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ কারণ এই আলোতে থাকে ভিটামিন ডি। আর এই ভিটামিন ডি আমাদের শরীরের হাড়ের স্বাস্থ্য এবং ইমিউন সিস্টেমের জন্য খুবই জরুরী। তাই আমরা যখন দেরি করে ঘুম থেকে উঠি এ সকল অভাবে জীবন অনিয়মিত অনিয়ন্ত্রিত  অবস্থায় চলে যায়।

আমাদের জীবনের সিস্টেম যদি সঠিক না থাকে অর্থাৎ আমরা যদি রাতে তাড়াতাড়ি না ঘুমাই তাহলে সকালে আমরা তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠতে পারিনা। এর ফলে আমাদের রাত জাগার একটি অভ্যাস সৃষ্টি হয় যা আমাদের শরীরের জন্য দীর্ঘ মেয়াদে খুবই ক্ষতিকর। ভোরে ঘুম থেকে দেরি করে উঠার ফলে আমাদের দৈনন্দিন খাবার রুটিনে ব্যাঘাত ঘটে। কোন খাবারে আমরা সময়মতো সঠিকভাবে খেতে পারি না। ফলে আমাদের দৈনন্দিন জীবনে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়। তাই দেরি করে ঘুম থেকে উঠলে আমাদের ক্ষতি হয় কোন উপকার হয় না।

পরিশেষে বলা যায় যে, সকালে ঘুম থেকে না উঠলে আমাদের জীবন স্বাভাবিকভাবে অতিবাহিত হয় না। উপরের বর্ণিত তথ্য অনুযায়ী অবশ্যই বোঝা যাচ্ছে যে সকালের অভ্যাস আমাদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য অতীব ও গুরুত্বপূর্ণ। নিয়মিত সকালে উঠার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে তাহলেই আমাদের জীবনের গুণগতমান উন্নত করতে সাহায্য পাওয়া যাবে।

ভোরে ঘুম থেকে উঠার ১৫টি উপায়

ভোরে ঘুম থেকে উঠার ১৫টি উপায় সম্পর্কে আজকে আমরা আপনাদেরকে বিস্তারিত জানাবো। ভোরে ঘুম থেকে উঠার অভ্যাস তৈরি করা আমাদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী এবং গুরুত্বপূর্ণ। আমাদেরকে অবশ্যই ভোরে ঘুম থেকে উঠার কিছু কার্যকর কৌশল অনুসরণ করতে হবে। যেন আমরা অবশ্যই ঘরে ঘুম থেকে উঠতে পারি। ভরে ঘুম থেকে উঠার জন্য এই ১৫ টি উপায় সম্পর্কে আজকে বিস্তারিত আলোচনা করব।

সকালে-ঘুম-থেকে-উঠার-উপকারিতা-সম্পর্কে-বিস্তারিত-জানুন

  • নিয়মিত ঘুমানোর রুটিন তৈরি করুনঃ কথাতেই আছে, ”যে ঘুম ঠিক রাখে, সে জীবন ঠিক রাখে”। অর্থাৎ নিয়মিত ঘুমানোর অভ্যাস আমাদের জীবনের সার্বিক সুস্থতা এবং সাফল্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ঘুম ঠিক থাকলে শরীর ও মন আমাদের ভালো থাকে। যা প্রতিটি কাজের অগ্রগতির জন্য অনেক প্রয়োজন। তাই আমাদেরকে নিয়মিত ঘুমানোর রুটিন তৈরি করতে হবে। আমরা যেন প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমের অভ্যাস গড়ে তুলি। এতে আমাদের মন ও শরীর স্বাভাবিক  থাকবে এবং আমাদের ঘুমের মানকে উন্নত করবে। আমরা রাতের একটি নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমাবো যেন ঠিক ৬ থেকে ৭ ঘন্টা পর সে ঘুম থেকে উঠতে পারি। কারণ একজন স্বাভাবিক মানুষের ঘুম ৬ থেকে ৭ ঘন্টা।
  • ঘুমের পরিবেশ তৈরি করুনঃশান্ত ঘর গভীর ঘুমের দরজা খুলে” অর্থাৎ ঘুমানোর জন্য যে পরিবেশ প্রয়োজন সেটিকে বোঝায়। শান্ত অন্ধকার এবং আরামদায়ক ঘর আমাদের ঘুমের জন্য খুবই সহায়ক। তাই ঘুমের জন্য একটি শান্ত ও আরামদায়ক পরিবেশ তৈরি করতে হবে। আমাদেরকে ঘরটিকে অন্ধকার ও শব্দ মুক্ত রাখতে হবে কারণ এটি আমাদের গভীর ঘুমের জন্য সাহায্য করবে। বাড়ির শব্দ আলো বা অস্বস্তিকর পরিবেশ সাধারণত আমাদের ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায় তাই ভালো ঘুমের জন্য আমাদেরকে প্রথমে উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করতে হবে।
  • ঘুমের আগে স্ক্রিন এড়ানোঃস্ক্রিনের আলো ঘুমের ছন্দ ভাঙে “ অর্থাৎ আমরা যদি ঘুমের আগে স্ক্রিন ব্যবহার করি যেমন মোবাইল, টিভি বা ল্যাপটপের নীল আলো তাহলে ঘুমের অনুভূতিটা কেটে যায়। এইগুলো ব্যবহারের ফলে আমাদের মস্তিষ্কে মেলাটোনিন হরমোন উৎপাদনে বাধা প্রদান করে। যার ফলে এটি আমাদের ঘুম আসতে দেয় না অর্থাৎ ঘুমের মান নষ্ট করে। এই কারণে ঘুমাতে যাওয়ার প্রায় এক ঘণ্টা আগে আমাদের এইসব ব্যবহার থেকে দূরে থাকতে হবে। এর পরিবর্তে আমরা বিভিন্ন ধরনের বই অথবা নিজ নিজ ধর্ম অনুযায়ী বিভিন্ন দোয়া পড়ার মতো শান্তিপূর্ণ কাজ করতে পারি। এই অভ্যাস আমাদের ঘুমের মান উন্নত করতে সাহায্য করবে।
  • প্রাকৃতিক আলো ব্যবহার করুনঃ আমাদের ঘুমানোর জন্য যেহেতু মস্তিষ্কের মেলাটোনিন হরমোন সাহায্য করে তাই আমাদেরকে এই মেলাটোনিন হরমোন উৎপাদন করা হবে। সাধারণত সকালে সূর্যের আলো গ্রহণ করলে আমাদের মস্তিষ্কে মেলাটোনিন হরমোন উৎপাদন বেড়ে যায়। যার জন্য আমাদেরকে প্রকৃতির অর্থাৎ দিনের বেলার আলোতে সময় কাটাতে হবে যা ফলে রাতে তাড়াতাড়ি ঘুম আসবে এবং ভালো বিশ্রাম হবে। প্রতিদিন বাইরের আলো বা জানালা দিয়ে সূর্যের আলো পাওয়া আমাদের শরীর ও মনের জন্য খুবই উপকারী।
  • সঠিক খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলুনঃ ”খাবারের যত্ন শরীরের যত্ন” এই কথাটির অর্থ বোঝায় যে সঠিক এবং পুষ্টিকর খাবার খেলে আমাদের শরীর সুস্থ ও শক্তিশালী থাকে। তাই অবশ্যই আমাদের খাবারের সঠিক খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। ঘুমানোর আগে কখনোই আমরা ভারী খাবার খাব না। বিশেষ করে ক্যাফেইন যুক্ত যেমন চা, কফি বা অ্যালকোহল সন্ধ্যার পর না খাওয়াই ভালো। রাতে সাধারণত হালকা পুষ্টিকর খাবার খাওয়া খুব ভালো কারণ এতে দ্রুত ঘুমিয়ে পড়তে সাহায্য করে এবং অবশ্যই সেই খাবারটা রাত আটটার মধ্যেই খেতে হবে।
  • এলার্ম সেট করার কৌশলঃ আপনি যদি মনে করেন সকালে ঘুম থেকে উঠার জন্য মোবাইলে বা ঘড়িতে অ্যালার্ম সেট করবেন তাহলে অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে, এলার্ম সেট করার পর এমন স্থানে রাখতে হবে যা বন্ধ করতে গেলে আপনাকে উঠতে হয়। কারণ হাতের পাশে থাকলে খুব সহজেই বন্ধ করে আবারো ঘুমিয়ে যাওয়া হয়। দ্বিতীয়বার ঘুমিয়ে গেলে সঠিক সময়ে ঘুম থেকে উঠা আমাদের হয় না। এলার্ম টোন প্রিয় সুর বা হালকা সংগীত হিসাবে ব্যবহার করতে পারেন যা আপনাকে ধীরে ধীরে জাগিয়ে তুলবে। কিন্তু যদি এই টোন দ্রুত বা বেশি মিউজিক সম্পন্ন হয় তাহলে হঠাৎ ঘুমের মধ্যে বাজলে আপনার শারীরিক ক্ষতি হবে। 
  • শারীরিক কার্যকলাপ বাড়ানঃ সকালে ওঠার জন্য সবচেয়ে কার্যকরী উপায় হল একটি সক্রিয় জীবনধারা যাপন করা। সক্রিয় জীবনধারায় যাপন করতে হলে আপনাকে সঠিক সময়ে ঘুমাতে হবে এবং সঠিক সময়ে উঠতে হবে। প্রতিদিন আপনি যদি শারীরিকভাবে ক্লান্ত হন তাহলে অবশ্যই রাতে ভালো ঘুম হয়। এইজন্য আমাদের প্রতিদিন হালকা ব্যায়াম করতে হবে এবং শারীরিক পরিশ্রম করতে হবে। রাতে ঘুমানোর আগে ব্যায়াম এড়িয়ে চলতে হবে।
  • ছোট ছোট লক্ষ লক্ষ নির্ধারণ করুনঃ আপনার যদি সকালে ঘুম থেকে উঠার অভ্যাস না থাকে তাহলে অবশ্যই প্রথমে আপনাকে ছোট ছোট লক্ষ্য নির্ধারণ করতে হবে। প্রথমে ধীরে ধীরে অভ্যাস গড়তে হবে তারপর প্রতিনিয়ত সেই অভ্যাসে পরিণত হতে হবে। যদি আপনি ভোর পাঁচটায় উঠতে চান তাহলে প্রথমে আপনি অবশ্যই ঘুম থেকে উঠার অভ্যাস সকাল সাতটায় করতে পারেন। তারপর ধীরে ধীরে কমিয়ে ভোর পাঁচটায় উঠার অভ্যাস তৈরি হতে পারে।
  • সকালের জন্য একটি প্রেরণা তৈরি করুনঃ আপনি যদি সকালে ঘুম থেকে উঠতে চান তাহলে সবার আগে আপনাকে একটি মানসিকভাবে নিজের মনে মনে প্রেরণা তৈরি করতে হবে। যেমন আপনাকে অবশ্যই সকলের জন্য আকর্ষণীয় কাজ প্ল্যান করতে হবে যেমন সকালে ঘুম থেকে উঠে প্রকৃতির সাথে নিজেকে মানিয়ে হাঁটা বা ব্যায়াম করা অথবা বিভিন্ন ধরনের যোগ ব্যায়াম করা। এই কাজগুলো আপনাকে অনুপ্রাণিত করবে সকালে ঘুম থেকে উঠার জন্য।
  • ঘুমের মান উন্নত করাঃ সকালে ঘুম থেকে উঠার জন্য সবচেয়ে প্রয়োজনীয় কাজ হল আপনার ঘুমের মান উন্নত করতে হবে। কারণ রাতে যদি ঘুম ভালো হয় তাহলে সকালে ঘুম থেকে ওঠা খুবই সহজ। আপনাকে স্ট্রেস কমাতে হবে অথবা ঘুমানোর আগে ধ্যান বা গভীর শ্বাস প্রশ্বাসে ব্যায়াম অভ্যাস করতে হবে। আপনি যদি সকালে ওঠার জন্য মনস্থির করেন যে ভোর পাঁচটায় উঠবেন তাহলে অবশ্যই এলার্ম পাঁচটায় দিবেন এবং মনোভাবে স্থির করবেন যে আপনি পাঁচটায় উঠবেন। তা না হলে ভোর চারটা থেকে আপনি মানসিকভাবে অস্বস্তিতে ভুগবেন যে এখনই উঠতে হবে।
  • সোশাল একাউন্টেবিলিটিঃ ঘুম থেকে সকালে ওঠার আরেকটি পদ্ধতি হলো আপনি যদি সকালে ঘুম থেকে উঠতে চান তাহলে অবশ্যই একজন সঙ্গী খুঁজুন। যার সাথে আপনি সকালে মর্নিং ওয়ার্ক বা বিভিন্ন ধরনের ব্যায়ামে নিজেকে নিয়োজিত রাখবেন। বন্ধু বা পরিবারের সঙ্গে সকালের এই পরিকল্পনা করলে আপনার ঘুম থেকে ওঠা খুবই সহজ হবে।

 আরও পড়ুনঃ খালি পেটে করলার জুস খাওয়ার উপকারিতা 

  • নিজেকে পুরস্কৃত করুনঃ আপনি যদি ধীরে ধীরে সফলভাবে সকালে উঠতে পারেন তাহলে অবশ্যই নিজেকে ছোট ছোট পুরস্কার দেন। এই অভ্যাসটি আপনাকে পরবর্তী সকালে ওঠার জন্য অনুপ্রেরণা দিবে। যেকোনো কাজের জন্য ব্যক্তিগত অনুপ্রেরণা খুবই জরুরী। নিজেকে ধন্যবাদ দিতে শিখতে হয় যে অবশ্যই আমি কাজটি পেরেছি এবং ঘুম থেকে উঠেছি।
  • নিষ্ক্রিয়তা দূর করুনঃ আপনাদের মধ্যে অনেকেই আছে যারা সকালে ঘুম থেকে উঠে বিছানায় বসে থাকে এবং অলসতাকে আরো ব্যক্তিগতভাবে জায়গা দেয়। তাই ঘুম থেকে উঠে বিছানায় বসে না থেকে দ্রুত বিছানা থেকে নেমে উঠতে হবে। কারণ বিছানা এমন একটি জিনিস যেখানে আপনাকে আরাম করার জন্য মানসিকভাবে প্রোপজাল দেবে। তাই সকালেই উঠেই বিছানায় বসে না থেকে দ্রুত কিছু কাজ করার চেষ্টা করুন। এই পদ্ধতিটি আপনাকে পুরোপুরি জাগিয়ে তুলতে সাহায্য করবে।
  • কৃত্রিম আলো এড়িয়ে চলুনঃ রাতে অত্যাধিক কৃত্রিম আলো ব্যবহার করা যাবে না কারণ এটাতে আমাদের মস্তিষ্কে বিয়ের অনুভূতি সৃষ্টি করে যা ঘুমাতে দেরি হয়। এই জন্য অতিরিক্ত কৃত্রিম আলো এড়িয়ে চলতে হবে।
  • সূর্যের আলোর ব্যবস্থা করুনঃ সকালে যদি সূর্যের আলো ঘরের মধ্যে প্রবেশ করার মতো কোনো পদ্ধতি না থাকে তাহলে আপনার চোখ থেকে ঘুম যাবে না। মনে হবে তখনও রাত আছে বলে আপনি ঘুমিয়ে থাকবেন। তাই অবশ্যই সকালের সূর্যের আলো যাতে আপনার ঘরের মধ্যে প্রবেশ করে সে ব্যবস্থা রাখতে হবে। সেই আলো এসে আপনাকে ঘুম থেকে জেগে উঠতে সাহায্য করে এবং পুরো দিনটি যেন সে আলোর মত সতেজতায় ভরে ওঠে সে ব্যবস্থা করবে। তাই ঘরে সূর্যের আলো যেন পৌঁছায় সেই ব্যবস্থা রাখতে হবে।

পরিশেষেই বলা যায় যে, সকালে ঘুম থেকে ওঠার উপায় এর মধ্যে সবচাইতে ভালো অভ্যাস হলো নিজেকে আগে মানসিকভাবে প্রস্তুত করতে হবে যে আমাকে সকালে ঘুম থেকে উঠতে হবে। ভরে ঘুম থেকে উঠার সবচাইতে বড় হাতিয়ার হল নিজের মানসিকতার পরিবর্তন। একটু কঠিন হলেও ধৈর্যের সাথে এগিয়ে হবে এবং উপরের বর্ণিত প্রতিটি পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। যেকোনো উপায়ে নিয়মিত চর্চার মাধ্যমে আমাদের অভ্যাসে পরিণত করা যায়। কারণ কথায় আছে মানুষ অভ্যাসের দাস।

সকালে ঘুম থেকে উঠার হাদিস সম্পর্কে বিস্তারিত

সকালে ঘুম থেকে উঠার হাদিস সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা আমরা জানবো। ভোরে ঘুম থেকে উঠার জন্য ইসলামে আমাদের কিছু গুরুত্বপূর্ণ আমল ও দোয়ার কথা উল্লেখ রয়েছে। ইসলামী পরিভাষায় ”সকাল হল মুমিনের বরকতের সময়” অর্থাৎ ইসলামে সকালে ঘুম থেকে ওঠা এবং কাজ শুরু করার সময়কে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও বরকতময় বলা হয়েছে। 

আমরা যদি ফজরের নামাজ পড়ে দ্বীনের কার্যক্রম সূচনা করি তাহলে জীবনের সাফল্য, রুহানি শান্তি এবং আল্লাহর রহমত আসবে। আমাদের মহান আল্লাহ তায়ালার দয়া অর্জনের জন্য সকাল কে কাজে লাগাতে বলেছেন। প্রতিদিন ফজরের সময় মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের জন্য পৃথিবীর বুকে নেমে আসেন এবং তার রহমত আমাদের মাঝে দিয়ে যান। এইজন্য আল্লাহ তাআলার কাছে আমাদের রহমত বর্ষণের ক্ষেত্রে সকালে ঘুম থেকে ওঠা ফরজ।

রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন,” আমার উম্মতের জন্য সকাল সময়কে বরকতময় করে দেওয়া হয়েছে” (তিরমিজি)। এ হাদিস থেকে বোঝা যায় যে ভোরের সময় কাজে লেগে গেলে তাতে বরকত হয় এবং দ্বীনের কাজ আমাদের সহজ ও অনেক ফলপ্রসু হয়।

আমাদের ইসলামে সকালবেলা ফজরের নামাজ পড়ার পরপরই আমাদের দিনের শুরু হয় যা আমরা এবাদতের মাধ্যমে শুরু করি। এটি সাধারণত আমাদের মানসিক ও আধ্যাত্মিক শক্তি বৃদ্ধি করে এবং আমরা খুব সহজে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতে পারি। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন আমরা যেন ফজরে উঠে রাব্বুল আলামীনকে স্মরণ করি এবং আমাদের প্রতিনিয়ত কাজে লেগে যায়। এতে আমাদের বরকত হয় এবং প্রতিটি মনের আশা পূর্ণ হয়।

রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন “ তোমাদের কেউ যখন ঘুমায় শয়তান তখন তার মাথায় তিনটি গিরা দেয়। প্রতিটি গিরা বেঁধে সে বলে রাত দীর্ঘ তুই এখন ঘুমা। যখন মানুষ ফজরের আজানে জেগে ওঠে এবং আল্লাহকে স্মরণ করে তখন একটি গিরা খুলে যায়। তারপর যখন রব্বুল আলামীন কে সন্তুষ্ট করার জন্য, নামাজ পড়ার জন্য সে ওযু করে তখন আরেকটি গিরা খুলে যায়। তারপর যখন নামাজে দাঁড়ানো হয় এবং নামাজ আদায় করা হয় তখন সব গিরা খুলে যায় এবং সে সকালের শুরুতে প্রাণবন্ত ও উচ্ছল অনুভব করে। অন্যথায় সে অলস ও বিমর্ষ হয়ে ওঠে।” (বুখারী মুসলিম)

মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে একটি অশেষ নেয়ামত দান করেছে যা আমরা যদি ভরে ঘুম থেকে উঠি তাহলে শারীরিকভাবে সুস্থ থাকবো। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) স্বয়ং নিজে ভরে জেগে ফজরের নামাজ আদায় করতেন এবং সকালে কাজ শুরু করতেন। এর ফলে শারীরিকভাবে সুস্থ থাকতেন এবং মানসিকভাবে থাকতেন আনন্দদায়ক।

সকালের কাজে যদি মনোনিবেশ করা হয় তাহলে আমাদের জীবিকা নির্বাহের পথ খুবই সহজ হয়। সকালে ঘুম থেকে জেগে উঠে ইবাদত ও কাজে লাগলে আমাদের জীবনে সফলতা এবং বরকত আসবেই। আল্লাহ তাআলা ফজরের সময় অনেক নেয়ামত নিয়ে এই পৃথিবীর বুকে নেমে আসেন। তিনি বলেন হে আমার বান্দা তোমরা কে কি চাও আমি তোমাদেরকে দেওয়ার জন্য এসেছি। কিন্তু আমরা যারা ঘুম থেকে উঠে আল্লাহর কাছে চাই আল্লাহ তাদেরকে অশেষ রহমত দান করে যান। আর যারা ঘুমিয়ে থাকে আল্লাহতালা তাদের জন্য যে রহমত নিয়ে এসেছিলেন তার প্রকৃতির মাঝে বিলিয়ে দেন। আর এই জন্যই আমাদের প্রকৃতি এত সুন্দর।

আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে এই দুনিয়ায় পাঠিয়েছেন তার এবাদত বন্দেগি করার জন্য। সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে ফজরের নামাজ পড়া এবং সকালে কাজ শুরু করলে শুধু দুনিয়ার নয় বরং আখিরাতের জন্য আমাদের কল্যাণ বয়ে আনে। ইসলামের নির্দেশ অনুযায়ী সকালে ওঠা শুধু আধ্যাত্মিক উন্নতির জন্য নয়। এটি আমাদের মানসিক, শারীরিক এবং প্রার্থীর জীবনের উন্নতির জন্য অপরিহার্য।

ভোরে ঘুম থেকে উঠার আমলঃ

আল্লাহর নাম স্মরণ করাঃ ঘুম থেকে জেগে ওঠে সর্বপ্রথম আল্লাহ প্রশংসা করতে হবে। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি ঘুম থেকে উঠে বলে- ”আলহামদুলিল্লাহিল্লাজি আহইয়ানা বা’দা মা আমাতানা ওয়া ইলাইহিন নুসুর” (সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর, যিনি আমাদের মৃত্যুর পর জীবিত করলেন এবং তারই কাছে আমাদের ফিরে যেতে হবে), সে ঘুম থেকে উঠার সাওয়াব পায়”। (বুখারী মুসলিম)

তারপর আমাদেরকে মেসওয়াক করতে হবে। ঘুম থেকে উঠার পর মেসওয়াক করা রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর একটি সুন্নত। এটি স্বাস্থ্যকর এবং পবিত্রতা অর্জনের একটি গুরুত্বপূর্ণ পন্থা। মেসওয়াক শেষ হলে আমাদেরকে ফজরের নামাজ আদায় করার জন্য অজু করতে হবে। ফজরের নামাজ হলো দিনের সেরা শুরু এবং এটি একটি ব্যক্তির রুহানি শক্তি বাড়ায়। ঘুম থেকে ওঠার সময় এবং ফজরের নামাজ আদায় করার পর দোয়া করা আমাদের দিনের বরকত নিয়ে আসে।

সকাল বেলার ইবাদতের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো ফজরের নামাজ আদায় করার পর কুরআন তেলাওয়াত করা। বিশেষ করে ইয়াসিন সূরা পাঠ করা আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটি বরকতময় একটি সূরা এবং দিনের কাজ সহজ করার জন্য সুপারিশ একটি আমল। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কাজ শুরু করার উপদেশ দিয়েছেন কারণ এই সময়কে বলা হয় বরকতময় সময়।

ভোরে ঘুম থেকে উঠার দোয়াঃ

”আলহামদুলিল্লাহিল্লাজি আহইয়ানা বা’দা মা আমাতানা ওয়া ইলাইহিন নুসুর”

অর্থঃ সব প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি আমাদের মৃত্যুর মতো ঘুমের পর জীবিত করলেন এবং তার কাছে আমাদের ফিরে যেতে হবে।”

ফজরের নামাজের পর দোয়াঃ

ফজরের নামাজের পর মহান আল্লাহর কাছে ক্ষমা চেয়ে এবং আমাদের জীবনের বরকত চেয়ে দোয়া করা যেতে পারে যেমন-

রাব্বি জিদনি ইলমা

অর্থঃ হে আমার রব, আমার জ্ঞান বৃদ্ধি করুন।

আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা হায়রান ফি ইয়াওমি হাজা

অর্থঃ হে আল্লাহ আমি আজকের দিনের কল্যাণ কামনা করি

এই আমল ও দোয়াগুলো পালন করলে ভোরবেলা থেকে ওঠা আধ্যাত্মিক ও দৈহিক উভয় দিক থেকেই আমাদের জন্য বরকত মনে হবে।

পরিশেষে  বলা যায় যে, ইসলামে ভোরবেলায় ঘুম থেকে ওঠা খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং বাধ্যতামূলক। ফজরের নামাজ পড়ে দিনের শুরু করতে হবে এবং এর মাধ্যমে আমাদের আল্লাহ তায়ালার ইবাদত সহ জীবনের যাত্রা পথ শুরু হবে। ভোর বেলায় ঘুম থেকে উঠলে আল্লাহর দয়া অর্জনের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। তাই ইসলামের নির্দেশনা অনুযায়ী আমাদের সকালে উঠে শুধু আধ্যাত্মিক উন্নতির জন্য নয় বরং সর্বাঙ্গীণ উন্নত কামনার জন্যই অপরিহার্য। ইসলামের এই হাদিসগুলো থেকে শিক্ষা নিয়ে সকালের বরকতময় সময়কে কাজে লাগাতে হবে এবং দৈনন্দিন জীবনে উপকৃত হতে হবে।

ভোরের বাতাসের উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত

ভোরের বাতাসের উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত আজকে আমরা আপনাদেরকে জানাবো। ভোরের বাতাস আমাদের জীবনের জন্য যে কত উপকারী তা আমরা নিজেও জানিনা। কথায় আছে ”ভোরের বাতাস সজীবতার বার্তা আনে” অর্থাৎ ভোরের বিশুদ্ধ ও ঠান্ডা বাতাস আমাদের শরীর ও মনকে সতেজ ও উৎফুল্ল করে তোলে। এটি আমাদের রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে যার ফলে আমাদের মানসিক চাপ কমে এবং আমাদের প্রাকৃতিকভাবে শক্তি যোগায়। আসলেই ভোরের বাতাস আমাদের জন্য একটি প্রাকৃতিক মূল্যবান উপহার। এর ইতিবাচক অনেক উপকারিতা রয়েছে যা নিচে বর্ণনা করা হলো-

  • বিশুদ্ধ অক্সিজেন গ্রহণের সুযোগঃ সাধারণত খুব ভোরের বাতাস আমাদের শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য খুবই উপকারী। কারণ এই সময় ভোরের বাতাসে বিশুদ্ধ অক্সিজেন এর ঘনত্ব বেশি থাকে এবং এই বাতাস দূষণমুক্ত হয়। এই সময় শ্বাস নিলে আমাদের শরীর পর্যাপ্ত পরিমাণ বিশুদ্ধ অক্সিজেন পায় যা আমাদের রক্ত পরিষ্কার করে এবং শরীরের প্রতিটি কোষে পুষ্টি সরবরাহ করতে সাহায্য করে। এজন্য ভোরের বাতাস বিশুদ্ধ অক্সিজেন সমৃদ্ধ যা আমাদের নেওয়া পরিহার্য।
  • শরীরের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধিঃ আমরা যখন পরিপূর্ণ ঘুমের পরে খুব ভরে ঘুম থেকে উঠে বাইরের প্রকৃতিতে যায় তখন সেই ঠান্ডা ও সতেজ বাতাস আমাদের শরীরকে অনেক সক্রিয় করে দেয়। মনকে উৎফুল্ল করে দেয় যার ফলে আমাদের শরীরে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি ভালো বাড়ে। এটি আমাদের শারীরিক শক্তি ও উত্তম বাড়াতে এতটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে যার ফলে আমরা সারাদিন কাজ করার জন্য প্রাকৃতিকভাবে শক্তি পাই ও মানসিক উৎফুল্ল পায়।
  • মানসিক স্বস্তি ও মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বৃদ্ধিঃ ভোরের বাতাস যেহেতু দূষণমুক্ত থাকে এবং প্রকৃতি থাকে কলুষ মুক্ত। প্রকৃতির সজীবতা ও নিস্তব্ধতায় আমরা যদি হাঁটাচলাফেরা করি বা ধ্যান অথবা ব্যায়াম করি তাহলে আমাদের মানসিক চাপ কমে এবং মন অনেক শান্ত থাকে। যার ফলে আমাদের মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং আমাদের মনোযোগ ও স্মৃতিশক্তি উন্নত করে। এটি বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে বলেই প্রতিটি ডাক্তার বলেন সকালের বা ভোরের বাতাস গ্রহণের জন্য। এটি আমাদের প্রাকৃতিক থেকে পাওয়া একটি অনন্য উপহার।
  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিঃ সকালের এই নিস্তব্ধ প্রকৃতির দূষণমুক্ত আবহাওয়া আমরা যদি তার ঠান্ডা বাতাস আমাদের শরীরে গ্রহণ করি তাহলে আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। কারণ কলস মুক্ত অক্সিজেন একটি শরীরের জন্য কতটা উপকারী তা বলে বোঝানো যাবে না। সকালে নিয়মিত হাঁটলে ঠান্ডা গরমজনিত রোগ, এলার্জি, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ ও অন্যান্য বিভিন্ন ধরনের অসুখ থেকে আমরা দূরে থাকতে পারি। আর আমাদের মন যদি উৎফুল্ল থাকে তাহলে আমরা বিভিন্ন ধরনের অসুখকে প্রতিহত করতে পারি। সকালের প্রাকৃতিক আবহাওয়ায় আমাদের মন সতেজ সুন্দর থাকে।
  • হরমোন নিঃসরণে সহায়তাঃ আমাদের শরীরে উপস্থিত মেলাটোনিন ও শেরটোনিনে হরমোন যা ভোরের প্রাকৃতিক পরিবেশে নিঃসরণ বাড়ায়। এগুলো আমাদের শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণ থাকলে আমাদের ঘুম ভালো হয় এবং সুখানাবতীর জন্য খুব প্রয়োজন। হলে মানসিক স্থিতিশীলতা ভালো থাকে এবং আমরা আমাদের জীবনে সুস্থতা অনুভব করি।
  • চর্ম ও ত্বকের স্বাস্থ্যঃ ভোরের বিশুদ্ধ বাতাস আমাদের চর্ম ও ত্বকের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ ভোরের বাতাসে উপস্থিত দূষণমুক্ত ঘনত্ব অক্সিজেন যা আমারে শরীরে অক্সিজেন সরবরাহ বাড়িয়ে আমাদের ত্বকের কোষগুলোকে সজীব প্রবান্ত রাখে। এগুলো আমাদের ত্বক উজ্জ্বল রাখতে এবং ত্বককে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
  • প্রাকৃতিক প্রতিক্রিয়াশীলতা বৃদ্ধিঃ ভোরের বাতাসে থাকে অনেক সজীবতা। সারাদিনের ব্যস্ত খোলা হলে বিভিন্ন কলকারখানার ধোয়াই আমাদের পরিবেশ খুব একটা সুবিধা জনক থাকেনা। কিন্তু সারারাত অনেক নিস্তব্ধ থাকায় ভোরের যে প্রাকৃতিক আবহাওয়া সেটি একদম কলুষ মুক্ত আমাদের জীবনে ফিরে আসে। এই ভোরের বাতাসে থাকে প্রাকৃতিক গন্ধ, বিভিন্ন ফুলের সৌরভ বা মাটির সুবাস এগুলো আমাদের মনকে করে তোলে প্রফুল্ল ও প্রশান্তিময়। যার ফলে এর সুগার আমাদের শরীরে শক্তি এনে দেয় এবং প্রাকৃতিক জীবনের সঙ্গে একটি সংযোগ স্থাপন করে দেয়।
  • আধ্যাত্মিক শান্তি ও বরকতঃ ”ভোরের বাতাসে আল্লাহর রহমত বিরাজ করে” অর্থাৎ ভোরের সময়কে অত্যন্ত পবিত্র ও বরকতময় বলা হয়েছে কারণ এই সময়ে আমাদের প্রকৃতি থাকে নির্মল ও শান্ত, যা আমাদের শারীরিক ও আত্মিক প্রশান্তি বয়ে আনে। ফজরের নামাজের পর আমরা যদি ভোরের বাতাস গ্রহণ করি তাহলে আমাদের আধ্যাত্মিক প্রশান্তি লাভ হয়। এটি ইবাদতের ও ধানের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও উপযোগী একটি সময়। এই সময় আল্লাহ তায়ালা তার অশেষ রহমত আমাদের মাঝে বিলিয়ে দেন এবং প্রকৃতি করে তোলেন শান্তিময়।
  • হৃদরোগের ঝুকিরাশঃ ভোরের বাতাসে থাকে প্রশান্তি এবং বিশুদ্ধ অক্সিজেন যা বিশুদ্ধ বাতাস গ্রহণ করলে আমাদের হৃদপিণ্ড ভালোভাবে কাজ করে। এটি উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে এবং আমাদের হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। তাই ভোরের বাতাস আমাদের শরীরের জন্য অত্যাধিক উপকারী।

 আরও পড়ুনঃ মিল্ক শেক এর ১০টি উপকারিতা ও অপকারিতা 

  • সক্রিয় জীবনধারা তৈরিঃ ভোরের সতেজ বাতাসে আমরা যদি হাঁটাচলাফেরা করি তাহলে আমাদের মনে আসে এক ধরনের প্রশান্তি। প্রকৃতির এই নিস্তব্ধ নিরবতা দেখলে নিজের মনকে অনেক ভালো লাগে এবং মানসিকভাবে উৎফুল্ল দেখায়। এটা আমাদের মনকে প্রশান্ত করে এবং আমাদের জীবনকে নতুনভাবে উদোম যোগায়। ভোরের হালকা আলো এবং সতেজ বাতাস আমাদের মনকে করে তোলে চাঙ্গা এবং দিন শুরু করার অনুপ্রেরণা যোগায়।
  • প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করাঃ ভোর বেলায় প্রকৃতি তার নিজের সেরা রূপে সজ্জিত থাকে। ভোরবেলার প্রাকৃতিক রূপে বিমোহিত হয়ে আমরা ভালোবাসি এই প্রকৃতিকে। ভোরবেলার প্রকৃতির সৌন্দর্যেও যে কতটাই সুন্দর তা নিজে না দেখলে বোঝানো যাবে না। তার এই সেরা সৌন্দর্য দিয়ে মানুষের মনকে প্রশান্ত করে তোলে এবং মনকে করে তোলে নতুন উদ্যম। বইয়ের হালকা আলো ও সতেজ বাতাস মানুষের দিনকে শুরু করার জন্য অনুপ্রেরণা দেয়।

পরিশেষে বলা যায় যে ভোরের বাতাস শুধু যে মাত্র শারীরিক স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী তা কিন্তু নয়। এই ভোরের বাতাস আমাদের মানুষের শান্তি বজায় রাখে, আধ্যাত্মিক শান্তি বজায় রাখে এবং আমাদেরকে সতেজতা করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই ভোরের বাতাস আমাদের প্রত্যেকেরই উচিত গ্রহণ করা এবং সুস্থ জীবন যাপন করা।

ভোরে ঘুম থেকে উঠার গুরুত্ব অনুচ্ছেদ

ভরে ঘুম থেকে উঠার গুরুত্ব অনুচ্ছেদ সম্পর্কে আজকে বিস্তারিত তথ্য আপনাদেরকে জানাবো। আমাদের জীবনে ভরে ঘুম থেকে ওঠা যে কত গুরুত্বপূর্ণ তা আমরা অনেকেই জানিনা। এই না জানার ফলে আমরা অনেকেই ঘুম থেকে দেরি করে উঠে এবং আমরা আমাদের জীবনকে দিন দিন ঝুঁকির দিকে ঠেলে দিচ্ছি। আজকে আমরা জানব ভোরে ঘুম থেকে উঠার গুরুত্ব কতটুকু।

ভোরে ঘুম থেকে উঠার অভ্যাস হলে আমাদের জন্য একটি স্বাস্থ্যকর ও সফল জীবনযাত্রার মূল ভিত্তি। দিনের শুরুতেই থাকে আমাদের প্রকৃতির পরিবেশ অনেক শান্ত ও নির্মল যা আমাদের মন ও শরীরকে সজীব করে তোলে এবং সুস্থ রাখে। এই প্রাপ্তকালীন সময়টিতে আমাদের মস্তিষ্ক সবচেয়ে সক্রিয় থাকে। 

আমরা দিনব্যাপী কি কাজ করব বা কারো প্রতি কতটুকু ইতিবাচক মনোভাব দিতে পারব এই সকালেই আমরা ঠিক রাখতে পারি। ভোরের নির্মল বাতাস ও সূর্যের আলো আমাদের শরীরে অক্সিজেন বৃদ্ধি করে যার ফলে আমরা প্রাকৃতিক উপায় ভিটামিন ডি ও গ্রহণ করি। এই ভিটামিন ডি আমাদের হাড় ও ত্বকের সুস্থতা দান করে।

বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে যে যারা ভরে ঘুম থেকে উঠে তারা জীবনে শৃঙ্খলা বজায় রাখতে বেশি সক্ষম হয়। এই অভ্যাস আমাদের সারাদিনের সমব্যবস্থাপনায় সাহায্য করে কারণ ভোরের সময়টিতে আমাদের কাজের চাপ কম থাকে এবং আমরা নিজেদের জন্য একটু আলাদা সময় বের করতে পারি। আমরা যদি প্রতিদিন নিয়মিত ভোরে ঘুম থেকে উঠতে পারি তাহলে আমাদের ঘুমের গুণগতমান বৃদ্ধি পায় এবং আমাদের মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে।

আমরা যদি ভোরে ওঠে ব্যায়াম বা যোগ চর্চার মাধ্যমে দিন শুরু করি তাহলে অবশ্যই আমাদের শারীরিক সুস্থতা নিশ্চিত থাকে। তাছাড়াও আমরা ভোর বেলায় উঠে যদি পড়াশোনা বা বিভিন্ন ধরনের সৃজনশীল কাজ করি তাহলে এটি একটি আদর্শ সময়ে। কারণ সকালে আমাদের মস্তিষ্ক একদম সক্রিয় ও সতেজ থাকে। এই সময়কে একটি আদর্শ সময় কারণ তখন আমাদের মন শান্ত থাকে এবং কাজে মনোনিবেশ খুব সহজ হয়।

ভোরে ঘুম থেকে ওঠার মাধ্যমে আমাদের জীবনের ইতিবাচক বিভিন্ন পরিবর্তন আনা সম্ভব। এই অভ্যাস যে শুধুমাত্র আমাদের শারীরিক পরিবর্তন আনে তা নয় এটি আমাদের মানসিক সুস্থতা, ব্যক্তিগত উন্নয়ন এবং আত্মবিশ্বাসেও গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব রাখে। প্রতিদিন ভোরে ঘুম থেকে উঠার অভ্যাস একটি শৃঙ্খলাবদ্ধ জীবন, সুস্থ এবং সফল জীবনের পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করে। তাই আমাদের জীবনের গুণগতমান রক্ষা করার জন্য আমরা অবশ্যই এই অভ্যাসটি গড়ে তুলবো যা আমাদের সুন্দর জীবন যাপনের জন্য প্রধান হাতিয়ার।

সকালে ঘুম থেকে উঠে ব্যায়াম

সকালে ঘুম থেকে উঠে ব্যায়াম আমাদের শরীরের জন্য এবং আমাদের জীবনের জন্য যে কত উপকারী আজকে তা বিশ্লেষণ করবো। কথাতেই আছে, ”সকালের ঘাম, সুস্থ জীবনের দাম” অর্থাৎ সকালে ব্যায়াম করলে আমাদের শরীরকে যে ঘামায় তা আমাদের সুস্থতা ও দীর্ঘায়ুর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সকালের ব্যায়াম আমাদের শরীরকে করে শক্তিশালী আর মনকে করে প্রফুল্ল। 

সকালে-ঘুম-থেকে-উঠার-উপকারিতা-সম্পর্কে-বিস্তারিত-জানুন

এটি আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, আমাদের ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে এবং সর্বোপরি আমাদের মানসিক চাপ কমায়। তাই আমাদেরকে সকালে ব্যায়ামকে জীবনের স্বাস্থ্যকর অভ্যাস হিসাবে গড়ে তুলতে হবে। প্রতিদিনের ব্যায়াম কিভাবে আমাদের উপকার করে তার বিস্তারিত নিচে দেয়া হলো-

  • শক্তি বৃদ্ধি ও সতেজতাঃ আমরা যদি সকালে ঘুম থেকে উঠে ব্যায়াম করি তাহলে আমাদের শরীরের রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পায় যা শরীরের প্রতিটি কোষে অক্সিজেন পৌঁছতে সাহায্য করে। যার ফলে আমাদের শরীরকে সক্রিয় করে এবং মনকে রাখে প্রফুল্ল। ফলে সারাদিন আমরা কাজ করার শক্তি পায়। এইজন্য আমাদের প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে হালকা ব্যায়াম করা উচিত।
  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিঃ সকালের ব্যায়াম আমাদের প্রাকৃতিক ওষুধের মত কাজ করে। কারণ সকালের ব্যায়াম আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। ভোরের সুস্থ ও ঘনত্ব অক্সিজেন গ্রহণ করি যার ফলে আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। নিয়মিতভাবে আমরা যদি প্রতিদিন ব্যায়াম করি তাহলে আমাদের হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ এবং ওজন নিয়ন্ত্রণের ঝুঁকি কমায়।
  • মেজাজ ভালো রাখেঃ সাধারণত আমরা যদি সকালে ব্যায়াম করি তাহলে আমাদের শরীরে এন্ডোরফেন নামক হরমোন নিঃসরণ হয়, যা ”হ্যাপি হরমোন” নামেও পরিচিত। এই হরমোন আমাদের মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে এর ফলে আমাদের মেজাজ ভালো রাখে এবং উদ্যোগ ও হতাশা থেকে মুক্ত রাখে। তাই আমাদের মেজাজ ভালো রাখার জন্য প্রতিদিন ভরে ঘুম থেকে উঠে ব্যায়াম করতে হবে।
  • ওজন নিয়ন্ত্রণঃ বর্তমান সময়ের স্থূলতার সমস্যা হল সবচাইতে বড় সমস্যা। ওজন নিয়ন্ত্রণ করা যেন এখন প্রধান এবং মুখ্য বিষয় হয়ে গেছে। কারণ অতিরিক্ত ওজন যেকোনো অসুখের মূল হাতিয়ার। আমরা যদি নিয়মিত প্রতিদিন ভরে ওঠে ব্যাবরি তাহলে আমাদের ওজন নিয়ন্ত্রণে আনা খুবই সহজ। সকালে যার ফলে সারাদিন ক্যালোরি পুড়তে থাকে। এটি আমাদের শারীরিক ফিটনেস বজায় রাখতে সাহায্য করে। তাই আমাদের প্রতিদিন প্রতিনিয়ত ভোরে ব্যায়াম করা খুবই জরুরী।
  • হাড় ও পেশী মজবুত করাঃ আমরা যদি প্রতিদিন সকাল বেলায় স্ট্রেচিং বা হালকা ব্যায়াম করি তাহলে আমাদের পেশী ও হাড়ের শক্তি বাড়ে। এটি আমাদের অস্থিসঙ্গে বা জয়েন্টের নমনীয়তা বাড়ায় এবং আমাদের বয়সজনিত সমস্যা কমে। আমাদের শারীরিক ফিটনেস বজায় রাখার জন্য হাড় ও পেশী মজবুত রাখার জন্য আমাদেরকে প্রতিদিন ভরে ঘুম থেকে উঠে ব্যায়াম করা অবশ্যই প্রয়োজন।
  • ঘুমের মান উন্নত করাঃ যদি আমরা সকালে ঘুম থেকে উঠে ব্যায়াম করি তাহলে এর ফল আমাদের রাতের ঘুম ভালো করতে সাহায্য করে। আমাদের শরীরে আছে সার্কাডিয়ান রিদম। এই নাম করার ফলে শরীরের সার্কাডিয়ান রিদম ঠিক থাকে যার ফলে আমাদের রাতে ঘুম উন্নত করতে সাহায্য করে। রাতের ঘুম সঠিক হলে আবার আমরা সকালে তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠতে পারবো। এই জন্য আমাদের ঘুমের মাকে উন্নত করার জন্য ভরে ঘুম থেকে উঠে হালকা ব্যয়াম করা প্রয়োজন।
  • মনোযোগ ও কর্ম ক্ষমতা বৃদ্ধিঃ সকালে বা খুব ভরে ঘুম থেকে উঠে প্রাকৃতিক অক্সিজেন গ্রহণ করে আমরা যদি তার সাথে হালকা ব্যায়াম করি তাহলে আমাদের মস্তিষ্কে রক্ত প্রবাহ বেড়ে যায়। যার ফলে আমাদের মনোযোগ ও স্মৃতিশক্তি উন্নত করে। এটি আমাদের শিক্ষার্থী, অফিসকর্মী, বয়োজ্যেষ্ঠ, ডায়াবেটিস বা উচ্চ রক্তচাপ আক্রান্ত এদের জন্য বিশেষভাবে উপকারী। তার মানে এই নয় যে আমাদের সাধারণ মানুষকে করতে হবে না। আমাদের প্রতিটি মানুষের জন্য মনোযোগ ও কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করার জন্য আমাদের সকালে হালকা ব্যায়াম করার অতীব জরুরী।

সকালে ব্যায়ামের কিছু সহজ পদ্ধতিঃ

  • স্ট্রেচিং বা হালকা ব্যায়াম শরীরকে নমনীয় এবং সক্রিয় করার জন্য খুবই ভালো
  • হালকা জগিং বা হাটা আমাদের ফুসফুস এবং হৃৎপিণ্ডের জন্য খুবই উপকারী
  • যোগব্যায়াম বা মেডিটেশন করলে আমাদের মাসিক প্রশান্তি এবং শারীরিক ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে
  • কার্ডিও বা এরোবিক্স ব্যায়াম সাধারণত আমাদের হৃদপিণ্ড এবং ফুসফুসের কার্যকারিতা বাড়াতে সাহায্য করে
  • পুশ আপ বা স্কোয়াট সাধারণত আমাদের পেশিকে মজবুত করার জন্য বেশ কার্যকর

সতর্কতাঃ আমাদের ব্যায়াম করতে গেলে অবশ্যই কিছু সতর্কতার প্রয়োজন আছে। কারণ প্রতিটি জিনিসের একটি নিয়ম বা কানুন আছে যা তাদেরকে মেনে চলতে হবে। ঠিক এমনই আমাদের ব্যায়াম করার জন্য কিছু সতর্কতা আছে। যেমন-

  • সকালে বা খুব ভরে ব্যায়াম করার জন্য ঘুম থেকে উঠে প্রথমে হালকা কুসুম গরম পানির সাথে এক গ্লাস লেবু পানি পান করতে হবে।
  • আমাদের ব্যায়াম শুরু করার আগে শরীরকে অবশ্যই উষ্ণ করতে স্ট্রেচিং করতে হবে
  • ভোর বেলায় হঠাৎ করে অতিরিক্ত ভারী ব্যায়াম এড়িয়ে চলতে হবে বিশেষ করে আপনি যদি শারীরিকভাবে নতুন হন
  • যদি খুব বেশি প্রয়োজন মনে করেন তাহলে অবশ্যই বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে

পরিশেষে বলা যায় যে সকালের ব্যায়াম আমাদের শরীরকে শুধু শক্তিশালী করে না এটি আমাদের মনকে সতেজ, প্রশান্ত করে এবং আমাদের জীবনের গুণগতমানকে বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। এটি আমাদের জীবনের জন্য খুবই ভালো একটি গুরুত্বপূর্ণ অভ্যাস যা ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। আমাদের প্রতিটি মানুষেরই সকালের বা ভোরের নির্মল বাতাস গ্রহণের সাথে হালকা ব্যায়াম করা উচিত তাহলে আমরা সবাই ভালো থাকবো এবং সুস্থ থাকব।

সকালে ঘুম থেকে উঠার ৩০ টি উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন- FAQ প্রশ্ন

প্রশ্নঃ সকালে ঘুম থেকে উঠলে কি উপকার হয়?

উত্তরঃ সকালে ঘুম থেকে উঠলে আমাদের শারীরিক কার্যক্রম সক্রিয় থাকে, আমাদের মস্তিষ্ক সতেজ থাকে এবং আমাদের মানসিক শক্তি যথাযথ বৃদ্ধি পায়। সকালের এই ঘুম থেকে ওঠা সাধারনত আমাদেরকে ফজরের নামাজ, ব্যায়াম ও প্রাকৃতিক পরিবেশ উপভোগের একটি সুযোগ করে দেয়, যা সারা দিনের কার্যক্রমকে সুন্দর করে ও আমাদের স্বাস্থ্য উন্নত করতে সাহায্য করে।

প্রশ্নঃ সকাল 6 টায় কি ঘুম থেকে উঠা তাড়াতাড়ি হয়?

উত্তরঃ সকাল 6 টায় ঘুম থেকে উঠা তাড়াতাড়ি হয় কিনা এটা নির্ভর করে আপনার প্রতিদিনের রুটিন ও ঘুমানোর সময়ের উপর। ইসলামিক এবং স্বাস্থ্যগত দিক দিয়ে ফজরের নামাজের সময় ঘুম থেকে ওঠা খুবই উপকারী এবং প্রয়োজন। তবে সাধারণ দৃষ্টিকোণ থেকে বলা যায় সকাল 6 টায় ঘুম থেকে উঠা দিনের ভালো শুরু করতে সাহায্য করে যদি আপনার ঘুম পর্যাপ্ত পরিমাণ হয়।

প্রশ্নঃ সকালে কখন ঘুম থেকে উঠা উচিত?

উত্তরঃ সকালে ঘুম থেকে উঠার উপযুক্ত সময় হচ্ছে ভোর বা ফজরের সময়। সাধারণত সূর্যোদয়ের আগে ঘুম থেকে ওঠা শরীরের সারকার্ডিয়ান হৃদয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। অর্থাৎ ভোর ৫.০০-৬.০০ টায় এরমধ্যে উঠতে হবে। এর ফলে আমাদের শরীর সতেজ হয়, মানসিকভাবে স্থিরতা আসে এবং দ্বীনের কাজে শক্তি সঞ্চয় করে।

প্রশ্নঃ ভোরবেলা উঠলে কি হয়?

উত্তরঃ ভোরবেলা উঠলে সাধারণত আমাদের শরীরমন সতেজ থাকে, ফজরের নামাজ পড়া যায়, ভোরে বিশুদ্ধযুক্ত অক্সিজেন গ্রহণ করা হয়, প্রাকৃতিক পরিবেশ উপভোগ করা সম্ভব হয় এবং আমাদের দিনটিকে সক্রিয়ভাবে শুরু করা যায়। এটি আমাদের সাধারণত স্বাস্থ্য, কর্মক্ষমতা, শারীরিক উন্নতি ও মানসিক স্থিতিশীলতার জন্য খুব বেশি প্রয়োজন।

প্রশ্নঃ সকালে কি ব্যায়াম করা উচিত?

উত্তরঃ অবশ্যই সকালে ব্যায়াম করা উচিত কারণ এর ফলে আমাদের শরীর সক্রিয় থাকে, আমাদের শরীরের রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে এবং আমাদের মনকে করে সতেজ। হালকা স্ট্রেটিং, হাটাহাটি করা, যোগব্যায়াম বা কার্ডিও সকালে করা খুবই ভালো। এটি আমাদের সারাদিনের শক্তি যোগায় ও উদ্যমতার সাথে সারাদিন রাখে।

প্রশ্নঃ সকালে কি খালি পেটে ব্যায়াম করা ভালো?

উত্তরঃ সকালে ব্যায়াম করতে হলে অবশ্যই আপনি সকালে ঘুম থেকে উঠে হালকা কুসুম গরম পানিতে এক টুকরো লেবু ও মধু মিশেয়ে পানি খাবেন। খালি পেটে ব্যায়াম করলে যে কার্যকারিতাটা পাবেন এই পানীয় খেয়ে ব্যায়াম করলে অনেক উপকার আসে এবং শরীর সহজে ডিহাইড্রেট হয় না। তাই ভারী ব্যায়াম এর আগে হালকা খাবার বা এই পানীয়টি খাওয়া উচিত।

মন্তব্যঃ সকালে ঘুম থেকে উঠার ৩০ টি উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন

সকালে ঘুম থেকে উঠার ৩০ টি উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন কারণ আমরা অনেকেই জানিনা সকালে ঘুম থেকে উঠলে আমাদের কি উপকার হয়। সকালে ঘুম থেকে উঠার প্রত্যেকটি বিস্তারিত বর্ণনা উপরে দেওয়া হয়েছে। আশা রাখি এই বর্ণনাগুলো আপনাদের প্রতিদিনের জীবনযাপনের জন্য অনেক উপকারে আসবে। ইসলামিক ভাষায় আছে ঘুম থেকে নামাজ উত্তম। এছাড়াও বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে যে আমরা যদি ভরে উঠে সকালের বিশুদ্ধ অক্সিজেন গ্রহণ করি এবং প্রাকৃতিক নির্মল পরিবেশে হাঁটাচলাফেরা করি তাহলে আমাদের শারীরিক উন্নতি এবং মানসিক উন্নতি অনেক হয়।

আমরা প্রতিনিয়ত আমাদের শরীর ও মন নিয়ে ভীষণ ঝামেলার মধ্যে থাকে। এইসব থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য সবচেয়ে বড় কাজ হচ্ছে ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠে আমাদের দিনের কাজগুলো শুরু করতে হবে। এতে আমাদের শারীরিকভাবে ভালো থাকার সাথে সাথে মানসিকভাবেও ভালো থাকতে পারবো। পরিবারকে সময় দিতে পারব এছাড়াও সামাজিক কিছু দায়িত্ব পালন করতে পারব। আমরা অনেকেই কর্মব্যস্ততার কারণে অনেকের সাথে যোগাযোগ রাখতে পারি না। তাহলে অবশ্যই আমরা ভোরে ঘুম থেকে ওঠার অভ্যাস তৈরি করব। ভালো থাকবেন আবারো দেখা হবে অন্য কোন পোস্টে বা ব্লগে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

প্রশ্ন ২৪ ব্লক এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url